শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৮

0
2827

?শুধু তোমায় ঘিরে?

#মেঘা আফরোজ…..?
#পর্ব-৮…..?

?

প্রায় ১মাস লেগেছে তাসিন পুরোপুরি সুস্থ হতে এক্সিডেন্টে পায়ের আঘাতটা বেশি লাগায় হাটতে প্রবলেম হতো এখন তাসিন ভালোভাবেই হাটতে পারে।
আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে এখন আমার বাবা মা ও জানে বাবা রাজি ছিলো না তার কথা ছিলো নিজেদের মধ্য নতুন করে কোনো সম্পর্ক গড়া যাবে না। পরে মায়ের অনেক বুঝানো আর আমার জেদের কাছে হার মেনে বাবা রাজি হয়েছে।

তমা আপু (তাসিনের বড় বোন) ৫ বছর পর আজ কানাডা থেকে দেশে ফিরছেন। তমা আপু ওনার হাজবেন্ডের সাথে ওখানেই থাকেন ওনার একটা মেয়ে আছে নাম অরিন। অরিনের বয়স সাড়ে তিন বছর জন্মের পর এই প্রথম অরিনকে নিয়ে দেশে আসছেন।

সকাল ৮টা বেজে ৪৪ মিনিট আমি রেডি হচ্ছিলাম ভার্সিটি যাবো বলে দরজায় টোকা পড়তেই ঘাড় ঘুড়িয়ে তাসিনকে দেখলাম ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে হাত ভাজ করে দরজায় হেলে দাড়িয়ে আছে।
আমি উনার সামনে গিয়ে বললাম
..কি ব্যাপার এতো সকালে আপনি আমাদের বাড়িতে যে?
..কেনো আসতে পারি না বুঝি!!
..সে কথা বলেছি নাকি। কোনো ফোন না দিয়ে এতো সকালে এসেছেন তাই বলছি।
..ফোন কেনো দিতে হবে!আমার খালামনির বাড়িতে যখন খুশি আসবো আর তাছাড়া কিছুদিন পর আমার শশুর বাড়ি হতে চলেছে এটা। দেখি সরো ভেতরে যেতে দাও তুমি তো বসতে বলবে না আমি নিজেই বসছি।
..ঢং। মুখে ভেংচি কেটে।
..ইসসস মেঘাপাখি এভাবে মুখ বাকা করো না গো তোমাকে যে আরো বেশি সুইট লাগে দেখতে। খাটে বসে বললো।

. ?

আমি আর কিছু না বলে আমার কাজে মন দিলাম। তাসিন বলে উঠলো….মেঘা আজ ভার্সিটি যেতে হবেনা ১১ টার সময় এয়ারপোর্ট যেতে হবে আপুদের রিসিভ করতে।
..তো যাবেন এর সাথে আমার ভার্সিটি না যাওয়ার কি সম্পর্ক?
..তুমিও যাবে আমার সাথে আপু তোমাকেও নিয়ে যেতে বলেছে।
..আমি যাবো না।
..কেনো যাবে না কেনো??
..এমনিতেই।
..আপু মন খারাপ করবে মেঘা প্লিজ না করো না।
..ঠিকআছে যাবো।
..সত্যিই যাবে তুমি!
..হুমম যাবো।
নাস্তা করার জন্য মা ডাকতে আসলে আমি আর তাসিন গিয়ে নাস্তা করে নিলাম। তাসিন মায়ের সাথে কথা বলছিলো আমি রুমে চলে আসলাম। একটু পর তাসিন আসলো
..মেঘা তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও ১০ টায় বের হবো।
..আচ্ছ। তারপর নীল রং এর একটা চুড়িদার পড়ে নিলাম চুলগুলো ছেড়ে দিলাম। তাসিন ব্যালকনিতে বসে ছিলো আমি সামনে গিয়ে বললাম আমি রেডি।
তাসিন আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

