শেষ পাতায় তুমি পর্ব-৬০ এবং শেষ পর্ব

0
3807

#শেষ_পাতায়_তুমি
#ফাবিহা_নওশীন

|শেষ পর্ব|

“তোমার জন্য আমার আদরের ছোট বোনটা সবার মজার পাত্র হয়েছিল। ঠাট্টা, উপহাস সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। আজ মৃত মানুষের মতো বেঁচে আছে। শুধু তোমার জন্য একটা হাসিখুশি, চঞ্চল জীবন নির্জীব হয়ে বেঁচে আছে। শুধু তোমার জন্য আমার বোনের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে।”
হিমি কাঁদতে কাঁদতে বলল।

মেহেরের বুক ধুক করে উঠল। ফায়াজ কি করেছে? আজ মেহেরকে কোন নির্মম সত্যের মুখোমুখি হতে হবে না তো? মেহের ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে। হৃদপিণ্ড দ্রুত চলছে।

ফায়াজ অবাক হয়ে বলল,
“কে তোমার বোন? আর আমি কি করেছি?”

হিমি চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,
“হিয়া, হিয়া আমার বোন। মনে আছে? তিন বছর আগের কথা। মনে পড়েছে?”

ফায়াজ মনে করার চেষ্টা করছে হিয়া নামে কাউকে চিনে কি-না। কিন্তু মনে করতে পারছে না।
ফায়াজ কপালে ভাজ ফেলে বলল,
“কোন হিয়া? হিয়া নামে আমি কাউকে চিনতে পারছি না।”

হিমি মৃদু হেসে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“তা মনে থাকবে কেন? তুমি তো ফায়াজ নওয়াজ খান। সবাই তোমাকে মনে রাখবে। তুমি কাউকে মনে রাখতে কেন যাবে? হিয়া, আমার বোন। পাগলের মতো ভালোবাসতো তোমাকে। কিন্তু তুমি কি করেছিলে?”

মেহের কাঁদো কাঁদো হয়ে ফায়াজের দিকে তাকাল। ওর মনে হচ্ছে ফায়াজ খারাপ কিছু করেছে হিয়ার সাথে। এখন হয়তো এমন কিছু শুনতে হবে যার জন্য ওর জীবনে ঝড় আসতে শুরু করেছে। ফায়াজ মেহেরের দিকে তাকাল। মেহেরের ছলছল চোখ দেখে বলল,
“মেহের, বিশ্বাস করো হিয়া নামে আমি কাউকে চিনি না। আমি কোনো মেয়ের সাথে কোন অন্যায় করি নি। ও কার কথা বলছে, কি বলছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

মেহের হিমির দিকে তাকাল। হিমি কি বলতে চায় ও শুনতে চায়। ফায়াজের কথা শুনে ইনোসেন্ট মনে হচ্ছে কিন্তু হিমির কথাও শোনা দরকার।

মেহের নিজেকে শক্ত করে শক্ত কন্ঠে বলল,
“কি হয়েছিল হিয়ার সাথে?”

হিমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“ভালোবেসেছিল তার শাস্তি পেয়েছে। তোমার হাসব্যান্ডকে ভালোবেসেছিল। ওর ধ্যানে, জ্ঞানে সারাক্ষণ শুধু ফায়াজ থাকতো। আমি দেখেছি ও কি পরিমাণ পাগলামি করত। বলতো, জানো আপু ফায়াজ আজ এটা পরে এসেছে, ফায়াজকে আজ এমন লেগেছে, ফায়াজ আজ এটা করেছে ব্লা ব্লা ব্লা। সব কথায় ফায়াজ। কথার ঝুলিতে শুধু ফায়াজ। ফায়াজ ছাড়া যেন ওর বলার মতো কিছু ছিল না। একা একা গুনগুন করত, নতুন নতুন ড্রেসে নিজেকে সাজাতো, বারবার আয়নায় নিজেকে দেখতো। ফায়াজ যেন ওকে কোনভাবেই এভয়েড করতে না পারে সেভাবে নিজেকে তৈরি করেছিল। এমনিতে হিয়া খুব সুন্দর ছিল, স্মার্ট ছিল। কতশত ছেলে ওর জন্য পাগল ছিল, যখন হেঁটে যেত আশেপাশের ছেলেরা হা করে তাকিয়ে থাকত। কিন্তু ও তো পাগল ছিল ফায়াজের জন্য। আর ফায়াজ ওকে ছুড়ে ফেলে দেয়। ও সহ্য করতে পারে নি। ওর রক্তে, স্পন্দনে, নিশ্বাসে ফায়াজ ছিল। কিন্তু ফায়াজ ওকে… হিয়া কোন দিক থেকে কম ছিল ফায়াজ? মেহের, এই মেহেরের জন্য দিওয়ানা হয়েছো? আর আমার বোন? হিয়া মেহেরের চেয়ে সব দিক থেকে বেষ্ট ছিল। তুমি হিয়াকে ছুড়ে ফেলে মেহেরকে বেছে নিলে? মেহেরকে?”

