Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-৩০

0
4998

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট – ৩০”

————–

আফনাদ- আসলে আমার আর অদ্রির মধ্যে যে রিলেশন ছিলো সেটা মা কি করে যেনো জেনে যায়। তারপর অদ্রির ফুল ডিটেইলস বের করে বাবাকে রাজি করিয়ে আমারই অগোচরে তারা অদ্রির বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যায়। তখনো আমি কিছু জানতাম না সেদিন রাতে অদ্রি আমায় জানালো যে তাদের বাসায় নাকি মা বাবা গেছিলো। পরেরদিন সকালে মাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো।

ফারান- ওয়াও কংগ্রেস।

আদ্র- আহা তাহলে বিয়ে খাচ্ছি বেস্টফ্রেন্ডের। বাই দ্যা ওয়ে আমার শপিং কিন্তু তুই করে দিবি।

আদন- ভাই তুই মাইয়া কবে হইলি?

আদ্র- হারামি চুপ কর।

আফনাদ- আরে থাম তো তোরা পুরো কথা শেষ না করতেই মাঝে দিয়ে নাক ঢুকাস কেন?

ফারান- ওদের কথা ছাড় তুই বল।

আফনাদ- তো সেদিনই আমি সহ গিয়ে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে আসি।

আনিলা- কবে ভাইয়া?

অদ্রি- ২৮ তারিখ।

নিশা- ওয়ায়াও এটাতো সামনের সপ্তাহেই।

অদ্রি- হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি করলে ক্ষতি কি?

নিশা- নো ক্ষতি ডু ফূর্তি।

নিশার কথায় সবাই হাসলো অদ্রি অল্প হেসে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আফনাদ অদ্রির এমন লজ্জা পাওয়া দেখে মুচকি হাসলো। হাসতে হাসতে আনিলার চোখ গেলো আদ্রের দিকে। আদ্র দাঁত কেলিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে। আনিলা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো আর চুপ করে বসে রইলো।

আফনাদ- তবে হ্যাঁ তোদের যেনো বিয়ের ৫ দিন আগে থেকেই দেখি বলে দিলাম।

অদ্রি- হ্যাঁ নিশা তোদের যেনো আগে থেকেই আমার বাসায় দেখি।

নিশা- ওকে বাবা দেখা যাবে।

অদ্রি- নো দেখাদেখি আগে থেকেই আসবি মানে আসবি ব্যাস!!

নিশা- ওকে ওকে যাবো আগে বাবাই মায়ের সাথে গিয়ে দেখা করতে হবে।

ফারান- কেন তোমাদের সাথে কি তোমাদের মা বাবা থাকে না?(ভ্রু কুচকে)

আনিলা- না ভাইয়া আসলে আমার আসল বাসা চাঁদপুর। সেখান থেকেই ঢাকায় পড়তে আসছি।

নিশা রেগে আনিলাকে দিলো এক চিমটি আর চোখ দিয়ে ইশারা করলো চুপ থাকতে। আনিলা ব্যথায় চুপ হয়ে গেলো।

ফারান- ওওও আচ্ছা চাঁদপুর তাইনা?(নিশার দকে তাকিয়ে)

নিশা বেশ বুঝতে পারছে ফারান কিছু না কিছু করবে। আপাতত ওর দিকে কোনোরকম না তাকিয়ে আড্ডায় মনোযোগী হলো। এভাবে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। অদ্রি সবাইকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো। তবে একা নয় আফনাদও সাথে গেছে। আদ্র আনিলাকে নিয়ে গেছে আর আদন রিদিকে। নিশা আর কোনো কুল কিনারা না পেয়ে যেই বাসে উঠতে নিবে ওমনি ফারান পেছন থেকে নিশার হাত টান দিলো। নিশা বিরক্তি নিয়ে ফারানের দিকে তাকালো।

নিশা- কি হলো কি এভাবে টানছেন কেন?

ফারান- বাইকে উঠো।

নিশা- ঠ্যাকা পড়েনাই ছাড়েন আমায় আমি বাসে যাবো।

ফারান- নো নিড।

ওদের এমন ঝামেলা দেখে একজন ব্যক্তি এসে বলে,”কি হলো আপনি মেয়ে টাকে টানছেন কেন? এটা কেমন অসভ্যতামি?”

