Game 2 Part-20+21+22

0
430

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২০ ( #বিয়ের_ধামাকা )

বিয়ের বাকি আর দুদিন কিন্তু এর মাঝেই নির্ঝর উধাও। কেউ খুঁজে পাচ্ছে না তাকে। ব্যাপার টা ঠিক কি হলো কেউ বুঝতে পারছে না কিন্তু এখানে মেহেরিন’র কোন ভাবনা নেই। সে তার মতোই বেশ আছে। নির্ঝর থাকল না গেলো এটা নিয়ে সে মাথা ঘামাচ্ছে না। নির্ঝর’র ফোন ও অফ। কথা বলল একবার পুলিশ রিপোর্ট করতে কিন্তু মেহেরিন বলে উঠে “২৪ ঘন্টার আগে কিছু না করা ভালো”।
সবাই এটাই শুনে বসে থাকে তবে অভ্র গার্ডদের দিয়ে খোঁজ লাগাচ্ছে তার ব্যাপারে।

আজ গায়ে হলুদ! সকাল থেকেই এই তোড়জোড় চলছে সবার। তবে সবার মাঝেই চিন্তা হলো নির্ঝর এখনো আসে নি। কথা বলে উঠে…

– ও এখনো আসে কিছু একটা করো তোমরা!

নিহা বলে উঠে..
– খোঁজ করছে কথা চিন্তা করো না। দেখবে ওকে পাওয়া যাবে।

– কাকে পাওয়া যাবে!
সবাই পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর দাঁড়িয়ে আছে। কথাটা সেই বলেছে। কথা নির্ঝর কে দেখা মাত্রই তাকে গিয়ে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো। নির্ঝর কথাকে সামলাতে লাগল। সবাই বকাবকি করতে লাগলো। নির্ঝর বলল..

– একটা কাজ ছিলো তাই!

– তোর ফোনের কি হয়েছে তাহলে!

– চুরি হয়ে গেছে। নতুন ফোন কেনার ঠ
টাইম পায়নি।

সবাই একের পর এক কথা এক কথা বলছে কিন্তু শুধু মেহেরিন যে কি না কিছুই বলছে না। সে শুধু দাঁড়িয়ে নির্ঝর কে দেখছে। কথা খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে নির্ঝর কে। নির্ঝর কথার মাথায় হাত রেখে বুলিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে কোথাও যেন তার মনে কেমন একটা অনুভুতি হলো। তবে সেটা কি মেহেরিন এটা বুঝতে পারলো না। অভ্র দূর থেকে ঠিক’ই বুঝতে পারল মেহেরিন’র মনে কি চলছে। অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। মেহেরিন বেরিয়ে গেলো!

রাতে গায়ে হলুদে..
খুব ধুমধাম করেই গায়ের হলুদ চলছে তবে মেহেরিন সেখানে নেই। সে কালকের প্ল্যানিয়ের জন্য ‌ডেভিল’র সাথে কথা বলছে আর এখানে তার জায়গায় আরেকজন কে ঘোমটা পরিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু নির্ঝর আর কথার গায়ে হলুদ হলো কারন নির্ঝর এখান থেকে উঠে গেলেই মেহেরিন অন্য কিছু ভাববে আর এটা হতে দেওয়া যাবে না। অবশেষে গান বাজনা দিয়ে শেষ হলো গায়ে হলুদ!

রাতে মেহেরিন হোটেলের ছাদের দিকে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই তার চোখে পরল নির্ঝরের রুমের দরজা খোলা। হাসির আওয়াজ আসছে সেই রুম থেকে। মেহেরিন সেখানে দাঁড়িয়ে দেখল নির্ঝর আর কথা হাসাহাসি করছে। হাসাহাসি’র এক পর্যায়ে তারা দুজনেই মারামারি করতে লাগলো। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে দেখছে দুজনেই ফাজলামি করছে। একসময় ‌নির্ঝর কথার দু হাত পিছনে ঘুরিয়ে তার কাছে এনে তার সাথে কথা বলছে। কথা হাত ছুটিয়ে ফেলল নির্ঝর আবার তার পিছনে ঘুরতে থাকে। নির্ঝর আবারো তাকে ধরতে গেলে মারামারি লেগে যায়। তখন দুজনেই একসাথে বিছানায় পড়ে যায়। অতঃপর জোরে হাসির শব্দ আসে। নির্ঝরের বুকের উপর শুয়ে কথা হাসছে। মেহেরিন আর দাঁড়িয়ে থাকে না চলে আসে সেখান থেকে। ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশের মাঝে যেন সে নির্ঝর আর কথা কে দেখতে পাচ্ছে। নির্ঝরের এতো কাছাকাছি কথা কে দেখতে পাওয়া তাকে যেন কেমন অস্থির করে তুলছে। তবে কারনটা সে বুঝতে পারছে না। বার বার তার কানে নির্ঝরের ডাকা মেহু পাখি কথাটা যেন বাজছে!

হঠাৎ কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে মেহেরিন তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। তাকিয়ে দেখে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন এসে অভ্র কে একপাশ দিয়ে জরিয়ে ধরল। অভ্র মেহেরিন’র কপালে চুমু খেয়ে বলে..
– আমার আদুরীর কি হয়েছে? মন খারাপ!

– না!

– তাহলে এখানে একা দাঁড়িয়ে আছো যে!

– কালকের কথা ভাবছি!

– দা কে মিথ্যে বলছো!

মেহেরিন অভ্র’র দিকে তাকিয়ে থাকে। অভ্র হেসে বলে..
– নির্ঝর আর কথার কথা ভাবছো!

– ওই লেজ কাটা ব্যাঙ কে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে না তবুও কিভাবে যে মাথায় চলে আসে। আমার মাথাটার অপারেশন করাতে হবে বুঝলে।

– তোমার মন কে ঠিক করতে হবে আদুরী!

মেহেরিন তাকায় অভ্র’র দিকে। অভ্র হেসে বলে..
– সহ্য হয় না ওদের একসাথে!

– ( মেহেরিন মাথা নাড়ায়! )

– কারন কি?

