Second marriage পর্ব – ৩+৪

0
2622

গল্পঃ Second marriage
পর্ব – ৩+৪
লেখিকাঃ #Ritiva_Jahan_Riti
ওর দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি
যেনো হারিয়ে গেছি অন্য কোনো রাজ্যে….
আমার ঘোর তখন ভাংলো যখন রিতি ঘুমের তালেই বলল…..
রিতিঃ রাফি…….
বুঝতে বাকি রইল না যে আমাকে সে তার প্রথম স্বামী ভেবে এভাবে শার্ট আকঁড়ে ধরেছে…..
আগে রাহাত(রিতির বড় ভাই) থেকে একবার নাম শুনেছিলাম…..
এখনও হয়ত রিতি ওই ছেলেটিকে ভুলতে পারে নি…..
ওকে কি বলছি আমি নিজেই তো রিয়াকে ভুলতে ব্যর্থ হয়েছি…..
আজও ওকে প্রথম সে ভালবাসার অনুভূতি মনে পরে…..
আজ যদি রিয়া থাকতো তবে আমাদের জীবনটা কত সুন্দর হত….
যাই হোক….
কিন্তু এখন উঠবো কিভাবে মেয়েটি যেভাবে আকড়ে ধরেছে ওঠা সম্ভব না…..
জাগাবো….
না থাক বাদ দি…..
রিয়ার সাথে সেদিন গুলো ভাবতে লাগলাম।প্রতিদিন ই ভাবি….
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না…..
সকালে……
রিতি-
সকালে ঘুম ভাংলে আস্তে আস্তে চোখ খুলে আয়ানকে দেখতে পাই….
মুহূর্তের জন্যে ভয় পেয়ে যাই…..
তারপর দেখি আমিই উনার শার্ট আঁকড়ে ধরে রেখেছি….
বুঝতে বাকি রইল না যে উনি আমার জন্যেই এখানে ঘুমিয়েছে….
আমি সাথে সাথে উনার শার্ট ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমের বাহিরে বের হয়ে সোজা কিচেনে চলে যাই….
ভাবির সাথে নাস্তা বানাতে থাকি….
নাস্তার টেবিলে বাচ্চারা ছাড়া সবাই আছে….
উনি আসলে উনার দিকে না তাকিয়েই সব কাজ করছি….
বাবাঃ সবাই শোন আমরা আগামী সাপ্তাহে সিলেট যাচ্ছি…..
আমানঃবাবা হঠাৎ করে…..
বাবাঃহে, কাল তোমার মা আর আমি মিলে picnic এ যাবো বলে plan করেছি….
ইশিকাঃ wow….picnic…..
আয়ানঃ আমি যাবো না….
ইশিকাঃদেখ ভাইয়া মজা নষ্ট করবি না….
বাবাঃ কেন….(ভ্রু কুঁচকে)
আয়ানঃ বাবা আমার ভাল লাগে না….
আমানঃ আগে তো তুই সবচেয়ে বেশি excited থাকতি এখন ভাললাগে না….
মাঃ হে,এখন তো আমরা কেও না কয়দিন পর মরে গেলে তখন বুঝবি….
(বলেই কান্না শুরু করে দিল)
মার কান্না দেখে রিতির মন খারাপ হয়ে যায় বুঝতে পেরে নিধি ওর কানের কাছে এসে বলে….
নিধিঃ আরে চিন্তা কর না মা আয়ানকে মানানোর জন্য নাটক করছে….
রিতিঃ
আয়ানঃ আচ্ছা যাবো…
রিতি একবার মায়ের দিকে তাকায় আবার সবার দিকে তাকায় আর….
ইশিকাঃ (রিতির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো)
বাবাঃ বউমারা তোমাদের পরিবারের সবাইকে আমন্ত্রণ দিয়ে দিয়ো…
বল আমাদের সাথে আসতে …..
সবাই একসাথে গেলে মজা হবে….
নিধিঃ বাবা আব্বু আম্মু তো ভাইয়াদের কাছে Australia আছে তারা আসতে পারবে না….
বাবাঃমন খারাপ করে…
ছোট বউ মা….(করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে)।
রিতিঃ আব্বু আম্মু তো গ্রামে তারা আসতে পারবে না…
আমি রাহাত ভাইয়া আর মাহিকে আসতে বলব…..
