#ক্যামেলিয়া
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ৪]
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
খাবার টেবিলে হইচইপূর্ণ অবস্থা। ধ্রুবর খাতিরদারি চলছে প্রচুর। তার পাত ভরতি বিভিন্ন খাবারে। বেচারার অবস্থা করুণ৷ না পারছে খেতে, না পারছে না করতে। ইনায়া তার পাশের চেয়ারে বসা। চুপচাপ সব দেখছে। ইনায়ার দিকে ধ্রুব অসহায় মুখে তাকালো। ইনায়া একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। চুপচাপ নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। ধ্রুব হতাশ হলো। তখন সুমিতা বেগম বললেন—“বাবা, মাছ দেই? খাও?”
ধ্রুব অসহায় মুখে তাকালো তার দিকে। বহু কষ্টে হেসে বলল—“আর পারবো না আম্মু। এতটুকুই খেয়ে নেই।”
রহমান সাহেব ঘোর আপত্তি করলেন—“এতটুকু খেলে হয়? তোমার মতোন বয়সে আমরা এর ত্রিপল খেতাম। তারপরেও আরো খাবার নিতাম। আর তুমি এতটুকুই পারছোনা না? মাছটা নাও। ভালো লাগবে খেতে।”
ধ্রুব জোরপূর্বক হাসলো। কিছু বলার আগে ইনায়া হালকা গলায় বলল—“খেতে পারছে না হয়তো। জোর কোরো না৷”
রহমান সাহেব মেয়ের কথায় চুপ করে বসলেন। ভদ্রলোক আবার মেয়ে দুজনের কথা মানে বেশ। ধ্রুব কৃতজ্ঞ হলো যেন ইনায়ার প্রতি। তারপর নিজের পাতের খাবার টুকু শেষ করতে ব্যস্ত হলো। ইশিতা আর ইশমাম কর্ণারের একটা চেয়ারে বসা ছিলো। এসব দেখে তারা কোনোমতে নিজেদের হাসি চেপে রেখেছে।
_____
খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চুকতেই ধ্রুব তৈরি হলো বাড়ি যাওয়ার জন্য। রহমান সাহেব আর সুমিতি বেগমসহ সকলেই বেশ জোর করলো তাকে দুপুরের খাবারটা খেয়ে একবারে যাওয়ার জন্য। সে শুনলো না। অজুহাত হিসেবে দেখালো, কিছু জরুরি কাজের ছুতো। ইনায়া অবশ্য কিছুই বলেনি। রহমান সাহেবের সাথে কথা বলে ধ্রুব ইনায়ার ঘরে এলো। দেখলো মেয়েটা বসে আছে বিছানায়। কোলে বই। ধ্রুব দরজা চাপিয়ে ধীর পায়ে ভেতরে এসে দাঁড়ালো। ইনায়া বোধহয় তখনও বোঝেনি সে এসেছে। ধ্রুব তাকালো ইনায়ার দিকে, তার কানে ইয়ারবাড। পেছনে দাঁড়িয়ে ধ্রুব হালকা ঝুঁকে ইনায়া কি পড়ছে দেখার চেষ্টা করলো। ইংলিশ বুক এটা। কিছু লাইন পড়েই চোখ বড়বড় করে ফেললো ও। এসব কি পড়ছে ইনায়া! মুখ ফুটে অস্পষ্ট স্বরে বেরিয়ে এলো—“আসতাগফিরুল্লাহ!”
ইনায়া চমকে উঠলো। একদম কানের পাশে পাশে বলায় সে শুনতে পেয়েছে। চমকে উঠে কিছুটা পিছিয়ে গেলো সে। ধ্রুবকে দেখে জলদি বই সরিয়ে নিজের পেছনে রাখলো৷ ক্ষেপাটে গলায় বলল—“এভাবে কি দেখছেন? দূরে যান!”
ধ্রুব সরেই দাঁড়ালো। মুখ কুঁচকে তাকিয়ে বলল—“এসব পড়ো তুমি?”
ইনায়া আমতাআমতা করলো—“কিসব?”
“সিরিয়াসলি ইনায়া? আমি তোমায় সভ্য ভেবেছিলাম!”
বলেই মিটমিট করে হাসলো সে। ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল—“তো আমি কি অসভ্য?”
