মেঘের উল্টোপিঠ পর্ব-০১

0
1165

#মেঘের_উল্টোপিঠ
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
[সূচনা পর্ব]

কবুল বলার কিয়ৎক্ষন পূর্বে বর হিসেবে বড় বোনের প্রাক্তন প্রেমিক কে দেখে বিষ্ময়, বিমূঢ় দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে নিঃশব্দে বসে রইলাম। আমার সামনে থাকা রাশভারী মানুষটার মুখশ্রীর প্রতি সচেতন দৃষ্টি মেলে দিয়ে খানিক পর্যবেক্ষণ চেষ্টা আদও আমি ভুল দেখছি নাতো?পাশ থেকে আম্মু বারংবার ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে জিজ্ঞেস করছে ‘পাত্র পছন্দ হয়েছে কিনা?’ তবে আম্মুর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছি আমি।

তৎক্ষনাৎ বাবা, মা সহ উপস্থিত আত্নীয় স্বজন তাড়া দেয় ‘কবুল ‘ বলার জন্য আর ঠিক সেই মূর্হতে সামনে বসে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটির দৃষ্টি আমার ওপর এসে পড়ে। যতদূর নেত্র দ্বারা পরিদর্শন করে বুঝলাম পূর্বের আমার সাথে তার বিয়ে হওয়া সম্পর্ক অবগতি নেই অথবা আছে। কারণ তার নেত্রপল্লব ছিলো অচঞ্চল। আমাকে দেখার পর বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।শেষ মূর্হতে এসে বিয়ে ভেঙে দেয়ার কোনো উপায়ন্তর না দেখে অতী নিম্নকন্ঠে ৩ বার কবুল বলে নিভৃতে তপ্তশ্বাস ফেলি। হাত-পা কাঁপছে তুমুল। আকস্মিক ঘটনা গ্রহণ করতে পারছে না যেনো মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ! ভয়ে শিথিল হয়ে আসতে চাইছে বারংবার মন গহীন!

হটাৎ আপুর কথা মনে হতেই চিবুক হতে মাথা তুলে অবলোকন হয় আপুর ভীতিগ্রস্ত চাহনি। যা দরুন ভাবে পূর্বের ওপর নিক্ষেপ করা। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা বান্ধবী সন্নিকটে এসে চট করে কানের নিকট ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ শেষে কিনা বইনের এক্স আর নিজের টিচারকে বিয়া করলি দোস্ত? ‘

আরেকদফা হতবিহ্বল হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে দৃঢ়ীভূত হয়ে চারপাশে দৃষ্টি দেই। পূর্ব যে আমার টিচারও হয় তা একদমই মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো। গতমাসেই তিনি কানাডা থেকে তার ডাক্তারির পড়াশোনা শেষ করে এসে আমাদের মেডিকেল কলেজে লেকচারার এবং ডাক্তার পদে নিযুক্ত হন। যথেষ্ট ব্রিলিয়ান্ট হওয়াতে এপ্লাই করার পর-পরই লেকচারার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করা হয় তার।

অতঃপর খানিকক্ষণ বাদে হুট করেই ড্রইংরুম খালি হয়ে যায়। আজ ধর্মীয় মতে বিয়ে হওয়াতে বাসাতেই ছোটখাটো আয়োজন করা হয়েছে। ড্রইংরুমে পিনপন নীরবতা!পরবর্তীতে সঙ্কোচ পায়ে ঠেলে মাথা তুলে বিষাদ কন্ঠে বলি,

‘ আপনি কি জানতেন আমাদের এই বিয়ের ব্যাপারে?’

