#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ৩৩”
_______________________
প্রায় ৩ঘন্টায় দুজন ঢাকা সদরঘাট এ পৌঁছে যায়।চারপাশে বহু মানুষের আনাগোনা। দুজন বাসে করেও যেতে পারতো কিন্তু লঞ্চে যাওয়ার মতো মজা থাকবে না। আর দুজনের বরাবরই পছন্দ না বাসে করে চাঁদপুর যাওয়া টা।[একটা কথা আপনাদের লেখিকা আপুও কিন্তু চাঁদপুরের মেয়ে] সব ফর্মালিটি কমপ্লিট করে লঞ্চে উঠে ডাইরেক্ট ছাদে চলে যায়।।
তিন ঘন্টার মধ্যে চাঁদপুর বন্দরে এসে দুজনে পৌঁছায়। সেখানে এসে নিশা তার বাবাকে দেখতে পায়। আবাবকে দেখতেই নিশা দৌড়ে তার কাছে যায় এবং তাকে জড়িয়ে ধরে।
নিশা- ওহহ বাবাই মিস ইউ সোওঅঅঅঅ মাচ।
বাবাই- মিস ইউ টু মাই চাইল্ডস। কেমন আছিস মা ইসস কতোদিন পর তোকে দেখলাম। এমন শুকিয়ে গেছিস কেন খাস না ঠিক মতো?
আনিলা- আরে আংকেল আপনার মেয়ে তো শুধু আমার মাথাই খেয়েছে।
নিশা আনিলার পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,”চুপ হারামি মেয়ে তোর জন্যই আমার এই কবস্থা তুই তো আমাকে জ্বালিয়ে খাস!
আনিলা- যাক বাবা যতো দোষ নন্দোঘষ?
নিহাদ রহমান দুজনের ঝগড়া দেখে বলে,”আরে থাম তোরা দুজনের স্বভাব এখনো গেলো না। কই ভাবলাম পরিস্থিতির কারণে দুজনেই শুধরে যাবি তা না আগের মতোই রয়ে গেলি।
আনিলা,নিশা একসাথে- স্বভাব বদলাবে না কখনো তাইনা?(দুজম দুজনের গলা জড়িয়ে)
নিহাদ রহমান- আচ্ছা বুঝলাম এখন চল তোদের মায়েরা তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।
সব শেষে একটা সিএনজি নিয়ে বাসার দিকে যেতে লাগে। আনিলা এবিং নিশার বাসা প্রায় একসাথেই। শুধু ২মিনিটের পথ। নিজ শহরে ফিরে দুজনের মনই বেশ ফুরফুরে। বেশ স্বাচ্ছন্দেই দুজন দুজনের বাড়ি পৌঁছে গেলো। নিশা বাড়ির সামনে এসে দেখে তার মা দাঁড়িয়ে। নিশা মাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
– কেমন আছিস মা তুই?
– ভালো আম্মু তুমি কেমন আছো?
– আমিও ভালো।
– আরে তোমরা কি এখানেই সব বলবে মেয়েটাকে ভেতরে তো যেতে দাও।
– হ্যাঁ আয় নিশু।
বলেই নিশাকে নিয়ে ভেতরে চলে আসে। ভেতরে এসে নিশা আরেকটা শক খেলো রাইসাদের দেখে। রাইসা তো আপু বলে দৌড়ে এসে নিশাকে জড়িয়ে ধরে।
– ওলে আমাল রাইসা বুনু তাহ কেমন আছো তুমি?
– আমি ভালো আছি আপু তুমি কেমন আছো আর আমাদের বাসায় আমার সাথে দেখা করতে আসো নি কেন?
– সরি সোনা একটু বিজি ছিলাম এই দেখো কান ধরসি আর কখনোই এমন হবে না।(এক কান ধরে)
– হুম হুম হিয়েছে যাও আর বকবো না।
রাইসা পাকনি কথায় উপস্থিত সবাই হেসে দিলো। নিশার খালামনি বলে,”নিশু যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে এতোটা পথ জার্নি করে আসছিস টায়ার্ড তো হয়েছিসই।”
– হ্যাঁ যাচ্ছি রুমে।
বলেই নিশা উপরে চলে গেলো। কাজের লোক দিয়ে আগেই নিশার লাগেজ রুমে দিয়ে আসা হয়েছে।
এফিকে,,
ফারান- ওওওহ নিশা পিক আপ দ্যা ফোন পিক আপ দ্যা ফোন।
আদ্র- কিরে কাকে এতো কল দিচ্ছিস?
