মায়াবিনী পর্ব : ১১+১২

0
605

#মায়াবিনী
সুরমা
পর্ব : ১১+১২

অপূর্ব প্রায় ১০মিনিস ধরে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু সুপ্তির কোনো খোঁজ খবর নেই।অপূর্ব সুপ্তিকে কল করছে।কিন্তু সেটা রিসিভও করছে না সুপ্তি।অপূর্ব ভেবেছিল একটু আগে বের হলে দুজন কিছুক্ষণ সময় এক সাথে কাটাতে পারবে।কিন্তু এই মেয়েরতো কোনো আগ্রহই নেই।আর অল্পক্ষণ পরে সুপ্তির কলেজ টাইম।তখন আর ঘুরা হবে না।কথা গুলো চিন্তা করতে করতে অপূর্ব নিজের চুল নিজেই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।অপূর্ব রিকশা থেকে নেমে পেছনে থাকাতেই দেখে সুপ্তি আসছে।সুপ্তিকে আজ পরীর মতো লাগছে।গোলাপি থ্রি পিছ,সাথে ম্যাচিং করা অর্নামেন্টস।চুল গুলো খুলা।হালকা বাতাসে চুল গুলো উড়ছে। অপূর্বের চোখ সরতে চাইছে না সুপ্তির উপর থেকে।অপূর্ব বেহায়ার মতো সুপ্তিকে দেখছে।সুপ্তি অপূর্বের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলে,,,
-সরি,ঘুম থেকে উঠতে লেইট হয়ে গেছে।চলুন,এখানে কেউ দেখলে প্রবলেম হবে।
-…………………
-কি হলো,চলুন।সুপ্তি অপূর্বের হাত ছুঁতেই সে চমকে উঠে বলে,,,
-হুম,,,
-কোথায় হারিয়ে গেলেন?
-তোমাতে।কি মায়াবী তোমার এই কাজল কালো দুটি চোখ,এখানে তাকাতেই যেন ভুলে যাই পৃথিবীর সব।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখে।অপূর্ব সুপ্তির হাত ধরে বলে,,,
-এখন থেকে আমাকে তুমি বলে ডাকবা।না হলে আমি আর তোমার সাথে কখনও কথা বলবো না।সুপ্তি একটু মাথা তুলে দেখে অপূর্বকেও অনেক স্মার্ট লাগছে।একদম ড্রেসিং। ছেলেরাও এত সুন্দর হয়?।সুপ্তিরও চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে না।এই চোখে চোখ রেখেই এক জনম পার করে দেওয়া যাবে।সুপ্তিকে চুপ থাকতে দেখে অপূর্ব বলে,,,,,
-কি ভাবছো?
-না কিছু না।
-কি বলেছি মনে থাকবে তো?
-হু,
-তাহলে এখন চলো।এখন না গেলে কলেজের লেইট হবে।তুমিতো আবার ঘুম ছাড়া কিছু বোঝ না।কোথায় ভেবেছিলাম দুজনে হাতে হাত রেখে কিছুক্ষণ সময় কাটাবো।তা নয়,তুমি মরার মতো ঘুমালে।আল্লাহ জানে কপালে আরো কতো কি আছে।অপূর্ব সুপ্তির হাত ধরে রিকশায় বসায়।অপূর্বও সুপ্তির পাশে বসে।দুজনে গল্প করতে করতে সুপ্তির কলেজের সামনে চলে আসে।সুপ্তির বান্ধবীরা কলেজ গেইটে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।সুপ্তিকে অপূর্বের সাথে দেখে সবার চোখ যেন কপালে উঠে যায়।সবাই অপূর্ব আর সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখছিল।দুজনকে একসাথে পারফেক্ট লাগছে।যেন রাজ জুটি।এর আগে সুপ্তিকে কোনো ছেলের সাথে এক রিকশায় তো দূর,একটু কথা বলতেও দেখে নি কেউ।সুপ্তি রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ায়।অপূর্ব বলে,,,
-কলেজ কয়টায় ছুটি হবে??
