#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৩১_ও_৩২
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
হসপিটালের করিডোরে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে বসে আছে অতশী।মুখে কোনো কথা নেই।কাঁদতে কাঁদতে এখন চোখের জল একদম শুকিয়ে গেছে।চোখ দুটো শুধু অপেক্ষা করছে ইভান কে এক নজর দেখার জন্য।কিন্তু একটিবারের জন্যও কেউ দেখতে দিচ্ছে না তাকে।
এই হসপিটালেই সকল আহতের আনা হয়েছে।আর পুরোদমে সবার চিকিৎসা চলছে।
এদিকে অয়নের আম্মু অয়ন কে দেখার জন্য চিৎকার করে করে বলছে, আমার ছেলে কই?আমার ছেলেকে এনে দাও।আমার ছেলেকে কই রেখেছো?
অয়নের মায়ের এমন পাগলামি দেখে সবাই অয়নের মাকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো।
কিন্তু অয়নের মা তবুও গেলেন না।
অয়ন সন্ত্রাসী বলে তার প্রতি কারো কোনো আগ্রহ নেই।অয়নের লাশ কোথায় আছে কেউ সেটা বলতে পারছে না।
হঠাৎ অতশীর আম্মু অতশীকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে ধরলো।
অতশী তখন বললো, আম্মু কই নিয়ে যাচ্ছো এভাবে?
–কই নিয়ে যাচ্ছি মানে?আমাদের বাড়িতে।তুই এখানে কিছুতেই থাকতে পারবি না।এই বিশ্বাসঘাতক টার আশেপাশে তোকে দেখতে চাই না আমি।
–কি বলছো এসব?প্লিজ আম্মু ইভান কে ভুল বোঝো না।ওকে একটু সুস্থ হতে দাও।তারপর যা মন চায় সেটাই করিও।প্লিজ আম্মু তুমি একটু শান্ত হও।
অতশীর আম্মু তখন বললো,তুই আমাকে শান্ত হতে বলছিস?আমার ছেলে মারা গেছে, আমি কিভাবে শান্ত হবো?
আর যে পরিকল্পনা করে খুন করলো তুই তারই পক্ষ নিচ্ছিস?তোর কি একটুও খারাপ লাগছে না?যে ভাই তোকে এতো ভালোবাসতো তার মৃত্যু তে তোর কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না?
অতশী তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,আম্মু আমারও খারাপ লাগছে।কষ্টে বুক টা ফেটে যাচ্ছে।কিন্তু কি করবো এখন আমি?ইভান সবার সামনে আমাকে বিয়ে করেছে।ধর্ম আর আইন অনুযায়ী আমরা এখন স্বামী স্ত্রী।সেই স্বামীকে এইভাবে রেখে কি করে যাবো?
অয়নের আম্মু তখন অতশীকে টেনেই হসপিটাল থেকে বের করলো আর বললো আমি মানি না এ বিয়ে। ইভানের মুখ দেখা তো দূরের কথা ওর ধারেকাছেও তোকে আসতে দেবো না।
অতশী শুধু বলছে,আমি যাবো না কোথাও।প্লিজ আমাকে যেতে দাও।কিন্তু অতশীর আম্মু সে দিকে কিছুতেই কান দিলেন না।
মৌরি এখন পর্যন্ত ঠিক হয় নি।তবুও অয়ন কে একনজর দেখার জন্য সেও এসেছে।
কিন্তু অয়ন এর লাশ তাকেও দেখালো না কেউ।সবার এক কথা বলতে পারলাম না।কোথায় আছে জানি না।
মৌরির মুখে কোনো কথা নেই। মৌরির আম্মু আর রিয়া মৌরিকে ধরে আছে।হঠাৎ মৌরি আম্মু অয়নের আম্মুকে দেখে কথা বলে উঠলো।আর দৌঁড়ে চলে গেলো ওনার কাছে।
মা একাই যাচ্ছেন কেনো?আমাকে নিয়ে যাবেন না?
অয়নের মা সেই কথা শুনে বললেন, থাকতে পারবে একা একা?যে বাড়িতে অয়ন নেই সেই বাড়িতে গিয়ে তুমি কি করবে?তাছাড়া খুনীর বোন তুমি,তোমার জায়গা আমার বাড়িতে নেই।
মৌরি সেই কথা শুনে অয়নের মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।আর বললো,মা প্লিজ আমাকে রেখে যান না।আমাকে নিয়ে চলুন। আমি আমার স্বামীর বাড়ি যেতে চাই।প্লিজ মা।
মৌরির আম্মু অনেক আটকানোর চেষ্টা করলো মৌরিকে।কিন্তু মৌরি কোনো কথা শুনলো না।সে অতশীর আম্মুর পাশে গিয়ে বসলো।
অতশীর আম্মু মৌরিকে আর কিছু বললেন না।তিনি ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললেন।আর সবাইকে কিছু না জানিয়ে সোজা অতশীর নানা বাড়ি চলে গেলেন।
অতশী সারাক্ষন শুধু ইভানের কথাই ভাবতে লাগলো।সে অনেক চেষ্টা করেও ইভানের কাছে যেতে পারলো না।সে তার আম্মুকে অনেক বোঝালো তবুও তার আম্মু কোনো কথাই শুনলো না।তার এক কথা ইভানের নাম তিনি আর শুনতে চান না।যদি অতশী আর কোনো দিন ইভানের নাম নেয় তাহলে তাকে সে নিজের হাতে খুন করে ফেলবে।শুধু অতশী না যেই ইভানের নাম নেবে তাকেই তিনি খুন করবেন।
অতশীর মা অতশীকে সবসময় কড়া নজরে রাখতে লাগলেন।যাতে অতশী পালিয়ে যেতে না পারে।
এইভাবে একমাস অতিবাহিত হলো।এই একটা মাসে অতশী একদিনও ইভানের কোনো খোঁজ নিতে পারলো না।সে কেমন আছে সেটাও জানে না।অতশীর নানার বাড়ি অনেক দূরে হওয়ায় অতশী ইভান কে দেখার কোনো সুযোগই পেলো না।অতশীর পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেলো।এমনকি সে তার বান্ধুবীদের সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করতে পারলো না।
একদিন অতশী আর মৌরি অতশীর নানার পুকুর পাড়ে বসে আছে আর নানা ধরনের গল্প করছে।অতশী আর মৌরির মধ্যকার সম্পর্ক আগে থেকেই ভালো ছিলো,কিন্তু এই এক মাসে তাদের বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়েছে।কারন তারা দুইজন এখন সবসময় একসাথে থাকে।আর তাদের দুঃখ কষ্টের কথা একে অপরের সাথে শেয়ার করে।
হঠাৎ এক ফেরিওয়ালা যাচ্ছিলো অতশীদের সামনে দিয়ে।অতশীরা কোনো গুরুত্ব দিলো না ফেরিওয়ালা টিকে।তবুও ফেরিওয়ালা টি ওদের সামনে গিয়ে বসলো আর জিজ্ঞেস করলো আপা আপনাদের কিছু লাগবে?
