সেদিন মুষুলধারে বৃষ্টি ছিল পর্ব-১২

0
719

#সেদিন_মুষুলধারে_বৃষ্টি_ছিল
part–12
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

ফযরের নামাজের পর সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠে মনোয়ারা আক্তার বাগানে এসে বসলেন। উনি এসে বসতেই বাসার কাজের লোক এক কাপ চা,বিস্কুট দিয়ে গেল সঙ্গে পান। তিনি প্রতিদিন সকালে এক কাপ চা আর দুই পিস বিস্কুট খাবেন। এরপর একটা পান।

তারপর ঘন্টা খানেক পর বাড়ির সবার সাথে নাস্তা সারবেন।

আজকে মনোয়ারা আক্তারের মেজাজ অত্যন্ত খারাপ। তাই তিনি বিস্কুট খেলেন না। চা খেয়েই মুখে পান পুড়ে নিলেন।

যাদের পান খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাদের রাগ উঠলেই পান খাওয়া চাই-ই। নাহলে রাগের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে!

মুখভর্তি পান খেতে খেতে পানের পিক ফেলে দিলেন তিনি ।

তিনি যখন প্রচুন্ড রেগে থাকেন সাধারণত তখনই মুখ থেকে পানের পিক ফেলেন যেখানে-সেখানে। মনোয়ার আক্তার মূলত দুই-তিন কারনে রেগে আছেন।

প্রথমত মুহিব বিয়ের পরপর কারো কোন কথা না শুনে ঢাকায় চলে গেল। আজকে সাত দিন হতে চললো ছেলের আসার নাম নাই। নতুন বউ বাপের বাড়ি পড়ে আছে। মুহিব নাকি তাকে বাপের বাড়িতে থাকতে বলেছে এজন্য ছোট বউমা আর শ্বশুড়বাড়ি আসছে না। তিনি নিজে ফোন করিয়েও সেজুতি কে এবাড়িতে আনাতে পারেন নি৷ মেয়ের সাহস দেখে তিনি অবাক।

এই দুই কারনে তিনি গত সাত দিন যাবত রেগে আছেন। কালকে রাতে আরো একটা ঘটনা ঘটেছে যার জন্য তিনি বেজায় ক্ষেপে আছেন। যদিও সেটা ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে।

এই বয়সে আর ব্যবসা-বাণিজ্য তার ভালো লাগছে না। দুই ছেলে থাকতেও অনেক কিছু তাকেই সামাল দিতে হচ্ছে। এই নিয়েও তার ছেলেদের প্রতি রাগ! শরীর টাও ভালো যাচ্ছে না। অসুখ লেগেই আছে। পড়শু দিন প্রেসার বেড়ে গিয়ে খুব বাজে অবস্থা হয়েছিলো তার৷

উনি উঠে দাড়ালেন। আরেকটু ঘুমাতে পারলে ভালো হয়। কালকে সারারাত ঘুম হয় নি তার। প্রেসারের ঔষধ নিতে হবে।

মনোয়ারা আক্তারের দিন-কাল ভালো যাচ্ছে না। তার দলের মধ্যে গ্যাঞ্জাম চলছে। এরা যখন-তখন নিজের মধ্যে হামলে পড়বে। তাহলে অনেক বড় লস হবে তার৷ এছাড়াও এতো দিন তার সঙ্গে সেইসব বড় বড় ব্যবসায়ীদের রগে রগে ভাব ছিলো। উঠতে বসতে জি আপা জি আপা করত এরা আজ-কাল প্রতিদ্বদ্বী পার্টির সঙ্গে খাতির লাগিয়েছে। সরকারি কমকর্তাদের সঙ্গেও তেমন একটা ভাব জমছে না। ডিসি সাহেব কঠিন লোক। কিছুতেই তাকে হাত করা যাচ্ছে না। জনগণ অবশ্য তার পক্ষে আছে। কিন্তু রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য জনগনের কোন ভূমিকা নেই। এরকম চলতে থাকলে তো আগামী বছর সে আর আসন ধরে রাখতে পারবে না৷

যে পরিবার বংশ পরম্পরায় রাজনীতি করে, সেই পরিবার থেকে যদি রাজনৈতিক ক্ষমতা হারিয়ে যায়, তবে তাদের বিনাশ ঘটে।

মনোয়ার আক্তারের মনে হচ্ছে তাদের পরিবারের বিনাশ ঘটতে চলেছে৷ কালকে সারারাত রাতে ঘুমাতে না পারার কারন হলো,
তার ম্যানেজার জানিয়েছে, তাদের এক নারী কর্মী মারা গেছে।

