লালগোলাপ? Part-29

0
2830

লালগোলাপ?
Part-29
Writer-Moon Hossain

অফিসের মেয়েটি শীতলকে নিয়ে লিফটে ঢুকলো। রাজের কেবিন থেকে বেরিয়ে একটা কথাও বলেনি সে শীতলের সাথে।
শীতল শুধু ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে।
শীতলকে গাড়িতে উঠিয়ে শেষ মূহুর্তে বলল- ম্যাডাম আপনি স্যার এর স্ত্রী তাইনা?
শীতল মাথা নাড়ালো।
-আপনার কথা শুনেছি।
স্যার যখন মানসিক রোগী ছিলো তখন গ্রামের এক শিক্ষকের মেয়ের সাথে বিয়ে হয়েছিলো। মেয়েটি পরহেজগার।
সেই মেয়েটি আপনি!
শীতলের এসব কথা শুনতে ভালো লাগছেনা।
মাথা ধরেছে তার।
মেয়েটি বলল- আপনাকে কি যে বলব। খানিকটা আমার কারণেও এমন ঘটনা ঘটলো।
-না না। খামকা আপনার কারণে কেন!
-আমি যদি আপনাকে কেবিনে যেতে না দিতাম।
তবে আপনি বাসায় ফিরে যেতেন। অল্প একটু কষ্ট পেতেন। এখনকার মতো এতোটা কষ্ট পেতে হতো না।
শীতল এসে একাই খেয়ে নিলো।
তার সন্তানের কথা ভাবতে হবে এখন থেকে।
না খেয়ে থাকা চলবেনা।
আজ থেকে শীতলের পৃথিবীতে একমাত্র সন্তান হলো সব।
রাজকে সন্তান দেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। এই সন্তানের উপর কোন অধিকার নেই ওর।
শীতল রাতে খেতে বসেছে।
তখনই রাজ কামরায় ঢুকলো।
রাজকে যেন দেখতেই পেলো না শীতল।
সে নিজের মতো খাচ্ছে।
রাজ কিছুক্ষণ শীতলের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
-আসসালামু আলাইকুম!
শীতল খাচ্ছে।
-কেমন আছো?
তোমার শরীর ভালো?
আমার বেবি কেমন আছে?
কথা বলছোনা কেন?
এলিস্ট সালামের উওর দাও?
শীতল খাওয়া বন্ধ করে রাজের দিকে তাকিয়ে বলল- খাওয়ার সময় সালামের উওর দিতে নেই।
খাওয়ার সময় বিরক্ত করবেন না।
আপনার সন্তান সন্তান করছেন কেন?
ও আমার সন্তান। ও যেন ভালো থাকে তাই খাচ্ছি।
রাজ একটু হাসলো।
একটু পর রাফিয়া খাবারের প্লেট নিতে এলো।
রাজ ইজিচেয়ারে বসে ছিলো।
-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া! আসসালামু আলাইকুম ভাবি!
রাজ আর শীতল সালামের উওর দিলো।
-বাহ! ভাবি। তুমি তো দেখছি সব খাবার শেষ করে ফেলেছো। গুড।
-মোটেও না।ও খেয়েছে।
আমার বাবু সে একাই সব খেয়েছে।
-ওআচ্ছা। সে তো জন্মের আগেই এতো খাচ্ছে। জানিনা জন্মালে কত খাবে!
রাজ রাফিয়াকে কাছে ডাকলো।
রাফিয়ার গালে হাত দিয়ে বলল- কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ!
তুমি কেমন আছো ভাইয়া?
রাজ শীতলের দিকে তাকালো।
-নিজেও জানিনা বোন।
একটা কথা আছে তোমার সাথে।
-বলো না।
-তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?
-আল্লাহর দয়ায় ভালো চলছে। ফাস্ট ক্লাস।
-তুমি অবশ্যই ভালো নাম্বার পাবে।ইনশাআল্লাহ, আমিন।
-আমিন। ভাইয়া আমি যেতে পারি? কথা কি শেষ?