..কি হলো এভাবে কি দেখছেন?
..আমার মেঘকন্যাকে দেখছি!! নীল রংটা যেনো তোমার সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলেছে। মেঘের নীল আবরণ গায়ে মেখে যেনো এক নীলপরী দাড়িয়ে আছে আমার সামনে। আমার দিকে চেয়ে ঘোড় লাগা কন্ঠে বললো।
আমি মুচকি হেসে সেখান থেকে সরে আসতে নিলে উনি আমার হাত ধরে হেচকা টানে নিজের কোলে বাসিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে আমার চুলে মুখ গুজলো। আমার সাড়া শরীরে যেনো কারেন্ট বয়ে চলেছে আপনা আপনি হাত পা কাপতে লাগলো।
উনি ওভাবেই চুলে মুখ গুজে আস্তে করে বললো
..কাপছো কেনো মেঘাপাখি আমি তো কিছুই করিনি এখনো,,,,আর তুমি এখনি কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছো।
..আ আপনার এখন ললেট হচ্ছে না?
..উহু একটু লেট হলে ক্ষতি নেই। এই নীলপরী তুমি সাজো না কেনো হুম সব সময়,এতো সিম্পল কেনো থাকো?
..আমার সাজতে ভালো লাগে না।
..ঠিকআছে সাজতে হবে না শুধু তোমার ওই মিষ্টি ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দাও। কি দিবে না?
..আচ্ছা দিবো এখন তো ছাড়ুন।
তাসিন আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো
..হুম দিলাম ছেড়ে তবে আমার মাথাটা যে ঘুড়িয়ে দিয়েছো তুমি তার কি হবে হুমম।
তাসিনের থেকে ছাড়া পেয়ে যেনো হাপ ছেড়ে বাচলাম আমি।কিছুটা দুরে এসে বললাম
..কিছুই হবে না এবার চলুন তো পরে আমাকেই কথা শুনাবেন যে আমার জন্য দেরি হয়েছে।

. ?

আমি আর তাসিন দাড়িয়ে আছি অপেক্ষা করছি আপুদের আসার। কিছুক্ষণ পরেই বের হলো তমা আপু ইমরান ভাইয়া(তমা আপুর হাজবেন্ড)আর ভাইয়ার কোলে কিউট একটা ছোট্ট মেয়ে। আপু এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
..কেমন আছো আপু?
..খুব ভালো আছি। তুুই কেমন আছিস?
..আমিও ভালো আছি।
তারপর ভাইয়ার সাথে কথা বললাম অরিনকে নেওয়ার জন্য তাসিন হাত বাড়িয়ে বললো
..এই যে আমার কিউট আম্মুটা এসো।
আমি তাসিনের পাশেই ছিলাম অরিন তাসিনের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো তারপর ওর ছোট্ট হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে। ওর এমন কান্ড দেখে আপু আর ভাইয়া হেসে দিলো তার তাসিন মুখটা গোমড়া করে বললো…..আপু আমি যে ওর মামা হই সেটা ওকে বলোনি?
আমি অরিনকে কোলে নিয়ে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম…..ও তো এখনো ছোট কে কি হয় এখনি বুঝবে নাকি। দেখেছো তো আপু তোমার ভাই হিংসে করছে অরিন আমার কোলে এসেছে বলে!
ইমরান ভাইয়া হেসে বললো
..হিংসে তো আমার হচ্ছে গো শালিকা ভেবেছিলাম দেশে ফিরে শালিকার আদর যত্ন নিবো,,,, তা আর হতে দিলো কই আমার শালাবাবু আগেই আমার একটি মাত্র শালিকাকে হাত করে নিলো।
তমা আপু বলে উঠলো
..বাসায় তো চলো আগে এখানে আর কতক্ষণ দাড়িয়ে কথা বলবে।

আপু আর ভাইয়া আগেই গাড়িতে বসেছে অরিন এখনো আমার গলা জড়িয়ে আছে। তাসিন একটু কাছে এসে অরিনকে বললো
..এই যে মিষ্টি আম্মুটা এটা কি ঠিক হলো বলো মামাকে রেখে মামিকে চিনে নিলে আগে।
অরিন আধো আধো স্বরে বলে উঠলো…মা মা।
ওর মুখে মামা ডাক শুনে তাসিন তো খুব খুশি
..দেখেছো মেঘা ও তোমার কোলে আছে ঠিকি কিন্তু ডাকলো আগে আমাকেই।

. ?

তমা আপুর রুমে অরিনের পাশে বসে ওর ছোট সিল্কি চুলে হাত বুলাচ্ছি আপু আর ভাইয়া নিচে। তাসিন রুমে আসলো
..মেঘা তুমি এখানে আর আমি সারা বাড়িতে খুজে বেড়াচ্ছি।
..কেনো কি দরকার?
..দরকার হলেই খুজতে হবে নাকি এমনি খুজতে পারি না বুঝি!
..হুম পারেন এখন কথা কম বলেন অরিন ঘুমাবে।
তাসিন আমার পাশে বসে অরিনকে দেখিয়ে বললো
..মেঘা আমাদেরও এমন একটা কিউট বেবি আসবে তাইনা।
..এই আপনার কি আর কোনো কাজ নেই? এখনি এসব কথা কেনো আসছে!
..বারে প্রবলেম কি বললে! মেঘা তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো?বাকা হেসে বললো।
..একদমি না আপনি এখন যান তো ওকে ঘুম পাড়াতে হবে।
..আচ্ছা যাচ্ছি শুধু আমার মিষ্টি আম্মুটার কথা ভেবে যাচ্ছি। অরিনের গালে হাত দিয়ে।
উনি চলে যাওয়ার পর নিজেই হাসতে লাগলাম পাগল একটা,,,,,আর এই পাগলটাকেই আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।

. ?

