মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-৫২ এবং শেষ পর্ব

0
2627

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৫২(শেষ)
তিন বসন্ত কেটে গেলো। সবার জীবনের ক্যালেন্ডার থেকে তিন তিনটে বছর কেটে গিয়েছে। অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে আবার কিছুই বদলায়নি। অভিদ, রুহির সেই ভালোবাসা বিদলায়নি। সবার ভালোবাসা গুলো আগের মতো রয়েছে। বলতে গেলে আরো মজবুত হয়েছে। আজকে বাড়ির দুই ছেলে, মেয়ে অনি আর তুষারের গায়ের হলুদের তোড়জোড় চলছে। কেউ কোনো কমতি রাখছে না। কেউ এদিক ছুটছে তো কেউ ওদিক ছুটছে। সবাই ব্যাস্ত।
একমাত্র বোন আর ভাইয়ের বিয়েতে অভিদরা নিশ্বাস ফেলার সময় টুকু পাচ্ছে না। ফুপি শাড়ির আঁচলে চোখ মুচ্ছে আর কাজ করছে।
অনি সারাদিন ধরে বসে বসে আখিলের সাথে কথা বলছে। সবাই কাজে ব্যস্ত আর কেউ ওকে কোনো কাজে হাত লাগাতে দিচ্ছে না তাই বসে বসে আখিলের সাথে কথা বলে যাচ্ছে। রুহি, অভিদ, মিশু, রায়হান, তুষার সবাই দৌড়া দৌড়ি করছে। তুষারকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে তুষারের কালকে বিয়ে। বোনের বিয়ের সব কাজ ছুটে ছুটে করছে। সন্ধ্যা হয়ে আসতেই সবাই তৈরি হতে রুমে ছুট লাগায়। পার্লারের মেয়েরা অনিকে তৈরি দিতে গিয়েছে তাই সবাই নিশ্চিন্ত হয়ে রেডি হতে গেলো।

রুহি ঠান্ডা পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে রুমে চলে আসলো। বেশি ক্লান্ত লাগছে তাই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। অভিদ রুমে এসে বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে। রুহিকেও শুয়ে থাকতে দেখে বলে
” তুমি কখন এসেছো ??” রুহি ক্লান্তভাবে অভিদের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়। অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পরে। কিছুক্ষণ পরে অভিদ শোয়া থেকে উঠে যায় রেডি হতে হবে তাই। আলমারি খুলতে নিলেই রুহির দিকে চোখ যায়। অভিদ ভ্রু কুচকে আলমারি ছেড়ে রুহির সামনে এসে বসে। রুহিকে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে দেখে বুঝতে পারলো রুহি ঘুমিয়ে গিয়েছে। অভিদ চিন্তিত হয়ে গেলো কারণ কিছুদিন যাবত তার কাছে রুহিকে অন্যরকম লাগছে।অভিদ রুহির হাতে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাকতে থাকে
” রুহি !! রুহি উঠো ?? সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তৈরি হতে হবে তো রুহি !!” অভিদের ডাকে রুহি ঘুম ঘুম চোখে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” কি হয়েছে ডাকছেন কেনো।” অভিদ চিন্তিত মুখে রুহিকে উঠিয়ে বসিয়ে বলে
” কি হয়েছে সেটা তো তুমি বলবে। কয়েক দিন ধরে দেখছি তুমি বিছানায় শোয়ার আগেই ঘুমিয়ে যাও। খাও না ভালো করে। আবার মাঝে মাঝে রাত জেগে বসে থাকো। কি হয়েছে তোমার ?? তুমি কি অসুস্থ !! ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো ??” রুহি মাথা নেড়ে বলে
” নাহ ডক্টর ডাকতে হবে না। এমনি টায়ার্ড ছিলাম তাই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।” অভিদ ভ্রু কুচকে বলে
” আজকে টায়ার্ড ছিলে তাই বলে কি প্রতিদিন টায়ার্ড থাকো ??” রুহি কথা ঘুরানোর জন্য বিরক্তিকর চেহারা করে বলে
” আপনি এখনো তৈরি না হয়ে আমাকে এতো প্রশ্ন করছেন কেনো ?? আগে তৈরি হয়ে নিন তারপর কথা বলবো। আমি ড্রেস চেঞ্জ করে আসছি।” রুহি অভিদকে পাশ কাটিয়ে এলোমেলো পায়ে শাড়ি সামলে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ড্রেস বের করে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো দ্রুত। অভিদ সেদিকে তাকিয়ে রইলো। রুহি মাঝে মাঝে কেমন যেন খিটখিটে আচরণ করে। রুহিকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে তৈরি হতে থাকে। রুহি ওয়াসরুমে ঢুকেই বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে বমি করতে থাকে। বমি করতে করতে পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসার উপক্রম কিন্তু বমি থামছেই না। কিছুক্ষণ পরে মুখে পানি ছিটিয়ে ভেসিন ধরে ঝর্ণা চালু করে দেয়ালে হেলান দিয়ে নিচে বসে পরে।

