#অদ্ভুত_প্রণয়নামা
#পর্ব_১১
#তাশরিন_মোহেরা
মুগ্ধের পড়ার রুমটা ঠিক মুখরের রুমের মুখোমুখিই। কিন্তু মুখর সাহেব খুবই বদ্ধ পরিবেষ্টিত একজন মানুষ। নিজের জীবনটাকে বেশ পরিবেষ্টন করে রাখতে চান তিনি। অনেকটা ‘এসব আমার ব্যক্তিগত’ বলা এমন ধাঁচেরই! তবে আমি ভুলক্রমে একবার তার ব্যক্তিগত শ’রী’রে’র অ’র্ধাং’শ’ই দেখে ফেলেছি। আবারো বলছি, ভুলক্রমে দেখেছি! আর এর মাশুল হিসেবে আমার খেতে হয়েছে পানির চ্ছটা!
মুখরের আধখোলা রুমটার দিকে তাকিয়েই এসব ভাবছি। সে ভাবনাগুলো উদয় হতেই ভীষণ হাসি পেল। বিকট একটা অট্টহাসি দিলাম। কি অদ্ভুত ভাবেই না আমাদের প্রথম দেখাটা হয়েছিলো! সে থেকে আজ তিনমাস মুগ্ধ আর মুখরের সাথে পথচলা। এর মাঝে বহু উ’দ্ভ’ট কান্ড হয়ে গেছে বটে!
তখনই দেখলাম মুগ্ধ আধখোলা দরজাটা আরো খানিকটা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ার টেবিলে বসলো। মুগ্ধ বয়সের তুলনায় একটু লম্বাটে! মুখরও বেশ লম্বাচওড়া! লম্বা হওয়াটা বোধহয় এদের বংশগত। মুগ্ধ আমার ঠিক সামনাসামনি বসায় আমি উচ্চতায় তার সমান হয়ে যাই। তখনি ভাবলাম, মুগ্ধ আর মুখর কি একটু বেশিই লম্বা নাকি আমি একটু বেশিই বেঁ’টে?
তবে মুগ্ধকে পড়ানোর এক ফাঁকে খেয়াল করলাম মুখর সাহেব তার রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ সাবধানে মাথা আঁচড়াচ্ছেন। সামনের চুলগুলো জেল দিয়ে সুনিপুণ হাতে পেছনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি আড়চোখে তার এই কার্যকলাপ খেয়াল করছি। মুগ্ধ যাতে সন্দেহ না করে তাই পাশে থাকা পেপারটা নিয়ে তা পড়ার ভান করলাম। পেপারের উপরে উঁকি মারতেই দেখলাম মুখর পারফিউমের বোতলটা নিয়ে তা গ’লা’র দুইপাশে মা’খ’ছে। ক’ব’জি’তে হালকা পারফিউম মে’খে তা শার্টে লাগিয়ে দিলো। দৃশ্যটা দেখে আমি পলকহীন চেয়ে রইলাম সামনের সুপুরুষটার দিকে। সু’ঠা’ম দেহের মানুষটার প্রতিটি পদক্ষেপই আমার কাছে সন্তপর্ণে করা কারুকার্য মনে হয়! যেন তাকে প্রতিদিন দেখেও আমার সাধ মিটবে না। একেকটা দিন নতুন করে, নতুন ভাবে প্রেমে পড়ছি তার! বেশ গা’ঢ় প্রেম!
মুগ্ধ ঝাঁ’কু’নি’তে ভ’ড়’কে উঠলাম। দেখি মুগ্ধ রুষ্ট হয়ে বলছে,
‘ম্যাম, কখন থেকে আপনাকে বলছি ড্রয়িং বইটা আমাকে দিতে, আপনি তো শুনছেনই না!’
আমি তার দিকে তাকিয়েই অপ্রস্তুত হাসলাম। এদিক ওদিক দৃষ্টি নিয়ে বললাম,
‘পেপার পড়ছিলাম তো, তাই খেয়াল করিনি!’
