সাইকো বস পর্ব-১০

0
1720

#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১০

— কোথাও যাই নাই, কালকে রাতে ঘুমই নাই তো তাই লেইট হয়ে গেলো, আমাকে মিস করছিলে নাকি।

— আমি আপনাকে মিস করতে যাবো কেনো। সবাইকে বিয়ের ব্যপারটা বললেন কেনো। এখন যদি কেউ আম্মু কে বলে দেয় আমার কী অবস্থা হবে আপনি বুঝতে পারছেন।

— এসব বাদ তোমাকে আমি বলছিলাম না বসায় পৌঁছে আমাকে কল দিবা।

কাছে আসতে আসতে বললো,

— আপনি এভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেনো, মনে ছিলো না।

—আমার বউ এর দিকে আমি এগিয়ে যাবো তোমাকে বলতে হবে। মনে ছিলো না মানে কী। মানুষের হাত জানো কয়টা।

— আমি কী ক্লাস ওয়ান এর বাচ্চা নাকি। মানুষ এর হাত দুইটা।

— নাহ্ মানুষ এর হাত তিনটি। ডান হাত, বাম হাত আর একটা অযুহাত যেটা তুমি আমাকে এখন দেখাচ্ছো।

— আমি সত্যি বলছি মনে ছিলো না। সরি। কালকে আমি অফিসে আসবো না।

—কেনো, শ্বশুর বাড়ি যাবে নাকি। যাও আমার মা তোমাকে দেখলে খুশি হবে। বলে দিছি সবাইকে বিয়ে করে ফেলেছি।

— না আগানী কাল আমি ভার্সিটিতে যাবো,আপনি চাচ্ছেন টা কী বলেন তো সবাইকে কেনো জানিয়ে দিচ্ছেন । এতে যদি আমার সমস্যা হয়।

—জানিয়ে দিয়েছি কারন আমি চাই না আমার বউ এর উপর কেউ খারাপ দৃষ্টি দিক।কোনো সমস্যা হবে না সব সময় আমি তোমার সাথে আছি।

—আচ্ছা কাজ করি এখন, কী কাজ করতে হবে বলো।

আমার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে,শুভ্র চেয়ারে বসতে বসতে বললো,

— কোনো কাজ নাই তোমার আমার সাথে রোমান্স করো। এতে ই আমি খুশি।

বজ্জাত হনুমান একটা তোরে আমি বট কাছের মগ ডাল থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে পারলে আমার মন টা শান্তি হতো। মনে মনে এগুলো বলে আমার মনটাকে একটু শান্তি করলাম।

—- কী ভাবছো বউ, লজ্জা পাচ্ছো কেনো। আমি তো তোমার ই।

আমি শুধু শুনছি এসব আমার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে শোনতে শোনতে।

পরের দিন,

ভার্সিটিতে যাবার পর, সবার সাথে কথা হলো হঠাৎ পিছন থেকে কে যেনো ডাকছে। পিছনে ফিরে দেখলাম জিহাদ।

জিহাদ কে দেখে তো আমি বেশ ভয় পেলাম। এটা আবার আমার সাথে কথা বলতে এসেছে, শুভ্র দেখতে পেলে তো আমাকে শেষ করে ফেলবে। তাই আমি জিহাদ কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলাম। কিন্তু কপালে দুঃখ আছে এই জন্য দৌড়ে আমার পিছন পিছন এসে আমার পথ আটকায়।

— আরে অহনা তোমাকে আমি কতো খুঁজেছি তুমি এতো দিন কোথায় ছিলা।

— আমার পথ আটকাবেন না যেতে দিন আমাকে। না হয় আমার সমস্যা হবে, সাথে আপনার ও।

— তুমি কী কোনো ভাবে শুভ্রকে ভয় পাচ্ছো। আমি কিন্তু কাউকে ভয় পাই না। আর তুমি শুভ্রকে ভয় পাচ্ছো কেনো, আমি আছি তো।

—- আপনি না ঐ দিন ও আমার জন্য শুভ্রর হাতে মাইর খেয়েছেন, আবার এই কথাগুলো বলেন কীভাবে সরে দাড়ান।

— তোমার জন্য আমি একবার কেন হাজার বার মাইর খেতে পারি। তুমি আমাকে বুঝতে চাও না কেনো অহনা।