রাজ দাড়িয়ে বলল- কথা শেষ হয়নি।
তোমার গার্ডিয়ান হিসেবে তোমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আমাকেই করতে হবে।
তোমাকে সুপাত্রের হাতে তুলে দিয়ে ভাইয়ের দায়িত্ব পূরণ করতে চাই।
আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলেটা মালয়েশিয়ার বিশিষ্ট বিজনেস ম্যান। ধার্মিক।
আশা করি তুমি অমত করবেনা। কাল তোমার সাথে দেখা করতে আসবে।
তোমার পছন্দ হলে কাল-পরশু ডেট ফিক্সড করে শুভ কাজ সেরে ফেলব।
রাফিয়ার হাত থেকে প্লেট পড়ে গেলো। ঝনঝন শব্দ হলো।
রাজ শীতলের দিকে তাকালো।
-শাকিলা নামের অর্থ কি জানো?
– শাকিলা ইসলামিক নাম। যার অর্থ সুন্দরী।
-জানো তো, এখন সবাই সুন্দরের পূজারী।
রাজ কে তুমি ভুলে যাও।
কিছু এমাউন্ট নিয়ে চলে যাও এখুনি।
আমিও তোমাকে আলাদা কিছু এমাউন্ট দেব।
এতেই তোমার ভালো হবে।
-আপা! হতে পারেন আপনি শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। কিন্তু আপনি যে ধারণা পুষে রেখেছেন তা ভুল।
মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে সুন্দর অসুন্দর বলে কিছু নেই। উনার কাছে সুন্দর মন হলো সবচেয়ে দামী।
সৌন্দর্য তো দুদিন পর চলে যাবে। কিন্তু মনের সৌন্দর্যতা কখনো যাবে না।
আপনি যে সৌন্দর্যের বরাই করছেন তা কয়েক বছরের মাত্র। কিন্তু আমার মৃত্যু পর্যন্ত আমার মনের আর ইসলামের সৌন্দর্য থাকবে।
-এসব ফালতু লেকচার বন্ধ করো। এসব কথা ছাড়া তোমার তো কোন ক্ষমতাই নেই।
রাজ তোমাকে জাস্ট ছূরে ফেলে দিয়েছে। নেহাত রাজের সন্তান তোমার গর্ভে আছে তাই বের করে দিচ্ছে না।
এই বাড়িতে আয়েশে থাকতে পাচ্ছো।
ডেলিভারির পর তোমার কি সিচুয়েশন হবে ভেবেছো? তখন তোমাকে তালাক দেওয়া হবে। এরপর আমি রাজকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করবো।
-আপনার লজ্জা করেনা। অন্যের স্বামীর দিকে নজর দিতে? আমি এখনো উনার স্ত্রী। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝখানে আপনি কথা বলার কে? বের হলে আপনি যাবেন। মেহমান মেহমানের মতো থাকবেন, বাড়ির বউ হবার লোভ করবেন না। বিবাহিত ছেলের সাথে কেন সেঁটে থাকেন?
মিনিমাম লজ্জা বোধ থাকলে আমার স্বামীর আশেপাশেও থাকবেন না আপনি।
-হাউ ডেয়ার ইউ? হু দ্যা হেল আর ইউ?
আমার লাগছে! হাত ছাড়!
শাকিলা শীতলকে থাপ্পড় দিতে হাত বাড়াতেই শীতল হাত ধরে ফেললো।
– ননদিনী, এটা আপনার মতো বিদেশে থাকা মেয়ের তুলতুলে নরম হাত নয়, এটা গ্রামের সংগ্রাম করা মেয়ের শক্ত হাত।
ইচ্ছে করলে হাত ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিতে পারি।
এজন্য কারও কাছো আমাকে জবাবদিহি করতে হবেনা।
আপনার মা আপনাকে জন্মের পর থেকে সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা দিতে পারেনি।
আত্মীয় হিসেবে আমার কর্তব্য আপনাকে সঠিক শিক্ষা দেওয়া। এরজন্য বেত্রাঘাত করে চাপকে পিঠের ছাল আমি তুলে ফেলতে পারি।
আর কখনো এমন পোশাক পরিধান করবেন না। কোন পুরুষদের সামনে যাবেন না। সর্বদা নিজেকে ঢেকে রাখবেন। নিজের সম্মানের হেফাজত করবেন। ইমানদার নারী হওয়ার চেষ্টা করুন। [24,31 وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। And say to the believing women that they should lower their gaze and guard their modesty; that they should not display their beauty and ornaments except what (must ordinarily) appear thereof; that they should draw their veils over their bosoms and not display their beauty except to their husbands, their fathers, their husband’s fathers, their sons, their husbands’ sons, their brothers or their brothers’ sons, or their sisters’ sons, or their women, or the slaves whom their right hands possess, or male servants free of physical needs, or small children who have no sense of the shame of sex; and that they should not strike their feet in order to draw attention to their hidden ornaments. And O ye Believers! turn ye all together towards Allah, that ye may attain Bliss]
.