ফায়াজ ধমক দিয়ে বলল,
“সাট আপ! মেহেরের সাথে কাউকে তুলনা করবে না। মেহের একটা রত্ন। বুঝেছো? আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী রাজকন্যা, মূল্যবান রত্ন, স্বচ্ছ হৃদয়ের অধিকারী, শুভ্র স্নিগ্ধ আকাশের মতো। ওর সাথে কারো তুলনা নেভার। আর কে এই হিয়া? কি গল্প সাজাচ্ছো? আমি ওকে ছুড়ে ফেলেছি মানে কি? আমার ওর সাথে রিলেশন ছিল? তোমার কথায় মনে হচ্ছে আমার হিয়া নামে কারো সাথে সম্পর্ক ছিল আর আমি তাকে চিট করেছি, বেঁচে থাকার অবলম্বন কেড়ে নিয়েছি। এই মিথ্যেটা অন্তত বলো না। লাভ হবে না কারণ আমি এমন কিছুই করি নি। আমি প্রথম মাহির সাথে যদিও ঘটনাটা অন্যরকম ছিল। আমার প্রথম আর শেষ প্রেম,ভালোবাসা,স্বপ্ন সব মেহের। অনলি মেহের।”

মেহেরের ফায়াজের কথা শুনে, ফায়াজের কনফিডেন্স দেখে একটু শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে ফায়াজ হিয়া নামের কারো সাথে কিছু করে নি। করতে পারে না।

হিমি আবারও কাঁদতে শুরু করল।
“মেহের! মেহের! মেহের! শুধু মেহের! এইজন্যই আমি মেহেরকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছি। হিয়ার স্বপ্ন ছিল ও ক্যাম্পাসের সবার সামনে তোমাকে প্রপোজ করবে। আর তুমি সবার সামনে ওকে একসেপ্ট করবে। সকাল থেকে তোরজোর চলছিল। নিজেকে খুব যত্ন নিয়ে তৈরি করেছিল। নিজে গিয়ে ফুলের বুকে নিয়ে এসেছিল। গিয়েছিল তোমার কাছে কিন্তু তুমি ভরা ক্যাম্পাসে ওকে রিজেক্ট করেছিলে, পাগল বলেছিলে। ওর কত আশা ছিল সবাইকে চিৎকার করে বলবে, তুমি শুধু ওর। কিন্তু তুমি সবার সামনে ওকে অপমান করেছিলে। তোমার বন্ধুরা মজা উড়িয়েছিল।”

ফায়াজের কিছু মনে পড়ছে। হ্যাঁ মনে পড়ছে। একটা মেয়ের পাগলামি, ওকে প্রপোজ করা কিন্তু মেয়েটার নাম জানতো না। জানার প্রয়োজন মনে করে নি। ওর বিহেভিয়ার দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
“ওই মেয়েটা? ও তোমার বোন ছিল? যে আমাকে ক্যাম্পাসে প্রপোজ করেছিল? ওর নাম হিয়া?”

মেহের চমকে ফায়াজের দিকে তাকাল।
ফায়াজ তাচ্ছিল্য করে বলল,
“ভরা ক্যাম্পাসে যখন প্রপোজ করেছে তখন তো ভরা ক্যাম্পাসেই রিজেক্ট করতে হবে। আর পাগল বলেছিলাম? হ্যা তোমার বোন পাগলই ছিল। ওর মাথায় গন্ডগোল ছিল। নয়তো এতগুলো মানুষের সামনে এমন সিন ক্রিয়েট করতে পারতো না। আমাকে প্রপোজ করার পর আমি বলেছিলাম,
” এ-সব প্রেম-ভালোবাসার প্রতি আমার ইন্টারেস্ট নেই। তাছাড়া তুমি আমার টাইপ নও। বেষ্ট অফ লাক।” “আর তখনই তোমার বোন সিন ক্রিয়েট শুরু করে দিল। আমার হাত ধরে পাগলের মতো আচরণ করছিল। হাত ছাড়াতেই বারবার জড়িয়ে ধরছে। ওকে আটকানো যাচ্ছিল না। কোন সুস্থ মানুষ পাব্লিক প্লেসে এমন সিন করে না। জানি না কি করে রাগ কন্ট্রোল করেছিলাম। ওকে যে আমি থাপড়াই নি এটাই ওর ভাগ্য। আমি ওকে ছাড়িয়ে বলেছিলাম, “তোমার চিকিৎসা দরকার কারণ তোমার মাথায় গন্ডগোল আছে। ফালতু মেয়ে।”

