ভালোবাসি তোমাকে পর্ব :শেষ পর্ব

0
1214

গল্প ::::::ভালোবাসি তোমাকে ?❤️
পর্ব ::::শেষ পর্ব
Writer ::Sajna Akther

তখনি আমাদের ছেলে ছোটো ছোটো পা দিয়ে হেঁটে এসে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো
.
রনক:::::পা পা আতো আমলা কেলবো
.
রোশান :::::হে বাবা চলো আমরা খেলা করি,,, (আমার দিকে তাকিয়ে) আর হে তোমার ব্যাপার রাতে দেখবো (একটা চোখ টিপ দিয়ে)
.
আমি :::::কি অসব্য ছেলে একটা (মুচকি হেসে)
.
.
.
এদিকে..

যে করেই হোক আমার ছেলের বিনিময়ে আমি ওর ছেলের প্রাণ চাই এতদিন ধরে তোমরা সামান্য একটা ছেলেকে আনতে পারছো না (বেশ চেঁচিয়ে কথা গুলো বললেন রানা চৌধুরী)
.
“” “স্যার আমরা কম চেষ্টা করিনি কিন্তু বাড়ির চারিদিকে শুধু বডিগার্ডরা ওদের ফাঁকি দিয়ে আমরা কিছু করতে পারছি না
.
রানা :::::ছলে বলে কৌশলে যেভাবেই পারো ওর ছেলেকে আমার কাছে এনে দাও
.
” ” জী স্যার আমরা দেখছি আপনি কোনো চিন্তা করবেন না,, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ওই ছেলেকে আপনার সামনে এনে রাখবো এখন থেকে আমরা মিশন শুরু করছি
.
.
.
আমি :::::কি হলো তোমরা দুজন এভাবে কাঁদছো কেনো (রান্না ঘর থেকে ছেলের কান্না শুনে রুমে এসে দেখি বাবা ছেলে দুজনে বসে বসে কাঁদছে)
আরে বলবে তো কি হয়েছে
.
রোশান :::::আমি খেয়াল করিনি দেখো আমার ছেলেটা খাট থেকে পড়ে গেছে,,(কান্না জড়িত কন্ঠে)
.
আমি ::::দেখি রনকের কি হয়েছে (কোলে তুলে নিলাম)
.
রনক:::::মাম্মা,, পা পা কাঁদতে দেতো
.
আমি :::::হে সোনা আমিতো তোমার পাপার কান্না দেখছি,, শুনুন এখানে আপনার কোনো দোষ নেই আর রনকের তেমন কিছু হয়নি,, কোথায় ছেলেকে সান্ত্বনা দিবেন তা না ছেলের চিৎকার শুনে নিজেও কাঁদছেন আর আপনার কান্না দেখে রনকো কাঁদছে,,, এখন কি আপনারা কান্না টা থাকবেন না আপনাদের সাথে আমিও কান্না করবো সেটার চিন্তা করছেন হুমম ?
.
রোশান :::::হে আসলে ও পরে যাওয়ার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল আমার কলিজাটা কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে তাই আসলে…
.
আমি :::::হয়েছে আর বলতে হবে না নাও তোমার ছেলেকে আমার কাজ আছে (বলেই ওনার কোলে রনককে দিয়ে আমি চলে আসি)
. আসলেই লোকটার প্রতি দিন দিন আমার ভালোবাসা বেড়েই চলেছে,, এমন করে কেউ আমার জানা ছিলো না কেমন আমাদের আগলে রেখেছেন ওনি
ভালবাসা এমন এক আবেগ যা
অনুভব হয়তো সবাই করেছে কিন্তু
কম লোকই উপভোগ করতে পেরেছে
.
রনক:::::পা পা দেতো আমি তিক আতি
.
রোশান ::::হে বাবা তোমাকে তো ঠিক থাকতেই হবে তুমি আমার একটা মাত্র সুপারম্যান (কপালে চুমু খেয়ে)
.
.
সকালে..
.
রোশান ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য রেডি হয় রনক ঘুমিয়ে আছে,, আমি নাস্তা রেডি করে রোশানকে ডাক দেই