এই ডাহা মিথ্যেটা বলতে আমার খারাপ লাগলো ঈষৎ। কিন্তু তাই বলে মুগ্ধকে এটা তো জানতে দেওয়া যাবে না যে আমি সিসিটিভির মতো অতি পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তার ভাইয়াকে দেখছিলাম। ছিঃ ছিঃ! ইজ্জত আমার একেবারে গেল বলে! কেমন বি’চ্ছি’রি কান্ড করে বসছি ইদানীং। একটা যুবক ছেলেকে এভাবে হা করে দেখার কোনো মানে আছে? তারউপর ছেলেটার জন্য মিথ্যাও বলতে হলো। ম্যাম হয়ে যদি ছাত্রের সাথে মিথ্যা বলতে হয় আমার! হায় রে তিথি! কই গেল তোর ভদ্রতা, সভ্যতা?
নিজেকে বারকয়েক ধিক্কার জানাতে জানাতেই হঠাৎ মনে পড়লো সামনেই মুগ্ধের জন্মদিন। এই উপলক্ষে আমি একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করে রেখেছিলাম কাল রাতে। ইউটিউব থেকে কয়েকটা ভিডিও নামিয়ে রেখেছিলাম। আর এই ভিডিওগুলো চুপিসারে মুখরকে দেখাতে হবে।
পড়ানো শেষ হলে আমি চুপিচুপি মুখরের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সে কিছুক্ষণের মধ্যেই চাকরির জন্য বেরিয়ে পড়বে। আমি তাকে চুপিসারে ডাকলাম,
‘মুখর সাহেব, আপনাকে কিছু বলার ছিল।’
মুখর পেছন ফিরলে আমি সংক্ষেপে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলাম। এরপর মুখরকে দুয়েকটা ভিডিও দেখাতেই সে বললো আমি যাতে তাকে ভিডিওগুলো সেন্ড করি। আমিও কথামতো ভিডিওগুলো তার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিলাম।
একগ্লাস পানি নিয়েই তা পান করতে করতে ভিডিও এসেছে কিনা তা চেক করছিলো মুখর। তখনি একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটে বসে।
মুখরের ফোনে হঠাৎ বেজে উঠে অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ভিডিও। সেখানে বাচ্চার মতো সুরে কেউ বলছে,
‘আমি তিথি! কিউট বেবি তিথি, দেখতে আমি খুব মিষ্টি! তাই না? বলো! হুম হুম?’
আমার চোখ তো ছানাবড়া! গলাটা শুনেই বুঝলাম মেয়েটা আসলে আমি। ব্যাপারটা নিশ্চিত হতেই মুখরের ফোনে উঁকি দিলাম তক্ষুণি। পরের ‘হুম হুম’ শব্দটা করতেই আমি মুখটা ফুলিয়ে ক্যামেরার সামনে কিছুটা ন্যাকামি করলাম। এটুকু দেখেই আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। লজ্জাটুকু ডাকতে দু’হাত মুখের সাথে চেপে ধরি। ভিডিওগুলো পাঠানোর সাথে ভুল করেই আমি আমার ভিডিওটাও পাঠিয়ে দিয়েছি। অতিরিক্ত উত্তেজনায় কখন যে ভিডিওটা দিয়ে দিল! হায়! এতোটা বেখেয়ালি কিভাবে হলাম আমি?
মুখর মুখের পানিটুকু মুখে রেখেই হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে রইলো। সে ভিডিওটা দেখে পুরো থমকে গেছে। পরক্ষণেই মুখের পানিগুলো কোনোরকম গিলে ঠোঁট টিপে খিলখিল করে হেসে উঠে সে। যাকে বলে মারাত্মক হাসি! হাসি থামাতে না পেরে সে পাশের চেয়ার ধরে তাতে বসে পড়ে। মুখর ঘর কাঁপিয়ে হাসছে আর তা শুনে দৌঁড়ে সামনে এসে পড়ে মুগ্ধ। সে ভাইয়ের হাসি দেখে অবাকের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে গেছে। পৌঁছে গেছি আমিও। মুখর যে এমন হো হো করে হাসতে পারে তা আমার বিশ্বাস হলো না। এদিকে মুহুর্তেই ভীষণ লজ্জা ভীড় করলো আমার সারা মুখে। মুখে হাত দিয়ে কোনোরকম পালিয়ে আসতেই মুখর ডাকলো,
‘মিস.তিথিয়া!’
আমি চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ছেলেটা আবার কি বলবে এখন? আমি পেছন ফিরেই দেখলাম মুখর আমার মতো গাল ফুলিয়ে বললো,
‘আমি দেখতে খুব মিষ্টি, তাই না?’
