মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-০৮

0
2334

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ০৮

জিহান, ফুপি, অনি, রায়হান, রুহি, রাইমা সবাই মুখে হাত দিয়ে হাসছে কারন জোতির সামনে এখন হাসলেও বিপদজনক ঘটনা ঘটবে তাই। জোতি রেগে সেখান থেকে প্রস্থান করে। জোতি যেতেই সবাই জোড়ে হেসে দেয়।
তবে জোতি শুনতে পায়নি নাহলে রক্ষে ছিলো না।

জোতি রাগে গিজগিজ করছে। ভাবতেও পারেনি কেউ ওকে এভাবে অপমান করবে। জোতি রেগে
তার একটা বয়ফ্রেন্ডকে ফোন করে। ফোন রিসিভ করতেই বলে উঠে
” এড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি চলে এসো ”

ওপাশ থেকে ছেলেটা অবাক হয়ে বলে
” কোথায় আসবো ?? আর এতো রাতে কেনো ”

জোতি নিজের রাগটাকে সংযত রেখে ন্যাকামি করে বলে
” বেবি!! তুমিই তো কয়েকদিন ধরে রুম ডেট করতে চাইছিলে। আজকে নাহয় তোমার ইচ্ছেটা পূরণ করি ”

ছেলেটা খুশি হয়ে বলে
” সত্যি বেবি। ওকে আমি এক্ষনই আসছি তুমি জাস্ট একটু ওয়েট করো ” জোতি ফোন কেটে
একবার অভির দিকে তাকিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

সবাই এখনও হাসছে। নিলা একসময় হাসি থামিয়ে অভিকে বলে
” আচ্ছা ভাইয়া তখনকার লাইট অফ হয়ে যাওয়ার বিষয়টা কি হয়েছিলো ”

রায়হান অভির কাধে হাতের ভর দিয়ে দাড়িয়ে বলে
” ওটা অভিই করেছিলো। অভি বলেছিলো রুহি বাড়িতে পা দেওয়ার সময় যেন সব লাইট জ্বলে উঠে আর চারদিক আলোকিত হয়ে যায় ”

রাইমা আবার হেসে দিয়ে বলে
” কিন্তু আপুর আগে যখন জোতি আপু পা রেখেছিলো তখন লাইট অফ হয়ে গিয়েছিলো আর আমি ফোনের লাইট দিয়ে দেখেছি জোতি আপুর মুখটা দেখার মতো ছিলো। যদি আপুর একটা ছবি তুলে রাখলে পারতাম !!” রাইমার কথায় সবাই আবার হেসে উঠে।
এরকম অপমান জোতি আগে কখনও হয়নি। তাই ওরা একটু অবাক।

পার্টি শেষে রুহিরা সবাই বেড়িয়ে পরে। অভি রায়হান, অনি, ফুপি এগিয়ে দিতে আসে। ফুপি রুহির মা-বাবার সাথে কথা বলছে। অনি এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলে
” লাভ ইউ ভাবি। মিস করবো তাড়াতাড়ি আমার ভাইয়ের বউ হয়ে এসো।”

রুহি মিষ্টি হাসি দিয়ে অনির গালে হাত রেখে বলে
” লাভ ইউ টু। তুমি আমাদের বাড়িতে যেও গল্প করবো আমরা ”

অনি গোমড়া মুখ করে বলে
” কিন্তু ভাইয়া তো বডিগার্ড ছাড়া কোথাও যেতে দেয় না। আর আমার ঘুরতে গেলে বডিগার্ড একদম ভালো লাগে না। ”

রুহি হালকা হেসে বলে
” আরে মন খারাপ করার কি আছে ?? আমি কথা বলে দেখবো। ওকে ??” অনি খুশি হয়ে মাথা নাড়ায়। অভিদ এসে ওদের কাছে দাড়াতেই অনি দুজনকে একা ছেড়ে মিশুদের কাছে যায়।

অভিদ গলা ঝেড়ে বলে
” আই এম সরি। তখন এর জন্য ”
রুহি কিছু বুঝতে না পেরে বলে
” কখন এর জন্য ”

অভিদ মাথা চুলকে বলে
” ওই যে গেস্ট রুমে যে ” অভিদের এইটুকু কথায় রুহির খেয়াল আসে অভিদ কি বলছে। রুহি মাথা নিচু করে ফেলে।
অভিদ ইতস্তত বোধ করে বলে
” আমি সত্যি ইচ্ছে করে করিনি। I am sorry. ”

রুহি মাথা নিচু রেখেই মিহি সুরে বলে
” it’s ok.”

