ক্যামেলিয়া পর্ব-০২

0
1

#ক্যামেলিয়া
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ২]
❌কপি করা নিষেধ❌

“ইনায়া?”

পুরুষালী কন্ঠে ডাকলো কেউ। শীতল কন্ঠস্বর কর্ণধার হওয়া মাত্রই শিউরে উঠলো যেন ইনায়া। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে সে। মাত্র তার সাথে ঘটা সবকিছু নিয়েই ভাবছিলো। এবার পিছু ঘুরলো। ধ্রুব! ধ্রুব আহসান! লোকটাকে দেখা মাত্রই অদ্ভুত লাগলো তার। লোকটা তার স্বামী! সে বিবাহিত! কথাটা ভাবতেই কেমন লাগলো।

“ইনায়া?”

ইনায়া তাকালো ধ্রুবর দিকে। কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা। ইনায়া তার দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো—“জ্বি?”

ধ্রুব হাসলো বোধহয় হালকা। ঠোঁটের কোণটা সামান্য উঁচু হলো একপাশে। ইনায়ার ভালো লাগলো তা। বেলকনির দরজায় পিঠ এলিয়ে দাঁড়ালো। ধ্রুবর চোখে চোখ রেখেই বলল—“বলুন?”

ধ্রুব এগিয়ে এলো দু পা। ইনায়া চুপচাপ ভ্রু গুটিয়ে সবটা দেখছে। ধ্রুব বলল—“বসে কথা বলি?”

ধ্রুবর কথায় ইনায়া এক মুহূর্ত চুপ থেকে ভ্রু কুঁচকালো। সে বলল—“ কী কথা?”

ধ্রুব খানিকক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর সামান্য হাসলো। তারপর শান্ত স্বরে সে বলল—“বসে বললেই তো পারি।”

ইনায়া দরজার ফ্রেমে হেলান দিলো। হাত গুটিয়ে বুকের সামনে নিয়ে এলো, গলায় একরকম উদাসীনতার ছাপ ফুটিয়ে বলল—“আমি দাঁড়িয়ে বেশ আছি। আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন, আমি শুনছি।”

ধ্রুব এবার সত্যি সত্যি হাসলো। খুব ক্ষীণ, কিন্তু গভীর—“তুমি সবসময়ই এমন রুড?”
“আমি অলয়েজ এমন, রুড কিনা জানি না।” কাঁধ ঝাঁকালো ইনায়া।

ধ্রুব এবার আর কথা বাড়ালো না। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বেলকনির রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। ইনায়া একটু সতর্ক হলো। ধ্রুব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল—“তুমি নার্ভাস?”

ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়—“এমন কেন মনে হলো?”

ধ্রুব সংক্ষেপে বলল—“কারণ আমি বুঝি।”

ইনায়া এবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো—“দেখুন, আমাদের বিয়েটা হয়েছে হুট করে, বলা যায় একরকম বাধ্য হয়েই। আমি এই মুহূর্তে কিছু বুঝতে চাই না, মানিয়ে নিতে চাই না, কিছুতেই অভ্যস্ত হতেও চাই না। আপাতত আমি শুধু কিছুটা সময় চাই।”

ধ্রুব কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তার দিকে, তারপর আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে বলল—“ঠিক আছে। তুমি তোমার সময় নিতে পারো। তবে একটা কথা। এই বিয়েকে অস্বীকার করবে না। ইটস্ আওয়ার ফেইট। আর আমাদের এটা মানতেই হবে। সেটা আজ হোক বা কাল।”

ইনায়ার কপালে ভাঁজ পড়লো। ধ্রুব কি বলতে চাইছে? সে কিছু বলার আগেই ধ্রুব সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল—“তোমার রাত জাগার অভ্যাস আছে, তাই না?”

ইনায়া চোখ সরু করলো। কন্ঠে বিস্ময় নুয়ে বলল—“আপনার তো এত কিছু জানার কথা না। আপনি কি করে জানেন এসব?”

ধ্রুব হাসলো—“আমার জানা উচিত, কারণ আ’ম ইউর হাজবেন্ড।”

এই বলে ধ্রুব পেছনে ঘুরলো, তারপর ধীরস্থির পায়ে বেলকনি থেকে বেরিয়ে গেলো। ইনায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার পেছনে। লোকটা সত্যিই অদ্ভুত!
“ঘুমিয়ে পড়ো। রাত জাগা, ইজ নট গুড ফর ইউর হেল্থ।”

ইনায়া এগিয়ে এসে দাঁড়ালো ঘরে। ধ্রুব ততক্ষণে শুয়ে পড়েছে বিছানায়। ইনায়া হালকা গলায় বলল—“কাউকে না বলে তার বিছানায় শুয়ে পড়া, ইটস্ আ ব্যাড ম্যানার।”

ধ্রুব চোখ বন্ধ রেখেই হাসলো। যেন ইনায়ার কথাটা খুব একটা বিস্ময়ের নয় তার কাছে। তারপর চোখ খুলে পাশ ফিরলো, মাথা একহাতের ওপর রেখে বলল—“কি বলতে চাও, আমি অন্য কোথাও গিয়ে শুই?”

