ভালোবাসি পর্বঃ০২

0
1381

ভালোবাসি?
পর্ব_০২
লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

সন্ধ্যায়…
রেনু খালা এসে বলল_ অপা মামনি তোমার স্যার এসেছে!
বলেই সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
অপা জানালার পাশে বসে ফেসবুকিং করছিলো!স্যারের কথা শুনে যেন গায়ে জ্বালা ধরলো!ফোনটা আছড়ে বিছানার উপর ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে ঘুরতেই দেখে পলক হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে..মুখটাকে কালো করে বেড রুমের সাথে এডজাস্ট রিডিং রুমে ডুকে পড়লো।পিছুপিছু পলক ও গিয়ে বসল!চেয়ার টেনে বসে ব্যাগ থেকে বই বের করে পলকের সামনে ছুড়ে দিলো অপা!
হাতের মুঠ শক্ত করে চেপে অপার দিকে সম্পূর্ণ ঘুরে বসল পলক!নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে বলল_
অপা!তুমি ভেবো না আমি তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করি বিধায় আমি শান্ত ছেলে!আমার রাগ নেই এটা মনে করার কিছু নেই!
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো অপা!
ভদ্র কিভাবে বানাতে হয় তা আমি জানি!আর তোমাকে ভদ্র বানিয়েই আমি ক্ষান্ত হবো!
দেখুন আপনার লেকচার বন্ধ করে পড়াতে এসেছেন পড়ান!
খাতা নিয়ে কিছু রসায়নের ক্যালকুলেশন উঠিয়ে অপার দিকে এগিয়ে দিলো পলক!
খাতার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল দেখুন স্যার আমি আপনাকে যতটা অপছন্দ করি তার থেকেও বেশি অপছন্দ করি এ ১১ অধ্যায়টা!
মুচকি হাসলো পলক!এটাই পড়তে হবে!
রাগে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে অপার।দাঁতে দাঁত চেপে বিক্রিয়াসহ সম্পূর্ণ আলোচনা লিখলো!যার কিছু সঠিক সঠিক হলো কিছু হলো না।
পলক সেগুলো বুঝিয়ে দিতে লাগলো অপাকে।অপার মনযোগ অন্যদিকে!কাল যেভাবেই হোক নয়নের প্রোপজাল এক্সেপ্ট করবে ও!এই স্যারের থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে।বিরক্তকর একজন মানুষ!কেনো যে ওর সাথে এমন করে তার কোনো সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে পায় না অপা!
এসব চোখ এড়ালো না পলকের।
কোনো রকম ১ ঘন্টা পড়ে উঠে গেলো অপা।ঘন্টার অপেক্ষাতেই যেন ছিলো ও!বইপত্র সেভাবে রেখেই উঠে গেলো। পেছন থেকে হাত টেনে ধরে কাছে টানল পলক!চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলল খুব জলদিই তোমায় পার্মানেন্টলি নিজের করে নিবো!সপ্তাহ খানিক সময় দাও!বলেই মুচকি হাসলো।অপাকে ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো! বোকা বনে তাকিয়ে রইলো অপা!

