Second marriage পর্ব – ৭+৮

0
2528

গল্পঃ Second_marriage
পর্ব – ৭+৮
লেখিকাঃ #Ritiva_Jahan_Riti
রিতিঃ তা বটে…..
কিন্তু সব সম্পর্ক তো আর এক হয় না…..
স্বামী স্ত্রী নাম থাকলেই সে সম্পর্ক গড়ে ওঠ না…..
আমরা কেও ই তো আর আমাদের প্রথম ভালবাসাকে ভুলতে পারবো না…..
তাই না….
আয়ানঃ(মনে মনে ভাবছি ওকে কি বলব বুঝতে পারছিনা)
আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও….
আবার কালকে ইশিকা কি plan করেছে নাকি….
রিতিঃ হ্যাঁ জানেন কালকে নাকি সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিব সারাদিন…..
(বড় একটি হাসি দিয়ে)
আয়ানঃ তুমি যদি এভাবে হাসি দেও তাহলে প্রতিদিনই দিব….
রিতি একটু লজ্জা পায়….
তারপর ঘুমোতে চলে যায়…..
সকালে…..
ইশিকা সকাল সকাল থাল বারি দিয়ে সবাইকে ডাকে…..
সবাই চোখ ডোলতে ডোলতে বের হল…..
আমানঃ কিরে সকাল সকাল কি শুরু করলি….
ইশিকাঃ আমাদের না আজ সারাদিন মজা করার প্লান ছিল আর তোমরা ঘুমাচ্ছ…..
আয়ানঃ কাল তোর engagement এর কাজ করতে করতে সবাই tried ….
ঘুমাতে দে….
বলেই যেতে নিল আবার রুমের ভিতর যেতে নিল ইশিকা আবার জোরে থাল বাজালো……
আয়ানঃ আবার কি হল….(কানে হাত দিয়ে)
ইশিকাঃ কিসের tried ……
engagement আমার হল আমি তো tried না…..
আমানঃ কারণ তুই কোন কাজই করস নাই…
ইশিকা ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিল….
রিতিঃ আরে কাঁদে না আমরা কিছুক্ষনের মধ্যেই আসতিসি…
আয়ানঃ নোটাংকিবাজ…..
রাহাতদের কাল রাত কেও যাইতে দেয় নি তাই ওরা এখানেই ছিল….
রাহাতঃ ছোট বোনরা আর কি পারে….
রিতিঃ ভাইয়া কি বললা….(চোখ রাঙিয়ে)
রাহাতঃ মানে বললাম ছোট বোনরা কত কিউট হয়…..
ইশিকাঃ ঠিক তাই আজ সব খাবার আমাদের ভাইরা রান্না করবে….
নিধিঃ Wow….তাই নাকি
আয়ানঃ কি…কেন…. আমরা কেন….
আমানঃ আমরা কিছু করছি না…..
ইশিকাঃ আর কয় মাস পর তো চলেই যাবো এখনই এমন কর…. যাওয়ার পর বুঝবা…..
আয়ান,আমান আর রাহাত এক সাথেঃ ন্যাকামি কান্না…..
মাঃ ইশিকা ঠিক বলেছে আজকের সব রান্না ছেলেরা করবে….
আয়ানঃ মা তুমিও….
মাঃ জ্বী ছেলেদের ও বুঝা উচিত আমরা কি কষ্ট করি….
বাবাঃ হম তো আমরা কি কম নাকি….
তোমাদের থেকে ভালো রান্না করব…..
মাঃ আচ্ছা…..
ওদের কেও help করবানা কিন্তু….
বাবাঃ আমাদের help লাগবেও না….
সবাই হা হয়ে বেক্কলের মত তাকিয়ে রইল….
তারপর ফ্রেশ হয়ে ছেলেরা গেল কিচেনে আর মেয়েরা গল্প করতে বসল….
অনেকক্ষণ হল কিচেনে থেকে খুব শব্দ আসছে….
মাহিঃ আমদের যেয়ে দেখা দরকার না তারা কি করছে….
মাঃ দরকার নেই বাদ দেও তারা এবার বুঝুক…..
নিধিঃ ঠিক আমান শুধু বলে আমাই নাকি ভালো রান্না পারি না….
এবার দেখি সে কত ভালো রান্না করে….
রিতিঃ আপনারা বসেন….
আমি বাচ্চাদের দেখে আসি….
রিতি ওঠে বাচ্চাদের রুমে গেল….
আসেন দেখি ছেলেদের অবস্থা কি….