রাজের সাথে শীতল এখন তেমন কথা বলেনা।
রাজ কিছু জিজ্ঞেস করলে হ্যাঁ, না উওর দেয়৷
তবে কি শীতল এতো সহজে হার মেনে নিলো?
না শীতল হার মানেনি।
শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত শীতল আল্লাহর উপর ভরসা রেখেছে। সে অপেক্ষা করছে আল্লাহর রহমতের জন্য।
আল্লাহর এতো ক্ষমতা।
নিশ্চয়ই তিনিই ভালো বুঝবেন কখন শীতলের পরিক্ষা শেষ হবে।
আজ পাত্র আসবে। রাজ অফিস যায়নি। বাড়িতে একটা উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
হবু জামাতা বলে কথা। গরু জবাই দেওয়া হয়েছে, এখন রান্না চলছে। কারিগররা মিষ্টি বানাচ্ছে। নেত্রকোনা থেকে বালিশ মিষ্টি আনানো হয়েছে, মুক্তাগাছার মন্ডা, অমৃতি, সেই সাথে জামালপুরের ছানার পোলাও এর বিশেষ অর্ডার আছে। হবু জামাই মিষ্টি খেতে পছন্দ করে খুব।
১১টার দিকে রাজ সব তদারকি শেষে ক্লান্ত হয়ে শুতে এসেছে।
শীতল বেডে শুয়ে আছে।
রাজ পাশে শুয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে রাজের ঘুম ভাঙলো।
বাহিরের আলো শীতলের মুখে পরায় আশ্চর্য রকমের সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। শীতলের নাকের ডগায় ঘাম চিকচিক করছে।
পুরো গায়ে হালকা ঘামে চিকচিক করছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়েছে।
ঠিক মতো ঘুম হয়না শীতলের তাই চোখের কোণে কালি জমেছে। চোখ গুলোতে যেন মেটা করে কাজল মাখা হয়েছে। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। কেমন একটা নেশা নেশা লাগছে রাজের।
শীতলের কপালে একটা চুমু দিলো।গালে একটু গাল ঘষে দিলো। ঠোঁট গুলো সব সময় নড়ে শীতলের। শীতলের ঠোঁটে হালকা আঙুল দিয়ে আঙুল বুলিয়ে দিলো রাজ।
শীতল এখন গভীর ঘুমে আছে। পেট ব্যথা করছিলো বলে ডক্টরের পরামর্শে হালকা ডোজের ঘুমের ঔষধ খেয়েছে। ডক্টর বলেছেন এমন সময় ব্যথা করবেই। তাই বলে ঘুমের ঔষধ খেতে হবেনা মিসেস রাজ।
-না। তবুও দিন। মাঝে মাঝে খাব। আমার মন আর শরীর এতো খারাপ হয়ে যায় যে কাউকে ডাকার সাধ্য আমার হয়না।
শীতল ঘুমুন্ত অবস্থায় রাজকে জরিয়ে ধরলো।
রাজের উপর পা তুলে দিলো।
রাজের গলায় ঘুমু ঘুমু ভাবে হালকা মুখ ঘষে বলতে লাগলো- না, না, আমি যাব না। আপনাকে ছেড়ে যাব না, আল্লাহ তায়ালা কোথায় তুমি!
রাজের মনটা অত্যন্ত খারাপ হলো।
শীতলকে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।
পাগলের মতো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো শীতলকে।
ফলে শীতলের পেটে চাপ লাগায় শীতল আহ! করে উঠলো।
-উফফ, সরি, সরি, সরি। বুঝিনি। ব্যথা পেয়েছো তাইনা!
