লালগোলাপ❤ Part-11+12

0
3108

লালগোলাপ❤
Part-11+12

Writer-Moon Hossain

অকৃতজ্ঞ অবিশ্বাসী কাফিররা বলে, ‘আমরা আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র (মায়িদা: ১৮)। প্রকৃত ভালোবাসার দাবি হলো বিশ্বাস
ও কৃতজ্ঞতা। সবর ও শোকর তথা ধৈর্য ও কৃতার্থতা।
“শীতল চুপচাপ রাজের জন্য আনা নাশতা টেবিলে রাখলো।
-এক্সকিউজ মি। কোন ম্যানার নেই তোমার?
ডোর নক না করে এভাবে ঢুকে পড়লে যে।
-ধীরে কথা বলুন।উনার ঘুম ভেঙে যাবে। একটু আগে ঘুমিয়েছেন।
-এখন তুমি আমাকে শিখাবে কিভাবে কথা বলতে হবে?
-না না, কখনো না।
কিন্তু উনার ঘুম ভেঙে গেলে একটা তুলকালাম কান্ড ঘটে যাবে।
-ভাঙলে ভাঙুক। তাতে তোমার কি?
-দুপুর থেকে মাথা যন্ত্রণা করছিলো উনার। খুব কষ্টে ঘুম পাড়িয়েছি। ঘুমালে যদি মাথার যন্ত্রণা একটু কম হয়।
-তুমি বড্ড বেশি কথা বলছো শীতল।
-মাফ করবেন। আপনার মুখের উপর কথা বলার জন্য, দুঃখীত।
রাজ একটু নড়ে উঠলো মনে হয়। শীতলের মন মানছে না। যদি ঘুম ভেঙে যায় তাহলে খুব কষ্ট পাবে রাজ। কিন্তু শাকিলা কে বলাও যাচ্ছে না রুম থেকে চলে যাওয়ার জন্য।
-শোন, আমাকে তো তুমি চেনো। এর আগে তোমার সাথে পরিচিত হয়েছি।
তুমি তো রাজের অনেক ছোট হবে। আমি রাজের দুই বছরের ছোট। বলতে পারো পিঠাপিঠি কাজিন। সে ক্ষেত্রে তুমি আমারও অনেক ছোট। আমি তোমাকে নাম ধরে ডাকব।
-কিন্তু তা কি করে হয়?
-হোয়াট ডু ইউ মিন?
-আপনি উনার ছোট সেটা দুই বছরের হলেও।
উনার ওয়াইফ সম্পর্কে আপনার ভাবি হয়।
-সো?
-আমি আপনার সম্পর্কে বড় ভাবি হই।
-ওয়াট ননসেন্স।
তোমাকে আমার ভাবি ডাকতে হবে? সেই দিনের মেয়ে কে ভাবি ডাকা ইম্পসিবল।
-কিন্তু আপনার ভাই আমাকে বিয়ে করেছে। আমি উনার স্ত্রী। আমাকে আপনি ভাবি ডাকবেন এটাই স্বাভাবিক।
-হাসালে তুমি।
বিয়ে করেছে ও তোমাকে?
ওয়াট এ জোক্স!
বিয়ে মানে জানে তো রাজ?
শীতল মাথা নাড়ালো।
শাকিলা হাসতে হাসতে শেষ হয়ে গেলো।
শীতল সময় মতো নামাজ পড়ে নিলো। আজ তার অনেক কাজ বাকি রয়েছে। রাজ কে ঔষধ খাইয়ে সে চাঁচি মা কে দেখতে গেলো।
-রুম বলে এটা কে?
-কেন চাঁচি মা?
-ধূলা বালি ভরা। হাঁচি দিতে দিতে ধম বন্ধ হয়ে মারা যাব আমি। আমাকে মারার প্ল্যান করছো নাতো?
– ছিঃ ছিঃ কি বলছেন? আপনি আমার মায়ের সমান। আমি নিজে দাড়িয়ে থেকে রুম টা পরিষ্কার করিয়েছি।
-তো আমি কি মিথ্যে বলছি?
-আচ্ছা, আমি এখুনি পরিষ্কার করিয়ে দিচ্ছি।
শীতল কোমরে আঁচল গুঁজে নিজেই আবার রুম পরিষ্কার করতে লাগলো।
চাঁচি মা পান খেতে খেতে পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। ইশশ,মেয়েটা যদি বৌ না হয়ে আসতো এই বাড়িতে তবে আলিশান বাড়িতে তাদের রাজত্ব চলতো। দুই বোন কে বিয়ে দিলেই পুরো সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে বেশি সময় লাগতো না।
– শাকিলা!
-ইয়েস মম!
-কত বড় ভুল করেছিস?
-অনেক বড়।
তবে পুষিয়ে নিতে পারব।
-কি করতে হবে জানিস তো?
-ইয়েস মম।
শ্রেয়সী, শ্রেয়সী নাম টা শাকিলা দুই বার বলে হা হা করে হাড় কাঁপানো হাসি দিলো।
-কে আমা কে ধরেছে?
কে সে?
এই বাড়ির বউ কে স্পর্শ করে কার এতো বড় সাহস?
– আমি ইবলিশ, তোমাকে নিতে এসেছি বালিকা! হা! হা! হা!