আয়ানঃ বাবা তুমি রান্না না পেরে challenge accept করলা কেন….
বাবাঃআমি কি জানি নাকি আমার ছেলেগুলো এত অকাম্মা….
আমানঃ যেমন বাবা তেমন ছেলে….
রাহাতঃ এখন কি করব….
রিতি রুম থেকে বেরিয়ে ভাবল একবার দেখে আসা যাক কিচেনে কি চলছে….
গিয়ে যা দেখল তারপর সে কি হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না…..
আটা পানিতে ভিজা….
চুলায় আগুন না দিয়ে রান্না করছে….
পুরো কিচেনে শাক সবজি আওলা যাওলা করা….
রিতিঃ এসব কি….
বাবাঃ মা তুই এসেছিস…
please মা help কর না….
একজন ও রান্তে পারে না…
challenge হারলে তোর মা সারাজীবন আমাকে খোটা শুনাবে….
please …..
রিতিঃ আচ্ছা আপনারা সবাই এক সাইডে দারান আমি দেখছি…..
রিতি তাড়াতাড়ি রুটি করল,ডিম ভাজার জন্য রেডি করল….
সবজি কাটতে যাবে তখনই হাত কেটে যায়….
আয়ান দেখে দৌড়িয়ে এসে রিতির কাটা জায়গায় বরফের পানিতে ভিজিয়ে রাখে….
আয়ানঃ বেশি জ্বলতিছে…..
চল ডাক্তারের কাছে যাই……
রিতিঃ না,না আমি ঠিক আছি…
আর এতটুকুর জন্যে ডাক্তারের কাছে কে যায়….
আয়ানঃ কিন্তু….
রিতিঃ আমি ঠিক আছি….
পানি থেকে হাত ওঠাতে নেয় আর আয়ান আবার পানিতে হাত ডুবায়….
আয়ানঃ ওঠাইতিছো কেন….(ভ্রু কুঁচকে)
রিতিঃ রান্না…..
আয়ানঃ করতে হবে না…
চুপ করে পানিতে হাত ডুবিয়ে রাখো…
রিতি-
ওনাকে দেখে প্রতিবার অবাক হই….
উনি এত ভালো কেন….
এত Caring কেন…..
ব্যাথা তো আমি পেয়েছি কিন্তু ওনার চেহেরা দেখে মনে হচ্ছে কষ্ট উনার হচ্ছে…..
উনার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি….
আয়ানঃ তুমি বস আমি ব্যান্ডিস নিয়ে আসি…..
বাবাঃ মা, Thank You……
আর কিছু করা লাগবে না….
এগুলোই হবে….
আর বেশি ব্যাথা করছে না তো….
রিতিঃ না বাবা….
বাবাঃআচ্ছা আমান চল….
খাবার গুলো টেবিলে নিয়ে যাই…..
আমানঃ চলো….
বাবা আর আমান ভাইয়া চলে গেল…..
রাহাতঃ তুই অনেক লাকি রে আয়ানের মতো স্বামী পেয়েছিস….
এবার অতীত ভুলে বর্তমানে সংসার টা কর….
আয়ান তোকে অনেক care করে….
ওকে তোর অতীতের জন্যে হারাস নারে বোন…..
আমি কিছু বলতে পারলাম না….
এতক্ষনে আয়ান এসে পরল….
হাতে ব্যান্ডিস করে দিল….
রিতিঃ Thank You…..
আয়ান একটা হাসি দিয়ে চলে গেল….
আমিও সবার কাছে চলে গেলাম….
নাস্তার টেবিলে….
মাঃ বাহ সবাই ভালোই রান্না করেছ…..
তাহলে দুপুরে কি রানছো….
আমানঃ দুপুরে মানে….
মাঃ তো দুপুরে রানবা না….
বাবাঃ মাফ কর দুপুরে বাহিরের থেকে আমায় নিব…..
আর যুদ্ধ করতে পারব না….
challenge তোমরা জিতলা….
তোমরা great….
সবাই হেসে দিল…
রিতি-
আমি শুধু আয়ানের দিকে তাকিয়ে রাহাত ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম….
আয়ান দেখে একটা চোখ টিপ মারল…
আমি অন্যদিকে তাকালাম….
বিকেলে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছিলাম।
ইশিকাঃ মাহি আপু ওদিন না বলেছিলে ছোট ভাবি খুব দুষ্ট ছিল…
তা কি সত্যি….
মাহিঃ হ্যাঁ অনেক….