-৪টায়।
-ঠিক আছে।তুমি অপেক্ষা করো আমি আসবো।
-ঠিক আছে।অপূর্ব সুপ্তির থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলে সুপ্তির বান্ধবীরা দৌঁড়ে এসে সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে।এক বান্ধবী বলে,,,,
-দোস,ছেলেটা কেরে?কি হেন্ডাসাম।আমি তো প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খাইলাম।কি ড্রিসিং।আনিকা বলে,,,,
-ক্রাশ খেয়ে লাভ নাই।সুপ্তি আর ঐ হেন্ডসাম,দুজন দুজনার প্রেমে গড়াগড়ি খাচ্ছে।তুই আর ওদের মধ্যে ডুকিস না বইন।আর দোস,শেষে তুইও?তবে আমি খুব খুশি।এট লাস্ট তুইও প্রেম করছিস।এখন বল,আমাদের ট্রিট দিবি কবে।সুপ্তি এতক্ষণ বেচারী লজ্জা পাচ্ছিল।মাথা নিচু করে মুছকি হেসে বলে,,,,
-ট্রিট দিবো যেদিন বলবি।আনিকা বুঝতে পেরেছে সুপ্তি লজ্জা পাচ্ছে।আনিকা সুপ্তির কাঁধে চিবুক রেখে বলে,,,
-দোস,তুই যেমনে লজ্জা পাচ্ছিস,মনে হচ্ছে তোর বিয়ের কথা হচ্ছে।প্রেম করলে কাউকে এতো লজ্জা পেতে দেখি নি।যা হোক,এখন বলতো,কি করে এটা সম্ভব হলো??
-এখন ক্লাসে চল।ক্লাস শেষে সবটা বলবো।
-ঠিক আছে চল।তারা সবাই মিলে ক্লাসে চলে যায়।অপূর্বও অফিসে চলে আসে।অফিসে এসেও কাজে মন বসছিল না।ইচ্ছে করছিল একটু কথা বলতে।দৌঁড়ে সুপ্তির কাছে চলে আসতে।মায়াবিনী তাকে তার মায়ায় ইচ্ছে মতো জড়িয়ে নিয়েছে।এদিকে অপূর্বের বাবা বাইরে থেকে এসে ডয়িং রুমে বসে অপূর্বের মাকে ডাকতে শুরু করে।অপূর্বের মা ডয়িং রুমে এসে অপূর্বের বাবার সামনা সামনি বসে বলে,,,,,
-এতো ডাকছো কেন?কি হয়েছে বলোতো?অপূর্বের বাবা অপূর্বের মায়ের সামনে একটা ছবি দিয়ে বলে,,,
-মেয়েটাকে দেখো তো।অপূর্বের মা ছবিটা হাতে নিয়ে বলে,,,
-কে মেয়েটা??
-আমার বন্ধু আজিজ এর মেয়ে।আজিজ আমার কলিগও ছিল।তুমিতো চিনই।অপূর্বের মা ছবিটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে বলেন,,,,
-মেয়েটা খুব মিষ্টি।আর সুন্দরও বটে।কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে বলছো কেন??
-আমি মেয়েটাকে অপূর্বের জন্য পছন্দ করেছি।তুমিও দেখো।আমি আজিজকে বলেছি তার মেয়েকে আমার ছেলের বউ বানাবো।
-আমারতো মেয়েটাকে খুব পছন্দ হয়েছে।কিন্তু অপূর্ব?ওর তো নিজস্ব কোনো পছন্দ থাকতে পারে।ওর সাথে কথা না বলেই তুমি কথা দিয়ে দিলে???
-তোমার ছেলের মতিগতি আমার কাছে ঠিক লাগছে না।আর এই বিষয়ে আমি ওর সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করলাম না।তোমার ছেলে আজ পর্যন্ত কোনো ভালো জিনিস পছন্দ করেছে?কতো গুলো প্রেম করেছে তারও ঠিক নেই।তুমিও কি তোমার ছেলের পছন্দ মতো সব মেয়েদের ঘরে তুলতে পারবে??