– জানি না তবে কেমন জানি লাগে! তুমি বলো না দা এটা কেন হয়!

অভ্র কিঞ্চিত হেসে বলে..
– যখন সময় হবে তখন বুঝবে। সময় তো আর চলে যাচ্ছে না। কাউকে নিয়ে ভাবছো তাহলে নিশ্চিত কিছু আছে। নিজেই খুঁজে বের করো!

মেহেরিন কিছু না বলে অভ্র কে জরিয়ে ধরে আর মনে মনে বলে..
– দা কেন বলছে সময় আছে উনার তো কাল’ই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা বিয়ে হচ্ছে তো কি? আমার ভাবনার সাথে বিয়ের সম্পর্ক কি? আমি কি ভাবছি এসব। না না মাথা থেকে এসব ঝাড়তে হবে কালকের কথা নিয়ে ভাবতে হবে!

খানিকক্ষণ পর..
নির্ঝর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে অভ্র’র দিকে। অভ্র’র মুখে শুনলো মেহেরিন তাকে আর কথা কে দেখে জেলাস ফিল করেছে। কথাটা শোনা মাত্রই সে বুকে হাত দিয়ে পড়ে যেতে নেয়। কাব্য আর ইহান এসে ধরে তাকে। সবাই হাসতে থাকে। নির্ঝর মনে হচ্ছে এখনো স্বপ্নের মধ্যে আছে। সে দৌড়ে গিয়ে আহিয়ান আর নীল কে গিয়ে জরিয়ে ধরে। অতঃপর নিহা’র দু গাল টেনে বলে..
– থ্যাংকস দি তোমার আইডিয়া কাজে লেগেছে।

অতঃপর এসে কথা কে নিয়ে ঘুরতে থাকে। কথা দেখছে তাকে। নির্ঝরের মুখের হাসি তাকে পাগল করছে। এদিকে সবাই খুব খুশি। অবশেষে তার প্রেমের প্রথম ধাপ আগালো মাত্র!

নির্ঝর কথার হাত ধরে বলে..
– থ্যাংকস ইয়ার তুই না থাকলে কিছুই হতো না। আজ যা হলো সব কিছুই তোর জন্য। থ্যাংকু সো মাচ।

– তোর কাজ হয়েছে এতেই আমি অনেক খুশি!

নিহা বলে উঠে..
– কথা’র ফ্লাইট তো কালকেই!

– হ্যাঁ দি কাল’ই চলে যাচ্ছি!

– সরি ইয়ার আমাকে বলতে হবে তুই আমাকে বিয়ে করতে চাস না তাই পালিয়ে গেছিস।

– যাই হোক! সব ঠিকঠাক হলে তো সত্যি টা জেনেই যাবে। তখন সব ঠিক হবে!
নির্ঝর কথা’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে!

.
বিয়ের দিন..
সকাল থেকে বিয়ের তোরজোর! কথা কে সাজাতে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে সেটা শুধু আদুরী কে দেখানোর জন্য। সাজানোর কথা বলেই ওকে এপারপোর্ট এ পাঠানো হবে। নির্ঝর এসে কথাকে বিদায় জানায় এর সাথে বাকি সবাই! কথা নির্ঝর কে জরিয়ে ধরে অল দা বেস্ট বলে!

এদিকে মেহেরিন’র কোনো খোঁজ খবর নেই। নিরব আর নির্ঝর ঠিক সময়ে স্টেজে এসে পড়েছে তবে কথা এখনো আসে নি। বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে তখন মেহেরিন কে নিয়ে আসা হলো। একটা গাঢ় লাল রঙের লেহেঙ্গা পড়া সে। আজও কোনো সাজ নেই তার মুখে। নির্ঝর দু চোখ ভরে দেখছে তার মেহু পাখি কে। মেহেরিন কে স্টেজে বসানো হলো। মেহেরিন দূর থেকে নির্ঝর কে ইশারা করে কথার কথা জিজ্ঞেস করে। নির্ঝর ইশারায় বলে সে এখনো সাজছে। মেহেরিন কিছু না বলে বসে বসে চকলেট খেতে থাকে। বিয়ের কনে বিয়ের দিন চকলেট খাচ্ছে সবাই এটা দেখে অবাক। সকল মেহমানরা আসছে একে একে! ভিড় বাড়ছে। নিরব সুযোগ বুঝে উঠে গেল তখন মেহেরিন’র কানে থাকা ব্লুটুথ বেজে উঠলো। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নিরব নেই। সে কানের ব্লুটুথ টা অন করে স্টেজ থেকে দূরে সরে আসে। তখন শুনতে পায় নিরব কারো সাথে কথা বলছে। গতকাল’ই সে নিরবের ফোন টা ট্র্যাক করেছে যাতে নিরবের বলা সমস্ত কথা সে শুনতে পায়। মেহেরিন শুনতে পেলো অংকন নিরব কে বলছে…

– নিরব কে তারা মারতে পারে নি। ডেভিল এসে তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেছে কিন্তু এভাবে তারা হেরে যেতে পারে না। আজ যে করেই হোক অংকন মেহেরিন কে শেষ করবে।

মেহেরিন এই কথা শুনে হেসে দেয়। তখনই তার ফোনে ডেভিলের মেসেজ আসে, তারা নিরবকে তারা সেভলি নিয়ে আসতে পেরেছে। তাদের প্ল্যান এটাই ছিল যে এখানে নকল নিরব কে বিয়েতে বসিয়ে আসল নিরব কে মেরে ফেলবে। অতঃপর নকল নিরব কে সরে যেতে বলে মেহেরিন কে কল করে আসল নিরবের কাছে আনা হবে আর সেখানে পুলিশ ও পাঠানো হবে। পুলিশ এভাবে মেহেরিন কে ‌নিরবের খুনি ভেবে নিয়ে যাবে। কিন্তু মেহেরিন এখানে তার নিজের #Game খেললো। সে ডেভিল কে সেখানে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে এখানে কনে সাজে থাকল যার কারনে কেউ এমনটা ভাবতেও পারে নি। আর যেহেতু মেহেরিন নকল নিরবের কথা জানে এটা তারা জানে না তাই এসব ভাবার প্রশ্ন ও আসে না।

কিন্তু এখানে হঠাৎ মেহেরিন খুশিতে আবার তাদের কথা শুনতে থাকে। নকল নিরব জিজ্ঞেস করছে..