রাহাতঃ ওর দুষ্টামির কারণ এ সবাই অতিষ্ঠ হয়ে যেত….
কিন্তু সবার মন ও ভালো থাকতো….
নিধিঃ সত্যি….
মাহিঃ হ্যাঁ….
জানেন আমাদের ফ্রেন্ডসিপ ক্লাস ৩ থেকে….
এই মেয়েটা তখন থেকে প্রতিদিন টিফিন টাইমেটিচারদের টেবিলে ওঠে নাচতো….
আমামদের স্কুল, কলেজ,ভারসিটিতে এরকম কোন টিচার নেই যার ব্যাগে ও তেলাপোকা প্লাস্টিকের সাপ রাখে নি….
যদি কোন ছেলে ওকে বা আমাকে ডিস্টার্ব করতো তাহলে
ও একবার এক স্টাইলে এমনভাবে মজা চাখাইত ওদের আমাদের বোন করে ফেলতো….
আরো কত কি…..
এসব কিছুই না…..
সবাই হা হয়ে রিতির দিকে তাকিয়ে আছে….
ইশিকাঃ ভাবি নাকি সাজতেও অনেক পছন্দ করত….
মাহিঃ হ্যাঁ এমনিই এইতি দেখতে পরির মতো উপর দিকে সাজলে উফফ বলে বুঝাতে পারব না…
সব ছেলে ওর জন্যে পাগল ছিল…
আর এর উপর যখন ও নাচতো….
তখন তো….
এর আগে বলার আগে রিতি মাহির হাত ধরে ফেলে….
নিধিঃরিতি নাচতে পারে….
রাহাতঃ হ্যাঁ অনেক সুন্দর…
আজ পর্যন্ত কোন compition হারে নি….
ইশিকাঃ ভাবি প্লিজ নেচে দেখাও না…
রিতিঃ না….না…
ইশিকাঃ প্লিজ ভাবি….
সবাই অনেক request করার পর মানলো….
ইশিকাঃ ছাদে চল….
নিধিঃকিন্তু বাইরে মেঘ জমা বৃষ্টি হবে…
মাহিঃ রিতির বৃষ্টিতে ভিজে নাচা খুব পছন্দ…..
আরিয়ানঃ আম্মু তাজলে তারাতারি চল না….
সবাই ছাদে যেয়ে গান ছাড়লো…..
Music…..♬, Music….♬
Dil Ye Bechain Ve, Raste Pe Nain Ve
Dil Ye Bechain Ve, Raste Pe Nain Ve
Jindri Behaal Hai, Sur Hai Na Taal Hai
Aa Ja Saanvaria Aa Aa Aa Aa
Taal Se Taal Mila, Ho, Taal Se Taal Mila
(প্রথমে রিতি নাচছিল না কিন্তু পরে চোখ বন্ধ করে নাচা শুরু করল।
কিছুটা ক্লাসিক কিছুটা বলিউড স্টাইল।
সবাই ওর নাচ দেখে হা হয়ে তাকিয়ে রইল।আয়ান ও অবাক হয়ে রিতির দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে রইল।এর মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়।)
Saawan Ne Aaj To, Mujhko Bhigoo Diya
Hai Meri Laaj Ne, Mujhko Duboo Diya
Saawan Ne Aaj To, Mujhko Bhigoo Diya
Hai Meri Laaj Ne, Mujhko Duboo Diya
Aisi Lagi Chaadi, Sochoon Main Ye Khadi
Kuch Maine Kho Diya, Kya Maine Kho Diya
Chup Kyoon Hai Bol Tu, Sang Mere Dol Tu
Meri Chaal Se Chaal Mila, Taal Se Taal Mila
O, Taal Se Taal Mila.
(আয়ান রিতিকে বৃষ্টিতে ভিজে নাচতে দেখে ওর প্রতি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।ওর পলক যানো পরছে না।বৃষ্টির প্রতিটি বিন্দু যেন রিতির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।আর রিতি আজ বৃষ্টিতে যেন তার সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গেছে সে শুধু বৃষ্টির বিন্দু গুলো উপভোগ করছে)
Maana Anjaan Hai, Tu Mere Vaaste
Maana Anjaan Hoon, Main Tere Vaaste
Maana Anjaan Hai, Tu Mere Vaaste
Maana Anjaan Hoon, Main Tere Vaaste
Main Tujhko Jaan Loon, Tu Mujhko Jaan Le
Aa Dil Ke Paas Aa, Is Dil Ke Raaste
Jo Tera Haal Hai, Woh Mera Haal Hai
Is Haal Se Haal Mila, O, Taal Se Taal Mila
O, Taal Se Taal Mila
(রাহাত আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দেয়। রিতি নাচতে নাচতে তার খেয়াল ই নেই যে সে কখন এসে আয়ানের বুকে পরল।রাহাত আর মাহি সবাইকে নিচে নিয়ে গেল। আয়ান আর রিতি ছাদে সম্পুর্ণ একা)
রিতি-
আমি উনার বুকে এসে পরলাম। আর উনি ধরতে যেয়ে আমার কোমড়ে হাত রাখলেন।
আমি চেয়েও কেন যানি নড়তে পারছি না…..
