লালগোলাপ? Part-23 +24

0
2935

লালগোলাপ?
Part-23 +24
Writer-Moon Hossain

আজানের সুরেলা আওয়াজ ভেসে আসছে প্রকৃতিতে। শীতল নামাজ পড়ে বসে আছে জায়নামাজে। রাজ থাকলে সেও ঘুমু ঘুমু চোখে শীতলের কাঁধে মাথা রেখে জায়নামাজে বসে থাকত।
টেবিল ল্যাম্পের আলো মৃদু মৃদু করে জ্বলছে। ঘরটা অন্ধকার।স্তব্ধ পরিবেশ। কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছে রাফা।
মাথায় পানি ঢালছে শীতল।
রাফা ড্যাঁপ ড্যাঁপ করে তাকিয়ে আছে। আজ তার ফুচকা খেতে যাওয়ার পোগ্রাম ছিলো বান্ধবীদের নিয়ে।
কিছুদিন ধরেই রাফা বিছানা নিয়েছে। তেমন কিছু না। শুধু শরীর দূর্বল আর জ্বর।
-মাথা টিপে দেব?
-না।
-তোমার কি খারাপ লাগছে?
-একটু।
-জানি অসুস্থ অবস্থায় খুব অসহায় লাগে নিজেকে।
-তুমি তো আছো।
– গ্রামের ভাষায় বলে, ভাতের স্বাদ পিঠা দিতে পারবেনা। মায়ের অভাব খালা পূরণ করতে পারবেনা।
-এসব মিথ্যে।
-তোমার কি মা কে দেখতে ইচ্ছে করছে?
রাফা চোখ বন্ধ করলো।
মায়ের মুখটা মনে করার চেষ্টা করছে সে।
আজ ছয় মাস হয়েছে রাজ কোমায় আছে।
শীতল প্রতিদিন মেডিক্যালে গিয়ে রাজের কাছে বসে থাকে। খুব জোর করে শীতল পারমিশন নিয়েছে রাজের ক্যাবিনে যাওয়ার জন্য।
শীতল বলেছে সে শুধু রাজে পাশে চেয়ারে বসে থাকবে। একটা কথাও বলবে না। এমন ভাবে ক্যাবিনে ঢুকবে যে পিঁপড়ার মতো মনে হবে।
সকালে সংসারের সব কাজ সেরে যায় আর আসে সন্ধ্যার আগে। এতোক্ষণ ধরে শুধু রাজের পাশেই থাকে সে। একটা কথাও বলেনা।
শুধু রাজের নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবে সে।
শীতলের শশুরও বিছানা নিয়েছে পুত্র শোকে।
অফিস যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
হাসান অফিস দেখাশোনা করে এখন।
রাফিয়াও অফিসে গিয়ে সাহায্য করে মাঝে মধ্যে।
প্রচুর কাজ। হাসান সামলাতে পারেনা নতুন বলে। তাই রাফিয়াকেও যেতে হয়।
রাফিয়া ইন্টারে পড়লেও খুব ট্যালেন্টপুল গার্ল।
শশুর কে সময় দিয়ে শীতল নিজের কামরায় এসেছে।
আয়নায় দাড়িয়ে নিজেকে দেখলো সে।
ছয় মাসে তার ভেতর বাড়ন্ত প্রাণ বেড়ে উঠেছে। পেট থেকে যেন বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে। সেইটারই জানান দিচ্ছে যেন।
পেটে হাত দিলেই অস্তিত্ব অনুভব করা যায়।
শীতল নিজের সর্বোচ্চ খেয়াল রাখছে। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করে।
একজন সুস্থ শিশু রাজের কোলে তুলে দিতে চায় সে। রাজের যখন জ্ঞান ফিরবে, যখন সুস্থ হবে তখন তাদের সন্তানদের দু-জনে মিলে বড় করবে। কত সপ্ন শীতলের।
ফজরের নামাজ পড়া শেষ হলেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
-মিসেস শীতল।
-আসসালামু আলাইকুম বলছি।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। তাড়াতাড়ি মেডিমেডিক্যালে আসুন। আপনার স্বামীর জ্ঞান ফিরেছে। আপনার নাম নিচ্ছেন তিনি।
শীতলের হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো।
রাজ বড় বড় চোখ করে তার শ্রেয়সী কে দেখছে।
শীতল চিন্তিত ভাবে লেডি ডক্টরের দিকে তাকালো।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
এখন কেমন লাগছে?
-জানি নাতো।
-খুব খারাপ লাগছে?
-সেটাও জানিনা।
-মাথা ব্যথা হচ্ছে?
-বুঝতে পাচ্ছিনা।
লেডি ডক্টর আর নার্স গুলো মুচকি হাসি দিলো।
রাজ এপর্যন্ত শীতলকে আপাদমস্তক কয়েকবার করে দেখছে।
কি যেন বোঝার চেষ্টাচালাচ্ছে সে।
রাজ শীতলের পেটে ইশারা করে বলল- তোমার ভুঁড়ি হলো কি করে?
শীতল হাসলো।
-তোমার পেটে কি বালিশ ঢুকিয়ে রেখেছো?
শীতল আবার হাসলো।
রাজের হাত শীতল তার পেটে নিয়ে বলল- কিছু অনুভব করতে পারেন কিনা দেখুন তো?
-আমাকে লাথি মারলো কে?
-আপনি বলুন?