-ইবলিশ সাহেব! আমার স্বামী কে তো চেনেন না, আমাকে নিতে আসলে আপনাকে আলু ভর্তা বানাবেন তিনি।
-হা! হা! তুমি এতো ভীতু।
শীতল রাজের কোমরে চিমটি দিয়ে বলল- খুব না। ভয় দেখানো হচ্ছে আমাকে?
-হা! হা! হা!।তুমি আমাকে ভয় পেয়েছো। কি মজা!
– খুব হাসি হচ্ছে আমাকে বোকা বানিয়ে।
শীতল রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল- মাথা যন্ত্রণা করছে?
-একদম না।
-ঘুম ভালো হয়েছে?
-একেবারে জোস!
-আলহামদুলিল্লাহ!
-তুমি কি করছো?
-সাঁতার কাটছি।
-কোথায়? তুমি তো রুম ঝাড়ু দিচ্ছো।
-দেখতেই তো পাচ্ছেন।
জিজ্ঞেস করলেন কেন?
-উফফ, তুমি না।
-রুমে যান নইলে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বিছানায় বসে দেখুন।
আমি ১৫ মিনিটেই কাজ শেষ করছি।
-আমিও কাজ করব। আমাকে নাও তোমার সাথে।
রাজ ফ্লোর ঝাড়ু দিচ্ছে আর শীতল ফ্লোর মুছে দিচ্ছে।
-দেখেছো মম?
-দেখেছি শাকিলা!
-গ্রামের মেয়েরা জাদু জানে শুনেছি। এই মেয়েটাও জাদু জানে। নইলে এমন বদ্ধ উন্মাদ কে কেউ বাধ্য শিশুর মতো পোষ মানিয়ে নেয়।
-উফফ মম!
-রাজ কে উন্মাদ বলাই সহ্য হচ্ছে না?
-হ্যাঁ।
-এই আবেগ কোথায় ছিলো আগে?
-তখন অতটা মাথায় আসেনি।
চাঁচি রুমে গিয়ে চেচিয়ে বলল- হায়! হায়! এটাও দেখার বাকি ছিলো?
-চাঁচি কি হয়েছে?
-কি হয়েছে বুঝতে পাচ্ছো না?
বাড়ির ছেলে কে দিয়ে চাকরের কাজ করাচ্ছো, আবার মুখে মুখে তর্ক করছো?
-আমি তো শুধু…
শাকিলা বলল- আমি তো শুধু কি? অসুস্থ ছেলেটা কে দিয়ে কাজ করাচ্ছো কোন সেন্সে?
ওকে মেরে ফেলতে চাও নাকি?
-এসব কি বলছেন? উনি এমন কোন কাজ করেনি।
-আবার মুখে মুখে তর্ক করা হচ্ছে!? চুপ করো একদম চুপ।
-ভাইজান ভাইজান, দেখে যান, অসুস্থ ছেলেটা কে দিয়ে কত কাজ করাচ্ছে।
শাকিলা আর চাঁচি মিলে শীতল কে অনেক বকাবকি করলো সেদিন।
-খবরদার। কেউ আমার বউ কে কিছু বলবেন না।
ওকে বকাবকি করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এতো চিৎকারে।
রাজ নিজেই চিৎকার করে উঠলো।
শীতল রাজের মাথায় হাত রেখে তাকে থামানোর চেষ্টা করছে।
রাজ চাঁচির পান দানি টা হাতে নিয়ে মেঝেতে ছূরে ফেললো।
-আমার মালয়েশিয়ার পান দানি!!
-চাঁচি মা আপনি আমার বউ কে বকলে আপনার মালয়েশিয়ার সকল জিনিসপত্র ভাঙা হবে।
চাঁচি চুপ করে গেলো ভয়ে।
শাকিলার পেছনে লুকিয়ে পড়লো। রাজের রাগ সম্পর্কে তিনি অবগত।
-বড়দের সাথে এভাবে কথা বলতে নেই। আল্লাহ নারাজ হন। উনি আমাদের গুরুজন।
শাকিলা বলল- রাজ এসব কি করছিস? তুই গ্রামের লো ক্লাস মেয়ের জন্য আমাদের বকছিস?
তুই কি ভুলে গেলি, আমরা তোকে কত আদর যত্ন করেছি। তোকে নিয়ে কত খেলেছি।
-মোটেও না। তুই আমার সব চকলেট, আইসক্রিম চুরি করে খেতিস। চাঁচি মা বাবার টাকা চুরি করতো লকার থেকে, এখন আবার আমাদের এখান থেকে চুরি করার জন্য এসেছিস তোরা।
শাকিলাও চুপ হয়ে গেলো।
-এতো বড় অপবাদ! পাগল ছেলে বলে কি! পাগলের কথা বার্তার কোন ঠিক আছে।
-চাঁচি মা উনি সুস্থ। উনা কে পাগল বলবেন না।
-শীতল কি বললে মা কে?
-বললাম, উনা কে পাগল বলনেন না।
-সে কি কথা, পাগল কে পাগল বলব না?
-না চাঁচি মা। বলবেন না।
রাজ এদিক ওদিক তাকিয়ে ফুলদানি টা শাকিলার দিকে ছূরে দিলো।
শীতল শাকিলা কে সরিয়ে দেওয়াতে শাকিলার গায়ে লাগলো না।
