অনুভবে তুমি পর্ব-১৪

0
673

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_১৪
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

অতশী ঘুমের মধ্যে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো।মনে হলো কেউ তার শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে।অতশী সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো।কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না।মনে হয় সে কোনো স্বপ্ন দেখেছে,এইভেবে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো।তবে অতশীর কিছুতেই ঘুম আসলো না।কারন এটা কি করে স্বপ্ন হতে পারে!একদম বাস্তবের মতো মনে হচ্ছিলো।অতশী তাড়াতাড়ি করে বিছানায় উঠে বসলো।কেনো জানি তার ভীষণ ভয় লাগছিলো।এ ঘরে আর একা একা ঘুমানোর সাহস তার হলো না।সেজন্য অতশী দৌঁড়ে তার দাদীর রুমে চলে যেতে ধরলো।হঠাৎ সে খেয়াল করলো কে যেনো দরজা খুলে বের হচ্ছে।অতশী সেটা দেখামাত্র জোরে করে এক চিৎকার দিলো।এদিকে লোকটি চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে চলে গেছে।অতশী চিল্লাতেই আছে চিল্লাতেই আছে।এতোক্ষন তার এতো ভয় লাগে নি।কিন্তু এখন তার ভীষণ ভয় লাগছে,এই লোকটি তাকে সত্যি সত্যি ছুঁয়েছে এটা ভাবতেই অতশীর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।সে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতেই বসে পড়লো।

অতশীর চিৎকার শুনে তার আম্মু এগিয়ে আসলো।এসেই দেখে অতশী মেঝেতে বসে আছে।
কি হইছে অতশী?এটা বলেই অতশীর আম্মু অতশীর কাছে চলে গেলো।গিয়ে দেখে অতশীর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

–এই অতশী?কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে?
অতশী কোনো উত্তর না দিয়ে সেই আগের মতোই কেঁদে চলেছে।
অতশীর দাদীও এগিয়ে আসলো।তিনিও অতশীর চিৎকার শুনেছেন।কি হইছে অতশীর মা?ও চিৎকার দিলো কেনো?

–কি জানি আম্মা?কিছুই তো বলছে না।
অতশীর দাদী কাছে আসতেই অতশী তার দাদীর গলা জড়িয়ে ধরে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
–এই পাগলি কাঁদছিস কেনো?কি হয়েছে?
অতশীকে চুপ থাকা দেখে দাদী অতশীকে নিয়ে তার রুমে চলে গেলেন।অতশী সেই আগের মতোই চুপচাপ হয়ে আছে।

হঠাৎ অতশীর আম্মু বললো,মেইন দরজা খোলা কেনো আম্মা?
কে খুলেছে দরজা?

অতশী এবার আর চুপ করে থাকলো না।
সে বললো কেউ একজন এসেছিলো আমার রুমে।আমাকে টাচ ও করেছে,,,,এই বলে অতশী আবার কাঁদতে লাগলো।

–কি বলিস এসব?
এই বলে অতশীর আম্মু বাহিরে চলে গেলেন।আর জোরে জোরে বলতে লাগলেন কে রে?কে ওখানে?
অতশীর দাদী তখন অতশীর আম্মুর হাত ধরে টেনে আনলেন, কি করছো এসব?পাগল হইছো তুমি?আশেপাশের মানুষ জন সবাই ঘুমাইছে?

অতশীর আম্মু তখন বললো, না এটা তো খুব খারাপ ব্যাপার।কার এতো বড় সাহস আমাদের বাড়ির মধ্যে ঢোকার?কে? সামনে এসো?
অতশীর দাদী তখন অতশীর আম্মুকে টেনে ঘরে আনলেন,
— চুপ করো তুমি।কেউ শুনলে আমাদের মেয়েরই বদনাম হবে।এমনিতেই সবাই সুযোগে সৎ ব্যবহার করছে।সবাই জানে অয়ন জেলখানায়,এখন বাড়িতে কোনো পুরুষমানুষ নাই।ওই জন্য সুযোগ নিচ্ছে সবাই।