আধ ঘন্টা হয়ে যাওয়ার পরও রুহি না আসায় অভিদ গলা ছেড়ে ডেকে উঠে
” রুহি !! এতো সময় হয়ে গিয়েছে এখনও হয়নি ?? তাড়াতাড়ি বের হও।” অভিদের ডাক শুমে রুহি তাড়াতাড়ি ঝর্ণা অফ করে ড্রেস চেঞ্জ করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে আসতেই অভিদের মুখোমুখি হয়। অভিদ রুহিকে দেখে অবাক হয়ে বলে
” তুমি এখন শাওয়ার নিয়েছো ?? ঠান্ডা লাগবে তো নাকি !!” রুহি মিরের সামনে দাঁড়িয়ে হেয়ার ড্রাইয়ার হাতে নিয়ে বলে
” কিছু হবে না। এখনি শুকিয়ে নিচ্ছি।” অভিদ হাত থেকে ড্রাইয়ার কেড়ে নিয়ে বলে
” না এটা দেবে না। তোমার তো এটা হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে চুল শুকাল্র মাথা ব্যাথা করে। তুমি বসো।” অভিদ হেয়ার ড্রাইয়ার রেখে রুহিকে বসিয়ে ভালো করে চুল মুছে দিতে লাগলো। অভিদ চুল মুছা শেষ করে বলে
” নাও শেষ এখনি তৈরি হয়ে নাও আমাদের তো বেরোতে হবে !!” রুহি মাথা নেড়ে সাজা শুরু করে। অভিদ রুম থেকে বেড়িয়ে অনির কাছে চলে গেলো অনি তৈরি হয়েছে কিনা দেখার জন্য।
অনির রুমে সামনে এসে নক করতেই একজন মেয়ে খুলে দেয়। সবাই অভিদকে দেখে একটু ভয়েই বেড়িয়ে গেলো। অভিদ অনির দিকে তাকিয়ে রইলো। আজকে অনিকে যেন হঠাৎ করেই অনেক বড় মনে হচ্ছে।অভিদ গিয়ে অনির পাশে বসতেই দেখতে পেলো অনি মাথা নিচু করে কাঁদছে। অভিদ অনির চোখের পানি মুছিয়ে দিতেই অনি অভিদকে জড়িয়ে কেঁদে দেয়। অভিদ অনির পিঠে হাত রাখতেই অনি বলে উঠে
” ভাইয়া আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমি তোমাদের সাথেই থাকবো। তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না ভাইয়া !!” বোনের কথায় অভিদের চোখ ছলছল করে উঠলো। অভিদ ভাঙা গলায় বলে
” এমন বলে না বোনু। সবাইকেই শশুর বাড়ি যেতে হয়। আমরা তো এখন কাছেই আছি যখন ইচ্ছে চলে আসবি। নাহলে আখিলের সাথে ঝগরা করে করে বাপের বাড়ি চলে আসবি। বুঝেছিস ??” অভিদের কথা শুন অনির কান্না মুখেও হাসি ফুটলো। অনি ফিকফিক করে হেসে দেয়। অভিদ মুচকি হেসে অনির কপালে চুমু দিয়ে বলে
” আর কাঁদিস না। কাঁদলে মেকাপ সব নষ্ট হয়ে যাবে পরে রিটার্ন মেকাপ করতে করতে গায়ের হলুদের টাইম পেরিয়ে বিয়ের দিন এসে পরবে।” অনি শব্দ করে হেসে বলে
” ভাইয়া এসব না !! ওয়াটার প্রুফ মেকাপ কাঁদলে, পানি দিয়ে গোসল করলেও কিছু হবে না। আচ্ছা রায় ভাইয়া আর ভাবিরা কোথায় ??” অভিদ হালকা হেসে বলে
” তৈরি হচ্ছে সবাই। তুই ফ্রেন্ডদের সাথে গল্প করতে থাক। আর কোনো কিছু থাকলে পুরোপুরিভাবে তৈরি হয়ে নে। একটু পরে আমরা বেড়িয়ে পরবো।” অনি হেসে মাথা নারে। অভিদ রুম থেকে বেড়িয়ে চোখের কোণায় থাকা পানি মুছে নিলো।

রুহি তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে লেহেঙ্গার দুপাট্টা ঠিক করতে লাগে। আয়নার দিকে তাকাতেই হঠাৎ মনে হলো সব ঝাপসা ঝাপসা আর ডাবল ডাবল দেখছে। রুহি একটু মাথা ঝাঁকিয়ে আবার আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকালো। এবার মনে হচ্ছে মাথা চরকির মতো ঘুরছে। মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলেই অভিদ এসে দৌড়ে ধরে নেয়। অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে তোমার ?? চলো ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে।” রুহি অভিদের বুকে পিঠ ঠেকিয়ে একহাতে অভিদের হাত ধরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুর্বল গলায় বলে
” আমার কিছু হয়নি ঠিকাছি আমি। এমনি জাস্ট মাথা ঘুরে গিয়েছে। আর কিছু না।” অভিদ রাগি গলায় বলে
” আর কিছু না মানে ?? কিছুদিন ধরেই দেখছি তোমাকে অন্যরকম লাগছে। তুমি আবার নিজের প্রতি হেয়ালি শুরু করেছো ?? এই জন্যই তোমার উপর রাগ হয়। যেটা করা দরকার সেটাই করো না তুমি।” রুহি বিচলিত হয়ে বলে
” আরে আমি তো…” অভিদ রুহির কথায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে গম্ভীর আর ঝাঁঝাল গলায় বলে
” হয়েছে আর বলা লাগবে না। আমি সকালেই ডক্টর আংকেল কে ডাকবো। এখন চুপচাপ আমার সাথে চলো।” রুহি আর কিছু না বলে অভিদের সাথে নিচে চলে গেলো। অনি আর তুষারকে নিয়ে সবাই সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
সেন্টারের সামনে গাড়ি থামায়। সবাই একে একে নেমে গেলো বাইরে অনেক মিডিয়ার লোকজন, ক্যামেরাম্যান রয়েছে। সবাই ভেতরে ঢুকে গেলো। অভিদ, রায়হান মিডিয়াদের লোকেদের সাথে কথা বলতে থাকে। ভেতরে গিয়ে অনিকে নিয়ে নিলার পাশে বসিয়ে দিলো একই স্টেজে। আর তুষার আর আখিলের জন্য আলাদা স্টেজ। রুহি, মিশু নিলার সাথে কথা বলে নিচে নেমে বাড়ির সবার সাথে কথা বলতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে অভিদ, রায়হান আসতেই হলুদ ফাংশন শুরু হয়।