শীতল বলল- এবার থামুন আপনি। আপনার মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়ে যাবে।
-থামব না। আমি আরও চিৎকার করব।
আহ! আমার মাথা ব্যথা করছে। মনে হচ্ছে মাথা গরম হয়েছে শ্রেয়সী।
-বলেছিলাম আমি। এটার জন্য ভয় হচ্ছিল।
-চলো শ্রেয়সী। আমাদের রুমে চলো। আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে চলো।
শীতলের শশুর অফিসে ছিলো। শোরগোল শুনে দোতলায় গেলো।
শীতলের শশুর কিছু বলার আগেই রাজ শীতলের হাত ধরে রুমে গিয়ে সবার সামনে দরজা বন্ধ করে দিলো।
শীতলের শশুর বলল- তোমরা কখন এলে?
-এই তো এলাম। কেউ তো বলেনা আসতে তাই নিজেই এলাম।
-শোরগোল শোনা যাচ্ছিলো। রাজ এভাবে বৌমা কে নিয়ে চলে গেলো কেন?
-সেটা জানিনা ভাইজান।
ভাইজান আপনার চেহেরাটা কি সিচুয়েশন। যত্ন করার মতো কেউ থাকলে তো।
বুঝি বুঝি সব বুঝি।
চাঁচি ইশারা করতেই শাকিলা সালাম দিলো শীতলের শশুর কে।
-আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম মামুমি। কত বড় হয়েছো তুমি। রাজের বিয়ের সময় তোমার সাথে আলাপ করার সময় পাইনি।
-এখন আলাপ করবেন যত ইচ্ছে তত। সহজে যাচ্ছি না। অনেক দিন থাকার প্ল্যান করেছি।
-তা বেশ। যতদিন ইচ্ছে থাকবে। তোমার পড়াশোনার খবর কি মা?
-ভুলে গেলেন আঙ্কেল। এবার ইংলিশে অনার্স কমপ্লিট করেছি।
-আলহামদুলিল্লাহ।
-শুধু আলহামদুলিল্লাহ বললে হবে না আঙ্কেল। আমাকে একটা গিফট দিতে হবে।
-বলো কি চাও মামুনি?
-নিউ ব্যান্ডের একটা সামান্য কার। দেশে আমার একটাও নিজের কার নেই। আমি আবার নিজের কার ছাড়া চলতে পারিনা।
-কবে নাগাদ গিফট দিতে হবে মামুনি?
.
-বলেছিলাম আমি।
কখনো জোরে কথা বলবেন না। আপনার শরীর খারাপ হয়ে যায়।
-কি করব। তোমার স্বামীর যে মাথা গরম।
-আমার স্বামী কে মাথা ঠান্ডা রাখা শিখতে হবে।
-তোমার স্বামী সব শিখতে পারে।
-মাথায় তেল মালিশ করে দিচ্ছি, এখন ভালো লাগবে।
আর যন্ত্রণা করবে না। আল্লাহ ভরসা!
-অনেক আরাম লাগছে। তোমার তেল মালিশ খুব ভালো।
-আপনার মাথা এখনো যন্ত্রণা করছে?
-আমি জানিনা।
-আল্লাহর দোহাই! সত্যি কথা বলুন।
-বললাম তো জানিনা।
-আল্লাহর দোহাই! একটু বোঝার চেষ্টা করুন। মাথায় কোন ব্যথা পাচ্ছেন? ডক্টর চাচা কে খবর দেবো?
দয়া করে বলুন প্লিজ?
-আল্লাহর দোহাই! আমার কোন ব্যথা করছে না।
শীতলের কোলে মাথা রেখে, শীতলের এক হাত নিজের বুকে নিয়ে রাজ বলল- তোমার কাছে থাকলে আমার খুব ভালো লাগে শ্রেয়সী।
শীতল রাজের গালে হাত দিয়ে বলল- আমার কাছে, আমার কোলে, সারাজীবনের জন্য আপনাকে আগলে রাখার প্রতিজ্ঞা করেছি আমি।
নিন এবার ভালো ছেলের মতো বসে থাকুন। তেল মালিশ করতে দিন।
-শ্রেয়সী?
-জ্বী বলুন?
-আমার খুব আরাম লাগছে, ঘুম পাচ্ছে।
-যে পর্যন্ত ঘুমে কাতর হয়ে না পড়েছেন, সে পর্যন্ত তেল মালিশ চলবে।
মাদুর বিছিয়ে শীতল ফ্লোরে বসেছে আর রাজ শীতলের কোলে মাথা রেখে শুয়েছে।
শীতল রাজের মাথায় তেল মালিশ করে দিচ্ছে আর মৃদু কন্ঠে সূরা পড়ছে। রাজ শীতলের ঘোমটার আড়ালে থাকা লম্বা সুবাস যুক্ত চুলের ঘ্রাণ শুঁকছে আর চুল নিয়ে খেলা করছে।
– তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?
-রাগ করেছো!! রাগ করেছো! রাগের কাজ করে আবার বলাও হচ্ছে?