-তোমার পেটের ভেতর কি যেন আছে।
বিড়ালের বাচ্চা ভরে রেখেছো কেন?
– আহা! এটা মানুষের বাচ্চা।
-কোন মানুষের?
তার বাবা মা কোথায়?
-তার বাবা হলো আমরা।
আপনি ওর বাবা এবং আমি ওর মা।
-আমি কিছু বুঝতে পাচ্ছি না কিন্তু।
-আপনি বাবা হতে চলেছেন। এবং আমি মা।
আল্লাহ আপনাকে সন্তানের মুখ দেখার তৌফিক দিয়েছে।
-রিয়েলি?
-জি হ্যা সাহেব।
-আমি ওকে দেখব।
-সময় হলে।
-নো, নো। পেট কেটে বের করো প্লিজ।
-সেটা কিভাবে সম্ভব?
-অপারেশন করবে।
এই যে ডক্ট, আসসালামু আলাইকুম, আপনি এখন অপারেশন করে দিন একটু।
ডক্টর হাসলো।
রাজের গালে হাত রেখে শীতল বলল- শুনুন, মহান আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর নিয়ম দিয়েছেন। আট-নয় মাস হলেই ওর জন্ম হবে।
তখন আপনি দেখতে পারবেন।
-না। আমি এখন দেখব।
তুমি বুঝতে পাচ্ছো না বিষয়টা। অপারেশন করলেই তো বেবি তোমার পেট থেকে বের হবে।
-আল্লাহ কোথায় তুমি? আমার সন্তানের হবু বাবা কে বুঝ দান করো।
-তুমি চাওনা আমি বাবা হই।
শীতল রাজের নাকে হালকা নাক ঘষে দিলো।
-আপনি এতো অবুঝ কেন?
-জানিনা, যাও।
-আপনি জানেন, আমার জীবনে একটা বড় সপ্ন হলো আপনাকে সন্তান উপহার দেওয়া। আপনি বাবা হচ্ছেন সেই খবরটা দেওয়ার জন্য ছটফট করেছি প্রতিটি মোমেন্ট।
আজ সেই দিন এলো।
রাজ হেসে বলল- যাও তোমাকে মাফ করে দিলাম।
এখন ছেড়ে দিলাম বাট পরে কিন্তু বেবির মুখ দেখাতে হবে।
-আচ্ছা বাবা, আচ্ছা।
রাজ একটু ভয়ে ভয়ে শীতলের পেটে হাত দিলো।
-উফফ, আমাকে কিক মেরেছে। ও এতো কিক কি করে শিখলো?
-দেখতে হবেনা কার ছেলে?
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আপনিও আমাকে কিক মেরেছেন কত।
-মোটেও না।
-আমি ওর বাবা রিয়েলি রিয়েলি?
-আরে বাবা হ্যাঁ। আমরা ওর বাবা মা।
রাজ সারাদিন শীতলের পেটে হাত রেখে নানান ধরনের কথা বলল তার বেবির সাথে। হাসাহাসি করলো। খেলাধুলার বিষয়ে কথা বললো। আল-কোরআনের কথাও বললো।
শীতল শুধু তাকিয়ে দেখছে আকুল হওয়া এক সন্তানের অবুঝ বাবা কে।
শীতলের হাতে থাকলে এখনই সে সন্তান তুলে দিতো রাজের কোলে।
-আমি বাড়ি যাব। স্কুলের ফর্ম তুলবো।
ওকে এডমিশন দেওয়াতে হবে কিন্ডারগার্টেনে।
-গাছে কাঠাল গোঁপে তেল।
-ও আমাকে আবার মারছে। এই দেখ, দেখ আবার মারছে। ও খুব শক্তিশালী হবে একদম আমার মতো।
-হ্যাঁ। আপনার মতোই আপনার সন্তান হবে।
-তুমি ওকে কোলে নেবে না। আমি ওকে কোলে নেব।
-আচ্ছা।
-আমি খাওয়াব।
-আচ্ছা।
-আমি গোসল করাব।
-আচ্ছা।
আরকিছু আদেশ আছে আমার উপর।
-ওয়ান মোর আদেশ।
এতদিন তুমি ওকে পেটে রেখেছো। এখন আমি ওকে পেটে রাখব।
শীতলের মুখে কান্নার ভাব এলো। সে এখন কি করে বোঝাবে। কাঁদা ঠিক হবে নাকি বুঝতে পাচ্ছেনা সে।
-তোমার থেকে আমার পেট বড় আছে। ওর অসুবিধা হবে না।
শীতল হতভম্ব। কাঁদবে না হাসবে সেটা নিয়ে কনফিউজে ভুগছে!!
আল্লাহ তায়ালা যেন বিশেষ এক রহমত বর্ষিত করেছিলো রাজের উপর।
তাই এতো জটিলটার পরেও কয়েক-ঘন্টার জন্য রাজের জ্ঞান ফিরেছিলো।
মেডিক্যালের সব ডক্টররা চমকে উঠেছিলো।
রাজের হঠাৎ মাথা ব্যাথা শুরু হলো। চিৎকার করছে রাজ।
শীতল শুধু চোখের পানি ফেলছে আর আল্লাহকে ডাকছে।
কান্নাকাটি করতে করতে পেট ব্যথা হচ্ছে তার।
-খুব যন্ত্রণা হচ্ছে?
