ভালোবাসি পর্বঃ০৪

0
1300

ভালোবাসি?
পর্ব_০৪
লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

?
নতুন লাল শাড়ি আর নিজের কিছু গহনা দিয়ে অপাকে সাজিয়ে দেয় তিশা বেগম!
অপার রাগে মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। তবুও মুখ শক্ত করে সব সহ্য করছে শুধু বাবার কথায়!
নিচে নিয়ে আসতেই দেখলো পলক,আদনান সাহেব,উকিল, কাজী সহ আরো একজন লোক বসা!পাশের বাড়ির মনা আন্টিও এসেছেন!
অপাকে পলকের পাশে বসিয়ে নিজে মনা বেগমের পাশে বসলেন তিশা!
একটা খাতায় কিসব লিখে পলকের দিকে এগিয়ে দিলো কাজী। পলক সাইন করে অপার দিকে এগিয়ে দিলো! অপা কাঁপা হাতে কলম ধরলো!বাবার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিলেই তিনি চোখ বড়বড় করে বলল সাইন কর!
অপা সাইন করে নিলো!কাজী সাহেব ওত টাকা দেন মোহরে ওমুকের পুত্রের সাথে বিয়েতে রাজী থাকলে বলুব কবুল! এভাবে অপাকে কবুল বলতে বলল।
প্রথমবার একটু দেরী করে বললেও বাকী দুবার তাড়াতাড়ি ই বলে দিলো বাবার ধমকানীতে!পলক তো এক নিশ্বাসে বলে ফেললো!
সবাই মিষ্টি মুখ করল।কাজী বেরিয়ে গেলো।মনা বেগমের ফোন বাজলে সে জানালো তার হাসবেন্ড এসেছে অফিস থেকে সেও চলে গেলো।কাজীর সাথে আসা লোকটাও চলে গেলো।
সোফায় বসা চারজন মানুষ!অপা-পলক,উকিল আদনান, তিশা বেগম!
পলকের চোখের ইশারায় উকিল ফাইল বের করে আদনান রহমানের সামনে রেখে বলল স্যার সাইন করুন এখানটায়!কিসের পেপার বলেই প্রথম পাতায় চোখ বুলালেন তিনি।দ্বিতীয় পাতায় যেতে পৃষ্ঠা উল্টোতেই উকিলের ফোন বেজে উঠলো! হ্যালো বলে চিল্লাতেই সবাই তার দিকে তাকালো।হ্যা হ্যা বলেই ফোন রেখে দিয়ে বলল স্যার জলদি সাইন করুন সময় কম!আমার যেতে হবে।আর না পড়ে পরপর তিনপাতায় সাইন করে দিলেন আদনান সাহেব!
আদনান সাহেব বললেন রেজিস্ট্রি পেপার তিনটা কেনো?
আসলে অপরাজিতার তো আঠারো হতে কিছুদিন বাকী তাই আঠারো হলে সরকারি ভাবে সিল হয়ে কাবিন নামা আসতে একটা লাগবে।আরেকটা আমার কাছে রাখতে হবে।আরেকটা পলক বাবার কাছে রাখতে হবে!
ও আচ্ছা।বলে আর ঘাটালেন না তিনি।
উকিলও আর দেরী না করে বেরিয়ে গেলো!এগিয়ে দেয়ার নাম করে উকিলের পিছু পিছু গেলো পলক।ফাইলটা নিয়ে নিজের গাড়িতে রেখে বাসায় ডুকলো!
অপা বাবাকে জড়িয়ে ধরে আছে। কাঁদছে না তবে অভমান করে আছে!
বাবার থেকে সরে এসে সোফায় বসল।এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে অপা।ওর বিয়ে হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে তাও ওর সবচেয়ে অপছন্দের মানুষের সাথে ভাবতেই পারছে না অপা।

