#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ২৪
,
,
নিশা আনিলার সাথে বকবক করতে করতে ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছিলো এমন সময়ই পেছন থেকে অদ্রির ডাক পড়ে।
অদ্রি- আরে আরে তোমরা ক্লাসের দিকে কই যাচ্ছো স্টেজে আসো তাড়াতাড়ি।
নিশা- আমরা স্টেজে গিয়ে কি করবো?
অদ্রি- এমা ভুলে গেছো আমি না কাল আনিলা আর রিদি কে বলে দিলাম যেনো স্টেজে সাজানোর জন্য তাড়াতাড়ি চলে আসে।
আনিলা- ওহ সরি আসলে আমি নিশাকে ব্যাপার টা বলতেই ভুলে গেছি।(মাথা চুলকাতে চুলকাতে)
নিশা- এখন তাহলে চল।
আনিলা- হুম চল।
তারপর অদ্রি নিশা আনিলাকে স্টেজের দিকে নিয়ে গেলো। একেকজনে একেক কাজে বিজি। রিদি আগে থেকেই সেখানে ছিলো। আদ্র, আফনাদ, আদন এবং ফারানও সেখানে আছে। অদ্রি নিশাকে বললো লাইটিং এর কাজ টা দেখতে আর আনিলা যেনো ফুলের ডেকোরেশন দেখে। অদ্রির কথা মতো দুজনই কাজে লেগে পড়ে। একটা মরিচ বাতি লাইটের প্যাঁচ খুলতে গিয়ে নিশা নিজেই সেই প্যাঁচে জড়িয়ে গেছে।
নিশা- উফফফ এটা কোনো কথা আমি নিজেই তো লাইটে পেঁচিয়ে গেছি ধুর ধুর এখন খুলবো কি করে?
বলেই একটা একটা তার খোলার চেষ্টা চালাতে লাগে। ফারান সেদিকে কাজে এসেছিলো কিন্তু নিশার এমন অবস্থা দেখে সে হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। নিশা তো রেগে ফায়ার।
নিশা- ওই বজ্জাত পোলা এমন ভেটকানের কি হলো? নিজে প্যাঁচে পড়েন বুঝবেন কতো ধানে কতো ঠ্যালা।(রেগে)
ফারান যেনো হাসি থামাতেই পারছে না। নিশার দিকে এগিয়ে এসে হাত দিয়ে মরিচ বাতিগুলো ধরে যেনো আরও পেঁচিয়ে দিচ্ছে। নিশা এবার ফারানকেও সেই মরিচ বাতিতে পেঁচিয়ে দেয়। এবার ফারান হাসি থামিয়ে রেগে বলে,”এই মেয়ে আমায় এই তারের মাঝে পেঁচালা কেন?”
নিশা- এতোক্ষণ প্যাঁচার মতো হাসছেন যে তাই। কই হেল্প করবেন তা না করে ভেটকাইসেন এখন বুঝেন ঠ্যালার নাম বাবাজি কাকে বলে।
বলেই নিজের শরীর থেকে তার গুলো ছাড়াতে থাকে সাথে ফারানও। দুজনের এমন টানা হেঁচড়ায় প্রায় কাছাকাছি চলে আসে নিশা আর ফারান।
নিশা- উফফফ আপনি ওইদিক দিয়ে টানেন কেন?
ফারান- তুমি টানো কেন তোমার টানাটানি তে তো আমি পেঁচিয়ে যাচ্ছি।
নিশা- আপনি প্যাচলে আমার কি আমি জাস্ট ছাড়া পেতে চাই।
বলেই একটা তার টান দিলো ফারানও সেই তার টাই জোরে টান দিলো যার ফলে নিশা গিয়ে একদম ফারানের বুকে গিয়ে পড়ে। ফারানও এই ঘটনার জন্য একদম অপ্রস্তুত ছিলো। নিশার তো কয়েক সেকেন্ড এর জন্য বরফ হয়ে গেলো তারপর চট করে মাথা উঠিয়ে নিলো ফারানের বুক থেকে এবং ফারানের দিকে তাকালো। ফারান আগে থেকেই নিশার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারান একমনে নিশার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। হরিণটানা চোখ, চোখ দিয়ে যেনো মায়া গলগল করে পড়ছে। ফারান নিশার চোখের সুন্দর্যে কোনো এক অজানায় নেশায় ডুবে গেলো। নিশা শান্ত দৃষ্টিতে ফারানকে দেখছে। তার মনেও অজানা ভয় নাড়া দিচ্ছে। সেটা ফারানের এতো কাছে থাকার নাকি অন্য কিছু সেটা নিশা বুঝতে পারছে না। ফারান ঘোরের মধ্যেই নিশার এক হাত নিজের হাতে নেয়। এক দৃষ্টিতে সে হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফারান যেই ঠোটের কাছে হাত টা নিবে ওমনি নিশার ধ্যান ভাঙ্গে। তারপর চট করে হাত ছাড়িয়ে নেয় ফারানের থেকে এবং নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিশার এমন কাজে ফারানেরও ধ্যান ভাঙ্গে তারপর একটা শুকনো কাশি দিয়ে বলে,”আমি হেল্প করছি।”