– তাহলে এখন আমি কি করবো..

– তোমাকে কিছু করতে হবে না এখন। মেহেরিন হয়তো নিরব কে বাঁচাতে পেরেছে। তবে….

– তবে..

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। কি বলবে এবার ও। তখন আওয়াজ আসলো..

– তবে আজ মেহেরিন কে মরতে হবে আর এটা অংকনের হাতেই। মেহেরিন দুই জান পাখি আসছে আমার কাছে। একজন তার ফুফুজান আর আম্মু জান!

এটা শোনার পর’ই মেহেরিন চমকে উঠলো। আশপাশ তাকিয়ে কোথাও শান্ত আর অরনি কে দেখতে পেলো না সে। এদিকে নিরব বলে উঠে..
– কি বলছো!

– হুম তাদের এতোক্ষণে গাড়িতে উঠানো হয়েছে আমার কাছেই আসছে আর তোমার আর কোন দরকার নেই আমার। বাই বাই!

বলার সাথে সাথেই নিরবের ফোন ব্লাস্ট হলো। মেহেরিন দ্রুত তার ব্লুটুথ বের করে কানে হাত দিল। ব্লাস্টের আওয়াজ খুব জোরে হওয়ায় হৈচৈ লেগে গেছে। নির্ঝর উঠে দৌড়ে নিরবের কাছে আসলো। ব্লাস্টের কারনে নিরব সেখানেই মারা গেছে। মেহমান রা বের হয়ে যাচ্ছে। মেহেরিন এবার উঠে দাঁড়াল। সে দৌড়ে গেল অভ্র’র কাছে। নির্ঝর তাকে অভ্র’র কাছে দেখে নিজেও গেল। মেহেরিন অভ্র কে কিছু বললো যার কারনে অভ্র, নিহা আর নীল তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে চলে গেল। মেহেরিন বের হতে যাবে নির্ঝর তখন এসে তার হাত ধরল। মেহেরিন তাকালে নির্ঝর তাকে বলল..

– কি হয়েছে?

#চলবে….

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২১ ( #বিয়ের_ধামাকা_২ )

নির্ঝর মেহেরিন কে বলে…
– কি হয়েছে?

মেহেরিন হাত ছাড়িয়ে বলল..
– অরনি আর শান্ত কে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আমাকে যেতে হবে।

– আমিও যাবো তোমার সাথে!

মেহেরিন অবাক হয়ে বলল..
– আপনি গিয়ে কি করবেন! কোন কাজে আসবেন শুনি আমার!

নির্ঝর হেসে বলল..
– দেখো কোন কাজে আসি!

বলেই নির্ঝর দৌড়ে চলে গেল। মেহেরিন ও দৌড়ে নিচে গেল। তার গার্ড আগে থেকেই সেখানে ছিল। একজন গার্ড তাকে একটা ব্লুটুথ আর একটা ট্র্যাকিং ডিভাইস দিল। মেহেরিন এমন কিছু হতে পারে ভেবে রেখেছিল তাই আগে থেকেই তাদের দু’জনের কাছে ট্র্যাকার মেশিন লাগিয়ে রেখেছিল। মেহেরিন সেটা দেখে দেখছে তারা কতো দূরে। হঠাৎ তখন’ই নির্ঝর আসলো। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল আগের সাজেই আছে সে শুধু তার কাঁধে একটা ব্যাগ তবে মেহেরিন বেশি একটা নজর না দিয়ে বাইকে বসতে নিল। কিন্তু তার আগেই নির্ঝর বাইকে বসে পরল। বলল..

– তোমার এই লেহেঙ্গা নিয়ে তুমি বাইক চালাতে পারবে না। আমি বসছি আমার পিছনে বসো।

মেহেরিন তাকিয়ে দেখল আসলেই তার লেহেঙ্গা খুব ভারী এটা পরে কিছু করতে পারবে না সে। মেহেরিন ট্র্যাকিং ডিভাইস টা নির্ঝরের হাতে দিয়ে লেহেঙ্গা’র নিচের পার্ট টা খুলে ফেলল। নির্ঝর একবার মেহেরিন কে দেখে বলল..

– জিন্স আর লেহেঙ্গা’র উপরের পার্ট! খাপছাড়া লাগছে!

মেহেরিন আশপাশ তাকিয়ে দেখল তার গাড়ি সামনেই পার্ক করা। সে গাড়ি থেকে একটা জ্যাকেট বের করে কোমরে বেধে নিল। নির্ঝর ভ্রু নাচিয়ে বলল…

– এবার ঠিক আছে।

মেহেরিন ইশারায় নির্ঝরকে পেছনে যেতে বলল। নির্ঝর দু হাত উপরে করে পেছনে সরে গেল। মেহেরিন হেলমেট পড়ে বাইক বসে স্টার্ট দিল। বলল..

– ধরে বসুন!

নির্ঝর ভাবল কাকে ধরবে মেহেরিন কে নাকি বাইককে। এসব ভাবতে ভাবতে মেহেরিন খুব জোরে বাইক চালাতে শুরু করল। নির্ঝর কিছু বুঝে উঠতে না পেরে পেছন থেকে বাইক’ই ধরে বসল। এর মাঝে মেহেরিন বললো..

– ট্র্যাকিং ডিভাইস দেখে বলতে তারা কোথায় আছে।

অতঃপর নির্ঝরের ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী মেহেরিন যেতে লাগলো। কিছুদূর যাওয়ার পর মেহেরিন তাদের গাড়ি দেখতে পেলো। কিন্তু ততক্ষণে গাড়ি এসে পড়েছে হোটেলের কাছে। মেহেরিন এবার ওভারটেক করে বাইক নিয়ে গাড়ির সামনে এসে পড়ে। হঠাৎ এরকম হওয়ায় নির্ঝর এবার মেহেরিন’র কোমরে হাত দিল। কিন্তু মেহেরিনের সেখানে কোন হুশ নেই!

