মিস্টার ভিলেন পর্বঃ১

0
3005

#মিস্টার ভিলেন
পর্বঃ১
?সামিরা পপি?
_____________________________
_____________________________

–“এই মেয়ে তোমাকে না কতবার বলেছি আমার আগে পিছে এইভাবে ঘুর ঘুর করবে না?কিন্তু নির্লজ্জের মত তাও ঘুরছ?”

কথাটা একটু জোরেই চেঁচিয়ে বলল নাবিল।আর তার সামনে দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে সামিরা।সামিরা নাবিলের কথাকে কোন রকম পাত্তা না দিয়েই বলল,

–“আপনি বললেই হলো হুম?আমি একশবার ঘুর ঘুর করব।হাজার বার ঘুর ঘুর করব।বুঝেছেন?ইউ নৌ হোয়াট হুয়াই?বিকজ আই লাভ ইউ।”

সামিরার কথায় নাবিল আরেকটু বেশিই বিরক্ত হলো।এই মেয়ে তাকে আজ এক সপ্তাহ ধরে শান্তি দিচ্ছে না।নাবিল বিরক্তি নিয়ে তাও নিজেকে শান্ত রেখে বলল,

–“দেখ আমি এইসব ভালবাসাকে বিশ্বাস করিনা।আর আমি তোমাকে ভালবাসতে পারব না।তাই আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করো।নয়তো আমি কখন কি করি ফেলি নিজেও জানিনা।”

সামিরা বলল,

–“আপনার কি একটুও দয়া মায়া নেই?দেখছেন এই বেচারি গত এক সপ্তাহ যাবৎ আপনার পেছনে ঘুরছে।কিন্তু আপনি তাও পাত্তা দিচ্ছেন না।দেখবেন আমি অভিশাপ দিচ্ছি আপনি সারাজীবন চিরকুমার থাকবেন।বুড়ো বয়সেও কেউকে পাশে পাবেন না হুহ।ও হ্যাঁ যদি আমাকে মেনে নেন তবে আমি আজীবন পাশে থাকব।নয়তো অন্যকেউ থাকবেনা।”

কথা গুলো ঠোঁট উল্টে বলেই চলে গেল সামিরা।সামিরা চলে যাওয়ার পর নাবিল একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।আর তার পাশে দাঁড়ানো তার সব বন্ধু গুলো হু হা করে হাসিতে ফেঁটে পড়ল।নাবিল তাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে উঠল,

–“কি ব্যাপার তোরা এইভাবে হাসছিস কেন?এইখানে কি সার্কাস চলছে?”

নাবিলের বন্ধু রাজ কোনভাবে হাসি চাপিয়ে বলে উঠল,

–“না ভাই সার্কাসের থেকেও বেশি কিছু।মেয়েটা তোকে যে অভিশাপ দিল তা শুনে না হেসে পারলাম না।”

বলেই রাজ আবার হেসে উঠল।নাবিল বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,

–“আচ্ছা ওইসব ছাড়।এইটা বল আকাশ কোথায়?ওকে তো আজকে দেখছি না?”

রাজ বলল,

–“কোথাও দেখ হয়তো তোর বোনের প্যারায় আছে।যেমন মেঘলা তেমন দেখছি এই সামিরা মেয়েটা।দু’জনের ভাব জমে যাবে।তাই বলি কি নাবিল?সামিরাকে মেঘলার ভাবি বানিয়ে নে।মানে তোর বউ করে নে।তারপর তুই আর আকাশ দুইজনে একসাথে প্যারা সামলাবি।”

নাবিল এদের কথার উত্তরে কিছুই বলল না।সেখান থেকে নাবিলের খুঁজে বেড়িয়ে পড়ল।হাঁটতে হাঁটতে রাজের কথা গুলো মনে মনে আওড়ালো।পরে একটা মুচকি হাসি দিল।

সামিরা ক্লাসে এসে বসল।তখন তার বান্ধবি আরশি বলল,

–“কিরে পারলি নাবিলকে পটাতে?খুব চ্যালেঞ্জ করেছিলি।এখন কি হলো?এক সপ্তাহেও কোন কাজ হলো না।তারমানে আর পারবিও না।”

আরশির কথা পিঠে রুপালি বলে উঠল,

–“সামিরা আরশি ঠিকি বলেছে।পারবি না।আর যদি পারিসও পরে যদি নাবিল জানতে পারে যে তুই চ্যালেঞ্জ নিয়েই তার সাথে রিলেশনে গেছিস তখন নাবিল তোর কি অবস্থা করবে ভেবে দেখেছিস?তুই শুধু শুধু তানির সাথে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিস।”

সামিরা এতক্ষন আরশি ও রুপালির কথা শুনল।তারপরেও বলল,

–“আরে দূর তোরা শুধু শুধু চিন্তা করছিস।আমার কি অবস্থা হবে সেটা পরের কথা আগে নাবিলকে পটিয়ে নেয়।”

আরশি বলল,

–“তোর হয়তো এখন কোন চিন্তা হচ্ছে না।পরে কিন্তু বুঝবি।জানিস তো নাবিলরা এই কলেজের সিনিয়র।তারপর রাজনীতি করে।নাবিল আর আকাশ তো পুরোই ভিলেন।আর তুই এই ভিলেন নাবিলের খপ্পরে পড়ার জন্য লাফালাফি করছিস।দেখিস পরে তোর অনেক কিছুই ভোগ করতে হবে।”

সামিরা বলল,

–“আচ্ছা এইসব কথা বাদ দে।এখন স্যার আসবে ক্লাসে মনোযোগ দে।”

