#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_১৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
কি ব্যাপার বান্ধুবী! আজ এতো চুপচাপ কেনো?আমার সাথে কথা না বলেই চলে যাচ্ছো যে?মন খারাপ?
মৌরির কথা শুনে অতশী দাঁড়িয়ে গেলো।সত্যি সত্যি আজ তার ভীষণ মন খারাপ।একদিকে ইভানের এমন লুকোচুরি খেলা ভালো লাগছে না।অন্যদিকে তানিমের সাথে বিয়ে দেওয়া নিয়ে সবাই উঠে পড়ে লেগেছে।
আজ অতশী ভার্সিটি থেকে বাসায় আসতেই তার আম্মু একটা শাড়ি হাতে দিয়ে বললো, ড্রেস চেঞ্জ করে এই শাড়ি টা পড়ে নে।
অতশী অবাক হয়ে বললো,শাড়ি?কেনো পড়বো?
আম্মু শাড়িটা তখন বিছানার উপর রেখে বললো,
–তানিমের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করা হইছে।ওরা কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে।
–মানে কি আম্মু?কি বলছো এসব?
আম্মু তখন বললো তাহলে কি করবো এখন আমরা?তোর নিরাপত্তা কে দেবে?সেদিন সন্ত্রাসী রা উঠিয়ে নিয়ে গেলো,কাল কে যেনো ঘরে ঢুকেছিলো,এরপর যদি আরো খারাপ কিছু হয়?
–তাই বলে তানিম কে এখন বিয়ে করতে হবে?তানিমের সম্পর্কে কত টুকু জানো তোমরা?তানিম যেটা বলছে তোমরা সেটাই শুনছো কেনো?
–তুই এতো বেঈমান কি করে হলি?তানিম অয়ন কে জেল থেকে বের করার জন্য কত চেষ্টা করছে!আর আমাদের কে এতোদিন তার বাসায় কত আদর যত্নে রাখলো।তারপরও কি করে এটা বলতে পারলি?আমি যেটা বলছি সেটাই কর।তাড়াতাড়ি শাড়ি টা পড়ে নে।
এই বলে অতশীর আম্মু চলে গেলো।
অতশী কাঁদতে কাঁদতে তার দাদীর রুমে চলে গেলো।দাদী?কই তুমি?
–কি হইছে?
–কি হইছে মানে?তোমরা কি শুরু করেছো এসব?
–আমি কি বলবো?তোর মাকে গিয়ে ধর।
–ভাইয়া আসলে তারপর না হয় বিয়ে টা দিও।এখন প্লিজ অফ করো এসব।
হঠাৎ অতশীর আম্মু রুমে প্রবেশ করলো।আর বললো, বিয়ে অফ করলাম ঠিক আছে।মানুষের মুখ অফ করবি কিভাবে?ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না।
–কই আমাকে তো কেউ কিছু বলে না।আর বললেই বা কি?মানুষের কথায় কি যায় আসে?
অতশীর আম্মু সেই কথা শুনে বললো আম্মা ওরে বুঝাও একটু।আজ সকালে কি কি হইছে শুনাও একটু।সবাই কিভাবে আমাকে অপমান করেছে সেটা ভালো করে বলো ওকে।এই বলে অতশীর আম্মুও কাঁদতে লাগলো।
অতশী সেই কথা শুনে তার দাদীকে বললো,কি হয়েছে দাদী?
অতশীর দাদী তখন বললো, পাশের বাসার রুহির মা নাকি প্রায় দিনই আমাদের বাসা থেকে কোনো ছেলেকে বের হতে দেখে।কাল রাতেও দেখেছেন। আজ ও নাকি ছেলেটাকে তিনি প্রাচীর থেকে লাফ দিতে দেখেছেন।সেই কথা বলার জন্য এসেছিলো।সাথে আরো কিছু কথা শুনিয়ে দিয়ে গেলো।তোর মা তো রাগে ফায়ার হয়ে গেছে সেসব কথা শুনে।
–এখন কেউ যদি আমার দূর্নাম রটানোর চেষ্টা করে সেটা কি আমার দোষ! তাছাড়া অয়ন ভাইয়া তানিমের সাথে কিছুতেই বিয়েতে রাজি ছিলো না।তারপরও কেনো এমন করছো?