বাবাঃআচ্ছা…. (মুখে হাসি নিয়ে)
নাস্তা শেষে ভাইয়া আর আয়ান অফিসে গেলেন।
আর আমি মাহিকে ফোন দিলাম….
মাহি আমি বেস্ট ফেন্ড আর ভাবি….
আমরা সে ক্লাস ৩ থেকে একসাথে….
বলতে গেলে আমার কলিজার টুকরা…
দে ছোট বেলা থেকে আমার সাথে আমরা একে অপরের সব কষ্ট,সুখ, সব ভাগ করে নিয়েছিলাম।
আমার কষ্টে সবসময় ও আমার সাথে ছিল….
আজ যদি আমি বেঁচে আছি তাহলে আমার পরিবার আর মাহির জন্য…
বিশেষ করে মাহি আমার ডিভোর্স হওয়ার পর পুরো ভেংগে গেছিলাম…
মাহি ওর বাচ্চা ছেড়ে আমাকে বাচ্চার মত দেখাশুনো করেছে….
হাসি পাচ্ছে তাই না….
কিন্তু যদি ওদিন ও না থাকতো তাহলে হয়ত ওদিন মরে যেতাম।
কিন্তু এ ব্যাপারে মাহি আর আমি ছাড়া কেও যানে না…..
আসলে হয়ত কিছু বন্ধু-বান্ধব হয়ই এরকম সুখে সাথে না থাকলেও কষ্টে সাথে থাকে…..
তাদেরকেই আসল ফ্রেন্ড বলে….
যাই হোক ১০ বছর আগে ও আমার ভাবিও হয়। রাহাত ভাইয়া আর ও আগে থেকে একে অপরকে পছন্দ করতো। বিয়েটা অবশ্য আমার দ্বারাই হয়….
আচ্ছা ফোনটা দেওয়া যাক……
রিং…রিং….
মাহিঃ hi….. জানু…..
আজ আমার কথা মনে পরল….
রিতিঃ কেমন আছিস….
মাহিঃ তোকে ছাড়া ভালো থাকতে পারি…
তোর ভাই কি এমনি এমনি বলে তার আপন বোনই তার সতিন….
হি….হি….
রিতিঃআচ্ছা শোন….
picnic এর সব কথা বলল…..
ভাইয়ার কোন কাজ নেই তো….
আসতে পারবি….
মাহিঃ তোর ভাইয়ার কাজ থাকলে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসবো…..
আমার জানুর সাথে কতদিন পর দেখা করার চান্স পাইসি এমনি এমনি হাত ছাড়া করবো নাকি….
রিতিঃআচ্ছা রাখি তাইলে…. বাই…
এক সাপ্তাহ পর….
আজ সবাই পিকনিকের বের হচ্ছি…..
৩ দিনের জন্যে যাচ্ছি…..
বাবা একটি মিনি বাস নিয়েছে….
ভাইয়ারা আসলে সবাই রওনা দি…..
ইশিকাঃ আচ্ছা মাহি আপু….
মাহিঃ হ্যাঁ বল….
ইশিকাঃ একটা জিনিস ভাবছিলাম….
নিধিঃআমিও….
মাহিঃ কি…
ইশিকাঃ তুমি আর রিতি ভাবি অনেক আগে থেকে ফ্রেন্ড না….
মাহিঃ হ্যাঁ অনেক…..
নিধিঃ তাইলে….
তোমার ফ্রেন্ডকে একটু মজা আর দুষ্টামী শিখাতে পারো নি…..
সারাদিনে গুনে গুনে কথা বলে….
মাহি একবার রিতির দিকে তাকালো তারপর রাহাতের দিকে তাকিয়ে রাহাত আর মাহি দুজনে হেসে দিল….
মাহিঃ আমি রিতিকে দুষ্টামী শিখাবো….
রাহাতঃ আপনারা বাঁচছেন যে এখন এত শান্ত হয়ে গেছে…..
আগে সারাহ্মন বাদরের মত শয়তানি করত….(সবাই রিতির দিকে হা করে তাকায় রইল মনে হয় যেন ভুত দেখছে )
সারাহ্মন শুধু দুষ্টামী বুদ্ধি মাথায় ঘুরতো….