আমার কাছে সব ধরনের কসমেটিকস আছে।
এই বলে ফেরিওয়ালা টা কিছু লাল রঙের চুড়ি বের করলো।লাল টিপের পাতা,লাল রঙের লিপিস্টিক।এসব রঙিন জিনিস দেখামাত্র মৌরির চোখে জল চলে এলো।সে তার চোখের জল আটকাতে পারছিলো না।অয়ন মারা যাওয়ার পর থেকে মৌরি আর রঙিন কাপড় পড়ে না।সে বিধবা মহিলাদের মতো সবসময় সাদা ড্রেস পড়ে থাকে আর রঙিন পোশাক থেকে দূরে থাকে।
অতশী তা দেখে ফেরিওয়ালারটির কাছে চলে গেলো।আর তাকে বকতে লাগলো,
এই আপনাকে কে বলেছে এসব বের করতে?
আমরা কি বলেছিলাম বের করতে?
ফেরিওয়ালা টা সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে তার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো।
এদিকে মৌরি আর এক মুহুর্তও থাকলো না,তাড়াতাড়ি করে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো।
অতশী ফেরিওয়ালা কে আরো কিছু বকাঝকা করবে কিন্তু তিনি তার আগেই তিনি চলে গেলেন।
অতশীর দাদী মৌরিকে এভাবে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে দেখে নানা ধরনের প্রশ্ন করতে লাগলো।কিন্তু মৌরি কোনো উত্তর দিলো না।সে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।অতশীও পিছন পিছন চলে এলো বাড়িতে। তখন অতশীর দাদী অতশীকেও জিজ্ঞেস করলো। অতশী তখন বললো, কিছু হয় নি।এমনি কাঁদছে।
অতশীর দাদী বুঝতে পারলো মৌরি অয়নের কথা মনে করে কাঁদছে।এই অল্প বয়সে মেয়েটি স্বামী হারা হলো, অতশীর দাদী মৌরির এই কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারছেন না।তিনি মৌরির জন্য আফসোস করতে লাগলেন।তাই তিনি ঠিক করলেন মৌরিকে তার বাবা মার বাড়ি পাঠিয়ে দেবেন।এইভাবে মৌরির জীবন তিনি শেষ হতে দিতে পারেন না।ওর বাবা মা নিশ্চয় ভালো কোনো ছেলে দেখে আবার বিয়ের ব্যবস্থা করবে।
অতশীর দাদী মৌরির সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলে মৌরি ভীষণ রেগে গেলো।সে কিছুতেই তার বাবা মার বাড়ি যেতে চাইলো না।
তখন মৌরি অতশীকে দেখিয়ে বললো,আমার কষ্ট হচ্ছে সেটা সবাই বুঝতে পারছো কিন্তু অতশী যে ইভান ভাইয়াকে একনজর দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে,সে কেমন আছে তা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে সেটা আপনাদের চোখে পড়ছে না কেনো?তার স্বামী এখন কেমন আছে, সে সুস্থ আছে কিনা সেটা তো তার জানার অধিকার আছে!
মৌরির মুখে এমন কথা শোনামাত্র অতশীর আম্মু এলেন সেখানে।তিনি মৌরির উপর রাগ দেখিয়ে বললেন,আমার মেয়েকে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না মৌরি।সে তার ভাইয়ের খুনীকে কখনোই স্বামী মানে না।আর তুমিই বা কেমন বউ যে নিজের স্বামীর খুনীর কথা এখনো ভাবছো!