-তুমি এভাবে বলছো কেন??মানছি আমার ছেলেটা একটু দুষ্টু ছিল।কিন্তু এখন অনেক বদলে গেছে।তাছাড়া অপূর্ব নিজে পছন্দ করে যদি কাউকে বিয়ে করতে চায় তাহলে আমাদের তো উচিত ছেলেকে সাপোর্ট করা।
-এতো কথা বলার কি দরকার?অপূর্ব বাসায় আসলে তুমি কথা বলো ওর সাথে।আমি বেশি দেরি করবো না।তোমার ছেলে আবার কোন প্যাচ লাগায় এই নিয়ে টেনশন।কথা গুলো বলে অপূর্বের বাবা নিজের রুমে চলে যায়।অপূর্বের মা বসে ছবিটা দেখতে থাকে।মেয়েটাকে তিনি খুব পছন্দ করেছেন।কিন্তু অপূর্বকে না জিজ্ঞাসা করে কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারছেন না তিনি।

সুপ্তির ক্লাস শেষ হলে বান্ধবীদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়।বান্ধবীরা তো সুপ্তিকে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।সুপ্তি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই ক্লান্ত হয়ে যায়।সুপ্তি তাদের রিলেশনের সব কথা তাদের খুলে বলে।৪টার দিকে সুপ্তি কলেজ থেকে বের হয়ে গেইটের সামনে এসে দেখে অপূর্ব দাঁড়িয়ে আছে।অপূর্বকে দেখে সুপ্তির খুব ভালো লাগছে।সুপ্তির বান্ধবীরা অপূর্বের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।এর আগে অনেকেই অপূর্বকে দেখে নি।সুপ্তির এক বান্ধবী সুপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,
-দেস,এই হেন্ডসাম তোর বয়ফ্রেন্ড?ইশ!কি মিস করলাম।তোর আগে যদি আমার সাথে দেখা হতো তাহলে আমিই ওর সাথে প্রেম করতাম।কি হেন্ডসাম।আর বডিমার্সেল।আর দাড়ি গুলোর জন্য আরো স্মার্ট লাগে।দোস,তোর কি কপাল।এতো দিন পরে প্রেম করলেও মনের মতো ছেলে পেয়েছিস।বান্ধবীর কথা শোনে সুপ্তির রাগ লাগছে।তার বয়ফ্রেন্ডকে অন্য কেউ এভাবে দেখুক এটা সুপ্তির পছন্দ না।সুপ্তি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।অপূর্ব একটু এগি আসলে সুপ্তির সব বান্ধবীরা অপূর্বের সাথে কথা বলতে শুরু করে।সবাই অপূর্বের সাথে সাথে পরিচিত হয়।অপূর্ব সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলে।এগুলো দেখে সুপ্তির সারা গা জ্বলে যাচ্ছিল।ইচ্ছে করছিল অপূর্বের ৩২টা দাঁত ফেলে দিতে।মেয়েদের দেখলেই গায়ে পড়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে বেটা লুচু একটা।সুপ্তি মনে মনে অপূর্বকে ইচ্চা মতো গালাগাল দিতে থাকে।সুপ্তি দূরে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসতে থাকে।সুপ্তির সব বান্ধবীরা একে একে বিদায় নিলে অপূর্ব সুপ্তির পাশে এসে বলে,,,,
-চলো,আজ তোমার সাথে সারা শহর ঘুরবো।সুপ্তি অপূর্বের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালে অপূর্ব একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলে,,,
-এভাবে তাকাচ্ছো কেন??আমি কি করেছি?
-তুমি ওদের সাথে এভাবে গায়ে পড়ে কথা বলছিলে কেন??
