#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ৩১”
°______________________°
– এটা তুমি বুঝবা না আমরা শুধু আমাদের লাভ ক্রাশ ফারানকে কিলার লুকে খেলতে দেখছি এটাই অনেক।
নিশা চোখ গরম করে মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলো মেয়েটা পুরাই ময়দার বস্তা। তার উপরে মুখে আরেক বস্তা ময়দা মেখে ভূত আছে। এরে দেখলে পেত্নিও ভয়ে সুইসাইড করবে।
নিশা-(এএএএএহ মুটকির কি সখ রে বাবা। ‘তোগো’ ফারান মাই ফুট ডগায় যাইয়া মর শালী ময়দার বস্তা। কুয়ারার শেষ নাই। মন তো চাচ্ছে এই মুটকি রে ফুটবল বানাইয়া একটা গোল দিয়ে মেসির রেকর্ডও ভেঙ্গে দিতে যত্তোসব।)
এভাবেই নিশা মনে মনে বকতে থাকে পাশের মেয়েটাকে। বাস্কেটে ফারান বল দিতেই মেয়েদের চিল্লাচিল্লি শুরু। এতো চেচামেচি শুনে নিশা দুই হাত কানে চেপে ধরলো।
নিশা- উফফফ জ্বালা রে জ্বালা।
ফারান আনন্দিত হয়ে আদ্রদের সাথে হাইফাইভ করলো। তারপর সাইডে গিয়ে তোয়াল টা নিয়ে গলা মুছতে থাকে। ফারান হাতা কাটা গেঞ্জি যার কারণে ফারানের জিম করা হাত বোঝা যাচ্ছে। আর এটা দেখেই সব মেয়েরা হার্টফেল করছে বডি দেখলে কি হবে সেটা আল্লাহ ভালো জানেন। তোয়াল টা একপাশে রেখে একটা বোতল নিয়ে বোতলের পানি সব মুখে ঢেলে দিলো। এটা দেখে মেয়েরা আরও চিল্লিয়ে উঠে। আর নিশা এদিক দিয়ে রাগে ফুসছে আর বলভহে,”ঢং এর শেষ নাই হুহ।”
ফারান তাওয়াল দিয়ে মুখ টা মুছে মেয়েদের দিকে তাকালো। মেয়েগুলোর মাঝে নিশাকে দেখে বেশ অবাক হলো। নিশা মেয়েগুলোর চেঁচামেচি সহ্য করতে না পেরে প্লে গ্রাউন্ডের আরেক সাইডে চলে আসে। ফারান মুচকি হেসে গলায় তাওয়াল টা জড়িয়ে নিশার দিকে যাচ্ছে। নিশার প্রায় কাছাকাছি আসতেই ফারান কি একটা ভেবে তাওয়াল টা নিশার মুখ বরাবর ছুড়ে মারে। নিশা রেগে ফেস থেকে তোওয়াল টা নিয়ে একই ভাবে ফারানের মুখে ফেলে। ফারান মুখ থেকে নিয়ে আবার যেই তোয়াল টা ছুড়ে মারে ওমনি নিশা সরে যায় আর তোয়াল গিয়ে পড়ে বালিতে। নিশা তো হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।
নিশা- আরও লাগেন আমার সাথে হুহ।।
ফারান রেগে হাত দুটো মুঠি করে তোয়াল টা নেয় এবং নিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”এটা ধুয়ে তুমি আমাকে দিবা।”
নিশা- মানে আমি কেন ধুবো? আপনি ফেলসেন আপনি গিয়ে ধুবেন ওকে?
ফারান- বউ কি করতে হইসো যে আমায় খাটতে বলো?
নিশা- আমার বউ হওয়ার সখ ছিলো না ওকে এখন ভাগেন। আপনার জন্য এমনেই আমার জীবন ত্যানা ত্যানা আর আপনাকে….
ফারান- হইসে থামাও ওই মেশিনের মুখ টা উফফফ একবার শুরু করলে থামার নাম গন্ধও নাই।
নিশা- তো আসেন কেন কথা বলতে?
ফারান কিছু বলে না মেয়েগুলোর দিকে তাকায় তারপর কি ভেবে শয়তানি হাসি দিয়ে নিশাকে বলে,”মেয়ে গুলো দেখসো কেমন চেঁচামেচি করছে?”
নিশা- তো কি আমি লুঙ্গি ডান্স দিবো?
ফারান- নাহ। ওদের যদি একবার বলি তাহলে দেখবা এই কি যুদ্ধ লেগে যাবে এই তোয়াল ধোঁয়ার জন্য।
নিশা ভেংচি কাটে। ফারান হেসে বলে,”কোথায় যেনো পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি?”
নিশা- ওভেনের তলায়।(দাতে দাত চেপে)
ফারান- ওওও আচ্ছা তুম ইযে ওভেন আগে বলবা না?