মৌরি সেই কথা শুনে বললো, মা আমার ভাই অয়ন কে খুন করেছে কিনা জানি না।আর যদি করেও থাকে সেটা সে নিজের ইচ্ছাই কখনোই করে নি।সে একজন সি আই ডি অফিসার।তার দায়িত্ব থেকেই এমন কাজ করতে হয়েছে তাকে।কিন্তু এজন্য আপনারা অতশীকে শাস্তি দিচ্ছেন কেনো?ওকে যেতে দিন ওর স্বামীর কাছে।
অতশীর আম্মু সেই কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলেন।আর বললেন,মৌরি চুপ করো এবার।আর কখনোই ওই প্রতারকের নাম মুখে নেবে না।ওর সাথে আমার মেয়ের কোনো সম্পর্ক নাই আর থাকতেও পারে না।নিজের স্বামীকে যদি একটু ভালোবেসে থাকো দয়া করে ওর নাম মুখে নেবে না।তাহলে আমার ছেলেটা ভীষন কষ্ট পাবে।তোমাকে তো এর আগেও বলেছি ইভানের নাম যেনো মুখে না নাও।তারপরও কেনো ইভানের নাম মুখে নিলে?পরবর্তীতে যদি ঐ নাম আরেকবার শুনি তাহলে আমার বাড়িতে থাকতে পারবে না বলে দিলাম।
অতশীর আম্মুর কথা শুনে মৌরি ভীষণ কষ্ট পেলো। সে তার রুমে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলো।
অতশী জানে তার আম্মু কখনোই আর ইভান কে বিশ্বাস করবে না।সেজন্য সে আর বলে না ইভানের কথা।
এক সপ্তাহ পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে মৌরির বাবা মা আসলো অতশীর নানার বাড়িতে।
ওনারা মৌরিকে নিয়ে যেতে এসেছেন। এই একমাস ধরে ওনারা অনেক খুঁজে বেড়িয়েছেন।কিন্তু কেউ বলতে পারে নি কই আছে তারা।অবশেষে অনেক খোঁজাখুঁজির পর মৌরির বাবা মা অতশীর নানার বাড়ি খুঁজে পেলো।
অতশীর আম্মু ইভানের বাবা মার সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তাদের সাথে দেখাই করলো না।তবে অতশী তাদের থেকে মুখ ফিরে নিতে পারলো না।সে যত টা সম্ভব তাদের আদর যত্ন করলো।মৌরি অনেকদিন পর তার বাবা মাকে দেখতে পেয়ে ভীষণ খুশি হলো।তবে যখন সে শুনলো তার বাবা মা তাকে নিতে এসেছে তখন মন টা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।কারণ সে তার বাবা মাকে ভালো করেই চেনে।হয় তো জোর করে আবার তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।
এদিকে অতশী শুধু সুযোগ খুঁজছে,কখন সে ইভানের ব্যাপারে জানতে পারবে।কিন্তু কেউই ইভানের সম্পর্কে জানতে চাইছে না,আর ইভানের বাবা মাও কিছু বলছে না।
হঠাৎ মৌরি জিজ্ঞেস করলো,
ভাইয়া কেমন আছে?
মৌরির বাবা মা ইভানের সম্পর্কে কিছু বলতে চাইলো না।তারা চুপ করে রইলেন।
মৌরি তখন বললো, কি হলো?উত্তর দিচ্ছো না কেনো তোমরা?ভাইয়া এখন কেমন আছে?
ইভানের মা তখন বললো, তুমি শুনে কি করবে?অসুস্থ ভাইকে রেখে চলে এসেছো,সে কেমন আছে তা জানার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করো নি।তাহলে এখন কেনো জিজ্ঞেস করছো তার কথা।
মৌরি সেই কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো।
মৌরিকে চুপ করে থাকা দেখে মৌরির বাবা বললো,ভালো আছে ইভান।এখন মোটামুটি সুস্থ হয়েছে।
এই কথা শোনামাত্র অতশী মনে হয় তার দেহে প্রাণ ফিরে পেলো।এই একমাস ধরে সে দোটানার মধ্যে ছিলো।সবসময় খারাপ চিন্তা হতো ইভান কে নিয়ে।সে এখন কেমন আছে তা জানার জন্য মন টা তার খুব ছটফট করতো। ইভান কে দেখতে না পেলেও বা তার কাছে যেতে না পারলেও ওর সুস্থতার জন্য দূর থেকেই প্রার্থনা করতো।তার সুস্থতা কামনা করতো।
মৌরি তার বাবা মার সাথে যাবে না দেখে ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকলো।মৌরির মা তখন অতশীকে বললো,তুমি একটু বলে দেখো অতশী।তুমি বললে নিশ্চয় সে যাবে।
অতশী জানে মৌরি কিছুতেই যাবে না কারন সে নিজেও অনেকবার বলেছে, তখন মৌরি পরিষ্কার বলে দিয়েছে এ নিয়ে যেনো সে দ্বিতীয় বার কোনো কথা না বলে।
অতশী তখন বললো আন্টি মৌরিকে আমি অনেক বুঝায়ছি,কিন্তু সে তবুও রাজি হয় নি।
আমি বললেও সে যাবে না।
হঠাৎ অতশীর আম্মু আসলো সবার সামনে।আর তিনি এসেই মৌরিকে ডাকতে লাগলেন।
মৌরি তার শাশুড়ীর ডাক শুনে বের হতেই তিনি বললেন, মৌরি তুমি তোমার বাবা মার সাথে চলে যাও। আর কখনোই এসো না এ বাড়িতে।
মৌরি সেই কথা শুনে বললো, না আমি যাবো না।প্লিজ মা আমাকে জোর করেন না।আমি আপনাদের সাথেই থাকতে চাই।
অতশীর মা সেই কথা শুনে বললো, আমি থাকতে দিবো না তোমাকে।সেদিন কিছু বলি নি কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি,তুমি আর কখনোই আমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।তুমি এখানে থাকলে তোমার বাবা মা আসা যাওয়া করবে,তাদের সাথে আবার ইভান ও আসবে।আমি ইভান কে দেখতে চাই না।তুমি বুঝতে পারছো আমার কথা!