অভি একটু শান্ত হয়ে বলে
” thanks. বাসায় পৌছে মেসেজ করে দিও।” রুহি মাথা নেড়ে গাড়িতে উঠে বসে।

রুহিরা চলে যেতেই অভিদরা বাড়িতে ঢুকে যায়। অনি আর ফুপি রেস্ট নিতে চলে যায়।
অভিদ, রায়হান ফ্রেশ হয়ে তাদের কাজ নিয়ে বসে পরে।

পথেই মিশুদের বাড়ি হওয়ায় তারা বাড়িতে চলে যায়।
রুহিরা সবাই বাড়িতে পৌছেই যার যার রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। রুহি তার রুমে ঢুকেই অভিকে মেসেজ করে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

রুহির চাচা, ফুপিরা রুহির বিয়ে পর্যন্ত এখানেই থাকবে। বিয়ের ডেট না করা হলেও অভিদ বলেছে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে। রুহির চাচা, ফুপিরা চট্টগ্রামে থাকে যার কারণে এখন গেলে হয়তো আবার আসতে দেড়ি হবে। আর রুহির দুই মামা ঢাকায় থাকে তাদের ব্যাবসার সুবিধার জন্য। সেজন্য তারা কালকে তাদের বাড়িতে চলে যাবে আর বিয়ের আগে আবার আসবে।

রুহু ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পরলো। রুহির সাথে আজকে রাইমা, নিলা ঘুমিয়েছে। রুহি আজকে পার্টির কথা ভাবতে থাকে। রুহির অভির কথা মনে পরতেই লজ্জায় গাল দুটি লাল রং ধারণ করে।

অভির ভাবনার মাঝেই হঠাৎ খেয়াল আসে অভির মা-বাবার কথা। অভির ফুপি, বোনকে দেখে অভিদের মা-বাবার কথা মাথায় আসে। তখন গল্পের মাঝে ভুলে গিয়েছিলো কিন্তু এখন আবার মাথায় আসে।
রুহি বিরবির করে বলে
” উনার মা – বাবাকে তো দেখলাম না। ওনারা কোথায় থাকে ?? ওদের মুখে তো মা-বাবার কথা শুনলাম না। যাই হোক পরে নাহয় আমার মাফিয়া ক্রাশটা কে জিজ্ঞেস করে নেবো ”

রুহি তার ফোন নিয়ে আজকের পার্টির ছবি গুলো দেখতে থাকে। ছবি দেখতে দেখতে রুহি আবার আরেক ভাবনায় ডুবে যায়। রুহির আবার অভিদের দেওয়া থ্রেটের কথা মনে পরে যায়।
রুহির মনে আবার ভয় হতে শুরু করে। হঠাৎ মুখে বিরক্তিভাব এনে কপাল চাপড়ে বলে
” উফফ রুহি তুইও না এতো বোকা কেনো ??উনি বলেছেন বিয়েতে রাজি না হলে আমার পরিবারের ক্ষতি করবেন কিন্তু আমি তো এখন রাজি আর বিয়েও হবে আমাদের তাহলে আর ভয় কিসের। আমারও এখন একটু একটু খুশি লাগছে আমার ক্রাশের সাথে বিয়ে হবে বলে কথা। তাও আবার যেই সেই ক্রাশ না
মাফিয়া_ক্রাশ। দিল তো খুশ হোগেয়া। যাই হোক এখন ঘুম পেয়েছে ঘুমিয়ে নেই। ”
রুহি তার ফোন পাশে রেখে ব্ল্যাংকেট টেনে ঘুমিয়ে পড়ে।

এদিকে
রহমান মেনশনের ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে আখিল রহমান। তার অগ্নিচোখ জোড়া সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার সব বডিগার্ডের দিকে নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার পারসোনাল এসিসটেন্ট আশিক।