অতশীর আম্মু সেই কথা শুনে বললো, সেই জন্য বার বার আপনাকে বললাম, তাড়াতাড়ি বিয়ে টা দিয়ে দেই।কিন্তু শুনলেন না আপনি।
–তুমি কি তানিমের সাথে বিয়ের কথা ভাবছো ওর?
–তাহলে আর কে বিয়ে করবে ওকে?এতো কিছুর পর মনে তো হয় না কেউ বিয়ে করতে চাইবে?
–কিন্তু অয়ন তো রাজি ছিলো না।ও বার বার বলেছে সে কখনোই তানিমের সাথে বিয়ে দেবে না অতশীর।
–তাহলে এখন আপনিই বলুন কি করবো আমরা?অয়নের সাথেও দেখা করতে পারছি না।ছেলে টা কি অবস্থায় আছে কে জানে?এদিকে মেয়েটার উপর একের পর এক বিপদ।আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

অতশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তার দাদী ঘুমানোর চেষ্টা করছে।অতশী সেই আগের মতোই চুপচাপ। সে বুঝতে পারছে না কিছু।তার ভাই জেলে যাওয়ার পর থেকে তার সাথে এমন সব ঘটনা ঘটছে।তার ভাইয়া সবসময় তার ছায়ার মতো আশেপাশে থাকতো।কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পেতো না।কিন্তু আজ,,,,,!
ভাইয়া কই তুই?তাড়াতাড়ি ফিরে আয়।এই বলে অতশী আবার কাঁদতে লাগলো।

অতশীর দাদী তখন বললো, চুপ করতো এবার।কান্নাকাটি থামা এখন।কিছুই হয় নি।এর চেয়েও খারাপ কিছু হতে পারতো।আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া।

সকালবেলা অতশী ভার্সিটিতে না গিয়ে জেলখানায় চলে গেলো।সে আজ একাই এসেছে।কেনো জানি তানিম কে তার বিশ্বাস হচ্ছে না।ভাইয়ার সাথে দেখা করা ভীষণ জরুরি তার।বার বার শুধু তার কালকের ঘটনাই মনে পড়ছে!
কিন্তু জেলখানার গেটে যেতেই অতশীর চোখ কপালে উঠে গেলো।কারন তানিম দাঁড়িয়ে আছে গেটে।কার সাথে যেনো গল্প করছে।অতশী কি করবে এখন বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ তানিম পিছন ফিরতেই অতশীকে দেখে ফেললো।তানিম ও অবাক।অতশী একাই এসেছে!তার মানে অতশী বিশ্বাস করছে না তাকে!
অতশী নিজেই এগিয়ে গেলো তানিমের কাছে।গিয়ে দেখে তানিমের সাথে যে লোকটি দাঁড়িয়ে আছে তিনি মৌরির আব্বু।
অতশী দেখামাত্র বললো,আসসালামু আলাইকুম আংকেল?
–মা তুমি এখানে?
–অতশী কথাটা বলতে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। আংকেল কি ভাববে কে জানে?কিন্তু চুপ করে থাকলে আবার অন্যকিছু ভাববে। সেজন্য বললো,আংকেল আমার ভাইয়া জেলে আছে।
–সো স্যাড।কি জন্য জেলে গেছে?বলতে পারো আমাকে।

তানিম তখন বললো,স্যার, যাকে নিয়ে কথা হচ্ছে সেই অয়নের বোন এটা।
–ও,,,।তা আগে বলবা না?এই বলে মুহিব সাহেব তানিমের থেকে বিদায় নিলেন। আসছি আমি।কাল কথা হবে।
–জি স্যার।

মুহিব সাহেব চলে যাওয়ার সাথে সাথে তানিম বললো, তুমি চেনো স্যার কে?
অতশী মাথা নাড়িয়ে বললো হুম।আংকেলের দুই ছেলেকে আমি প্রাইভেট পড়াই।
তানিম শোনামাত্র ভীষণ রেগে গেলো।কি বলছো এসব অতশী?তুমি টিউশনি কবে থেকে শুরু করেছো?
–এই তো কিছুদিন হলো?
–তোমাকে কে বাহিরে বের হতে বলেছে?অয়ন শুনলে কত রাগ হবে একবার ভেবে দেখেছো?
অতশী তানিমের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উলটো তানিম কেই জিজ্ঞেস করলো,
আংকেল কে আপনি চেনেন?
–আগে চিনতাম না।কিছুদিন হলো চিনি।উনি একজন নামকরা এডভোকেট। অয়ন কে মুক্ত করার জন্য অনেক হেল্প করছেন।কথাগুলো বলেই তানিম ও চলে গেলো।
অতশী বুঝতে পারলো এভাবে একা একা এখানে আসায় তানিম মন খারাপ করেছে।
সেজন্য অতশী বললো,তানিম ভাইয়া দাঁড়ান।আসলে কাল রাতে কে জেনো বাসায় ঢুকেছিলো,সেজন্য সবাই ভীষণ টেনশনে আছে।সেজন্য ভাবলাম একটু ভাইয়াকে দেখে যাই।একদিনও দেখা করতে পারলাম না।আজ যদি পাই।
তানিম সেই কথা শুনে বললো, কে ঢুকেছে বাসায়?
কিভাবে ঢুকলো?
–জানি না।
–আমাকে একবারের জন্যও কেউ বললে না।আমাকে তোমরা এতো পর ভাবো কেনো?
–না মানে,,,,,
–আচ্ছা ঠিক আছে।এর পর থেকে সাবধানে থেকো।
আমিও দেখা করতে গিয়েছিলাম অয়নের সাথে,আজও দেখা করতে দিলো না আমাকে
তুমি যাও, চেষ্টা করে দেখো পারো কিনা?।

