মিস্টার ভিলেন পর্ব-০৯

0
1781

#মিস্টার ভিলেন
পর্বঃ৯
?সামিরা পপি?
___________________________
___________________________

কেটে গেছে এক সপ্তাহ।এই এক সপ্তাহের মধ্যে নাবিল একদিনও কলেজে আসেনি।সামিরা প্রতিদিন অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকত এই বুঝি নাবিলকে এক ঝলক দেখতে পাবে।কিন্তু না সামিরার ভাবনাকে ভূল প্রমাণিত করে নাবিল আসেনা।সামিরা কয়েকদিনে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেনি।আর না ঘুমিয়েছে।প্রতিদিন ঘুমানোর সময় ভাবত নাবিল পরের দিন কলেজে আসবে।ওকে দেখতে পাবে।এতদিন কোথায় ছিল জিজ্ঞেস করবে।আর ওইদিন যে নাবিল ভূল বুঝেছিল সেটাও ক্লিয়ার করে বলবে।কতশত মনকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘুমাতো।সকালে উঠে আবার তাড়াতাড়ি করে কলেজে যেত কিন্তু না নাবিলের দেখা একদিনও পায়নি।আজকেও সেই একি অবস্থা।নাবিলকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে সামিরা নিজের দিকে নজর দিতেও ভূলে গেছে যেন।আগের মত সেই চাঞ্চল্যতা নেই তার মধ্যে।আরশি ও রুপালী তা বুঝতো তাই তারা আজকে প্ল্যান করেছে সামিরাকে নিয়ে ঘুরে আসবে।যে করেই হোক সামিরার মুখে হাসি ফুঁটাবে।যেই ভাবা সেই কাজ।কলেজ শেষ সামিরাকে নিয়ে তারা প্রথমে গেল হোসাইন স্কয়ার।যদিও সামিরা যেতে চাইনি তবুও জোর করে নিয়ে গেছে।হোসাইন স্কয়ারে গিয়ে তিনজনের জন্য তিনটা একি রকমের পায়েল কিনল।সামিরার আবার পায়েল খুব পছন্দ।না হলেও তার ঘরে পনের থেকে বিশটা পায়েল আছে। [আপনাদের লেখিকারও কিন্তু খুব পছন্দ।তার কাছে বিশটা মত পায়েল আছে?] পায়েল দেখে সামিরা খুব খুশি হলো।তার আরেকটা জিনিস খুবই পছন্দ তা হলো ঝুমকো চুড়ি।আরশি সামিরাকে গিয়ে অন্য দোকানে গেল।সেই সুযোগে এক ডজন সিলভার কালারের ঝুমকো চুড়ি কিনে নিল রুপালি।সেগুলো সামিরাকে দিনে।উহু দিবে বললে ভূল হবে।সামিরাকে সেগুলো দিয়ে চমকে দিতে।

তারা অনেক কিছুই কেনাকাটা করে পরে হোসাইন স্কয়ারের আশে হোটেল জামান আছে।সেখানে গেল।সামিরার এইসব কিছু বেশ বিরক্ত লাগছে।তবুও বান্ধবীদের মন রক্ষার্থে যেতে হচ্ছে।জামানে গিয়ে তিনটা মিক্স ফ্রুট,তিনটা কফি অর্ডার দিল।সেখানেই রুপালী চুড়ি গুলো সামিরাকে দিল।সামিরা ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে বলল,

–“কি এইগুলো?”

রুপালী হাসি হাসি ফেস নিয়ে বলল,

–“আগে প্যাকেট খোলে দেখ তাহলে বুঝবি।”

সামিরা আর কথা না বাড়িয়ে প্যাকেট খুলল।আর দেখল ঝুমকো চুড়ি।তা দেখেই খুশিতে সামিরার চোখ মুখ চিকচিক করে উঠল।

–“ওয়াও ঝুমকো চুড়ি!অনেক সুন্দর।”

সামিরার খুশি দেখে আরশি ও রুপালীও খুশি হলো।রুপালী বলল,

–“এইগুলো তোর জন্য।”

–“সত্যি?থ্যাঙ্কিউ সো মাচ।”

রুপালী কপাট রাগ দেখিয়ে বলল,

–“লাত্তি খাবি একটা বিয়াদ্দপ মেয়ে।”

সামিরা কিউট ফেস করে বলল,

–“কেন আমি কি করলাম?”

–“কুত্তি তুই থ্যাঙ্কিউ বলছিস কেন?তুই জানিস না দোস্তির মধ্যে নো থ্যাংকস নো সরি।”

সামিরা হেসে দিয়ে বলল,

–“হুম।লাপিউ দোস্ত।”

–“লাপিউ?”