এদিকে হঠাৎ করে বাইক চলে আসায় গাড়ি থেমে গেল।‌মেহেরিন এবার হেলমেট খুলে বাইক থেকে নামলো। নির্ঝর ও নামল বাইক থেকে। গাড়ির থেকে কিছু লোক নেমে মেহেরিন কাছে আসার আগেই লুটিয়ে পরল। বাকি লোক পিছনে তাকিয়ে দেখল মেহেরিন’র গার্ড আসছে। তারা গান শুটিং করছে। তারা ভয় পেয়ে শান্ত আর অরনি’র কপালে গান ঠেকাল। মেহেরিন এবার হাত উঠিয়ে বলল “তাদের যেনো কিছু না করে”। তারা মেহেরিন কে নিচু হতে বলল। মেহেরিন পিছনে তার গার্ডদের ইশারা করে নিচু হতে বলল আর সেও নিচু হলো। লোকগুলো এসব দেখে হেসে দিল। মেহেরিন হেসে শান্ত আর অরনি’র দিকে ইশারা করলো। তারা লোকগুলোর পায়ে পারা মেরে সরে গিয়ে বসে পরল। মেহেরিন তৎক্ষণাৎ লোক গুলোর উপর গুলি আর নির্ঝর তাদের মাঝখান থেকে শান্ত আর অরনি কে নিয়ে আসল। অতঃপর তাদের গার্ডদের কাছে দিয়ে বলল নিয়ে যেতে। নির্ঝর মেহেরিন’র কাছে এসে বলল..

– চলো!

মেহেরিন হোটেলের দিকে তাকিয়ে বলল..
– না হিসাব এখনো বাকি!

– মানে!

বলার আগেই মেহেরিন সেই হোটেলের ভিতর গেল। নির্ঝর ও গেল তার পিছু পিছু। মেহেরিন হোটেলের মধ্যে ঢোকার আগেই নির্ঝরের হাতে দুটো গান দিয়ে দিল। অতঃপর দুজনেই খুব গোলাগুলি করে ভেতরে গেল। মেহেরিন হোটেলের 75th floor সেই রুমে গেল। সেখানে যারা ছিল তারা মেহেরিন কে কিছু বললো না যেতে দিল। মেহেরিন ভিতরে এসে দেখল মিঃ রায় বসে আছে। আর পেছন থেকে দেখল সোফায় কেউ বসে আছে। মেহেরিন তার সামনে গিয়ে দেখল একটা ছেলে বসে আছে। মেহেরিন ঢ্যাব ঢ্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা অংকন ছিল। নির্ঝর এসব দেখে মেহেরিন কে খোঁচা মারল।

– কি করছো?

– দেখুন না ছেলেটা কতো হ্যান্ডসাম!

– কি বলছো এসব, ভুলে যেও না ছেলেটা তোমার শত্রু!

– এটাই সমস্যা বুঝলেন আমার শত্রুরা সবসময়ই হট আর হ্যান্ডসাম হয়।

– তাহলে আমি কি? আমাকেও তো শত্রু’ই বলো তুমি তাহলে আমি হট আর হ্যান্ডসাম নই!

– 😒

– এভাবে তাকাচ্ছো কেন?

হঠাৎ অংকন বলে উঠে..
– দুজনে কি ফিসফিস করছো! তোমরা কেউ’ই এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে না!
বলেই অংকন দাঁড়িয়ে গেল।

মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে বলল..
– আপনার সৌন্দর্য বর্ণনা করছিলাম। তবে যাই হোক আমি তো এখান থেকে বেঁচে’ই ফিরবো। আপনি বরং নিজের টা ভাবুন!

অংকন বাঁকা হেসে তার গান টা টেবিলে রেখে বলল..
– দেখা যাক!

মেহেরিন ও হেসে তার গান টা টেবিলে রাখল। আর নির্ঝর কে বলল..
– আপনি এবার আমার কাজে আসুন, পুলিশ না এসে শেষে আমাদের ধরে নিয়ে যায়!

নির্ঝর কপাল কুঁচকে সেখান থেকে সরে গিয়ে মারামারি করতে থাকে। এদিকে মেহেরিন আর অংকন মারামারি করতে থাকে। মেহেরিন প্রত্যেকবার’ই বেঁচে যাচ্ছে তবে অংকনের কিছু করতে পারছে না। এদিকে নির্ঝর একজনকে মারছে তো আরেকজন আসছে। মানুষজন যেন কমছেই না। নির্ঝর এবার রান্নাঘরে এলো অতঃপর সেখানে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো!

এদিকে মারামারি’র এক পর্যায়ে মেহেরিন নিচে পরে গেল। অংকন বলে উঠে..
– তোমার গেম এখন শেষ!

মেহেরিন একবার পিছনে তাকাল। অতঃপর ঠোঁটের কোনে থাকা রক্ত মুছে বলল..
– একটা কথা জানেন মেয়েদের কখনো পায়ের নিচে রাখতে নেই!

অংকন হেসে বলল..
– কেন?

মেহেরিন বাঁকা হেসে বলল…
– কারন আপনার পায়ের নিচে মাটি সরে যাবে তাহলে!
বলেই মেহেরিষ পা দিয়ে অংকনের পায়ে মারল। অংকন সামলাতে না পেরে ধপাস করে পরে গেল। পেছনে টি টেবিল ছিল। এখানে পরার পর তার গায়ে কাচ ঢুকে গেল। অংকন রক্তাত্ত অবস্থায় পড়ে গেল। মেহেরিন উঠে হেসে তার দিকে গান তাক করে বলল..

– এটা একটা গেম! আর গেম যখন তখন বদলে যেতে পারে।‌‌ আর এখন গেম বদলে গেছে। অ্যান্ড ইউর গেইম ইজ ওভার নাও!

