মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-০৫

0
2628

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ০৫

মিশু রুহিকে নিয়ে অভিদের কাছে গিয়ে দাড়াতেই বডিগার্ড অন্য মেয়েদের সরাতে আরও বেস্ত হয়ে পরে। রুহি, মিশুকে বডিগার্ড কিছু না করায় কিছু মেয়ে রুদ্ধ নজরে তাকিয়ে আছে। অভিদ রুহিকে দেখেই মন ভোলানো হাসি দিয়ে রুহিকে টান দিয়ে কাছে এনে জড়িয়ে ধরে। সব গুলো মেয়ের যেন চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। সবাই রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আর মিশু, রায়হান মিটমিট করে হাসছে।

এতো মানুষের সামনে এভাবে জড়িয়ে ধরায় রুহি লজ্জা পরে যায়। অভি রুহিকে ছেড়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখে রুহির মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। অভি মুচকি হেসে সবার দিকে তাকায়। সবাই এখনও হা করে বড়বড় চোখে তাকিয়ে আছে। এতো বড় শকটা কেউ নিতে পারছে না।

অভি এক ভ্রু উচু করে তার স্টাইলে বলে
” Ruhi is my would be wife. And you all stay away from me. Understand??? ”
কয়েকটা মেয়ে মাথা নেড়ে তাদের স্থান ত্যাগ করে আর কয়েকটা মেয়ে কাঁদোকাঁদো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন ভ্যা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ও দিয়েছে। অভি বিরক্তি নিয়ে কান্না করা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে একটা রাগি লুক দেয়। মেয়েরা অভির রাগি লুক দেখে মুখ চেপে ধরে দৌড় দেয়।

মিশু ফিকফিক করে হেসে বলে
” আহারে, অসহায় মেয়ে গুলোর জন্য মায়া লাগছে। ওদের এতো দিনের স্বপ্নের ক্রাশকে অন্য মেয়ের সাথে দেখে একেক জন খুব কষ্ট পেয়েছে।”

রায়হানও হেসে দেয়। অভি মিশুকে বলে
” তোমাকে তো চিনলাম না তুমি কে ”

মিশু তার চুলের উঁচু ঝুটিটা কাধ থেকে পেছনে ফেলে ভাব নিয়ে বলে
” আমি হলাম আপনার বড় শালি। মানে আপনার হবু বউ এর বেস্টু ”

অভি তার হাতের সানগ্লাস টা চোখে দিয়ে বলে
” ওও তুমিই তাহলে মিশু। ”
অভির কথায় মিশু, রুহি দুজনই অবাক হয়। মিশু অবাক হয়ে বলে
” oh my Allahhh, ভাইয়া !!আপনি কি করে জানলেন আমার নাম ”

অভি বাকা হেসে বলে
” অভিদ রায়জাদার জন্য একটা নাম জানা কিছু না। তোমাকে একটা দায়িত্ব দেবো ঠিক ভাবে পালন করতে পারবে তো ??”

মিশু লাফিয়ে বলে
” আরে ভাইয়া একবার বলে তো দেখুন আমি আপনার একটা কেনো হাজারটা কাজ করে দেবো। শুধু একবার বলে দেখুন ”

অভি গম্ভীর গলায় বলে
” তোমার কাজ হলো তোমার ফ্রেন্ডকে দেখে রাখা। যদি কেউ রুহির কিছু করে তাহলে আমাকে জানাবে। ”

মিশু হেসে বলে
” ওক্কে ভাইয়া সব জানাবো।এতো ছোট একটা কাজ তো সবাই পারবে ”

রুহি এতোক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। অভিকে প্রশ্ন করার জন্য সুযোগ খুজছিলো। এখন সুযোগ পেয়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
” আপনি হঠাৎ এখানে এলেন যে ”

অভি কিছু বলার আগেই রায়হান বলে উঠে
” ভাবি আর বলবেন না অভি আপনার কাছে আসার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলো তাই নিয়ে এলাম। ”

রুহি অভির দিকে তাকাতেই অভি ঠোটের ইশারায় চুমু দেয়। রুহি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। অভি বাকা হেসে মিশু আর রায়হানকে বলে
” তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠো শপিং মলে এ যাবো ”