মেয়েটার মারা যাওয়া মনোয়ারা আক্তারের না ঘুমানোর কারন না। বরং এমন অনেক মেয়েই মারা যায়। এতে অভ্যস্ত হয়ে আছেন তিনি। কিন্তু, এই প্রথম পুলিশ ঝামেলা করছে। পুলিশের ঝামেলা করার কথা না। কিন্তু তবুও এরা সমস্যা তৈরি করছে৷ কে বা কারা যেন কেইস ফাইল করেছে৷ নিশ্চয়ই বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র এটা।

কিন্তু কথা হলো মেয়েটা যে মারা গেছে এইটা পুলিশের কানে গেল কেমনে? তাহলে কি তার গোপন সোনার ডিম পাড়া রাজহাসের খবর লোকে আস্তে আস্তে জানতে শুরু করেছে?
কি সাংঘাতিক ব্যাপার!

এইসব কিছু মুহিবের বিয়ের পর থেকে ঘটছে৷ এতো অল্প কয়েকদিনে এতো দুর্ঘটনা কেন ঘটছে কে জানে? এই সেজুতি নামের মেয়েটা তার জন্য অলক্ষী!

ঘরের বৌকে লক্ষী হতে হয়। সংসারের মঙ্গল ঘরের বৌ আচলে বেধে আনে ! এই মেয়ে নিশ্চয়ই অমঙ্গল আচলে বেধে এনেছে। এখন একটা পর একটা খারাপ ঘটনা চলতেই থাকবে৷

শোভা যখন বৌ হয়ে এলো সে মাসে তারা তিন গুণ মুনাফা অর্জন করলো। শুধু তাই না দশ-বারো জন নতুন কাস্টমার পাওয়া গেল যাদের কম বেশী সবাই খুব ক্ষমতাশালী ছিলো।

অথচ ছোট বৌ আসা মাত্র সব লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে৷

★★★

সেজুতি এখন প্রায় প্রতিদিনই নিজ উদ্যোগে নাস্তা বানায়। আজকেও ব্যতিক্রম হয় নি। সে আলুর পরোটা বানাচ্ছে।রান্না-বান্না করতে তার খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে নতুন-নতুন আইটেম বানানোর সময়টা দারুণ উপভোগ করে সেজুতি।

আজকে বিকেলে স্পেশাল কিছু করলে মন্দ হয় না।

পরোটা ভাজতে ভাজতে সেজুতি একটা দম ফেললো। আজকে নিয়ে সাতটা দিন চলে যাচ্ছে মুহিব একবারো তাকে কল পর্যন্ত দেয় নি। এইজন্য সেজুতি প্রচুন্ড কষ্ট পাচ্ছে ভেতরে-ভেতরে। বিয়ে যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন মুহিব তো প্রথম প্রথম বেশ স্বাভাবিক আচরণ করছিলো। এখন হুটহাট যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার মানে কি?

সেজুতি পরোটা গুলো প্লেটে সাজিয়ে টেবিলে নিয়ে গেল।

শোভা আপা প্রতিদিন বেশ কয়েক বার করে ফোন দিয়ে তাকে বুঝাচ্ছে যে ওই বাড়িতে চলে যেতে। আম্মা নাকি রেগে আছেন।

সেজুতিও জেদ ধরেছে যে, সে ওই বাসায় যাবে না।একান্ত মুহিব এসে না নিয়ে গেলে সে আর কোন দিন ওই বাসায় যাচ্ছেনা।

সেজুতি টেবিলে খাবার দিয়ে বাবাকে ডাকতে গেল। বাবা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ডাইনিং রুমে এসে বসলেন। সেজুতি খাবার বেড়ে দিলো।

তিনি খেতে খেতে বললেন, শোভা আর তাওহীদ তো আবার চেন্নাই যাচ্ছে৷

সেজুতি ভ্রু কুচকে বলে, কেন?

তিনি অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বলে উঠে, কেন আবার? চিকিৎসার জন্য। চেন্নাইয়ের ডাক্তাররা খুব ভালো চিকিৎসা দেয়৷ আমার মন বলছে এবার আল্লাহ সহায় হবেন।

সেজুতি ফোস করে শ্বাস ছেড়ে বলে, আব্বু আমি কি খুব জেদী?

— তা তো বটেই৷

সেজুতি ফট করে চটে গিয়ে বলে, মোটেও আমি জেদী না!