-খুব খুব, খুব যন্ত্রণা।
-আল্লাহর নাম নিয়ে বলছি, আমি যদি পারতাম তবে আপনার যন্ত্রণা আমি নিয়ে নিতাম।
-খুব কষ্ট। খুব কষ্ট মাথায়।
-আল্লাহর নাম নিন। সব যন্ত্রণা কমে যাবে। ভালো হয়ে যাবেন আপনি। ভালো হয়ে যাবেন।
-আমি ভালো হতে চাই, আমি ভালো হতে চাই। খুব কষ্ট আমার। খুব যন্ত্রণা আমার। আল্লাহ! আল্লাহ!আল্লাহ!
শীতলের ঘুম হচ্ছে না। কানের কাছে রাজের আর্তনাদ ভেসে উঠেছে।
না জানি কত যন্ত্রণা নিয়ে আবার কোমায় গিয়েছে রাজ। ভালোয় হয়েছে, জ্ঞান থাকলে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় রাজকে। কোমায় থাকলে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি।
বিছানায় রাজের সাইডে হাত বুলাচ্ছে শীতল।
খুব মিস করছে রাজকে। রাজের সাথে ঘুমুতে পারেনা গত সাত মাস ধরে।
শীতলের হাঁটতে কষ্ট হয়। পেটের ভার নিয়ে দাড়াতেও পারেনা। অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙে যায়। কাউকে বলতে পারেনা সে। সবার সামনে হাসিমুখে থাকতে হয় তাকে। শীতলের মা এসে দেখাশোনা শুরু করেছে মেয়ের।
মায়ের হাসি মুখটা আর নেই। সব সময় চুপচাপ থাকে।
শীতলকে নিয়ে বিকেলে হাঁটতে বের হলেন মা।
-এই সময়ে হাটাহাটি ভালো। ডেলিভারিতে সুবিধে হবে। কষ্ট কম হবে।
-বাবা তোমাকে নিয়ে এসময়ে রাত-দিন হাঁটতে বের হতো তাইনা মা?
-হ্যাঁ রে মা।
সেদিন গুলো চোখে ভাসছে। মনে হচ্ছে এই তো সেদিনকার কথা।
-বাবা তোমাকে আমাদের বোনেদের থেকে সবচেয়ে বেশি ভালো বাসতো তাইনা মা? যদিও সবাই মনে করে আমাকে ভালো বাসতেন বেশি।
শীতলের মা মাথা নাড়ালো।
হাঁটার পর শীতল ডক্টরের কাছে গেলো রিপোর্ট নিতে রাফার।হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় রাফাকে কেমন যেন দেখাচ্ছিলো। এজন্য টেস্ট করানো হয়েছিল দিন-তিনেক আগে। ডক্টর আলাদা ভাবে নিজের বাড়িতে রিপোর্ট নিয়ে কি যেন কথা বলবেন। রাফা যে সব সময় চটপটি, ফুসকা, ফাস্টফুড খায় এগুলোর জন্যই ভিটামিনের অভাব দেখা দিয়েছে বোধহয় । এসব নিয়েই কিছু বলবেন হয়ত।
-মিসেস রাজ!
-বলুন!
-ঠিক আছেন আপনি?
-জ্বি।
-নিন, ঠান্ডা পানি খান। আপনার শরীরের সিচুয়েশন খুব একটা ভালো না। এতে আপনার আর আপনার বেবির প্রবলেম হতে পারে।
শীতলের মা মেয়ের মাথায় হাত রাখলো।
-চিন্তা করিস না মা। আল্লাহ কাকে কিভাবে নিয়ে যান তা কেউ জানেনা।
-হু।
ডক্টর বললো- ব্রেইন ক্যান্সারে বাঁচার সম্ভাবনা নেই। মন শক্ত রাখতে হবে আপনাদের।
-শেষ চেষ্টা করে দেখবেন না? কোন আশায় নেই? দেশে না হলে বিদেশে পাঠাবেন। আমার শশুরের পুরো সমপত্তি বিক্রি করে হলেও চিকিৎসা করাব।
– তাতে লাভ নেই। তেমন হলে আমরাই বিদেশে পাঠানোর
জন্য বলতাম৷ আল্লাহর অসাধ্য কিছুই নেই। তবুও শেষ চেষ্টা করব যেন মৃত্যুটা কষ্টদায়ক না হয়।
কাল থেকেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এমনিতেই লেট হয়েছে।
বেলকনির হাওয়াটা খুব অস্বস্তি লাগছে শীতলের। অন্য সময় ভালো লাগতো তার।
-ভাবি আসতে পারি?
শীতল কিছু বললো না।
-তুমি কি রাগ করেছো আমার উপর?
-নাতো।
-বলললেই হলো।
আমি তো ক্লাসে পড়া পারি না। এজন্য প্রতি সপ্তাহে টিচার রা তোমাকে ডেকে নিয়ে অপমান করে।
তুমি আমাকে কত করে পড়াও। একটু পরেই ভুলে যাই। আমি কি করব বলো?
আমার মাথায় কিছুই থাকেনা। ফুল খালি।
শীতল মাথা নাড়ালো।
-ভাবি কাল কিন্তু রেস্টুরেন্টে ফ্রেন্ডসদের নিয়ে খেতে যাব। এক্সম শেষ হলো তো, তাই একটু সেলিব্রেট করব।
মানা করতে পারবেনা।
অনুমতি দাও। প্লিজ ভাবি। অনুমতি দাও৷
-আচ্ছা।
-উফফ, আমার কিউট ভাবি।
কথা দিলাম, আর কখনো তোমাকে আমার জন্য টিচারদের কাছে অপমানিত হতে হবেনা। আমার জন্য তোমাকে ভাবতে হবেনা।
.