মিশু অবাক হয়ে বলে
” শপিং মল !! এখন কিসের শপিং করা হবে ”

রায়হান হেসে বলে
” কালকে অভি এবং রুহির engagement. ”

রুহি রায়হানের কথা শুনে আকাশ থেকে পরে. রুহি অবাক হয়ে বলে
” মানে কিসের engagement. আমি তো কিছুই জানি না ”

অভি শান্ত গলায় বলে
” জানবে কি করে আমি একটু আগে আংকেলের সাথে কথা বলে সব ঠিক করেছি।

রুহি অবাক হলেও পরে বলে
” আব্বু জানে আপনি এখানে এসেছে ??”

অভি ভ্রু কুচকে বলে
” আমি সব জানিয়েই এসেছি। আমার শশুরকে বলেছি আমার বউ এর কালকের ফাংশনের জন্য শপিংটা আমি করবো। শশুর মানতে নারাজ অনেক জোর করে মানিয়েছি। এখন তুমি আবার বেকে যেও না। এখন কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠো।”

রুহি, মিশু চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। অভিদ, রায়হানও গাড়িতে উঠে বসে। রায়হান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর অভিদ সামনের গ্লাস দিয়ে রুহিকে দেখছে। সবাইকে চুপচাপ দেখে মিশু মোবাইলে গেইম খেলছে।
রুহির সব কিছুই বিরক্ত লাগছে। এমন হুটহাট কাজকর্ম ভালোলাগছে না তার। বিরক্তি নিয়ে সিটে মাথা এলিয়ে বাইরের দিকে তাকায়।

শপিং মলে এসেছে অনেক্ষণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অভি এখনও ড্রেস পছন্দ করে উঠতে পারেনি। অভি একের পর এক লেহেঙ্গা দেখে যাচ্ছে কিন্তু রুহির জন্য একটাও পছন্দ হচ্ছে না তার। একটা লেহেঙ্গা হাতে নিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে দেখে রুহিকে সেই লেহেঙ্গায় মানাবে কিনা। যখন দেখে ভালো হচ্ছে না তখন ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। রুহি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
আর মিশু, রায়হান শপিং শেষ করে বসে আছে। অসহায় ভাবে অভিকে দেখছে। রাইমা তার কলেজ থাকায় আসতে পারেনি তাই অভি রাইমার জন্যও ড্রেস কিনে নিয়েছে।

প্রায় আরো আধা ঘন্টা পরে অভির একটা ড্রেস পছন্দ সিউর হওয়ার জন্য রুহিকে নিয়ে আয়নার সামনে দার করিয়ে কিছুক্ষণ দেখে বলে
” এই ড্রেসটা একটু ট্রায়াল দিয়ে এসো ”

রুহির কান্না করতে ইচ্ছে করছে। রুহি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে
” আবার ট্রায়াল কিসের জন্য প্রয়োজন ?? এটা দেখতে তো এমনি তেই সুন্দর ”

অভি কঠোর ভাবে বলে
” কথা না বলে তাড়াতাড়ি ট্রায়াল দিয়ে এসো ”
রুহি গোমড়া মুখ করে ট্রায়াল রুমে চলে যায়। অভি অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পরেই ট্রায়াল রুম থেকে রুহি বেড়িয়ে আসে।

অভি রুহির দিকে তাকাতেই অভির চোখ আটকে যায়। মিশু, রায়হানও হা করে তাকিয়ে আছে। রুহিকে সাজ ছাড়াই অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
অভির মুখে এক চিলতি হাসি ফোটে রুহিকে দেখে।
অভি রুহির কাছে এসে রুহির খোলা চুল সামনে থেকে সরিয়ে কানে গুজে দিয়ে বলে
” খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে। মাই উডবি মিসেস.”