“না, বাট বইয়ের সিনারিওগুলো অসভ্য।”
“আপনার মতো।”
ধ্রুব শুনেও শুনলো না। তার হাত থেকে বইটা নিয়ে বলল—“শোনো, এসব পড়ার বয়স তোমার এখনো হয়নি৷ বয়স হলে তখন পড়ো।”
ইনায়া ধ্রুবর হাত থেকে বই কেঁড়ে নিয়ে বলল—“বিয়ে হয়ে গেছে আমার৷ বয়সও হয়ে গেছে। তো আমি এগুলো পড়তেই পারি।”
ধ্রুব হাসলো। বইটা আবার নিতে গেলো ইনায়া চেপে ধরলো। তা দেখে ধ্রুব বলল—“সময় হোক। আমিই সব প্র্যাকটিকালি শেখাবো। নো ওয়ারি।”
ইনায়ার কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো যেন। হতবাক হয়ে তাকালো ধ্রুবর দিকে। বই ধরা হাত তখন আলগা হয়ে গিয়েছে। ধ্রুব সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিয়ে নিল বইটা৷ ইনায়ার দিকে তাকিয়ে তাকে শাসিয়ে বলল—“এইরকম সব বই আমার কাছে থাকবে এখন থেকে। ভুলেও এগুলো পড়তে যাবে না।”
ইনায়া চুপচাপ তাকিয়ে থাকলো শুধু। বললো না কিছু। ধ্রুব এগিয়ে এসে ইনায়ার কপালে ছোট করে চুমু খেলো। ইনায়া চমকালো আবার। ধ্রুব সরে দাঁড়ায় তার থেকে। হালকা গলায় বলে—“আসি?”
ইনায়া মাথা দোলালো। ধ্রুব হালকা হেসে ঘর ছেড়ে বের হলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। রাস্তায় এসে কিছু একটা ভেবে পিছনে তাকালো। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। ধ্রুব তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিতে চাইলো সে অস্বস্তিতে। চলে যেতে চাইলেও গেলো না। মন টানলো না। ধ্রুব হাসলো। এরপর গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি চলতে শুরু করলো সে তাকিয়ে রইলো পিছনে। ঠিক সেই বারান্দার ওখানে। মেয়েটা তখনও দাড়িয়ে রয়েছে!
_____
দেখতে দেখতে কাটলো ১৩দিন। এখন সকাল। ইনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে। ভার্সিটি যাবে সে কিছুক্ষণ পর। কানের দুল পরতে পরতে রুম ছেড়ে বের হলো ব্যাগ নিয়ে৷ ডাইনিংয়ের সামনে এসে দেখলো বাবা খাবার টেবিলে বসে রয়েছেন। ইনাায় চটপট হাতে প্লেট থেকে ব্রেড তুলে তাতে বাটার লাগাতে লাগলো। রহমান সাহেব মেয়েকে দেখে বললেন—“বসে খাও মা। ধীরে সুস্থে খাও।”
ইনায়া শুনলো না। মুখে ব্রেড পুরতে পুরতেই বলল—“এমনিই দেরি হয়ে গেছে, আব্বু। যেতে হবে। আল্লাহ হাফেজ।”
বলে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ি ছেড়ে। গাড়ি গ্যারেজ থেকে বের করে দ্রুত হাতে ড্রাইভ করতে লাগলো। তাড়াতাড়ি যেতে হবে, দেরি করে ফেলেছে প্রচুর।
____
ইনায়া ভার্সিটি এসে জানলো, ক্লাস ক্যান্সেল হয়েছে। এজন্য নিজের মতোন মাঠের একদিকে বসে ফোন চালাচ্ছিলো কানে ইয়ারবাড গুঁজে। মূলত শুনছিলো। অডিও বুক। শুনতে শুনতেই হুট করে কিছু কথা মনে পড়লো। ধ্রুব! ছেলেটা তাকে বারণ করেছিলো এসব শুনতে বা পড়তে। অবশ্য সে নিষেধ শোনে নি। জেদ করে আরো বেশি পড়েছে। আচ্ছা সে কোথায় এখন? ভার্সিটি আসেনি নাকি? ফোনও তো করে না তাকে। শুধু বিয়ে করেই দায়িত্ব শেষ? তখন তো এমন হাবভাব করছিলো যেন বউ ছাড়া একটা আশ্বাসও নিতে পারবে না। এখন কি হলো? এখন যে কোনো খোঁজ খবর নিলো না, তার বেলায়? ইনায়া নিজের চিন্তায় বিরক্ত হলো। এতো ভাবতে চায় না সে। বিরক্ত হয়ে এক পাশে তাকালো। তখনই কেউ তার ডান কানের থেকে ইয়ারবাড খুলে নিলো। ইনায়া চমকালো। চকিতে পাশে তাকাতেই বিরক্তি ছেয়ে গেলো পুরো মুখশ্রীতে। আরাফ দাঁড়িয়ে সামনে। ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো। উঠে দাঁড়ালো ব্যাগ সহ। আরাফের হাত থেকে তার ইয়ারবাড নিতে গেলে আরাফ দিলো না। উল্টো হাত সরিয়ে বলল—“ভার্সিটি এসেছো, একবার জানালেও না?”