হিমি চিৎকার করে বলল,
“ও পাগলামি করেছে কারণ ও তোমাকে ভালোবাসতো।”

“পাব্লিক প্লেসে অসভ্যতা করাকে ভালোবাসা বলে না। তোমার বোন আমাকে যা যা অফার করেছিল না তাতে আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে সুযোগ নিতো। চিট করে ছেড়ে দিত।”
ফায়াজের এসব কথার মাঝে মনে পড়ল এখানে মেহের আছে। এ-সব বলা উচিত না।

“হিয়াকে ভালোবাসা যায় নি কেন ফায়াজ? ওর পাগলামি তোমাকে জুড়ে ছিল। অন্য কিছুতে নয়। তাই ওকে সিক বলা চলে না। তুমি যদি ওকে একসেপ্ট করতে তাহলে ও ওমন সিন ক্রিয়েট করত না।”

ফায়াজ তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“এখন তোমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে আমি কাকে ভালোবাসব? তোমার কথা অনুযায়ী সব হবে? ভাই ভেতর থেকে ফিলিংস আসতে হবে।(বুকে হাত দিয়ে) এই ফিলিংস ছাড়া প্রেম-ভালোবাসা কিছু হয় না ইয়ার। ওকে দেখে আমার ফিলিংস এসেছে সেটা মেজাজ খারাপ হওয়ার। এমন গায়ে পড়া মেয়েকে আমি ভালোবাসব? লাইক সিরিয়াসলি? এখন তো আমার সন্দেহ হচ্ছে হিয়া নয় সাথে তুমিও সিক। নয়তো এই ধরনের কাজে সাপোর্ট দিতে পারতে না। আর আমার আর মেহেরের সাথে এমন জঘন্য খেলা খেলতে পারতে না। পাগলের গোষ্ঠী যত্তসব।”

মেহের ফায়াজের হাত ধরে থামাল। তারপর ফিসফিস করে বলল,
“ফায়াজ ওর বোন নির্জীব হয়ে বেঁচে আছে টাইপ কিছু বলল না? আমার মনে হচ্ছে ওর বোন খারাপ অবস্থায় আছে। এ-সব বলো না।”

মেহের হিমির দিকে তাকাল। তারপর ইতস্তত করে বলল,
“হিয়া এখন কোথায়?”

হিমি কাঁদতে শুরু করল। তারপর বলল,
“সেদিন হিয়া অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিল। ফায়াজ ওকে রিজেক্ট করার পর ওর বন্ধুরা ঠাট্টা মশকরা শুরু করে দেয়। হাসাহাসি করে। হিয়া কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় তারপর হিয়ার বন্ধুরাও অনেক হাসাহাসি করে। ও সহ্য করতে পারে নি। ফুল পাওয়ারে গাড়ি ড্রাইভ করে। ও ইচ্ছে করেই এমন করেছে। গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। এখন নিথর হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। তিনটা বছর ও বিছানায় শুয়ে আছে। শুধু চোখের পলক ফেলে আর কাঁদে। আর কিছু করতে পারে না। ওকে দেখে আমার পরিবার তিল তিল করে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আনন্দ-উল্লাস বলতে কোন শব্দ নেই আমাদের বাড়িতে।”

মেহের এটা শুনে খুব দুঃখ পায়। ফায়াজের ফিলিং বুঝতে পারছে না মেহের।
“এখানে আমার দোষ কোথায়? আমি তোমার বোনকে গাড়ি এক্সিডেন্ট করতে বলেছি? ওর যেমন আমাকে ওর ফিলিং জানানোর অধিকার আছে তাতে আমারও অধিকার আছে আমার মতামত জানানোর। আমি তাই করেছি। আমার ওকে ভালো লাগে নি তাই মানা করে দিয়েছি। এর জন্য আমাকে দায়ী করছো?”