রুহি মলিন হাসি দেয়। মিশু এসে বলে
” ভাইয়া আপনার choice অসাধারণ ”
রায়হান এগিয়ে এসে ভাব নিয়ে বলে
” দেখতে হবে তো বন্ধুটা কার ”

অভি গম্ভীর কন্ঠে বলে
” চুপ কর তোরা। রুহি ড্রেসটা চেঞ্জ করে এসো। ”
রুহি আবার ট্রায়াল রুমে ঢুকে যায়, কিছুক্ষণ এর মাঝে বেড়িয়ে লেহেঙ্গাটা অভির কাছে দেয়।

অভি লেহেঙ্গাটা সিলেক্ট করে দোকানদারকে প্যাক করে দিতে বলে নিজের জন্য শেরওয়ানি কিনতে যায়।
অভি রুহির ড্রেসের সাথে মেচিং করে শেরওয়ানি নেয়। সাথে রুহির জন্য ডাইমন্ডের নেকলেস সহ আরও অনেক কিছুই কিনে নেয়। সব কেনা শেষ করে আবার রুহির লেহেঙ্গার দোকানে আসে।
লেহেঙ্গার ব্যাগ হাতে নিয়ে দোকানদারকে বলে
” কতো হয়েছে ”

দোকানদার বললো
” ৯০ হাজার স্যার ” রুহি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। আর মিশু তখন ক্লান্ত লাগায় একটা বোতল কিনে নিয়েছিলো। দোকানে এসে বসে পানি খাচ্ছিলো কিন্তু দোকানদারের কথায় সেই পানিটা আর গলা দিয়ে নামলো না গলায় আটকে বিষম উঠে গিয়েছে। রায়হান মিশুকে বিষম খেতে দেখে হা হা করে হেসে দেয়। মিশুর কাশি থামার নাম নেয় না। যক্ষ্মা রোগির মতো কাশছে। রায়হান কিছুক্ষণ হেসে মিশুকে থামানোর চেষ্টা করতে থাকে।

অভি কার্ড দিয়ে বিল পে করে সবাইকে নিয়ে শপিং মল থেকে বেড়িয়ে আসে। রায়হান গাড়িতে উঠে বলে
” ভাই সেই দুপুরে এসেছিলাম। তোর জন্য এখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। সবার নিশ্চই অনেক খিদে পেয়েছে আমি রেস্টুরেন্টের দিকে গাড়ি ঘুরাচ্ছি ”

অভি স্বায় দিয়ে বলে
” ঠিকাছে ” অভির নিজস্ব একটা ফাইভস্টার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রায়হান সেই রেস্টুরেন্টের দিকেই গাড়ি ঘোরায়।

গাড়ি এসে ★ the royal food lunch ★ রেস্টুরেন্ট এর সামনে থামে। রায়হান রুহি,মিশু, অভিকে নামিয়ে গাড়ি পার্কিং জুনে পার্ক করে আসে। অভি সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ম্যানেজার এসে অভিকে থার্ড ফ্লোরে নিয়ে যায়। থার্ড ফ্লোরের স্পেশাল টেবিলে অভিকে বসানো হয়। অভি এখানে আসার আগেই রায়হান ম্যানেজারকে বলে স্পেশাল ভাবে টেবিল বুক করে রাখে, আজকে হুট করে আসায় সব কিছু নরমাল রয়েছে।

ম্যানেজার অভিকে বলে
” স্যার আপনাদের জন্য কোন কোন ডিশ অর্ডার করবো ”

অভি হালকা হেসে বলে
” এক্সপেন্সিভ সব ডিশ গুলো নিয়ে সার্ভ করুন ”
ম্যানেজার মাথা নেড়ে বলে
” ওকে স্যার এক্ষনই পাঠাচ্ছি “বলে চলে যায়।

রুহি, মিশু চারপাশটা দেখে নিচ্ছে। নরমাল হলেও চারদিকে মনোরম ডেকোরেশন দেখে মনটা ভালো হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পরেই ওয়েটার অনেক গুলো ডিশ এনে সার্ভ করে। চারজনই কম বেশি খেয়ে বেড়িয়ে যায়।
মিশু, রুহিকে বাড়িতে ড্রপ করে অভি, রায়হান বাড়িতে ফিরে আসে।

ক্লান্ত থাকায় অভি, রায়হান ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরে। রুহিও বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। রাইমা এসে বলে শপিং দেখিবে তাই রুহু সব শপিং ব্যাগ রাইমাকে দিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

চলবে… wait for next part….