ভালোবাসি পর্বঃ০৩

0
1314

ভালোবাসি?
পর্ব_০৩
লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

?
রাজীবের বুকে তিনটা গুলি করতেই ফোন বেজে উঠলো আদনান সাহেবের!দ্রুত গাড়িতে উঠে ফোন রিসিভ করলেন!
~হ্যালো পলক বাবা বলো!
____

~আচ্ছা আমি দেখছি!
বলেই ফোন কেটে দিয়ে দ্রুত ড্রাইভ করে সেখান থেকে চলে যায়!

এদিকে অফিসে বসে আছে পলক! কোনো কাজেই মন বসছে না!মি.আদনান যদি অপার বিয়ে রিয়াদের সাথে ঠিক করেও আসে সেটা নয় ম্যানেজ করা যাবে কিন্তু মি.রাজীবের সাথে যদি ঝামেলা না হয় সব ঠিক হয়ে যায় তাহলে তো…
নাহ এটা কিছুতেই হতে দিবো না আমি!আমার প্রতিশোধ আমি পূরণ করবোই!আর আমার অপাকেও বাঁচিয়ে নিবো!তার আগে প্ল্যান মাফিক সব করতে হবে!অফিস থেকে বেরিয়ে ড্রাইভারকে কল করে বলল পলক নিজেই যাবে অপাকে আনতে।
কথামত সে নিজেই যেয়ে অপাকে নিয়ে এলো।এভাবে ক্লাস থেকে ডেকে প্রিন্সিপালের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে কেনো নিয়ে এলো কিছুই বুঝতে পারছে না অপা।
ড্রাইভিং সীটে বসে অপার সীট বেল্ট আটকে দিলো।স্ট্যায়ারিং এ হাত রেখে স্টার্ট দিতেই অপা চিৎকার করে উঠলো।ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো পলক।

ফুচকা….ফুচকা…ফুচকা খাবো স্যার ফুচকা খাবো।
গাড়ি ফুরুৎ করে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।অপা পারছে না পলককে গিলে খায়!

এই কিপ্টে এই… আমাকে ফুচকা না খায়িয়ে নিয়ে এলেন কেনো হ্যা?আপনার কি পকেটে টাকা নেই?না থাকলে কি আমার কাছে আছে! আমার টাকায় খেতাম আপনাকেও খাওয়াতাম!কেনো চলে এলেন কেনো কেনো কেনো?

এই মেয়ে থামবে…

কেনো থামবো?আমি থামবো না….আমার ফুচকা চাই মানে চাই এক্ষনি চাই…ফুচকা…ফুচকা খাবো..

অপা…

একদম ধমকাবেন না!কিপ্টামি করে চলে এসেছেন আবার ধমকান সাহস তো কম নয়!

পরে খেয়ো…

এখনি খাবো..গাড়ি ঘুরান

অপরাজিতা প্লিজ…

আর কিছু বললো না অপা গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। পলক বার কয়েক আড় চোখে দেখলো ওকে।এই হালকা ঠান্ডাতেও কপালে ঘাম ঝমেছে পলকের!একটা সুক্ষ কিন্তু গভীর চিন্তা তাকে গ্রাস করছে!সব প্ল্যান ভেস্তে যাবার চিন্তা!আদৌও কি তার পরিকল্পনা সফল হবে? শেষ করতে পারবে তো ওই নরপিশাচটাকে ওই খুনি টাকে?

অপার কথায় ধ্যান ভাঙল পলকের।এ নেয়েটা এক মিনিট সময়ও চুপ থাকতে পারে না।উফফ কানের পোক মেরে ফেলে একদম!এত কথা যে কিভাবে বলতে পারে আল্লাহ মালুম।এই বলে আমায় একদম অপছন্দ করে করে তবুও চুপ থাকে না!ননস্টপ মুখ চলতেই থাকে…!

?
খুব সানন্দে অপাকে ঘরে ডুকালেন পলকের মা নি
তিশা বেগম!
অপাও আন্টিকে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরল! দুজন কিছুক্ষণ সোফায় বসে গল্প করলো।তারপর পলক একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বলল এটা তোমার রুম!ব্যাগ ও রুমেই আছে যাও ফ্রেশ হয়ে নাও!
অপা হাসিমুখে মুখে বলল আমি তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসি আন্টি!
যাও আম্মু!আমি তোমার জন্য খাবার রেডি করছি!