ফাংশনের মাঝে এমন একজন গেস্ট আসলো যাকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। পরিবারের সবার চেহারায় একটু গম্ভীর ভাব দেখা গেলো। তবে ফুপি, ফুপা, রুহির আব্বু, অভিদ, রায়হান, মিশু, তুষার, অনি, আখিল ওরা নরমাল ছিলো। রুহি নরমাল থাকলেও মনে মনে ভয় পাচ্ছে। সিহাব আর তার ওয়াইফ সুমি এসেছে। অভিদ যাবেদ খানকে হসপিটালে সব ট্রিটমেন্ট দিয়ে সুস্থ করে তুললেও সিহাবকে ছেড়ে দিতে পারেনি। তবে ছয় মাস পরে যাবেদ খান ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য যখন আকুতি ভরা গলায় অভিদের কাছে অনুরোধ করে তখন অভিদ দিশেহারা হয়ে যায়। সেইদিন অনেক কেঁদেছে রুহির কোলে মাথা রেখে। আর বলেছিলো
” রুহি আমি এই বাবা ছেলের সম্পর্কে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি। একজনের প্রতি আরেক জন
প্রানের ভিক্ষা চায়ছে। আমি কিছু করতে পারছি। আমি কথা দিয়েছিলাম ওরা তোমাকে যতো কষ্ট দিয়েছে তার থেকে হাজার গুন কষ্ট আমি ওদের দেবো মেরে ফেলবো ওদের। কিন্তু… আমি পারছি না কেনো ??” রুহি অভিদের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলেছিলো
” যখন আর পারছেন না তখন ছেড়ে দিন !! এতোদিন তো অনেক শাস্তি দিয়েছেন এবার ছেড়ে দিন !! ওদের জন্য নিজেকে কেনো টানাপোড়নের মধ্যে টানছেন ?? দুজনই তো শুধরে গয়েছে তাহলে ছেড়ে দিন আর না শুধরালে নিজের মন যা বলছে ওদের সাথে তাই করুন।” অভিদ উঠে রুহির দিকে তাকিয়ে বলেছিলো
” ওরা দুজন তো শুধরে গিয়েছে। তাহলে কি ছেড়ে দেবো ??” রুহি ঘার কাত করে হালকা হেসে বলেছিলো
” হুম ছেড়ে দিন। এতে আপনারও টানাপোড়া শেষ হবে।” অভিদ গেসে আবার রুহির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। কিছুদিন পরে সিহাবকে ছেড়ে দেয়। সিহাবকে সুস্থ করার জন্য হসপিটালে
ভর্তি করে রাখে। সিহাভ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সব দায়িত্ব অভিদের ছিলো আর যাবেদ খানের। সিহাব সুস্থ হয়ে উঠলে অভিদ সিহাবকে একটা অফিসে চাকড়ি খুঁজে দেয়। যদিও সরকার থেকে অনুমোদন দেয়নি সিহাবকে জব দেওয়ার জন্য তবে অভিদ সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো। সিহাব তার বাবাকে নিয়ে থাকতো আরো বছর পরে সিহাব বিয়ে করে নেয়। এখন তাদের পরিবারের তিন সদস্য মনও খুব আর তারা ভালোও আছে। অভিদ, রায়হান সিহাবকে অনিদের বিয়েতে ইনভাইট করেছে। সিহাব আসতে না চাইলেও অভিদ, রায়হানের কথায় এসেছে।
হলুদ সন্ধ্যা খুব হাসি, আনন্দে হলুদ শেষ হলো।