পুরো বরফ হয়ে গেছি….
আয়ানঃ
পানির প্রতিটি বিন্দু আমায় ওর প্রতি আকর্ষণ করছে….
ওর নাচ দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না….
যখন নাচছিল তখন ওর হাসি আমায় পাগল করে তুলছিল….
আমার নিজের শরীরের উপর কন্ট্রোল করতে পারছিনা….
ওর কোমড় থেকে হাত দুটো উঠিয়ে হাতগুলো ওর দুই গালে রাখলাম…
মুখটা একটু উঠিয়ে….
ওর ঠোঁটগুলোতে আলতো করে নিজের ঠোঁটের ছোয়া লাগালাম….
সাথে সাথে ও কেঁপে উঠলো….
ওর কেঁপে উঠাটা আমাকে আরো মাতাল করে দিল…
একটি হাত ওর গাল থেকে কোমড়ে নেমে গেল….
ও ছাড়ানো চেষ্টা করলে আরো জরে কাছে টেনে নি….
আর ওর ঠোঁটের স্বাদ নিতে থাকি…..
কিছুক্ষন পর ছাড়ার পর….
চোখ খুলে দেখি ওর চোখে পানি….
বৃষ্টির পানি ওর পুরো চেহেরায় জমা থাকলেও ওর চোখের পানি গুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল….
আমি কিছু বলব এর আগেই ও আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়….
আমি নিজেই বুঝতে পারলাম না কি করে ফেললাম।
নিজেকে নিজে অপরাধী মনে হচ্ছে….
আজ রিতি আর রিয়া দুজনের সাথেই অপরাধ করে ফেলেছি….
আমার ভালবাসাকে ভুলে কিভাবে আমি অন্য….
ছিঃ নিজেকেই ঘৃণা হচ্ছে….
এখন কিভাবে রিতির সামনে যাবো….
রিতি-
রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম। উনার থেকে এ আশাটা ছিল না….
আয়নার সামনে গিয়ে ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম।
কিভাবে করলাম এরকম….
ওনাকে আমি ভালবাসই না তারপরও….
কান্না থামার নামি নিচ্ছে না…
আয়ান ছাদে বসে আছে নিচে যাওয়ার ক্ষমতা নেই তার রিতি আয়ানকে রাত হয়ে যাওয়ার পর ও আসে না বলে নিজে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসল….
আজ এ ঘটনার ১০ দিন হয়ে আসল।
আয়ান আর রিতি এখন প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা বলে না….
আয়ান রিতির কাছে এ পর্যন্ত অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু রিতি ওকে avoid করে চলে….
রাতে ডিনার শেষে সবাই ড্রয়িং রুমে গল্প করছিল….
মাঃরিতি মা আয়ান কোথায়….
এখনও এলো না….
রিতিঃ মা উনি উনার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে গেছেন…
আসতে একটু দেরি হবে….
কিছুক্ষন পর কনিংবেল বাজলে ইশিকা যেয়ে দরজা খুলে….
আয়ানঃ তোর ভাবি কোথায়….
ইশিকাঃ ড্রয়িং রুমে সবার সাথে গল্প করছি….
আয়ান সোজা ড্রয়িং রুমে গিয়ে রিতিকে বসা থেকে একটানে হাত ধরে দাড়া করালো….
আর ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিল….
রিতি কিছু বুঝতে না পেরে আয়ানের দিকে তাকালো ওর চোখ আগুনের মত লাল হয়ে আছে…..
বাবাঃ আয়ান এসব কি বেয়াদবী….
ঘরের বউয়ের উপর কেও হাত তুলে….
আয়ানঃ তো তোমার ঘরের বউকে জিজ্ঞাসা কর না ও আমার থেকে এত বড় সত্যি কথা কেন লুকালো…..(চিল্লিয়ে)
রিতিঃ কি বলছেন….