ফারানের বিরক্তি ধরে গেলো। এই এক প্রব্লেম অন্যের মাঝে নাক গলানো না বুঝে না জেনে। এই স্বভাবের মানুষজনকে ফারানের একদমই সহ্য হয়না।

ফারান- এইটা আমার এবং আমার ওয়াইফের মধ্যে পার্সোনাল ম্যাটার নিশ্চয়ই আমাদের পার্সোনাল ম্যাটার আপনাকে বলতে বাধ্য নই।

ফারানের এমন কথায় লোকটা বাসে উঠে গেলো। এদিকে বাস টা নিশাকে রেখেই চলে গেছে।

নিশা- আরে আরে বাস টা তো চলে গেলো।

ফারান- তুমি কি লেখাপড়া করোনা?

নিশা- মানে?

ফারান- ওই বাস মিরপুর এর দিকে যাবে বলদ একটা।

নিশা- তো কি হইসে উত্তরার দিকেই তো যাভে নাকি?

ফারান- নো ম্যাডাম এইটা কুড়িল বিশ্বোরোড হয়ে আরেকদিকে যাবে আসার সময় দেখেননি কিছু। এখন আমি সময় মতো না আসলে তো মিরপুরে গিয়ে হারাতেন।

নিশা না বুঝেই জিবহায় কামড় দিলো। আসলেই তার ঢাকায় আসার পর সব জায়গা ক্লিয়ারলি চেনার উচিত ছিলো।

ফারান- এখন বেশি গাফিলতি না করে বাইকে উঠো।

নিশা- না আমায় বাস দেখিয়ে দিন আমি সেটা করে ঠিকই যেতে পারবো।

ফারান- এই মেয়ে তুমি এতো ত্যাড়া কেন বলো তো? এক কথায় জীবনেও আমার কথা শুনসো বলে তো মনে হয় না।

নিশা- শুনতে বাধ্য নই।

এবার ফারান ভিষণ রেগে গেলো। নিশাকে টেনে হিচড়ে বাইকে বসিয়ে নিজেও বসে তাড়াতাড়ি স্টার্ট দিলো। নিশা বাইক থেকে নামতে যেয়েও নামতে পারলো না। কি করে নামবে তার আগেই তো ফারান বাইক স্টার্ট দিলো। নিশা অবাক চোখে রাতের শহরটাকে দেখছে। কতো মানুষের আনাগোনা এই শহরে। একেকজন একেক কাজে বিজি। শুধু শুধুই কি আর এই ঢাকাকে ব্যস্ত শহর বলে?

বাইক হওয়ায় ১ঘন্টার পথে ৪০মিনিটেই নিজের বাসার সামনে চলে আসে নিশা। বাস দিয়ে আসলে হয়তো জ্যামে এতোক্ষণ বসে থাকতে হতো। নিশা বাইক থেকে নামতেই দূরে খেয়াল করে আনিলা আদ্রের সাথে দাঁড়িয়ে কি সুন্দর ফুচকা খাচ্ছে। নিশার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে ফারানও নিশার দৃষ্টি অনুসরণ করে আদ্র আর আনিলার দিকে তাকালো। দুজন দুজনকে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে দেখে ফারান ভ্রু কুচকালো।

ফারান- এই আদ্র আনিলার সাথে এভাবে ফুচকা খাচ্ছে কেন?

নিশা- ওরা রিলেশনশিপ এ আছে।

ফারান- ওয়ায়ায়াট!!!(নিশার দিকে তাকিয়ে)

নিশা- অবাক হওয়ার কি আছে রিলেশনশিপ থাকতেই পারে স্বাভাবিক। ভালোবাসা আছে তাই রিলেশনশিপে আছে।(আনমনে)

নিশার শেষের কথাগুলোতে ফারান নিশার দিলে তাকিয়ে রইলো। নিশা ওদের দেখছে আর কিছুক্ষণ পরপর মুচকি হাসছে। ফারানও নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে রাখলো। তারপর নিশাকে জিজ্ঞেস করে,”ভালোবাসা বিশ্বাস করো?”