রাতের সাড়ে তিনটা বাজে অভিদ ঘুমিয়ে আছে। পাশে রুহি শুয়ে ছটফট করছে। একবার এই পাশে আবার অন্য পাশে ঘুরছে। বিরক্ত হয়ে উঠে মাথার নিচ থেকে বালিশ টা হাতে নিয়ে ছুরে ফেলে দিলো নিচে। শব্দ পেয়ে অভিদের ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে পাশ ফিরে রুহির দিকে তাকিয়ে দেখে রুহি চোখ বন্ধ করে বসে বসে মাথা চুল টানছে। এতোরাতে রুহিকে জেগে থাকতে দেখে আবারও অবাক হলো। ফ্লোরের দিকে তাকাতেই দেখলো রুহির বালিশ পরে আছে। অভিদ রুহির কাছে এসে রুহির মাথা থেকে হাত সড়িয়ে রুহির গালে হাত রেখে শান্ত গলায় বলে
” কি হয়েছে তোমার ?? ঘুমাও নি কেনো এখনও??” রুহি অভিদের দিকে তাকায়। রুহির চোখ লাল দেখে বোঝা যাচ্ছে রুহির ঘুম পেয়েছে। অভিদ রুহির এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে বলে
” পাখি কি হয়েছে তোমার ?? অদ্ভুত আচরণ করছো কেনো ?? বালিশ কেনো ফেলেছো ??” রুহি কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে
” আমার ঘুম পাচ্ছে কিন্তু ঘুম আসছে না। ঘুমালে অস্থির অস্থির লাগে। ঘুমাতে পারছি না আমি। আমার ভালো লাগছে না কেনো ??” অভিদ উঠে রুহির বালিশটা এনে বিছানায় রেখে দেয়। অভিদ রুহির পাশে এসে বসতেই রুহি অভিদকে জাপটে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখে। অভিদ রুহিকে জড়িয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে আর ভাবতে থাকে
” আচ্ছা রুহির কোনো অসুখ হয়নি তো আবার ?? কিন্তু কি হতে পারে ?? নাহ আর কোনী রিস্ক নেবো না কালকে সকালেই ডক্টরকে ডাকবো।” অভিদ ধীর গলায় বলে উঠে
” রুহি !! ঘুমিয়ে পরেছো ??” রুহির কোনো উত্তর না পেয়ে অভিদ মাথা নিচু করে দেখে রুহি কয়েক মিনিটে গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে। রুহির ঘন ঘন শ্বাস অভিদের আছড়ে বুকে পরছে। অভিদ বিছানায় ঠিক হয়ে রুহিকে নিয়ে সেইভাবেই ঘুমিয়ে গেলো।

সকালে এলার্মে অভিদের ঘুম ভাঙে। চোখ বন্ধ করে উঠতে গেলেই বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব করে। অভিদ চোখ খুলে বুকের দিকে তাকাতেই রুহির মুখটা দেখতে পেলো। রুহি এখনও রাতে যেভাবে ঘুমিয়ে ছিলো সেইভাবেই ঘুমিয়ে আছে। অভিদ রুহির ঘুম না ভাঙিয়ে রুহিকে সাবধানে শুয়ে দিয়ে নিজে উঠে গেলো। একপলক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ওয়াসরুমে ছুট লাগায়। ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে রুহি উঠে বসে আছে। অভিদ রুহির কাছে এসে বলে।
” তোমার এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো ?? তুমি তো রাতে ঘুমাতে পারো নি !!” রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বলে
” এমনি ঘুম ভেঙে গেলো। আজকে তো অনি চলে যাবে তাই না ??” রুহির কথাটা অভিদের বুকে ঝড় বইয়ে দিলো। তার আদরের বোন চলে যাবে তাকে ছেড়ে ভেবেই বুকে পাথর এসে জমা হলো। অভির ছলছল দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকালো। রুহির চোখও ছলছল করছে। অভিদ এখন কাঁদতে চায় না তাই কথাটা কাটিয়ে নিলো। রুহিকে বলে
” তুমি কি ঠিকাছো এখন ?? একটু পরে ডক্টরকে ফোন করে আসতে বলবো। রুহি বুঝতে পেরে বলে
” নাহ ঠিক আছি এখন। ডক্টর ডাকতে হবে না। দরকার হলে পরে ডেকে নিবেন।” অভিদ মাথা নেড়ে বেড়িয়ে গেলো। রুহিও ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো। সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে আসলো। সবাই অনি, তুষারকে নিয়ে সেন্টারে উপস্থিত হয়েছে। অনিকে নিলার সাথে একই রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
অভিদ এসে অনির কাছে বসে। অনিকে খুব সুন্দর লাগছে। আজকে তার একমাত্র বোন অনি তাকে ছেড়ে অন্য বাড়িতে চলে যাবে। আর আগের মতো আবদার করবে না, ভাবি-ভাইয়াদের নিয়ে মেতে থাকবে না। এখন নিজের সংসার করবে। গলা ব্যাথা করে উঠলো। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে গলায় আটকে আছে। রুহি অভিদের কাধে হাত রাখতেই অভিদ রুহির দিকে তাকায়।রুহি শক্ত করে অভিদের কাধ চেপে ধরে অভিদকে আশ্বস্ত করে। অভিদ চোখ মুছে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অভিদ যেতেই অনির কান্না শুরু হলো সাথে নিলারও। অনি রুহিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আমি কি করে ভাইয়াদের ছেড়ে থাকবো ?? আমি ভাইয়াদের ছেড়ে থাকতে পারবো না ভাবি!!” রুহি কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনির মা – বাবা মারা যাওয়ার সময় অনি একদম ছোটো ছিলো। সবসময় ভাইয়ের সাথে থাকতো। সেই অনি আজকে ভাইদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। নিলাও কান্না করে যাচ্ছে। রুহি, মিশু, রাইমা দুজনকে কান্না থামানোর জন্য শান্তনা দিতে লাগে
বিয়ে পরানোর সময় দুজনকে অভিদরা এসে বাইরে নিয়ে গেলো।
দুই পাশে তিন ভাই আর ভাবিকে নিয়ে অনি কান্না করতে করতে কবুল বলে। অপর পাশ থেকে আখিল কবুল বলতেই অনির বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। নিলা তার মা – বাবা, নিলয় কে পাশে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কবুল বলে। অনির পাশ থেকে তুষার কবুল বলতেই ওদের বিয়েও সম্পূর্ণ হলো।
বিদায়ের সময় অভিদ, রায়হান, তুষার, রুহি, মিশু, ফুপি, ফুওয়া সবাই কান্না করছে অনির জন্য। অভিদ, রায়হান নিশ্চুপে কান্না করেছে। আদরের সেই মেয়েটা চলে যাচ্ছে। অনি কাঁদতেন কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেলো। আখিল পরম যত্নে কোলে তুলে গাড়িতে নিয়ে বসলো। গাড়িতে উঠার অভিদকে কথা দিয়ে এলো অনিকে কোনো দিন দুঃখ দেবে না।। নিলা তার মা-বাবা, নিলয়, বড় আপু, বড় ভাইয়া সবাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না কররে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে তুষারের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে।

