অনুভবে তুমি পর্ব-৩৫+৩৬

0
616

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৩৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

অতশী ইভানের খাবার প্লেট থেকে খেতেই আবার রুমে প্রবেশ করলো ইভান।কিন্তু সে তো বাহিরে গিয়েছিলো।অতশী ইভান কে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যেতেও দেখেছে।তাহলে আবার কেনো আসলো ইভান!
অতশী ইভান কে দেখামাত্র খাবারের প্লেট নিয়ে চলে যেতে ধরলো। ইভান তা দেখে অতশীর হাত টেনে ধরে বললো, পালাচ্ছো কোথায়?খাচ্ছো যখন তখন ভালোভাবেই খাও।
–না মানে আমি তো!
–আমি কি?তুমি বলতে চাচ্ছো আমার এঁটো তুমি খাচ্ছো না?
অতশী সাথে সাথে মাথা নাড়লো।যে সে ইভানের এঁটো খাচ্ছে না।
ইভান তখন বললো ওকে।যার খাবারই খাও না কেনো বসে থেকেই খাও।এই বলে ইভান অতশীকে আবার বসিয়ে দিলো।আর তাকে খেতে বললো।অতশী ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলো।ইভান তাকে এরকম অবস্থায় দেখবে সে ভাবতেও পারে নি।অতশী ভেবেছে ইভান তো চলেই গিয়েছে।কিন্তু ইভান যে তার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল টা ছেড়ে গিয়েছে সেটা তো আর অতশী জানে না।ইভান ফাইল টা নেওয়ার জন্যই আবার এসেছে।

এদিকে কনফারেন্স শুরু হয়ে গিয়েছে।দিশান এবং নীলয় যথাসময়ে উপস্থিত হলেও ইভান এখনো উপস্থিত হতে পারে নি।সবাই ইভানের জন্য অপেক্ষা করছে।আজ সবাই ইভানের মুখে শুনতে চায় সেদিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনা।ইভান নিজেও আজ সত্যি কথাটা বলতে চায়।কারণ সে এই কয় দিনে অনেক প্রমাণ যোগাড় করেছে।সুস্থ হওয়ার পর এই প্রথম বার মিডিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে ইভান।আজ আহসানের মুখোশ খোলার সময় এসে গেছে।তাকে এমনভাবে অপদস্ত করা হবে যেটা আহসান কখনো কল্পনাই করে নি।আহসান ভেবেছে সবকিছু থেমে গেছে।কিন্তু ইভান যে এখনো আহসানের পিছু পড়ে আছে সেটা আহসান বুঝতেই পারছে না

ইভান ফাইল খুঁজছে আর বলছে তাহলে বরের ভালোবাসা দরকার তোমার?সেজন্যই এঁটো খাবার খাচ্ছো?
–কি বলছেন এসব?আমি কারো এঁটো খাচ্ছি না কিন্তু।আর কারো ভালোবাসার প্রয়োজন নেই আমার।
–ওকে ঠিক আছে।তাহলে একটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাও দেখি।সত্যি কি দরকার নেই বরের ভালোবাসা?

অতশী ইভানের কথা শুনে এবার চুপ করে রইলো।ইভান তখন বললো, চুপ হয়ে গেলে যে?বলো?ভালোবাসা লাগবে কিনা?
–না লাগবে না।
–তাহলে তো ভালোই হলো।আমি আরো ভাবছিলাম কিভাবে বউকে ভালোবাসবো?আর সময়ই বা দেবো কিভাবে? দুশ্চিন্তায় একদম শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।বাঁচলাম!

অতশী তখন বললো আপনিই মনে হয় দেশের একমাত্র ব্যস্ত অফিসার।আর মনে হয় কেউ নেই?ভালো করে খুঁজে দেখেন আপনার মতো অনেক অফিসার আছে।যাদের বউ বাচ্চা সব আছে।সবাই তাদের ফ্যামিলিকে ভালোভাবেই সময় দেয়।আপনি হলেন একটা আনরোমান্টিক লোক।ভালোবাসা কি জিনিস আপনি সেটা বোঝেনই না।শুধু বোঝেন চিরকুট লেখা।মুখ ফুঁটে কিছু বলার সাহস আপনার নেই।