কখন কার সাথে মজা নিবে…..
(হাসতে হাসতে হঠাৎ চোখে জল এসে পরে রাহাতের)
এখন ওর দুষ্টামি গুলো খুব মিস করি…..
বাসে পুরো পরিবেশ থমথমে হয়ে গেল….
নিধি situation সামলানোর জন্য বলে….
চলো সবাই গানের কলি খেলি….
রিতি-
সবাই গানের কলি খেলছে আর আমি বাইরের প্রকৃতি সোন্দর্য দেখছি….
চোখ দুটি বন্ধ করে বাতাস অনুভব করছি…..
আয়ানঃ হঠাৎ চোখ পরল….
রিতি তার চোখ দুটি বন্ধ করে বাতাসে ছোয়ার অনুভুতি নিচ্ছে….
ওর চুলগুলো বাতাসে উড়ছে…..
চেয়েও নিজের চোখ সরাতে পারছি না….
হঠাৎ করে বাসে ব্রেক দেওয়ায় ঘোর ভাংগে…..
ড্রাইভারের সাথে কথা বলে যানা গেল যে বাস নষ্ট হয়ে গেছে….
বাসে অনেকহ্মন থেকে সবার অসস্থি লাগছিল……
তাই সবাই নিচে নেমে road এর পাশে দাড়ালাম……
রিতি-
অনেকহ্মন হল বাস নষ্ট হয়েছে সবাই কথা বলছিলাম আর নিশান, আরিয়ান আর মাহিম বল নিয়ে খেলছিল….
হঠাৎ খেয়াল করি বল রোড এর মাঝখানে গিয়ে পরেছে আর আরিয়ান বল আনতে গেল….
কিন্তু অপর সাইড দিয়ে যে গাড়ি দ্রুত স্পিডে আসছে তা দিকে ওর খেয়াল ই নেই….
কিছু না ভেবেই দৌড় দিলাম গাড়ি খুব কাছে এসে পরেছিল তাই ওকে ধাক্কা দিলেও নিজে সরতে পারলাম না….
গাড়ি হয়ত তখন ব্রেক মারতে নিয়েছিল কিন্তু হয়ত সাথে সাথে পারে নি বলে গাড়ির পায়ের সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে মাথায় আঘাত লাগল আর চোখ দুটি বন্ধ হয়ে গেল…..
আয়ান-
দেখি রিতি কোথায় দৌড় দিচ্ছে ও তাকিয়ে দেখি আরিয়ান গাড়ির সামনে আমি এগোতে নিব তখনই গাড়িটির সামনে থেকে রিতি আরিয়ানকে সরিয়ে নিজে আঘত হয়ে গেল……
যেয়ে দেখি মাথা থেকে সমানে রক্ত পরছে….
কোলে ওর মাথা নিয়ে রুমাল দিয়ে মাথার রক্ত আটকালাম….
গাড়ি চালকটি বলল….
ওকে গাড়িয়তে নিয়ে যেতে আমি রিতিকে কোলে ওঠিয়ে নিলাম আমার সাথে মাহি ভাবি গেল…..
আর বাকি সবাই অন্য ব্যবস্থা করে আসবে বলছে…..
ওর মাথার রক্ত থামার নাম ই নিচ্ছে না…..
ওকে দেখে রিয়ার মৃত্যুর সময় মনে পরে গেল….
ও গাড়ি চালানোর সময়ই ও accident করে মারা যায়….
ওর মাথা থেকেও খুব রক্ত পরায় ওকে বাচানো সম্ভব হয় না….
আমি সেদিন ছিলাম না ওর কাছে তাই ওকে বাচাতে পারি নি….
কিন্তু আমি রিতি কে কিছু হতে দিব না….
রিয়ার মৃত্যুর জন্য আজও নিজেকে মাফ করতে পারি নি ওদিন যদি আমি ওর সাথে যেতাম তাহলে হয়ত এরকম হত না….
আরেকবার নিজেকে অপরাধী করার হ্মমতা আমার নেই…..
রিতির কিছু হলে নিজেকে মাফ করতে পারব না…..
এসব ভাবতে ভাবতে কখন চোখ দিয়ে পানি বইতে লাগলো বুঝতে পারলাম না…..