বাড়িতে নিলার গৃহ প্রবেশ খুব সুন্দর করে শেষ হয়। বাকি নিয়ম নীতির জন্য নিজে যাওয়া হয়।
এদিকে অনির গৃহপ্রবেশও খুব সুন্দর করে করা হয়। অনির মন খারাপ থাকলেও মুখে হালকা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। আখিল বুঝতে পারলেও বাড়ি ভরতি এতো লোকের সামনে কিছু বলতে পারলো না তবে মাকে বললো অনির মন ভালো করে দিতে। আখিলের মা ছেলের বউয়ের প্রতি এতো কেয়ার দেখে শান্তি পেলো।
এদিকে অভিদ রুমে এসে রুহিকে জড়িয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করেছে।পাশে রুহি নিজের মন খারাপ থাকলেও অভিদকে শান্তনা দিচ্ছে বারবার। অভিদ কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আমার কলিজাকে আজকে আমি অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি। আমাকে চলে গিয়েছে অনি। ওকে ভালো রাখবে তো আখিল ??” রুহি অভিদকে শান্তনা দিয়ে বলে
” আখিল ভাইয়া ভালো মানুষ। আর ওরা একে অপরকে এখন ভালোবাসে। অনি খুব সুখে থাকবে। আপনি কান্না বন্ধ করুন।” অভিদ শেরওয়ানীর হাতা দিয়ে চোখ মুছে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” অনির সাথে কথা বলিয়ে দেবে ??” রুহি হালকা হেসে বলে
” এখন তো সেখানে অনেক ঝামেলা চলছে। ফোন দিলেও কেউ টের পাবে না। কালকে সকালে দেই ??” অভিদ মাথা মেড়ে হ্যা বলে
রুহি সস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে
” আচ্ছা আমি পানি নিয়ে আসছি।” বলে উঠে গেলো। চোখ মুছতে মুছতে হঠাৎ পরার শব্দ পেয়ে অভিদ চমকে উঠে দাঁড়ায়। ফ্লোরে রুহিকে সেন্সলেস হয়ে পরে থাকতে দেখে নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। বাইরে থেকে রায়হানরা শব্দ শুনে এসে রুহিকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।
রায়হান অভিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে
” রুহির কি হয়েছে?? আর তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো??” রায়হানের কথায় অভিদের হুশ আসে। অভিদ জলদি করে রুহিকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয়। অস্থির গলায় রুহির মুখে পানি ছিটিয়ে গালে হাত রেখে বলে
” রুহি চোখ খোলো। রুহি !!” আরো পানি দেওয়ার পরও রুহির সেন্স ফিরছে না দেখে অভিদ অস্থির গলায় বলে
” রায়হান জলদি ডক্টরকে ফোন কর। রুহিকে এমনি অসুস্থ লাগছিলো এখন আবার…। তুই তাড়াতাড়ি একটু ডক্টরকে আসতে বলে” রায়হান তড়িঘড়ি করে ডক্টরকে ফোন লাগায়। সবাই অস্থির হয়ে গিয়েছে। নিলাও রুহির পাশে বসে আছে।