নাবিল কলেজের গেটের সামনে বাইকে বসে মোবাইল টিপছে।তার পাশে তার ফ্রেন্ডস গুলো আছে।তখনি নাবিলের সামনে এসে দাঁড়াল তানি।নাবিল তানির মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার মোবাইলের দিকে চোখ দিল।তানি নাবিলের হাত ধরে বলল,

–“নাবিল চলো তুমি আর আমি একটা কফি খেয়ে আসি।”

নাবিল তার মোবালের থেকে চোখ না সরিয়েই বলল,

–“আমি এখন যেতে পারবনা তানি।আমার কাজ আছে।তুমি যাও।”

তানি ন্যাকামো করে বলল,

–“বুঝলাম তোমার কাজ আছে কিন্তু আমি তো বললাম একটা কফি খাব মাত্র।একটা কফি খেতে আর কতক্ষন লাগে বলো?আর তুমি না বলেছিলে আমরা ফ্রেন্ডস?তাহলে ফ্রেন্ডের সামান্য আবদার রাখতে পারছ না?”

নাবিল এইবার বাইক থেকে উঠে দাঁড়ায়।মোবাইল পকেটে ডুকিয়ে বলল,

–“ওকে চলো।তবে সময় মাত্র পাঁচ মিনিট।এর পর আমার কাজ আছে তাই আমায় যেতে হবে।”

তানি হেসে বলল,

–“ওকে ওকে এখন চলো।”

নাবিল আর তানি বসে বসে কফি খাচ্ছে।তখনি একি রেস্টুরেন্টে আরশি,সামিরা,আর রুপালি ডুকল।তারা কেউ নাবিল আর তানিকে দেখেনি আর নাবিল তানিও দেখেনি।সামিরারাও কফির অর্ডার দিয়ে বসে বসে কথা বলছে।তখনি আরশি নাবিল আর তানিকে খেয়াল করল।এক কোণায় বসে তারা কফি খাচ্ছে আর কথা বলছে।তানিকে বেশ খুশি দেখাচ্ছে।নাবিলকেও মাঝে মাঝে মুখ নাড়াতে দেখা যাচ্ছে।আরশি সামিরাকে বলল,

–“সামিরা আমার মনে হয় তুই চ্যালেঞ্জে জিতবি না।ওই তানি নিজেই নাবিলকে পটিয়ে নিয়েছে আর তোকে নাবিলের কাছে বারবার বকা খাওয়ানোর জন্য প্ল্যান করে তোকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে।”

সামিরা ভ্রু কুঁচকে বলল,

–“মানে?তোর হঠাৎ এইটা কেন মনে হলো?”

–“কেন মনে হলো একটু পর বুঝবি।ওইদিকে তাকা।”

সামিরা আরশির ইশারা অনুযায়ী তাকাল সাথে রুপালিই।দেখল নাবিলও তানির সাথে বেশ হেসেই কথা বলছে।এইটা দেখেই সামিরার মাথা গরম হয়ে গেল।আর কোন কথা না বলে উঠে নাবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।আর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–“বাহ বেশ তো কফি খাওয়া হচ্ছে তাও আবার হেসে হেসে।কই আমার সাথে তো এইভাবে কখনও হেসে কথা বলেন নি?এমনি তো মেয়েদের থেকে নাকি দূরে থাকেন।তাহলে আজ একদম ডেটে চলে এসেছেন?ওয়াও।”

নাবিল সামিরাকে দেখে প্রথমে অবাক হয়ে যাই।পরে সামিরার বলা কথা গুলো শুনে তো আরো অবাক।আর এইদিকে তানি এইসব দেখে মিটিমিটি হাসছে।সে এখন অপেক্ষায় আছে নাবিল কি বলে দেখার জন্য।কিন্তু নাবিল কিছুই বলছে না।সামিরার চোখের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে হা করে।সামিরা এক পলক তানির দিকেও তাকাল দেখল তানি হাসছে।তখন সামিরা হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছে।তার মাথায় একটা দুষ্টুমি বুদ্ধি আসল।তানির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল।সাথে সাথেই নাবিলের কোলে বসে পড়ল সামিরা।এহেন কাজে নাবিল,তানি,আরশি,রুপালি ও আশে পাশের সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।নাবিল প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে সকলের দিকে তাকিয়ে দেখল সকলে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তাই রেগে বলল,

–“এই মেয়ে এই কি করছ?উঠ বলছি।এক্ষুনি উঠ।আশে পাশের মানুষ দেখছে।”

সামিরা নাবিলের গলা দু’হাতে জড়িয়ে ধরল।আর ভাবলেশহীন ভাবে বলল,

–“দেখুক তাও আমি উঠব না।এইটা আপনার শাস্তি।আপনি আমাকে পাত্তা দেন না।আবার এই তানি শাঁকচুন্নির সাথে ঠিকি কথা বলছেন,হাসছেন,কফিও খাচ্ছেন এতে প্রব্লেম হচ্ছে না?”

–“তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছ।উঠো বলছি।”

সামিরা নাবিলের ঠোঁটে এক আঙুল রেখে বলল,

–“শুসস্ আমি চুপচাপ বসে আছি বসতে দিন।এক্ষুনি একটা আইস্ক্রিম অর্ডার দিবেন।আইস্ক্রিম নিজের হাতে আমাকে খাওয়ায় দিবেন।নয়তো……নয়তো দেখবেন আমি আরো কি কি করতে পারি।পাব্লিক প্লেসে যখন আপনার কোলে বস্তে পেরেছি তাহলে নিশ্চয় আরো অনেক কিছুই করতে পারি।”

নাবিল পড়ল বিপাকে।কে করবে ভেবে পাচ্ছেনা।এইদিকে তানি এইসব দেখে রাগে ফুঁসছে।আর আরশি ও রুপালি এইসব দেখে দেখে মিটিমিটি হাসছে।

চলবে……