ভালোবাসি পর্বঃ০১

0
1946

ঠাসস করে চড় মারতেই কিছুটা দূরে ছিটকে পড়লো অপরাজিতা!
পলক আবারও বাহু টেনে ধরে দাঁড় করালো।অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না অপা!
কি ভালো আর কি ভালো না তা আমি নিশ্চয়ই আপনার থেকে শিখবো না!
অবশ্যই শিখবে! আমি তোমার টিচার..
কোন বা** টিচার আপনি।আপনার ব্যবহার টিচারের মতন?একটা বখাটে রাস্তার ছেলের মতন।
আবারও চড় পড়লো অপরাজিতার গালে।তুমি কোনো দিন মানুষ হবে না।কিসব কথা এইটুকু মেয়ের মুখে!মাত্র পড়ে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে!আর একদিন যদি এরকম বাজে কথা মুখ থেকে বের হয়। ওই মুখ আর মুখ থাকবে না।
ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলো পলক।রাগে ফুসতে থাকলো অপরাজিতা!

?
?
অপরাজিতা রহমান! বাবার এক মাত্র মেয়ে।আদরের দুলালী।বেশ বড়লোক পরিবারের সন্তান।বাবা মায়ের অনেক চাওয়ার পর পাওয়া সন্তান!তাই একটু বেশিই আহ্লাদী!যার ফলে খুব জেদী আর উগ্র মেজাজের।তবে তিনবছর বয়স রেখেই মা মারা গেছেন।বাবার আদরেই বড় হয়েছেন।।শহরের সবচেয়ে নামকরা কলেজে পড়ে।
অপরদিকে,,,,
নিশান পলক!নামকরা ইন্ডাস্ট্রির মালিক!বাবা মায়ের ২য় সন্তান হলেও এখন একা!একমাত্র বোন পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।যার খবর পেয়ে বাবা স্টোক করে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছেন।বছর ৭ হবে মারা গেছে।যখন পলকের বয়স ২১ তখন।মাকে নিয়েই তার পরিবার।এখন তার বয়স ২৮ পেড়িয়ে ২৯ ছুঁইছুঁই…অথচ যে মেয়েকে ভালোবাসে তার বয়স এখনো আঠারোতে পড়ে নি!
মেয়েটা আর কেউ নয় তার স্টুডেন্ট অপরাজিতা। যার জন্য সে কলেজে গেস্ট লেকচারার হিসেবে জয়েন হয়েছে।

?
?
পলক বেরিয়ে যাওয়ার পরই অপরাজিতা গর থেকে বের হয়।বাবা তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন অপার সামনে ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম তাই যেন কাল থেকে তাকে পড়াতে আসে।অথচ এ ব্যাপারে সে কিছুই জানে না।সে কিছুতেই এই লোকের কাছে পড়বে না।গত দুইমাসে বেশ রাগ আর বিরক্ত এই লোকের উপর।কলেজে আসে। ৭ দিন পর পর ক্লাস নেয়।যে দিনটায় ক্লাস নেয় ওই দিনটা বিষের মত লাগে অপার কাছে।আর এখন কিনা বাড়িতে সপ্তাহে চারদিন সহ্য করতে হবে?ভাভা যায়?কিছু বলতেও পারবে না।কারন বাবা পড়ালেখার ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস!
.
.
.
.
.
সোফায় বসে আছে পলক।সামনে আদনান সাহেব বসে।কথা বার্তা শেষ করে বলল বাবা নাস্তা খাও!আমার একটু শরীর খারাপ করছে আমি একটু ঘরে যাই।
জ্বি আংকেল অবশ্যই!
আদনান সাহেব ঘরে চলে যেতেই পলক ইশারায় অপাকে ডাকল।অপা মুখ ভেংচি কেটে সোফায় যেয়ে বসল।গালে পাঁচ আঙুলের দাগ স্পষ্ট!
পলক উঠে অপার পাশে বসল।
দেখো অপা আমি তোমাকে মারতে চাই নি আর মারতে চাইও না।কিন্তু তোমার একেকটা কর্মকান্ড আমাকে তোমার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য করে।কাল ক্লাস শেষে বলেছিলাম নয়নের সাথে মিশবে না।ছেলেটা ভালো না।তাও তুমি সেধে সেধে ওর হাত থেকে আইসক্রিম খেলে।আজ আমায় ডেকেছে তোমার বাবা।তোমাকে পড়ানোর জন্য! আর তোমাকে বলল তোমার ঘর দেখিয়ে আনতে তুমি কি করলে ঘরে নিয়ে গিয়ে আমার কলার ধরে আমায় থ্রেট করা শুরু করলে..এসব কোনো ভদ্র আচরণ?ভদ্র মেয়ের কাজ?
আমি অভদ্র আপনি জানেন না?
হুম জানি!এতটা অভদ্র জানতাম না।কাল থেকে শিখিয়ে দিবো ভদ্রতা।
কাল আপনি পড়াতে এলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।
তোমার বাবা আমায় বলেছে তোমায় তিনদিন পড়াতে।কারন তুমি তো ভালো করেই জানো আমার অফিস সামলে তারপর কলেজের দিকে মন দিতে হয়।সেখানে তোমায় পড়ানোটা…!তোমার বাবা ভেবেছে আমি রাজি হবো না।কিন্তু আমি তো এটাই চেয়েছিলাম।তাই অজুহাত দেখিয়ে চারদিন বানিয়ে নিয়েছি!বলেই চোখ টিপল পলক।
অপা চিৎকার করে বললো আপনাকে আমার সহ্য হয় না।তবুও কেন এমন করেন আমার সাথে বলুন তো?
আহ্ চিৎকার করছো কেন অপা?তোমার বাবা জানলে সমস্যা তোমারই হবে।হয়ত আমার সাথে তোমার বিয়েটাও দিয়ে দিতে পারে!তখন কিন্তু…
চুপ হয়ে গেলো অপা।উঠতে নিলো কিন্তু পারলো না।পলক হাত টেনে কোলে বসিয়ে দিলো।ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে বলল_
চলে যাচ্ছো?যাও…কিন্তু কাল থেকে ছয়দিন পর কলেজে দেখা হবে তাই ভেবো না আমি তোমার খবর পাবো না।তুমি ২৪ ঘন্টা কি করো সব খবর আমার কাছে থাকে।তাই কথার অবাধ্য হওয়ার চেষ্টা ও করো না।ফল ভালো হবে না।
কাল সন্ধ্যা ছয়টায় আমি আসছি।বই খাতা নিয়ে রেডি থেকো!আর অনলাইনে থাকবা কম!১০ টার পর এক্টিভ পেলে খবর আছে।যাও এখন ঘরে যাও।বলেই অপাকে কোল থেকে উঠিয়ে দিলো।
এদিকে রাগে অন্ধ হয়ে গেছে অপা।ঘরে গিয়ে ধরাম করে দরজা আটাকে দিলো।
বিছানার বালিশ বেডশীট ছুঁড়ে ফেলে দিলো অপা।
বাহির থেকে গাড়ির হর্নের আওয়াজ এলো। বুঝতে পারলো পলক চলে যাচ্ছে!দাঁত কটমট করে বিছানাপত্র তুলে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।কিন্তু সারারাত ঘুমাতে পারলো না।এক অজানা কারনে ঘুম এলো না।সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিলো।কিন্তু সকাল হতেই ঘুমের রাজ্যপ চলে গেলো অপা।

সেদিন আর কলেজ যাওয়া হলো না অপার!

সন্ধ্যায়….

#ভালোবাসি?
#পর্ব_০১
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