-আমি কোথায় বলছিলাম?তোমার বান্ধবীরাই তো আমার সাথে কথা বলতে আসছিল।
-আমি দেখেছি।তুমি সবাইকে হা করে দেখছিলে।মেয়েদের দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে না??আবার ৩২টা দাঁত বের করে হাসা হচ্ছিল।ইচ্ছে তো করছিলে এক ঘুষি মেরে তোমার সব দাঁত ফেলে দেই।লুচু ছেলে।আমার সাথে আর একবার কথা বলতে আসিস।দেখে নেবো তখন।হুম।কথা গুলো বলে সুপ্তি উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করে।অপূর্ব সুপ্তির ব্যবহারে অবাক হয়ে যায়।সেও সুপ্তির পেছন পেছন যায়।সুপ্তি অপূর্বকে আসতে দেখে বলে,,,
-একদম আমার পিছু নিবি না।তাহলে খবর আছে।
-আমি কি করলাম।তোমার বান্ধবীরাই তো উপরে পরে কথা বলতে এসেছিল।আমি গিয়েছিলাম নাকি।ঠিক আছে।,,সরি।আর হবে না।সুপ্তি অপূর্বের দিকে তাকিয়ে দেখে অপূর্ব মুখ মলিন করে তাকিয়ে আছে।সুপ্তি বলে,,,,,
-ঠিক আছে ঠিক আছে।আর মন খারাপ করতে হবে না।এবারের মতো ক্ষমা করলাম।তবে একটা শর্ত আছে।শর্তের কথা শোনে অপূর্ব অবাক হয়ে বলে,,,,
-শর্ত????কি শর্ত?
-এক্ষণি গিয়ে তুমি দাড়ি গুলো সেইভ করবে।
-মানে কি?আমার এতো স্বাদের দাড়ি কেটে ফেলতে হবে?এ কেমন নিয়ম?এটা কিছুতেই হবে না।
-তাহলে আর আমার পিছু এসো না।
-মানে কি?এখন কি তোমাকে ভালোবাসতে হলে আমাকে দাড়ি গুলোও কেটে ফেলতে হবে??
-হু
-কিন্তু কেন??
-আমার পছন্দ নয় তাই।দাড়িতে তোমাকে পাগলের মতো লাগে।ছিঃ,কি বিশ্রী।মনে হচ্ছে মুখে একটা জঙ্গল গজিয়েছে।এক্ষণি গিয়ে কেটে আসো।কাটার পর ঘুরবো।নাহলে এখন বাসায় চলে যাবো।অপূর্ব দুগালে হাত দিয়ে বলে,,,,
-এমন করো না বাবুটা।এটা এখন একটা স্টাইল।দাড়ি ছাড়া আমাকে দেখতে ভালো লাগে না। খুব বাজে দেখায়।
-আমার ভালো লাগবে।তুমি ফেলে আসো।যাও।
-এও আমার কপালে ছিল?কতো যত্নকরে তৈরি করা দাড়ি গুলোও আমার কেটে ফেলতে হবে।অপূর্ব পাশে একটা সেলুনে ঢুকে মুখ সেইভ করে আসে।দাড়ি ছাড়া অপূর্বকে যেন সদ্য জন্ম নেওয়া একটা কিউট বাবুর মতো লাগছিল।সুপ্তিতো চোখ দুটি বড় করে অপূর্বকে দেখতে থাকে।আর মনে মনে বলে,,,
-আল্লাহ,এখনতো আরো বেশি স্মার্ট আর সুন্দর লাগছে।যার জন্য এতো কিছু করলাম এখন তার উল্টোটা হলো।এবারতো মেয়েরা আরো বেশি করে ক্রাশ খাবে লুচুটার উপর।

চলবে———

#মায়াবিনী

সুরমা
পর্ব : ১২

অপূর্ব সুপ্তির কাছে এসে বলে,,,
-দেখো তো আমাকে এখন কেমন লাগছে?ছিঃ ছিঃ।আমার বন্ধুরা দেখলে যে কি বলবে।আমাকে নিয়ে হাসা হাসি করবে।ইস,কতো দিনের যত্নে রাখা শখের দাড়ি গুলোও তোমার জন্য কাটতে হলো।