-আমার চশমা টা কোথায় গেলো বৌমা?
-খুঁজছি বাবা। সবুর করুন।
-নিশ্চয়ই রাফার কাজ। ও চশমা পড়ে আমার মতো করে ইজিচেয়ারে বসে বই পড়ে।
হা!হা! মেয়েটা খুব প্রাণবন্ত।
রাফা চেঁচাচ্ছে।
-আপা ছেড়ে দাও। ছেড়ে দাও। ভাবি আমাকে মেরে ফেললো আপা। আমাকে বাচাও। আর করবনা।
-আরও পড়বি আমার ডাইরি?
-না না। আর মেরোনা। ব্যথা করছে মাথা।
শীতল ঘটনা স্থলে গিয়ে বলল- আপা ছেড়ে দিন। রাফা তুমি রেস্ট নাও। বড়দের জিনিস ধরতে নেই।
-আমি আরও বেশি করে ধরব। আহা! কি মধুর ডাইরিতে লেখা কথা গুলো… “আমার প্রাণ প্রিয়…
-রাফা তোকে আমি মাডার করব।
ধরতে পারলে তো। রাফিয়া সারা বাড়ি দৌড়েও আর পারলো না রাফা কে ধরতে।
রাফা এখন রাজের থাকা মেডিক্যালই ভর্তি আছে।
রাফিয়া আর হাসান বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছে।
হাসান কি বলে শান্তনা দেবে তা ভাবছে।
রাফা শুকিয়ে একেবারে কাঠ হয়েছে। চোখের মনি বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে।
ফর্সা আভাটা আর নেই গায়ে।
-খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার?
রাফা হাসলো।
-মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে?
-তুমি হাত বুলিয়ে দাও ভাবি।
শীতল মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রাফার।
-আচ্ছা ভাবি, আল্লাহর প্রতি পূর্নাঙ্গ ইমান কিভাবে আনব? কিভাবে মুমিনা হতে পারব?
-মহা নবী (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসা আনতে হবে তোমার মনে।উনাকে ভালোবাসবে সবচেয়ে বেশি। তোমার নিজের জীবন, বাবা, মা, ভাই-বোন, সকলের থেকে আগে মহা নবীকে ভালো বাসতে হবে। সকল কিছুর আগে মহা নবী (সাঃ) এর জায়গা। তাহলেই তুমি মুমিনা নারী হতে পারবে। ইমানদার হতে পারবে।
নবী করিম রাসুল ﷺ (সাঃ) আমাদের জন্য যে দো’আ করতেন!
তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসতেন আর আমরা ওনাকে কতটা ভালোবাসি!!

আবদুল্লাহ ইব্‌নু হিশাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তখন ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ)-এর হাত ধরেছিলেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার জান ছাড়া আপনি আমার কাছে সব কিছু চেয়ে অধিক প্রিয়। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, যাঁর হাতে আমার প্রাণ ঐ সত্তার কসম! তোমার কাছে আমি যেন তোমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় হই। তখন ‘উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন, আল্লাহ্‌র কসম! এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে উমর! এখন (তুমি সত্যিকার ইমানদার হলে)। [৫৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬১৭০, ই. ৬১৭৮)

ফুটনোটঃ
[৫৯] রাসূল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ তার নিজের জীবন, সন্তান, পিতামাতা ও সকল মানুষের চেয়ে আমাকে অধিক না ভালবাসা পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না-হাদীস। (দ্রষ্টব্য সূরা আহযাব আয়াত নং-৬)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং [৬৬৩২]
হঠাৎ রাফা বললো -আমার একটা কথা রাখবে?
-রাখব। বলো?
-মা কে দেখতে ইচ্ছে করছে।
মায়ের কোলে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চাই।
শীতল দাড়িয়ে আছে একতলা বাড়িটির সামনে।
বাড়ির নাম ছায়া কুটির।
শীতলের শাশুড়ী এই বাড়িটিতেই থাকে।
শীতল ড্রয়িংরুমে বসে আছে। খুব সিমসাম বাড়ির ভেতর। সাধারণ মধ্যবিত্তের মতো বাড়িটি সাজানো।
কাজের মেয়ে জানালো- খালাম্মা আসছে নামাজ পড়ে।
শীতল আল্লাহর কাছে দোয়া করছে যেন, তাকে খালি হাতে না ফেরান। মৃত্যুসজ্জা গ্রস্থ এক মেয়ের কাছে তার মা কে নিয়ে আসতে পারবে কি শীতল?

.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের দুটি নাম (আরবি,বাংলা)
২৯. ﺍﻟْﻌَﺪْﻝُ আল-’আদল্ নিখুঁত
৩০. ﺍﻟﻠَّﻄِﻴﻒُ আল-লাতীফ অমায়িক❤
চলবে……….

#লালগোলাপ?
Writer-Moon Hossain
Part-24
মায়ের মুখ-খানি দেখে মনে করার চেষ্টা করছে রাফা।
মায়ের কোন সৃতি মনে পড়ছেনা তার।
কোন ফটোও ছিলো না বাড়িতে।
-কেমন লাগছে তোমার?
