#মিস্টার ভিলেন
পর্বঃ২
?সামিরা পপি?
____________________________
____________________________
রেস্টুরেন্টে বসে আরশি আর রুপালি সামিরার কান্ড দেখছে।আর হাসাহাসি করছে।এইদিকে তানি রাগে ফুঁস ফুঁস করছে।না পারছে সামিরাকে কিছু বলতে আর না পারছে নাবিলকে কিছু বলতে।নাবিলের সামনে সামিরাকে কিছু বলতে গেলে সে নিজেও ফেঁসে যাবে।আর সে চাই না নাবিলের কাছে খারাপ হতে।দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করে যাচ্ছে।আর না পেরে উঠে দাঁড়িয়ে নাবিলকে বলল,
–“নাবিল তুমি না বলেছিলে তোমার কাজ আছে?তাহলে এই মেয়েকে কোলে বসিয়ে নিজেও বসে আছো যে?তোমার লেট হচ্ছে না?”
নাবিল চামচ দিয়ে সামিরাকে আইস্ক্রিম খাওয়ায় দিচ্ছিল।তানির কথা সামিরাকে নামাতে গেলে সামিরা আর শক্ত করে নাবিলের গলা জড়িয়ে ধরে।সামিরা তানির দিকে তাকিয়ে বলে,
–“উনার কাজ উনি পরে করবে।এখন আমাকে আইস্ক্রিম খাওয়াচ্ছে দেখছ না?অযথা বিরক্ত করো না’তো যাও।”
তানি ফুঁসে উঠে বলল,
–“এই মেয়ে তুমি কি বুঝবে ওর কাজের ব্যাপারে হুম?নাবিল রাজনীতি করে তার কত দরকারী কাজ থাকতে পারে।আর তুমি কিনা ওর গলায় ঝুলে বসে আছো?এই নামো অনেক হয়েছে।”
সামিরা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
–“উনার কাজ থাকলে উনি আমাকে বলবে।আর আমি তোমার কথায় কেন উঠব?আর তুমি কে আমাদের মধ্যে কথা বলার?দেখছ না উনি আমার বয়ফ্রেন্ড। আর আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের গলায় ঝুলে থাকব নাকি কি করব সেটা আমার ব্যাপার।আর তোমার লেট হলে তুমি যেতে পারো।রাস্তা ওইদিকে।”
সামিরা তানিকে কথা গুলো বলে নাবিলের দিকে তাকাল।দেখল নাবিল তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।সাথে সাথেই সামিরা এক চোখ টিপ মারল।আর নাবিল থতমত খেতে গেল।যে ছেলে মেয়েদেরকে পাত্তা দেয় না সে ছেলের কোলে নাকি একটা মেয়ে বসে আছে।কথাটা ভাবতেই নাবিল অবাক হয়ে যাচ্ছে।নাবিলের চেহেরা দেখে সামিরা বলল,
–“কি হলো কি দেখছেন?খাওয়ায় দেন।নাকি এই পেত্নীর সাথে যাওয়ার চিন্তা করছেন?যদি এই চিন্তা করেন তবে এক্ষুনি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেন।কারন আমি আগেই বলেছিলাম পাব্লিক প্লেসে আমি উল্টা পাল্টা কিছু করে বসব।সো নাও চয়েস ইজ ইউর।খাওয়াবেন নাকি যাবেন?”