অতশীর কথা শুনে ইভান ওর কাছে চলে এলো।আর অতশীর একদম কাছে গিয়ে বললো,আমি আনরোমান্টিক?আমি ভালোবাসা বুঝি না?
–হ্যাঁ আপনি আনরোমান্টিক! আপনি ভালোবাসার কিছুই বোঝেন না।কি দরকার ছিলো বিয়ে করার?কি জন্য বিয়ে করেছেন আমাকে?
ইভান তখন বললো,ভালোবাসার জন্য বিয়ে করেছি।একটা সুখী দাম্পত্য জীবন গড়ার জন্য বিয়ে করেছি।কিন্তু যখন দেখলাম আমার সেই ভালোবাসার মানুষ আমাকে অসুস্থ দেখেও ছেড়ে চলে গেলো তখন নিমিষেই ভালোবাসা বিলীন হয়ে গেলো।আর ইচ্ছা করে না ভালোবাসতে।

অতশী এবার আর একটু বেশিই রাগ হলো।সে চিৎকার করে বললো আপনি সবসময় এই কথা টা কেনো বলেন?আপনি তো জানেনই কি হয়েছিলো সেদিন?আর আমি কেনো ছেড়ে গিয়েছিলাম?আমি কিন্তু এজন্য কম শাস্তি পাই নি?দিনের পর দিন কেঁদে কেঁদে কাটিয়েছি।এই এক মাস কিভাবে পার করেছি সেটা বোঝার ক্ষমতা আপনার নেই।
আমার আর এসব যন্ত্রনা ভালো লাগছে না?হয় আমাকে রাখেন তা না হলে জীবন থেকে দূর করে দেন।এভাবে কেনো আমাকে ঝুলিয়ে রেখেছেন?

ইভান সেই কথা শুনে অতশীর মুখ চেপে ধরলো।আর বললো,থামো এবার।অনেক বলে ফেলছো।আমারও এসব আর ভালো লাগছে না।সব হিসাব আমিও মিটিয়ে নিতে চাই।এই বলে ইভান অতশীর মুখের উপর থেকে তার হাত সরিয়ে নিলো।আর ধীরে ধীরে অতশীর দিকে ঝুঁকতে লাগলো। ইভান একদম অতশীর কাছাকাছি চলে আসছে।হঠাৎ সে শক্ত করে অতশীকে জড়িয়ে ধরলো আর অতশীর গলায় তার মুখ ঘষতে লাগলো।মুহুর্তের মধ্যে অতশীর পুরো শরীর শিহরিত হলো।তার পুরো শরীর কম্পিত হতে লাগলো।সে ইভান কে বাঁধা দিতেও পারছে না।কারণ তার এক হাতে খাবারের প্লেট আর অন্য হাত নোংরা ছিলো।সেজন্য সে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইভান হঠাৎ তার মাথাটা উঠিয়ে চোখ বন্ধ করে অতশীর ঠোঁটের কাছে তার ঠোঁট নিয়ে গেলো।কিন্তু ঠোঁটে ঠোঁট মিলাতেই ইভানের হুঁশ ফিরে এলো।সে কি করছে এটা?তার তো এখন ফাইল নিয়ে কনফারেন্স এ যাওয়ার কথা।
ইভান তাড়াতাড়ি করে অতশীকে ছেঁড়ে দিলো আর আবার তার ফাইল টা খুঁজতে লাগলো।

অতশী কিছুই বুঝতে পারলো না।ইভানের হঠাৎ কি হলো?ইভান এরকম কেনো করছে?

এদিকে ইভান পাগলের মতো তার ফাইল টা খুঁজতে লাগলো।অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ফাইল টা খুঁজে পেলো না।সে ঘরের প্রতিটা জিনিস এলোমেলো করলো।তবুও কোথাও দেখতে পেলো না।
ইভান কে এরকম ঘর এলোমেলো করা দেখে অতশী তাড়াতাড়ি করে হাত ধুয়ে নিলো।আর ইভানের কাছে এসে বললো, কি খুঁজছেন আপনি?
–কিছু না।এই বলে ইভান আবার খুঁজতে লাগলো ফাইল টা।
এদিকে দিশান কল দিচ্ছে বার বার।
ইভান কল টা কেটে দিলো।কারণ ফাইল না পাওয়া গেলে কনফারেন্স এ গিয়ে কি করবে সে?

অন্যদিকে অতশী বার বার জিজ্ঞেস করছে ইভান কে?