-তাহলে এখন যাও,গিয়ে লাগিয়ে ফেলো।
-এ্যাঁ,লাগানো গেলে কি বলতে হতো।অপূর্ব একটু পর পর নিজের গালে হাত দিয়ে দেখছিল।সুপ্তি একটু রেগে বলে,,,,
-ইশ,আমার থেকেও তোমার এই দাড়ি গুলো বড় হলো?তাহলে তুমি তোমার শখের দাড়ি নিয়েই থাক।আমি গেলাম।কথাগুলো বলে সুপ্তি হাঁটতে শুরু করে।অপূর্ব দৌঁড়ে গিয়ে সুপ্তির হাত ধরে বলে,,,,,
-সরি জান। আর বলবো না।চলো এই পার্কটায় একটু ঘুরে আসি।অপূর্ব সুপ্তির হাত ধরে করুন সরে বলে কথাগুলো।সুপ্তিও আর কোনো কথা বলে নি।অপূর্ব সুপ্তিকে নিয়ে পাশের পার্কটায় গিয়ে বসে।সুপ্তি চারপাশে তাকিয়ে দেখে কতো ছেলে মেয়ে।চারদিকে কবুতরের জোড়া।একজন আর একজনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।এসব দেখে সুপ্তির কিছুটা অস্বস্তি লাগছিল।এর আগে কখনও পার্কে আসে নি সুপ্তি।সুপ্তি চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে বলে,,,,
-ছিহহহহহ,কি অবস্থা পার্কের।এখানেও মানুষ আসে?আমি এখানে থাকবো না।অন্য কোথাও হলে চলো।
-কেন?এখানে কি প্রবলেম?
-ইশ!এখানে কতো লোকজন।আর দেখো ছেলে মেয়েরা কি করছে।এতো লোকজন থাকার সত্তেও একজন আর একজনকে কিস করছে?আমার ভালো লাগছে না।নিরিবিলি কোনো জায়গা নেই?থাকলে সেখানে চলো।নয়তো বাসায় চলো।
-কিসতো এখন নর্মাল বিষয়।
-আমি এতো কিছু জানি না।আমি এখানে থাকবো না ব্যস।
-ঠিক আছে চলো।আমার একটা প্রিয় জায়গা আছে।
চলো তোমাকে নিয়ে যাই।অনেক ভালো লাগবে।একদম খোলামেলা পরিবেশ।লোকজনও তেমন যায় না ওখানে
-ঠিক আছে তাহলে চলো।অপূর্ব সুপ্তিকে নিয়ে একটা নির্জন জায়গায় চলে আসে।জায়গাটা রাস্তা থেকে অনেকটা ভেতরে।রিকশা থেকে নেমে অপূর্ব সুপ্তির হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে।একটা সরু রাস্তা।রাস্তাটা দিয়ে কিছুদূর যেতেই একটা ছোট নদী।লোকজন পার্কের তুলনায় এখানে অনেক কম।নদীর পাশে মামারা ফুচকা, ঝালমুড়ি, আইসক্রিম নিয়ে বসে আছে।এখানে প্রচুর পরিমানে বাতাসও রয়েছে।বাতাসে সুপ্তির ওড়না আর চুল উড়ছিল।জায়গাটা ভীষণ ভালো লাগলো সুপ্তির।এতো লোকজন নেই চারপাশে।অল্প কিছু ছেলে মেয়ে ঘুরাঘুরি করছে।রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় নীরব এবং নিস্তব্ধ পরিবেশ।সুপ্তিতো জায়গাটা দেখে সেই পরিমাণ খুশি।সুপ্তিকে এতো খুশি দেখে অপূর্বেরও খুব ভালো লাগছে।অপূর্ব সুপ্তির হাত ধরলে সুপ্তি অপূর্বের দিকে তাকায়।অপূর্ব বলে,,,,