কিছুক্ষণ পরে ডক্টর আসলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা তাড়ায় এসেছে। ২০ মিনিটে রায়হান তিনবার ফোন দিয়েছে। ডক্টর রুহির চেকাপ শেষ করে অভিদের দিকে তাকায়। ডক্টরের গম্ভীর মুখ দেখে অভিদের মনে ভয় ঢুকে গেলো। অভিদ ভীত গলায় বলে।
” রুহির কি হয়েছে আংকেল ?? কয়েকদিন ধরে ওকে কেমন যেন লাগছে। ব্যস্ততায় রুহিকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়নি।” হঠাৎ করে ডক্টর মুচকি মুচকি হাসা শুরু করলো অভিদরা সবাই অবাক হয়ে ফেলো তবে ফুপি ঠিকই ধরে নিলো। ফুপি খুশিতে চিৎকার করে বলে উঠে
” কে কোথায় আছো !! মিষ্টি নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি।” বলতে বলতে বেড়িয়ে গেলো। অভিদ, রায়হান, মিশু, তুষার, নিলা সবাই ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো। অভিদ ডক্টরের উপর রেগে বলে
” আরে আংকেল বলবেনি তো কি হয়েছে ?? রুহির এখনও জ্ঞান ফিরছে না কেনো ??” ডক্টর হেসে অভিদের কাধে হাত রেখে বলে।
” একটা good news. রুহি pregnant. কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরবে। হয়তো কয়েকিবার বমি করেছে তাই একটু অসুস্থ হয়ে পরেছে এখন ঠিকাছে। তুমি সময় হলে আমাকে ফোন করো আমি এসে রুহির সব কিছু রুটিন করে দিয়ে যাবো।” বলে বেরিয়ে গেলো। সবার মনে খুশির ঢেউ বাইতে শুরু করলো। সবাই খুশিতে চিৎকার করা গুরু করলো। মিশু এসে রায়হানের হাত ধরে খুশিতে বলতে থাকে
” আমাদের বাড়িতে বাবু হবে !! কি আনন্দ লাগছে আমার !!” সবাই খুশিতে লাফাতে লাফাতে নিচে চলে গেলো। শুধু অভিদ আর রায়হান ছাড়া। অভিদের দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে। মনের মধ্যে কেমন অনুভূতি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। এমন একটা দিন আসবে সেটা জানলেও তখন এমন অনুভূতি হতো না যেমন টা আজকে হচ্ছে। রায়হান অভিদের সব কিছুর সাথেই পরিচিত তাই আজকেও অভিদকে দেখে কিছু বুঝতে সময় লাগলো না। রায়হান শুধু অভিদের কাধে হাত রেখে বলে
” রুহির জ্ঞান ফিরলে খুশির খবরটা বলিস। আর নিজেও বাবা হওয়ার আনন্দটা মন খুলে প্রকাশ কর।” বলে নিশ্চুপে দরজা ভিরিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অভিদ ধীর পায়ে রুহির পাশে বসে পরে।

ফুঁপানো কান্নার আওয়াজ পেয়ে চোখ খুললো। চোখ খুলেই প্রথমে ঝাপসা ঝাপসা চোখে অভিদকে দেখতে পেলো। পলক ফেলে চোখ ঠিক করে ভালো করে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ ফ্লোরে বসে রুহির এক হাত ধরে কেঁদে যাচ্ছে। রুহি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে বসে বলে
” আপনি কাঁদছেন কেনো ?? কি হয়েছে ??” অভিদ দ্রুত চোখ মুছে রুহির পাশে এসে বসে বলে
” তুমি ঠিকাছো তো ?? খারাপ লাগছে ??” অভিদের কথা শুনে রুহির মনে পরলো যে রুজি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। রুহি মাথা নেড়ে বলে
” আমার তো কিছু হয়নি। আমি একদম ঠিকাছি তবে আপনার কি হয়েছে ??” অভিদ নিশ্চুপ থেকে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” রুহি তুমি pregnant.” রুহির মাথার সব ফাকা হয়ে গেলো। রুহি মা হবে সেটা নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না। রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাস্য গলায় অস্ফুট স্বরে বলে
” সত্যিহ !!!” অভিদ মাথা নেড়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে উঠে
” আমি ভাবতেই পারিনি এমন একটা দিন আসবে তাও এতো তাড়াতাড়ি। আমাদের সন্তান হবে রুহি !! আমরা কোনো দিন ওকে কষ্ট পেতে দেবো না। সব সময় লাগলে রাখবো। আমাকে বাবা আর তোমাকে মা ডাবকে। আমরা সবাই ওর ছোট ছোট হাত-পা নিয়ে খেলবো। তাই না ??” রুহি মাথা নেড়ে হ্যা বলে। রুহির চোখ টলমল করছে। অভিদকে দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে অভিদ কতোটা খুশি হয়েছে। অভিদ খুশিতে কাঁদছে আর সব কথা বলছে। অভিদকে এতো খুশি দেখে রুহির কান্না পেয়ে গেলো। অভিদ রুহির শাড়ি সরিয়ে পেটে চুমু দিচ্ছে বারবার। রুহি অভিদের পাগলামো দেখছে। রুহি অভিদকে থামিয়ে অভিদের চোখ মুছিয়ে দিলো। অভিদের বুকে মাথা রাখতেই অভিদ রুহিকে আগলে নেয়।
শান্ত গলায় বলে
” আপনাকে দেখে কে বলবে যে আপনি এখন একজন ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়া কিং !! আজকে সারাদিন ধরে কেঁদেই যাচ্ছেন কেঁদেই যাচ্ছেন। একটু হাসি হাসি মুখ করেও তো খুশি হতে পারেন নাকি ??” অভিদ হালকা হেসে রুহির নাক টেনে বলে
” তুমি সবসময় কাঁদো তো তাই আমাকেও এখন সেই রোগে ধরেছে। but don’t wory আমি ডক্টর দেখিয়ে ঠিক হয়ে যাবো কিন্তু তুমি কি করে ঠিক হবে ?? তোমার তো এটা জন্মের রোগ।” রুহি রেগে অভিদের বুকে কিল বসিয়ে দেয়।অভিদ শব্দ করে হেসে। রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” কেউ ভালুবাসে না ” অভিদ হেসে বলে
” আচ্ছা নিচে চলো গিয়ে দেখবে কে কে ভালুবাসে তোমাকে।” অভিদ রুহিকে ধরে নিয়ে নিচে এসে দেখে বাড়িতে ইতিমধ্যে মিষ্টির বন্যা বয়ে গিয়েছে। রাইমা, জোতি, জিহান, নিলয় সবাই এসেছে পরেছে রুহির মা-বাবারা কালজে আসবে। রুহিকে দেখে সবাই রুহিকে নিয়ে মেতে উঠলো। নিলাকে আর তুষারকে বাসর ঘরে ছেড়ে এসে সবাই রুহিকে নিয়ে বসেছে। অভিদ ভাবলো অনিকে ফোন করবে পরক্ষণেই ভাবলো ব্যস্ত থাকতে পারে তাই অভিদ ম্যাসেজ করে দিলো ফোন করার জন্য।