ইভান তখন একটা ধমক দিয়ে বললো, কি শুরু করেছো বলো তো?বার বার এক কথা কেনো জিজ্ঞেস করছো?তুমি কি পারবে খুঁজে দিতে?আলমারির ভিতর একটা ফাইল ছিলো।দেখেছো সেটা?
অতশী তখন নিজেও আলমারির ভিতর খুঁজতে লাগলো।কিন্তু সেও পেলো না।

ইভানের মাথা এবার চক্কর দিতে লাগলো। সে তো সবসময় তার ঘরে তালা দিয়েই রাখে।কেউ কিভাবে হাত দিতে পারে ফাইলে!কিন্তু আজ তো অতশীকে রুমে রেখেই বের হয়েছিলো সে?তাহলে কি কেউ এসেছিলো রুমে?
ইভান তখন অতশীকে বললো,আমি চলে যাওয়ার পর কেউ কি রুমে এসেছিলো?
–না।সেই থেকেই তো আমি রুমে ছিলাম।
ইভান পুরো বাড়ি মাথায় তুললো।কে এসেছিলো তার রুমে?আর তার ফাইল টা কে নিলো?

হঠাৎ অতশীর মনে হলো কালকের রাতের কথা। সে কাউকে বাসা থেকে বের হতে দেখেছিলো।অতশী তখন ইভান কে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি আজকে ফাইল টা দেখেছিলেন?
–না,ওটা আমি কালকে রেডি করে আলমারিতে রেখেছিলাম।ভেবেছিলাম একদম কনফারেন্সে যাওয়ার দিন বের করবো।
অতশী তখন বললো, বুঝতে পারছি এখন।তাহলে ফাইল টা কালকে রাতেই চুরি হয়েছে।
অতশীর কথা শুনে ইভানের মাথা একদম ঘুরে গেলো।কি বলে অতশী!এতো কষ্ট করে যোগাড় করা সব প্রমাণ আর তথ্য এইভাবে শেষ হয়ে গেলো?
অতশী তখন বললো, কাল শেষ রাতে আমি বাসা থেকে কাউকে বের হতে দেখেছিলাম।লোকটি বের হওয়ার কিছুক্ষন পর আপনি বাসায় আসেন।
–কি বলছো এসব?ইভান মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।এখন সে কনফারেন্স এ কি নিয়ে যাবে?ইভান সাথে সাথে দিশান কে ফোন করলো আর তাদের ফাইল চুরি হওয়ার ব্যাপার টা জানালো।
দিশান আর নীলয় ও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো।এইভাবে তাদের সব পরিশ্রম বৃথা হয়ে গেলো।এখন কিভাবে তারা আহসান কে ধরিয়ে দেবে।সে যে একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী তা সবাইকে কিভাবে জানাবে?

ইভান বুঝতে পারছে না কিছু।কিভাবে তার রুম থেকে ফাইল চুরি হলো?কারন রুমে তালা লাগানো ছিলো আবার আলমারিতেও তালা লাগানো ছিলো।যার চাবি শুধুমাত্র তারই কাছে থাকে।

নীলয় আর দিশান এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তারা সাথে সাথে ইভানের বাসায় চলে এলো।আসার সময় কনফারেন্স এর সভাপতি কে বলে এলো অফিসার ইভান হঠাৎ অসুস্থ হয়েছেন।উনি আজ আর আসতে পারবেন না।

নীলয়,দীশান আর ইভান ঘরের দরজা বন্ধ করে আলাপ আলোচনা করতে লাগলো।কারণ তারা বুঝতে পারলো ইভানের বাসারই কেউ একজন আহসানের গুপ্তচর। তা না হলে তালাবদ্ধ রুমের ভিতর থেকে ফাইল কি করে চুরি হয়?কিছুক্ষন আলাপ আলোচনা করার পর নীলয় আর দিশান চলে গেলো।

ইভান একদম কোনঠাসা হয়ে গেলো।সে কখনো কল্পনাও করে নি এটা।দিশান রা চলে যাওয়ার পর ইভান অতশীকে আবার ডেকে আনলো রুমে।সে কালকের রাতে কাকে দেখেছিলো সেটা মনে করতে বললো।অতশী তখন বললো, বেশি একটা দেখে নি সে।সে রুম থেকে বের হতেই ছেলেটি গেট খুলে বের হলো শুধু এটা দেখেছে।।
ইভান সেই কথা শুনে উলটো অতশীকে বকতে লাগলো, সে কেনো বলে নি কাউকে?কেনো চিৎকার করে ডাকে নি।
অতশী তখন বললো, আমি ভেবেছিলাম বাবা নামাযের জন্য বের হলো।সেজন্য চিৎকার করে নি সে।কিন্তু পরক্ষনেই বাবা জায়নামাজ হাতে করে রুম থেকে বের হয়।আর সে দৌঁড়ে গিয়ে বাবাকে বলে এই কথা।কিন্তু বাবা বলে আমি নাকি ভুল দেখেছি।এতো রাতে কে আসবে বাসায়?
ইভান কিছুই বুঝতে পারলো না।কে করতে পারে এই কাজ?তার বাবা বাসায় নেই।ইভান সেজন্য কয়েকবার ফোন ও দিয়েছিলো তাড়াতাড়ি বাসায় আসার জন্য।কিন্তু ইভানের বাবার আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কেস আছে।উনি সেটা নিয়ে ব্যস্ত।