মৌরির মা অতশীর মায়ের কথা শুনে মৌরির গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিলো।আর বললো,তুমি এতো নির্লজ্জ একটা মেয়ে সত্যি আমি ভাবতে পারছি না।যেখানে ওরা তোমাকে রাখতে চাচ্ছে না সেখানে তুমি কি করে থাকতে চাচ্ছো?
মৌরির বাবা আর এক মুহুর্তও দেরী করলো না।তিনি মৌরির হাত ধরে টেনে গাড়িতে নিয়ে গেলেন।মৌরি চিৎকার করে করে অতশীকে ডাকতে লাগলো।কিন্তু অতশী কিছুই বললো না।সে তার আম্মুকে শুধু একটা কথাই বললো,
আম্মু তুমি খুব বড় ভুল করছো।তুমি সবসময় নিজে যেটা বোঝো সেটাই করো।একবার একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবো। ইভান যদি অয়ন ভাইয়াকে ধরার জন্য তার সাথে বন্ধুত্ব করতো তাহলে সে আহত অবস্থায় আমাকে বিয়ে করার জন্য ছুটে আসতো না।অয়ন ভাইয়াকে ধরাই যদি ইভানের উদ্দেশ্য হতো তাহলে সে আমাকে কেনো বিয়ে করলো?সে তো ইচ্ছা করলে বিয়ে টা না করেই হাসপাতালে যেতে পারতো।তুমি প্লিজ ইভান কে ভুল বোঝ না।
অতশীর আম্মু কোনো উত্তর দিলেন না।
মৌরি চলে যাওয়ার পর অতশী একদম একা হয়ে গেলো।সারাক্ষণ একা একা তার একদম ভালো লাগছিলো না।মৌরির সাথে যোগাযোগ করার ও কোনো উপাই ছিলো না।
মৌরি না থাকায় অতশী আজ একা একাই পুকুর পাড়ে বসে থাকলো।
হঠাৎ সে একটা ফেরিওয়ালার গলার শব্দ শুনতে পেলো।লাগবে,চুড়ি ফিতা কানের দুল!লাগবে নাকি গলার মালা আর নাকের ফুল!
অতশী পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে সেই ফেরিওয়ালা টা।
ফেরিওয়ালা টা আজ আর দাঁড়ালো না।তিনি আওয়াজ করতে করতে হেঁটে চলে গেলেন।
অতশী আজ নিজেই ডাক দিলো ফেরিওয়ালা টিকে।কিন্তু ফেরিওয়ালা টি অতশীর ডাক শুনেও দাঁড়ালো না।অতশী তখন বললো,আজব মানুষ তো!ডাকলাম তবুও দাঁড়ালো না।এই যে শুনছেন?
অতশীর ভীষণ রাগ হতে লাগলো। তাই সে আর ডাকলো না লোকটিকে।অতশী সেজন্য বাড়ির মধ্যে চলে গেলো।
সন্ধ্যাবেলা কারেন্ট না থাকায় ভীষণ গরম লাগছিলো।সেজন্য অতশী আর তার দাদী বাহিরে চলে আসলো।অতশীর দাদী বিভিন্ন ধরনের গল্প করছে আর অতশী আনমনে তার দাদীর কথা শুনছে।সে কোনো কথা বলছে না।
হঠাৎ অতশী খেয়াল করলো সেই ফেরিওয়ালা পুকুর পাড় থেকে কিছুটা দূরের সেই বাঁশঝাড়ের দিকে চলে যাচ্ছে।অতশী যতটুকু জানে এই বাঁশঝাড়ের মধ্যে কোনো লোক যায় না।কারণ দিনের বেলাতেও বাঁশঝাড় টি ভীষণ ঘুটঘুটে অন্ধকার।আর সন্ধ্যার সময় তো ভুল করেও কেউ ঢুকবে না।অতশী বুঝতে পারলো না কিছু।কারন লোকটি তো অনেকক্ষন আগে চলে গিয়েছে। তাহলে এতোক্ষন দিয়ে কেনো বাঁশঝাড়ের মধ্যে ঢুকছে।এতোক্ষন তাহলে ফেরিওয়ালা টা কোথায় ছিলো?
অতশীর শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।সে তখন তার চোখ ডলা দিয়ে আবার তাকালো।হ্যাঁ সেই ফেরিওয়ালা টাই।অতশী তখন তার দাদীকে বললো দাদী ঐ বাঁশঝাড়ের দিকে একটু তাকাও তো।কাউকে কি দেখতে পারছো?
দাদী তখন বললো, চশমা ছাড়া আমি দিনের বেলাতেই দেখতে পারি না,আর এই সন্ধ্যার সময় কিভাবে দেখতে পাবো?
অতশী যখন দেখলো ফেরিওয়ালা টা একদম বাঁশঝাড়ের মধ্যে ঢুকে গেলো তখন সে আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তার দাদীর হাত ধরে টেনে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো।
অতশী ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।তার চোখের সামনে বার বার শুধু ঐ বাঁশঝাড়ের দৃশ্যই ভেসে উঠতে লাগলো।অতশী আজ আর একা একা রুমে থাকলো না।তার দাদীর সাথে এক রুমে থাকলো।
পরের দিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইভান আসলো অতশীর নানা বাড়িতে।
ইভান কারো সাথে কোনো কথা বললো না।সে বাড়ির মধ্যে ঢুকেই সোজা অতশীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে ধরলো।
ইভান কে দেখে কারো মুখে কোনো কথা নেই।কারণ কেউ ভাবতেই পারে নি এতোকিছুর পর ইভান নিজে আসবে এই বাড়িতে।
অতশী শুধু হা করে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে।কারণ তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না ইভান তাকে নিতে এসেছে।সে ইভান কে সুস্থ সবল অবস্থাতে দেখে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।
এদিকে অতশীকে এভাবে নিয়ে যাওয়া দেখে অতশীর নানা,মামা সবাই এগিয়ে আসলো ইভানের কাছে।আর এক ঝটকায় ইভানের হাত থেকে কেড়ে নিলো অতশীকে।আর বললো,তোমার এতো বড় সাহস হয় কি করে?তুমি কোন শাসনে অতশীকে নিয়ে যাচ্ছো?