অতশী তানিমের কথা শুনে আর ভিতরে গেলো না।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।

তানিম তখন বললো, এখন কি ভার্সিটিতে যাবে?না বাসায়?
–ভার্সিটিতে।
–চলো পৌঁছে দিয়ে আছি।এই বলে তানিম তার বাইকে গিয়ে বসলো।অতশী এখন কি করে?মুখের উপর নাও করতে পারছে না?সেজন্য চুপচাপ সেও গিয়ে বসলো।

তানিম অতশীকে নিয়ে একবারে তার ডিপার্টমেন্টের সামনে রেখে আসলো।অতশী বার বার বললো,ভাইয়া গেটেই নেমে দিন।কিন্তু তানিম শুনলো না সেটা।
অতশীকে নেমে দিয়েই তানিম চলে গেলো।

অতশী নেমেই ইভান কে খুঁজতে লাগলো।বেচারা আবার দেখলো নাকি?দেখলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে!
অতশী তাকিয়ে দেখলো ইভান সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে যেখানে সে রোজ রোজ দাঁড়িয়ে থাকে।
অতশী ইভানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।আর মনে মনে ভাবলো,বেচারা নিশ্চয় মনে মনে ফুলছে।
ইশঃ আমি তো এটাই চাই।ও যত জ্বলবে ততো তাড়াতাড়ি সত্য টা প্রকাশ করবে।এই বলে অতশী তার ক্লাস রুমে চলে গেলো।

অতশী ক্লাসে গিয়ে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছিলো না।সে শুধু ভাবছে কখন ক্লাস শেষ হবে আর কখন সে ইভানের সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাবে!
কারন আজ ইভানের রিয়েকশন দেখেই বোঝা যাবে আসলে ইভান তাকে সত্যি ভালোবাসে কিনা!

ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে অতশী ইভানের সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে গেলো।অতশী ভাবছে ইভান তাকে দেখছে।
কিন্তু না!ইভান তার ফ্রেন্ডদের সাথে গল্প করছে।
কি হলো এটা!ইভানের কোনো রিয়েকশন ই তো বোঝা গেলো না।সেজন্য অতশী আবার ফিরে এলো।কিন্তু এবারও ইভান সেই আগের মতোই গল্প করছে।
অতশী সেজন্য রাগ করে এবার চলেই যেতে ধরলো।হঠাৎ ইভান তাকে ডাকতে লাগলো।অতশী!দাঁড়াও।

ইভানের ডাক শুনে অতশী মনে মনে ভাবলো কাজ হয়ে গেছে আজ।নিজের থেকে যখন ডাকছে তাহলে কিছু তো বলবেই!সেজন্য সে আর দেরী না করে ইভানের কাছে চলে গেলো।আর একটা ভাব নিয়ে বললো,ডাকলেন কেনো আমাকে?

–আমি?আমি কখন ডাকলাম?
–আমি শুনলাম তো অতশী অতশী বলে ডাকলেন!

হঠাৎ পিছন দিক থেকে নেহা বললো,এই অতশী!কত করে ডাকলাম শুনছিস না কেনো?

অতশী নেহার কথা শুনে একেবারে তাজ্জব লেগে গেলো।নেহা ডেকেছে তাকে আর সে ইভানের কন্ঠ শুনতে পেলো!এটা কি করে সম্ভব!
ইভান তখন বললো, ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?বিশ্বাস হলো যে আমি ডাকি নি।তোমার বান্ধুবী ডেকেছে।
আগে ভাবতাম মাথায় প্রবলেম আছে!এখন দেখছি তোমার কানেও সমস্যা!

#চলবে,,,,,,,,
কেমন হচ্ছে গল্পটা অবশ্যই জানাবে।