“তোমাকে কেন জানাতে যাবো? কি হও আমার তুমি?”
মেয়েটার বিরক্ত কন্ঠ শুনে আরাফ হাসলো। বলল—“সবাই জানে আমি হই তোমার। এতদিন দেখছে কি না!”
ইনায়া রেগে আরাফের হাত থেকে ইয়ারবাড কেঁড়ে নিলো। তারপর বলল—“ তাহলে সবাইকে এটাও জানিয়ে দাও, তুমি আমার কেউ না। নো ওয়ান!”
“সোনা, রাগ কেন করছো। চলো বসে কথা বলি? প্লিজ? সব রাগ ভাঙিয়ে দেবো তোমার।”
ইনায়া বিরক্ত হলো—“আরে, সমস্যা কি তোমার? যাও না। আমি চাইছি না তোমার সাথে কথা বলতে। প্লিজ! নিজের রাস্তা মাপো।”
ইনায়াকে মানাতে আরাফ তার হাত ধরলো। ইনায়া তা দেখেই ঝাড়া মেরে হাত সরিয়ে নিলো। আরাফ এবার রাগলো। ধমকে বলল—“সমস্যা কি তোমার? নরমাল একটা বিষয়কে কি থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো। বেশি মানাতে চাইছি বলে মাথায় চড়ে বসে আছো, হ্যাঁ!”
তখনই সপাটে তার গালে চড় বসালো ইনায়া। আরাফ হতভম্ব হয়ে তাকালো তার দিকে। রাগে ফুঁসে উঠলো ইনায়া। আরাফের দিকে তর্জনী তাক করে ক্ষিপ্ত গলায় বলল—“আমার ওপর চেঁচাতে আসবে না। এখন তো থাপ্পড় মেরেছি, নেক্সট টাইম রাস্তার লোকজনদের মার খাওয়াবো। এমন হাল করবো যে মেয়েদের সাথে এমন করতেও দুবার ভাববে, ডাফার!”
“ইনায়া!”
“চেঁচাবে না! এটা নরমাল লাগছে? আমাকে রুমডেটের অফার করেছিলে কোন সাহসে? শুধু তো না করেছিলাম। তুমি তো পারলে আমাকে রেপ করতেও ছাড়তে না।”
“এমন কিছুই না। এটা তো নরমাল বিষয় এখনকার সময়ে। ভাবো একটু।”
“আমার কাছে নরমাল না। তোমার আমার না বনে না। এজন্য আমি ব্রেক আপ করেছি। এখন আমার পিছু ছাড়ো ভাই!”
বলে মুখ কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে চলে গেলো। আরাফ আশেপাশে তাকালো। সবাই দেখে তাদেরকে এভাবে। আরাফের গায়ে লাগলো ব্যাপারটা। সবার সামনে এভাবে একটা মেয়ে তাকে থাপ্পড় মেরেছে, ব্যাপারটা তার জন্য লজ্জাজনক। সে রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে চলে গেলো।
দোতলার করিডোরের জানালা থেকে এক জোড়া চোখ সবটা দেখো। সে চোখ থেকে যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। পারলে সব ভস্ম করে দিতো বোধহয়।
#চলবে…
(শব্দসংখ্যা—১১০০+)