ফারান- আর বলিস না নি….(বলেই থেমে গেলো)
আদ্র- নি মানে? ওই ওই সত্যি করে বল তো নিশাকে নিয়ে এতো মাথা ব্যথা কেন তোর ওয় তোর কি হয় যার জন্য দিন রাত ওর কথা চিন্তা করেই পার করিস।
ফারান- আরে তেম…
আদ্র- (বলতে না দিয়ে) না না তোকে বলতেই আজ আমি সব জানতে চাই বল তুই নইলে দেখিস তোর কি করি।
ফারান- ওকে ওকে বলছি…
বলেই নিশাকে যে ফারান ভালোবাসে সেটা আদ্রকে বলে বিয়ের কথা বাদ দিয়ে। আদ্র শুনে বলে,”যা গেস করেছিলাম তাই হলো।”
ফারান শুধু দাঁত কেলালো তারপর আবার বলে,”আচ্ছা নিশা ফোন কেন ধরছে না আর ওদের বাসায় গিয়েও তো পেলাম না কই গেছে বলতো?”
আদ্র- আমি কি করে জানবো?
ফারান- তুই ছাড়া জানবে কে? সারারাত যে আনিলার সাথে কথা বলে কাটাস ভেবেছিস কি কিছু জানিনা?
আদ্র- বাব্বাহ আমার ব্যাপারে তাহলে সব খবরই নিয়ে নিসোস দেখছি।
ফারান- হুম এখন বল ওরা কই।
আদ্র- চাঁদপুর গেছে।
ফারান- কিইইইই?? নিশা একবারও আমায় বলার প্রয়োজনবোধ করলো না। চল আমরাও যাই।
আদ্র- আমার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু আদন যাবে?আর আফনাদ তো বিবাহিতা বউ ছাড়া তো এখন কিছুই বুঝে না হারামি টায়।
ফারান- আদনকে বলে দেখ আফনাদ কেও বলিস গেলে যাবে না গেলে নাই আর আমি এখন যাচ্ছি বাই।
আদ্র- আরে আরে কই যাচ্ছিস?
ফারান- চাঁদপুর!
আদ্র- ওয়ায়ায়াট!! এখন কেন আমরা যাবোনা?
ফারান- তোরা আস্তে ধীরে আসিস আমি যাই।
আদ্র- একদম না আমাদের সাথেই যাবি নইলে কথা বন্ধ।
ফারান- কথায় কথায় এখন এতো থ্রেড কেন দেস তুই?😒
আদ্র- প্রয়োজনে দিতে হয়।
ফারান ভেংচি কাটে। এদিকে নিশা ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন নিয়ে বসে। ফোন অন করতেই দেখে ফারানের ১৯৩ টা মিসডকল। নিশা শক খায় এতো মিসডকল দেখে। আবার কল আসতেই নিশা সাথে সাথে রিসিভ করে আর ফারানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলা শুরু করে,”এই আপনার প্রব্লেম কি এতো ফোন দিয়েছেন কেন আর কি খেয়ে দেয়ে কাজ নাই অন্যকে সাতসকালে জ্বালান কোন সাহসে?!”
ফারান- এই এই আগে এটা বলো তুমি আমাকে না জানিয়ে কই গেসো?
নিশা- যেখানেই যাই আপনাকে কোন দুঃখে জানাতে যাবো?
ফারান- ওওও আচ্ছা তাই ওয়েট আমি কিছুক্ষণের মাঝেই চাঁদপুর আসছি।
ফারানের চাঁদপুর আসার কথা শুনে নিশা ঘাবড়ে গেলো এবং ভাবতে থাকে ফারান কি করে জানলো যে ঞ্জশা চাঁদপুর এসেছে। ইসসস কতো কি ভেবেছিলো চাঁদপুর এসে নিজের মতো চলবে ফিরবে তা না সেই বজ্জাত টা ঠিকই চলে আসবে। বাট বাবা মা যদি এসব বিষয়ে জানে আমি তাদের কি জবাব দিবো? নাহ বুঝেছি এই ছেলে আমায় কখনোই শান্তি মতো থাকতে দিবে না।
নিশা এসবই ভাবছিলো আর ফারান এদিক দিয়ে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে নিশার কোনো হুশ নেই। ফারান এবার রেগে গিয়ে চিল্লিয়ে বলে,”ওই বয়ড়া!!!”