এইটুকু বলে মুখর আবারো গগনবিদারী হেসে উঠলো। আমি সেখানেই মূর্তির মতো থমকে গেলাম। আমার প্রাণ আছে কিন্তু দেহে নড়ার শক্তি নেই। এ কেমন লজ্জায় পড়লাম? বিধাতা! আমায় এখানে আর রেখো না! আমি যে এসব দেখতে পারছি না আর!
(চলবে)
#অদ্ভুত_প্রণয়নামা
#পর্ব_১২
#তাশরিন_মোহেরা
গত কয়েকদিন ধরে মুখরের মুখোমুখি হতে পারিনি আমি। কেমন একটা আড়ষ্টতা চলে এসেছে আমার মাঝে। মুখরের দিকে তাকালেই আমার শুধু একটা দৃশ্যই চোখে ভাসে, ‘আমি দেখতে খুব মিষ্টি, তাই না?’
এটুকু ভাবতেই চোখমুখ কুঁচকে ফেললাম সাথে সাথে। মাথা তুলতেই দেখলাম মুখর আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। আড়চোখে আমায় একবার দেখলো সে। চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে ফেললাম আমি। এলোমেলো চোখে আশেপাশে পেপার খুঁজতে লাগলাম, যাতে নিজের মুখটা ঢেকে লজ্জা থেকে নিস্তার পাই। কিন্তু পেপার খুঁজে পেলাম না। তবে চটজলদি মুগ্ধের গণিত বইটা নিয়ে মুখের সামনে তুলে ধরলাম। কিছুক্ষণ পর বই থেকে চোখ সরিয়ে হালকা উঁকি দিতেই দেখলাম মুখর আবারো ডাইনিং টেবিলে এলো। জগ থেকে একগ্লাস পানি ঢেলেই তা একটু একটু পান করতে লাগলো, সাথে আড়চোখে আবারো আমার দিকে চাইলো। চোখাচোখি হওয়ার ভয়ে চট করে বইটা চোখের উপর তুলে ধরলাম। ভাবছি এই নিয়ে কয়বার মুখর সাহেব পানি খেলো! আমি আসার পর থেকেই সে বারকয়েক ডাইনিং টেবিলে এসে গ্লাসের উপর গ্লাস পানি পান করেছে। মুখর সরেছে কিনা তা দেখতেই আরেকবার উঁকি দিলাম। কিন্তু এখন দেখি সে সরাসরি আমার দিকেই চেয়ে আছে। দৃষ্টিটা খানিক কুঁচকানো। আমি আঁতকে উঠে আবারো বইয়ের দিকে চোখ রাখলাম। সেকেন্ড কয়েক পর আবারো উঁকি দিলাম, তখনও মুখর তাকিয়ে আছে। আবারো চোখ দিলাম বইয়ে। ছেলেটা এখনো যাচ্ছে না কেন? এভাবে তাকিয়ে থাকার কোনো মানে আছে? আচ্ছা? আমি ভুল কিছু করে ফেলিনি তো? লোকটা কি খেয়াল করেছে আমি তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে এতোটা সময় দেখছিলাম?
এতোসব ভাবনার মাঝপথে আবার একবার উঁকি দিয়ে দেখি মুখর এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে। আমি আবারো বইয়ে মুখ ডুবানোর আগে মুগ্ধ হঠাৎ বলে উঠলো,
‘ম্যাম, আপনি কি করছেন? এমন লুকোচুরি খেলছেন কার সাথে?’
সে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। খানিকটা লজ্জা পেলাম আমি। লজ্জাটুকু আবৃত করে আমি গলা খাকারি দিয়ে বললাম,
‘কিছু না। তোমায় যা লিখতে দিয়েছিলাম, লিখেছো?’
বইটা নিয়ে এবার পড়ার ভান করলাম। যাতে মুখরের দিকে দৃষ্টি দিতে না হয়। তখনি দেখলাম মুগ্ধ হো হো করে হেসে উঠলো। আমি প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাতেই সে বললো,
‘ম্যাম, আপনি বই উল্টো ধরেছেন।’
এটুকু শুনেই চোখ ছানাবড়া আমার! আসলেই তো! বইটা এতোক্ষণ উল্টো ধরেই পড়ার ভান করছিলাম। এই অভিনয়টা ধরা পড়ে যাওয়ায় চোরের মতো মাথা নিচু করে বসে আছি। চোখ তুলে এক ফাঁকে মুখরের দিকে দেখলাম। পরপর আবারো চোখ নামিয়ে ছোট করে বললাম, ‘হে খোদা! আর কতো লজ্জায় পড়তে হবে আমার? ছেলেটা এতোক্ষণ আমার অভিনয় ধরতে পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিল! আমি কেন একটু বুঝলাম না! ধুর!’
