মিস্টার ভিলেন পর্ব-০৩

0
1893

#মিস্টার ভিলেন
পর্বঃ৩
?সামিরা পপি?
____________________________
____________________________

রাত সাড়ে ন’টা বাজে।নাবিল বসে বসে টিভি দেখছে।কিছুক্ষন পর নাবিলের মা নাবিলকে ভাত খেতে ডাকল তাই নাবিল টিভি বন্ধ করে খেতে গেল।নাবিল খাচ্ছে তার পাশে মা আর বাবাও আছে।নাবিলের মা নাবিলকে বলল,

–“নাবিল অনেকদিন হলো মেঘলাকে দেখি না।তুই গিয়ে আগামীকাল মেঘলাকে নিয়ে আসিস।”

–“মা আমি বললে তো আর আকাশ মেঘলাকে আসতে দিবেনা।আর মেঘলাও আকাশকে ছেড়ে থাকবেনা।তার থেকে বরং তুমি গিয়ে মেঘলাকে দেখে এসো।”

–“কিন্তু বললে কি করে হয় বল?বিয়ের আগে মেয়ে শ্বশুড়বাড়িতে থাকাটা লোকে ভালো চোখে দেখবেনা।তাই না?”

–“শুধু শুধু তুমি মানুষ কে কি বলবে ভাবছ।মেঘলা ছোট থেকেই ওই বাড়িতে বড় হয়েছে তাহলে কে কি বলবে সেটা কেন ভাবছ?আর তুমি যেহেতু এত করে বলছ তাহলে আমি আকাশের সাথে কথা বলে দেখব।”

–“হুম ঠিক আছে।”

নাবিল আর কথা না বলে খাচ্ছে।তখনি ফোন বেজে উঠল।ফোনের স্ক্রিনে দেখল রাজ কল করেছে।নাবিল রিসিভ করে বলিল,

–“হ্যাঁ রাজ বল কি হয়েছে?”

রাজ হন্তদন্ত হয়ে অস্থিরতার স্বরে বলল,

–“আর বলিস না এই জনি আর তার সাঙ্গ পাঙ্গরা এসে আমাদের টিমের কয়েকটা ছেলেকে খুব মেরেছে।”

নাবিল খাবার রেখে দাঁড়িয়ে বলল,

–“কেন মেরেছে ওদের?আর সবার কি অবস্থা এখন?তোরা কোথায় আছিস সেটা বল।আমি এক্ষুনি আসছি।”

–“জনি আর তার চ্যালা গুলো দোকানদারদের থেকে চাঁদা চাচ্ছিল।তাও আবার মোটা অংকের।দোকানদের এত সামর্থ নেই যে এত টাকা চাঁদা দিবে।তাই কেউ দিতে রাজী হয়নি।এই নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয়।এক পর্যায়ে জনি আর তার চ্যালারা সকল দোকানদারকে মেরেছে।আমাদের টিমের ক’জন জনির কাজ দেখেছে তাই ওরা জনিকে বাঁধা দিতে যাই।জনি আরো ক্ষেপে গিয়ে ওদেরকেও মারে।আর এখন সবার অবস্থা খুব খারাপ।সবাইকে নিয়ে আমি আর আহান হসপিটালে এসেছি।এসেই তোকে কল করেছি।”

রাজের কথা শুনে নাবিলের মাথায় রক্ত উঠে গেল।রাগে তার শরীর জ্বলছে।ভাত রেখে হাত ধুঁয়ে বেড়িয়ে পড়ল হস্পিটালের উদ্দেশ্য। এইদিকে নাবিলের মা নাবিলকে অনেক ডেকেছে কিন্তু নাবিল শুনেনি।নাবিলের এমন কান্ডে নাবিলের বাবা রেগে যাই।তিনি বলেন,

–“দেখেছ তোমার ছেলে কত বড় বেয়াদপ?ভাত রেখেই চলে গেছে।তাও এই রাতের বেলায়।তুমি যে ডাকলে তার দাম দিল না।”

নাবিলের মাও রেগে বলল,

–“তুমি একদম আমার ছেলেকে বেয়াদপ বলবেনা।তুমি দেখনি ও কত রেগে গেছে?নিশ্চয় কোন না কোন সমস্যা হয়েছে তাই তো গেল।”

–“হ্যাঁ তোমার আশকারায় তোমার ছেলের এই অবস্থা।দেখবে কখন না জানি এই সব মারামারির মধ্যে নিজেই শেষ হয়ে যাই।আমার কথা তো এখন ভাল লাগছে না।পরে ঠিকি বুঝবে।”

বলেই নাবিলের বাবাও উঠে চলে যাই।নাবিলের মা’র খারাপ লাগলেও তেমন কিছু বলিল না আর।

——–

নাবিল হস্পিটালে গিয়ে দেখল বাহিরে রাজ ও আহান বসে আছে।তাদের দু’জনকে খুব অস্থির লাগছে।দু’জনেই এদিক থেকে ওদিক পায়চারী করছে।নাবিলকে দেখে রাজ দ্রুত নাবিলের দিকে এগিয়ে গেল।বলল,