“তুমি ওকে রিজেক্ট করার পর তোমার বন্ধুরা কি করেছিল? ওরা যদি এ-সব না করতো তাহলে এত মানুষের সামনে ওকে অপমানিত হতে হতো না। একটা মানুষের অনুভূতিকে অপমান করার অধিকার কারো নেই।”

মেহের হিমির কথা শুনে বলল,
“হ্যাঁ একটা মানুষের অনুভূতিকে অপমান করার অধিকার কারো নেই। ফায়াজ অন্যায় করেছে, ফায়াজের বন্ধুরা অন্যায় করেছে, হিয়ার বন্ধুরা অন্যায় করেছে আর আপনি? আপনি কোন মহৎ কাজ করেছেন? আপনি আমার মতো একটা নির্দোষ মেয়েকে নানাভাবে বিপদে ফেলেছেন, সব সময় ভয়ে ভয়ে বাঁচতে হতো। পরিশেষে খুনের মতো একটা কাজ করতে হাত কাঁপল না? আমাকে আর আমার অনাগত সন্তানকে, যে এখনো পৃথিবীর আলো দেখে নি তাকে নিষ্ঠুর ভাবে মারার চেষ্টা করেছেন। এটা কোন মহৎ কাজ? এর শাস্তি আপনি পাবেন। পেতেই হবে। আপনার বোনের জন্য দোয়া রইল, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। আর আপনাকে চৌদ্দ শিক মোবারক।”

মেহের ফায়াজকে ইশারা করল। ফায়াজ উঠে দাঁড়িয়ে মেহেরের হাত শক্ত করে ধরে হিমিকে বলল,
“দুটি মানুষের ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাদের কেউ আলাদা করতে পারে না। আমরা স্বামী-স্ত্রী। আমাদের সম্পর্ক পবিত্র ও শুদ্ধতম। আর এই পবিত্র সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তায়া’লার রহমত থাকে। ইনশাআল্লাহ কেউ কোনদিন আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করতে পারবে না, কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।”

ফায়াজ মেহেরের হাত ধরে বের হয়ে গেল।
মেহের পুরো রাস্তা চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে ছিল। বাড়ির সামনে গাড়ি থামানোর পরেও মেহের ওভাবেই আছে। ফায়াজ মেহেরের কাঁধে হাত রাখতেই মেহের চোখ খুলল।
“মেহের, এখানে আমার দোষ কোথায়?”

মেহের মুচকি হেসে বলল,
“কোথায় বললাম তোমার দোষ?”
“তাহলে চুপ করে আছো কেন? সারা রাস্তা চুপ ছিলে, কোন কথা বললে না।”

মেহের নাক কুঁচকে বলল,
“আমার হিংসা হচ্ছে। একটা মেয়ে তোমার জন্য এমন পাগলামি করেছে?”

ফায়াজ কলার তুলে বলল,
“আ’ম দ্যা গ্রেট ফায়াজ নওয়াজ খান। আমার পেছনে এখনো ডজন খানেক মেয়ে ঘুরে। চকলেট বয় বলে কথা।”

মেহের ফায়াজের বুকে ঘুষি মেরে ভেংচি কাটল। ফায়াজ “আউচ!” করে উঠল।

গাড়ি থেকে নেমে মেহেরকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল।
“আমার বেবিটাকে এখন একটু রেস্ট করতে দেও।”
ফায়াজ মেহেরের পেটে চুমু খেয়ে বলল,
“প্রিন্সেস, তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমার আর তর সইছে না। পাপা তোমাকে কোলে নিয়ে আদর করবে, চুমু খাবে, তোমার সাথে খেলবে।”

মেহের ফায়াজের চুল টেনে বলল,
“মাত্র দু-মাস হয়েছে। এখনো অনেক সময় বাকি।”

ফায়াজ পেটের কাছ থেকে সরে মেহেরের কাছে গেল। মেহেরের ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল,
“অপেক্ষা করে নেব তোমার সাথে।”
মেহের ফায়াজের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিল।

🥀🥀
কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। মেহেরের প্রেগ্ন্যাসির সময় সামিরা আর তুষারের বিয়ে হয়। ওদের তিন বছরের একটা মেয়ে আছে। তার বছর খানেক পরে ফাইজার বিয়ে হয় রুহানের সাথে। ওদের একটা পিচ্ছি ছেলে আছে। ফায়াজ আর মেহেরের মেয়ের সাড়ে চার বছর।

মেহের ওর মেয়ের জামাকাপড় ভাজ করছে। ফায়াজ অফিস থেকে ফিরেছে। স্যুট-টাই খুলে মেহেরের পাশে গিয়ে বসল। মেহের পাত্তা দিল না।
ফায়াজ মেহেরের হাত থেকে জামাকাপড় নিয়ে বলল,
“মেয়ে ছাড়া দেখছি আর কাউকে চোখে দেখছো না? আমাকে পাত্তাই দিচ্ছো না।”

মেহের ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তোমাকে আবার পাত্তা দেওয়া লাগে? তুমি নিজেই কত পাত্তা নিতে পারো। আর তুমি আমার মেয়েকে হিংসে করছো?”

