শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৪

0
3130

?শুধু তোমায় ঘিরে?

#মেঘা আফরোজ……?
#পর্ব-৪……?

?

রাতে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠলো ফোনের রিংটন কানে বাজতেই একরাশ বিরক্ত নিয়ে নিজের কান চেপে ধরলাম। বার বার বেজে চলেছে উফফ ইচ্ছে করছে ফোনের ওপাশে যে আছে তাকে তুলে একটা আছার মারি। আমার এতো ভালো ঘুমটা নষ্ট করে দিলো। অবশেষে ঘুমু ঘুমু চোখে ফোনটা ধরলাম।
ওপাশ থেকে বলে উঠলো যাক বাবা ধরেছিস ফোনটা।
কন্ঠস্বরটা অচেনা নয় আমার এমনিতেই রাগ হচ্ছিলো এখন যেনো আরো দ্বীগুন বেড়ে গেলো রাগটা। রাগান্বিত কন্ঠে বললাম তিশা তুই!
হুমম আমি। কেমন আছিস জানেমান? ওই হারামি তুই আমাকে ফোন দিসোস কেন তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই রাখ ফোনটা। আরে আরে মেঘা রেগে যাচ্ছিস কেনো আমি কি করেছি। কি করিস নি তাই বল হারামি পেত্নি এমনিতে তো আমাকে একা রেখে উধাউ হয়েছিস তারউপর আমার এতো সাধের ঘুমটা নষ্ট করলি ইচ্ছে তো করছে তোকে গিলে খেতে।দাতে দাত চেপে বললাম।
তিশা জোরে হেসে উঠে বললো কাল তোর সামনে স্ব শরীরে হাজির হবো তখন আমাকে যা খুশি করিস কেমন। তোর আমার সামনে আসতে হবে না এতোদিন কোনো খোজ নেই এখন আসছে ঢং করতে।
মেঘা রাগ করিস না সোনা কাল এসে বলবো সব। ওই তুই ফোনটা রাখতো আমাকে যদি আবার ফোন দিস না তোকে আমি সত্যি গিলে খাবো দেখে নিস তুই। বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। ফোনটা বালিশের নিচে রেখে শুয়ে পড়লাম। আবারো ফোনটা বিকট আওয়াজে বেজে উঠলো রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে,,,তিশার বাচ্চা তোর খবর আছে এখন।

. ?

ফোনটা রিসিভ করেই,,,,,,,ওই হারামি কুত্তা বিলাই তোরে ফোন দিতে না করছি না আবারো দিসোস ক্যান।
স্টপ মেঘা কাকে কি বলছিস তুই? এইরে এ তো তিশা নয় কাকে কি বলছি আমি! ফোনটা সামনে এনে স্ক্রিনে ক্রাশ লিখে সেভ করা নাম্বার দেখতে পেলাম, জ্বিভ কেটে মনে মনে বলছি হায় আল্লাহ আমি তো ভেবেছিলাম তিশা ধুর কি না কি বলে ফেললাম। কিন্তু উনি এতো রাতে কেনো ফোন দিয়েছে আমাকে?
ভাইয়া আপনি! হ্যা আমি,ফোনটা ধরেই কি সব বলছিলি তুই? আসলে ভাইয়া আমি ভেবেছিলাম তিশা তাইতো ওসব। কারো ফোন রিসিভ করার আগে যে নাম্বারটা দেখে নিতে হয় সেটা তোর মাথায় নেই? ওহ থাকবেই বা কিভাবে ওই গোবর পোড়া মাথায় তো বুদ্ধি বলতে কিছুই নেই।
কি বললেন আপনি আমার মাথায় বুদ্ধি নেই?রেগে বললাম।
থাকলে কি ফোন ধরে কেউ পাগলোর প্রলাপ বকে। একশো বার বকবো হাজার বার বকবো আপনার কি তাতে। আর আপনি কেনো এতো রাতে কল দিয়েছেন আমাকে? এটা তো খুবই বুদ্ধিমানের কাজ মাঝ রাতে কোনো মেয়েকে ফোন দেওয়া তাইনা?
আমি তো অন্য কাউকে দেই নি আমি আমার………
কি হলো থেমে গেলেন কেনো কি আপনার হুমম??
কিছু না আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পর কেমন রাখছি।

উনি ফোনটা কেটে দিলো আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবছি তাসিন কি বলতে চেয়ে বললো না? হঠাৎ করে এতো রাতে ফোন কেনো দিলো,,,,,,উফ মেঘা তোর এখন এতো ভেবে কাজ নেই তোর মাথায়,এই মুহুর্তে ঘুম ঘুর ঘুর করে চলেছে। সব ভাবনা গুলো সাইডে রেখে হারিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।

. ?