আমি কি করেছি….(কাঁদো গলায়)
আয়ানঃ তুমি এতো ভালো নাটক করতে পারো আমার জানা ছিল না….(রাগে চিল্লিয়ে রিতির দুই কাধে হাত রেখে কথাটি বলল)

রিতিঃ কি বলছেন….
আমি কি করেছি….(কাঁদো গলায়)
আয়ানঃ তুমি এতো ভালো নাটক করতে পারো আমার জানা ছিল না….(রাগে চিল্লিয়ে রিতির দুই কাধে হাত রেখে কথাটি বলল)
রিতিঃমানে…..(কাঁদতে কাঁদতে)
আয়ানঃ তোমায় আমি…..
এতক্ষনে আরিয়ান আর নিশান চিল্লানো শিনে বের হল…..
আরিয়ানঃ বাবা কি হয়েছে…..
আয়ানঃতোমারা দুজন রুমে যাও….
নিশানঃকিন্তু চাচ্চু….
আয়ানঃযাও বলছি….
আরিয়ানঃ বাবা মাকে বকছো কেন…..
আয়ানঃ একবার বললে কি কানে শুন না এখনই রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে ঘুমাও যাও…..(চিল্লিয়ে)
আরিয়ান আর নিশান ভয়ে চলে গেল।
দুজনের কেও আয়ানকে আগে এত রাগে দেখেনি আগে…..
আয়ানঃহে কি বলছিলাম….
তোমায় ওদিন আমি ছাদে আমার আর রিয়ার love story এর কথা বলি নি….
(শান্ত গলায়)
রিতিঃনিশ্চুপ…..
আয়ানঃ কি হল বলছো না কেন….(ভ্রু কুঁচকে)
রিতিঃ নিশ্চুপ…..
আয়নঃ Tell me damn it…..( চিৎকার করে ফোন আছার মেরে বলল)
রিতি ভয়ে কেঁপে উঠল…..
মাঃ কি হয়েছে বলবি তো….
ওকে বলেছিস তো কি হয়েছে…
আয়ানঃ মা তোমরা সবাই জানোই তো আমি রিয়াকে কিভাবে ভালবাসি….
ইশিকাঃ হ্যাঁ, প্রথমে রিয়া ভাবির নাচ দেখে পছন্দ হয় তারপর চিঠি অদলবদল করে ভালবাসা….
আয়ানঃ আজ ১১ টা বছর পর আমি জানতে পাচ্ছি যে মেয়েকে আমি ভালবেসেছিলাম তা রিয়া ছিল না….
ইশিকাঃকি…কি বলছিস তুই….
আমানঃ তোর মাথা কি ঠিক আছে…
এসব কি বলছিস….
আয়ানঃ জানতে চাইবে না মেয়েটি কে ছিল….
বাবাঃকে…
নিধিঃকে….
আয়ানঃ আপনাদের ঘরের ছোট বউ…
রিতি…..
মাঃ তুই কি বলছিস কিছুই বুঝতে পারছি না…
নিধিঃরিতি আয়ান কি সত্যি বলছে….
রিতি মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে….
বাবাঃ এসব কি হচ্ছে এ ঘরে….
কিছুই বুঝতে পারছি না….
আমানঃ আয়ান তুই একটু বুঝিয়ে বলবি….
আয়ানঃ আজ আমি অফিস শেষে আমার ভারসিটির ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম……
সেখানে প্রায় সবাই আসছিল….
কাওকে বিয়েতে দাওয়াত দিনি বলে সবাই আমার বউয়ের ছবি দেখতে চাইলো….
সবাইকে ফোন বের করে দেখালাম তখন যানতে পারলাম রিতি ই ওই মেয়ে যে dance compition এ রিয়াকে হারিয়ে ছিল….
ইশিকাঃতো রিতি ভাবি তো অনেক সুন্দর নাচে হারাতেই পারে….
আয়ানঃআমার কথা কি শেষ হইছে…. (চোখ রাঙিয়ে)
ইশিকাঃ sorry….
আয়ানঃতারপর সবাই তারিফ করছিল কারণ রিতি নাকি আমাদের ভারসিটির সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে ছিল….
কিন্তু কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম মিনা(রিয়ার বেস্টফ্রেন্ড) ও ছবির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে….
আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম…
আয়ানঃ মিনা এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেন….
