রঙিন বর্ষা ৩য় পর্ব

0
591

#রঙিন_বর্ষা
লেখা: নীলাদ্রিকা নীলা
৩য় পর্ব
.
ঝুমুর শ্রাবণের কাছাকাছি এসে দাঁড়াতেই শ্রাবণ বলে উঠল, কি ব্যপার তুমি এভাবে জামা কাপড় খুলে ফেলছো কেন? মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোমার!
ঝুমুর এবার চোখ মুখ শক্ত করে উত্তর দেয়, কেন আমার জামা কাপড় খোলা দেখে তোমার মজা লাগছে না? তোমার তো মজা লাগার কথা তাই না!
– মানে?
– মানে তো তুমি ভালো করেই জানো শ্রাবণ। সেদিন মার্কেটের ভিতর আমার শাড়ি খুলে নিয়েছিলে তুমি। ভেবেছিলে ওটা আমি কোনো দিনো জানতে পারবো না। তুমি আমাকে শায়েস্তা করতে কাজটি করেছিলে! কিন্তু তুমি জানো না তুমি কি ভুল করেছো। এখানে আসার পর তুমি পুকুরে মাছ ধরার সময় তোমার আর রাব্বির সব কথা আমি শুনে নিয়েছি। এখন তোমাকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না। তোমাকে এর শাস্তি পেতেই হবে।
– কি করবে তুমি। দেখো আমি সব কিছুর জন্য সরি বলছি। এসব ভুলে যাও।
,
ঝুমুর আবার তার জামা খুলতে থাকে এবং সেই সাথে জোড়ে জোড়ে চিৎকার দেয় ।
– কি হলো তুমি কি করতে চাইছো আর এখানে এভাবে চিৎকার করলে লোকজন আমাদের খারাপ ভাববে। চুপ করো বলছি। আর চলো এখান থেকে।
– কি মিস্টার শ্রাবণ আমার জামা খোলায় তোমার আনন্দ হচ্ছে না? তুমি তো এটাই করেছিলে ওইদিন। আজ আমি নিজেই খুলে ফেলছি। তোমার তো খুশি হওয়ার কথা।
– শাট আপ! পাগলামো বন্ধ করো বলছি।
– এসো শ্রাবণ কাছে এসো।
,
ঝুমুর শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরতে গেলেই শ্রাবণ ঝুমুরের গালে চড় বসিয়ে দেয়।
– কি হচ্ছে এসব! বাহিরে চলো বলছি!
– শ্রাবণ তোমাকে তো শাস্তি পেতেই হবে।
,
ঝুমুর তার জামা অর্ধেক খুলে ফেলে আবারও জোড়ে জোড়ে চিৎকার দিতে লাগলো। আর চিৎকার দেওয়ার মাঝেই শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, ডার্লিং আমায় কেমন লাগছে! কাছে পেতে ইচ্ছে করছে না? এসো কাছে এসো…হা হা হা.
বলেই একটা চোখ টিপ দিয়ে আবার চিৎকার দিতে থাকে। শ্রাবণ আর উপায় না পেয়ে বাহিরে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দরজায় ঢাক্কাঢাক্কি শুরু হয়ে যায়।
– ভিতরে কারা আছেন। দরজা খুলুন।
,
শ্রাবণ দরজা খুলতেই ঝুমুর জোরে জোরে কান্না করতে করতে দরজার এদিকে ছুটে এলো। বাড়ির ম্যানেজার আর তিনজন সিকুরিটির গার্ড এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। ম্যানেজার বললেন, কি হয়েছে আপনার?
ঝুমুর তার জামা ঠিক করতে করতে বলছে, আপনারা আমায় বাঁচান এই ছেলেটা আমাকে মেরে ফেলবে! প্লিজ আমায় বাঁচান!
,
শ্রাবণ ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে রেগে বলছে, কি বলছো তুমি এসব! আমি তোমাকে মারতে যাব কেন?
,
তখনই ম্যানেজার বলে উঠল, আপনি একটু চুপ থাকুন, উনাকে বলতে দিন!