ভার্সিটিতে পাশাপাশি বসে আছি আমি তিশা। আমি মুখ ফুলিয়ে বসে আছি আর তিশা বেচারি আমার মান ভাঙাতে ব্যাস্ত।
মেঘা জানু শোন না আমি তো তোর সাথে যোগাযোগ করতামি আমার ফোনটা খারাপ হয়ে যাওয়াতে সব সেভ নাম্বার গুলো কিভাবে যেনো ডিলিট হয়ে গিয়েছিলো তারজন্যই পারিনি। ও তাই বুঝি? আমিও তো ট্রাই করেছি বন্ধ ছিলো কেনো সিমটাও কি খেয়ে ফেলেছিস? ওখানে নেট খুবই কম পায় তাই হয়তো বন্ধ পেয়েছিস। কাল রাতে কোথায় পেলি আমার নাম্বার ভুতে দিয়ে এসেছিলো? ভুতে কেনো দিতে যাবে আম্মুর ফোনে যে তোর নাম্বারটা সেভ ছিলো এটা আমার মনে ছিলো না কাল আম্মুর ফোন ঘাটতে গিয়ে পেয়েছি।

হয়েছে তোর রেকর্ড এখন বন্ধ কর আমাকে আর কিছু বলতে আসবি না। বলে গিয়েছিলি গ্রামে ১০ দিনের বেশি থাকবি না কিন্তু কি করলি পুরো ১৮ দিন কাটিয়ে এলি ভাবা যায়! নাকি বোনের বিয়ের সাথে নিজেরও করে নিয়েছিস হুমম?
কি বলছিস মেঘা তোকে না জানিয়ে বিয়ে কখনোই না বুঝলি। আমার ৫টা না ১০টা না একটা মাত্র বেস্টি সেটা হলি তুই বুঝেছিস মেঘকন্যা।
ওই হারামি খবরদার ওই নামটাতে ডাকবি না। ওই নামটা তুলে রেখেছি কারো জন্য শুধু সেই ডাকবে।
তিশা মুখ ভেঙিয়ে বললো তা যাহার জন্য তুলে রাখিয়াছো নামটা তাহার সন্ধান কি পাইয়াছো তুমি??
হয়তো পেয়েছি। কিহ পেয়েছিস কে সে নাম কি,কি করে সে আমাদের ভার্সিটির কেউ?উত্তেজিত হয়ে।
উফফ আল্লাহ শুরু হয়ে পেত্নির বকবকানি।
পেত্নি বলিস আর যাই বলিস আমি কিছু মনে করবো না বলনা এখন।
এখন নয় আগে তো আমি সিওর হই তারপর বলবো। চলতো ক্যানটিনে যাই তোর ফোনের চোটে সকালে কিছু খেতেও পারিনি। হুম চল।

. ?

২ দিন পর আমি আর তিশা ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছি আর গল্প করছি। হঠাৎই চোখ পড়লো রাস্তার পাশের ফুচকার দোকানটাতে। পা টা স্থির করে দাড়িয়ে পড়লাম সেখানে তাসিন ভাইয়া! উনি ওখানে কি করছে সাথে ওই মেয়েটাই বা কে? তিশা আমাকে দাড়াতে দেখে পাশে এসে দাড়ালো,,,,,কিরে মেঘা দাড়িয়ে পড়লি কেনো চল। আমি কিছুই বলছি না চুপ করে ওইদিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে তাসিন ভাইয়া মেয়েটাকে ফুচকা খাইয়ে দিলো মেয়েটাও দিলো। কেনো জানিনা চরম রাগ হলো আমার তাসিনের উপর,,মনের ভেতরের কেমন যেনো একটা কষ্টের অনুভব করছি।
এই মেঘা কি হলো তোর কথা বলছিস না কেনো? তিশার কথায় নরে উঠলাম আমি কিছু না বলে তিশাকে রেখেই তাসিনের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
তিশাও কিছু বুঝতে না পেরে আমার সাথে আসলো।

. ?