অতশীর আম্মু তখন বললো, তাছাড়া আর কে করবে তোকে বিয়ে?কেউ করবে না।বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
অতশী তখন তার আম্মুকে বললো, আম্মু ঠিক আছে। আমি তানিম কেই বিয়ে করবো।কিন্তু আজকেই নয়।কয়েকদিন সময় দাও আমাকে।
অতশী গভীর চিন্তায় মগ্ন।মৌরি তখন অতশীর হাত ধরে বললো,এই মেয়ে!কই হারালে এভাবে?
অতশী মৌরির ডাক শুনে বর্তমানে ফিরে এলো।
মৌরি তখন বললো কেমন যেনো চিন্তিত দেখাচ্ছে তোমাকে?কি হয়েছে বলো আমাকে!
–কিছু না।এমনিতেই।আচ্ছা আংকেল কিছু বলেছে বাসায়?
–কি বলবে?
অতশী তখন বললো, আসলে আমার ভাইয়া জেলে আছে। আজ দেখতে গিয়েছিলাম তখন আংকেলের সাথে দেখা হইছিলো।আংকেল দায়িত্ব নিয়েছে কেসটার।
–ও তাই?তাহলে তো খুব ভালো।আব্বু কখনোই কোনো কেসে হারেন না।
–সত্যি বলছো?তাহলে তো ভাইয়া শীঘ্রই ছাড়া পাবে।
–অবশ্যয় ছাড়া পাবে।তুমি চিন্তা করো না।
অতশী তখন বললো, এর চেয়েও বড় একটা চিন্তা আছে।
–কি চিন্তা?
–বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে প্রচুর।
–তাহলে তো ভালো কথা।বিয়ে করে নাও।
–আমার ভালো লাগে না ছেলেটাকে।তাছাড়া অন্য আরেকজন,,,,,,,
মৌরি সেই কথা শুনে বললো, ও বুঝেছি! তোমার পছন্দের কেউ আছে।
–হ্যাঁ।অনেক ভালো লাগে তাকে। আমার মনে হয় সেও আমাকে পছন্দ করে।রোজ রোজ আমার ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।অতশী আজ সব কাহিনী শেয়ার করলো মৌরির সাথে।
মৌরি তখন বললো তাহলে, সে যখন তোমাকে নিজের মুখে কিছু বলছেই না তুমিও বলো না কিছু।
তুমিও তাকে এড়িয়ে চলো। তুমি যখন ওর পিছু পিছু ঘুরবে,ওকে পাত্তা দিবে,সে তো তোমাকে ইগনোর করবেই।
অতশী মৌরির কথা শুনে বললো,সে যদি ওই আগের মতোই তার ইগো নিয়ে থাকে তাহলে কি হবে?
–কি আর হবে?তাকে ভুলে যাবে।যার সাথে বিয়ে ঠিক হইছে তাকেই বিয়ে করবে।
–আমার বান্ধুবীরাও এই পরামর্শই দিয়েছে।কিন্তু যার সাথে বিয়ের কথা চলছে তিনি আমার ভাইয়ার বন্ধু।আর প্রচুর মিথ্যাবাদী। আমার উনি যে চিরকুট গুলো পাঠায় সেটা নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে।সবকিছু জেনেও কি করে ওনাকে বিয়ে করি!
–তুমি কি সিওর!চিরকুট তোমার উনিই পাঠিয়েছে।
–না।এখনো বুঝতে পারছি না কিছু।আমার ধারনা উনিই হবেন।কারন উনি আমাকে ছদ্মবেশে এসে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।ভালো না বাসলে এতো বড় রিস্ক কেনো নিলেন তিনি!
–তোমার কথা শুনে আমারই মাথা ঘুরছে অতশী।তবে আমি একটা বুদ্ধি দেই শোনো।তুমি বিয়ে তে রাজি হয়ে যাও।আর তোমার বিয়ের কথা ওনাকে জানিয়ে দাও। উনি তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসলে কখনোই অন্যখানে বিয়ে দিতে দেবে না।
–কিন্তু উনি যদি না আসে।তখন কি হবে?