নিশা- হুম করি অনেকটা৷ ভালোবাসার মধ্যে এক আলাদা অনুভূতি আছে। সেই অনুভূতির টানে আমরা নিজেকে বদলাতে পারি। অনুভূতি টা অনেক অদ্ভুত জানেন আমরা যেসব কাজে রোজী অভ্যস্ত সেসবও মাঝে মাঝে বদলে যায়। সত্যি বলতে তপ ভালোভাসাটাই একটা অনুভূতি।

ফারান- এতো কিছু জানো?

নিশা- হুম সবকিছু সম্পর্কে টুকটাক জ্ঞান রাখা ভালো। আর আমি তো আপনার মতো ভালোবাসায় অবিশ্বাসী না!

ফারান হাসলো। তারপর আবার বলে,”তাহলে কি আমাকে ভালোবাসো?”

নিশা- এএএহহহ জীবনেও না।

ফারান- কেন আমি কি দেখতে খারাপ?

নিশা- না তা না তবে স্বভাব খারাপ।

ফারান- মানে?(ভ্রু কুচকে)

নিশা- কিছু না বাসায় গেলাম টাটাহ আপনিও চলে যান।

ফারান- কেন আমি তোমার সাথে থাকলে সমস্যা কি?

নিশা- ভাগেন তো অসহ্য। আপনি কেন থাকবেন হ্যা?

ফারান- বারে জামাই হইনা তোমার?(দুস্টু হাসি দিয়ে)

নিশা- এই এক প্যারা। কেন যে ওইদিন ওই খোরগোশ টার পিছে দৌড়াইসিলাম এখন ভাগ্য আমাকে দৌড়ানি দিচ্ছে।

ফারান- খোরগোশ টাকে এনে দিবো সেটা ভেজে খাইয়ো।

নিশা- আবার শুরু করসেন ঝগড়াঝাঁটি আমার সাথে। (রেগে)

[শুরু হলো আবার আড়াইশোতম বিশ্বযুদ্ধ! কেউ কি বলবে এদের কবে মিল হবে?]

এভাবেই দুজনের মতো করে দিন কাটতে থাকে। নিশা আর চাঁদপুর যেতে পারলো না অদ্রির জন্য। অদ্রি তো মাস্ট বলেই দিয়েছে যেনো বিয়ের ৫দিন আগেই চলে যেতে৷ নিশা হাজার বুঝিয়েও মানাতে পারলো না তাই আর কি করার তার বাবামাকে জানিয়ে দিলো যে একেবারে ইদের ছুটিতেই বাড়ি যাবে এর আগে যাওয়া সম্ভব না।

কিছুদিন পর,,

নিশা আর আনিলা ভার্সিটিতে ঢুকছিলো হঠাৎ খেলারমাঠ থেকে মেয়েদের অনেক চিল্লাচিল্লি শুনতে পেলো। নিশা আর আনিলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে খেলার মাঠের দিকে তাকালো। দেখে সব মেয়েরা ওইখানে ভির করে দাঁড়িয়েছে। নিশা ব্যাপার টা বুঝতে না পেরে আনিলাকে জিজ্ঞেস করে,”কিরে ওখানে কি হচ্ছে?”

আনিলা- নো আইডিয়া।

নিশা- চল তো গিয়ে দেখি।

বলেই নিশা আনিলা সেদিকে গেলো। সেখানে মেয়েদের ঠ্যালাঠ্যালির শেষ নাই। নিশা আনিলাকে রেখে কয়েকটা মেয়েকে ধাক্কিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে কি হচ্ছে দেখার জন্য। সামনে গিয়ে দেখে ফারানরা ভলিবল খেলছে তাই দেখেই সবাই চিল্লাচ্ছে। নিশা বিরক্তি নিয়ে একজনকে বলে,”উফফফ এখানে তো জাস্ট খেলাই হচ্ছে এতে এতো মাথাব্যথার মতো চিল্লানের কি আছে বইন বুঝিনা।”

– এটা তুমি বুঝবা না আমরা শুধু আমাদের লাভ ক্রাশ ফারানকে কিলার লুকে খেলতে দেখছি এটাই অনেক।
,
,
,
,
,
চলবে!!!