নিশা- নো নিড।
বলেই আবার নিজের মতো করে তার ছাড়ানোর চেষ্টায় লেগে পড়ে। ফারানও নিশাকে হেল্প করতে থাকে আর ভেতরে ভেতরে নিজেকে বকতে থাকে।
ফারান-(উফফফফ আমি কি করতে যাচ্ছিলাম নিশার সাথে? ধুর ধুর আমার মাথা টা পুরোই গেছে নইলে এতো বড় পাগলামি কেউ করে। নাহ ফারান কান্ট্রোল ইউরসেল্ফ নিশার তোর কিছুই না। এক সেকেন্ড নিশা তো আমার বিয়ে করা বউ তাহলে…..নো ফারান এটা কখনোই পসিবল না।)
এগুলোই ফারান মনের মধ্যে বলছিলো এমন সময়ই সেখানে অদ্রি আসলো। অদ্রি এসে দুজনের এমন নাজেহাল দেখে হাহাহা করে হাসতে শুরু করে।
অদ্রি- আল্লাহ কি অবস্থা করেছো দুজনে? তোমরা কি বাচ্চা? বাচ্চাদের মতো কিভাবে পেঁচিয়েছো।
বলেই আবার হাসতে শুরু করে। নিশা রেগে বলে,”থাম আগে এগুলা থেকে বের কর আমার জাস্ট সহ্য হচ্ছে না।’
অদ্রি- ওকে ওকে কুল আমি ট্রাই করছি।
তারপর অদ্রি নিশাদের হেল্প করলো। নিশা প্রথমে ছাড়া পায় তারপর ফারান। ফারান আর এক মুহূর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে হনহন করে চলে আসে। তারপর নিশাও আর এসব নিয়ে না ভেবে নিজের কাজে মন দিলো। এভাবে পুরো ডেকোরেশন সবাই মিলে বিকালে শেষ করলো। ডেকোরেশন শেষ হতেই যার যার পার্টিসিপেন্ট আছে তারা নিজেরা নিজের মতো করে সাজতে চলে গেলো। অদ্রি, নিশা, আনিলা আর রিদি এক রুমে রয়েছে। নিশা ফাংশনে যেই ড্রেস টা পড়বে সেই ড্রেস টা বের করতেই একজন ছেলে আসে।
– এখানে নিশা আপু কে?
নিশা- হুম আমি কেন কিছু দরকার?
ছেলেটি নিশার দিলে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে হাতে থাকা শপিং ব্যাগ টা নিশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”ফারান ভাইয়া এটা আপনার জন্য পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন যেনো এটা পড়েই ফাংশনে আসেন।”
ছেলেটার কথা শুনে নিশা সেই রেগে গেলো। অদ্রি নিশার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে বেশ বুঝতে পারে যে নিশা এটা নিবে না তাই অদ্রি চট করে ছেলেটার হাত থেকে শপিং ব্যাগ টা নিয়ে বলে,”ঠিক আছে ও পড়বে তুমি এখন যেতে পারো।”
ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।ছেলেটা যেতেই অদ্রি নিশাকে বলে,”ফারান ভাই যেহেতু দিসে পড়ে নে।”
নিশা- জীবনেও না আমার কি জামা কাপড়ের অভাব পড়েছে যে ওনার টা পড়তে যাবো এএএএএএহ কুয়ারা আমায় কি পাইসে কি হাতের পুতুল? যখন যা বলবে তাই করতে হবে সেটা কোনো নিউজে লেখা আছে?
আনিলা- আহ রাগিস কেন দিয়েছে যেহেতু পড়েই নে না।
নিশা- নেভার!!
বলেই নিশা অন্যদিকে ফিরে গেলো। অদ্রি নিশাএ জন্য অপেক্ষা না করে প্যাকেট টা খুলে দেখতে থাকে কি আছে ভেতরে। শপিং খুলে তো আনিলা, রিদি আর অদ্রি অবাক। ব্লেক কালারের একটা জর্জেট শাড়ি সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি। এতো সুন্দর শাড়ি যে কারোই চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো।
আনিলা- বইন ফারান ভাইয়ার চয়েস এতোটা নিখুঁত কি করে?