অতশী আর ইভান গল্প করতেই হঠাৎ রুমে ইশান আর ইমান প্রবেশ করলো।তারা এসেই অতশী কে বললো
কখন বেড়াতে নিয়ে যাবে ম্যাম?
অতশী সেই কথা শুনে ওদের দুইজনের কাছে চলে গেলো আর বললো,তোমরা তোমাদের রুমে যাও।আমি পরে কথা বলছি।অতশীর কথা শুনে ওরা চলে গেলো।

ইভান তখন বললো, কি হয়েছে?কি জন্য এসেছিলো ওরা?
অতশী বলতে চাইছিলো না।কারণ ইভান যদি শোনে অতশী ওদের কে নিয়ে আজ বাহিরে যেতে চেয়েছে তাহলে তো ইভান ভীষণ রেগে যাবে।
–চুপ হয়ে গেলে কেনো?ওরা কোথাও যাওয়ার কথা বলছিলো?
— আসলে ওরা একটু বাহিরে যেতে চাচ্ছিলো।আপনাকে বলেছিলো কিন্তু আপনি না করায় ভীষণ মন খারাপ করেছে।এজন্য আমাকে বলেছিলো।আমি ভুল করে কথা দিয়ে ফেলছি ওদের।
ইভান অতশীর কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।সে চোখ বড় বড় কর তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এই পরিস্থিতিতে অতশী বাহিরে যাওয়ার কথা ভাবলো কি করে?

অতশী ইভান কে এমন রাগান্বিত দেখে বললো আসলে আমি তো আর জানতাম না আজকেই আপনার ফাইল চুরি হয়ে যাবে।সেজন্য আপনি টেনশনে থাকবেন।আমি ওদের কে তো আগেই কথা দিয়ে ফেলছি।এখন কি করবো?
–কি করবে মানে?বাসা থেকে ভুল করেও বের হওয়া যাবে না এখন।বাহিরের পরিস্থিতি ভালো না।যেকোন একটা বিপদ হতে পারে।
–আমার আবার কিসের বিপদ হবে?আমি কি সি আই ডি অফিসার নাকি?
ইভান তখন বললো, সি আই ডি অফিসার না হলে সি আই ডি অফিসারের বউ তো এখন।সেজন্য ভেবেচিন্তে বাহিরে যাবে।আমার পারমিশন ব্যতীত খবরদার বাড়ির বাহিরে যাবে না।
অতশী যদিও মাথা নাড়িয়ে বললো হুম,তবুও মনে মনে ভাবতে লাগলো কি করে বাহিরে যাওয়া যায়?
কারন আজ বাহিরে না গেলে ওরা দুই ভাই ভীষণ মন খারাপ করবে।কারণ তাদের কে কেউ একটু সময় দেয় না।

ইভান অতশীকে এমন চুপচাপ থাকা দেখে বললো,কি ভাবছো এতো?
–না কিছু না।
ইভান তখন বললো, তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো?
–কই না তো?
ইভান তখন অতশীর হাত ধরে টেনে তার কোলের উপর বসালো।আর বললো, আমার হুকুম ছাড়া এক পাও এগোবে না।বুঝেছো?
অতশী কোনো উত্তর না দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকলো।কারন সে ইভানের একদম অনেক কাছে আছে।সেজন্য ভীষণ অস্বস্তি ফিল করতে লাগলো।সে কোনো উত্তর দিতে পারলো না।

#চলবে,

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৩৬
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