সেজুতির বাবা হোহো করে হেসে উত্তর দিল, নিজের স্বভাব তো নিজে বুঝবে না। তুমি যে কতোটা জেদী এটা আমি আর তোমার আপা জানি। একবার কি করলে শোন! তখন ক্লাস ফাইভে পড়তে, তোমার মাথায় আগে উকুন ছিলো। তোমার কোন বান্ধবি যেন এই নিয়ে ক্লাসে হাসাহাসি করলো। তুমি বাসায় এসে প্রথমে নিজে নিজেই উকুন বাছা শুরু করলে। তাতেও কাজ না হলে একেবারে সব চুল কেটে চুলহীন মেয়ে হয়ে গেলে। হাহা।

সেজুতি বিরক্তি প্রকাশ করে।

উনি বলে উঠে, পরোটা খুব মজা হয়েছে রে মা। তোমার মা বেচে থাকলে খুব খুশী হত৷

— কেন?

— মায়ের চেয়ে যদি মেয়ে ভালো রাধুনি হয় তাহলে মায়েরা খুব খুশী হয়। আর তুমি একজন চমৎকার রাধুনী।একবার যে তোমার হাতের রান্না খাবে, সে আজীবন এই হাতের রান্নার স্বাদ মনে রাখবে।

সেজুতি স্মিত হাসলো। খাওয়া শেষ করে সেজুতি রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে বসে রইল।

বারবার ডায়াল লিস্টে গিয়ে ফেরত আসছে সে।ওই যে সে জেদী। তবে সে কেন আগে কল দিবে? যে দূরে গেছে, সে ফোন দিবে।

সেজুতি তো কোথায় যায় নি। নিজের বাসাতেই আছে তাই কাউকে কল দেওয়ার প্রয়োজন নেই তার।

হুট করে ফোন বেজে ওঠে। সেজুতি মনে মনে খুশি হয়ে যায়। নিশ্চয়ই মুহিবের কল করেছে। সেজুতিকে হতাশ করে দিয়ে ফোনটা করল শোভা আপা৷

সেজুতি আসলেই হতাশ হলো। আপার সঙ্গে দিনে চার-পাঁচ বার কথা হয়। আর এদিকে সাত দিনে একটা কল দিতেও মুহিবের হাত পুড়ে যাচ্ছে। যত্তোসব!

সে ফোন রিসিভ করতেই শোভা আপা হড়বড় করে বলে উঠে, এই সেজু শোন!

— হ্যা বল। আপা?

— আমি আর তাওহীদ তো চেন্নাই যাচ্ছি৷

— শুনলাম আব্বুর কাছে।

— চেন্নাইয়ে একজন অনেক ভালো গাইনীর ডাক্তার আছে। ওনাকে দেখাব।

— আচ্ছা!

— আমি মুহিবকে কল দিয়ে বললাম, তোরাও চল। কিন্তু মুহিব বলল সে পারবে না। কাজ আছে। দেখ তো কেমন লাগে? আমাকে কাজ দেখায়!

সেজুতি হতভম্ব হয়ে বলে, আমরা কেন যাব চেন্নাই?

— ঘুরতে! তামিল নারু নাকি অনেক সুন্দর। তোর দুলাভাই বললো।

— দুলাভাই গিয়েছে তামিল নারু?

— না যায় নি।

— তাহলে জানলো কিভাবে সুন্দর?

— আহা! চুপ কর তো৷ মানুষটার উপর দিয়ে ওলরেডি অনেক চাপ যাচ্ছিলো। চাপের ভারে বেচারা শুকিয়ে গেছে। চার কেজি ওজন কমেছে তোর দুলাভাইয়ের।

— ও।

— ব্যবসায় এতো ঝামেলা! শোন মুহিবকে খবরদার রাজনীতি করতে দিবি না। ওর কিন্তু করার শখ আছে। ব্যবসা করছে। করুক। রাজনীতি তে যেন না ঢুকে।

–হু৷

— ভাবলাম তুই আর মুহিব ও যাবি আমাদের সঙ্গে। ঘুরবি তোরা। বিয়ের পর তো একসাথে থাকলি ই না। বিয়ের পরের দিন গুলো যে কতোটা মধুর হয় তাতো বুঝলিই না তোরা।

— আপা পরে কথা বলি?

— কেন?

— মাথাব্যথা করছে৷

— সেকি! কেন? রাতে ঘুম হয় নি?

— হয়েছে। তবুও মাথাব্যথা ।

— তাহলে রাখছি কেমন?