-বলতে পাচ্ছিনা।
-আমাকে মনে আছে?
-না।
-আমাকে তোমার মনে থাকার কথা নয়। আমি বোকার মতো প্রশ্ন করেছি।
-আপনিই আমার মা?
-হ্যাঁ মা, আমিই তোমার মা।
আমাকে চেনো না তুমি। না চেনার কথা। তোমার জন্মের পর পর-ই আমি ছিলাম না।
-আমাকে একটু কোলে নেবেন?
-এসো মা।
রাফা তার মায়ের কোলে মাথা রেখেছে। মা তার মেয়েকে পরম স্নেহে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।
শীতলের শাশুড়ীর বয়স বোঝা যাচ্ছেনা। মাথার চুল গুলো ঘন কালো।
বয়সের ছাপ পড়েনি চোখে মুখে। কন্ঠস্বর ভাঙেনি। এখনো মিষ্টি শোনায়। গাঁয়ের চামরায় ভাজ পড়েনি। রাজের মতো এতো বড় ছেলে আছে সেটা কেউ বিশ্বাস করবে না।
এখন যেমন সুন্দরী মনে হচ্ছে, না জানি তরুণী থাকাকালীন কতটা সুন্দরী ছিলেন তিনি।
হাসি হাসিমুখ ঠিক রাফার মতো। রাফা ওর মায়ের রুপ পেয়েছে খানিকটা। তবে রাফিয়া পায়নি। সে কালো। কিন্তু যে কোন সুন্দরীকেও হার মানাবে রাফিয়ার সৌন্দর্যে।
ক্যাবিনের জানালা দিয়ে পশ্চিম আকাশের সূর্যে কিরণ রাফার মুখে এসে পড়েছে।
-মা গো আমাকে মাফ করে দিও পারলে। আমি তোমাদের চোখে দোষী। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছেও দোষী।
রাফা কোন কথা বলছেনা।
মা বলল- জানো মা, আমি তোমাদের স্কুলে মাঝে মাঝে যেতাম। তোমাদের লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম।
তোমাকে, তোমার ভাইয়া, তোমার আপা সবাই কে দেখতাম লুকিয়ে থেকে।
কত যে কাছে যেতে ইচ্ছে হয়েছে। চুমু খেতে মন চেয়েছে। আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে মন চেয়েছে।
রাফা শুধু তার মা কে দেখছে। এতো অপরুপ কেন তার মা?
এতো মায়া ভরা কথা কিভাবে বলছেন তিনি?
-আপনি অনেক ভালো।
-সব মায়েরাই ভালো হয় মা।
-আপনাকে একবার মা বলে ডাকব?
-আমি তো তোমার মা।একটা মেয়ের জীবন সার্থক হয় মা ডাক শোনার মধ্যে।
-মা! মা! মা!
রাফা ক্যাবিনেই নামাজ পড়ে এখন। ভাই আর ভাবীর ফুটফুটে একটা শিশু দেখার আফসোস করলো রাফা।
শীতলের শশুর ক্যাবিনে ঢোকার সময় শীতলের শাশুড়ীকে দেখতে পেলো।
আপাদমস্তক ঢাকা ছিলো তবুও চিনতে অসুবিধা হলো না।
তিনি স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলল-কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
-আলহামদুলিল্লাহ।
ব্যাস এইটুকুই কথা হলো তাদের মধ্যে দীর্ঘ বছর।
রাফা শুক্রবারে মারা যাওয়ার আগে জলপাইয়ের তেল দিয়ে গরম ফেনা তোলা ভাত খেতে চেয়েছিলো তার মায়ের হাতে। খাওয়ার এক ঘন্টা পরেই সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলে।
-বাবা আপনি শক্ত হোন।
বাবা পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছে লুকানোর চেষ্টা করছে।
-বাবা অনেক কেঁদেছেন।
ধৈর্য ধরতে হবে আপনাকে।
আল্লাহ তায়ালা কি বলেছেন জানেন?
আবূ মূসা (রাঃ) আনহু হতে বর্ণিত-:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়
আল্লাহ ফিরেশ্তাদের কে বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ নিয়েছ?’ তাঁরা বলেন, ‘হ্যা।’
অতঃপর আল্লাহ বলেন, তোমরা তার অন্তরের ফল কেড়ে নিয়েছ? ‘ তাঁরা বলেন, ‘হ্যা।’

তারপর তিনি বলেন, ‘আমার বান্দা কী বলেছে? ‘ তাঁরা উওরে বলেন, ‘সে তোমার প্রশংসা করেছে এবং “ইন্না লিল্লা-হি অইন্না ইলাইহি রা-জীঊন” পড়েছে।’

আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘ তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি গূহ নির্মাণ কর এবং তার নাম রাখ প্রসংশা-গূহ।’
রিয়াদুস স্বালেহীন ৯২৭। (তিরমিযী, হাসান) তিরমিযী ১০২১, আহমাদ ১৯২২৩)
শীতলের শশুর বলল- ইন্না-লিল্লা-হি অইন্না ইলাইহি রা-জীঊন !!