অনি বাসর ঘরে বসে আছে। আখিল এখনও আসেনি। আখিলকে আশিক আর আখিলের বন্ধুরা আটকে রেখেছে দরজার বাইরে। অনি বসে বসে ঝিমোচ্ছিলো হঠাৎ ফোনে ম্যাসেজের শব্দ হতেই হাই তুলে ফোন বের করে দেখে অভিদের ম্যাসেজ। অনি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নেয়। আখিলের আসতে দেড়ি হতে পারে তাই অনি অভিদকে ফোন লাগায়।
অনির ফোন পেয়ে অভিদের মুখের হাসি উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠলো। অভিদ তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বলে
” বোনু কেমন আছিস ?? খেয়েছিস কিছু ?? তুই ভালো আছিস তো ??” অভিদের চিন্তা দেখে অনির কান্না পেয়ে গেলো তবে কান্না আটকে হেসে বলে
” হ্যা ভাইয়া খেয়েছি। আমি অনেক ভালো আছি। এখন বলো তোমরা কেমন আছো ?? তোমরা সবাই নিশ্চই অনেক কেঁদেছ !! আর কেদো না আমি একদম ঠিকাছি।” অভিদ হেসে উৎফুল্ল কন্ঠে বলে
” আমরা সবাই এতোক্ষণ খারাপ ছিলাম তবে এবার একদম ভালো হয়ে গিয়েছি। তোকে একটা নিউজ দেওয়ার জন্য এখন ফোন করেছি। সকাল টুকু ওয়েট করতে পারিনি।নিউজিটা শুনলে তুইও খুশি হয়ে যাবি।” অভিদের কথায় অনি ভ্রু কুচকে ফেলে। ভাবতে থাকে কি এমন কথা যেটা শুনে অনিও খুশি হয়ে যাবে !! অভিদ অনিকে অপেক্ষায় না রেখে খুশি খুশি বলে উঠে
” অনি !! তুই.. মানে রুহি প্রেগন্যান্ট। আমাদের বাড়িতে বাবু আসছে। তুই ফুপি হবি !! আমি বাবা হবো।” অনির হাত ফসকে হাত থেকে ফোন পরে গেলো। অনি খুশিতে চিৎকার করে উঠে। অভিদ অনির চিৎকার শুনে কানে হাত দিয়ে তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দেয়।

দরজার বাইরে সবাই টাকা নিয়ে আখিলের সাথে ঝামেলা করছিলো। অনির চিৎকার সবার কানে যাওয়া মাত্র সবাই হুরমুরিয়ে রুমে ঢুকে পরে। অনি খাটের উপর দাঁড়িয়ে লাফাচ্ছে আর বলছে
” আল্লাহ !! কি খুশি লাগছে আমার কি করে বলবো !!” নাচতে নাচতে আখিলের দিকে চোখ পরতেই অনি খাট থেকে লাফ দয়ে নেমে গেলো। আখিলের হাত ধরে লাফাতে লাফাতে হেসে হেসে বলে
” আমার অনেক খুশি লাগছে। আজকে আমি অনেক অনেক খুশি। আমি এখনি বাড়ি যাবো। ভাবির কাছে যাবো আমি।” রুমে আখিলের মা-বাবারাও এসে পরলো। অনির অবস্থা দেখে মাথা ঘুরতে লাগলো। আখিল অনিকে অনেক কষ্টে চুপ করিয়ে বলে
” শান্ত হয়ে বলো প্লিজ কি হয়েছে ?? ভাবির কাছে কেনো যাবে ?? এতো খুশি কেনো??” অনি উৎফুল্ল হয়ে বলে
” কি বলছেন কি!! আমি খুশি হবো না ?? আমি পিপি হবো। আমি ছাড়া আর কে খুশি হবে ??” অনির কথা শুনে আসল কারণ বুঝতে পারে সবাই। সবাই খুশি হয়ে গেলো কথাটা শুনে। অনি বায়না ধরেছে এখনি বাড়িতে যাবে। আখিল অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বললো কালকেই যাবে এখন যাওয়া জাবে না। অনি শেষে শান্ত হলো।
অভিদ, রুহি শুয়ে আছে। কারো চোখেই ঘুম নেই আনন্দে। রাত বারাতেই ঘুম না আসায় রুহির আবার কালকের মতো অস্থির অস্থির লাগতে শুরু করে। রুহিকে অস্থির দেখে অভিদ রুহিকে টেনে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কালকের মতো রুহি ঘুমিয়ে যায়। রাত বারতেই অভিদের ঘুম এসে ধরা দেয়। পরেরদিন সকালেই অনি আখিলকে নিয়ে এসে পরেছে। অভিদরা অবাক হয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলেই আখিল কালকের সব মথা বললো। সবাই হাসতে থাকে অনির কালকে কথা শুনে। অনি এসেই রুহির কাছে বসে গল্প শুরু করেছে।
বিয়ের ঝামেলা শেষ হতেই আবার অভিদ, রায়হান,তুষারের অফিসের কাজ শুরু হয়। অভিদ দিনের কিছু সময় অফিসে দেয় আর বাকি সময় রুহিকে দেয়। বাড়িতে বসেই সব দেখা শোনা করে। এভাবেই দিন চলতে থাকে। যতো দিন বারতে থাকে অভিদের টেনশনও ততো বারতে থাকে আর ভালোবাসাও। রাত জেগে রুহির সাথে গল্প করা, পেটে মাথা রেখে কথা বলা সবার সব রকমের পাগলামো বারছে।