সেখানে আশেপাশে কোন হাসপাতাল না থাকায় ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে খুব দেরি হল….
অনেক রক্ত পরেছে….
Hospital এ এনে ডাক্তার সোজা ওকে অপরেশন থিয়েটারে নিয়ে মাথায় ব্যান্ডিস করে রক্ত দেওয়া শুরু করল….
এতহ্মনে সবাই এসে পরেছে…..
সবার অবস্থা খুব খারাপ আরিয়ান তো কান্না করতে করতে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে…..
মাহি ভাবি আর রাহাত ভাইয়া নিজেকে সামলাতে পারছে না….
ইশিকা, নিধি ভাবি আর আমান ভাইয়া তাদের শান্তনা দিচ্ছে কিন্তু তারা নিজেরাও টেনশনে অবস্থা খারাপ….
বাবা নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে বারবার বলছে যে আমি যদি পিকনিকের কথা না বলতাম তবে আজ এমন হত না…..
মাও সমানে কাঁদছে….
বাবার ব্লাডপ্রেসার ও লো হয়ে আসছে…..
আমি এক মনে কেবিনের পাশে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছি….
মনে এক ভয় লাগছে যদি রিয়ার মত রিতিকেও হারিয়ে ফেলি……
ভেবেই দমটা বন্ধ হয়ে আসছে…..
ডাক্তার কেবিন থেকে বের হলে সবাই তার কাছে যেয়ে জিজ্ঞাসা করতে থাকি….
ডাক্তারঃওনার মাথা থেকে অনেক বেশি রক্ত পরেছে….
তাই ওনাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে….
এখন আমরা কিছু বলতে পারছি না কারণ ওনার অনেক রক্ত পরেছে..
চলবে….
#Second_marriage
#part_4
#writer_ritiva_jahan_riti
ডাক্তারঃ ওনার মাথা থেকে অনেক বেশি রক্ত পরেছে…..
তাই ওনাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে….
এখন আমরা কিছু বলতে পারছি না কারণ ওনার অনেক রক্ত পরেছে…..
তারপরও ওনার জীবন এখন রিস্ক এর বাইরে…..
কিন্তু আগামী ৬ ঘন্টায় উনার জ্ঞান না ফিরলে সমস্যা হতে পারে….
ওনি হয়ত কোমাতেও যাইতে পারে….
সবাই এখনও ভয়ে থাকলেও রিক্স থেকে বাইরে বলে সস্থির নিশ্বাস নেয়…..
আরিয়া আয়ানের সামনে এসে….
আরিয়ানঃ বাবা…বাবা….
sorry….(বলে কান্না শুরু করে দেয়)
আয়ানঃনা বাবা কান্না করে না তোমার বল আনার জন্য যাওয়া ঠিক হয়নি তাও এটাতে তোমার কোন দোষ নেই….(হাঁটু গেড়ে আরিয়ানের সামনে বসে)
আরিয়ানঃ কিন্তু এতদিন যা করেছি তাতে সম্পুর্ণ আমার দোষ…. (কান্না করতে করতে)
আয়ানঃমানে….(অবাক হয়ে)
আরিয়ানঃ বাবা,আমার ক্লাসমেটরা আমায় বলেছিল যে শত মা নাকি খুব খারাপ হয়,
প্রথমে ভালো ব্যবহার করলেও পরে অনেক খারাপ হয়ে যায়,
আর তিনি নাকি তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবে….
তাই এতদিন তোমায় মিথ্যা বলেছিলাম যে উনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে….
সব মিথ্যা ছিল…..
আয়ানের এসব শুনে রাগ উঠে যায়….
আরিয়ানকে থাপ্পড় মারতে নিলে মাহি আটকিয়ে ফেলে…..
মাহিঃ ওকে মারলে রিতি কষ্ট পাবে….
যে আপনি ওর ছেলের ওপর হাত তুলেছেন…. (আয়ানকে উদ্দেশ্য করে)
আয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে….
মাহি আরিয়ানের সামনে বসে বলে….
মাহিঃ তোমার ভয় হয়ত ঠিক ছিল….
কিন্তু বাবা তোমার এটা করা ঠিক হয়নি…
তুমি যানো রিতি তোমার বাবার জন্য না তোমার জন্য বিয়েতে হ্যাঁ বলেছিল…..