পূর্ব নিশ্চুপ! সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে নিঃশব্দে ফোন গুতাচ্ছেন।জবাব নেই তার পক্ষ হতে! হতাশ হয়ে বসা ছেড়ে উঠে যেতে নিলে রাশভারী কন্ঠস্বর কানে এসে প্রতিফলিত হলো। পূর্ব তার দৃষ্টিপাত ফোন হতে ফ্লোরে দিয়ে বললেন,

‘ বসো কথা আছে। ‘

খানিক কেঁপে উঠে নিজের স্থানে নিঃশব্দে বসে পড়ি। অস্বস্তি হচ্ছে তুমুল! হৃৎস্পন্দনের অবিন্যস্ত স্পন্দন যেনো সেই অস্বস্তির পরিমাণ একটু বেশি বাড়িয়ে দিলো। কাঁপাটে কন্ঠে বলি,

‘ ব..বলুন! ‘

পূর্ব ফোন রেখে সটান হয়ে বসলেন। তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকান তিনি আমার পানে। এতে যেনো আরো বেশি নার্ভাসনেস কাজ করছে। জরতা কাটাতে আশপাশে অবলোকন করতেই পূর্ব রুষ্ট কন্ঠে বললেন,

‘ আমাদের এই বিয়েটা অনাকাঙ্ক্ষিত দোল! আমি জানতাম না বিয়ের ব্যাপারে। পাত্রীর সম্পর্কে আমার কাছে বার্তা ছিলো সে মেডিকেল স্টুডেন্ট। ব্যাস এতটুকুই! বাকি সবকিছু সম্পর্কে ফ্যামিলি অবগত। আমি নই! নয়তো এক্স গার্লফ্রেন্ডের বোনকে নিশ্চয়ই আমি বিয়ে করতাম না। তার ওপর যেখানে তুমি আমার স্টুডেন্টও।আমার প্রতিও নিশ্চিত তোমার একই ধারণা?বিয়েটা তুমিও মানতে পারছো না এটা তোমার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি। ‘

রাশভারী কন্ঠে গরগর করে কথাগুলো বললেন পূর্ব। নিভৃতে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ভীতির রেশ জন্মে আমার। গম্ভীর, খিটখিটে মেজাজের অধিকারী পূর্বকে বহিরাগত দিক দিয়ে যতটুকু চিনেছি সে কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট নয়তো খামখেয়ালি পূর্ণ!এটিটিউট বহিরাগত দিকে বেশি প্রকাশ করেন। রাশভারী হওয়াতে তার প্রতি আমার কাঙ্খিত ভয়টা দ্বিগুণ! এমন লোকের সাথে সংসার করা যায় নাকি? ভাবনা – চিন্তা ঝেড়ে ফেলে নমনীয় কন্ঠে বলি,

‘ বুঝলাম! কিন্তু এখন আমার কি করার আছে? আমিও এই বিয়ে সম্পর্কে জানলেও পাত্র সম্পর্কিত বার্তা ছিলো না আমার কাছে। ‘

পূর্ব ফোন হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। পকেটে ফোন পুরে নিয়ে রাশভারী স্বরে বললেন,

‘ তুমি আংকেল, আন্টিকে বলবে বিয়ের অনুষ্ঠান পেছাতে। আমাদের দুজনেরই সময় দরকার। পরিশেষে আমরা দু’জন একে অপরের সাথে অথবা তুমি আমার সাথে খাপ খাওয়াতে পারলে তবেই রেজিস্ট্রি সহ বিয়ের বাকি কার্যক্রম গুলো সম্পূর্ণ হবে। গট ইট?’

ধীরগতিতে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই আমি। কারণ এতো বড় শকের মাঝে আমার এ মূর্হতে শশুর বাড়ি যাওয়া সম্ভব না আর না সংসার করা সম্ভব এই রাশভারী, খিটখিটে মেজাজের অধিকারী লোকের সাথে। পরিশেষে হুট করে বললাম,

‘ মেডিকেলে কি বলব? ‘

পূর্ব চলে যাচ্ছিলেন। আমার কথায় থমকে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকান।তার মুখশ্রীতে চিন্তার রেশ ফুটে উঠেছে তবে তা ক্ষনিকের জন্য। । সে তার ডান হাতের দুই আঙুল দ্বারা কপালে ঘর্ষণ করে স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,