ইনায়া ভ্রু কুঁচকালো। কীভাবে এত স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বলছে ধ্রুব! যেন কিছুই হয়নি। সে জবাব দিলো—“আমি বলতে চাইছি, আপনি অনুমতি নিতে পারতেন।”

ধ্রুব এবার একদম উঠে বসল। ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল—“আমরা বিবাহিত। আমাদের মধ্যে অনুমতির বিষয়টা কি আদৌ জরুরি?”

ইনায়া এবার চোখ সরু করলো। কন্ঠ শীতল হয়ে এলো তার—“বিয়ে? আপনার সাথে আমার বিয়েটা আমার কাছে অন্তত কাগজ কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর বেশি কিছু না। সো ইউ হ্যাভ টু টেক মাই পারমিশন।”

ধ্রুব হাসলো আবার। বিছানার হেড বোর্ডে হেলান দিয়ে বসে বলল—“হোয়াট ইফ, এখন আমি তোমার আর এই বেড; দুটোরই দখলদারি নিয়ে নেই?”

ইনায়া চমকে তাকালো তার দিকে। তারপর মুখভঙ্গি স্বাভাবিক করে বিদ্রুপ হেসে জিজ্ঞেস করল—“স্পর্শ চাইছেন?”
“খুব করে চাইছি!”
“তাহলে এই জীবনে আমার স্পর্শ আর আপনার পাওয়া হবে না।”

ধ্রুব এবার চুপ করে তাকিয়ে রইলো তার দিকে, হাসিটা আরও গভীর হলো—“তুমি খুব ইন্টারেস্টিং।”

ইনায়া একদম ধীরভাবে বলল—“আপনিও খুব বিরক্তিকর।”

ধ্রুব মুচকি হাসলো। তারপর বলল—“টিচার হই তোমার। ডু সাম রেসপেক্ট।”

ইনায়া হালকা করে মাথা ঝুঁকিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল—“আমরা কি এখন ভার্সিটিতে স্যার?”
“না!”
“তাহলে?”
“স্টুডেন্ট হয়ে টিচারের সাথে এমন করছো, লজ্জা করছে না?”
ইনায়া পাল্টা জবাব দিলো—“আপনি টিচার হয়ে স্টুডেন্টকে বিয়ে করেছেন, আপনার লজ্জা করছে না?”

ধ্রুব হাসলো। মেয়েটার এই তেজ! এই রূপই তো তার ভালো লাগে। মেয়েটা এমন না! সে হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালো। বেশ রাত হয়েছে! সে এরপর ইনায়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল—“ঘুমাবে না?”
“আপনি ঘুমান।”
“আমি ঘুমাবোই। তুমিও ঘুমাও।”
“তো ঘুমান।”
“তুমিও এসো। ঘুমাবে এখন। এভাবে ঝগড়া করলে পুরো রাত শেষ হয়ে যাবে, বাট তোমার ঝগড়া? সে আর শেষ হবে না।”

ইনায়া উঠে দাঁড়ালো চেয়ার ছেড়ে। হতবাক গলায় জিজ্ঞেস করল—“আপনি বিছানায় ঘুমাবেন?”
“হ্যাঁ?”

ইনায়া আবার জিজ্ঞেস করল—“আমিও বিছানায় ঘুমাবো?”

ধ্রুব ঘাড় উঁচিয়ে একদিক ওদিক উঁকি ঝুঁকি মারলো। তারপর বলল—“রুমে বুঝি আরেকটা বেড আছে?”
“না।”
“তবে? আর কই ঘুমাবা?”

ইনায়া বিরক্ত হলো ঢের। এখন ধ্রুবর সাথে একসাথে ঘুমাতে হবে তাকে? তাও একই বিছানায়? সে মরে যাবে! লজ্জা তার নেই। তবে যা আছে তা অস্বস্তি। অসম্ভব অস্বস্তিতে সে ডুবে যাবে। সে বলল—“আমি বিছানায় ঘুমাবো না।”

ধ্রুব ভ্রু গুটিয়ে তাকালো। আচমকা নির্লজ্জের মতোন বলে বসলো—“কেন? বিছানায় ঘুমোলে কি আমি তোমায় খেয়ে ফেলবো?”

ইনায়া চোখ বড়বড় করে তাকালো। মুখ কুঁচকে বলল—“আপনি—! মুখের ভাষা এমন কেন আপনার?!”

ধ্রুব নির্লিপ্ত মুখে কাঁধ ঝাঁকালো। বলল—“আর কি বলবো? যা রংঢং করছো তুমি, এতে আর কি বলবো তোমায় বলো?”

ইনায়া ক্ষিপ্ত হয়ে তাকালো তার দিকে। তারপর ধুপধাপ পায়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো দূরত্ব রেখে। ধ্রুব হাসলো। বাতি নিভিয়ে নিজেও শুতে গেলে ইনায়া ক্ষ্যাপাটে গলায় বলল—“দূরে থাকবেন৷ কাছেও ঘেঁষবেন না।”
“তুমি না বললেও আমি ঘেঁষতাম না। আমার ইচ্ছাও নাই কোনো। নিজের উপর কন্ট্রোল আছে আমার।”

ইনায়ার কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো যেন। এতো লাগাম ছাড়া কেন এই লোকটা? সে অপর পাশ ফিরে শুলো। বিরক্ত মুখে বিড়বিড় করে বলল—“নির্লজ্জ লোক!”

#চলবে…