শীতল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পেটে হাত রাখলো। ঘুমিয়ে থাকার পরও ব্যথা অনুভব করেছে সে৷ চোখের কোণে পানি জমেছে।
হালকা করে শীতলকে জরিয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো রাজ।
-পেটে মুখ রেখে হাত বুলিয়ে বলল- আমি আদর করে দিচ্ছি। দেখবে সব ব্যথা চলে যাবে।
দেখেছো আমার কাছে থাকলে কোন না কোন ভাবে ব্যথা পেয়ে যাও তুমি। তোমাকে দুঃখ দিতে চাইনা। আমি তোমার যোগ্য না।
তুমি কেন এতো অপমান সহ্য করছো? চলে যাও প্লিজজ।
আমি কখনো তোমার সাথে থাকতে পারবো না৷
কোন মেয়েকে সহ্য হয়না আমার। তাই তো তোমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি, রাফিয়াকেও দূরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। তুমি চলে যাওয়ার পর শাকিলাকেও বিদেশে পাঠিয়ে দেব।
কোন মেয়ের জায়গা নেই আমার আমার জীবনে।
অফিসের সব মেয়ে স্টাফদের এই মাস থেকেই ছাঁটায় করব। আমার আশেপাশেও কোন মেয়ে দেখতে চাইনা আমি।
আমার কাছে থাকলে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবেনা। চলে যাও, চলে যাও, চলে যাও।
রাজ এগুলো বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো।
রাজ শীতলকে বুকে জরিয়ে নিলো।
শীতলের ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছিলো কেউ তাকে জরিয়ে ধরেছে। গায়ের গন্ধ চেনা চেনা লাগছে।
নিশ্বাস পড়ছিলো তার মুখের উপর। চোখ মেলে শীতল কাউকে দেখলো না।
ঐতো রাজ বসে বসে কোরআন তেলওয়াত করছে।
ঘুম থেকে উঠে শীতলের কোরআন তেলওয়াত শুনতে ভালো লাগে। রাজ এটা জানে।
-আপনাকে সুন্দর লাগছে আপা।
-কালো মেয়ের আবার সুন্দর!
-কালো মানেই সুন্দর সেটা কে বলেছে?
-অনেকেই বলেছে। কয়জনের নাম বলব? চাঁচিমা তো আমার সাথে কথায় বলেন না। যদি উনার গায়ে কালো রং লেগে যায় তাই।
-আল্লাহ কি বলেছেন জানেন?
-না।
তবে আমাকে কেউ পছন্দ করবেনা৷ দুনিয়াতে এমন কুৎসিত মেয়েকে কেউ পছন্দ করেনা।
– আমি বললামঃ ” আমি দেখতে খুবই কুৎসিত ” আল্লাহ বলেনঃ “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি,সুন্দরতম আকৃতিতে ” [কুরআন–৯৫:৪]
অমন ভাবে বলবেন না। আল্লাহর দুনিয়ায় সবাই সমান। কালো হলেও আপনি ফর্সা মেয়েদের চেয়েও সুন্দরী। তারচেয়ে বড় কথা আপনি এখন একজন মুসলিমা, ইসলামের সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলেন, চেষ্টা করেন। আপনি অনেক সুখী হবেন।

-তুমি অনেক সুন্দর করে কথা বলো ভাবি। শুনতেও ভালো লাগে। তোমার কথা শুনে অনুপ্রেরণা পেলাম। সবকিছু সহজ লাগে।
শীতল রাফিয়ার থুঁতনিতে হাত রাখলো, মাশাআল্লাহ! আপনার স্বামী আপনাকে খুব ভালোবাসবে। আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষিত করবেন নিশ্চয়ই।
রাফিয়া বোরখা পড়তে পড়তে বলল- আমার লজ্জা লাগছে সেই সাথে ভয়।
-আপনি সহজ ভাবে হবু জামাইয়ের সাথে কথা বলবেন।একটু লজ্জা তো লাগবেই। ভয়ের কিছু নেই। আপনাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে, ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী দেখাশোনার নিয়ম আছে। জীবন সঙ্গী বলে কথা। জীবন সঙ্গীর কারণেও মানুষ বেহেশতে যায়। আপনারা দু’জন একটু কথা বলে নিন নিজেদের মাঝে। পরে না কোন ঝামেলা হয়।
হাসান হবু জামাইকে আপ্যায়ন করছে। লুকিয়ে লুকিয়ে সে পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছবার চেষ্টা করছে। মুছবার পরেই আবার চোখ ভরে যাচ্ছে পানিতে। বুকে যেন একশত তীর কেউ বিধস্ত করেছে।
.