ইশান আর ইমানের জেদাজেদি তে অতশী আর মৌরি বাহিরে বের হলো।কারণ তাদের এতই জেদ উঠেছে যে মৌরি আর অতশী বাসায় থাকতে পারলো না।তারা আজ বাহিরে যাবেই যাবে। ইভানের আম্মু তখন নিজেই পারমিশন দিলো অতশীকে।যাতে করে ইশান আর ইমানের আবদারও পূরন হয় আবার মৌরির মনটাও ভালো থাকে।
ইভান বাসায় না থাকায় তাদের কে কেউ আর বাধা দিলো না।অতশী কোনো জায়গা ভালোভাবে না চিনলেও মৌরি অনেক জায়গায় চেনে।সে অতশীকে তার ফেভারিট একটা পার্কে নিয়ে গেলো।পার্ক টা অনেকবেশি সুন্দর ছিলো।বাচ্চাদের বিনোদের জন্য সেরা একটা পার্ক।পার্কটার নাম ছিলো Wonder Land.ইশান আর ইমান এর আগেও এসেছিলো।সেজন্য তারা পার্কে ঢুকেই তাদের ফেভারিট প্লে জোন এ চলে গেলো।ইশানের পছন্দ ছিলো ইঞ্জিল চালিত ওয়াটার রাইডস বোট।সে একা একাই বোট চালাতে লাগলো।আর ইমানের পছন্দ ছিলো গাড়ি চালানো।শিশুদের বিনোদনের জন্য এগুলো সব ভার্চুয়াল গেম ছিলো।অতশী আর মৌরি পাশের একটা ফাস্টফুড সেন্টারের সামনে বসে গল্প করতে লাগলো।তারা দুইজন গল্প করছে আর ফুচকা খাচ্ছে।
কিছুক্ষন পর ইভান আর ইশান আসলো।কারন ওদের রাইডস শেষ হয়ে গেছে।৩০ মিনিট করে সময় দেয় রাইডসের জন্য।এবার তারা ট্রেনে উঠবে বলে বায়না করলো।মৌরি তখন বললো,আগে কিছু খেয়ে নাও তারপর আমরা সবাই মিলে ট্রেনে চড়বো।সেই কথা শুনে ইশান আর ইমান রাজি হয়ে গেলো।
মৌরি তখন ইশানের ফেভারিট চিজ বার্গার আর ইমানের ফেভারিট পাস্তা অর্ডার করলো।ইশান আর ইমান কে বসিয়ে রেখে অতশী আর মৌরি চারপাশ টা একটু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো।অতশী এর আগে আসে নি এই পার্কে।সেজন্য সে একটু বেশিই উত্তেজিত ছিলো।অতশী দূরের একটা গার্ডেনে চলে গেলো।যেখানে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে একটা ঘর পাওয়া যায়।সেখানে প্রেমিক প্রেমিকেরা বসে গল্প করে।জায়গা টা একদম নিরিবিলি ছিলো।অতশী সেখানে যেতেই দেখে জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে সবাই।সে এসব দেখে একদম তাজ্জব লেগে গেলো।
অতশী সেজন্য আর বেশি দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে আসলো।তারপর অন্য আরেকটা জায়গায় চলে গেলো।
মৌরির মন টা কেনো জানি আজও ভালো লাগছে না।তার কোনো আনন্দই হচ্ছে না।শুধুমাত্র ভাইদের আবদার মেটানোর জন্য একরকম বাধ্য হয়েই আসতে হয়েছে তাকে।মৌরি চুপচাপ একটা বেঞ্চে বসে আছে আর সবার আনন্দ করা দেখছে।হঠাৎ মৌরি কিছুদূরে জুসের একটা শপের সামনে ইভান কে দেখতে পেলো।ইভানের সাথে আরো চারজন আছে।দিশান আর নীলয় কে চেনা গেলেও বাকি দুইজন কে চেনা গেলো না।ওরা সবাই জুস খাচ্ছে আর গল্প করছে।
মৌরি তা দেখে দৌঁড়ে অতশীর কাছে গেলো আর চিৎকার করে বললো, ভাবি তাড়াতাড়ি এসো এদিকে। ভাইয়া?
–ভাইয়া?কই কই?অতশী একদম চমকে উঠে বললো কথাটা।
মৌরি তখন হাত দিয়ে দেখালো অতশীকে।অতশী নিজেও যখন দেখলো ইভান কে তার পায়ের তলার মাটি যেনো সরে যেতে লাগলো।এমনিতেই ইভান তার উপর রেগে আছে।তার উপর আজ যদি তাদের এখানে দেখে কি হবে কে জানে?