মিনাঃ ভাবছি….
সত্যি কারের ভালবাসার মানুষদের যতই কেও দূরে সরাতে চাক তারা কোন কোন ভাবে মিলেই যায়….
আয়ানঃমানে….(ভ্রু কুঁচকে)
মিনাঃআসলে…
আয়ানঃ কি হয়েছে….
বল…..
মিনাঃআসলে তুমি যে মেয়েকে ভালবাসতে সে রিয়া না রিতি….
আয়ানঃ এসব কোন ধরনের মজা…..
এটা মজা করার জিনিস….(রাগ দেখিয়ে)
মিনাঃ আমি কখনো এটা বলতে চাইনি কিন্তু এখন না বলে পারছি না…
হয়ত রিয়ার আত্নাও শান্তি পাবে তোমাকে সত্তিটা জানালে….
আমাকে আগে বলা উচিত ছিল….
কিন্তু এখন বলছি….
আসলে রিয়া তোমাকে ভারসিটির প্রথম দিন থেকে পছন্দ করত।খুব ভালোবাসতো তোমায় কিন্তু তুমি সারাদিন বই নিয়ে থাকতা ওকে পাত্তাই দিতে না….
একদিন রিয়া আর আমি তোমাকে চিঠি রাখতে দেখি dance রুমে…
রিতির practice এর পরই রিয়ার practice ছিল তাই তখন গেলাম…
ওদিন একটু তাড়াতাড়ি গিয়েছিলাম…
কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না….
কিছুহ্মন পর দেখি রিতি দরজার ভিতর থেকে মুখ বের করে উকি মেরে কি দেখে চিঠিটি নিয়ে হাসি দিয়ে আবার ভিতরে ডুকে দরজা লাগিয়ে দেয়….
রিতির practice শেষে আমরা ডুকলাম…
ওর লকারটাতে ক্লিপ ডুকিয়ে খুলে ফেললাম….
তারপর অনেকগুলো চিঠি দেখলাম…
আর তোমার hand writing রিয়া চিনতো তাই বুঝতে সময় লাগে নি যে হাতে লেখাটা তোমার….
সব পরে বুঝলাম যে তুমি আর রিতি অনেক দিন ধরেই কথা বলছো কিন্তু এখনও দেখা করোনি….
তারপর রিয়া তোমাকে পাওয়ার জন্যে এতই পাগল ছিল যে plan করল যে তোমাকে তোমার ময়ুরি সেজেই পাবে….
টিচারের সাথে কথা বলে রিতির সাথে practice এর time exchange করে নেয়….
আর রিতির সময় সকালে এসে পরে….
আর সব চিঠি গুলো সরিয়ে ফেলে….
রিতি জিজ্ঞাসা করলে আমরা বলি আমরা চিঠির ব্যাপারে কিছু জানি না….
তারপর তুমি হাতে লেখা চিনে যাবা তাই আর চিঠি দি নি।
প্লান অনুযায়ী তুমি তিনপর এসো আর…
রিয়া আর তোমার রিলেশন শুরু হয় কিভাবে তা তো আর বলার দরকার নেই….
আমাদের দুজনের dance compition নিয়ে ভয় ছিল।আমরা প্লান করেছিলাম যে রিয়া পায়ের মোচরের acting করবে কিন্তু ওদিন আন্টি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তুমি আসো নি তাই কোন সমস্যা হয়নি….
রিয়া তোমার জন্য আর dance compition এ হারার জন্যে রিতিকে দেখতে পারত না।ওকে অনেক বিরক্ত করত।
তারপর থেকে আমরা যথাসম্ভব তোমাকে আর রিতিকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি…
কিন্তু বলে না সত্যি ভালবাসা নিজেই তার ভালবাসাকে খুঁজে নায়….
ভাগ্যে থাকলে একে অপরকে পেয়েই যায়….
তোমার ভালবাসা সত্যি ছিল আয়ান….
তাই আজ ১১ টি বছর পর তুমি তোমার ময়ুরিকে পেলে….
তোমার ভালবাসা পেলে…..
সত্যি খুব অবাক লাগছে আমার যে তোমার বিয়ে রিতির সাথেই হল….
যানি মাফ করা possible না কিন্তু পারলে মাফ করে দিও আমাকেও আর রিয়াকেও……
মিনা হাত জোর করে মাফ চাইলো….
তখন যানো আমি পাথর হয়ে গিয়েছিলাম….