-আসসালামু আলাইকুম!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-বোরখা পড়া মেয়েদের চোখ জোড়া খুব সুন্দর মনে হয়।
অবশ্য আপনার চোখ দুটো বোরখা ছাড়াই সুন্দর লেগেছিলো সেদিন।
-জ্বি!
-আপনি কিছুই জানেনা। অবশ্য আপনার ভাইয়াকে বলতে নিষেধ করেছিলাম।
আপনি যখন এস.এস.সি এক্সাম দিতে মহাকালী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে গিয়েছিলেন তখন আপনার চোখ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ঐ সময় তুমি বোরখা পড়তে না। স্কুলের ড্রেস ছিলো তোমার গায়ে।
ঐ মূহুর্তে ঠিক করে ছিলাম। তোমাকে আমি বিয়ে করব।বিয়ের পর তোমাকে ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে নিজের হাতে গড়ে তুলব।অনেক দিন তোমাকে ফলো করি।তোমার সব খবরাখবর জোগাড় করি। হঠাৎ আমার বাবা অসুস্থ হয়ে যায়। তাই আমেরিকায় যেতে হয়। ফিরে এসে তোমার ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলাম। সব খুলে বললাম। আল্লাহর রহমতে তিনি রাজি হয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা আমার ইচ্ছে পূরণ করেছেন। আমি খুব খুশি যে আল্লাহ তোমাকে আমার করে দিচ্ছেন। মাফ করবে, তোমাকে তুমি বলছি। তুমি আমার অনেক ছোট তাই তোমাকে তুমি বলায় কিছু মনে করো না৷ লোকটা থেমে মিষ্টির প্লেট রাফিয়ার সামনে ধরলো।
-নাও মিষ্টি খাও। আমি কিন্তু খুব মিষ্টি খেতে পারি।
রাফিয়া হিজাবে হাত দিলো।
-আচ্ছা, আচ্ছা হিজাব খুলতে হবেনা। তুমি পরে খেও, আমি খাচ্ছি, তুমি বরং দেখ।
মুচকি হাসি দিয়ে ছেলেটা টুপ টুপ করে একের পর এক মিষ্টি, সন্দেশ, জিলিপি, মন্ডা, অমৃতি খাচ্ছে।
রাজ শীতলকে অবাক করে দিলো একদিন। বিশাল এক সারপ্রাইজ দিয়েছে শীতলকে।
হঠাৎ রাজ রুমে এসে ডেস্ক থেকে বোরখা, হিজাব বের করে শীতলকে পরাতে লাগলো।
-কি হয়েছে কি?
আমরা কোথাও যাব?
ডক্টরের সাথে দেখা করার ডেট নেই আজ৷
-হুশশ, কোন কথা নয়। একটা সারপ্রাইজ আছে।
কাদিরের সামনে শীতলকে দাঁড় করিয়ে দিলো রাজ।
-আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছো শীতল?
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
শীতল রাজের দিকে তাকালো।
রাজ বলল- খুশি হয়েছো তাইনা? কেমন সারপ্রাইজ দিলাম? আমাদের ডিভোর্স হওয়ার পর কাদির ভাইয়ের সাথে তোমাকে আমি নিজে দাড়িয়ে বিয়ে দেব। তোমাদের সংসার সাজিয়ে দেব আমি।অনেক সুখী হবে। কাদির ভাই তোমাকে খুব ভালোবাসে।
তোমাকে আদর-যত্নে রাখবে।
এবার খুশি তো?
শীতলের বুকে আজ কোটি কোটি তীর যেন বিধস্ত হলো।
তার গলা যেন কেউ চেপে ধরেছে। কথা বলতে পাচ্ছেনা।
রাজ হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।
আচমকা ঠাস করে রাজের গালে থাপ্পড় দিলো শীতল।
এক থাপ্পড়ে ক্ষান্ত হলো না শীতল, ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় দিতে লাগলো রাজকে।
.

❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের তিনটি নাম (আরবি,বাংলা)
৪৩. ﺍﻟﺮَّﻗِﻴﺐُ আর-রক্বীব সদা জাগ্রত,অতন্দ্র পর্যবেক্ষণকারী
৪৪. ﺍﻟْﻤُﺠِﻴﺐُ আল-মুজীব সাড়া দানকারী, উত্তরদাতা
৪৫. ﺍﻟْﻮَﺍﺳِﻊُ আল-ওয়াসি’ অসীম, সর্বত্র বিরাজমান❤
.
চলবে……..