?
পরদিন ইউনিফর্ম পরে ব্যাগ হাতে ডাইনিং এ গেলো অপা।গুড মর্নিং বাবা!বলে চেয়ার টেনে বসতেই চোখ কপালে উঠে গেলো।বাবার পাশের চেয়ারে বসে আছে পলক!মুচকি মুচকি হাসছে।কপাল কুঁচকে গেলো অপার!স্যার আপনি এত সকালে এখানে!
পলক কিছু বলার আগেই অপার বাবা বললেন_
আমি আসতে বলেছি মামনি!আসলে আমি একটা কাজে শহরের বাহিরে যাচ্ছি!এতদিন আমি শহরের বাহিরে গেলো তো তোমার সাথে রেনু আপা থাকতো।কিন্তু রেনু আপার স্বামী মারা গেছে আজ ভোরে।উনি গ্রামে গেছেন!এখন তোমায় একা রেখে যাওয়াটা তো পসিবল না!তাই তুমি সপ্তাহ খানিক পলকদের বাসায় থাকবে!
হোয়াট!বলেই দাঁড়িয়ে পড়লো অপা!বাবা আর ইউ ম্যাড?একজন অপরিচিত লোকের বাসায় আমি কি করে থাকি?তুমি কি…
কুল মাই প্রিন্সেস কুল!তুমি ভাবলে কি করে একজন অপরিচিত লোকের বাসায় তোমায় আমি রেখে যাবো!পলক আমার আত্নীয়ের চেয়েও কাছের লোক!ওর বাবার আর আমার ১৯ বছরের বিজনেস ছিলো…আর তোমার মাকে আমি কিভাবে বিয়ে করেছি শুনবে?সে পলকের মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো।ভাবীর মাধ্যমেই আমাদের বিয়েটা হয়েছে।আর পলককে আমি ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি।তার জন্য ই ওকে তোমায় পড়ানোর দায়িত্বটা দিয়েছি অন্য কেউ হলে এত বিশ্বাস আমি করতাম না!
অপা মাথা নিচু করে বসে আছে।রাগে তার শরীর জ্বলছে।বাবা এটা কি করে করতে পারলো।যাকে আমি এক মিনিট সহ্য করতে পারি না তাকে কিনা এক সপ্তাহ সহ্য করতে হবে? ওহ মাই গড!
অপা প্যাক করে নাও।পলক তোমায় কলেজ ছেড়ে দিয়ে তোমার ব্যাগ নিয়ে বাড়ি চলে যাবে।আমি একটু পরই রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হবো!
অপা না খেয়েই উঠে গেলো।লাগেজ বের করে টি-শার্ট টপস স্কার্ট জিনস সব এলোমেলো ভাবে ব্যাগে ঢুকিয়ে বেরিয়ে এলো।
বাবার কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে।
.
.
.
.
.
মেয়ে বেরিয়ে যেতেই কাউকে কল করলো আদনান সাহেব! সালামের উত্তর নিয়ে বলল কাগজ পত্র রেডি করো আমি আজই উইল করবো!আমি আসছি!
তারপর কল কেটে অন্য কাউকে কল করে সালাম দিলো।ভাবী যা করার জলদি করতে চাই!আমার সময় ফুরিয়ে আসছে!ওপাশ থেকে কি বললো শোনা গেলো না।কলে কেটে স্ত্রীর ছবিটার সামনে দাঁড়ালেন আদনান সাহেব।
আমার দায়িত্ব আমি পালন করে যাচ্ছি জয়া!আমি পালন করে যাচ্ছি! বলেই দুই ফোঁটা চোখের পানি ফেললো!
.
.
.
.
.
গাড়ি বসে আছে পলক আর অপা।অপা অনবরত বকবক করেই যাচ্ছে! ননস্টপ কথ বলা এ মেয়ের স্বভাব কথা ছাড়া যেন বাঁচতেই পারে না!
পলক নিরবে সব শুনছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
দেখুন আপনাদের বাসায় কে কে আছে?আমি কিন্তু ওখানে যেয়ে একটা সঙ্গী চাই!বাড়িতে যেমন রেনু খালার সাথে কথা বলি সেরকম!আপনাকে আমার পছন্দ না তাই আপনার সাথে বলবো না!
আর শুনুন বাবার বন্ধুর ছেলে আপনি আমায় বলেন নি কেনো?আর আমায় আগে থেকে চেনেন তা কেনো বলেন নি?আগে থেকে চেনেন বলেই এভাবে অসভ্যতামি করেন তাই না?আপনি একটা বাজে ছেলে বাবা তবুও কেনো আপনাকে এত বিশ্বাস করে
বুঝি না!
এই মেয়ে আমি তোমার সাথে অসভ্যতামি করি?
ভ্রু কুচকে বললো পলক।
হুম করেনই তো!বেয়াদবি ও করেন!
কিহ বললে এটুকু মেয়ে!আমি তোমার সাথে বেয়াদবি ও করি?বেয়াদবির কি বুঝো তুমি?
অনেক কিছু বুঝি।
সেসব কথা বাদ দাও!আজ কলেজে যেয়ে নয়নের ধারে কাছেও ঘেষতে যেন না দেখি!তাহলে কি পরিনাম ভালো হবে!
আপনি কে?ভালো খারাপ করার?আজ আমি নয়নের প্রোপজাল এক্সেপ্ট করবো!ছেলেটাকে আমার হেব্বি লাগে..আমি তো..
আর কিছু বলতে পারলো না অপা।পলক গাড়ি সাইড করে ততক্ষণে অপার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়েছে।অপা ধাক্কাতে লাগল।এক ইঞ্চি ও সরল না পলক।এবার সমানে পিঠে বুকে খামচাতে লাগলো।পিঠ ছিলে রক্ত বেরিয়ে গেছে প্রায়।তখন ছাড়লো পলক।রাগে কাঁপছে অপা।ঠাসস করে চড় বসিয়ে দিলো পলকের গালে!পলক কিছু বলল না। চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইলো অপার দিকে।নিজের ঠোঁট ঘষছে অপা।গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করলে বা হাত টেনে নিজের মুখের কাছে আনল পলক।আজ যদি উল্টোপাল্টা কিছু দেখেছি তো এর চেয়েও বাজে কিছু হবে।আর এমন কিছু করবো যা তোমার মত মেয়ের ধারনার বাহিরে!সারাটাজীবন হাত কামড়াবে তখন!
ধাক্কা দিয়ে সরালো অপাকে।দ্রুত ড্রাইভিং করে কলেজে এসে পৌঁছালো!
গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো পলক।অপরাজিতা এরকম একটা কাজ করবে কল্পনাও করতে পারে নি পলক।অপা গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে যেয়ে মাঠের মাঝখানে গিয়ে নয়নকে জড়িয়ে ধরল। পাশের সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে হাততালি দিতে লাগলো!কেউ কেউ ছবি তুলতে লাগলো!
এমন ভাবে দুজন দাঁড়িয়ে আছে যেন ফীল্মের শুটিং করছে!পলক হাত মুঠ করে এগিয়ে এলো মাঠের মাঝখানে। স্যারকে দেখে সবাই কেটে পড়লো।পাশের দুটো ছেলের থেকে ফোন নিয়ে ছবিগুলো নিজের ফোনে নিলো পলক।আর সে ফোন থেকে ডিলিট করে দিলো!
অপা মুচকি হেসে পলকের কাছে এসে ধীরে বলল মি.নিশান পলক!আমি কি কি করতে পারি তা আপনার চিন্তা ধারার বাহিরে!
একটা শয়তানী হাসি হাসলো পলক।আমার ড্রাইভার এসে তোমায় নিয়ে যাবে ক্লাস শেষে।গেইটে থেকো!আর কিছু না বলে গাড়ির দিকে চলে গেলো।পলকের এমন ব্যবহারে অবাক না হয়ে পারলো না অপা।তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।
নয়ন অপার কাঁধে হাত রেখে ক্লাসের দিকে চলে গেলো দুজন!
পলক গাড়ি থেকে তা স্পষ্ট দেখতে পেলো!
ফোন বের করে কল করতে করতে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো!

চলবে_