রাতের খাবার খেয়ে যেতে জোড় করলে তিনি রাজি হলেন না।সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে পলক বললো আংকেল আমি আপনাকে দিয়ে আসছি।
আমি তো গাড়ি এনেছি পলক।
সমস্যা নেই আপনার বাসায় গাড়ি পৌঁছে যাবে!
চলুন!
আচ্ছা চলো তবে..
আংকেল আমি আসছি এক মিনিট বলেই নিজের ঘরে চলে গেলো পলক।আলমারি থেকে গান বের করে পেছনে রেখে বেরিয়ে এলো।নিচে এসেই জানতে পারলো অপাও যেতে চায়।তিশা বেগম তো জানে কি ঘটতে চলেছে তাই সে অপাকে বারণ করলো যেতে কিন্তু নাহ সে নাছোড়বান্দা। সে বাবার সাথে যাবেই…
পলকের বারণ ও শুনতে রাজী নয়।আদনান রহমান বললেন যাক না পলক ও গেলে কি প্রবলেম?তোমার সাথেই না হয় এসে পড়বে!কতদিন আর দেখা হবে না…!

?
বাড়ির রাস্তায় না গিয়ে অন্য রাস্তা ধরলে আদনান সাহেব বলতে থাকেন পলক কোথায় যাচ্ছো!এদিকে কোথায় যাচ্ছো!
আংকেল এদিক দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়।
কিন্তু আমি তে চিনি না..
কেনো?আমি তো এদিক দিয়েই যাই..
অপা ঘুমে ডুলু।সামনে বসে আছে…
নিজের হাতের ঘড়িতে চোখ রাখল আদনান রহমান!দশটার কাছাকাছি…
শহর ছেড়ে নির্জন নদীর ধারে চলে এসেছে..
আদনান সাহেব বারবার বলছেন পলক গাড়ি থামাও পলক গাড়ি থামাও…
একটু হাসল পলক…গাড়ির দরজা খুলে আদনান রহমানকে বের করলো..
পলক আমায় এভাবে কেনো টানছে পলক এখানে কেনো এনোছো..চিৎকার করে বলতেই অপার ঘুম ভেঙে গেলো।দৌড়ে গেলো পলক আর তার বাবার কাছে।