–“হ্যাঁ তোদের জন্য লাপিউ।হিহিহি।”

——-

বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে তারা বের হল বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য। এতক্ষন আড্ডা দিয়ে সামিরা মন একদম ফ্রেস হয়ে গেছে।তারা বের হওয়ার সময় দেখল নাবিল রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে কার সাথে।সামিরা বলল,

–“এই তোরা দাঁড়া আমি নাবিলের সাথে কথা বলে আসি।”

–“কিন্তু সামি…..”

সামিরা কারো কথা না শুনেই দ্রুত রাস্তার ওপারে চলে গেল।গিয়ে নাবিলের সামনে দাঁড়াল।হঠাৎ সামিরাকে নিজের সামনে দেখে নাবিল চমকে উঠল।কিছুক্ষন সামিরার দিকে তাকিয়ে মোবাইলের কল কেটে মোবাইল পকেটে রাখল।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

–“তুমি?তুমি কি করছ এইখানে?”

সামিরা নাবিলের দিকে নজর রেখেই শান্ত স্বরে বলল,

–“আমার কথা ছাড়ুন আগে আপনি বলুন আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন।কলেজে কেন আসেন নি।আপনি জানেন আমি প্রতিদিন আপনার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম?”

–“আমি কেন কলেজে যাইনি তা পরে বলব।তার আগে বলো তো তুমি কেন অপেক্ষা করেছিলে আমার জন্য?”

সামিরার রাগ উঠে গেল।তবুও শান্ত সুরে বলল,

–“আশা করি আপনি খুব ভাল করেই জানেন যে আমি কেন অপেক্ষা করেছিলাম।”

–“না’তো আমি জানিনা।জানলে ত জিজ্ঞেস করতাম না।”

–“মিস্টার ভিলেন আপনি আমাকে রাগাবেন না।আপনাকে কতবার বলতে হবে যে আমি আপনাকে ভালবাসি।আর ভালবাসি বলেই অপেক্ষা করেছি।”

নাবিল তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

–“তাই নাকি?তুমি তাহলে এখনও আমাকে ভালোবাসো। আর আমি ভাবলাম তুমি ওই ছেলেটার প্রোপোজাল একসেপ্ট করে নিয়েছ।আর আমাকে ভূলেও গেছ।”

সামিরার রাগ যেন চরমে উঠে গেল।তবুও রাস্তা বলে সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছে না তাই নিজেকে শান্ত রেখে বলিল,

–“কেন আমি একসেপ্ট করব?আপনি জানেন না আমি আপনাকে ভালবাসি?তাহলে আপনি ভাবলেন কি করে আমি এই প্রোপোজাল একসেপ্ট করব?”

–“আমি ত ভাবলাম ওই আমার মনের মত হতে বলেছি তাই আমাকে ভুলে অন্য কেউকে একসেপ্ট করবে।”

–“সত্যি আমার রাগ হচ্ছে প্রচুর।যদি আমি আপনার মনের মত হওয়ার চেষ্টাই না করতাম তবে সেদিন থেকে আমি থ্রি-পিচ, হিজাব এইসব পড়তাম না।সেই জিন্স,শার্ট এইগুলোই পড়তাম।”

–“যেদিন তুমি থ্রি-পিচ পড়ে কলেজে গেছিলে সেদিন তাহলে আমার দিকে তাকাওনি কেন?আমাকে ইগনোর করেছিলেন কেন?”

এইবার সামিরা কিছু একটা বুঝতে পারল।তারপর হু হা করে হেসে দিল।সামিরার হাসি দেখে নাবিল ভ্রু কুঁচকে বলল,

–“কি ব্যাপার হাসছ কেন?আমি কি হাসির কিছু বলেছি?”

সামিরা কষ্ট করে হাসি থামিয়ে বলল,

–“সেদিন আমি আপনার দিকে তাকায়নি বলে আপনার মনে হলো আমি ইগনোর করছি।আর সেই ইগনোর থেকে মনে হলো আমি আপনার মনের মত হতে পারব না তাই দূরে সরে যাচ্ছি।আবার সেই একি কারনে মনে হলো আমি ওই ছেলের প্রোপোজাল একসেপ্ট করব।হাহাহা।সিরিয়াসলি মিস্টার ভিলেন।আপনি এত দূর অবদি ভেবে ফেলেছেন?”

এইবার যেন নাবিল নিজেই বোকা হয়ে গেল।কি বলবে বুঝতে পারছে না।তাই সামিরাকে আর কিছু না বলতে দিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে।তখনি সামিরা পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলল,

–“মিস্টার ভিলেন লজ্জা পেলেন বুঝি?যাই হোক লজ্জা পেতে হবেনা।অন্তত এইটা বলুন আগামী কাল কলেজে আসছেন তো?”

নাবিল পেছনে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

–“আসবো।”

চলবে….

আমি গল্প লিখার পর আর রি-চেক করি না।তাই হয়তো অনেক বানান ভূল থাকতে পারে।প্লিজ ভূল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।