“হিংসা! হিংসা করব কেন? আমার মেয়ে আমার কলিজা, জান-প্রাণ সব। ওকে হিংসা করব?”

মেহের নাক ফুলিয়ে বলল,
“আর আমি কিছু না?”

“এ তো মহা বিপদ। কোন দিকে যাব?”

“যেদিকে খুশি যাও, দূরে যাও।” মেহের ফায়াজের হাত থেকে কেড়ে জামাকাপড় নিল। ফায়াজ আবারও কেড়ে নিল। এভাবে কাড়াকাড়ি লেগে গেছে। মেহের ফায়াজের হাতে কামড় দিল। ফায়াজ হাত ঝাড়তে ঝাড়তে মেহেরের হাত শক্ত করে চেপে ধরল।

“পাপা!”

ফায়াজ আর মেহেরের দৃষ্টি ওদের মেয়ের দিকে। হাতে পায়ে মাটি লেগে আছে। নিশ্চয়ই বাগানে খেলে বিকেল বেলায় মাটি লাগিয়েছে।
ফায়াজ মেহেরের হাত ছেড়ে বলল,
“এসো ফিহা মনি।”
ফিহা দৌড়ে এল। ফায়াজ ফিহাকে কোলে তুলে নিল। ফিহা পাপাকে চুমু খেল।

মেহেরের দিকে চোখ পড়তেই বলল,
“মাম্মা কি হয়েছে?”

মেহের গাল ফুলিয়ে বলল,
“তোমার পাপা মেরেছে।”

ফিহা অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে বলল,
“মাম্মা, মিথ্যা কথা বলে না। পঁচা মানুষ মিথ্যা বলে। পাপা তোমাকে কখনো মারে না। সব সময় আদর করে। কিচি দেয়। আমি দেখেছি।”

মেহের চোখ বড়বড় করে ফায়াজের দিকে তাকাল। ফায়াজ হাসছে। মেহের মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“বাপ-মেয়ে দুটোই এক।”

মেহের ফিহাকে ঘুম পাড়াচ্ছে। ফায়াজ ফোন টিপতে টিপতে বলল,
“মেহের, ফিহা ঘুমালে বারান্দায় এসো। কথা আছে।”
ফায়াজ বারান্দায় চলে গেল। ফিহা ঘুমালে মেহের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মেহের লাইট অন করতে গেলে ফায়াজ বাঁধা দেয়।
“অন্ধকারটা ভালো লাগছে।”

“কি জানি বলবে?”

ফায়াজ মুচকি হাসল। অন্ধকারে আধো আধো দেখতে পাচ্ছে মেহের।
ফায়াজ মেহেরের কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল,
“বিকেলে হাতে কামড় দিয়েছো মনে আছে? তার প্রতিশোধ নেওয়া এখনো বাকি।”

ফায়াজ মেহেরের কানের লতিতে কামড় দিল।

মেহের ব্যথায় কুকড়ে গিয়ে বলল,
“শোন সব সময় এমন অত্যাচার মেনে নিব না।”

ফায়াজ মেহেরকে আরো কাছে টেনে বলল,
“কি করবে?”

“সংগ্রাম করব। আন্দোলন করব। এ-সব অত্যাচার মেনে নেব না।”

ফায়াজ মেহেরের গালে চুমু খেয়ে বলল,
“নারী, করো না তুমি বাড়াবাড়ি। তোমাকে সারাজীবন ফায়াজের ভালোবাসার অত্যাচারে অত্যাচারিত হতে হবে।”

মেহের মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“আচ্ছা।”
ফায়াজের বুকে মুখ লুকালো।

“রোদ্দুরে এক মুঠো শীতল মেঘ তুমি
প্রচন্ড কুয়াশার আড়ালে বসন্ত তুমি
শরৎের কাশবনে শুভ্র পাপড়ি তুমি
তোমার মুগ্ধতায় বিভোর এই আমি।”

(জানি সুন্দর করে সাজাতে পারি নি। সরি 🙂🙂। সবাই ভালো থাকবেন।ধন্যবাদ।)