-তখন আমার ভালো লাগছিলো না।
-কখন?
-যখন তোমাকে শাকিলারা বক ছিলো তখন।
আমার একদমই ভালো লাগছিলো না।
-আমাকে বকলে আপনার কি তাতে?
-জানিনা। কিন্তু আমার এখানে ব্যথা লাগে।
রাজ ঠিক বুকের বাম পাশে হাত রেখে বলল।
শীতল রাজের হাত নিজের বুকের বাম পাশে রেখে বলল- আমারও এখানে ব্যথা হয়। খুব ব্যথা হয়।
-বাট হোয়াই?
-বোঝেন না?
-বুঝেছি। পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছো। এক মিনিট আমি এখনই মলম নিয়ে আসছি। মলম লাগিয়ে দেব ভালো হয়ে যাবে।
রাজ উঠতেই শীতল একটানে রাজ কে নিজের উপর ফেলে দিলো।
-এই অবুঝ ছেলে। আপনি এতো বোকা কেন? আমার বুকের এতো হা হা কার কেন বোঝেন না?
আপনা কে কেউ পাগল বললে আমার বুক হা হা কার করে উঠে।
-বাট আমি তো পাগল। আই এম টোটালি ম্যাড। পাবনা থেকে সার্টিফিকেটও আছে।
-আর একটা কথা বললে একদম গলা টিপে দেবো। আবার হাসা হচ্ছে?
-তুমি আমার গলা টিপে দেবে? হা! হা! হা!।
-এনি ডাউট?
-তুমি তো আদর করো, কখনো সবার মতো আমাকে মারো না।
-আমিই আদর করব। আপনি কোনো দিনও করবেন না তা তো ঠিক করে রেখেছেন। জীবনে কোনদিন কোলেও নেবেন না এটাও ভেবে রেখেছেন৷
এই চোখে চোখ রাখুন, এই মুখশ্রী তে হাত রাখুন, এই বুকে কান পেতে শুনুন, কিছু অনুভব হয় কিনা!!!
.
-আমরা কোথায় যাচ্ছি শ্রেয়সী?
-অজু করতে যাচ্ছি।
-আমরা কেন ঘুমুনোর সময় অজু করি?
-দরকার আছে তাই।
-প্রতিদিন তুমি ঘুমুনোর সময় কেন অজু করো? আমাকেও অজু করিয়ে দাও কেন? বলো? ঘুমিয়েও কি নামাজ পড়ব আমরা?
শীতল হেসে বলল-
” মানুষ ঘুমালে তার আত্মা কী করে? . আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষ ঘুমালে তার আত্মা আকাশে চলে যায় এবং তাকে আল্লাহর আরশের কাছে সিজদা করার নির্দেশ দেয়া হয়।যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ঘুমায় তার আত্মা আল্লাহর আরশের কাছেই সিজদা দেয় এবংযে ব্যক্তি অপবিত্র ছিল তার আত্মা আরশ থেকে দূরে সিজদা দেয়। [1] . মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ঘুমায় তার মাথার কাছে একজনফেরেশতা রাতযাপন করে এবং ঐ ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে, “হে আল্লাহ! তুমি তোমার এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও কেননা সে পবিত্র অবস্থায় রাতযাপন করছে। [2] . অতএব আসুন আমরা পবিত্র অবস্থায় ঘুমাতে যাই, যাতে আমাদের আত্মা আল্লাহর আরশের কাছেই সিজদা দিতে পারে এবং ফেরেশতা আমাদের জন্য ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারে। ……………………. 1. (বায়হাকী) 2. (তাবরানী ও বায়হাকী)
_ মহানবী (সাঃ) যা বলেন আমরা তো তাই করব। তুমি বলেছিলে আমাকে।
আমি আগে অজু করব।
শীতল হেঁসে রাজের পায়ে রুমের জুতো-জোড়া পড়িয়ে দিলো।
যাইহোক, শীতলের স্বামী শীতলের মাধ্যমে হেদায়েতের পথে আসতে শুরু করেছে। শীতলের জন্য এটাই বা কম কি!
.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯ টি নামের দুটি নাম ❤
৭. ﺍﻟْﻤُﻬَﻴْﻤِﻦُ আল-মুহাইমিন অভিভাবক, প্রতিপালক
৮. ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰُ আল-’আযীয সর্বশক্তিমান, সবচেয়ে সম্মানিত।❤
চলবে…….