অতশী ইভান কে দেখামাত্র ইশান আর ইমান কে ডাকতে গেলো।তাদের এখনো খাওয়া শেষ হয় নি সেজন্য তারা উঠলো না।তখন মৌরি বললো,তাড়াতাড়ি বাসায় চলো,এখনি যেতে হবে আমাদের।
ইশান সেই কথা শুনে বললো কেনো যাবো বাসায়?মাত্র তো আসলাম।এখনো অনেক কিছু দেখা বাকি আছে।তাছাড়া ট্রেনে তো এখনো উঠি নি?
মৌরি ইশানের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে ওদের দুইজনকে জোর করেই পার্ক থেকে বের করলো।কিন্তু অতশী এখনো পার্কেই আছে।সে বের হলো না।মৌরি সেজন্য একটু রাগ হলো অতশীর উপর।এই মেয়েটা সবসময় একটু বাড়াবাড়ি করে।তার ভাইয়া দেখলে তো তাকেই বেশি বকবে।অতশী চুপচাপ পার্কেই দাঁড়িয়ে আছে আর ইভানদের দিকে দেখছে।মৌরি যখন অতশীকে ডাকার জন্য আবার ঢুকলো পার্কে ঢুকলো সে দেখলো অতশী একদম ইভানদের কাছাকাছি গিয়েছে।মৌরি তা দেখামাত্র দৌঁড়ে গিয়ে অতশীকে টানতে টানতে বাহিরে আনলো।আর বললো,ভাবি তুমি এমন কেনো?ভাইয়াকে দেখেও ওখানেই দাঁড়িয়ে আছো?তোমার সাহস দেখে সত্যি আমি অবাক হচ্ছি।তুমি আমাদের সাথে না এসে ভাইয়ার কাছাকাছি চলে গেলে কেনো?
অতশী কোনো উত্তর দিলো না।সে একদম চুপচাপ হয়ে আছে।
এদিকে মৌরি তাড়াতাড়ি করে একটা গাড়ি ডেকে আনলো।আর সবাইকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।
অতশী সেই আগের মতোই চুপচাপ হয়ে আছে।কিন্তু তার তো ভয় পাওয়ার কথা।বার বার বলার কথা কি হবে এখন?ইভান দেখলে আজ তো আমরা একেবারে শেষ।কে বাঁচাবে এখন আমাদের।
অতশী এসব কিছু না বলে চুপচাপ আছে।
মৌরি তখন বললো,ভাবি তোমার কি হয়েছে?চুপচাপ হয়ে আছো কেনো?
অতশী সেই কথা শুনে বললো, আর কতক্ষন লাগবে বাসায় যেতে?আমার মাথাটা কেমন যেনো ঘুরছে?এই বলেই অতশী সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো গাড়ির মধ্যে।
মৌরি তা দেখে চিৎকার করে অতশীকে ডাকতে লাগলো।কিন্তু অতশীর কোনো সাড়া পেলো না ।মৌরি তা দেখে ভয়ের মধ্যে পড়ে গেলো।সে তখন তার ব্যাগের মধ্যে থেকে পানির বোতল বের করে অতশীর মুখে ছিটিয়ে দিতে লাগলো। তবুও অতশীর জ্ঞান ফিরলো না।মৌরি তখন ড্রাইভার কে বললো আংকেল আরেকটু জোরে চালান প্লিজ।আমার ভাবি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।ড্রাইভার সেই কথা শুনে বললো হাসপাতালে নিয়ে যাবো কি?
–না না।হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে না।তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে চলেন।
মৌরি পড়ে গেলো মহাঝামেলায়।একদিকে তার ভাইয়ার ভয় অন্যদিকে অতশীর এই অবস্থা!
এদিকে অতশীকে অজ্ঞান হওয়া দেখে ইশান আর ইমাম চিৎকার করতে লাগলো।তারা ম্যাম ম্যাম বলে ডাকতে লাগলো।মৌরি বুঝতে পারলো না কিছু।কি করবে সে এখন?
হঠাৎ অতশী চোখ মেলে তাকালো।সে তার চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলো।মৌরি অতশীকে ওঠা দেখে তাকে শক্ত করে ধরে রাখলো আর বললো ভাবি তুমি ঠিক আছো?
–হুম।তবে মাথাটা কেমন যেনো ঘুরছে।
মৌরি তখন বললো ভাবি চুপচাপ শুয়ে থাকো।কোনো কথা বলো না।কিছুক্ষন পরই বাসা বের হবে।অতশী সেই কথা শুনে মৌরির কাঁধে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলো।