শুধু ভাবছিলাম এ ১১ টি বছর মিথ্যা ছিল,
আমার ভালবাসা মিথ্যা ছিল,
আমাদের সম্পর্কটা মিথ্যা ছিল,
পাথর হয়ে গেছিলাম তখন।
কি বলব বুঝতেই পারছিলাম না…..
তখন মনে পরল আমি তো সেদিন রিতিকে সব বলেছিলাম….
রিতি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কেন বুঝতে বাকি রইল না….
কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসলাম….
সারা রাস্তা শুধু এটাই ভাবছিলাম….
চিঠি না পাওয়ার পর কি রিতি আমাকে একবার ও খুজে নি….
তখন কি একবার ও ভালবাসে নি…
আর সেদিন রাতে কিছু বলে নি কেন….
বল রিতিওদিন বলনি কেন আমায়….
রিতিঃনিশ্চুপ…..
আয়ানঃআমি কিছু জিজ্ঞাস করছি শুনতে পাচ্ছো না নাকি….(চিল্লিয়েই বলল)
রিতি ভয়ে ভয়ে বলল….
রিতিঃআ…আসলে আমি চাইতাম না যে আপনি সত্যি জানার পর রিয়া আপুকে ঘৃণা করেন….
আয়ান রিতির দুই কাধে হাত রেখে শক্ত করে ধরল রিতি হাল্কা ব্যাথা পেলেও কিছু বলে নি…..
আয়ানঃ সবার এত চিন্তা কর তাই না…
আমার…
আমার কি….
তুমি কি আমাকে এতই ঘৃণা কর যে আমার কথা একটি বার ও চিন্তা কর না…..
রিতি চোখ তুলে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়….
কারণ আয়ানের চোখে পানি টলমল করছিল….
রিতিঃ আসলে…
আমি…
ওই….(কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না)
আয়ান রিতির কাঁধ ঝাটকি দিয়ে ছেড়ে দিয়ে রুমে চলে যায়…..
রিতিও আয়ানের পিছন পিছন যায়….
সবাইও তাদের পিছনে যায় কিন্তু মা থামিয়ে দেয়…
মাঃ এটা ওদের মাঝের সমস্যা ওদেরকেই solve করতে দেও….
সবাই থেমে গেল কিন্তু সবার মাঝে ভয়টা রয়েই গেল যে কি হবে……
রিতি যেয়ে দেখতে পায় আয়ান পিঠ মুখ করে আছে…..
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
রিতিঃ সত্যি বলছি আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই নি….
আমি চাইনি যে আপনি….
আগে কিছু বলতে পারল না কারণ আয়ান যে আগেই যে এর আগেই তাকে নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে ফেলেছে….
আয়ান রিতিকে এতো জোরে জরিয়ে ধরেছে যেন হাল্কা ছাড় পেলেই রিতি তার থেকে কোথাও দূরে পালিয়ে যাবে….
বেশি জোরে জরিয়ে ধরায় রিতির নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে….
আয়ানঃ তোমার কি একবার ও আমার কথা মনে পরে নি তখন….
চিঠি গুলো পরতে পরতে তোমায় ভালবেসে ফেলেছিলাম।
তুমি কি একবারও বাসো নি….
এজন্যই বলি তোমার প্রতি এত আকর্ষণ কেন সৃষ্টি হয়…..
তুমি যানো রিয়ার সাথে থাকলেও ওর জন্য সে টান ফিল হত না যে টান টা তোমার চিঠি গুলো দেখে হত….
দারাও একটু…
আয়ান রিতিকে ছেড়ে দেয়….
রিতি তখন একটু নিশ্বাস নেয়…..
আয়ান আলমারির ড্রয়েরের থেকে একটি বক্স বের করে রিতির সামনে নিয়ে আসে….
রিতির হতে দিয়ে বলে খুলতে….
রিতি বক্সটি খুলে চোখ বড় বড় করে ফেলে…
এগুলো তাদের সব স্মৃতি….
সে সব চিঠি যা তারা লিখেছে….
আয়ান রিয়া থেকে চিঠি গুলো নিয়ে আজ পর্যন্ত তা সামলে রেখেছে…..
রিতি আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখল আয়ান হাঁটু গেড়ে বসে রিতির হাত থেকে বক্সটি নিয়ে নিচে রেখে ওর দুটি হাত নিজের হাতে নিল….