রাফা মারা গেলো এক শুক্রবারে। পরের শুক্রবার
জুম্মার দিনেই শীতলের শশুরও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো। মেয়ের মতো তিনিও জলপাইয়ের তেল দিয়ে ভাত খেতে চেয়েছিলেন স্ত্রীর হাতে।শীতলের শাশুড়ীর বাড়িতে শীতল তার শশুরকে নিয়ে গিয়েছিলো।সেখানেই চুপচাপ দুই প্লেট ভাত খেয়েছিলেন জলপাইয়ের তেল দিয়ে।
সেখান থেকে আসার পর নিজের কামরায় ইজিচেয়ারে বসলেন বিকেল থেকেই।
ইজিচেয়ারে বসে ঘুমুচ্ছিলো বরাবরের মতোই।
রাফিয়া মনে করেছিলো বাবা ঘুমুচ্ছে। ভোরে ফজরের নামাজের জন্য ডাকার সময় বুঝতে পারলো তিনি নেই। তার বাবা আর নিশ্বাস নিচ্ছে না।
মাঝরাতে শীতলের ঘুম ভেঙে গেলো। রাফিয়ার ডুকরে ডুকরে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
শীতল হাত দিয়ে অনুভব করলো তার ভেতরের অস্তিত্বকে। রাজ ঠিক বলেছিলো, বাবুটা খুব দুষ্টু আর শক্তিশালি হবে। ঠিক তার বাবার মতো।
পেটে থেকেই যা করছে, না জানি দুনিয়াতে এসে কি করে। কি কান্ড ঘটাবে সে।
বেশকিছু দিন ধরেই চাঁচি মা এবং শাকিলা বিদেশ থেকে ফিরেছে।
শাকিলা রাফা আর তার চাচার মৃত্যুতে খুব বেশি-ই শোক প্রকাশ করলো।
চাঁচিও তার ব্যাতিক্রম হলো না।
সকালে শীতল নাশতা দিচ্ছে টেবিলে। আজকাল একটুতেই সে হাঁপিয়ে পরে।
-ইশশ,এটা কি জুস হলো?
কমলা কি কম পড়েছিলো?
-কেন?
-এটা কে জুস বলা যায়?
-ভোরে জুস আপনার ভালো লেগেছিলো। কিছুটা জুস বাড়তি ছিলো। সেটাই এখন খেলেন।
শাকিলা চুপ হয়ে গেলো।
-কাকে কি বলছিস?
ও কি কখনো জুস বানিয়েছে নাকি? সারাজীবন তো কমলা আস্তো সিচুয়েশনেই খেয়েছে।
-জ্বি। আস্তো কমলায় খেয়েছি। গ্রামের মেয়ে আমরা। আমাদের শহরের মতো ফ্যাসিলিটি নেই গ্রামে।
চাঁচি সবজি স্যুপ মুখে দিয়ে বলল-তুমি তো রাজরানি হয়ে আছো।
একাই সবকিছু ভোগ দখলে রেখেছো।
-জ্বি! মানে।
-মানে সোজা। হাসব্যান্ড কোমায় মেডিক্যালে আছে, শশুর নেই, শাশুড়ী থেকেও নেই, ছোট ননদটাও নেই, বড় ননদ থাকা না থাকা একই কথা। তুমি দিব্যি আছো রাণীর হালে। রাজত্ব করছো পুরো সমপত্তি দখলে নিয়ে।
-কি? তাকিয়ে আছো কেন?
ভুল কিছু বলেছি?
ফোনের রিংটোন বাজছে।
শীতলের মা কল করেছে৷
বেশ কিছুক্ষণ মায়ের সাথে কথা বলে মনটা হালকা হয়ে গেলো।
দুপুরের কড়া রোদ রাজের মুখে পড়েছে। রাজ আধঘুমন্ত সিচুয়েশনে সাইকোলজিস্টের কাছে রয়েছে। মানসিক চূড়ান্ত চিকিৎসা হচ্ছে তার।
-নাম বলুন?
-মোঃ আব্দুস সাত্তার।
-বাহ! ইসলামিক অর্থ গোপনকারী।
-ইয়েস।
-কে রেখেছিলো?
-মা।
-সবাই কি বলে ডাকে?
-রাজ।
-রাজ অর্থ লুকায়িত রাখা।
আপনিও তো নিজের কষ্ট গুলো লুকিয়ে রেখেছেন।
-ইয়েস।
-ডাক নাম কে রেখেছিলো?
-বাবা।
-মায়ের নাম রাখা নামে কেন সবাই ডাকেনা?
-আমি ডাকতে নিষেধ করেছি।
-হোয়াই?
মায়ের উপর কোন রাগ পুষে রেখেছেন?
-মেবি
-সেটা কাউকে বলতে পারেন নি?
-নো।
-আপনার মা কেন চলে গিয়েছিলেন আপনাদের ছেড়ে?
-আই ডোন্ট নো।
-ইউ নো দ্যাট।
-নো।
-আপনার মা-কে খুব ভালোবাসতেন আপনি?
-ইয়েস।
-সস সময় মায়ের কাছে থাকতে চাইতেন তাইনা?
-ইয়েস।
-মা ইগনোর করতো আপনাকে?
-মেবি।
-মা তার বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে মেতে থাকতেন?
-ইয়েস।
-কখনো বাসায় তাদের ইনভাইট করে নিয়ে আসতেন?
-ইয়েস।
-ছেলে বন্ধুরাও আসতো ইনভাইট পেয়ে।
-মেবি।
-একজন বিশেষ বন্ধুও ছিলো নিশ্চই?