‘ ঐটা আমি দেখে নিবো। এন্ড আই ডোন্ট থিংক সো, কিছু বলা লাগবে। অলরেডি অনেকেই জেনে গিয়েছে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে। বাবা নিশ্চিত চুপ থাকেননি! ‘

শেষোক্ত কথাটা চিবিয়ে বলল পূর্ব। অতঃপর চারপাশ না দেখে দরজা লক্ষ্য করে দ্রুত পায়ে ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে যান। তপ্তশ্বাস ফেলে ধপ করে সোফায় বসে পড়ি। কলেজে বিয়ের ব্যাপারে জেনে গেলে বিশাল সমস্যা। কিন্তু অগোচরে থাকবে বলে মনে হয়না। কিয়ৎক্ষন পর মা হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল,

‘ এই তুই একা কেনো?পূর্ব কোথায়?’

আমি ত্রস্ত পায়ে রুমের দিকে অগ্রসর হতে হতে ধীরস্থির হয়ে বলি,

‘ চলে গিয়েছে! ‘

মা চমকে গেলেন। জামাই কে আপ্যায়ন করতে না পারায় কিছুক্ষন হু-হুতাশ করে ভেতরের রুমে রওনা দিলেন। আমি তা দেখে নিঃশব্দে দরজা আঁটকে দেই।ঘুম দরকার! আকস্মিক ঘটে যাওয়া ঘটনা হজম হচ্ছেনা।

সন্ধ্যার দিকে রুমের দরজায় প্রবল কড়াঘাতে কাঁচা ঘুম ভেঙে যায়। ক্ষুন্ন মন নিয়ে দরজা খুলতেই হকচকিয়ে কয়েক কদম পিছন সরে যাই। সামনে পূর্ব সিক্তরূপে দাঁড়িয়ে। চুল দিয়ে অনবরত পানি বর্ষিত হচ্ছে। নীল রঙের শার্টটা সিক্ততায় একাকার হয়ে সুঠাম দেহের সাথে চুপসে আছে।তার চোখের দৃষ্টি হয় সর্বদা ভিন্ন! নীল মনির চোখদুটো কেমন নেশাতুর চাহনি নিক্ষেপ করে মাঝেমধ্যে। দৃষ্টি ঘায়েল হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখে প্রশ্নাতুর কন্ঠে তাকে বলি,

‘ আপনি এভাবে কাক ভেজা হয়েছেন কিভাবে?’

পূর্ব কপালের চামড়ার সুক্ষ্ম ভাজ ফেলে প্রতুত্তরে কিছু বলবে তৎক্ষনাৎ আম্মু এসে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,

‘ দোল সায়ানের ওয়াশরুমে মেহমান গিয়েছে । তুই তোর রুমের ওয়াশরুমটায় পূর্বকে একটু ইউজ করতে দে। ছেলেটা ভিজে একাকার। এভাবে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। ‘

আম্মু আমার থেকে অনুমতি চাইলো ঠিকই তবে আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে সে পূর্বের হাতে টাওয়াল ধরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুম দেখিয়ে ফ্রেশ হতে বলল। অচেতন মনে এক পলক পূর্ব আমার দিকে তাকায়। অতঃপর এক মূর্হত ব্যয় না করে সে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। পূর্ব যেতেই আমি আম্মুর কাছে গিয়ে নিম্নস্বরে বলি,

‘ ইনি না চলে গিয়েছিলেন? আবার আসলো কখন?’

‘ চলে গেলো কোথায়? পূর্ব তো ইমার্জেন্সি থাকায় হসপিটালে গিয়েছিলো। তোকে বলেনি?আসলো তো সবেই। বৃষ্টি পড়ছিলো বাহিরে তাই ভিজে গিয়েছে। ‘

আম্মুর কথার প্রতুত্তরে বলি, ‘ অহ! ‘

আম্মু দাঁড়ায় না। সে চলে যেতেই চোরের মতোন রুমে প্রবেশ করে আপু। আপুর নেত্রপল্লবের কার্নিশে পানি জমে রয়েছে। আমি তা দেখে কিছুটা চমকে তাকাই! পরিশেষে আপু সচেতন দৃষ্টিতে চারিপাশ পর্যবেক্ষণ করে নিচুকন্ঠে বলল,

‘ বিয়েটা কি তুই মানতে পেরেছিস দোল?’