?
ইজি চেয়ারটায় বসে সিগারেটের সাথে মদ পান করছেন আদনান সাহেব! তার ক্রাইম পার্টনারকে তার হাতে খুন হতে হবে কখনো ভাবে নি আদনান সাহেব!শুধু ক্রাইম পার্টনার তো নয় জানের জিগার দোস্ত ও ছিলো!
সে গিয়েছিলো পূর্ব আর অাশাঢ়ের নামে সব উইল করে দিতে।তার সাথে রিয়াদ আর অপার বিয়ে ঠিক করতে কিন্তু রাজীব পোপার্টির জন্য এভাবে পল্টি খাবে ভাবে নি আদনান। তাই তো হবু বিয়াইকে খুন করে শহর ত্যাগ করতে হলো।
ইজি চেয়ারটায় বসে ঝিমাচ্ছেন তিনি।হঠাৎ টেবিলের উপরে থাকা দুটো এ্যানরয়েড ফোনের একটিতে টোন বেজে উঠলো।সিগারেটের শেষ অংশটা পাশে থাকা ডাস্টবিনে ফেলে ফোন হাতে নিলো!
নিশান পলকের হোয়াইটস্ অ্যাপ থেকে ৪-৫ টা মেসেজ!তার মেয়ে অপার সাথে আরেকটা ছেলের ক্লোজ পিক!যদিও এসবে কিছু আসে যায় না তার!তবুও বাবা নামক একটা উপাধী পাওয়ায় একটু তো ভাবা উচিত!
ফোনটা রেখে একটা কথা গভীর ভাবে ভাবতে লাগলেন আদনান সাহেব! মেয়েটা তার পরের ঘরের সন্তান হলেও তার তো বাকীটা জীবন কাটানোর জন্য একটা ব্যবস্থা করে দেয়া দরকার!অন্তত তিনবেলা ভালো মন্দ খেতে পারে এমন ঘরে বিয়ে দিয়ে যাওয়া দরকার!
আচ্ছা পলকের কাছে দিয়ে দিলে কেমন হয়?কিন্তু ও যে শত্রুর ছেলে।আরে এক জায়গায় হলেই হলো!ও মেয়ে তিনবেলা খেতে পেলেই হলো।পলক মন্দ কিসে?তাছাড়া অতীত তো ২০ বছর আগেই কেটে গেছে!আর উইল হয়ে গেলে সে ও লা-পাত্তা হয়ে যাবে।দুই ছেলে স্ত্রী নিয়ে বেশ ভালো কাটবে তার!
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ালো!পাঞ্জাবি পাল্টে নতুন পাঞ্জাবি পড়ে নিলো!আতর মেখে মানিব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো বেশ উৎফুল্লতার সহিত…!
ফোন দুটো ভুল করে রেখে গেছে!

?
অপাকে নিজে হাতে খায়িয়ে দিচ্ছিলেন তিশা বেগম।সদর দরজা থেকে লম্বা সালাম ভেসে আসলো।
আসসালামু… আলাইকুম ভাবি!
তিশা বেগমের মুখটা পান্ডুর ন্যায় ফ্যাকাশে হয়ে গেলো!তবুও পলকের দিকে তাকাতে সে চোখ ইশারা করায় হাসি মুখে ওয়ালাইকুম আসসালাম বললেন!
অপা উৎকন্ঠা নিয়ে বলল বাবা তুমি?তুমি যাও নি রাজশাহী!
মুখটাতে রাগী ভাব এনে অপার হাত ধরে ড্রয়িং রুমের মাঝখানে দাঁড় করালেন আদনান সাহেব! তুমি তা দিলে কই?
কেনো বাবা কি হয়েছে?
কি হয়েছে?চল বাড়ি আজই তোমার বিয়ে দিবো আমি..
বাবা কি বলছো কি করেছি আমি?
কি করো নি তাই বলো বলেই পকেট হাতড়ে ফোন খুঁজতে লাগলো।
ফোনটা ফেলে আসছি!কলেজের সে ছেলেটা কে যার সাথে তুমি মাঠে জড়াজড়ি করছিলে?তুমি এতোটা নিচে নামতে পারো?আমি এসবের জন্য কলেজ পাঠাই তোমায়?
অপা রাগী ভাব নিয়ে পলকের দিকে তাকিয়ে বলল সব আপনি করেছেন আপনি বাবাকে…
আর কিছু বলার আগেই ধমক দিলো আদনান সাহেব!
চুপ করো!ও না বললে কি করে জানতাম তোমার কু কর্মের কথা!
বাবা…
সাট আপ!
রাগী মুড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অপা।পারছে না পলককে গিলে খায়!