#লালগোলাপ❤
Writer-Moon Hossain
Part-12

-চাঁচি মা, মাফ করে দিন।
আমি অন্যায় করেছি।
প্লিজ ফরগিভ মি।
-আবার কোন নাটক?
চাঁচি শীতলের দিকে তাকালো।
রাজ শীতলের দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে। শীতল ইশারা করে মাফ চাইতে বলেছে।
-চাঁচি মা, প্লিজ ফরগিভ মি।
-সব বুঝি আমি। এসব মাফ চাওয়ার নাটক কার ইশারায় হচ্ছে।
শাকিলা নেলপলিশে ফু দিতে দিতে নিচে আসলো।
-হোয়াট হ্যাপেন্ড মম?
এখানে কিসের নাটক চলছে।
-নাটক নয়, এটা সত্যি ঘটছে চাঁচি মা। উনি কালকের ব্যবহারের জন্য দুঃখী। নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাফ চাচ্ছে।
-ও একা কেন? তুমি কিছু করোনি?
সমস্ত টা তো তোমার জন্য হলো।
শীতল হেঁসে বলল- শাকিলা আপা ঠিক বলেছেন।
শীতল রাজের পাশে দাঁড়ালো। রাজ আর শীতল একসাথে বলল-আমরা যদি কোন ভুল করে থাকি তবে আমাদের মাফ করে দিন।
দুজন কান ধরে বলল-ওই আর সরি, সরি, সরি।
শাকিলা আর চাঁচি দুজন দুজনের দিকে তাকালো।
চাঁচি বলল- বাবা রাজ। তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো তার জন্য আমরা খুশি হলাম। তোমার উপর আমাদের কোন রাগ নেই। তোমার উপর তো রাগ করা যায় না।
এসো বাবা বসো এখানে।
শীতল ইশারা করে বসতে বলল রাজ কে।
-আহা! এখানে নয়। শাকিলার পাশে বসো বাবা।
শাকিলা বলল- রাজ আমাদের আপনজন। ওর সব কিছু মাফ করে দেব আমরা। কিন্তু শীতল তুমি?
তুমি আমাদের কেউ না, তোমাকে মাফ করবো কিনা তা আমরা ভেবে দেখব।
-জ্বী আপনাদের দয়া। আপনারা ভেবে দেখবেন এটাই অনেক। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের ভালো করুক।
-থাক হয়েছে। এবার যাও দেখি মেয়ে, একটা পারিবারিক আলোচনা চলবে এখানে।
-জ্বী চাঁচি, আপনারা কথা বলুন। আমি বরং রান্না ঘরে যাই।
শীতল উঠতেই রাজও উঠে শীতলের পেছনে যেতে লাগলো।
-একি রাজ? তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?
-শ্রেয়সী যেখানে, আমিও সেখানে।
শাকিলা আর চাঁচি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো শীতলের উপর।
-শীতল দাঁড়াও এখানে।
-জ্বী, আপনার ইচ্ছে।
প্লেটে কাজের মেয়ে ফুলি নাড়ু দিয়ে গেলো।
চাঁচি হাসি মুখ করে বলল- নাও বাবা খাও। তোমার তো চিঁড়ে নাড়ু খুব পছন্দের।
-ওয়াও চিঁড়ে নাড়ু?
আমি খাব, আমি খাব!
-বয়স হয়েছে কিছু মনে রাখতে পারিনা। শাকিলা মনে করে দিলো তোমার যে নাড়ু পছন্দ। দেখেছো তোমার কত খেয়াল রাখে ও। মেয়েটা আমার এমন ভালো কি বলব।
-মা বেশি বেশি বলছো। এ আর এমন কি।
-শাকিলা আপা, আপনি সত্যি ভালো মেয়ে, মনে করে চিঁড়ে নাড়ু এনেছেন, তাই তো দেখুন উনার মুখে কত হাসি ফুটেছে।
আপনার জন্য উনার মুখে হাসি দেখতে পেলাম।
-থ্যাংক কিউ।
-শোন মেয়ে?
-জ্বী চাঁচি মা।
-আমি আমার রাজ বাবার জন্য নাড়ু বানিয়েছি স্পেশাল ভাবে। তুমি আমাদের কেউ না, বাহিরের লোকেদের আমি ঘরের খাবার দিইনা।
-চিন্তা করবেন না। আমি নাড়ুতে ভাগ বসাব না।আপনি আপনার ঘরের ছেলের জন্য বানিয়েছেন যত্ন করে। উনাকে খাওয়ান। উনি খেলেই আমার তৃপ্তি আসবে।