–তখন বুঝবে সে তোমাকে ভালোবাসে না।ভাগ্য কে মেনে নিয়ে তাকেই বিয়ে করবে যার সাথে বিয়ের কথা চলছে।
অতশী মৌরির সাথে তার সব কথা শেয়ার করে কিছুটা হালকা হলো।সে তার ভাগ্য কে মেনে নিয়ে বাসায় বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিলো।
তানিম এই কথা শোনার পর আর কিছুতেই দেরী করলো না।সে এতোদিন ভেবেছিলো বিয়ে টা চুপচাপ করে করবে।কিন্তু এখন অতশী রাজি হওয়ার কথা শুনে তার সিদ্ধান্ত পালটিয়ে ফেললো।একদম ধুমধামে বড় করে অনুষ্ঠান করে অতশী কে বউ করে নিয়ে আসবে।বিয়ের জন্য কার্ড ও ছাঁপা হলো।
অবশেষে তানিমের মনের আশা পূরণ হলো। সে জানে অয়ন থাকলে কখনোই সে অতশীকে পাবে না।সেজন্য অয়ন কে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে।কারন অয়ন আর তমালের মারামারির ভিডিও তানিমই ভাইরাল করেছে।তানিম অতশীকে পাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত বন্ধুর সাথে প্রতারণা করলো।অয়ন নিজেও জানে না এসব তানিমের জন্যই হয়েছে।আবার অতশীদের বাসায় এসব লোক তানিমই পাঠাতো। যাতে সবাই অতশীর নামে আজেবাজে কথা বলে।আর অতশীর আম্মু তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে।অয়নের মা তানিম কে পুরোপুরি বিশ্বাস করেছে।সেজন্য তানিম যা যা বলছে সেটাই করছে।অতশী কিছুটা টের পেলেও তানিমের জন্য কিছুই করতে পারে নি।তানিম বুঝতে পেরেছে অতশী একা একা জেলে আসবে অয়ন কে দেখার জন্য।সেজন্য সে সেদিন দিয়ে উকিল ঠিক করেছে।এতোদিন কোনো ব্যবস্থা করে নি।যার জন্য অয়ন ছাড়া পাচ্ছে না।
কাল অতশীর বিয়ে।সেজন্য অতশী তার ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করার জন্য ভার্সিটিতে চলে গেলো।তানিম অতশীকে একা একা যেতে দিতে রাজি হলো না।কিন্তু অতশী আজকের দিন টা নিজের মতো করে কাটাবে বলে একা একা বের হলো।
অতশী ভার্সিটিতে গিয়ে সবার আগে তার বান্ধুবীদের ইনভাইট করলো।কেউ খুশি নয় এ বিয়ে তে।অতশীর মন খারাপ দেখে তার ফ্রেন্ডরাও ভীষণ চিন্তিত।
নেহা তখন বললো,আমি কি একবার ইভান ভাইয়া কে বলে দেখবো?
–না।তার আর প্রয়োজন নাই।
সুইটি তখন বললো বলেই দেখি না একবার।যে বিয়ে তে তোর মন সাড়া দিচ্ছে না কেনো করছিস সে বিয়ে!
–তোরা বুঝবি না আমার প্রবলেম!
লিশা কোনো কথা না বলে উঠে যেতে ধরলো। কারন সে ঠিক করেছে ইভান কে একবার বলেই দেখবে।
অতশী তখন লিশাকেও থামিয়ে দিলো।সে বললো,তোদের কাউকে কিছু বলতে হবে না।আমি কার্ড নিয়ে এসেছি।বিয়ে তে দাওয়াত দিবো।এই বলে অতশী চলে গেলো ইভানের কাছে।তার সাথে সাথে নেহা,লিশা আর সুইটিও গেলো।
ইভান কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছিলো।অতশী সেজন্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।এদিকে নেহা আর শুভ্রর মধ্যে আই কন্টাক্ট হচ্ছে।শুভ্র কিছুটা দূর্বল হয়েছে নেহার প্রতি।সেদিন নেহার গান শুনে মেয়েটার প্রতি তার ভালোলাগা শুরু হয়।দিশান আবার লিশার ডান্স দেখে পুরাই ফিদা হয়েছে।কিন্তু লিশার যে বয়ফ্রেন্ড আছে তা সবাই জানে।লিশার দিকে ওভাবে তাকানো দেখে সুইটি বললো,দিশান ভাইয়া কেমন আছেন?