দূর থেকে পলক মুচকি মুচকি হাসছে!শয়তানী হাসি হাসলো অপার দিকে তাকিয়ে!
তিশা বেগম সুর লাগিয়ে বললেন বউ মা তো আমিও খুঁজছি ভাই!তা মেয়েকে কি আমার ঘরে দেয়া যায় না?
আদনান সাহেব বুঝেও না বোঝার ভান করে বলল ঠিক বুঝলাম না ভাবী!
আমরা বসে কথা বলি!
জ্বি অবশ্যই বলেই সোফায় বসলেন আদনান সাহেব!
আসলে আমি বলতে চাইছি অপাকে আমি আমার পলকের বউ করে আনতে চাই যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে!
আদনান সাহেব পুরো কথা শেষ করার সাথে সাথেই বলল আমার কোনো আপত্তি নেই!আমি রাজি…তাছাড়া পলক খুব ভালো ছেলে।
তিশা বেগম ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলের দিকে তাকাতেই সে মেকি হাসি দিলো।
ফাস্ট প্ল্যান সাককেসফুল ইশারায় বলতেই বেস্ট অফ লাক বললো জয়!
ততক্ষণে জটলা পাকাতে উদ্ধত অপা।বাবা উনি আমার স্যার আমি ওনার স্টুডেন্ট আমি কি করে…
চুপ করো!তোমার মতামত কেউ চায় নি!কি কান্ড করো তা তো জানতে বাকী নেই বাবা হয়ে ছি ছি..
অপার এবার কান্না চলে এলো।ভীষণ কান্না…তবুও দাঁতে দাঁত চেপে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।
তাহলে ভাই কবে..
পুরো কথা শেষ হতে দিলো না আদনান সাহেব বলে উঠলেন আজ হলে তো ভালো হতো কিন্তু আজ তো প্রায় বিকেল হয়ে গেছে…
ও নিয়ে আপনি কিছু ভাববেন না আংকেল।আপনি যখন চাইছেন আজই সব ব্যবস্থা করছি।
বেশ খুশি হলেন আদনান সাহেব। কাঠ খড় না পুড়েই এত বড় স্বার্থ হাছিল করতে পারবে তার কল্পনায় আসে নি!
তিনি গা এলিয়ে বেশ আয়েশ করে সোফায় বসলো!
তিশা বেগম অপাকে উপরে যেতে বলে সেও গেলো।
পলকের কাছে গিয়ে বলল বাবা সব রেডি করেছিস তো?ধরা পড়লে কিন্তু…
ঘাবড়িও না মা!সব রেডি!আর এখন ধরা পরলেও সমস্যা নাই! সাথে সাথে সুট করে দিবো কারন খবর পেয়ে গেছি!আদনান রাজীবকে খুন করে এখানে এসেছে।
কি বলছিস?এত পরানের বন্ধুত্ব..
টাকার কাছে এসব কিছু না মা!রাজীব যখন জানতে পারলো অপাকে রিয়াদের সাথে বিয়ে দিলেও অপার নামে কোনো প্রোপারটি দিবে না তখনি বেঁকে বসলো রাজীব!ওমনি কথা তর্কাতর্কি চলতে থাকে একসময় স্যুট!
আর তাইতো সে আমার সাথে অপার বিয়ে দিতে রাজি হলো!

কিন্তু একটা কথা বুঝছি না এত তাড়াহুড়ো করছে কেনো?এক সপ্তাহ পরে হলেও তো হয়!ধুমধাম করে হতো!
মা পরশু অপার জন্মদিন! মানে আঠারো বছর পূর্ণ হবে তাই এ তাড়াহুড়ো! আদনান চায় ওর আঠারো বছর হওয়ার আগেই তার দুই ছেলের নামে প্রোপার্টি ভাগ করে দিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যেতে!কারণ আঠারো হলে অধিকার চাইতে পারে!বা ঝামেলা হতে পারে উইল করতে!

কি বলছিস?
ঠিকই বলছি মা..আজ বিয়ে হলে সে কালই চলে যাবে।
যা করার আজই করতে হবে তাহলে!
তুমি টেনশন নিও না।আমি সব ঠিক করে ফেলেছি!
আমরা সফল হবো তো বাবা?
হবো মা ইনশাআল্লাহ হবো!
মায়ের কপালে চুমু খেলো পলক!তিশা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে অপার কাছে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

চলবে_