-খুব ইচ্ছে ছিল,প্রিয়তমার হাত ধরে এখানে হাঁটবো।আজ সেই সুযোগটা হলো।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি একটা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।সুপ্তিও অপূর্বের হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের হাতের আঙ্গুল ডুকিয়ে শক্ত করে চেপপ ধরে।কিছু দূর গিয়ে সুপ্তি বলে,,,
-আমি খাবো।খিদেয় মনে হচ্ছে পেটে ইদুর দৌঁড়াচ্ছে।
-ঠিক আছে।তাহলে চলো রেস্টুরেন্টে যাই।
-রেস্টুরেন্টে যেতে তো অনেক সময় লাগবে।আমি এখন ফুচকা খাবো।
-এগুলো তো খোলা খাবার।রাস্তার সব ময়লা গিয়ে পড়ে।তার চেয়ে চলো ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে যাই।বেশি সময় লাগবে না।জাস্ট ১০মিনিট।এখানে কাছেই কয়েকটা রেস্টুরেন্ট আছে।
-না,চলোতো।আমি ফুচকাই খাবো।ফুচকা আমার খুব প্রিয়।রাস্তার খোলার খাবার হলেও রেস্টুরেন্টের খাবারের থেকে এই ফুচকার টেস্ট বেশি।আনন্দটাও অন্যরকম।সুপ্তি অপূর্বকে টেনে ফুচকার কাছে নিয়ে যায়।অপূর্ব সুপ্তিকে অনেক বুঝালো।কিন্তু সুপ্তির বায়না,সে এখানেই খাবে।ফুচকাওয়ালার কাছে গিয়ে সুপ্তি বলে,,,,
-মামা,বেশি করে ঝাল দিয়ে ফুচকা দেন।সুপ্তির কথা শোনে অপূর্ব বলে,,,,
-এই না।এতো জ্বাল খাওয়া ঠিক নয়।
-ঝাল ছাড়া ফুচকা খাওয়া আর না খাওয়া সমান।আমি ঝাল দিয়েই খাবো।ফুচকাওয়ালা ফুচকার প্লেট হাতে দিলে সুপ্তি গপাগপ খাওয়া শুরু করে।সুপ্তির খাওয়া দেখে অপূর্ব লোভাতুর ভাবে সুপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।একের পর এক মুখে দিয়েই যাচ্ছে।ঝালে ঠোঁট সহ সারা মুখ লাল হয়ে গেছে।চোখ থেকে পানি পড়ছে।চোখের পানি আর নাকের পানি মিশে একাকার।তবুও সুপ্তি খেয়েই যাচ্ছে।সুপ্তির খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে ফুচকা গুলো না জানি কতো টেস্টি।অপূর্বের ইচ্ছে করছে সুপ্তির থেকে ফুচকা নিয়ে খেয়ে দেখতে।সুপ্তি খেতে খেতে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে দেখে অপূর্ব তার দিকে তাকিয়ে আছে।সুপ্তি একটা ফুচকা অপূর্বের দিকে দিয়ে বলে,,,
-হা করো।
-আমি খাবো না।তুমি খাও।
-আমি হা করতে বলছি না?সুপ্তির কড়া গলা শোনে অপূর্ব হা করলে সুপ্তি অপূর্বের মুখে ফুচকা গুজে দেয়।অপূর্বের তো ঝালে শেষ হয়ে যাচ্ছিল।ঝালে অপূর্বের চোখে পানি চলে আসে।সুপ্তি আরো একটা ফুচকা অপূর্বের দিকে দিয়ে বলে,,
-নাও,আর একটা।
-না বাবা।তুমি খাও।আমি আর খাবো না।কি ঝাল।তুমি খাচ্ছো কি করে?