–“যাক তুই এসেছিস।শোন এই জনি কিন্তু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে।এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।আমাদের সাথে কিছু করতে না পেরে ওদের সাথে কি করেছে দেখেছিস?আর ওই নিরিহ মানুষ গুলোর উপর যে অত্যাচার করছে।কয়েকজন থেকে শুনেছি এই চাঁদার জন্য না’কি বেশ কয়েকদিন যাবৎ তাদের চাপ দিচ্ছে।এমন হলে তো তারা দোকানও চালাতে পারবেনা।”

নাবিল হাত মুষ্টিবদ্ধ করল।চোখ গুলো লাল হয়ে রয়েছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ রেগে আছে।রাতে কথা শুনে বলল,

–“হ্যাঁ ওই জনির একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।পাকা গজিয়েছে তাই একটু বেশিই উড়ছে।তবে এখন নয় সময় মত দিব ওকে শাস্তি।শুধু একটু সময়ের দরকার।ততদিনে এরা সবাই সুস্থ হয়ে নিক।”

———

সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে সামিরার ঘুম ভাঙে।গতরাতে অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ছিল তাই এখন ঘুমটা তাড়াতাড়ি ভেঙে গেছে।উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিল।বালিশের পাশ থেকে উড়না টা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিল।তার মায়ের রুমের সামনে এসে দেখল তার মা নামাজ পড়ে তসবিহ জপ করছে।তাই আর কিছু না বলে আলতো পায়ে হেঁটে বাহিরে চলে গেল।বাহিরে আসতেই দেখল সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে।লাল টকটকে সূর্য।বাহিরের মৃদু ঠান্ডা হাওয়া মন আর দেহ সব শিতিল করে দিয়ে যাচ্ছে।সামিরা প্রায় ঘন্টা খানেক বাহিরে ঘুরাঘুরি করে পনে সাতটার দিকে ঘরে আসল।সামিরার মা সামিরাকে বাহির থেকে আসতে দেখে অবাক হয়ে বলল,

–“সামিরা?তুই এত সকালে কোথা থেকে আসছিস?আর তুই এত সকালে ঘুম থেকেই বা উঠলি কি করে?”

সামিরা মুচকি হেসে বলল,

–“আসলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছিলাম তাই সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছি।এখন বাহিরে একটু হাঁটতে গেছিলাম।”

–“ওহ আচ্ছা।আচ্ছা এখন যখন উঠেই পড়েছিস তাহলে আমাকে নাস্তা বানাতে সাহায্য কর।”

–“আম্মু আমি পারব না তুমিই কর।তুমি তো জানো রান্না করতে আমার বিরক্ত লাগে।”

–“এই মেয়ে এই চুপ কর।প্রতিদিন করে করে খাওয়ায় তাই গাঁয়ে লাগেনা।আমাকে করে খাওয়াতে ইচ্ছে করছে না।বিয়ে দিয়ে দিলে তখন ঠিকি করবি শ্বশুড় বাড়িতে।আমি কোন কথা শুনতে চাই না।জলদি আয় আমাকে সাহায্য কর।”

বলেই সামিরার মা রান্না ঘরে চলে গেল।আর এইদিকে সামিরার কি আর করার।এখন না গেলে তার মায়ের প্যানপ্যানানি চলতেই থাকবে।তার থেকে ভালো কাজে সাহায্য করা।

সামিরা নাস্তা করে রেড়ি হয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছে।গতকাল কলেজ থেকে হেঁটে এসেছিল।তার মনে হয়েছিল কেউ তাকে ফলো করছে।সেই ভয়টা এখনও মনেই রয়ে গেছে তাই আর হেঁটে আসা যাওয়া করবেনা।এখন রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু রিকশা দূরে থাক রিক্সার টিকিটারও দেখা নেই।এতে সামিরা বেশ বিরক্তিবোধ করছে।তার উপর এই রোদ।রোদের কড়া তাপে মনে হচ্ছে শরীর ঝলসে যাচ্ছে।এতে যেন বিরক্তিটা দ্বিগুন হলো।বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা রিক্সা দেখতে পেল।রিক্সা কাছে আসতেই রিক্সায় চড়ে বসল।প্রায় বিশ মিনিট পর রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে যেই কলেজে ডুকতে যাবে।ওমনি কিছু দূরে নাবিলকে দেখে সামিরার মেজাজ বিগড়ে গেল।রাগে যেন পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।তার এই মূহুর্তে মন চাচ্ছে নাবিলকে ধরে আছাড় মারতে।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নাবিলের দিকে এগিয়ে গেল।

চলবে…