বহির্ভূত আবরণে কৃত্রিম স্বাভাবিকতা ফুটিয়ে তুলে নম্র কন্ঠে বলি,

‘ তোমার কি মনে হয় আপু?এ বিয়ে আমার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব? তোমার প্রাক্তনকে কিভাবে আমি নিজের স্বামী রূপে দেখি? আমারই ভুল আপু! জেদ করা উচিত হয়নি। আজ যদি পাত্রের ছবিটা দেখতাম তাহলে এই বিয়ে আমি কখনোই করতাম না। ‘

আপু আনমনে বলল, ‘ আর ৪ দিন পর থেকেই বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে। আর চিন্তা করিস না! মেনে নে বিয়েটা। পূর্ব তোকে সুখে রাখবে। আফটার অল তোকে পাওয়ার জন্য এতকিছু… ‘

কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য প্রস্তুত হতেই খটখট শব্দ কর্ণধারে প্রতিফলিত হয় আপু এবং আমার দুজনেরই দৃষ্টি ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। পূর্ব তার সিক্ত চুল গুলো মসৃণ টাওয়াল দ্বারা পানি শুষে নেওয়ার প্রয়াসে ঘর্ষণ করছিলো আলত রূপে! মাথা তুলে সে আমাদের দিকে তাকাতে আমি অপ্রতিভ হয়ে পড়ি। পূর্বের শার্টের টপ দু’টো বোতাম উন্মুক্ত ছিলো। সঙ্কোচ নিয়ে ফ্লোরে তাকাতে খেয়াল হয় আপু তার দৃষ্টি সরায়নি। ড্যাবড্যাব করে পূর্বের দিকে তাকিয়ে আছে। চক্ষুপল্লব জ্বলজ্বল করে উঠেছে খানিকাংশ, পরিশেষে পূর্বের রিয়াক্ট দেখার জন্য তার দিকে তাকাতে একই অবস্থা দৃষ্টিতর হয়। তবে ভিন্নতা স্বরূপ দেখা মিলল পূর্বের নেত্রপল্লবের সাদা অংশ লালচে আকার ধারণ করেছে।

চোখাচোখির পালা সমাপ্তি টানেন পূর্ব! সে ঘুরে বেলকনিতে চলে যেতেই আপু অপ্রসন্ন হয়ে বলল,

‘ দোল যাচ্ছি আমি। ভালো থাকিস!’

আপু এক প্রকার হুড়মুড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। অস্থিরতা মিশ্রিত দৃষ্টি বেলকনির দিকে এলিয়ে দিয়ে ভাবতে থাকি এটা কি ছিলো? ক্ষনিকাংশ কৌতূহলের বশে বেলকনিতে পা ফেলতেই পূর্ব রাশভারী কন্ঠে বললেন,

‘ আমি যতক্ষন এই বাসায় আছি ততক্ষণে যেনো তোমার বোনকে যেনো আমার দৃষ্টির ত্রি- সীমানার মাঝে না দেখি। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড? ‘

উপর – নিচ মাথা এলিয়ে পূর্বের কথায় সম্মতি জানাই! সে আমাকে ক্রস করে রুমে প্রবেশ করতে নিলেই হুট করে তাকে উদ্দেশ্য করে বলি,

‘ আপুকে এখনো পছন্দ করেন? ‘

আমার ধারণা অনুসারে পূর্বের পদচারণা থমকে গেলো না। বরঞ্চ সে তার স্বাভাবিকতা বজায় রেখে রুমে চলে যায়। তবে সামনে এগোনের কিয়ৎক্ষন পূর্বে উনি নিজের পদচারণ থামিয়ে বললেন,