চোখমুখ খিঁচে ঠোঁট কামড়ে বসে আছি। এই মুখ লুকোনোর বৃথা চেষ্টা চালিয়েও সফল হলাম না, উল্টো আরও লজ্জায় পড়লাম। এমন সময় ভারী কণ্ঠে কেউ বললো,
‘কয়টা বেজেছে, মিস.তিথিয়া? মুগ্ধের স্কুলে যেতে হবে, এবার তাকে ছুটি দিন।’
আমি মাথা না তুলেই মুখরের কথা শুনলাম। তা শুনেই মুগ্ধকে বললাম,
‘যাও, মুগ্ধ! তোমার ছুটি!’
আমার স্বরে একরাশ হতাশা। আমি কোনোদিকে না দেখেই চেয়ার ছেড়ে উঠলাম। এখানে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়! যতদ্রুত প্রস্থান করা যায় ততই শ্রেয়! আমি ব্যাগ নিয়ে চলে যেতে নিলেই মুখর পুনরায় পুরুষালি কণ্ঠে বললো,
‘কোথায় চললেন? বসুন!’
আমি হতবুদ্ধির মতো তার দিকে একবার দেখলাম। সে মুগ্ধের চেয়ারটা টেনে হাত ভাঁজ করে তাতে বসলো। আমায় বসতে বললে বোকার মতো কাচুমাচু হয়ে আমিও বসলাম তার পাশের চেয়ারে। মুখর আমার দিকে জহুরি চোখে চেয়ে আছে। আমি একবার মাথা তুলে তাকিয়েই নিচে নামিয়ে ফেললাম মাথাটা! তার চোখে চোখ রাখা সম্ভব নয়!
মুখর এবার ভারী কণ্ঠে বললো,
‘মিস.তিথিয়া? আপনি গত কিছুদিন ধরে আমাকে এভয়েড করছেন, কেন?’
এই প্রশ্নটা শোনা-ই বাকি ছিল আমার। হালকা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে বললাম,
‘এভয়েড করিনি, আসলে এতোদিন আমি আপনাকে দেখিনি!’
মুখর ক্ষীণ স্বরে আমাকে বললো,
‘দেখেননি? অযথা মিথ্যা বলছেন কেন?’
আমি আগের মতোই চুপচাপ বসে আছি। সে এবার বললো,
‘আপনার ভিডিওটা দেখে আমি হেসেছি বলে আপনি কি আমার সাথে রাগ করেছেন?’
আমি মাথাটা দু’দিকে দুলিয়ে বোঝালাম আমি রাগ করিনি। আমার কিছুটা হাসি পেল আবার অবাকও হলাম। এই ছেলে আমার উপেক্ষা করাটাও খেয়াল করেছে! আবার রাগ করেছি কিনা তাও জিজ্ঞেস করছে! এতোটাও আশা করিনি আমি।
মুখর এবার টেবিলে হাত রেখে বললো,
‘আপনি হয়তো আবারো মিথ্যা বলছেন। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন তো আপনি রাগ করেননি।’
আমি এবার হতবিহ্বল! হালকা হেসে তার চোখের দিকে তাকিয়েই বললাম,
‘না, মুখর সাহেব! আমি রাগ করিনি। আসলে লজ্জা পেয়েছি তাই আপনার সামনে যাইনি।’
মুখরের ঠোঁটের কোণেও হালকা এক হাসির রেখা দৃশ্যমান হলো। তবে আমার মনে উদয় হয়েছে হাজার রকমের প্রশ্ন। সাথে তার জন্য হৃদয়ে জমা হয়েছে আরও এক পাহাড় ভালোবাসা। ছেলেটাকে দেখতে ঘাড়ত্যাড়া মনে হলেও সে মোটেও তেমনটা নয়। তার মনে সামান্য করে হলেও কোমলতা বিদ্যমান।
মুখর হঠাৎ দুষ্টু একটা হাসি দিয়েই বললো এবার,
‘আমি দেখতে খুব মিষ্টি, তাই না?’