আরিয়ানঃ উনি আজ আমাকে বাঁচাতে যেয়ে নিজে কেন গাড়ির সামনে এলেন…(ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে)
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
মাহিঃ কারণ ও তোমার মা…..
আর যে কোন মাই তার সন্তানকে নিজের জীবন থেকে বেশি ভালবাসে….
আরিয়ানঃ কিন্তু উনি তো আমায় জন্ম দেয় নি….
মাহিঃ জানি না অন্য কেও কি অন্য কারো সন্তানকে ভালবাসতে পারবে কি না….
কিন্তু রিতি….
রিতির যদি নিজের সন্তানও হত তবেও ও তোমাকে ভালবাসতো….
সে ছোট বেলা থেকেই সবাইকে ভালবাসতে জানে….
সব মেয়ের মধ্যেই মায়া আছে….
কিন্তু গর্ভে সন্তান আসলে আরও মমতা বেড়ে যায়….
রিতির ছোট থেকেই বাচ্চাদের প্রতি আলাদা মমতা ছিল….
কিন্তু আল্লাহ ওকেই মা হওয়ার খুশি থেকে বঞ্চিত করল….
আরিয়ানঃ আমি আছি না….
উনার ছেলে….
আচ্ছা উনি কি আমায় মাফ করবে…
মাহিঃ করবে…..
শুধু ওকে একটি বার মা বলে ডেকো তাইলেই হবে…..
সবার চোখে এখনও পানি একটু আগে যা ভয়ের চোখে জল ছিল তা এখন রিতির কষ্টের অনুভুতির জল….
হ্যাঁ তারা হয়ত রিতির কষ্ট আজ অনুভব করছে….
আর আয়ানের নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে কিছু না বুঝেই রিতিকে সে এত কষ্ট দিল,এত কথা শুনালো, থাপ্পড় দিল।
নিজেকেই ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে…..
৫ ঘন্টা পর রিতির জ্ঞান ফিরল….
সবাই গেল রিতির রুমে…..
সবাই রিতির অবস্থা জিজ্ঞাসা করছে……
আরিয়ান অনেক সংকোচ হলেও রিতির সামনে গেল….
রিতিঃ তুমি ব্যাথা পাওনি তো বাবু….
আরিয়ানঃsorry…..
এতদিন যা করেছে please মাফ করে দেও sorry মা…..
রিতিঃকি…. কি বললা….(চোখে পানি টলমল করছে)
আরিয়ানঃ sorry মা….
রিতি আরিয়ানকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল….
আজ যেন তার কষ্ট অনেকটা কমে গেল….
সে প্রথমবার মা ডাক টা শুনে নিজেকে কতটা সৌভাগ্যবান মনে করছে সে নিজেই কাওকে বুঝাতে পারবে না….
রিতি আরিয়ানকে ছাড়লে….
আরিয়ান রিতির চোখের পানি মুছে দেয়….
আরিয়ানঃ মা, আমি তোমাকে আর কাঁদতে দিব না…..
রিতি মুচকি একটা হাসি দিল…
রাহাতঃ ইসস আমার বোনটাকে কতদিন পর এত খুশি দেখলাম….
কতদিন পর ওর মুখে হাসি দেখলাম…
আরিয়ানঃ আরে এটা তো ছোট হাসি বড় হাসি দেখবা…
আরিয়ান একবার নিশানের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়…
নিশান এক চোখ টিপ দিয়ে আংগুলের ইশারায় ok বলে….
আরিয়ানঃএটা অবশ্য পিকনিকে করতাম এখন এখানেই করি…হি… হি…
নিশান মুখে হাত রেখে মিটিমিটি হাসছে….
ইশিকা আর নিধিও মিটিমিটি হাসছে….
এদিকে রিতি,রাহাত আর মাহি কিছুই বুঝছে না….
আমান আর আয়ান কিছু দুরুত্বেই ডাক্তারের সাথে কথা বলছে….
আরিয়ান ইশিকার কাছে গেল আর ইশিকা ব্যাস থেকে কি একটা বোতল বের করে দিল আরিয়ান সোজা আয়ানের কাছে যেয়ে বোতল আর মুক্ষা খুলে দিল….
আরিয়ান আয়ানকে ডেকে….