বলেই মেহেরিন গান শুট করতে যাবে হঠাৎ করেই দেখল নির্ঝর দৌড়ে তার দিকে আসছে। কিন্তু বুঝে উঠার আগে নির্ঝর মেহেরিন’র কোমর ধরে তাকে জরিয়ে নিয়ে জানালা দিয়ে লাফ দিল। মেহেরিন চমকে নির্ঝরকে জরিয়ে ধরল। এদিকে তারা লাফ দেবার পর’ই সেই রুম ব্লাস্ট হলো। দুজনেই নিচে পড়ে যাচ্ছে। মেহেরিন অবাক হয়ে নির্ঝর কে বলে উঠে..

– কি করলেন এটা আপনি! এখন আমরা দু’জনে উপরে চলে যাবে।

নির্ঝর হেসে বলল..
– আসলেই উপরে চলে যাবে!

বলেই সে পেছন থেকে একটা রশি টান দিল আর সাথে সাথেই প্যারাসুট খুলে গেল। বাতাসের বেগের কারনে দুজনেই আবারো উপরে উঠে গেল। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল…

– আপনি তাহলে এই প্ল্যান করেছিলেন!

নির্ঝর বাঁকা হেসে মেহেরিনের কোমর জড়িয়ে বলল..
– কি ভাবো তুমি একাই চালাক নাকি! ভালো করে ধরো আমাকে নাহলে পরে যাবে তখন সত্যি সত্যি উপরে চলে যাবে।

মেহেরিন একবার নিচে তাকাল। সত্যি’ই অনেকটা উপরে তারা এখান থেকে পড়লে উপরে যাওয়া নিশ্চিত। সে নির্ঝরের গলা জরিয়ে ধরল। মেহেরিন আর নির্ঝর খুব কাছাকাছি ছিল। দুজনেই সেই ফ্লাটের দিকে তাকাল। আগুন জ্বলছে সেখানে! ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও চলে আসবে এক্ষুনি। নিচে অনেক মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে তবে উপরের পুরোটাই নিরব। তারা দুজনেই উড়ছে। নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল..

– এই রাতের আকাশের নিচে তুমি আর আমি একসাথে উড়ছি। খুব রোমান্টিক মুহূর্ত তাই না।

– আপনার কাছে রোমান্টিক মুহূর্ত লাগছে তবে আমার কাছে বিপজ্জনক মনে হচ্ছে।

– আমি রোমান্টিক কথা বলছি আর তুমি কি তেতো তেতো কথা বলছো।

মেহেরিন হেসে বলল..
– খানিকবাদেই আপনার আর কথার বিয়ে হবে। রোমান্টিক কথা জমা রাখুন তাকে গিয়ে বলবেন!

নির্ঝর মেহেরিন’কে চেপে ধরে বলল..
– সে যখন বিয়ে হবে তখন দেখা যাবে ততোক্ষণ তোমার সাথেই না হয়..

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাল। অতঃপর উপরের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল..
– আপনার সেই আশা আর পূরন হচ্ছে না সো সেড!

নির্ঝর কিছু বলতে যাবে তখন হেলিকপ্টার’র আওয়াজ আসলো। নির্ঝর উপরে তাকিয়ে দেখে অভ্র,নিহা আর নীল হেলিকপ্টার নিয়ে এসেছে। নির্ঝর অনেকটা অবাক হয়। অতঃপর বলল..
– এটা!.

– প্ল্যান বি!

– আমাকে কেন বললে না।

– আপনি তো প্ল্যান এ ও জানেন না আর বি বলবো এটা ভাবছেন!

– কখন করলে এসব।

– না জানলেও হবে! এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত হন!

নির্ঝর উপরের হেলিকপ্টার’র দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল..
– শালারা আসার আর সময় পেলো। কি সুন্দর একটা মুহূর্ত ছিল।‌ ধ্যাত!

অতঃপর অভ্র মেহেরিন আর নির্ঝর কে উদ্ধার করে হেলিকপ্টার করে নিচে নেমে গাড়িতে বসল। মেহেরিন ফোন করে জানল শান্ত আর অরনি ‌নিশি’র কাছেই আছে। মেহেরিন একটা শান্তির নিশ্বাস ফেলল। অতঃপর নীল কে বলল..
– ভাইয়া গাড়ি ফাস্ট চালাও। উনার বিয়ে আছে তো। আমার টা তো ভেঙে গেছে তবে উনার বিয়ে হবে।

নির্ঝর এসব শুনে একটা শুকনো ঢোক গিলে নিহা’র দিকে তাকাল। নিহা’র অবস্থাও তার মতোই তবে কেউ কিছু বললো না।

হোটেলে ভিতরেই মেহেরিন অভ্র কে বললো নির্ঝর কে নিয়ে ভেতরে যেতে। বিয়ে শুরু করতে সে আসছে।

বলেই মেহেরিন চলে গেল। মেহেরিন যেতেই নির্ঝর দৌড়ে ছাদে গেল। যেয়েই দেখে সবাই বেশ চিন্তিত। শান্ত আর অরনি তাকে দেখে দৌড়ে নির্ঝরকে জরিয়ে ধরল। নির্ঝর কে দেখতে পেয়ে যেন সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কিন্তু নির্ঝর বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। সে একটা চেয়ারে বসে পরল।‌ মেহেরিন এই এলো বলে। মেহেরিন এসে যেনো তাকে দেখে তার মন খারাপ কারন কথা পালিয়ে গেছে। নির্ঝর সবাইকে বলল “তোমরা সবাই মন খারাপ করো নাহলে মেহু পাখি এসে ধরে ফেলবে। সবাই বলবে কথা পালিয়ে গেছে। কোথায় গেছে কেউ জানে না বুঝলে”.

নির্ঝরের কথায় সবাই মাথা নাড়ল। অতঃপর মেহেরিন এলো। সবাই কেমন চুপচাপ হয়ে বসে আছে। মেহেরিন সবাইকে দেখছে এতো চুপচাপ কেন সবাই।মেহেরিন অভ্র’র কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল..