আয়ানঃ একটি সুযোগ দিবে তোমায় ভালবাসার,
তোমার কাছে আসার,
তোমার মনটি ছোয়ার,
ফিরিয়ে দিবে সে আমার ময়ুরীকে যার প্রেমে পরেছিলাম,
ফিরেয়ে দিবে সে দুষ্ট মেয়েটিকে যার চিঠি পড়ে তার ভালবাসায় জরিয়েছিলাম,
একটি বার আবার বিশ্বাস করা শিখবে,
সত্যি বলছি মৃত্যু হলেও তোমার বিশ্বাস ভাংতে দিব না,
একটিবার আবার ভালবাসবে….
আমায় ভালবাসবে…….
রিতি-
কি বলব বুঝতে পারছি না….
আমার পক্ষে কাওকে আবার ভালবাসা সম্ভব না….
কিন্তু ওনার চোখ….
ওনার চোখের দিকে তাকালে যে সে সমুদ্রের মাঝে ভেসে যেতে ইচ্ছা করে….
এ মায়ায় ডুবে যেতে ইচ্ছা করে….
কিন্তু হাজার চেলেও এ মন্টার কি করব…
একবার ভেংগে গেলে যে তা জোরা লাগানো খুব কঠিন…..
কিছু না ভেবেই একটি হালকা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম….
রিতিঃ চেষ্টা করব….
উনি সাথে সাথে দাড়িয়ে আমায় জরিয়ে নিলেন…..
রিতিঃ চলেন ডিনার করে নিন….
আয়ানঃহম…চল…(চোখ মুছতে মুছতে হাসি দিয়ে)
খেয়ে দুজনে প্রতিদিনের মত রিতি খাটে আর আয়ান সোফায় ঘুমিয়ে পরে…..
সকালে….
আয়ান-
কালরাতের পর সবাই আমাকে নিয়ে৷ খুব tension এ ছিল তাই অফিসে না যেয়ে সবার সাথে গল্প করলাম আর সময় কাটালাম…..
আরিয়ান আর নিশান কালকে খুব ভয় পেয়েছিল তাই নিজে ওদের স্কুল থেকে নিয়ে আসলাম । আসার সনয় আইসক্রিম কিনে দিলাম।কালরাত কি হল ওরা ভুলেই গেল আইসক্রিমের লোভে….
সারা বাড়ি খুঁজেও আমার ময়ুরীটাকে পেলাম না।
ওফফফ আর সহ্য হচ্ছে না….
আগেও ওকে না দেখলে খালি খালি লাগত কিন্তু কালকের পর থেকে ওকে না দেখলে ওকে হারানোর অজানা একটি ভয় থাকে….
ওকে না দেখলে কিছুই ভালো লাগে না…
একি রুমেও নেই কোই গেল মেয়েটি….
ভিতরে যেয়ে দেখি রিতি বারিন্দায় ওর ভিজা চুলগুলো মুচছে…..
আমার থেকে পিঠ করেই চুলগুলো মুচছিলো কিন্তু ওর সে ফর্সা রঙ এ মেরুন কালারের সেলোয়ার কামিজে ফুটে ওঠেছে….
এর মধ্যে চুলগুলো একপাশ করে মুচছে…
এর মধ্যে ওর ঘাড়ে সে বিন্দু বিন্দু জমা পানি গুলো আমায় আরো কাছে টেনে নিচ্ছিল….
যেয়েই ওর পেটে আমার হাত দুটি আবদ্ধ করে টেনে নিজের সাথে মিশাতেই ও কেঁপে উঠলো…..
আমি নিমিশেই আমার নাক মুখ ওর ঘাড়ে ঘষতে লাগলাম। ওর ঘ্রাণ নিতে লাগলাম। আমার যেন নেশা লেগে যাচ্ছিল….
ওর ঘাড় থেকে মুখটা ওর চুলে নিয়ে গেলাম….
ওর চুলের ঘ্রাণ যেন আমার নেশা বাড়িয়ে দিচ্ছিলে….
ওর ঘাড়ে মুখটি আবার নিয়ে আলতো করে একটা চুমু দিলাম…
চুমু দিতেই ও কেঁপে ওঠল….
ওর ঘাড়ে আরও চুমু দিতে লাগলাম
প্রতিটি চুমুতেই ও কেঁপে উঠছিল…
ওর নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছিল…
যা আমাকে আরো পাগল করে দিচ্ছিল…
ওর ঘাড়ে আর বেশি নিজের ঠোঁটের ছোয়া লাগিয়ে দিতে লাগলাম…
ও পিছনে ফিরেই আমায় জরিয়ে ধরল….
চলবে…..