,
ঝুমুর কান্না করতে করতে তার জামা দেখিয়ে বলছে, এই দেখুন আমার অবস্থা, এই বদমাশ ছেলেটা আপনাদের এখানে আমায় ভুলিয়ে ভালিয়ে ঘুরতে নিয়ে এসেছে। আমি তখনও জানতাম না ওর বদ কোনো মতলব ছিলো। নাহলে ওর সাথে এখানে আসতামই না।
,
শ্রাবণ চেচিয়ে উঠল, ঝুমুর!!! নাউ জাস্ট স্টপ দিস!
,
শ্রাবণ রাগে ঝুমুরকে চড় মারার জন্য তেড়ে আসতেই সিকিউরিটি গার্ড গুলো শ্রাবণকে আটকে ধরে রাখে।
ঝুমুর হাত নেড়ে নেড়ে আবারও বলতে থাকে। আমরা ভার্সিটি থেকে ট্যুরে এসেছি। সবার সাথে আমিও ট্যুরিস্ট হোটেল উঠেছি। আমার বন্ধুরা সবাই ওখানেই আছে। এই বদমাশ ছেলেটাও আমার ক্লাসমেট। খুব ভালো বন্ধু ভাবতাম ওকে আর বিলিভও করতাম। সন্ধ্যায় হোটেলের পাশের রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে এদিকে চলে আসি। তখন কি আর জানতাম ও আমায় রেপ করার প্লান করে এখানে নিয়ে আসছে! আগে জানলে ওর সাথে কখনোই এখানে আসতাম না।
,
শ্রাবণ বললো, দেখুন স্যার এই মেয়েটা সব মিথ্যা বলছে। আমি কোনো বাজে মতলবে ওকে এখানে আনি নি।
,
ম্যানেজার বললো, এটা একটা ট্যুরিস্ট স্পট। এখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে পারেন না আপনারা।
– আপনি আমায় বিলিভ করুন। ওকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি এটা সত্য কিন্তু কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসি নি এবং ওকে আমি কিছুই করি নি। প্লিজ স্যার আমি সত্যি বলছি আমায় বিলিভ করুন। খারাপ উদ্দেশ্য যদি থেকে থাকে তবে এই মেয়েটির ছিলো। ও মিথ্যা বলে আমার ঘারে দোষ চাপাতে চাইছে।
,
ঝুমুর বললো, আপনাদের এখানে এসে আমার সব শেষ! এখন আমার কি হবে! আমি ফিরে গিয়ে বাড়িতে মুখ দেখাবো কি করে,
,
ম্যানেজার বললো, আহা আমাদের ট্যুরিস্ট স্পটকে দোষ দেবেন না, আমরা যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখানে রেখেছি। এসব বলে আমাদের জায়গার সুনাম নষ্ট করবেন না।
– আমার যা ক্ষতি হওয়ার হলো আর আপনি আছেন আপনার জায়গা নিয়ে! আমি এক্ষুনি আমার স্যার আর বন্ধুদের ফোন করছি সবাই এসে দেখুক বিষয়টা।
– উত্তেজিত হবেন না। আমরা আপনার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো। এই ছেলেটা দোষী হলে অবশ্যই শাস্তি পাবে। কিন্তু আমাদের এখানে এরকম ঘটনা ঘটেছে জানাজানি হলে একটা খারাপ রেকর্ড হয়ে যাবে।
,
ঝুমুর ফোন করে স্যারসহ কয়েকজন বন্ধুকে এখানে আসতে বললো। স্যার এরকম একটা ঘটনা শুনে শ্রাবণের বন্ধু রাব্বি, তুহিন আর ঝুমুরের বান্ধুবী প্রিয়াসহ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে তাড়াতাড়ি এখানে আসার জন্য হোটেল থেকে বেড়িয়ে পরেছেন।
,
শ্রাবণ চেচিয়ে বলছে, দেখুন মেয়েটি সব মিথ্যা বলছে আমি ওকে কিছু করি নি।
ঝুমুর শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে সবার অগোচরে চোখ টিপ দিয়ে বাঁকা হাসি দিলো। শ্রাবণের ইচ্ছে করছে ঝুমুরেকে মেরে ওর শরীরের ছাল ছাড়িয়ে দিতে!