আখিল গম্ভীর গলায় বলে উঠে
” এখনও কি কেউ কিছু বলবি না নাকি কালকে যখন অভিদ রায়জাদার লোক তোদের মধ্যে থেকে আসল দোষীকে তুলে নিয়ে যাবে তখন মুখ খুলবি ?? আমি চাইলে এখনি আসল দোষী কে বের করতে পারি কিন্তু আমি চাই নিজে এসে ধরা দে। সময় নেই তাড়াতাড়ি সামনে আয় ”

বডিগার্ডের থেকে একজন এসে আখিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বলে
” স্যার আমি আপনাকে খুশি করার জন্য সিক্রেট ফাইল আনতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ফাইলটা পেলে আপনি খুশি হবেন। কিন্তু ছেলেটা ধরা পরে যাওয়ায় সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে ”

আখিল উঠে তার সর্বশক্তি দিয়ে তাকে থাপ্পড় মারে। চেচিয়ে বলে
” তোদের এই পদে আসারর আগেই সব বলে দেওয়া হয়েছে । তাহলে আমার অনুমতি ছাড়া তোদের এসব কাজ করার সাহস কোথা থেকে এলো।আর তোকে কে বলেছিলো রায়জাদা কোম্পানির সিক্রেট ফাইল পেলে আমি খুশি হয়ে যাবো বল ”

সেই বডিগার্ডটা মাথা নিচু করে রেখে বলে
” স্যার সিক্রেট ফাইলটা আপনার হাতে আসলে আপনি অভিদ রায়জাদাকে রাস্তায় নামিয়ে দিতে পারতেন আর অভিদ রায়জাদার জায়গায় আপনার কোম্পানি পৌছে যেতো। অভিদ রায়জাদার সব পাওয়ার এক নিমিষেই শেষ হয়ে যেতো ”

আখিল চোয়াল শক্ত করে দাতে দাত চেপে বলে
” আখিল রহমান পেছন থেকে ছুড়ি মারে না। যা করার সামনে থেকে করে। অভিদ রায়জাদাকে শেষ করলস আমি সামনা সামনি ওকে শেষ করবো। তার জন্য তোদের দরকার নেই ” বপে টেবিলের উপর থেকে গান নিয়ে বডিগার্ডের বুকে গুলি করে দেয়।

বডিগার্ড বুকে হাত দিয়ে চিৎকার করে পরে যায়।
আখিল আশিককে উদ্দেশ্য করে বলে
” অভিদ রায়জাদার নাকি আজকে engagement ছিলো ?? ”

আশিক শান্ত গলায় বলে
” জী স্যার। অভিদ রায়জাদা তার পছন্দ মেয়েকে বিয়ে করছে ”
আখিল সিরি বেয়ে রুমে যেতে যেতে বলে
” সব ডিটেইলস চাই মেয়েটার ”

আজকে রুহির বাড়ির বড়রা সবাই অভিদের বাড়িতে গিয়েছে রুহি, অভিদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করার জন্য। দুপুরের দিকেই গিয়েছে। বিকেলে রুহি ভার্সিটি, কোচিং শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসে। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে, নিলা, রাইমা, মিশু, রুহি, নিলয় (নিলার ভাই), জিহান, ফুপির দুই ছেলে মেয়ে সবাই মিলে গল্পের আসর জমায়। মিশুকেও নিয়ে এসেছে আজকে গল্প করবে বলে।

গল্প করতে করতে নিলা বলে উঠে
“আমাদের জিজু অনেক ভালোবাসে আমাদের রুহিকে। তাই তো এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে চাইছে ”

রুহি চোখ ছোট ছোট করে বলে
” উনি বলেছেন তোকে আমাকে ভালোবাসে ”

মিশু গালে হাত রেখে বলে
” উরিম্মা, তোকে ভালো না বাসলে বিয়ে করতো নাকি। ভাইয়ার পেছনে কতো হাজার হাজার মেয়ে ঘুরে বেরায় আর সেই এতো মেয়ের মধ্যে তোকে বেছে নিয়েছে তার জীবন সঙ্গি হিসেবে। তারপরও তুই বলছিস তোকে ভালোবাসে না ”