ইভান তখন কিছু কাগজ বের করে অতশীর নানার হাতে দিলো আর বললো,কাগজ গুলো ভালো করে পড়ুন।তারপর আমার সাহস নিয়ে প্রশ্ন করুন।এই বলে ইভান অতশীকে গাড়িতে বসালো।অতশী সেই আগের মতোই চুপ করে রইলো।
হঠাৎ অতশীর মা দৌঁড়ে এসে কাগজগুলো ছিঁড়ে ফেললো,আর বললো,অতশীকে নামিয়ে দাও ইভান।আমি তোমার এই বিয়ে মানি না।আমার ছেলের খুনী তুমি।তোমাকে আমি এখন সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করি।তুমি সি আই ডি অফিসার দেখে এভাবে গায়ের জোর খাটাতে পারো না।আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও।
ইভান তখন বললো,আমি কোনো গায়ের জোর খাটাচ্ছি না।আমি আমার বউকে নিয়ে যাচ্ছি।আপনি নিজেই বাড়াবাড়ি করছেন।
হঠাৎ গ্রামের কিছু লোক লাঠি নিয়ে ইভানের গাড়ির সামনে দাঁড়ালো।আর চিৎকার করে বললো নামিয়ে দাও অতশীকে।এভাবে জোর করে তুমি কোনো মেয়েকে তুলে নিয়ে যেতে পারো না।
ইভান সবার কথা শুনে হাসতে লাগলো।সে কোনো কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
ইভানের এমন সাহস দেখে অতশীর নানা বললো,আমরা কিন্তু সিরিয়াস ইভান।বেশি বাড়াবাড়ি করলে গাড়ি একদম ভেংগে ফেলবো।আর তার সাথে তোমাকেও মারতে মারতে বের করে দেবো গ্রাম থেকে।
অতশী তার নানার কথা শুনে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।যদি তারা সত্যি সত্যি ইভানের উপর এট্যাক করে!যদি ইভানের কোনো ক্ষতি হয়!
সেজন্য অতশী ইভান কে বললো, আপনি চলে যান প্লিজ।আর আমাকে যেতে দিন।যাবো না আমি আপনার সাথে।
ইভান সেই কথা শুনে বললো, তোমার বিচার পরে করছি।তার আগে এই লোকগুলোরে একটু সাইজ করি।এই বলে ইভান গাড়ি থেকে নামলো।
চলবে,
গল্প দেরী করে দেওয়ার জন্য খুবই দুঃখিত আমি।আমার এক্সামের কারনে দিতে পারি নি।
অনুভবে_তুমি
পর্ব_৩২
মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
ইভান বন্দুক বের করার সাথে সাথে সবার বাহাদুরি শেষ হয়ে গেলো।কেউ আর ভয়ে সামনে এগিয়ে আসলো না।ইভান তখন বললো, কি হলো সবার?থেমে গেলেন কেনো?সামনে আসেন।গাড়ি ভাংবেন না?আসেন কাছে।আমাকে আঘাত করেন।আপনারা মুরুব্বি বলে এতোক্ষণ চুপ করে ছিলাম।
ইভানের কথা শুনে সবাই সবার লাঠি সাথে করে নিয়ে দিলো এক দৌঁড়।কেউ আর ইভানকে কিছু করার সাহস পেলো না।
ইভান তা দেখে গাড়িতে গিয়ে বসলো।কিন্তু সে গাড়ি স্টার্ট দিতেই অতশীর দাদী সামনে আসলো।আর বললো,ইভান অতশীকে এভাবে জোর করে নিয়ে যাও না।অতশীর মায়ের মনের অবস্থা একবার বোঝার চেষ্টা করো।অয়ন কে হারিয়ে অতশীর মা একদম ভেংগে পড়েছে,এখন যদি কাছে অতশীও না থাকে তাহলে উনি একদম পাগল হয়ে যাবে।
ইভান সেই কথা শুনে বললো, দাদী এই কথা টা ভালোভাবে আগে বললে কি হতো?কিন্তু আপনারা সেটা না করে পুরো গ্রামের লোক জোগাড় করেছেন আমাকে এট্যাক করার জন্য।অতশী তো আমার বউ।ওর তো আমার কাছে থাকার কথা।কিন্তু সবাই এভাবে কেনো বাঁধা দিচ্ছেন?