,
কিছুক্ষণের মধ্যে স্যার, রাব্বি, তুহিন, প্রিয়াসহ আরও কয়েকজন ছাত্রছাত্রী এখানে এসে জড়ো হলো, ঝুমুর ওর বান্ধুবী প্রিয়া আর সুস্মিতাকে দেখে ছুটে গিয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। শ্রাবণ স্যারের দিকে তাকিয়ে করুন ভাবে বলছে, স্যার আমি কিছু করি নি, ঝুমুর সব মিথ্যা বলেছে। প্লিজ স্যার আমায় বিলিভ করুন।
,
স্যার তখন ম্যানেজারকে বললেন, দেখুন কে দোষী আর কে দোষী নয় এটা আমরা দেখবো। এখন আমি আমার স্টুডেন্ট দুটোকে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি। ওরা সবাই আমার দায়িত্বে ট্যুরে এসেছে। ওদের কিছু হলে ওদের বাবা মা কমপ্লেইন করবে। তখন আমরা কি জবাব দিবো।
,
ম্যানেজার বললো, সমস্যা তো এখানেই। আপনি ওদের নিয়ে যাবেন। আর ফিরে যাওয়ার পর মেয়েটির বাবা মা আপনাদের কাছে এই ছেলের বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করবে। তখন আপনারা নিজেদের দোষ দিবেন না নিশ্চয়ই! আর তখন ঘটনা কোথায় কিভাবে ঘটেছে সেসব দেখা হবে। আর সব দোষ এসে পরবে এই ট্যুরিস্ট স্পটের। বলা হবে এই জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো ছিলো না। তাই এই ছেলেটা এই কাজ করতে সাহস পেয়েছে। অথচ আমি আমার দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করছি। এখনো এখানে কোনো খারাপ রেকর্ড নেই।
,
স্যার বললেন, তো আপনারা এখন কি করতে চাইছেন।
– আমি এখানকার মালিক আমাদের স্যারকে বিষয়টা জানিয়েছি। উনি আসছেন। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা কেউ এখান থেকে যেতে পারবেন না।
শ্রাবন চেচিয়ে বলছে, আপনারা কেন বুঝতে চাইছেন না! কেন শুনছেন না আমার কথা! আমি কিছু করি নি। সত্যি কিছু করি নি। এটা আমার মান সম্মানের ব্যপার! প্লিজ সবাই একটু বিলিভ করুন আমায়!
রাব্বি আর তুহিন শ্রাবণের কাছে এসে দাঁড়ায়। রাব্বি শ্রাবণের কাধে হাত রেখে বললো, স্যার শ্রাবণ তো বলছে ও কিছু করে নি। ঝুমুর নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছে।
,
তখনই এই স্পটের মালিক আর উনার সাথে কিছু পুলিশ এখানে চলে এলো। ম্যানেজার বিস্তারিত ভাবে আবারও সবটা উনাকে বললেন। সব শুনে উনি স্যারকে বলছেন, দেখুন আপনার স্টুডেন্টের জন্য শেষে গিয়ে বদনাম কিন্তু আমার স্পটের হবে।
ঝুমুর বললো, ওকে পুলিশে দিয়ে কঠিন শাস্তি দিন।
– শুধু পুলিশে দিলেই তো হবে না। আমাদের এখানের একটা রেপুটেশন আছে। বিষয়টা যেন খারাপ রেকর্ড না ঘটায় তার জন্যই এটা করা।
– মানে?
,
সবাই হা হয়ে উনার কথা শুনছে। উনি বললেন, তোমাদের এক্ষুনি এখানে বিয়ে করে নিতে হবে।
,
এবার ঝুমুরের মাথায় বাজ পরলো, হোয়াট! বিয়ে করবো মানে? আপনি এসব কি বলছেন, আমি ওকে বিয়ে করতে যাবো কেন?