জিহান রুহির চুল টান দিয়ে বলে
” রুহি তো কিছু বুঝেই না। তাহলে ও কি করে বুঝবে ভালোবাসা কাকে বলে ”

রুহি মাথা হাত দিয়ে বলে
” হুহ, এমম ভাবে বলছো যেন মনে হচ্ছে তোমরা ভালোবাসা নিয়ে PHD করেছো ”

নিলয় বলে
” ওরা করেনি তবে আমি করেছি ”
রুহি ভেংচি দিয়ে বলে
” হ্যা জানি আমরা। তুমি তো গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরো। বিয়েও ঠিক করে রেখেছো ”

রাইমা মুখ টিপে হেসে বলে
“একেই বলে ওভার ফাস্ট। পড়াশোনা শেষ করার আগেই বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। যেদিন শেষ পরীক্ষা দেবে সেইদিনই বিকেলে বিয়ে করে ফেলবে ” রাইমার কথায় সবাই হেসে উঠে। নিলয় মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।

” তা রুহি অভিদকে কি দিয়ে বস করেছিস ” এমন কথা শুনে সবার হাসি বন্ধ হয়ে যায়। সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে জোতি দাঁড়িয়ে আছে। পরনে এখনও কালকের পার্টির ড্রেস রয়েছ।

সবাই খাট থেকে নেমে দাঁড়ায়। জিহান জোতির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে
” কালকে রাত থেকে কোথায় ছিলি তুই। জানিস সবাই কতো টেন্স ছিলো। মা – বাবা তোর চিন্তায় আজকে বাড়িতে চলে গিয়েছে ভেবেছে তুই বাড়িতে গিয়েছিস ”

জোতি জিহাতের আরও কাছে এসে বলে
” কালকে রাতে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেটে ছিলাম। এখন সরো সামনে থেকে ”

জিহান ঘৃনা দৃষ্টিতে জোতির দিকে তাকিয়ে আছে। বড় ভাইয়ের সামনে এসব বলতে জিভে বাধছে না জোতির। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

জোতি রুহির সামনে এসে বলে
” কিরে বললি না তো অভিদকে কি করে বস করেছিস ?? নিজের শরীর দেখিয়ে বস করেছিস তাই না ?? তা না করলে অভিদ রায়জাদার মতো একজন মানুষ তোর মতো একজন সাধারণ একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইব কেনো ?? তা কোন হোটেল রুমে গিয়েছিলি ??”

জোতির কথায় রুহির চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পরছে। রুহি মাথা নিচু করে কাদছে। সবাই জোতির উপর খেপে গিয়েছে। জিহান সহ্য করতে না পেরে জোতিকে টেনে একটা থাপ্পড় বরিয়ে দেয়।

জোতি থাপ্পড় খেয়ে কিছুক্ষণ জিহানের দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে থেকে আবার রুহির সামনে এসে বাকা হেসে বলে
” শরীর দেখিয়ে অভিদকে তো বস করেই ফেলেছিস। তার আগে কজনকে বস করেছিলি ”

রুহি ঢুকড়ে কেদে দেয়। মিশু এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে জোতিকে ধমক দিয়ে বলে
” জোতি বেশি বাড়াবাড়ি করছো তুমি। একবার যদি তোমার বাবা বা অভিদ ভাইয়ার কানে এসব যায় না ফল কিন্তু ভালো হবে না ”

জোতি হা হা করে উঠে বলে
” তা তুমিও কি এই লাইনেই আছো ?? তুমি কাকে বস করবে বলএ প্লেন করছো ??” মিশু অবাক হয়ে তাকায়।জিহান জোতিকে কিছু বলতে নিলেই জোতি রুম থেকে বেড়য়ে যায়।

জিহান এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে রুহির কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। সবাই রুহির কান্না থামাতে চাইছে। কিন্তু রুহির কান্না কিছুতেই থামছে না। এদিকে রাইমা আর নিলা রুম থেকে বেড়িয়ে অভিদকে ফোন করে সব জানিয়ে দেয়।

চলবে… wait for next part….

ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।