-মেবি।
-তিনি ইনভাইট ছাড়াও আসতো। যখন আপনার বাবা বাসায় না থাকতেন বিশেষ করে।
-ইয়েস। চকলেট দিয়ে খেলতে পাঠাতো দাড়োয়ানের সাথে।
-তিনি আসার সংবাদটা যেন না দেওয়া হয় বাবা কে সেজন্য প্রচুর চকলেট দিতেন তাইনা?
-হতে পারে।
-তিনি থাকাকালীন দারোয়ান আপনাকে বাসার ভেতরে ঢুকতে দিতেন না। এমনকি মায়ের কাছেও যেতে দিতেন না?
-মেবি।
-আপনার ছোট মন ছটফট করতে থাকতো উনাদের গল্পগুজব শুনতে?
-হতেপারে।
-সেই সাথে কিছু প্রশ্নও ছিলো?
-ইয়েস।
-যেগুলোর আনসার খুঁজতেন আপনি?
-ইয়েস।
-চকলেট খাওয়ার পরেও আপনি বলে দিতেন বাবাকে। যেদিন বলে দিতেন সেদিন খুব ঝগড়া হতো বাবা-মায়ের?
-ইয়েস।
-আপনার মনে দুটো কথায় ঘুরছিলো। এক হলো মায়ের বন্ধু আর মা কি কথা বলে যেখানে বাসার ভেতরে যাওয়া যায়না। দুই হলো বাবা কেন এই বিষয় পছন্দ করতেন না এবং মায়ের সাথে ঝগড়া করতো। ঝগড়াঝাটির কথা গুলো আপনি মুখস্থ করে রাখতেন। এবং সব সময় এগুলো বুঝতে চাইতেন বাট কিছুতেই বুঝতে পারতেন না৷
-ইয়েস।
-কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন সেদিন, যেদিন মা কে বাড়ি থেকে ঐ বন্ধু লোকটি নিয়ে যান।
এবং আর কখনো আসবেন না বলে আপনাকে আরও কিছু চকলেট দেওয়া হয়েছিলো।
-হু।
– আপনার ভেতর আপনার প্রশ্নগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। চারপাশে কি হচ্ছে তা কিছুই বুঝতে পাচ্ছিলেন না৷
একদম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন প্রিয় মা চলে যাওয়ায়। আপনার উওর গুলো আপনার মা তার চলে যাওয়া দিয়ে বুঝিয়ে ছিলেন। বাট আপনি বুঝতে পাচ্ছিলেন না বয়সের কারণে।
বয়স হতে থাকে, আপনি উত্তর পেয়ে বুঝতে থাকেন, এবং মায়ের প্রতি প্রচন্ড আক্রোশ জমতে থাকে।
প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই আপনাকে জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিতো যদিও তারা সবকিছু জানে।
তখন আপনি সহ্য করতে পারতেন না, সবাইকে আঘাত করতে থাকতেন।
একদম স্তব্ধ হয়ে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি শেষ করলেন সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়ে। ততদিনে আপনার উপর মেন্টাল ওয়ার্ডটা বসে গিয়েছিলো। ছোট থেকেই বেশ অনেকবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন আপনি। কয়েকবার চেষ্টাও করেছিলেন।সেই সাথে সবাইকে মাডার করারও প্রবণতা দেখা দিয়েছিলো আপনার মধ্যে। আপনাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো এজন্যই৷ আপনার বাবা বিত্তবান লোক। আপনাকে সব রকম চিকিৎসা করা হয়। বিদেশেও বছর-খানেক ছিলেন। পাবনা মেন্টাল হসপিটালেও ছিলেন। ডক্টর সার্টিফিকেট দিয়ে আপনাকে চূড়ান্ত মেন্টাল হিসেবে সাব্যস্ত করেন৷
প্রিয় মা এবং মায়ের বন্ধুর উপর তীব্র ক্ষোভে আপনি দিশেহারা হয়ে গেলেন। ছোট-খাট ব্রেন স্টোকও হয়েছিলো আপনার।বয়স অনুযায়ী আপনার সেন্স অফ হিউমার ৫ বছরের বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়। আপনি বয়স যত বাড়ে ততই আপনার মানসিক বয়স কমতে থাকে।
মানুষ যখন তীব্র আঘাত পায় তখন ভেঙে পড়ে এবং পুনরায় তীব্র আঘাত পেলে নিজেকে কঠোর ভাবে গড়ে তোলে। এর উদাহরণ এখন আপনি নিজেই।
-ইউ আর রাইট ডক্টর।
-রিয়েলিটি মেনে নিতে পারেন নি আগে। এখন রিয়েলিটি মেনে নিয়েছেন?
-একদম।
-আপনি কি আপনার সব প্রশ্ন খুঁজে পেয়েছেন?
-ইয়েস ডক্টর।
-এখন আপনি কেমন আছেন?