— হু।

আপা ফোন রেখে দিলে সেজুতি বারান্দায় গেল। আপাকে সে মিথ্যা বলেছে। তার গত দুই রাত ধরে ঘুম হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না সে জানে না। বিছানায় যাওয়ার আগ অব্দি ক্লান্ত থাকে, কিন্তু বিছানায় শুলে আর ঘুম আসে না। ওই সময়ে ফোন চালাতেও মহাবিরক্ত লাগে। ছটফট করে রাত পার করছে।

দুই রাত জাগার ফলে তার চোখের নিচে একটু কালি পড়ে গেছে। এছাড়াও অনেক এলোমেলো চিন্তা এসে ভর করছে মাথায়।

এই যেমন– মুহিব যদি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়? তখন কি হবে? বাসায় মুখ দেখাবে কিভাবে? আব্বু বা আপা কেউ সত্য জানে না। তারা জানে তার সঙ্গে মুহিবের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। আব্বু প্রথমে রাজী ছিলো না।

সেজুতি জেদ ধরে এই বিয়েতে বাবাকে রাজী করিয়েছে৷ এর জন্য সে দুই দিন না খেয়ে অব্দি ছিলো। পরে বাবা রাজী হয়ে যায় তার সুখের জন্য। এখন ভাবলেই তার রাগ লাগছে এই বেয়াদব ছেলেটাকে বিয়ে করার জন্য নাকি সে দুইদিন না খেয়ে ছিলো!

দুলাভাই অবশ্য জানেন আপার কমপ্লিকেশন এতোটাই বেড়ে গেছে যে মা হওয়ার চান্সেস আর নেই। এটা থাইল্যান্ডের ডক্টর রিপোর্ট দেখে প্রেডিক করেছে। থাইল্যান্ডে গিয়েও কাজ হলো না। এখন ছুটছে চেন্নাই। চেন্নাইতেও কোন গতি নাহলে দেখা যাবে দুলাভাই আপাকে নিয়ে কানাডা যাবেন। চেষ্টার কোন কমতি নেই।

শোভা আপা বড্ড অদ্ভুত স্বভাবের। তার মন খারাপ ভাব বেশীক্ষন স্থায়ী থাকে না। অল্প তেই খুশি হয়ে যায়। এই যে দুলাভাই হৈচৈ করে চেন্নাই নিয়ে যাচ্ছে। এতে আপা আগের সব দুঃখ ভুলে যাবে। কি অদ্ভুত! তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছে। দেখে মনে হবে সামার ভ্যাকেশন করতে যাচ্ছি। খুশী-খুশী ভাব মুখে সর্বদা থাকবে। ফোন দিয়ে ঘন্টা খানেক।চমৎকার সব গল্প বলবেন। বিদেশে থেকে পারসেল পাঠাবে সেজুতিকে। ফেরত আসার সময় একগাদা গিফট নিয়ে ফিরবেন। কে বলবে শোভা নামের এই চমৎকার মহিলাটার এতো বড় কষ্ট আছে?

এদিকে মুহিবের আম্মা ও কম আজব নন! সে কি ভেবে তাকে পুত্রবধূ করতে চাইলেন কে জানে? সেজুতিকে ওনি যেই লজিক দেখিয়েছেন সেটা সেজুতির কাছে বুলশিট মনে হয়েছে। আপা কন্সিভ করছে না এজন্য তাকে যদি মুহিব বিয়ে করে এতে লাভ কি? মানে এমন তো না যে মুহিব আর সেজুতির সন্তান হলে আপাকে দিয়ে দিবে। এটা অসম্ভব !

এইসব ফ্যাক্ট তখন সেজুতির মাথায় ছিলো না। ওই সময় মনোয়ারা আক্তার এমন একটা কথা বলেছিলো যার জন্য সে আর এক দন্ড ভাবতে পারেনি। সঙ্গে সঙ্গে মুহিবকে বিয়ে করার জন্য রাজী হয়ে যায়।

উনি বলেছিলেন, সেজুতি যদি মুহিবকে বিয়ে না করে তবে উনি আব্বুকে মিথ্যা পুলিশ কাচারি মামলায় ফাসিয়ে জেলে পাঠাবে।

সেজুতি জানত এই মহিলা খুব ডেঞ্জেরাস। লোক মুখে শোনা। সেদিন এর প্রমাণ ও পেয়ে যায় সে।প্রচুর ভয় পেয়েছিল সে। সেজুতির বাবা একজন ব্যবসায়ী। রোজগার খারাপ না। বেশ ভালো।কিছু তাদের এতো ক্ষমতা ও নেই যে মনোয়ারা আক্তারকে টেক্কা দিবে।

তাই মুহিবকে বিয়ে করতে দ্বিমত করেনি সে।

সেজুতি ফোনটা হাতে নিল এবং মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে মুহিবকে কল লাগায়। কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ফোন রিসিভ করলো না।