৪ বছর পরে……..
অভিদ আর রায়হানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক দোকানদার, ভয়ে কাঁপছে। অভিদ দোকানদারের উপর গর্জে বলে উঠে।
” তোর সাহস হয় কি করে ?? আমার ছেলের আর মেয়ের পছন্দের জিনিস তুই অন্য কাউকে দিয়ে দিস ??” দোকানদার যেন এখনি হার্ট এট্যাক করবে। বুকে হাত দিয়ে হাপাচ্ছে। অভিদের পাশে হঠাৎ তার ৩ বছরের ছেলে গুটিগুটি পায়ে এসে দাঁড়ায়। অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” পাপা বকতো (বকছো) কেন?? পাপা আর ম্মামা বলেত (বলেছো) কাউকে বলতে(বকতে) নেই।” ছেলের কথা শুনে অভিদ দোকানদারের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে গার্ডকে ইশারা করে নিয়ে যেতে। অভিদ অর্ণবকে কোলে তুলে বলে
” না বাবা ওই লোকটা পচা কাজ করেছে তাই একটু কথা বকছিলাম। তুমি তো গুড বয়। যাও গিয়ে রিথির সাথে খেলা করো।” অর্ণব মাথা নেড়ে হাতের খেলনা নিয়ে রিথির সাথে খেলতে চলে গেলো।
রিশান রায়জাদা অর্ণব, রুহি আর অভিদের একমাত্র ছেলে। রিথি আক্তার মিশিকা, রায়হান
আর মিশুর আড়াই বছরের একমাত্র মেয়ে। রুহির পাঁচমাসের প্রেগ্নেন্সির সময় মিশু প্রেগন্যান্ট ছিলো। তুষার আর নিলারও দেড় বছরের এক ছেলে তূর্ণ রায়জাদা নীর। অনি এখনি ৮ মাসের প্রেগ্নেন্ট। আখিল সারাদিন অনির খেয়াল রাখে।অনি দুইদিন আগেই অভিদের বাড়ি থেকে আখিলের বাড়িতে গেলো আবার ফিরে আসবে। আখিলের মা অনিকে দেখার জন্য নিয়ে গিয়েছেন।
আশিকও বিয়ে করেছে। জিহান, জোতি,নিলয় সবাই সবার লাইফ সেটেল করে বিয়ে করে নিয়েছে।

অভিদ রায়হান আর তুষারের সাথে অফিসের ডিসকাস করে দুজন রুমে চলে যায়। অভিদ রুমে এসে দেখে রুহি বসে বসে নিলা, মিশুর সাথে গল্প করছে।অভিদকে দেখে দুজন বইদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো অভিদ চুপিচুপি গিয়ে রুহির পেছনে বসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে। রুহি চমকে বলে
” আরে কি করছেন ??” অভিদ রুহির পিঠে নাক ঘষে বলে
” কি করবো আর একটু বউয়ের কাছে এসেছি।” রুহি নিজের কোমড় থেকে অভিদের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে
” আরে অর্ণব চলে আসবে তো।” অভিদ রুহির চুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে বলে
” নাহ আসবে না রিথির সাথে খেলছে।এবার আমাকে আমার কাজ করতে দাও তো !!” বলে রুহিকে কোলে তুলে বারান্দায় চলে গেলো। বারান্দার দোলনায় রুহিকে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে রুহির মাথা নিজের কাধে রাখে। রুহি অভিদের হাত জড়িয়ে বলে
” জানেন আমি খুব ভাগ্যবতী। নাহলে আপনার মতো একজন জীবন সঙ্গী পেতাম না। #মাফিয়া_ক্রাশ_বর আপনাকে পেয়ে আমার জীবনটাই এখন অন্য রকম।” অভিদ মুচকি হেসে বলে
” তাই বুঝি ??” রুহি মাথা নেড়ে হ্যা বলে অভিদ হেসে রুহির কপালে চুমু একে দেয়।

প্রতিটা সম্পর্ক যেন গভীর বাধনে আটকে থাকে। রুহি-অভিদ, রায়হান-মিশু, তুষার-নিলা, অনি-আখিল সবার জীবনেই খু্শি থাকুক।

———————– সমাপ্ত ————————-

[
গল্পটা সবার কাছে কেমন লেগেছে জানি না। সদ্য জন্মানো লেখিকা আমি। অনেক ভুল করেছি।অনেকেই ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন তাদের অনেক। ভবিষ্যতে ও পাশে থাকবেন।সবাইকে অনুরোধ দুই লাইন করে ভালো বা মন্দ যাই হোক মন্তব্য করুন। খুব শীঘ্রই নতুন গল্প নিয়ে আবার আসবো। ]