-আই এম অলরাইট। আই এম পারফেক্টলি ফাইন ডক্টর।
রাজ নিজের পায়ে হেঁটে ঐ দিন বাসায় আসে। শীতল সহ সবাই অবাক হয়ে যায়।
চাঁচি শাকিলা সবাই রাজের কেয়ার নেওয়ার জন্য বিজি হয়ে পড়লো।
রাফিয়া ভাইয়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে।
ময়মনসিংহের সকল আত্মীয় স্বজনরা ভীড় জমায় রাজদের বাড়িতে। রাজ সবাই সাথেই স্বাভাবিক বিহেভ করে।
দুই দিনের মধ্যেই সে বাবার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করে। হাসানের কাছ থেকে অফিস বুঝে নেয়। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে সকল দেশ-বিদেশের ব্যাবসা- বানিজ্য বুঝে নেন। সেই সাথে ম্যানেজার সহ অনেক অফিসারদের ছাঁটাই করেন।
রাজ পুরোনো নিয়ম কানুন ভেঙে নিজের নিয়ম তৈরী করে। 1% ডিসিপ্লিন ওয়েস্ট করা সে টলারেট করেনা।
সবকিছুর মধ্যে শীতল চুপিচপি রাজকে দেখে।
রাজের সামনে আসতে ইতস্তত লাগে।
রাজ শীতলকে নিজের ইচ্ছেতে কখন কাছে ডাকবে, সেই অপেক্ষায় আছে।
শীতলের এই বাড়িতে যেন কোন অস্তিত্বই নেই৷ দুদিন আগে পর্যন্ত এই বাড়িতে, এমনকি সবকিছুর উপর শীতলের আধিপত্য ছিলো।
রাজ ল্যাপটপে কাজ করছিলো। চোখে চশমা থাকায় খুব ম্যাচিউর লাগছিলো।
শীতল ঔষধ বরাবরের মতো চুপিচুপি দিয়ে চলে যাচ্ছিলো রাজ পেছন থেকে।
হঠাৎ-ই শীতল চমকে উঠলো। রাজ সামনে দাড়ানো।
শীতল চোখ বন্ধ করে ফেললো। ভীষণ লজ্জা করছে তার।
-চোখ খুলো শীতল। আমাকে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার স্বামী।
রাজ হাতে ইশারা দিয়ে কাছে আসতে বলল।
মূহুর্তেই শীতলের হৃদয় শহরে তোলপাড় হয়ে গেলো। এই অনুভূতি শুধু অনুভব করা যায়। শুধু অনুভব।
-তুমি তো শীতল!
-জ্বি।
-আমাকে সুস্থ্য করার জন্য তোমাকে আমার ওয়াইফ বানিয়ে এই বাড়িতে আনা হয়েছিলো।
-জ্বি।
-তোমাকে মেন্টালের সাথে ট্রিকস করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। তুমি বাঙালি নারী তাই মেনে নিয়েছিলে। অনেক কষ্ট সহ্য করেছো। আমাকে এন্ড আমার ফ্যামিলি রিলেটিভ দের ক্ষমা করে দিও।
-ক্ষমা করার মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা। আমার কোন অভিযোগ নেই। দায়িত্ব পালন করেছি।
-আমার পাগলামি, ছেলেমানুষী ইত্যাদি ইত্যাদি সহ্য করতে হয়েছে তোমাকে।
-আমি এসবে বিরক্ত হইনি আমার আল্লাহ তায়ালা জানেন।
-তুমি আসলেই খুব গুড গার্ল। ধার্মিক নারী।
তোমার দায়িত্ব শেষ হয়েছে। আমি সুস্থ্য।
-আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আপনি সুস্থ্য।
একটা পেপার শীতলের হাতে দিয়ে রাজ বলল- সাইন করে দিও। তোমার জন্য আলাদা কিছু প্রোপার্টি রেখেছি।
তোমার কোন অসুবিধা হবেনা। তুমি বাকি লাইফ সুখে থাকবে। নতুন করে লাইফ শুরু করবে।
-আলহামদুলিল্লাহ। আপনি সুস্থ হয়েছেন। আমার আর কোন চাওয়া-পাওয়া নেই।
আমি এখন থেকে নতুন জীবন শুরু করব।
-শুনে হেপি হলাম।
সাইন করার আগে দেখে নাও পেপারটা।
শীতলের সব দুঃখ যেন সমাপ্ত হয়েছে। আল্লাহর কাছে সে শুকরিয়া জানালো।
ইংরেজিতে ডিভোর্স লেখা পেপারে। রাজের নাম আর নিজের নামও দেখতে পেলো সে। এটা কি সপ্ন?
-লিসেন। তুমি তোমার নতুন জীবন শুরু করো। তোমার অধিকার আছে কষ্টের পর সুখে থাকার।
আমার বেবির জন্ম দিয়ে তুমি চলে যাবে। বাকিটা জীবন আমি আমার বেবিকে নিয়ে কাটিয়ে দেব।
-মানে?
রাজের শীতলের পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলল-
আমার বেবিকে আমার কোলে তুলে দেওয়া পর্যন্ত এই বাড়িতে থাকবে। ওকে আমার হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে তোমার সকল দায়িত্ব এবং আমাদের সম্পর্ক শেষ হবে।
তারপর আমরা দুজন দুজনের আলাদা রাস্তায় চলে যাব।
-জ্বি! আমি কিছু বুঝতে পাচ্ছিনা।
-তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই বিকোজ আমি একাই একশত। নাউ লিভ মি এলন ফরএভার।আই হোপ ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড!?

.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯ টি নামের দুটি নাম আরবি,বাংলা)
❤৩১. ﺍﻟْﺨَﺒِﻴﺮُ আল-খবীর সম্যক অবগত❤
❤৩২. ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ আল-হ়ালীম ধৈর্যবান, প্রশ্রয়দাতা❤

চলবে…….