এজন্য সেজুতি মনে মনে রেগে গেল। আর দিবে না সে কাউকে ফোন! অসহ্য! মুহিব তার ফোন ধরলো না ব্যাপার টা ভাবতেই রাগ লাগছে সেজুতির।

★★★

মুহিব এতোক্ষন যাবত বাথরুমে ছিলো। বাথরুম থেকেই সে ফোনের রিংটোন শুনতে পেয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই।সে সময় নিয়ে বাথরুমের সব যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বের হয়ে ফোন হাতে নিতেই, চমকে উঠে। গা বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায়।সেজুতি কল দিয়েছিলো! তার যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না। সে দ্রুত কল ব্যাক করলো। কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ধরলো না। সে পরপর তিনবার কল দিলো। কিন্তু ধরলো না সে।

এতে করে মুহিবের ও রাগ উঠে যায়। সে ফোন ডেস্কে রেখে চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ে।

যে মেয়ে তার হ্যাসবেন্ড কে সি অফ করতে আসে না, তাকে কেন মুহিব কল দিবে?

নতুন বিবাহিতা মেয়েরা স্বামী ছাড়া থাকতেই চায়না। স্বামী যদি দুই ঘন্টার জন্য বাইরে যায়, তারা ফোন দিয়ে দিয়ে অস্থির করে তুলে অভিমানী সুরে বলবে, ওগো কখন ফিরবে?

আর যদি নব বিবাহিতা মেয়েদের স্বামী তাদের রেখে দূরে কোথায় যায়, তবে সেই মেয়ে গুলো বিদায় বেলায় কেদে কেদে একাকার করে ফেলে আর তার বউ!খোজ অব্দি নেয় না! হুহ।

মুহিবের এতো গরজ পড়েনি সেজুতির সঙ্গে কথা বলার ! ওর সাথে কথা না বললে মুহিব মরে যাবে না। তবে হ্যা প্রাণটা ছটফট করছে সেজুতির কন্ঠ শোনার জন্য।

তখনি আম্মার ফোন এলো। মুহিব রিসিভ করতেই মনোয়ারা আক্তার বলে উঠে, মনে হচ্ছে তুমি তোমার ওয়াদার কথা ভুলে গেছো?

মুহিব বলে উঠে, কোন ওয়াদার কথা?

— সেজুতির সঙ্গে বিয়ে হলে তুমি আমার সঙ্গে রাজনীতি করবে। আগামী বার আমার পরিবর্তে তুমি দলের প্রধান হবে। ভুলে গেছো নাকি?

— না। মনে আছে।

— তোমার একটা সাহায্য লাগবে আব্বা।

— কি?

— ব্যবসার একটা মেয়ে মারা গেছে।

আম্মার মুখে এমন কথা শুনে মুহিব আতকে উঠে।

মনোয়ারা আক্তার বলে উঠে, এটা ভয় পাওয়ার কোন বিষয় না আব্বা। ভয় কেন পাচ্ছো! এরকম প্রতি মাসেই এক-দুই জন মেয়ে মারা যায়।কিন্তু এইবার গন্ডগোল হয়েছে। কথা হলো পুলিশ ঝামেলা করছেন।আমি চাই তুমি ব্যাপার টা সামলাও।

— আমি কিভাবে সামলাবো?

— টাকা লাগলে টাকা দিবে। ক্ষমতার জোড় লাগলে তা প্রয়োগ করবে। বুদ্ধির খেলা হলে বুদ্ধি নিয়ে খেলে জিতবে। তবে সবকিছু ধামাচাপা দিতে হবে। নাহলে বিপদ সন্নিকটে।

মুহিব কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। তখনি আমেরিকা এম্বাস্যি থেকে কল আসলো।

মুহিব কিছু না বুঝেই ফোন রিসিভ করতেই তাকে জানানো হলো দ্রুত এয়ারপোর্টে যেতে।

মুহিব আশ্চর্য হলো। কি এমন হলো যে এয়ারপোর্টে যেতে হবে?

সে গাড়ি নিয়ে বের হলো।সমস্ত রাস্তা চিন্তায় ঘেমে গেল সে।

ঘন্টা খানেকের মধ্যে এয়ারপোর্টের সামনে এসে পৌছে সেই ব্যক্তিকে কল দিলে তিনি স্পষ্ট ইংরেজি ভাষায় বলে,

এয়ারপোর্টের ভেতরে তোমার ছেলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।

মুহিব পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলো। মাথা ভোভো করছে তার৷

চলবে।