বিশবছর আগে আমার বাবাকে খুন করেছেন তার প্রতিশোধ তুলতে এখানে এনেছি!১৪ বছর আগে আমার আন্টিকে খুন করেছেন তার প্রতিশোধ তুলতে এখানে এনেছি… আমাকে মারার চেষ্টা করেছেন বহুবার…সে গুলো..
হো হো করে হেসে দিলো আদনান!সব জেনে গেছো দেখছি এবার তো তাহলে তোমাকেও টপকে দিতে হয়..
আদনান রহমান গান বের করে পলকের দিকে তাক করলো..
চিৎকার করলো অপা…
বাবা তুমি…
চুপ একদম চুপ!আমায় বাবা ডাকবি না…তোর জন্য আজ এতকিছু হয়ে গেলো!
পলক ও গান বের করে তার দিকে তাক করলো!হেসে দিলো আদনান! পলক এ ভুল করতে যেও না তাহলে…
বলেই অপার দিকে গান ঘুরিয়ে ফেললো!
এক দুই তিন মনে মনে গুনেই আদনান রহমানের হাতে একটা বুকে তিনটা গুলি করে দিলো পলক!
বাবা…………….. বলে চিৎকার করে সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে গেলো অপা! পলক কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে দ্রুত অপাকে কোলে তুলে গাড়ি তে বসিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো!অপা না থাকলে লাশ গুম করে দেয়া যেতো কিন্তু ও থাকায় কেউ দেখলেও প্রবলেম!
.
.
.
.
.
.
ঘরে এনে শুয়িয়ে দিয়ে মায়ের ঘরে গেলো পলক!মা ইজি চেয়ারটায় বসে আছেন।পলক কাছে যেতেই তিনি উত্তেজিত কন্ঠে বলল পলক তুই ঠিকাছিস?কি হলো?ওই শয়তানটার..
মা প্ল্যান সাকসেসফুল! কিন্তু মা একটা ছোট ব্লান্ডার হয়ে গেছে..
কি?
আমি ভেবেছিলাম অপা ওই পারফিউমের সেন্টে বিভোর ঘুমে তলিয়ে যাবে কিন্তু মা ও ঘুম থেকে কিভাবে উঠে গেলো বুঝলাম না।ওর সামনেই…
ঘাবড়াস না পলক।সব ঠিক হয়ে যাবে..কই অপা?
সেন্সলেস হয়ে আছে..ঘরে
আচ্ছা তুই যা।সেন্স ফিরলে শান্ত রাখার চেষ্টা করিস।আর সবটা বুঝিয়ে বলিস!সব সত্য জানা দরকার ওর!
দীর্ঘশ্বাস নিলো তিশা বেগম।পলক বেরিয়ে যেতে নিলে তিশা বেগম বললেন তোর বাবার দেয়া কথা পূরণ করতে পেরেছিস বাবা।আজ একটা মানুষ খুন করায়ও আমার আক্ষেপ নেই রে বাবা…!
কাল আমি রাজশাহী যাবো।। তোর চাচী কল করেছে একটু আগে!আদনান রহমান যে রাজীবকে মেরেছ তা তারা সিউর…কাল দাফন কার্য সম্পন্ন করবে।আমায় যেতে ৪-৫ দিনের জন্য!
ওকে মা আমি ড্রাইভার কে বলে রাখবে..!
আসছি মা..!
পলক বেরিয়ে গেলে স্বামী আর বান্ধবীর ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো তিশা বেগম!
একরাশ চিন্তা মাথায় নিয়ে রুমের দিকে গেলো পলক!
কিন্তু এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না পলক!পুরো ঘর তছনছ হয়ে আছে!সাউন্ড প্রুফ বিধায় কিচ্ছু বাহির থেকে শোনা যায় নি!দরজাও ভিড়ানো ছিলো।
পলক ছুটে গেলো অপার কাছে…
অপা থামো প্লিজ..অপা কথাটা তো শোনো..নাহ অপা কোনো কথাই শুনছে না।চিৎকার করে ঘরের সব কিছু ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে…
পলক অপার কাছে এগিয়ে যেতে নিলেই অপা চিৎকার করে বলে আপনি আমার কাছে আসবেন না একদম আসবেন না!
পলক দ্রুত দরজা আটকে দেয়।মায়ের কানে এসব গেলে আরো টেনশন করবে।
দরজা আটকে পেছনে ফিরতেই দেখে ভাঙা কাচের টুকরো দিয়ে অপা পলককে আঘাত করতে আসছে।কোনো রকম হাত মুচড়ে কাঁচের টুকরো টা ফেলে দেয়।অপা পলককে খামচে কামড়ে ধরে।একদম মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের মত আচরণ করছে আর চেঁচাচ্ছে!
খুব জোড়ে অপার গালে চড় মারলো পলক।দু হাত এহাতের মুঠোয় নিয়ে বলল সবটা শুনো অপা!প্লিজ থামো!
অপা শান্ত হয়ে গেলো।চুপ করে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো পলকের দিকে।
অপাকে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো পলক!পাশের রুমে গিয়ে বিছানায় বসে অপাকে নিজের কোলে বসিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিলো!
বিড়াল ছানার মত চুপ করে গেলো অপা!
অপা আদনান রহমান তোমার নিজের জন্মদাতা পিতা হলেও তুমি যাকে নিজের মা জানো সে তোমার নিজের মা নয়!তোমার বাবা একজন খুনি!
অপা নড়েচড়ে বসে।অপলক দৃষ্টিতে পলকের দিকে তাকিয়ে থাকে।

চলবে_