– দা কি হয়েছে সবাই এতো চুপচাপ কেন? আর নির্ঝর এভাবে কেন বসে আছে উনার না বিয়ে। আর বিয়ে কেন শুরু করো নি তোমরা।

– আদুরী! আসলে কথা পালিয়ে গেছে!

মেহেরিন চোখ বড় বড় করে বলল..
– কিহহহহহ? পালিয়ে গেছে মানে!

নির্ঝর উঠে দাঁড়িয়ে বলে..
– মানে এই বিয়ে হবে না!

মেহেরিন কাঁদো কাঁদো মুখ করে মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলে..
– বিয়ে হবে না মানে! আমি তো আপনার বিয়ের মিষ্টি ও খেলাম না। কত শখ আমার আপনার বিয়ে খাবো আমি।

মেহেরিন ধপাস করে নিচে বসে পরল।‌ অতঃপর গালে হাত দিয়ে..
– ইশ কতো ইচ্ছে ছিল শত্রুর বিয়ে টা খাবো। প্রথম বার এতো বড় একটা সুযোগ পেলাম আর তা হলো না।

আহিয়ান বলে উঠে..
– মেহেরিন সুযোগ আবার আসবে তুমি মন খারাপ করো না।

ইহান বলে উঠে..
– আমরা আবার নির্ঝরের বিয়ে দেবো তুই এখন এমন করিস না জান!

নির্ঝর চোখ ঘুরিয়ে ইহানের দিকে তাকাল।‌ ইহান তাকে দেখে দাঁত বের করে হাসল। এদিকে মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে বলল..
– না বিয়ে তো আজ’ই হবে আর এক্ষুনি। বর তো আছেই শুধু কনে লাগবে। চলে আসবে কনে। দা সব কিছু ঠিক করো আমি আজ আমার শত্রুর বিয়ে খাবোই!

সবাইকে ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকে মেহেরিন’র দিকে। কি বলছে সে এসব। নির্ঝর তো যেন আকাশ থেকে পরল। কনে আসবে মানে। মেহেরিন কি কথা কে নিয়ে আসবে নাকি। নির্ঝর হা হয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে।

এদিকে আহিয়ান আর নীল এসে নির্ঝরের পাশে দাঁড়ায়। আহিয়ান বলে উঠে..
– বেশি অবাক হয়ো না আমার বিয়ের দিন তো কনেই বদলে দিয়েছিল। রীতিমতো আমাকে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করানো হয়েছিল।

নীল বলে উঠে..
– আমার বিয়ের দিন ও কনে বদলে গিয়েছিল। আমাকেও ভয় দেখিয়ে বিয়ে করানো হয়েছিল। দেখিস তোর টাও এমন’ই হবে।

নির্ঝর একবার টানে আরেকবার বামে তাকায়। এদিকে আহিয়ান এর পাশে এসে নিহা দাঁড়ায় আর নীলের পাশে নীলাশা। দুজনেই বলে উঠে..
– কিছু বলছিলেন আপনি!

নিহার আওয়াজ পেয়ে আহিয়ান বলে উঠে..
– তবে জানিস আমি এখন খুব সুখে আছি।

নীল নীলাশা’র গলা পেয়ে বলে..
– হ্যাঁ আমিও খুব ভালো আছি তুই থাকবি দেখিস!

নির্ঝর বিরক্ত হয়ে নিহা’র কাছে দাঁড়িয়ে বলে..
– নির্ঝর যদি কাউকে বিয়ে করে তো সেটা তার মেহু পাখি কে আর কাউকে না বুঝলে। দি কি হচ্ছে এসব!

মেহেরিন উঠে গার্ডদের দিয়ে স্টেজ ঠিক করিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। সবাই সামনে তাকাল। দেখল কেউ আসছে। নির্ঝর তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। লাল রঙের লেহেঙ্গা পড়া একটা কনে আসছে তবে তার পুরো মুখ ঘোমটা দিয়ে ঢাকা। নির্ঝর নিহা কে ফিসফিসিয়ে বলে..
– ওর সাথে কি আমার বিয়ে দেবে দি!

– আমি জানি না।

– দি আমি কিন্তু বিয়ে করবো না। তুমি কিছু করো প্লিজ।

– আদুরী আমার কথা শুনবে বলে মনে হচ্ছে না!

নির্ঝর তাকিয়ে দেখে মেহেরিন বেশ খুশি। সে বলে উঠে..
– কথা কে আনার প্ল্যান টা কিন্তু তোমার ছিল!

– আমি কি জানতাম নাকি আদুরী তোকে বিয়ে দিয়ে ছাড়বে।

– দি এটা কথা নয় তো!

নিহা নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

কনে হেঁটে আসছে। মেহেরিন বলে উঠে..
– দুলান অ্যা গেয়া! আরে আরে দুলান দাঁড়াও। এভাবে এভাবে এসে পড়বে নাকি। আর সবাই এমন শান্ত কেন? এই কেউ মিউজিক বাজাও। কারন দুলা’র দুলন এসে পড়েছে! বিয়েটা এবার হবে।

নির্ঝর বিড় বিড় করে বলে..
– কাম সারছে!

#চলবে….

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২২ ( #বিয়ের_ধামাকা_৩ )

অতঃপর কনে দু’পা হেটে সামনে আসল। অতঃপর তার ঘোমটা খুলে ফেলল। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। সবাই অবাক। সবচেয়ে বেশি অবাক কাব্য কারন কনে সাজে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাট!

নিহা বলে উঠে..
– ক্যাট!

নির্ঝর বলে উঠে..
– কি হয়েছে দি!

– আদুরী ক্যাট কে এনেছে। এখন কাব্য’র কি করবে কে জানে।

– কাব্য কেন করবে !

– ক্যাট কাব্য’র‌ এক্স!

– কিহহ!

– হুম!

– এর মানে আমার তো বিয়ে হবে না।

– অবশ্যই না!

নির্ঝর এক হেসে বলল..
– জোশ ছিল!

এদিকে..
মেহেরিন হেঁটে কাব্য’র কাছে দাড়াল। মিউজিক বাজতে শুরু করল। ক্যাট কোমরে হাত রেখে দাঁড়াল। কাব্য বলে উঠে..
– ক্যাট!