আমাকে দেখে তাসিন ভাইয়া হেসে বললো আরে মেঘা তুই এখানে? উনার হাসি মাখা মুখটা দেখে ইচ্ছে করছে উনার মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। আমি নিজের রাগটা প্রকাশ না করে বললাম। ভাইয়া উনি কে?মেয়েটাকে ইশারা করে।
আমার কথায়,তাসিন ভাইয়া যেনো উৎসাহ পেলো হাসিটা আরো প্রকট করে বললো,,,,,ওর নাম রিশা আর ও আমার…….
কি আপনার??
নাহ তোকে বলা যাবে না তুই মাকে কখন বলে দিবি তার ঠিক নেই। তখনি মেয়েটি তাসিনের কাধে হাত রেখে ন্যাকা ভাবে বললো তাসিন চলো তো লেট হয়ে যাচ্ছে তুমি না বললে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে।
আমি যেনো আকাশ থেকে ধপাস করে মাটিতে পড়লাম বলে কি এই মেয়েটা তাসিন ওকে ঘুরতে নিয়ে যাবে। রাগে আমার শরীরের রক্ত টকবক করে উঠছে। পাশে থাকা তিশার হাতটা চেপে ধরলাম আমি,,,চেপে ধরায় ও আহ করে উঠলো।
তাসিন আমার দিকে তাকিয়ে বললো মেঘা বাড়িতে যা কেমন বলেই মেয়েটির হাত ধরে বললো রিশু পাখি চলো।
উনার মুখে পাখি শব্দটি শুনে আমার মুখটা অটোমিটিকলি হা হয়ে গেলো। আমাকে রেখেই তাসিন ওই শাঁকচুন্নিটা বাইকে উঠিয়ে চলে গেলো।

. ?

রাতে রুম অন্ধকার করে চুপচাপ বসে আছি। কিসের যেনো একটা অভাব অনুভব করছি। তাসিন ভাইয়াকে ওই মেয়েটির সাথে দেখার পর থেকেই একটা অস্থিরতা কাজ করছে আমার ভেতরে। তাসিনের সাথে মেয়েটাকে দেখে কেনো সহ্য করতে পারছিলাম না আমি? তাসিন ভাইয়াকে আমার ভালো লাগতো কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে এটা শুধু ভালোলাগা নয়। এর থেকেও গভীর কিছু। হ্যা আমি ভালোবেসে ফেলেছি তাসিনকে। কিন্তু তাসিনকে আজ ওই মেয়েটার সাথে যেভাবে দেখলাম তাতে তো মনে হচ্ছে তাসিনের মনে ওই রিশা শাঁকচুন্নিটা বাসা বেধে বসেছে। তাহলে কি আমি হারিয়ে ফেলবো উনাকে!

আমার ফোনটা বারবার বেজে চলেছে সেদিকে আমার কোনে খেয়াল নেই আমি যে তাসিনের ভাবনাতে ডুবে আছি।

ওদিকে তাসিন আমাকে ফোন দিয়ে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লো। নিজে নিজেই বলছে কি হলো মেঘার ফোনটা তুলছে না কেনো! নাকি আমার ওপর রাগ করে ধরছে না। আবারো দিয়ে দেখি…….রিং তো হয়ে যাচ্ছে এতো তাড়াতাড়ি তো মেঘা ঘুমায় না। আচ্ছা আজকে কি আমি একটু বেশি করে ফেলেছি? মেঘা ফোনটা ধরলে না হয় কিছু একটা বুঝতে পারতাম। কি যে করি এখন। আজ ওকে দেখে অন্য রকম লাগছিলো দেখেই মনে হচ্ছিলো আমার সাথে রিশাকে যেনো ওর সহ্য হচ্ছিলো না…..নাহ এভাবে চললে তো ও আমাকে ভুল ও বুঝতে পারে তারথেকে বরং ওকে আমার মনের অনুভূতি গুলো জানিয়ে দিবো। কিন্তু মেঘা ও কি আমার ডাকে সাড়া দিবে? ধেত যা হবে পরে দেখবো আগে তো ওকে মনের কথাটা জানাই।

এ যেনো এক অদৃশ্য ভালোবাসার চাঁদর জড়িয়ে আছে দুজনে। একে ওপরকে ভালোবাসে অথচ দুজনের মনকেই বিষন্নতার সংকোচ ঘিরে রেখেছে।

?

#চলবে. . . ?