আরিয়ানঃ বাবা দেখ দেখ তেলাপোকা…..
বলার পর আয়ান নিচে তাকিয়েই তেলাপোকা দেখে ব্যাঙ এর মত লাফানো শুরু করে….
আর সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ….
আয়ান তো রাগে লুচি হয়ে গেসে….
কিন্তু এ রাগের মধ্যেও তার চোখ আটকায় যায় রিতির হাসিতে…..
অন্য কারো হাসি না তার চোখে পরছে কানে ডুকছে…
আয়ান-
ওর হাসি এত সুন্দর। আমি এর আগে কখনও কারো এত সুন্দর হাসি দেখি নি….
ওকে হাসলে যে কত সুন্দর লাগে হয়তো ও নিজেই যানে না তাই হাসে না….
ওর হাসি দেখেই যে কেও সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে….
আরিয়ানঃ বাবা তোমার পায়ের নিচে তেলাপোকা….
আয়ানঃ আওওও….
আরিয়ানঃআহারে…
বাবা তুমি কত ভিতু…
আয়ানঃ তাই না এবার দারা….
আরিয়ান দিল এক দৌড়…
যেয়ে রিতির বেড এর পিছনে লুকালো….
আয়ান বেডের পিছনের যায়গা ছোট বলে ডুকতে না পেরে সামনে দিক থেকে ধরার চেষ্টা করে….
রিতি ওদের এ কান্ড দেখে হাস্তে হাস্তে শেষ….
এরকম হাসি কত বছর পর দিয়েছে সে হয়ত নিজেও বলতে পারবে না….
আয়ান রিতি কারোই খেয়াল নেই যে আরিয়ানকে ধরতে যেয়ে আয়ান রিতির একদম কাছাকাছি চলে এসেছে…
রিতি আরিয়ান থেকে আয়ানের দিকে তাকালে সে দেখল হয়ত তাদের মধ্যে বেশি হলেও ২ ইঞ্চির দুরত্ব আছে…..
রিতিঃ আয়ান….
আয়ান রিতির ডাক শুনে ওর দিকে তাকালো….
দেখল যে সে রিতির একটু বেশিই কাছে চলে এসেছে…
তাই তাড়াতাড়ি সরে যায়….
২ দিন পর রিতিকে Hospital থেকে Release দেয়…..
রিতির রাতে ঘুম আসছে না…..
আসবে কিভাবে এ দুইদিন তো তাকে শুধু ঘুমাতেই হল…..
ও বিছানা থেকে ওঠতে নিলে পায়েও ব্যাথা পাওয়ার কারণে বিছানায় পরে যায়….
আয়ান হাল্কা আওয়াজ শুনেই ওঠে পাগলের মতকাছে এসে জিজ্ঞাসা করে….
আয়ানঃ কি ঠিক আছো তো…
উঠছিলা কেন….
কিছু লাগবে….
মাথা কি ব্যাথা করছে….
খিদা লাগছে নাকি….
পায়ে ব্যাথা মলম লাগিয়ে দি….(সব কথা এক নিশ্বাসে বলল)
রিতিঃ না ঘুম আসছিল না তাই….
(মুখ কালো করে)
আয়ানঃ ওহ আচ্ছা এই কথা….
তুমি শুধু ১৫ মিনিট বস আমি আসছি….
রিতিঃ না…না আপনি ঘুমান…
আয়ানঃ চুপ এখান থেকে উঠবা না(ধমক দিয়ে)
রিতি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল…..
আয়ান একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল….
১৫ মিনিট পর আয়ান এসে রিতিকে কোলে তুলে নিল….
রিতি কিছুটা শিহরিত হয়ে উঠলো….
রিতিঃ আমি হেঁটে যেতে পারব….
আয়ানঃ পায়ে ব্যাথা আবার হেঁটে যাবা….
বিছানা থেকে নামবা না বলে দিলাম…
আর শুনো কাল কিছু লাগলে আমি না থাকলে কাওকে বলে দিবা…
অবশ্য তোমার বলা লাগবে না তারাই দেখবে….
আর বিছানা থেকে নামতে হলে কাওকে না কাওকে ডাক দিবা তারা help করবে বুঝলা….
না বলে বসে থাকবা না….