.
আমি ::::::কি হলো ছেলেকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছো নাকি (এসে দেখি ছেলের পাশে বসে ওনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন,, একদম রেডি হয়ে)
.
রোশান ::::ইচ্ছে তো করে তোমাকে আর রনককে সাথে করেই নিয়ে যাই
.
আমি :::::ইশ সখ কতো চলুন নাস্তা রেডি খাবেন (আমি চলে যেতে নিলেই ওনি আমার হাত ধরে ফেলেন)
কি হলো চলুন ?
.
রোশান :::::নাস্তা খাবো তো তার আগে ওইটা (আমার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে)
.
আপনার অফিসের দেরি হচ্ছে (আর কিছু বলতে পারিনি ওনি আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেন ঠোঁটে চুমু খেয়ে কপালে গভীর চুমু একে দেন
.
রোশান :::::রাত যেভাবেই আসুক, নীরবতা থাকবেই। চাঁদ যেভাবেই থাকুক জ্যোৎসনা ছড়াবেই। সূর্য যতই মেঘের আড়ালে থাকুক, পৃথিবীতে আলো আসবে। আর নিজেকে যতই লুকিয়ে রাখো না কেনো ভালোবাসা তোমাকে কাছে টানবেই।
.
.
.
দুপুরে চোখ টা লেগে গিয়েছিল তাই আমি ঘুমিয়ে পড়ি রুম লক করে ঘুমাই কারণ ছেলেটা হেঁটে হেঁটে কোথায় চলে যাবে বিচ্ছুর মতো,, প্রায় লেগেই গিয়েছিল হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল আমি ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলতেই আমার মুখে কেউ স্পে মেরে দেয় তারপর আর আমার কিছু মনে নেই,
. ধীরে ধীরে চোখ খুলে থাকাই রোশানের চেহারা স্পষ্ট ভেসে ওঠে
.
আমি :::::কি হয়েছে আপনি কাঁদছেন কেনো আমার কিছু হয়নি… পরক্ষণেই মনে পড়লো আমার ছেলে কোথায় ও ঠিক আছে তো আমি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠি
রনক কোথায় আমার রনক কোথায় কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেনো (আমি পাগলের মতো সারা বাড়ি খুঁজতে থাকি আমার ছেলেটাকে কোথাও তো খুঁজে পাচ্ছি না আমি এক দৌড়ে আবার ওনার কাছে যাই,, আপনি বলছেন না কেনো ?
.
রোশান :::::রনককে খুঁজে পাচ্ছি না
.
আমি ::::::খুঁজে পাচ্ছেন না মানে আমার ছেলে রুমেই তো ছিলো
.
রোশান ::::::কারা সব বডিগার্ডদের আর তুমার মুখে স্পে মেরে আমাদের ছেলেকে নিয়ে গেছে (তখনি রোশানের মোবাইল বেজে ওঠে তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে উঠলো)
.
রানা :::::কি মিস্টার রোশান আহমেদ ছেলের কান্না কেমন লাগছে
.
রোশান :::::কে আপনি আমার সাথে আপনার শত্রুতা কিসের ?
.
রানা :::::আমি রানা চৌধুরী রায়হান চৌধুরীর পিতা তুই তো তোর ছেলের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেরেছিস আর আমি সেটুকু ও পাইনি,, এবার ছেলে হারানোর যন্ত্রণা কি সেটা তুই বুঝতে পারবি
.
রোশান :::::না না আমার ছেলের কোনো ক্ষতি করবেন না আপনি যা চাইবেন আমি তাই দিবো প্লিজ দয়া করে আমার ছেলের কোনো ক্ষতি করবেন না