-এটাই তো মজার।ফুচকা খাবে আর ঝালে লাল হবে না।তাহলে কিসের ফুচকা খেলে।আর দুটো আছে।একটা তোমার আর একটা আমার।
-আমি খাবো না। দুটোই তোমার।অপূর্ব না করার সত্তেও সুপ্তি জোর করে অপূর্বের মুখে ফুচকা ডুকিয়ে দেয়।বাধ্য হয়েই অপূর্বকে খেতে হয়।ফুচকা খেয়ে অপূর্ব পানি খেতে খেতে পেট ভরে ফেলে।ঝালের জন্য সে কথাই বলতে পারছে না।অপূর্বের মনে হচ্ছে তার মুখের ভেতরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।ইশ,এতো ঝাল ফুচকা মেয়েরা কেমনে খায় আল্লাহ জানে।দুটো খেয়েই অপূর্বের মুখে আগুন জ্বলছে।বেশি খেলে হয়তো আজ সারাদিন পানিতে নেমে থাকতে হতো।বাট,সুপ্তির সেরকম কোনো রিয়েকশন ছিল না।অপূর্ব বারবার অদ্ভুদভাবে সুপ্তিকে দেখছিলএভাবেই ।দুজনে অনেক্ষণ এক সাথে ঘুরে গল্প করে।এভাবে তারা বিকালটা নদীর পাড়েই কাটিয়ে দেয়।সুপ্তি বলে,,,,
-চলো এবার বাসায় যাওয়া উচিত। এর বেশি দেরি করলে বাসায় সমস্যায় পড়তে হবে।
-আর একটু থাকি।
-আর নয়।চলোতো।দেখেছো কখন থেকে আসছি।আমিতো কলেজ ছুটির পর আর বাহিরে থাকি না।এমনিতেই আব্বু অনেক প্রশ্ন করবে।এতো দেরি হলো কেন?কোথায় ছিলি?কার সাথে ছিলি।আরো কতো কি।এসব প্রশ্নের উত্তর তো আমাকেই দিতে হবে।
-এসব প্রশ্ন করলে বলো তোমার জামাই সাথে ছিলাম।নদীর পাড়ে এতক্ষণ জমিয়ে প্রেম করছিলাম তার সাথে। অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি অপূর্বের বাহুতে একটা কিল দিয়ে বলে,,,,
-ফাজলামি করার জায়গা পাও না।আব্বু জানতে পারলে কি হবে জানো?সাথে সাথে পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে দিবে।আমার তো এটা নিয়েই টেনশন হয়।আল্লাহ জানে,আব্বু ভাইয়া আমাদের রিলেশনটা মেনে নিবে কিনা।কথা গুলো মনে হতেই সুপ্তির মন খারাপ হয়ে যায়।অপূর্ব সুপ্তির দুটি হাত চেপে ধরে বলে,,,
-মন খারাপ করো না তো।আমি আছি তো।কিছু হতে দিবো না।সব ম্যানেজ করে নিবো ঠিক। দেখে নিও।
-হু,চলো এবার আমরা যাই।রিস্ক নিতে চাই না।
-ঠিক আছে,চলো।অপূর্ব আর সুপ্তি নদীর পাড় থেকে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় চলে আসে।একটাও খালি গাড়ি নেই।অপূর্ব আর সুপ্তি গাড়ির জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকে।হঠাৎ সুপ্তির নজর পড়ে রাস্তার অপর পাশে।একটা লোক বিভিন্ন রকম কালারিং বেলুন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বেলুন সুপ্তির খুব প্রিয়।সুপ্তি খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে,,,,
-ওয়াও!!!!!!বেলুন।আমার খুব প্রিয়।অপূর্ব তাকিয়ে দেখে খুশিতে সুপ্তির চোখ উজ্জ্বল হয়ে গেছে।সুপ্তি অপূর্বকে কিছু না বলে যেই রাস্তা পার হতে যাবে এমনি একটা গাড়ি ফুল স্পিডে এসে সুপ্তিকে হাল্কা ধাক্কা মারে।সুপ্তি রাস্তার এক পাশে গিয়ে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগে।এতে সুপ্তি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।এটা দেখে অপূর্ব মূর্তির মতো হয়ে যায়।অপূর্ব এক চিৎকার দিয়ে গিয়ে সুপ্তিকে ধরে।সুপ্তিকে এভাবে দেখে অপূর্ব অস্থির হয়ে উঠে।অপূর্বতো প্রায় কান্না করে দেয়।পাশে থাকা একটা দোকান থেকে পানির বোতল এনে সুপ্তির মুখে পানি ছিটা দিলে সুপ্তির জ্ঞান ফিরে আসে।সুপ্তি চোখ দুটি মেলে তাকাতেই অপূর্ব সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।