বলেই সামিরা ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগল।আর নাবিল যদিও সারাক্ষন মারামারি, ভিলেনগিরি করে।তবুও তার মান সম্মান আছে।আর এই মেয়ের জন্য সে নিজের মান সম্মান খোয়াতে পারবেনা।নাবিল মনে মনে ভাবছে।কি নির্লজ্জ মেয়েরে বাবা?পাব্লিক প্লেসে একটা ছেলের কোলে বসে আছে।
——
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে নাবিল নিজের গন্তব্যে চলে গেল।আর সামিরা তার বান্ধবীদের সাথে রাস্তার পাশ দিয়ে কথা বলে বলে যাচ্ছে।আর আজকে নাবিলকে যা জ্বালিয়েছে তা নিয়ে হাসাহাসি করছে।আরশি হাসতে হাসতে বলল,
–“ইয়ার তুই একটা চিজ।কিভাবে নাবিলকে নাকানিচুবানি খাওয়ালি।আমি তো ওই তানি পেত্নীর মুখ দেখে সেই ইঞ্জয় করেছি।”
আরশির কথার পিঠে রুপালি বলল,
–“হ্যাঁ আমিও অনেক ইঞ্জয় করেছি।যাক তানি পেত্নী তোকে চ্যালেঞ্জ দিলেও কিন্তু তোর উপকার-ই করেছে।এতদিন যা মনে মনে চেয়েছিলি তা বাস্তবে হচ্ছে।”
রুপালির কথা শুনে সামিরা হাসি থামিয়ে দেয়।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
–“হুম ঠিকি বলেছিস।”
আরশি কিছু একটা ভেবে নিল।তখনি তার চোখ মুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠল।আর চেঁচিয়ে বলল,
–“ইয়েস ইয়েস আরো একটা ওয়ে পেয়ে গেছি নাবিলকে তোর প্রেমে ফালানো।আই মিন তুই চ্যালেঞ্জ জিতার।”
রুপালি ও সামিরা ভ্রু কুঁচকে আরশির দিকে তাকায় আর বলল,
–“মানে?কি ওয়ে পেয়েছিস?বল তাড়াতাড়ি। ”
আরশি সামিরা চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলতে লাগল,
–“তানি তোকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে।যেন তুই নাবিলকে তোর প্রেমে ফেলিস।আর আজকে সে নিজেই তোকে নাবিলের সাথে দেখে একদম জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল দেখলাম।আর তুই আজকে হয়তো নাবিলের সাথে এমনটা ফাস্ট টাইম করেছিস।তাও কিভাবে জানিস?”
–“কিভাবে?”
–“ওই তানিকে নাবিলের সাথে দেখে।তুই তো এমন কাজ প্রতিদিন করতে পারবিনা।তাহলে এমনি মুখে বললেও নাবিল তোর হবেনা সিউর।তাই তুই এখন থেকে যখনি তানিকে নাবিলের সাথে দেখবি তখনি নাবিলের সাথে একটু বেশিই চিপকে থাকবি।তাহলে নাবিল বুঝবে যে তুই এর সাথে কোন মেয়েকে সহ্য করতে পারিস না।তুই ওকে সত্যিই ভালবাসিস।তাহলে নাবিলের মনে তোর জন্য আস্তে আস্তে অনুভুতি নিশ্চয় সৃষ্টি হবে আমার বিশ্বাস।আর সেই সাথে ওই শাঁকচুন্নিকেও জ্বালাতে সহজ হবে।”
আরশির কথা শুনে সামিরা আর রুপালি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার আরশির দিকে তাকাল।তারপর ঝাপটে আরশিকে দু’জনে ধড়িয়ে ধরল।রাস্তার মাঝখানে এমন জড়াজড়ি দেখে আশে পাশের মানুষ অবাক চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তারা খুশিতে এতটাই উত্তেজিত হয়ে গেছে যে বাকি কিছুর খবর নেই।
কিছুক্ষন পর আরশি আর রুপালিকে বিদায় দিয়ে সামিরা নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিল।কিছু দূর যেতেই তার মনে হলো কেউ তাকে ফলো করছে।কিন্তু পেছনে ফিরলে আর কেউকে দেখা যাই না।এইভাবে কয়েকবার হওয়ার পর সামিরার মনে অজানা ভয় হানা দিল।কি করবে সে।অবশ্য অনেকটা বাড়ির কাছেই চলে এসেছে।তাই চারিদিকে তাকিয়ে নিল একবার না কেউ নেই।জুতা জোড়া খুলে হাতে নিয়ে দিল ভোঁ দৌঁড়।ব্যস আর পায় কে।এক দৌঁড়ে সামিরা ঘরের সামনে চলে এসেছে।এসে হাপাতে লাগল।ঘরে ডুকে জুতা গুলো জুতার র্যাকে রেখে সোজা রান্না ঘরে গেল।পানি নিয়ে দুই তিন গ্লাস পানি গটগট করে খেয়ে নিল।সামিরার মা সামিরার ভাইকে ভাত দেওয়ার জন্য রান্না ঘরে এসে দেখল সামিরা হাপাচ্ছে।আর পানি খাচ্ছে।তাই তার মা জিজ্ঞেস করল,
–“কি ব্যাপার কি হয়েছে তো?এইভাবে হাপাচ্ছিস কেন?কিছু কি হয়েছে?”