দিশান কথাটা শুনে একদম চমকে উঠলো। সে থতমত খেয়ে বললো জ্বি ভালো।
এদিকে ইভান কথা বলেই যাচ্ছে।বলেই যাচ্ছে।অতশী সেজন্য রাগ করে ইভানের তিন বন্ধুকে তিনটা কার্ড দিয়ে বললো, ভাইয়া আপনাদের দাইয়াত রইলো।কাল আমার বিয়ে।অবশ্যই আসবেন।
ইভানের বন্ধুরা বেশ খুশি হলো।বিশেষ করে শুভ্র।সে কার্ড টা হাতে নিয়ে বললো,অবশ্যই জাবো।অতশী তখন আরেকটা কার্ড বের করে বললো,এটা ইভান ভাইয়াকে দিয়ে দিয়েন।উনি যে ব্যস্ত!এই বলে অতশী চলে গেলো।
হঠাৎ ইভান অতশীকে ডাকতে লাগলো।এই যে!যাচ্ছো কেনো?ভালোভাবে দাওয়াত দিয়ে যাও।
অতশী তখন দাঁড়িয়ে গেলো।আবার ইভানের কাছে ফিরে গেলো।
ইভান বিয়ের কার্ড টা হাতে নিয়ে বললো,নিশ্চয় পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হচ্ছে!
অতশী তার বান্ধুবীদের দিকে তাকিয়ে বললো,হ্যাঁ।পছন্দের মানুষের সাথেই হচ্ছে।আসলে ভালো লাগতো।ভার্সিটির বড় ভাই বলে কথা।
ইভান বেশ মনোযোগ দিয়ে কার্ড টা দেখতে লাগলো।তারপর বললো,ধন্যবাদ ইনভাইট করার জন্য।বাট যেতে পারবো না। কাল গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে।
ইভানের কথা শুনে শুভ্র বললো,দোস্ত না করিস না।কালকের কাজটা ক্যান্সেল করে দে।
–না কোনো কাজ ক্যান্সেল হবে না।তোরা চাইলে যেতে পারিস। আমি আমার কাজ একাই সামলিয়ে নিতে পারবো।
অতশী সেই কথা শুনে বললো, হ্যাঁ পারবেন ই তো।যে লোক চোখের পলকে পাঁচজন কে একবারে শুট করতে পারে তার কাছে সবই সম্ভব!
এই বলে অতশী চলে যেতে ধরলো। ইভান অতশীর মুখে এরকম কথা শুনে বললো, কি বললা তুমি?পাঁচজন কে শুট করেছি মানে!কি সব উল্টোপাল্টা বলছো।
অতশী তখন বললো, আমি যা দেখেছি সেটাই বললাম।এই বলে অতশী চলে গেলো।
এদিকে শুভ্র,নিলয় আর দিশান ইভানের দিকে তাকিয়ে রইলো।ইভান তখন বললো,আমি কি এমনি এমনি বলি এই মেয়েটা পাগল!আসলেই পাগল।কাকে বুঝি দেখেছে।সেটা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে!
শুভ্র তখন বললো দোস্ত আগেই বলেছি এই মেয়ের থেকে দূরে থাক।একদিন অনেক বড় সর্বনাশ করে ফেলবে।
ইভান সেই কথা শুনে বললো,বাদ দে তো।ওর মুখের কথা কে বিশ্বাস করবে?আর আমি কি সত্যি সত্যি শুট করেছি নাকি যে ভয় পাবো!
#চলবে,,,,