রিতিঃ তা ঠিক আছে কিন্তু এত রাতে আমরা ছাদে কেন যাচ্ছি…..
আয়ানঃ গেলেই দেখতে পারবা….
আয়ান রিতিকে ছাদে গিয়ে রিতিকে দোলনায় বসায়….
আর একটা ট্রেতে দুই মগ কফি নিয়্র এ হাঁটু গেড়ে রিতির সামনে বসে….
আয়ানঃ Here your coffee mam….
রিতিঃএকটু হেসে….
Thank you…. ( একটি কফির মগ হাতে নেয় এক চুমুক দেয়)
আয়ানঃ How is it….
রিতিঃইমমম….ওয়াও….
অনেক testy….
আয়ানঃ I knew it….
তোমার ভালো লাগবে….
বলে দোলনায় একটু জায়গা রেখে রিতির পাশে বসল….
রিতিঃ আপনার আমাকে ছাদে আনার আর এসব এর বুদ্ধিটা কিভাবে আসল….
আয়ানঃ রিয়া যখন pregnant ছিল তখন ওর রাতে ঘুম আসতো না তখন আমরা রাতে ছাদে দোলনায় বসে কফি খেতাম আর ও আমার কাধে মাথা রেখে চাঁদ দেখত আর অনেক কথা বলতো….
রিতিঃওহ…আচ্ছা….
আয়ানঃsorry…
রিতিঃকেন….
আয়ানঃ তোমাকে যে রিয়ার কথা বললাম…
আমার প্রথম স্ত্রী তোমার খারাপ লাগতে পারে…
রিতিঃ আমার খারাপ লাগবে কেন….
আমি এমনেও আপনাদের love story কথা ভারসিটিতে অনেক শুনেছি….
আয়ানঃ ভারসিটি…
মানে…তুমি কিভাবে….
রিতিঃ আমরা একই ভারসিটিতে ছিলাম…
আপনি আর রিয়া আপু 4th year এ আর আমি 1st year এ…..
আয়ানঃকি…
রিতিঃজ্বি….
আয়ানঃ কিন্তু আমি তো তোমাকে কখনোই দেখি নি….
রিতিঃআপ্নি দেখবেন কি করে আপনি তো শুধু ক্লাস আর লাইব্রেরি ছাড়া কোথাও থাকতেন না…
আর আমার আর পড়ালেখার কোন সম্পর্ক ছিল না যে দেখবেন….
আমি নিজেই সারাজীবনে লাইব্রেরীর চেহেরা দেখি নি….
আয়ানঃতুমি আমার ব্যাপারে এত কিছু কিভাবে যানো….
রিতিঃ আমি না পুরো ভারসিটি যানে….
আয়ানঃ কিভাবে….
রিতিঃ আহারে….
আপনি যে পুরো ভারসিটির ক্রাশ ছিলেন ভুলে যান….
আয়ানঃ ও হে শুনেছি….
তোমারও ক্রাশ ছিলাম নাকি…
রিতিঃ আমি আপনাকে তো তখন দেখি ই নি…..
কিন্তু আমার এক ফ্রেন্ড ছিল নিশি ও আপনাকে অনেক লাইক করত…
আপনার আর রিয়া আপুর রিলেশনের কথা শুনে কান্না করতে করতে শেষ….
আপুকে কত যে বকা দিয়েছিল….
যাই হোক কিন্তু আপনারা দুইজন আমাদের ভারসিটিতে এত ফেমাস ছিলেন তারপরও আপনাদের love story কেও জানল না কেন….
আয়ানঃ রিয়া আমাকে মানা করে দিয়েছিল…..
আমাদের ২/১ ফ্রেন্ড ছাড়াও কেও জানে না….
রিতিঃ আমাকে বলবেল….
আমার অনেক ইচ্ছা আছে জানার….
আয়ানঃ বলব না কেন….
তাহলে শুন….
১১ বছর আগে….
আমি তখন অনার্স ৪র্থ বর্ষে পরি।ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে গেলাম।তখন হয়তো বিকেল ৪ টা বাজে। সেদিন লাইব্রেরিতে বেশি কেও ছিল না।
লাইব্রেরির জানালার সামনে বসে ছিলাম।তখন জানালার দিয়ে অপর সাইডে দেখি…..
চলবে…..