হঠাৎ মৌরির ফোনে রিং বেজে উঠলো। মৌরি ফোনটা বের করতে পারলো না।কারণ ফোন ব্যাগের মধ্যে ছিলো।এদিকে অতশী হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।মৌরি শুধু অপেক্ষা করছে কখন তাদের বাসা বের হয়?
এদিকে কল বেজেই যাচ্ছে।
মৌরি তখন ইশান কে বললো তার ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে।
ইশান মৌরির কাঁধ থেকে ব্যাগ টা নিয়ে তার ভিতর থেকে মোবাইলটা বের করলো।
মৌরি ফোন হাতে নিতেই দেখে ইভান ফোন দিয়েছে।ইভান কে কল করা দেখে মৌরি ভয়ের মধ্যে পড়ে গেলো।সে ভেবেছে নিশ্চয় ইভান তাদের দেখে ফেলেছে।তা না হলে এই সময়ে কেনো ফোন করলো?
মৌরি ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করলো।ফোন রিসিভ করতেই ইভান মৌরিকে ধমক দিয়ে বললো,ফোন কই থাকে তোদের?ধরতে এতো লেট হয় কেনো?
–আসলে ভাইয়া আমি একটু,,
মৌরি পুরো কথা শেষ না করতেই ইভান বললো,অতশী কই?আর ওর ফোন কি ওর কাছে থাকে না?কখন থেকে রিং দিচ্ছি রিসিভ করে না কেনো?
মৌরি কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছিলো না।ইভান তখন বললো অতশীকে ফোন ধরতে বল।এই বলে ইভান কল কেটে দিলো।
মৌরি তখন অতশীকে বললো,অতশী ভাইয়া ফোন দিয়েছে।তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে।তোমার ফোন বের করো তাড়াতাড়ি। অনেকক্ষন থেকে নাকি কল দিচ্ছে।
অতশী সেই কথা শুনে বললো, আমি ভুল করে ফোন টা বাসায় রেখে এসেছি।
–এখন কি হবে?ভাইয়া তো কল দিচ্ছে তোমার ফোনে।
অতশী তখন বললো তাহলে তোমার ফোন থেকে কল দাও।আর বলো অতশী ঘুমাচ্ছে।আমার মাথাটা এখনো ঘুরছে, কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
ইভান অতশীর কথা শুনে বললো,ম্যাম আমরা তো চড়কিতে উঠিই নি আবার নাগরদোলায়ও চড়ি নি,ট্রেন এ উঠি নি তাতেই আপনার মাথা ঘুরছে?তাহলে এগুলোতে চড়লে কি হতো?
–চুপ করো তোরা?এতো বেশি কথা বলো না।সব তোদের জন্য হলো।কত করে বললাম আরেকদিন নিয়ে যাবো।কিন্তু তোরা কিছুতেই শুনলি না।এই বলে মৌরি ওদের ধমকাতে লাগলো।
অতশী তখন বললো,ভাবি কিছু বলো না ওদের।ওরা ছোট মানুষ। সেজন্য জিদ করেছে।
ইভান আবার ফোন দিলো।মৌরি তা দেখে বললো কি বলবো এখন?
অতশী সেই কথা শুনে মৌরির হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নিজেই রিসিভ করলো আর বললো হ্যালো?
–তুমি?কই ছিলে এতোক্ষন?তোমার ফোন কই?
–ফোন টা মৌরির রুমে।