সামিরা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলিল,
–“ও কিছুনা রাস্তায় কুকুর দেখে দৌঁড় মেরেছিলাম তাই।”
সত্যি কথা বললে টেনশন করত।তাই মিথ্যা বলল।সামিরার মা এই ব্যাপারে আর কিছুই বলল না।শুধু বলল,
–“আচ্ছা যা গোসল করে খেতে আয়।”
–“হুম।”
——–
সামিরা খেয়ে শুয়ে পড়েছে।দুপুরে ঘুমানো তার অভ্যাস।আর একটু বেশিই ঘুম কাতুরে।শোয়ার সাথে সাথেই চোখে ঘুম আসে।কিন্তু আজকে ঘুম আসছে না।কিছুক্ষন এপাশ ওপাশ করে উঠে বসল,
–“আচ্ছা?সত্যিই কি কেউ আমাকে ফলো করছিল?নাকি আমিই একটু বেশি ভাবছি।না আমি বেশি ভাবছি না।কারন এই ঘটনা গতকালও ঘটেছিল।আর যদি আমার মনের ভুল হয় তাহলে একদিন হবে। পর পর দু’দিন কেন হবে?উফফ কিছুই বুঝতে পারছিনা।”
—
আকাশ রেগে চুপচাপ বসে আছে।নাবিল সেই কখন থেকে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে কি হয়েছে।কিন্তু আকাশ কিছুই বলছেনা।নাবিল বেশ বুঝতে পারছে নিশ্চয় মেঘলার সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে আর নয়তো মেঘলা গুলমাল করেছে।উফফ এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা যাই না।এখনও বাচ্চায় রয়ে গেল।তখনি নাবিলের মোবাইলে কল আসল।দেখল সেটা মেঘলার কল।তাই রিসিভ করল,
–“হ্যাঁ মেঘলা বল।”
–“ভাইয়া আকাশ কি তোর সাথে আছে?দেখ না সে কখন থেকে কল দিচ্ছি কিন্তু রিসিভ করছেনা।”
নাবিল আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
–“আছে আমার সাথে।কিন্তু খুব রেগে আছে।তুই আবার কি গোন্ডগোল পাঁকিয়েছিস বলতো?”
–“ভাইয়া তোর মনে হয় আমি গন্ডগোল করি?কেউ বুঝেনা আমাকে।ভ্যা ভ্যা”
–“এই চুপ।তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।এখন বল কি করেছিস সেটা।”
–“বিশ্বাস কর ভাইয়া আমি কিছুই করিনি।শুধু নিরবের সাথে কথা বলেছিলাম একটু তাই আকাশ রাগ করেছে।”
–“জানতাম তুই শুধ্রাবি না।আকাশের মানা করা সত্ত্বেও ওই নিরবের সাথে কথা বলিস। বাহ অসাধারন। ”
বলে নাবিল নিজেই কল কেটে দিল।
চলবে….