রাজ চিঁড়ে নাড়ু টা নিয়ে সোজা শীতল কে খাওয়ালো। শীতলের খাওয়ার বাকি অংশ টুকু রাজ মুখে দিলো।
-বাবা রাজ এটা কি হলো?
-রাজ ওকে খাওয়ালি কেন?
রাজ নাড়ুর প্লেট হাতে নিয়ে বলল- আমি আমার বউ কে ছাড়া কিছু খেতে পারিনা।
ওকে না খাইয়ে, ওর হাতে না খেলে, আমার গলা দিয়ে খাবার নামেনা।
শীতল রাজ কে নাড়ু খাইয়ে দিচ্ছে।
শাকিলা রেগে বলল- তুমি তো সব বুঝো। ও না হয় অবুঝ। তুমি কেন আমাদের নাড়ু খেলে?
-আমি ইচ্ছে করে খাইনি আপা। আমার স্বামী আমাকে খাইয়ে দিয়েছেন তাই খেয়েছি। না খেলে স্বামীর বিরুদ্ধে যাওয়া হতো। আমি অবাধ্য স্ত্রী নই। রাজ বাচ্চাদের মতো এক করে শীতলের হাতে গপাগপ নাড়ু খাচ্ছে। যেন, কেউ নাড়ু খেয়ে ফেলবে। তার অন্য দিকে খেয়াল নেই।
-তুমি খুব ক্লেভার শীতল।
শীতল হেসে বলল -নাড়ু গুলো খেতে খুব মজা হয়েছে। আমি সব ধরনের নাড়ু বানাতে পারি। তবুও চাঁচি মায়ের হাতের নাড়ু বানানো শিখব।
আপনারা যখন এই বাড়ি থেকে চলে যাবেন,তখন আমি উনাকে এই নাড়ু বানিয়ে খাওয়াবো। চাঁচি মা শেখাবেন তো?
চাঁচি আর শাকিলা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো শীতলের উপর।
জোহরের আজান দিয়েছে। শীতল সব কাজ সেরে নিলো। নামাজ পড়ার জন্য অজু করলো।
লাউড স্পিকারে গান বাজছে। এভাবে নামাজে অসুবিধে হবে।
-হাউ ডেয়ার ইউ?
তুমি মিউজিক বন্ধ করলে কেন?
-এখন নামাজের সময়। বাড়িতে সবাই নামাজ পড়বে।
-সো ওয়াট?
-লাউড মিউজিকে নামাজ পড়তে অসুবিধে হবে।
-হোয়াট আই ডু?
-মিউজিক বন্ধ থাকবে।
এখন সবাই নামাজ পড়বে। আপনারও নামাজ পড়ার সময় হয়েছে। আপনি অজু করে নিন।
-সেটা তোমাকে বলতে হবেনা। তুমি নিজের কাজ করো।
-আপনি নামাজ সম্পর্কে উদাসীন আপা।
-তাতে তোমার কি?
– একজন মুসলিম হিসেবে আমি শুধু নিজে হেদায়েতের পথে চলব না, সবাই কে নিয়ে চলব। অন্যদেরও হেদায়েতের পথে নিয়ে আসা হলো প্রকৃত মুসলিমের কাজ।
আমরা এক জাতি, সেটা মুসলিম জাতি। ভ্রাতৃত্বে বিশ্বাসী আমরা, পরস্পরের খেয়াল রাখব, আল্লাহর পথে সবাই কে নিয়ে চলব, তাহলেই তো আমরা প্রকৃত মুসলিম হবো।
মহা নবী (সাঃ) (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন বান্দাকে সর্বপ্রথম তার #নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। অতএব, দুর্ভোগ সেসব নামাযীর, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বে-খবর।❞ (সূরা মাউনঃ ১০৭/৪-৫)
নামাজ বেহেশতের চাবি আপা। চাবি ছাড়া যেমন কোন তালা খুলে না। তেমনি নামাজ ছাড়া বেহেশতের দরজা খুলবে না।
.
– আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লাহ হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইউম, লা তা’খুযুহু সিনাতুও ওয়া লা নাওম।
-পুরোটা একসাথে বলুন। সূরা বলতে হয় একসাথে। থামতে নেই।
-আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুম…
-কি হলো?
– আমি ঘুমুব।
-পুরোটা বলে ঘুমুবেন।
– কিন্তু আমি তো পারি।
এখন ঘুমুব, পরে বলব।
– আহা! আগে বলে নিন, তারপর না হয় ঘুমুবেন।
তা না হলে আমি কষ্ট পাব।
-ঠিক আছে বলছি প্রথম থেকে।
আয়াতুল কুরসী -সূরা আল বাক্বারাহ -আয়াত ২৫৫

اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
– আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বইউম

لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ
– লাতা’খুযুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাওম

لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ
– লাহু মা ফিচ্ছামা-ওয়াতি ওয়ামা- ফিল আরদ্বি

ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ
– মানযাল্লাযি ইয়াশ্’ফাউ ই`ন্দাহূ ইল্লা বিইযনিহী

يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ
– ইয়ালামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম

وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ
– ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইয়িম মিন ইলমিহি– ইল্লা- বিমাশাআ—

وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ
– ওয়াসিয়া কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা

وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا
– ওয়ালা ইয়া উ দুহু হিফযুহুমা

وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
– ওয়াহুওয়াল আলিয়্যুল আযীম

বাংলা অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
-এই তো হয়েছে।
-এবার ঘুমুতে যাব।
শীতল রাজের গাল টেনে বলল- আয়াতুল কুরসী সব সময় পড়বেন। মনে থাকবে?
রাজ মাথা নাড়ালো।
-মনে থাকবে। তোমার সব কথা মনে থাকে আমার। কিছু মনে রাখিনি এমন হয়েছে?
শীতল রাজের কোমরে হালকা চিমটি দিয়ে রাজের কথায় সম্মতি জানালো।
রাজ ঘুমুতে বিছানায় শুতে গেলো। শীতল রাজের চুলে বিলি কেটে কেটে বলল- আয়াতুল কুরসী (আরবি: آية الكرسي‎‎) হচ্ছে কোরআন শরীফের দ্বিতীয় সুরা আল-বাকারার ২৫৫তম আয়াত। এটি কোরআন শরীফের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আয়াত এবং ইহা ব্যাপকভাবে পঠিত ও মুখস্থ করা হয়। এতে সমগ্র মহাবিশ্বের উপর আল্লাহর জোরালো ক্ষমতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে আয়াতি পাঠ করলে অসংখ্য সুফল পাওয়া যায়।
শীতলের বলা শেষ হতেই রাজ ঘুমে কাতর হয়ে গেলো।
শীতল আছরের নামাজ পড়ে নিলো।
নাশতা রেডি করে টেবিলে নিয়ে গেলো শীতল।
-নুডলসে এতো সবজি দিয়েছো কেন?
-চাঁচি স্বাস্থ্যের জন্য সবজি খাওয়া ভালো।
– শীতল মায়ের জন্য সবজি খাওয়া ভালো। এই বয়সে সবজি খাওয়া বেটার। বাট আমি এসেছি থেকে সবজি খেতে খেতে মরে যাচ্ছি। সবজি খাওয়ার জন্য বুঝি এসেছি?
এটা তোমার মেহমানি?
-শাকিলা আমাদের প্রতি কারও কেন খেয়াল নেই। কি পছন্দ না পছন্দ তার দাম নেই।
-চাঁচি মা দুপুরে তো আপনি সবজি খেলেন না, চিকেনের তিন টা আইটেম খেয়েছেন। তাই আপনার স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আমি বিকেলের নাশতায় আপনার জন্য সবজি দিয়েছি।
-তুমি কি স্পাই গিরি করার জব নিয়েছো মেয়ে?
একটু খেলাম না খেলাম তাতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে কেন?
শীতল হেসে শাকিলা কে বলল-
এই নিন আপনার জন্য আলাদা নুডলস করেছি চিকেন দিয়ে।
চিকেনের স্যুপও করেছি। একসময় সবজি, আরেক সময় চিকেন খেলে খাবারে নতুনত্ব আসে এবং স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো হয়।
শাকিলা ভেবেছিল যদি সবজির ছলে কিছু কথা বলা যেত,তাহলে বিকেলের নাশতা টা দ্বিগুন মজা হতো, যদিও স্বীকার করতে হবে শীতলের রান্নার হাত মাইন্ড-ব্লোয়িং।
-একদম পারফেক্ট লাগছে।
শীতল রাজ কে নিয়ে বাহিরে যাবে তাই তৈরি হচ্ছে দুজন।
রাজ কে শার্ট-প্যান্ট, কোর্ট-টাই পড়িয়ে দিয়ে এখন মাথার চুল চিরুনি করে দিচ্ছে শীতল।
শীতল সুন্দর একটা শাড়ি পড়েছে আকাশী-নীল। রাজের আকাশী রংয়ের শার্টের সাথে মিলিয়ে।
শীতল আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল বাঁধার সময় রাজ পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো শীতল কে।
শীতলের হৃদয়ের শহর যেন তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।
আয়নায় তাকিয়ে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করছে তাদের দিকে। দুজন কে এতো ভালো মানিয়েছে যা বলার বাহিরে। রাজ শীতলের কপালে একটা চুমো দিলো।
শীতলের এক মিনিটের জন্য মনে হলো রাজ ভালো হয়ে গিয়েছে।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি শ্রেয়সী?
-আমরা হারিয়ে যাব আজকে।
-তাহলে বাড়ি ফিরব কিভাবে?
-আমার সাথে হারিয়ে যেতে আপনার আপত্তি আছে?
শীতলের কোলে মাথা রেখে রাজ বলল- না। তুমি যেখানে আমিও সেখানে।
তোমার স্বামী তোমার সাথে হারিয়ে যেতেও পারে।
খোলা আকাশ জানালা দিয়ে দেখতে খুব ভালো লাগছে শীতলের।
অনেক ক্ষণ গাড়ি নিয়ে ঘুরবার পর রাজ বলল – ক্ষিদে লেগেছে তোমার স্বামীর।
শীতল রাজ কে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট গেলো।
শীতল দুই একবার বান্ধবীদের সাথে রেস্টুরেন্টে এসেছিলো। দু-চারটা আইটেম ছাড়া সে আর কোন কিছুই চিনতে পারলো না মেনু – কার্ডে।
-শুনছেন? আমি তো কিছুই চিনতে পারলাম না।
আপনি কি খাবেন তা কিভাবে বুঝব? রেস্টুরেন্টে কোন খাবার আপনার পছন্দ সেটা তো জানিনা।
-আমি চিনি।
আমাকে দাও মেনু-কার্ড!
রাজ অনেকক্ষণ মেনু গুলো দেখে বলল-ওয়েটার?
-জ্বি স্যার?
রাজ অনেক গুলো খাবার অর্ডার দিলো।
রাজ শীতলের দিকে তাকিয়ে বলল- তোমার স্বামী খাবার অর্ডার দিতেও পারে।
শীতল রাজের গাল টেনে দিয়ে হাসি দিলো।
রাজ পায়ের উপর পা তুলে বসেছে, এটা দেখে রেস্টুরেন্টের লোকেরা মিটিমিটি হাসছিলো।
শীতল ওদিকে নজর দিলো না।
রাজ বলল সে একাই খেতে পারবে।
-আমি হাতে খাই?
-জ্বি।হাত দিয়ে খাওয়া সুন্নত।
-শ্রেয়সী সবাই কেন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে?
-আহা! আপনি খান তো। ছোট বেলায় নিশ্চয়ই এভাবে পা তুলে হাত দিয়ে খেতেন, তো এখন তো আপনার মাথা ছোটদের মতোই।
আপনার মতো করে খান। সবাই কি বলল তাতে আমাদের কি?
রাজ চামিচ ছাড়া হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। সবাই দেখে তাকিয়ে রইলো। রাজ খেতে গিয়ে নিমিষেই টেবিল সহ নিজের পোশাকেও খাবারের ঝোল দিয়ে ভরে ফেললো।
শীতল হেঁসে বলল- নিন হ্যাঁ করুন। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
রাজও হাত দিয়ে শীতলের মুখে খাবার তুলে দিলো। শীতল হাসি মুখে খেলো।