.
রানা ::::::তাহলে দে আমার বুকে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দে পারবি তো দিতে নাকি আমার ছেলেটাকে তুই..
.
রোশান :::::নাহ আপনার ছেলে বেঁচে আছে আমি আপনার ছেলেকে ফিরিয়ে দেবো আমার নিষ্পাপ ছেলের কোনো ক্ষতি করবেন না ওকে ছাড়া আমি বাচবো না
.
(ছেলের বেঁচে থাকার সংবাদ শুনে সস্তির নিশ্বাস ছারলেন রানা চোখের কোণে কান্না জমে আসলো একটা মাত্র ছেলে তিনটা বছর না দেখে আদর না করে ছেলের মায়াবী মুখ না দেখে কাটিয়েছেন)
.
.
.
একপাশে রোশান নিশাত আর রায়হান,,অন্যপাশে রানার কোলে রনক দাঁড়িয়ে আছে
.
(এতদিন রোশান রায়হানকে তিলে তিলে এক আস্তানায় মারধর করতো যে হাত দিয়ে নিশাত এর শরীরে আঘাত করেছিলো সেই হাতে গরম জল ঢেলে দিতো এমন অত্যাচারে রায়হানের অবস্থা খুবই খারাপ কেমন নিস্তেজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এতকিছুর পর রায়হানকে শুধু বাঁচিয়ে রেখেছিলো তিলে তিলে মারার জন্য কিন্তু আজ এই পরিস্থিতিতে রায়হানকে আনতে বাধ্য হয়েছে রোশান)
.
ছোট্ট ছোট্ট পায় হেঁটে আসছে রনক তার বাবা মায়ের কাছে,, আর নিস্তেজ রায়হান হেঁটে চলেছে তার বাবার কাছে
.
রোশান নিশাত ছেলেকে পেয়ে চুমু দিতে লাগলো
.
রানা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়
রানা :::::কি অবস্থা করেছে আমার ছেলেটার আমি ওই রোশানকে ছাড়বো না ?
.
রায়হান :::::না বাবা তুমি ওদের আর কোনো ক্ষতি করো না আমি আমার পাপের শাস্তি পেয়েছি এতে ওদের কোনো দোষ নেই (রায়হান এগিয়ে চলল নিশাত এর দিকে)
.
রায়হান :::::::হারিয়ে যাবো একদিন আমি রবনা এ ভুবনে চির দিন,ক্ষমা করে দিও তোমরা আমায় ভুল করে থাকি যদি কোন দিন…………বাশঁ বাগানে বা গোরুস্তানে হয়তো দেবে মোরে কবর, তোমরা আমায় যাবে ভুলে রাখবেনা যানি কোন খবর পরবে কি মনে আমার কথা ফেলবে কি অশ্রু কোন দিন……”ছোট্ট মাটির ঘরে আমার দেহ নিথর হয়ে পরে রবে!আধার এ কবরে আলোর প্রদিপ কেহ নাহি কবো জালবেথাকবেনা কেউ জানি আমার পাশেকাটাবো একাকী রাত্রি দিন…..
.
আমাকে ক্ষমা করে দিও নিশাত,, একটু ভালোবাসার জন্য তখন আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম তাই তোমার সাথে আমি…, ?
.
প্লিজ পারলে আমাকে ক্ষমা করো (বলেই রায়হান চলে যায়)
.
আমরাও আমাদের ছেলেকে নিয়ে চলে আসি বাসায়
.
.
.
ভালবাসা এমন একটা বস্তু যা কখনো আপনাকে হাসাবে কখনো আপনাকে কাদাবে ।কখনো মধুর সপ্ন দেখাবে, কখনো হৃদয় ভেঙ্গে চুর-মার করে দিবে । কখনো সুখের সাগরে ভাসাবে, আবার কখনো কষ্টের অথৈ জলে ডুবাবে । তবুও মানুষ ভালোবাসে, তবুও মানুষ সপ্ন দেখে, কারন এই সব আছে বলেই হয়তো মানুষ বেঁচে থাকে?❤️

সমাপ্ত ❤️?