দাদী তখন বললো, এতো কিছুর পরও তুমি অতশীকে কি করে বউ ভাবছো?তুমি এটা মানলেও আমরা মানবো না ইভান।
ইভান তখন বললো, এই এক মাস একবারের জন্যও অতশী আমাকে দেখতে যায় নি।আমি মরে গেছি নাকি বেঁচে আছি সে খোঁজও নেয় নি।আমি মাত্র সুস্থ হয়েছি।ইচ্ছা ছিলো অতশীর সাথে দেখা করবো না।ও যখন আমার অসুস্থতার সময়ই পাশে ছিলো না তাহলে সে কিসের বউ হয়।কিন্তু আসতে হলো আমাকে।দাদী প্লিজ বাঁধা দিয়েন না আর।অতশী এখানে থাকলে প্রবলেম হয়ে যাবে।আমি ওর সেফটির জন্যই ওকে নিতে এসেছি।যতই হোক বউ তো।একটা তো দায়িত্ব আছেই।ও দায়িত্বহীন হলেও আমি কিন্তু তেমন নই।এই বলে ইভান অতশীর দিকে তাকালো।
অতশী জানে ইভান তার উপর অনেক বেশি মন খারাপ করেছে।কিন্তু ইভান হয় তো এটা জানে না যে, সে তার আম্মুর কথা না শুনলে তার আম্মু তার সাথে কি কি করতে পারতো।অতশীর তো ইচ্ছা ছিলো ইভানের সাথে থাকতে।তার সেবা যত্ন করতে।কিন্তু তার আম্মু ছেলেকে হারিয়ে একদম পাগল হয়ে গিয়েছিলো এই পরিস্থিতিতে তার পাশে থাকাও ভীষণ দরকার ছিলো।ইভান হয় তো এটা কখনোই জানবে না সে তার কাছে যাওয়ার জন্য সব রকমের চেষ্টাও করেছে।কিন্তু তার আম্মু মাথায় হাত দিয়ে প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে যার জন্য অতশী আর ইভানের কাছে যায় নি।
অতশীর আম্মু হঠাৎ এগিয়ে এসে বললো,আমার বিন্দুমাত্র রুচি নেই তোমার সাথে কথা বলার।আর আমি কোনো তর্কও করতে চাই না।তোমাকে শুধু একটা কথা বলতে চাই তা হলো তুমি অতশী কে বউ হিসেবে মানলেও অতশী তোমাকে স্বামী হিসেবে মানে না।সে তার ভাই এর খুনীর সাথে কিছুতেই থাকতে চায় না।তুমি ওকে এভাবে জোর করে নিয়ে যেতে পারো না।
তুমি ওকে একটিবার জিজ্ঞেস করো।ও যদি যেতে রাজি হয় তখন আমি আর কিছুতেই বারণ করবো না।আজ আমিও দেখতে চাই অতশী আজ কাকে বেছে নেয়।তার মাকে না তার ভাই এর খুনীকে।
এই বলে অতশীর আম্মু অতশীকে গাড়ি থেকে নামালো।আর তাকে বললো,আমাদের মানসম্মানের ব্যাপার এটা অতশী।যদি তুই ইভানের সাথে চলে যাস তাহলে কিন্তু আর কখনোই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবি না।আজ আমিও দেখতে চাই তোর কাছে কে বড়?তোর মা না দুই দিনের ওই ছেলেটা।
অতশী তখন বললো, আম্মু কি বলছো এসব?আমি কখন বললাম ইভান কে আমি স্বামী হিসেবে মানি না?আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সে আমার স্বামী।তার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।তবে তুমি যেভাবে শর্ত দিচ্ছো আমি সেটা মানতে রাজি নই।আমার সবাইকে দরকার।আমি তোমাদের কেও চাই আর ইভানকেও।এভাবে শর্ত দিও না প্লিজ।
অতশীর আম্মু তখন বললো, না এভাবে বললে হবে না।একজন কে বেছে নিতে হবে।কারণ আমি আমার ছেলের খুনীর সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তার মুখ ও দেখতে চাই না।এই বলে তিনি অতশীকে টেনে এনে ইভানের সামনে দাঁড় করালো।
অতশী ইভানের দিকে তাকানোর সাহস ই পাচ্ছে না।সে আর কি কথা বলবে?তার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে।
–কি হলো বল?তুই আজ যেটা বলবি সেটাই হবে।
ইভান অতশীর উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে অতশীর হাত ধরে টেনে আবার গাড়িতে ওঠালো।আর সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট দিলো।এবার সে আর থামলো না।
এদিকে অতশীর আম্মু চিৎকার করে করে ডাকতে লাগলো। ইভান কি করছো এটা?গাড়ি থামাও বলছি।কিন্তু ইভান সেদিকে কোনো কান দিলো না।
অতশী তখন বললো, ইভান গাড়ি থামান।আম্মু চিৎকার করছে তো?প্লিজ ইভান!
কিন্তু ইভান অতশীর কথায় কান না দিয়ে এক টানে অতশীর নানার বাড়ির এলাকা ছেড়ে গেলো।
ইভান একদম চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে।
অতশী হঠাৎ বললো,
আমি জানি আপনি আমার উপর প্রচন্ড মন খারাপ করেছেন।আমার উপর ভীষণ রেগেও আছেন।আমাকে দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই,আর কথা বলার ইচ্ছা তো নাই ই।
যে স্ত্রী অসুস্থ হাজব্যান্ড এর পাশে না থেকে তাকে রেখে চলে আসে তার সাথে শুধু রাগ না আরো অনেক খারাপ ব্যবহার করা উচিত।তবুও কেনো নিতে এসেছেন?
ইভান অতশীর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।
অতশী তখন বললো,উত্তর দিচ্ছেন না কেনো?কথা বলুন।
ইভান তখন রাগ করে বললো, চুপচাপ বসে থাকো।একটা প্রশ্নও করো না।আমাকে প্রশ্ন করার তোমার কোনো অধিকার নাই।
অতশী সেই কথা শুনে বললো,কেনো নাই?আপনি তো তখন খুব বললেন আমি আপনার বউ। তাহলে কেনো আমি প্রশ্ন করতে পারি না?