রিদি- আমিও সেইটাই ভাবছি ওয়ায়াও জাস্ট অসসাম একটা শাড়ি।
অদ্রি- হুম ফারান ভাইয়া যেমন তেমনই তার চয়েস কি বলিস নিশু?(নিশাকে কিছুটা খুঁচিয়ে)
নিশাও এবার শাড়িটা দেখে এবং সে নিজেও হা এতো সুন্দর শাড়ি দেখে।
নিশা-(এই বজ্জাত টার চয়েজ এতো সুন্দর জানা ছিলো না তো। কিন্তু আমায় এগুলো কেন দিলো? উনি কি সত্যি সত্যিই আমাকে নিজের বউ ভেবে এগুলো গিফট করেছে? কে জানে কিন্তু আমি এগুলো পড়বোই না হুহ।)
অদ্রি- কি রে চুপ কেন কিছু তো বল।
নিশা কিছু বলে না। নিজে নিয়ে আসা জামা তা নিয়ে নিশা চেঞ্জ করতে চলে যায়। অদ্রি মাথায় একটা থাপ্পড় মেরে বলে,”এই মেয়ে এতো ত্যাড়া কেন আনু?”
আনিলা- ও এমনই তবে আত্মসম্মান বেশি।
রিদি- ফারান ভাইয়া তো আর ওকে দয়া করে দেয়নাই তো কিসের এতো আত্মসম্মান?
আনিলা- ধুর বাদ দে তো ওর টা ওয়ি ভালো লাগে।
তারপর ওরা আর কেউ কোনো কথা বাড়ালো না। নিশা একটা সবুজ ড্রেস পড়ে বের হলো। ড্রেস টা এতোও খারাপ না। তারপর একে একে সবাই রেডি হয়ে নিলো। রেডি হওয়া শেষে সবাই স্টেজের দিকে চলে গেলো। ফারান রা সেখানেই বসে ছিলো। ফারান আজ ব্লেক পাঞ্জাবি আর ব্লেক জিন্স পড়েছে। চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো আর চোখে গোল ফ্রেমের চশমা। এতেই ফারানকে বেশ লাগছে একেবারে ইরানি ছেলেদের মতো। মেয়ে গুলো তো সব হা করে ফারানকে দেখছে আর কিছুক্ষণ পরপর আয়নায় নিজেদের মেক আপ ঠিক করছে। তার একটাই উদ্দেশ্য কোনো ভাবে ফারান যদি তাদের দেখে ইম্প্রেসড হয়ে যায়। কিন্তু ফারানের এসবের দিকে একদমই খেয়াল নেই সে শুধু ভাবছে নিশা কখন আসবে। দুজন একসাথে নাচবে দেখে ফারান নিশার জন্যেও নিজের সাথে ম্যাচ করে একটা ব্লেক শাড়ি কিনে ফেলে।
ফারান নিজে দিতে পারতো কিন্তু দিতে তার কেমন যেনো লাগছিলো তাই ছেলেটাকে দিয়েই পাঠিয়েছিলো। অবশেষে ফারানের অপেক্ষার অবসান ঘটে। কিন্তু নিশার পড়নে অন্যড্রেস দেখে ফারানের মাথায় রক্ত উঠে গেলো কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে দিলো না। ফাংশন শুরু হয়ে গেলো। নিশা পানি খাওয়ার জন্য উঠে বাইরে চলে আসে। যেই বোতল টা খুলে পানি খাবে ওমনি কেউ তার মুখ চেপে ধরে একটা অন্ধকার ক্লাসরুমে নিয়ে আসলো। নিশা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করতে থাকে কিন্তু কিছুতেই পারে না। ক্লাসরুমে নিয়ে আসতেই নিশার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেয়। নিশা ছাড়া পেতেই পিছু ফিরে এবং বাইরের আলো রুমে প্রবেশ করাতে কিছুটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আলোতে নিশা ফারান কে দেখলো। ফারান যে প্রচুর রেগে আছে তা তার ফেইস দেখেই বেশ বুঝতে পারছে নিশা।
নিশা- এটা কোন ধরণের অসভ্যতামি আমাকে এখানে উঠিয়ে আনসেন কেন সমস্যা কি আপনার?
ফারান- তুমি।
নিশা- আমি মানে?
ফারান- আমার সমস্যার কারণ তুমি। এই মেয়ে তুমি আমার দেওয়া শাড়িটা। পড়ো নাই কেন? বলসি না ওইটা পড়ে ফাংশনে আসবা?(রেগে)
নিশা- আপনার টা খাই না পড়ি যে আমি আপনার কথা শুনতে যাবো?
ফারান- শুনতে তুমি বাধ্য ওকে? আমি অদ্রি কে বলছি তোমায় এসে যেনো রেডি করে দেয়।
নিশা- এই এই এই একদম না। আমি ওই শাড়ি পড়বো না। আপনার টা কেন পড়বো আমি? আমার কি জামা কাপড়ের অভাব পড়সে যে আপনার আমার জন্য দরদ উতলাইয়া পড়ে? আপনার কোনো অধিকার নাই আমার উপর জোর খাটানোর ওকে?
ফারান নিজের পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে নিশার দিকে এগোচ্ছে আর বলছে,”ওহ রিয়েলি? এখন তুমি আমায় শিখাবা কোনটায় অধিকার আছে কি নেই?”
,
,
,
,
চলবে!!!