নিশা- উফফফ চুপ করেন তো ভাল্লাগে না এসব ফাইজলামি।
বলেই তোয়ালটা ফারানকে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। নিশা আর ফারানের এমন কথা কাটাকাটি সব মেয়েরা দেখছিলো কিন্তু কেউ কিছু বলেনি শুধু নিরব দর্শকের মতো দেখে গেছে। এভাবে সেদিনের মতো নিশারা ক্লাস সেরে বাসায় ফিরে আসে।
অদ্রির হলুদের দিন,,,
অদ্রি আফনাদের বিয়েতে দুজনেরই বাবা আয়োজনে কোনোরকম ত্রুটি রাখেনি। অদ্রির জোরাজোরিতে নিশা,আনিলা,রিদি বিয়ের ৫দিন আগেই অদ্রির বাসায় চলে আসে৷ অদ্রির মা নিশাদের নিজেদের মেয়ের মতো করে যত্ন করছেন। ওদের যত্নআত্তির কোনো ত্রুটি রাখেনি। নিশাও অনেক ইঞ্জয় করছে।
অদ্রিদের প্ল্যানিং অনুযায়ী অদ্রির সব কাজিন ফ্রেন্ডস এক কালারের ড্রেস পড়বে। মেয়েদের কামিজ কমলা কালারের আর প্লাজো কালো কালারের। ছেলেদের হলুদ কালারের পাঞ্জাবি আর ক্রিম কালারের পাজামা। সেই মেন্টেইন করে নিশা,আনিলা আর রিদি একই ড্রেস পড়েছে। চুলগুলো ছেড়ে একপাশে এনে রাখা আর মাথায় একটা টিকলি,কানে লম্বাজোড়া হলুদ এয়ার রিং আর হালকা মেকআপ। তিন বান্ধুবিই এক রকমের সাজ দিয়েছে। আর অদ্রিকে রজনীগন্ধার গুচ্ছ দিয়ে সাজানো হয়েছে।
আফনাদ আর অদ্রির একই রিসোর্টে হলুদের অনুষ্ঠান হবে। অদ্রিকে আস্তে ধীরে নিশারা স্টেজের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সব ছেলেদের চোখ যেনো অদ্রির পাশে থাকা নিশার দিকে। চোখ দিয়ে যেনো গিলে খাচ্ছে নিশাকে। অদ্রিকে স্টেজে বসিয়ে চারজন বেশ কথাবার্তা বলছে৷ ফারান রা এখনো এসে পৌঁছায়নি। ফটোগ্রাফার রা ছবির উপর ছবি তুলেই যাচ্ছে থামার শেষ নেই। এমন সময়ই বাইরে থেকে হট্টগোলের শব্দ আসে। শব্দ শুনতেই অদ্রি কিছুটা নড়ে-চড়ে বসলো কারণ সে বুঝে গেছে তার আফনাদ তার খুবই নিকটে। হঠাৎ জোরে জোরে গান বাজনা শুরু হলো। আফনাদ তার বন্ধু আত্নীয়স্বজন সকলকে নিয়ে চলে আসে৷ আফনাদকে স্টেজে নিশার সাথে বসানো হয়। তারপর শুরু হয় ফটোশুট। ফারানের চোখ শুধু নিশাকেই খুঁজছে। নিশা গেছে সরবত আনতে গেছে সরবত নিয়ে স্টেজে উঠে আসে। আদ্র,আদন,ফারান স্টেজেই আছে।
নিশা- নিন হবু দুলাভাই সরবত।
ফারান সামনের একটা চেয়ারে বসে ফোন টিপছিলো নিশার কন্ঠ শুনে সামনের দিকে তাকায় আর নিশাকে দেখে একদম হা হয়ে যায়। নিশাকে আজ আগের চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে যা বলে বুঝানোর মতো নয়। আদ্র এবারও খেয়াল করলো ফারানের নিশার দিকে এভাবে তাকানো।
আদ্র – (শালায় ভিতরে ভিতরে অলরেডি ফেসে গেছে অথচ স্বীকার করেনা। হে আল্লাহ এরে নিয়া কি করা যায়?)
নিশা ফারানকে দেখেও না দেখার ভান ধরে আড্ডা দিয়েই যাচ্ছে। তারপর নিশার ফোন আসাতে নিশা স্টেজ থেকে নেমে অন্যদিকে চলে যায়। নিশার কথা শেষ হতেই দেখে একটা ছেলে তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিশা ব্যাপার টা পাত্তা না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসতে নিতেই ছেলেটা পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,”এইযে মিস।”
নিশা থেমে যায় তারপর পেছনে ফিরে ভ্রু কুচকে বলে,”আমায় ডাকছেন?”
– আপনি ছাড়া তো আশেপাশে কাউকে দেখছি না।(আশেপাশে তাকিয়ে)
নিশা বিরক্তি নিয়ে বলে,”কোনো সমস্যা?”
– নাহ শুধু একটা কথা বলার ছিলো যদি ফ্রি থাকেন।
নিশা- কি?
– ইউ লুকিং সো হট! কেন উই ডেট?(ডেবিল হাসি দিয়ে)
নিশার ওই মুহূর্তে মন চাচ্ছে ছেলেটাকে টয়লেটে গিয়ে চুবাতে কিন্তু বিয়ে বাড়ি বলে কিছুই বললো না চলে আসলো সেখান থেকে।
এদিক দিয়ে আড়াল থেকে একজন সবটা দেখে রাগে ফুসতে থাকে আর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“আর ইউ রেডি ফর মাই রিভেন্স?”
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!
গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম ধন্যবাদ)