– এটাই একমাত্র সমাধান। না হলে তুমি এখান থেকে যাওয়ার পর কমপ্লেইন করবে আর তারপর পুলিশ এই ছেলের সাথে আমাদেরও ধরবে তা তো হতে পারে না। আর ছেলেটা কতটা দোষী সেটা তো আর আমরা জানি না। মাঝখান থেকে তোমার কথার ওপর ভিত্তি করে আমরা সাফার করবো। এরপর তো ভয়ে এই স্পটে কোনো ট্যুরিস্টই আসতে চাইবে না। তোমরা বিয়ে করে নাও আর বিষয়টা এখানেই মিটিয়ে ফেলো।
,
সবাই এখন একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। স্যারও এখন উত্তেজিত হয়ে বলছেন, এসব কি বলছেন আপনারা!
– দেখুন আমাদের স্পটের দিকটাও দেখতে হবে। বিয়ে না করে আমরা আপনার এই দুই স্টুডেন্টকে এখান থেকে যেতে দেব না। এখানে পুলিশ আছে। আমরা ওদের আটকে রাখবো।
,
ঝুমুরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে। ঝুমুর মনে মনে ভবছে, শিট এটা কি হলো! এটা তো হবার কথা ছিলো না। যেটাই করুক বিয়ে আমি কিছুতেই করবো না।
ঝুমুর বললো, আপনারা ওকে শাস্তি না দিয়ে আমার বিয়ের কথা বলছেন কেন! এটা অসম্ভব!
,
রাব্বি আর তুহিন শ্রাবণকে ঢাক্কাতে ঢাক্কাতে বলছে,কিরে তুই কিছু বলছিস না কেন? চুপ করে আছিস ক্যান?
শ্রাবণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে চোখ লাল করে ঝুমুরের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই ঝুমুরকে গিলে খাবে।
রাব্বি বললো, কি হলো শ্রাবণ! কি করবি এখন! ওরা তোকে বিয়ে করতে বলছে!
,
ঝুমুরের কোনো কথাই এখন আর উনারা শুনছেন না। ঝুমুর কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। ঝুমুর আর শ্রাবণকে উনারা কিছুতেই এখান থেকে ছাড়বেন না। ওদের স্যার অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু স্যারের কথাও শুনছেন না। বান্ধুবীদের জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে ঝুমুরের অচেতন হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
শ্রাবণ বললো, বিয়ে করলেই তো আপনারা আমাদের যেতে দেবেন। আর স্যার আপনাকেও আমাদের জন্য কোনো ঝামেলায় পরতে হবে না। ক্যাম্পাসে কোনো কমপ্লেইনও হবে না। আমি বিয়ে করবো আর ঝুমুরকে নিয়ে চলে যাবো। বিয়ের পরের বিষয়টা শুধু আমার আর ঝুমুরের।
,
এটা শুনে ঝুমুর অজ্ঞান হয়ে গেছে। বাকিরা হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাব্বি বললো, শ্রাবণ তুই যা বলছিস ভেবে বলছিস! দয়া করে মাথা ঠান্ডা কর। কোনো ভুল করিস না।
– এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। একবার ভাব এই বিশ্রি ব্যপারটা জানাজানি হলে আমার মান সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। ক্যাম্পাসে মুখ দেখাতে পারবো আমি? তার চেয়ে এখন বিয়ে করাই শ্রেয়। বাকিটা পরে দেখা যাবে। ফিরে গিয়ে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে হবে তো আমায় নাকি? এখানে কোনো ভাবে একবার ফেসে গেলে পুরো ক্যারিয়ারটাই যাবে!
,
কিছুক্ষণের মধ্যই ঝুমুরের চেতনা ফিরে আসে। শ্রাবণ বললো, আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করুন।
তখনই ঝুমুর চেচিয়ে উঠল, আমি তোমায় বিয়ে করবো না!
শ্রাবণ ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো, শাড়ি আর সাজসজ্জারও ব্যবস্থা করুন। আমি ওকে বউ সাজিয়ে তারপর বিয়ে করতে চাই।
ঝুমুর আবারও কান্না করা শুরু করে দিলো। প্রিয়া ঝুমুরকে বললো, কাঁদিস না, তুই বোধয় ফেসে গেছিস রে! এখানের লোকেরা ভালো না। এরা বাহিরের লোকের কথা শুনবে না। এরা নিজেদের স্বার্থে সব করতে পারে।
,
চলবে….