এই বলেই মুখর আবারো হো হো করে হেসে উঠলো। এরপর আমার মতো ভঙ্গিমা দিয়ে ‘হুম হুম’ বলাটাও ছাড়লো না। তার এমন আচরণে এবার আমার সত্যিই মাথা খারাপ হয়ে গেল। আমি রাগত স্বরে বললাম,
‘মুখর সাহেব, এবার কিন্তু সত্যিই আপনি আমাকে রাগাচ্ছেন!’
মুখর ফোঁড়ন কেটে বললো,
‘আপনি রাগবেন কেন, মিস.তিথিয়া? আপনি তো দেখতে খুব মিষ্টি!’
এই বলে বিকট এক অট্টহাসি দিলো মুখর। আমার খুব কান্না পেল। লোকটা আমাকে ভীষণ রাগাচ্ছে। আমি গাল ফুলিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলাম এবার। পাশে থাকা পানির গ্লাসের সবটাই ছুঁড়ে মারলাম তার মুখে। ঠিক যেমনটা মুখর আমাকে ছুঁড়ে মারে। মুখর পানির ঝাপটা খেয়েই সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। আমি দু’হাত কোমরে গুঁজে বললাম,
‘আপনার হাতিয়ার আপনাকেই ছুঁড়ে মারলাম। কেমন দিলাম, মুখর সাহেব?’
মুখটা হাত দিয়ে মুছেই মুখর আমার দিকে তেড়ে এসে বললো,
‘দাঁড়ান, আপনাকে দেখাচ্ছি!’
আমি সাথে সাথেই এক দৌঁড়ে তাদের বাগানে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু এদিকে আসতেই আটকে গেলাম আমি। যাওয়ার আর পথ নেই। নিজের বোকামির জন্য মাথার চুল ছিঁড়তে মন চাইছে। তখনি মুখর আমার পেছনে এসে তার শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বললো,
‘এবার পালিয়ে কোথায় যাবেন, মিস.তিথিয়া?’
আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে ঢোক গিললাম। দেয়ালের সাথে পিঠে ঠেকিয়ে চারপাশে চোখ বুলালাম। কোথাও যাওয়ার পথ পেলাম না। ঠিক তখনি মুখর পাশ থেকে গাছে পানি দেওয়া পাত্রটা নিয়ে ঝর্ণার মতো আমার দিকে পানি ছুঁড়তে লাগলো। এ পানি চোখ মুখে পড়ায় আমার অস্বস্তি লাগলো। হাত দিয়ে তা থামানোর বৃথা চেষ্টা চালাতেই মুখরকে বললাম,
‘আরে থামুন, মুখর সাহেব। কি করছেন?’
এই পানিতে ভিজে জবজবে হয়ে গেলাম আমি। এদিকে আমার নাজেহাল অবস্থা দেখে মুখর শব্দ করে হাসছে। সে হেসেই বলে উঠে,
‘আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার শাস্তি! এবার আমি কেমন দিলাম, মিস.তিথিয়া?’
আমি চোখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছি। বড্ড বিপদে পড়লাম এই লোকটাকে পানি মেরে। দোষটা স্বীকার না করা অবধি এই ছেলে আমাকে ছাড়বে না। আমি করুণ সুরে বললাম,
‘মাফ করে দেন, মুখর সাহেব। আর হবে না! কোনোদিন হবে না! এই যে কান ধরলাম।’
মুখর এবার পানি ছোড়া থামিয়ে বললো,
‘দেখি, কান ধরুন তো!’
পেছনে তখন মুগ্ধ এসে দাঁড়িয়েছে। এ যে মহাবিপদ! ছাত্রের সামনে তার বড় ভাই শিক্ষককে কান ধরে দাঁড় করাবে। এমন ঘটনা তো পৃথিবীতে বিরল!
মুখর সাহেব পানির পাত্রটা তুলে ধরতেই আমি বললাম,
‘ধরছি ধরছি!’
কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি মুগ্ধ মুখরের সামনে। আর দুইভাই আমাকে দেখেই ঠোঁট টিপে হাসছে। রাগে আমার পিত্তি জ্বলে উঠে। এই অপমান সহ্য করার মতো নয়!
(চলবে)