আমি বাম দিকে তাকাতে ই দেখি শুভ্র দাড়িয়ে সব শোনতেছে আর রাগি দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে এগিয়ে এসে হাত ধরে টান টানতে গাড়ি ভেতরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

ব্যথায় চিৎকার করে উঠি কিন্তু আমার চিৎকার শুভ্র কান পর্যন্ত যাচ্ছে না। গাড়ির চালাচ্ছে পাগলের মতো যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

হাঠাৎ একটা যায়গায় গাড়ি থামালো। দেখলাম শুভ্রদের বাসায় নিয়ে আসছে। টান টানতে বাসার ভিতরে নিয়ে যায়। শুভ্রর মা আমাকে দেখে শুভ্র পিছনে আসছে আর জিজ্ঞেস করছে কী হয়েছে কিছু না বলে ই একটা রুমে আমাকে নিয়ে এসে দরজা অফ করে দেয়।

বাহির থেকে সবাই ডাকতেছে কিন্তু কারো কথা শুভ্রর কান পর্যন্ত যাচ্ছে না।

এতোক্ষণ একটা যায়গায় বসে ছিলো, হঠাৎ উঠে এসে আমার মুখ চেপে ধরে বলে।

— তোকে আর কতো নিষেধ করবো বল তো। তুই অন্য কারো সাথে কথা বললে আমি ঠিক থাকতে পারি না। তাও তুই এটা ই করিস। আমার কী পরিমান রাগ হয় তোকে বুঝাতে পরাবো না।

আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে এটা দেখে শুভ্র মুখ ছেড়ে দিলো।

— আমার কথাটা তো শোনবেন।

তোর মুখ থেকে আমি কিছু শোনতে চাই না এটা বলে বাহিরে বের হয়ে যায়। দরজা লক করে।

কেউ এই রুমের লক খুলবে না বলে দিলাম। তাহলে আজকে কী যে হবে আমি নিজে ও জানি না।

আমি বসে কাঁদছি, কী আর করবো। হঠাৎ দরজার বাহির থেকে কে যেনো ডাকলো।

— অহনা মা আয় তো দরজার কাছে। না হয় জানালার টা খোল।

আমি দৌড়ে গিয়ে জানালা খুললাম। দেখলাম শুভ্রর মা।

— কী হয়েছে রে আমার ছেলেটা এমন রেগে গেলো কেনো।

মা কে সব খুলে বললাম। সব কিছু শোনে উনি বললো,

—আমার ছেলেটা একটু ঐ রকম ই তুই কিছু মনে করিস না মা। তোকে অনেক ভালোবাসে রে তাই কারো সাথে তুই কথা বললে সহ্য করতে পারে না।
তুই চিন্তা করিস না রাগ কমলে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

—আমার আম্মু জানতে পারলে অনেক সমস্যা হবে। উনি নিতে পারবে না এসব। আর রিমি আপু ও মেনে নিবেনা ব্যপার টা।

— আরে পাগলি এতো টেনশন করিস কেন।

আচ্ছা আমি যাই দেখি তোর জন্য কী করতে পারি।
এটা বলে মা চলে গেলো।

প্রায় অনেকটা সময় পর,

শুভ্র রুমে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো।আমি কিছু ই বুঝতে পারলাম না। ভাবছি ছেলে মানুষ এভাবে কান্না করতে পারে নাকি।

— তোমার আম্মু এসেছে তোমাকে নিতে। তুমি কিন্তু যাবে না আমাকে ছেড়ে।

— কী আম্মু আসছে কী বলেন আমি কীভাবে যাবো আম্মু সামনে। কী ই বা বলবো আম্মু সামনে। আল্লাহ বাচাও আমাকে।

আম্মু সামনে যাওয়ার পর, আম্মু আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

— ফুপি মেয়েকে ঠিক মতো রাখতে পারো না , এতো লোভ কেনো তোমাদের, বড়লোক ছেলে দেখে একবারে আামর বিয়ে হওয়া মাএ ই আমার দেবর এর কাধে ঝুলিয়ে দিতল হলো।

পিছনে তাকিয়ে দেখলাম রিমি আপু মুখখানা মলিন করে এই কথাটা বললো আমার চোখ থেকে এমনি পানি পড়তে লাগলো। কী বললো এটা। শুভ্র কী কিছু বলবে নাকি সে ও অপমান করবে।

চলবে,