আজ আমরা গ্রামে মামা বাড়িতে যাচ্ছি তমা আপুর কথাতেই যাওয়া হচ্ছে। এই ইটে ঘেরা শহরে আপুর একদমই ভালোলাগছিলো না শুধু আপুর কথা বললে ভুল হবে আমারো ভালো লাগে না। গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু খানি নিশ্বাস নিতে পারলে কার না ভালোলাগে!

রিশা আপুর সাথেও আমার এখন খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠেছে। আমাদের যাওয়ার কথা শুনে রিশা আপুও যাবে সাথে রোহান ভাইয়া।
তিশাও যাবে ও প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না,,,,ওর কথা হলো তমা আপু আর ইমরান ভাইয়া,রিশা আপু আর রোহান ভাইয়া,তুই আর তাসিন ভাইয়া যাবি তোদের মাঝে আমি যাবো না। তোরা যা ঘুরে আয় আমি অন্য কখনো যাবো।
আমিও ছাড়ার পাত্রী নই তিশাকে তো আমি নিবোই। অবশেষে তাসিন তিশাকে রাজি করিয়েছে।

অনেক দুরের পথ তাই গাড়ি নেওয়া হয়নি আপু আর ভাইয়া তাসিনকে বলছে বাসে করেই যাবে। এমনিতেই দুরের পথ বাসে গেলে মন্দ হয় না।

. ?

একটু আগেই আমরা বাস থেকে নেমেছি। মামা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে তার জন্যই অপেক্ষা করছি সবাই।অরিনকে কোলে নিয়ে তিশা আর আমি দুষ্টুমিতে মেতে আছি। হঠাৎ আয়ান ভাইয়া(মামাতো ভাই) আমাদের সামনে এসে দাড়িয়ে তাসিনকে উদ্দেশ্য করে বললো
..সরি তাসিন একটু লেট করে ফেলেছি।(তাসিন আর আয়ান ভাইয়া সেম বয়সি তাই তুই করেই বলে)
..আরে সরি বলার কি আছে আমারা একটু আগেই নেমেছি।
আয়ান ভাইয়া আপু ইমরান ভাইয়ার সাথে কথা বলে আমার মাথায়,টোকা দিয়ে বললো
..কিরে মেঘ তুই তো দেখছি অনেক বড় হয়ে গেছিস।হেসে বললো।
..উফ ভাইয়া তুমি এখনো সেই আগের মতো মেঘ বলবে আমাকে মেঘা বলতে কি কষ্ট হয় হুম?
..তোকে মেঘ বলতেই ভালো লাগে আমার। আচ্ছা এদের তো চিনতে পারলাম না!!তিশা রিশা আপু আর রোহান ভাইয়াকে দেখিয়ে বললো।
তারপর তাসিন পরিচয় করিয়ে দিলো ওদের সাথে।

আয়ান ভাইয়া তিশার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে আমার কানে কানে বললো
..মেঘ তোর ফ্রেন্ডটা দেখতে খারাপ না।
..ভাইয়া একদম নজর দেবে না বলে দিচ্ছি।
..নজর তো লেগেই গিয়েছে রে মেঘ।মনে মনে বললো।
তাসিন আয়ান ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে বললো
..আয়ান তোর আনমনে ভাবনা চিন্তা গুলো বাড়িতে গিয়ে করিস ভাই এবার তো চল।
..তাসিন আমি কিছুই ভাবছি না ওকে!!তিশার দিকে তাকিয়ে বললো।
তসিন তিশাকে বললো
..শালিকা একটু সাবধানে থেকো কেমন গ্রামের হাওয়া কিন্তু একটু বেশি উড়ে যেও না যেনো।
বেচারি তিশা কিছু না বুঝেই হুম বলে অরিনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আর আয়ান ভাইয়া অবাক হয়ে তাসিনের দিকে তাকিয়ে বললো।
..কে শালিকা কি ভাবে কিছুই তো বুঝলাম না!!

?

#চলবে. . . ?