ইভান সেই কথা শুনে রাগান্বিত লুকে অতশীর দিকে তাকালো।
অতশী তা দেখে চিৎকার করে বললো, আপনি যেভাবে রেগে আছেন মনে হচ্ছে আমি একাই শুধু অপরাধ করেছি।
কিন্তু আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন যে আপনি নিজেও একজন মারাত্মক অপরাধী।আপনি আমার ভাইকে সাহায্য করার কথা বলে তাকে মেরে ফেলেছেন।আমার ভাই এর সাথে প্রতারণা করেছেন।আপনিই আসল অপরাধী। তারপরও উলটো রাগ দেখাচ্ছেন কেনো?
ইভান সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, কে কার সাথে প্রতারণা করেছে সেটা সময়ই বলে দিবে।তোমাকে তা নিয়ে ভাবতে হবে না।তবে আমি ভেবেছিলাম তুমি হয় তো বিশ্বাস করবে আমাকে।কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে দিলে।তুমিও বাকি সবার মতো।
অতশী সেই কথা শুনে ইভানের হাত ধরে বললো, বিশ্বাস করুন ইভান। আমি আপনাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি।আমি জানি আপনি কখনোই আমার ভাইকে খুন করতেই পারেন না।কিন্তু আপনি সেটা সবার সামনে স্পষ্ট করে বলছেন না কেনো?কেনো চুপ করে আছেন?একের পর এক নিউজ হচ্ছে এ নিয়ে।তবুও আপনি কেনো চুপচাপ? যে খুন করলো ভাইয়াকে তাকে কেনো আড়াল করছেন?সামনে আনছেন না কেনো তাকে?
ইভান তখন অতশীর হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, দ্বিতীয় বার এ নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন করবে না।আমি আগেই বলেছি আমার কাজের ব্যাপারে নাক গলাবে না অতশী।কোন টা সঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা তোমার থেকে শিখতে হবে না।তুমি এতোদিনে হয় তো এটা জেনে গেছো আমি উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো কাজ করি না।
–তাহলে আমাকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য কি? নিশ্চয় কোনো উদ্দেশ্য আছে।আমাকে বউ এর মর্যাদা দিতে নিয়ে যাচ্ছেন না শাস্তি দিতে?
ইভান সেই কথা শুনে বললো,এই তো বুঝেছো!উদ্দেশ্য!অবশ্যই উদ্দেশ্য আছে।
তবে বউ এর মর্যাদা তোমাকে দিবো প্রশ্নই আসে না।তোমার প্রতি আমার মন একদম উঠে গেছে।আমি মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছি,তুমি একটিবারের জন্য আমাকে দেখতে আসো নি?আমার পাশে থাকো নি।তোমাকে আমি আগে আপনজন ভাবতাম।কিন্তু এখন ভাবি না।
–তাহলে এখন কি শাস্তি দেবেন বলে ঠিক করেছেন?মানে শাস্তির ধরন টা জানতে চাচ্ছি।
ইভান অতশীর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।অতশী বার বার জিজ্ঞেস করাতেও ইভানের মুখ দিয়ে আর একটা কথাও বের করাতে পারলো না।
ইভান অতশীকে নিয়ে সোজা তার বাড়িতে চলে গেলো।
অতশী কে দেখে সবাই ভীষণ অবাক!কারণ ইভান আজকেও জোর গলায় বলেছে সে অতশীকে কিছুতেই আনতে যাবে না।মৌরি অনেকবার রিকুয়েষ্ট করেছে তবুও ইভান শোনে নি।ইভানের বাবা মাও অনেকবার বলেছে,যা হবার হয়ে গেছে।এখন সব মিটমাট করে অতশীকে গিয়ে নিয়ে আয়।কিন্তু ইভান তা শুনে রাগ দেখিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
মৌরি অতশীকে দেখামাত্র তাকে জড়িয়ে ধরলো। আর কোনো কথা না বলে ইভানের রুমের দিকে নিয়ে যেতে ধরলো।কারণ মৌরির বিশ্বাস ই হচ্ছে না তার ভাই নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছে অতশীকে।তার মানে ইভানের রাগ কমে গেছে।
ইভান হঠাৎ মৌরিকে থামিয়ে দিলো,আর হাত দিয়ে মৌরির রুম দেখালো,ওই রুমে নিয়ে যা।এটা আমার রুম।
–কি বলছো এসব?তোমার বউ আমার ঘরে থাকবে কেনো?
ইভান তখন বললো,যা বলছি সেটাই কর।অতশীকে বাসায় আনার জন্য কান ঝালাপালা করে দিয়েছো সবাই।এখন নাও তোমাদের অতশীকে।
এই বলে ইভান বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
ইভানের আম্মু তখন এগিয়ে আসলো অতশীর কাছে।তিনি অতশীর হাত ধরে বললেন, আপাতত মৌরির রুমেই যাও অতশী।ইভানের রাগ থেমে গেলে এমনি সব ঠিক হয়ে যাবে।ও ভীষণ মন খারাপ করেছে তোমার উপর।সেজন্য এমন ভাবে বললো।
অতশী তখন বললো,আপনি তো নিজেও ছিলেন।আর দেখেছেনও। আম্মু কিভাবে আমাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে নিয়ে গেলো।আমি তো থাকতেই চেয়েছিলাম।এই বলে অতশী কাঁদতে লাগলো।
ইভানের আম্মু তখন বললো,ওসব কথা এখন বাদ দাও।যা হবার হয়ে গেছে।আর ইভান যদি নিজে না চায় তাহলে কারো শক্তি ছিলো না ওকে বাধ্য করাতে।সে যখন নিজের ইচ্ছাই এনেছে তোমাকে তাহলে বুঝে নাও সে এখনো তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসে।সে কারো কথা শোনার ছেলেই না।মেজাজ গরম আছে তো সেজন্য এমন করছে।তুমি প্লিজ আর ওকে ছেড়ে যেও না।
অতশী সেই কথা শুনে চুপ করে রইলো।সে শুধু ভাবছে এখন কি করা উচিত তার?একদিকে ইভান রেগে আছে অন্যদিকে তার আম্মু?কিভাবে সামলাবে সবাইকে?