অপূর্বকে কাঁদতে দেখে সুপ্তি আবুল হয়ে যায়।কোনো ছেলে যে এভাবে কাঁদতে পারে এটা সুপ্তি আগে জানতো না।অপূর্ব সুপ্তিকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।সুপ্তির এমন মনে হচ্ছে,অপূর্ব যদি পারতো তাহলে হয়তো এখন সুপ্তিকে নিজের বুকের ভেতরে ডুকিয়ে নিতো।হঠাতেই সুপ্তির নজর যায় তাদের আশেপাশের লোকজনদের উপর।সবাই তাদের দিকে চেয়ে দেখছে।লোকজন এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল যে সুপ্তির মনে হচ্ছিল বিনা টিকিটে সবাই সিনেমা দেখছে।সুপ্তি নিজের মুখটা অপূর্বের কানের কাছে এনে আস্তে করে বলে,,,
-আমি ঠিক আছি।আমার কিছু হয়নি।কান্না থামিয়ে আমাকে ছাড়ো।দেখো লোকজন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।সুপ্তির কথা শোনে অপূর্ব চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে সত্যি লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে দেখছে।অপূর্ব সুপ্তিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলে,,,,,,,,,
-দেখুক।তাতে আমার কি?জানো আমি কতোটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।এখন যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো?আমার কি হতো তখন?অপূর্বের গলা ভারী শোনাচ্ছিল।সুপ্তি বুঝতে পেরেছে সত্যি অপূর্ব অনেকটা ভয় পেয়েছিল।কারন,ছেলেরা একটু আঘাতে কখনও কাঁদে না।সুপ্তি মুড চেঞ্জ করার জন্য বলে,,,
-ভালোই তো হতো।তুমি নতুন একটা জিএফ পেতে।পরে তার সাথে প্রেম করতে।আমাকে ভুলে যেতে।আর কি হতো?।সুপ্তির কথা শোনে অপূর্ব সুপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বলে,,,,,
-বেয়াদপ মেয়ে,এক চড় মেরে তোমার গাল ফাটিয়ে দিবো আর একটাও বাজে কথা বললে।আমি ভয়ে মরছি আর তুমি আমাকে নিয়ে মজা করছো।অপূর্ব রাস্তা থেকে উঠে সুপ্তিকেও টেনে তুলে বলে,,,,,
-দেখি কোথায় কোথায় ব্যথা পেয়েছো?
-মাথায় একটু আঘাত লেগেছে।আর মনে হয় হাতের মাঝে মাঝে কোথাও একটু কেটে গেছে।জ্বালা করছে।
-কই দেখি?
-না দেখতে হবে না চলো।
-কেন দেখতে হবে না শুনি?
-আরে তুমি দেখে কি করবে?আর আমি কি এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমাকে আমার শরীর দেখাবো??
-ঠিক আছে চলো আগে ডাক্তার দেখাই।
-না না ডাক্তার দেখাতে হবে না।বাসায় চলো।আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।
-করুক অপেক্ষা।আগে ডাক্তার দেখাবো।তারপর অন্য কিছু।
-প্লীজ,শোনো।আমি বাসায় গিয়ে মেডিসিন লাগিয়ে নিবো।গুরুতর কিছু হয় নি।
-আমি এতো বাহানা শোনবো না।আগে ডাক্তারের কাছে যাবো পরে বাসায় যাবো।সুপ্তি বারবার বারন করার পরও অপূর্ব সুপ্তির কোনো কথায় শোনলো না।অপূর্ব সুপ্তিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে চলে যায়।ডাক্তার দেখিয়ে সন্ধ্যার দিকে ফিরে আসে।সুপ্তিকে তাদের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে নিজে নিজের বাসায় চলে আসে।সুপ্তি অনেকটা ভয়ে ভয়ে নিজের বাসায় ডুকে।এর আগে কখনও সে এতো লেইট করে বাসায় আসে নি।দরজা খুলে রুমে ডুকতেই দেখে তার বাবা ডয়িং রুমে বসে আছে।সুপ্তি শব্দ না করে নিজের রুমে যেতে লাগলে তার বাবার ডাকে দাঁড়িয়ে পড়ে।সুপ্তির বাবার কণ্ঠটা এতোটা গম্ভীর শোনালো যে,ভয়ে সুপ্তির গলা শুকিয়ে যায়।

চলবে———