শীতল টেবিল পরিষ্কার করে ওয়াশরুমে রাজ কে পরিষ্কার করাতে নিয়ে গেলো।
-আপনি টেবিলে গিয়ে বসুন। আমি বোরখা পরিষ্কার করে এখুনি আসছি।
একা একা বসে থাকতে পারবেন?
-তোমার স্বামী একা বসে থাকতেও পারে।
শীতল কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো, পুরো রেস্টুরেন্ট তুফান বয়েছে। চেয়ার, টেবিল ভেঙে সব একাকার।
রাজ শীতল কে না দেখতে পেয়ে এমন করেছে। শীতল যে ওয়াশরুমে ছিলো এটা তার মাথায় ছিলো না।
রাজ কে আট-দশ জন লোক মিলেও ধরে রাখতে পাচ্ছেনা।
শীতল রাজের কাছে গেলো। রাজ শীতল কে দেখতে পেয়ে জরিয়ে ধরলো। এরপর পুলিশ এসে রাজ কে ধরে নিয়ে গেলো। শীতল বার বার চেষ্টা করেও থামাতে পারলো না। শেষে সেও থানা তে গেলো রাজের সাথে।
.
❤আল্লাহ তায়ালার ৯৯ টি নামের দুটি নাম ❤
৯. ﺍﻟْﺠَﺒَّﺎﺭُ আল-জাব্বার দুর্নিবার, সমুচ্চ, মহিমান্বিত
১০. ﺍﻟْﻤُﺘَﻜَﺒِّﺮُ আল-মুতাকাব্বির সর্বশ্রেষ্ঠ, গৌরবান্বিত।
চলবে…….