অতশী কে এভাবে চুপচাপ থাকা দেখে মৌরি বললো,আম্মু মনে হয় আজও অনেক বাঁধা দিয়েছে তাই না?
অতশী মাথা নাড়লো।সে আর কিছু বললো না।
মৌরি তখন অতশীকে তার রুমে নিয়ে গেলো।
অতশী রুমে গিয়েই সব ভুলে মৌরির সাথে গল্পে মেতে উঠলো।সে মৌরিকে সেই ফেরিওয়ালার কথাও বললো।অতশী গল্প করেই যাচ্ছে।
কিন্তু মৌরি কেনো জানি অন্যমনস্ক হলো।
অতশী তা দেখে বললো, কি হলো ভাবি?কই হারিয়ে গেলে?
মৌরি তখন বললো,কিছু না।
অতশী তখন বললো,জানো ভাবি ফেরিওয়ালা টিকে কেনো জানি আমার ভীষণ চেনা চেনা লাগে।কার সাথে যেনো কিছুটা মিল খুঁজে পাই।
মৌরি সেই কথা শুনে অতশীর হাত ধরে বললো,তোমারও এমন মনে হচ্ছে!আমারও কিন্তু সেটাই মনে হচ্ছে।
অতশীও ভীষণ অবাক হলো।সে বুঝতে পারলো না দুইজনের কেনো এমন মনে হলো!
অতশী মৌরির রুমেই থাকলো।তবে সে অনেকবার ইভানের খোঁজ নিয়েছে।ইভান সেই যে বাসা থেকে বের হয়েছে এখন পর্যন্ত আসে নি।অতশী অনেক বার উঠে ইভানের ঘরের দিকে গিয়েছিলো।কিন্তু রুমের ভিতর ঢুকতে পারে নি।ইভান তার রুমে তালা লাগিয়ে চলে গেছে।
ফজরের আযান দিলে অতশী নামায পড়ার জন্য অযু করতে বের হলো।হঠাৎ সে খেয়াল করলো কেউ একজন বাসা থেকে বের হলো।এতো রাতে কে বের হলো!তাহলে কি ইভান এসেছিলো!কিন্তু কখন এসেছিলো?
পরে আবার ভাবলো হয় তো ইভানের বাবা নামায পড়ার জন্য মসজিদে গেলো।
ঠিক সেই সময় ইভানের বাবা জায়নামাজ হাতে নিয়ে তার রুম থেকে বের হলেন!
অতশীকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বললো,কি ব্যাপার অতশী!ঘুমাও নি?
অতশী তখন বললো, আংকেল নামায পড়বো।আপনি এতোক্ষণে বের হলেন?তাহলে কিছুক্ষণ আগে কে বের হলো?
ইভানের বাবা তখন বললো, এখনো আংকেল বলে ডাকছো!আজ থেকে বাবা বলে ডাকবে।
অতশী সেই কথা মুচকি একটা হাসি দিয়ে শুনে মাথা নাড়লো।
ইভানের বাবা তখন বললো,
কে বের হবে এতো রাতে? ইভান তো মনে হয় আজ ফেরেই নি।ছেলেটা মাত্র সুস্থ হয়েছে।কই একটু রেস্ট নিবে তা না করে মিশনে নেমে গেছে।
এই বলে ইভানের আব্বু মসজিদের দিকে চলে গেলো।
অতশী বুঝতে পারলো না কিছু।সে কি তাহলে ভুল দেখলো।
অতশী তার রুমের মধ্যে চলে গেলোও মন টা ভীষণ আনচান করতে লাগলো। সে কাকে দেখলো তাহলে!কিছুক্ষন পর হঠাৎ গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেলো অতশী।ইভান এতোক্ষনে বাসায় ফিরলো।
অতশী সেজন্য রুম থেকে বের হয়ে আসলো।আর ইভানের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
এদিকে ইভান তালা খুলে তার রুমে ঢুকলো।সে একটিবারের জন্য অতশীর দিকে তাকালো না।তার সাথে কোনো কথাও বললো না।ইভান রুমে ঢুকেই ঘরের দরজা লাগিয়ে দিতে ধরলো।
অতশী তখন বললো শুনুন একটু।একটা কথা বলার ছিলো।আগেই দরজা লাগাবেন না প্লিজ।ইভান তবুও দরজা লাগালো।
অতশী তা দেখে মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে যেতে ধরলো। হঠাৎ ইভান দরজা খুললো আবার।আর অতশী কে বললো,কি বলতে চাইছিলে?
অতশী মাথা নাড়িয়ে বললো কিছু না।
ইভান তখন দৌঁড়ে এসে অতশীর হাত শক্ত করে ধরে বললো, কিছু না মানে?মাত্র তো বললে কি যেনো বলবে!
–ভুলে গেছি।
এই বলে অতশী ইভানের থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নিলো।আর রুমে চলে গেলো।
চলবে,,,,