মেহেরিন বলে উঠে..
– ইয়াপ মিয়াও ভাবী! কিন্তু ভাই টা কে হবে নিশ্চিত না।

– তুই কেন ওকে এনেছিস!

– বললাম তো শত্রু’র বিয়ে খাবো। এখন ক্যাট তো আমার বড় শত্রু!

– আমি বিয়ে করবো না ওকে। আর যাই হোক!

– ভেবে বলছিস তো!

– করবো না মানে করবো না ব্যস!

এদিকে ক্যাট নাচতে নাচতে কাব্য’র কাছে আসল। কিছু ডান্সার ও এসে পড়েছে নাচতে। সবাই নাচছে! ক্যাট বলে উঠে..

( কাব্য’র চারদিক ঘুরে… )

Hai wo handsome sona sabse
Mere dil ko gaya le kar
Meri neend chura li usne
Aur khwab gaya dekar (x2)

( কাব্য কে একটা ধাক্কা মেরে .. )

Ab ye naina bole yaar
Bole yehi lagataar
Koi chaahe kitna roke karungi pyar..

( সব বাজনা থেমে যায়। ক্যাট কাব্য’র কাছে এসেও পিছনে ফিরে ঘুরে যায়। অতঃপর একজন কে উদ্দেশ্য করে বলে..

Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar (x2)

( সবাই তাকিয়ে দেখে বর সাজে একজন আসছে। তবে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। টোপরের সামনে ফুল দিয়ে ঢাকা। সেও এসে নাচছে। কাব্য এসব দেখে ভারী অবাক হয়। সে ভেবেছিল ক্যাট কে তাকে বিয়ে করতে হবে কিন্তু এখানে তো বর এসে হাজির। তারা দুজনেই মিলে একসাথে নাচতে শুরু করছে। )

Haan jabse usne akhiyon se
dil pe autograph diya
Tabse everyday maine
bas usko hi yaad kiya (x2)

Senti mere jazbaat o sunle mere dil ki baat
Saath mujhko le ke jaa main hoon taiyaar…

Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar (x2)

Filmy style se jab usne
kal raat mujhe propose kiya
Daayein na dekha, baayein na dekha
Usko dil ka rose diya (x2)

Huve charche chaar hazaar
Photo chhap gayi in akhbaar
Mujhko parwah nahi koi I’m with the star..

Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar (x2

নাচ শেষে মেহেরিন বললো এর সাথেই ক্যাট’র বিয়ে হবে।‌ কাব্য এটা শোনার পর নিস্তব্ধ হয়ে গেল। আর যাই হোক ক্যাট কে ভালোবাসে সে। সেই ভালোবাসার মানুষ অন্য কারো হয়ে যাবে এটা মানা তার পক্ষে সম্ভব না। কাব্য সেখান থেকে বের হতে যাবে ক্যাট এসে তার হাত ধরে ফেলল!

– তুমি!

– চলে যাচ্ছ যে।

– তোমার বিয়ে তুমি করবে আমি থেকে কি করবো।

– খুব সহজে বলে দিচ্ছ যে।

– ..

– ভালোবাসো না আমায়!

– না বাসি না !

– ভেবে বলছো তো।

– ভাবার কি আছে। তুমি যা করেছো এর পর তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে ভালোবাসবো।

– যা হয়েছে তার জন্য আমি সত্যিই সরি। জানি আমি কি করেছি। আর ক্ষমাও চাইছি। মেহেরিন’র কাছেও ক্ষমা চাইছি। সে আমাকে ক্ষমাও করে দিয়েছে। তাই ভাবলাম হয়তো তুমিও!

– আমার পক্ষে এটা সম্ভব না! কখনো ক্ষমা করতে পারবো না

– কিন্তু ভেবেছিলাম এখনো আমায় ভালোবাসো তুমি।

– না‌ ভালোবাসি না তোমায়।

– খুব সহজে ভুলে গেলে না!

কাব্য ক্যাট’র হা টা ছাড়িয়ে নিল। ক্যাট হেসে বলল..
– ঠিক আছে তাহলে আমার বিয়েটা দেখে যাও। আমার অনেক ভালো লাগবে।

– ..

– ও কিন্তু অনেক ভালোবাসে আমায়। আমিও বাসি। সুখে থাকব আমরা।

কাব্য হেসে দিলো। ক্যাট এসে বরের হাত হাত ধরে স্টেজে উঠে গেল। মেহেরিন বলে উঠে..

– কাজী কে ডাকো। বিয়ে পড়ানো শুরু হোক। এর পর আমি মিষ্টি খাবো! ইয়াম্মি ইয়াম্মি বিয়ের মিষ্টি!

কাজী এসে বসল। কাব্য তাকিয়ে আছে ক্যাট’র দিকে। ক্যাট তাকিয়ে আছে তার বরের দিকে। কাজী বিয়ে পড়াতে শুরু করল। ক্যাট কাব্য’র দিকে একবারও তাকায় নি। মেহেরিন দেখছে কাব্য’র রিয়েকশন। কাব্য রেগে যাচ্ছে। কাজী সাহেব ক্যাট কে বলল কবুল বলতে।
ক্যাটও খুব সহজে কবুল বলতে যাবে হঠাৎ তার মাথা ঘুরতে লাগল। গাল গরম হয়ে গেল। ক্যাট গালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে কাব্য তার দিকে রেগে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে বাকি নেই কাব্য তাকে চড় মেরেছে আর সেটা আচমকা! ক্যাট বড় বড় চোখ করে সামনে তাকাল।‌ সবাই তার মতোই অবাক। কাব্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল..

– কবুল বলবি তুই, বল কবুল বল। আমিও দেখি কিভাবে বলিস!

ক্যাট গালে হাত দিয়ে মাথা নেড়ে না বলতে লাগল। কাব্য রেগে বলে..
– কেন বলবি না। বল কবুল বল।

ক্যাট কাঁপা কাঁপা গলায় বলল..
– আ..আমি বি..বিয়ে ‌ক..করবো না!