ফারানের চিল্লানোতে নিশার ধ্যান ভাঙে এবং নিমিষেই রেগে বলে,”কি বললেন আমি বয়ড়া? আপনি বয়ড়া আপনার ১৪ গুষ্টি বয়ড়া শালা হনুমান!”
শুরু হলো আবার ঝগড়া। নিশার নিচে থেকে ডাক পড়তেই কল কেটে নিচে চলে আসে৷ নিচে এসে তো দেখে সব এলাহি কান্ড। পুরো ডাইনিং টেবিল জুড়ে নিশার ফেভারিট ডিশ। চিকেন ফ্রাই, ভেজিটেবল রাইস,বিফ কাবাব,তান্দুরি চিকেন,গরুর কালা ভুনা, চিকেন শর্মা, চিংড়ি ভাজা, ইলিশ ভাজা, সেমাই, পায়েস আরও কয়েকধরণের আইটেম। নিশার তো খাবার দেখেই পেটের মধ্যে ইঁদূর রেস লাগিয়েছে। কোনোরকম কিছু না বলে ছুটে গিয়ে এক চেয়ারে বসে পড়লো। তা দেখে মাইশা রহমান বলেন,”আরে মেয়ের কান্ড দেখো এভাবে কেউ দৌড়ে বসে? বলি তুই কি এখনো ছোট বাচ্চা? আর খাবার তো কেউ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে না।”
নিশা- যা সুগন্ধ বেরিয়েছে মানুষ ডাকাতি করে যদি হাবার নিয়ে যায় ইসসস আগে দাও তো খুব জোর খুদা পেয়েছে।
বলেই এক প্লেটে সব আইটেম অল্প অল্প করে নিলো আর বাঘিনীর মতো খেতে থাকে। নিশার খাবার দেখে নাহিদ রহমান হেসে বলে,” আস্তে ধীরে খা মা গলায় আটকাতে পারে।”
নিশা- চিন্তা করিও না বাবাই কিচ্ছু হবে না শান্তিমতো খেতে দাওতো।(খেতে খেতে)
রাইসা- আপু জানো তোমায় পুরো ভাল্লুকের বউয়ের মতো লাগছে।
নিশা- মানেহ?
রাইসা- যেভাবে খাচ্ছো তাইতো মনে হচ্ছে।
নিশা- এই চুপ! খালামনি আম্মু তোমরাও বসো একসাথে খাবো ইসসস কতোদিন হয়েছে একসাথে খাইনা।
খালামনি- হুম বসছি আগে তুই খেয়ে নে।
নিশা- না বসো বলছি।
নিশার জোরাজুরিতে নিশা মা এবং খালামনি উভয়ই খেতে বসলো। নিশা বেশ ইঞ্জয় করছে নিজের পরিবার নিয়ে। এতো এতো মানুষের মাঝে ফারানের কথা নিশা একদম ভুলে গেছে। বিকালে সবাই বেরোলো ইদের শপিং করতে। আনিলার ফেমিলিও গেলো। নিশা শপিং করছে এমন সময়ই দেখে ইয়াসার ফোন। নিশা রিসিভ করেই খুব মিষ্টি করে সালাম দেয় ইয়াসাকে। ইয়াসা সালামের উত্তর দিয়ে বলে,”কেমন আছিস মা?”
নিশা- এইতো ভালো তুমি কেমন আছো আন্টি?
ইয়াসা- আমিও ভালো তা কি করছিস? শুনলাম তুই নাকি চাঁদপুরে গেছিস?
নিশা- হ্যাঁ আজই আসলাম। ইদ করেই ঢাকা যাবো।
ইয়াসা কিছু একটা ভেবে বললো,”ওওও আচ্ছা।”
এভাবে দুজনে কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলো। এভাবেই শপিং,ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফিরে আসে। পরেরদিন সকালে নিশা বায়না ধরে সে তার বাবাইয়ের সাথে গরু কিনতে যাবে কিন্তু নিহাদ রহমানের এক কথা সেখানে মেয়্বদের যাওয়া ঠিক নয়। তাই নিশা আর যেতে পারেনা রুমের মধ্যে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
,
,
,
,
,
চলবে!!!