‘ পূর্ব কখনো তার ফেলে আসা সম্পদের প্রতি ভালোবাসা রাখে না। ভালোবাসা থাকলে কখনো তা নিজের হতে দূরে সরাতাম না! আমার একান্ত ভালোবাসা, ভালোলাগার জিনিস একান্তরূপে নিতান্তই আমার। ‘

অতঃপর রুমে শূন্যতা বিরাজমান আমি বাদে! নিভৃতে অল্প পরিমাণে জাগ্রত হওয়া ভীতিটা এবার দমে নিভে গেলো। এই ভীতির কারণটা জানা নেই। তবে পূর্বের উত্তর শোনার পর প্রশান্তি মিলেছে হৃদয়ে!

.

খাবার টেবিলে বসার পর আম্মুর হতে বার্তা পেলাম আপু তার স্বামীকে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই তাড়া দেখিয়ে চলে গিয়েছে। খাওয়ার সময় সিদ্ধান্ত হলো পূর্ব এবং তার পরিবার বৃষ্টির কারণবশত আজ আমাদের এখানেই অবস্থান করবেন।পূর্বের বাবা আমার বাবার অত্যান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বিয়ের কথাবার্তা চলছে বেশ কয়েকদিন ধরেই। তবে এতদিনেও পূর্বকে একবারের জন্য দৃষ্টিতর হয়নি কখনো। সে ছিলো দেশের বাহিরে। তাই হয়তো!

বিয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে ক’দিন পরই।এই সিদ্ধান্তের মধ্যে আমি বা পূর্ব কেওই নিজেদের মতামত জানানোর সুযোগটা পেলামই না। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলতেই পূর্ব ইশারায় বললেন
‘ পরে সময় বুঝে বলা যাবে। ‘

রাতে পূর্বের থাকার জায়গা আমার রুমে হলেও আম্মুকে ভুলিয়ে – ভালিয়ে পূর্বকে সায়ান ভাইয়ার রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি। এই লোকের সাথে এক রুমে থাকা আমার জন্য অসম্ভব। তিনি এক বাসায় থাকলেই যেখানে আমার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তখন সে আমার পাশে, একই বেডে ঘুমালে মেনে নেওয়া অসম্ভব!

রাত দু’টো!
বইয়ের মাঝে মুখ ডুবিয়ে রাখার সময়কালে ভাইয়ার ফিসফিস ডাক শুনে বিরক্ত লাগল! দরজা খোলার পর ভাইয়া অস্থির হয়ে বলল,

‘ দোল, পূর্বের তো বেশ জ্বর এসেছে। আমি জলপট্টি দিলাম কাজ হলোনা। তুই আয় না একটু! ডাক্তারি পড়ছিস কিছু জ্ঞান তো আছে নাকি?’

ভাইয়ার কথায় সটান না বলে কাজ হলোনা। ঠেলে ঠুলে সে আমায় তার রুমে এনে নিজে উধাও হলো। পূর্ব তখন বেডে ঠেস দিয়ে আধশোয়া হয়েছিলো। তার ফর্সাটে মুখ লালচে আকার ধারণ করেছে। হয়তো জ্বরের ফলে! আমায় দেখে সে কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলল,

‘ তুমি এখানে?’

‘ আপনার জ্বর এসেছে? তাই ভাইয়া পাঠালো। জ্বর কমছে না নাকি। ‘

পূর্ব প্রতিত্তুরে কিছু বলল না। তবে খানিক বাদে ভরাট কন্ঠে বলল,

‘ কাছে আসো তো একটু! ফাষ্ট! ‘

হটাৎই উদ্ভট, নেগেটিভ চিন্তা মাথায় আসলো। এই লোক কাছে কেনো ডাকছে?হুহ্? সে কি তার দেয়া কথা ভুলে গিয়েছে?

#চলবে…