– কেন করবি না। একশবার করবি।‌ খুব শখ না বিয়ে করার।

– না না আমি বিয়ে করবো না।
বলেই দাঁড়িয়ে গেল ক্যাট! কাব্য রেগে ক্যাট’র বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে নিল। অতঃপর ফিসফিসিয়ে বলল..
– বিয়ে তো আজ হবেই। আর তুমি বিয়েও করবে আর সেটা আমাকে।

ক্যাট অবাক হয়ে কাব্য’র দিকে তাকাল। কাব্য বলে উঠে..
– ভেবে না ভালোবেসে বিয়ে করবো। ভুলে যেও না, তুমি আমার সাথে যা করেছো তার জন্য আমি তোমাকে এতো সহজে ক্ষমা করবো না। আমার সাথে যা করেছো এটার ফল তোমাকে পেতে হবে। আমি যেই কষ্ট পেয়েছি সেটা তুমিও পাবে। আমাকে ধোঁকা দিয়ে, কষ্ট দিয়ে তুমি সুখে থাকবে এটা হতে পারে না বুঝলে! বসো এখানে!

কাব্য’র মুখে ঝাড়ি শুনে ক্যাট চমকে উঠলো। অতঃপর গিয়ে বসে পরল। কাব্য কোমরে হাত দিয়ে গেল বরের কাছে। বলল..
– এবার বর বাবাজির একটু সেবা করি!

বলেই বরের টোপর খুলল। বর কে দেখে কাব্য সহ বাকি সবাই অবাক। নিহা, অভ্র আর নীল সহ সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কাব্য বলে উঠে..
– নিশি তুই!

নিশি দাঁত বের হেসে বলে..
– আমি মানে!

নিশান বলে উঠে..
– জান পাখি! আমার বউ ওখানে বর সাজে কি করছো!

কাব্য অবাক হয়ে ক্যাট এর দিকে তাকায়। ক্যাট মাথা নিচু করে নেয়।‌ এদিকে তাকিয়ে দেখে নিশি উধাও। কাব্য পিছনে ঘুরে দেখে মেহেরিন ও উধাও! রোদ্দুর হেসে বলে..
– নির্ঝর ও উধাও! তার মানে এটা ওদের ৩ জনের কাজ!

কাব্য ‌ধপাস করে বসে পরে। এদিকে ক্যাট উঠে পড়ে।‌কাব্য‌ তার দিকে তাকিয়ে বলে..
– কোথাও যাচ্ছ। আরেকটা দেবো!

ক্যাট গালে হাত দিয়ে তাড়াতাড়ি করে বসে পড়ে।‌ সবাই হেসে উঠে।‌ অতঃপর তাদের দু’জনের বিয়ে পড়ানো শুরু হয়। দূর থেকে এক কোনে দাঁড়িয়ে মেহেরিন উঁকি দিয়ে এসব দেখতে থাকে।‌ হঠাৎ তার ঘাড়ে কেউ হাত দিলে সে লাফিয়ে উঠে। অতঃপর পেছনে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর!
নির্ঝর বলে..
– মেহু পাখি আমি!

– ওহ আপনি। আপু কোথাও!

– চেঞ্জ করতে গেছে। এসে পড়বে।

– ওহ্ আচ্ছা।

– কিন্তু তুমি কি প্ল্যান টা করলে ইয়ার। আমি তো ভেবেছি তুমি না আমার বিয়েটা এবার দিয়ে দাও।

– আসছে আপনার বিয়ে দেবো কেন আমি।

– হ্যাঁ তাই তো, কিন্তু যাই হোক তুমি এটা ঠিক করো নি।

– কোনটা?

– ক্যাট কে এখানে আনলাম আমি কিন্তু তুমি আমাকে একবার ও বললে না যে বিয়েটা আজ হবে।

– 😒

– এভাবে তাকাচ্ছো কেন। যত’ই হোক প্ল্যানটার মধ্যে আমিও ছিলাম!

[ বিয়ের দু’দিন আগে নির্ঝর দেশে এসে ক্যাট নিয়ে যায় মেহেরিন’র কথায়। কারন মেহেরিন জানত কেউই চাইবে না ক্যাট আর কাব্য’র বিয়েটা হোক। সবাই ক্যাট কে অপছন্দ করে। কিন্তু কাব্য এখনো ক্যাট কে ভালোবাসে। তাই যদি ক্যাট একবার বিয়ের আসরে চলে এলে তখন কেউ কিছু বলবে না তাই সে নির্ঝর কে পাঠায়। আর ডেভিল কে তো নিরবকে উদ্ধার করার জন্য প্ল্যান করে তাই তাকেও সম্ভব হয় না। ]

মেহেরিন হেসে বলে..
– এটা সবার জন্য সারপ্রাইজ ছিল। আপনারও! আচ্ছা যাই হোক ধন্যবাদ! আমাকে সাহায্য করার জন্য!

– বাট আমার একটা ফেভার চাই!

– কিহ?

– এটাই যে তোমাকে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে।

– হাম ওকে যেহেতু আপনি আমার হেল্প করেছেন তাই বন্ধুত্ব করাই যায় তবে শুধু বন্ধুত্ব!

– হ্যাঁ হ্যাঁ চলবে!

নিশি এসে বলল..
– কি রে কি নিয়ে কথা বলছিস তোরা!

– কিছু না আপু!

– বিয়ে হয়ে গেছে।

– হুম হচ্ছে দেখো!

অতঃপর ৩ জন সেখান থেকে দাঁড়িয়ে বিয়ে দেখতে লাগল। ক্যাট গালে হাতে বার বার কাব্য’র দিকে তাকাচ্ছে। কে জানে কয়টা চড় পরবে।‌ গাল লাল হয়ে গেছে। এতো জোরে কারো হাতে চড় খায় নি সে। অতঃপর বিয়ে পড়ানো শেষ হলো। কাব্য ক্যাট’র দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল। ক্যাট তার পরিবর্তে একটা শুকনো ঢোক গিলে গালে হাত দিল।

#চলবে….