ইভান তখন বললো ফোন টা কি অন্যখানে রাখার জন্য?কখন থেকে কল দিচ্ছি?একবারের জন্যও কেউ শোনো নি?
অতশী ইভানের প্রশ্নকে এড়িয়ে উলটো জিজ্ঞেস করলো হঠাৎ আমাকে এতোবার কল দেওয়ার মানে কি?
ইভান সেই কথা শুনে বললো, হাজব্যান্ড তার বউ কে কি জন্য ফোন দেয়?
তুমি যেভাবে কথা বলছো মনে হয় আমি বাহিরের লোক।
–না মানে সেভাবে বলি নি।
–বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি নিজের ফোন থেকে কল করো আমাকে।
অতশী সেই কথা শুনে বললো এই ফোনেই কথা বলি।যা বলার এখনি বলুন।

–যা বলছি সেটাই করো।এই বলে ইভান আবার কল কেটে দিলো।এবং অতশীর ফোনে কল দিলো।কিন্তু এবারও অতশী রিসিভ করতে পারলো না।

এদিকে বাসায় যেতে আরো ১৫ মিনিটের মতো লাগবে।অতশী পড়ে গেলো মহা ঝামেলায়।ইভানের হঠাৎ কি হলো?কেনো তাকে ফোন দিচ্ছে?
অতশী তখন মৌরির ফোন থেকে ইভান কে আবার কল দিলো।
ইভান তা দেখে বললো কি হয়েছে অতশী তোমার?বার বার মৌরির ফোন থেকে কল দিচ্ছো কেনো?বললাম না তোমার ফোন থেকে কল দাও।আমার কল কেনো রিসিভ করছো না?
এরইমধ্যে ইভান হঠাৎ গাড়ির হর্ণ শুনতে পেলো।সেজন্য সে অতশীকে জিজ্ঞেস করলো,তুমি আসলে আছো কোথায়?এতো শব্দ হচ্ছে কেনো?

অতশী সেই কথা শুনে ভয়ের মধ্যে পড়ে গেলো।সে কি বলবে এখন বুঝতে পারছে না।সে হা করে মৌরির দিকে তাকিয়ে আছে।মৌরি তখন অতশীর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে বললো,ভাইয়া তুই একটু ১০ মিনিট পরে ফোন টা দে।আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি।এই বলে মৌরি ফোন টা রেখে দিলো।

–কি করলে এটা?এখন তোমার ভাইয়া যদি রাগ করে।
–তাছাড়া আর উপাই কি?কথা বললেই ভাইয়া টের পাবে।আমরা তো কিছুক্ষন পরেই বাসায় যাচ্ছি।

এদিকে ইভান এখনো পার্কেই আছে।তবে মৌরির কথা শুনে কেমন যেনো সন্দেহ হলো তার।ওরা আবার বাহিরে আসে নি তো?এই বলে ইভান আবার ফোন দিলো মৌরিকে।
মৌরি এবার আর ফোন রিসিভ করলো না।কারণ আশেপাশে থেকে গাড়ির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিলো প্রচুর।ফোনে কথা বললেই ইভান বুঝতে পারবে যে তারা বাহিরে এসেছে।

দশমিনিট পর মৌরিরা ভালোভাবেই বাসায় পৌঁছলো।মৌরি বাসায় পৌঁছেই অতশীকে নিয়ে তার ভাই এর রুমে চলে গেলো।
অতশী তা দেখে বললো,এ রুমে আনলে কেনো ভাবি?তোমার রুমেই নিয়ে চলো।তোমার ভাইয়া যদি রাগ করে।
মৌরি সেই কথা শুনে বললো,ঢং বাদ দেও তো ভাবি।আজাইরে ন্যাকামো করো না।সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবে চলছে তাহলে আলাদা ঘরে থাকবে কেনো?আজ থেকে এ ঘরেই থাকবে তুমি।এই বলে মৌরি জোর করেই অতশীকে ইভানের বেডে শুইয়ে দিলো।আর বললো খবর দার উঠবে না বেড থেকে।
মৌরি ইশান আর ইভান কে বললো তোমরা তোমাদের রুমে চলে যাও।আর তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে নাও।

অতশীর মাথা টা এখনো ঘুরছে। সেজন্য সে আর বেশি কথা বাড়ালো না। চুপচাপ শুয়ে থাকলো ইভানের বেডে।এই প্রথমবার অতশী ইভানের বেডে শুইলো।অতশী কেমন যেনো একটা অন্যরকম ভালো লাগা অনুভব করতে লাগলো।কারন ইভানের বেড মানেই তো তার বেড।আজ দিয়ে মনে হচ্ছে সে ইভানের বউ।কেমন যেনো বউ বউ ফিল হচ্ছে তার।আবার মনে মনে ভয় ও লাগছে,ইভান যদি আবার রাগ করে।পরে আবার ভাবলো ইভান তো এখনি ফিরবে না,একটু শুয়ে থাকলে কি হবে?ইভান আসার আগেই মৌরির রুমে চলে যেতে হবে।

মৌরি অতশীকে বললো, ভাবি আমি আমার রুমে চলে গেলাম।তুমি রেস্ট নাও।খারাপ লাগলে ডাক দিও আমাকে।
অতশী মাথা নেড়ে জানালো।তার শরীর টা এতো টাই দূর্বল হয়ে গেছে যে সে চোখ মেলে তাকাতেও পারছে না।তবুও মৌরি চলে যাওয়ার সাথে সাথে সে ইভান কে ফোন দিলো।
কিন্তু ইভান ফোন রিসিভ করলো না।
অতশী সেজন্য আবার কল দিলো।
এবার ইভান ফোন রিসিভ করে বললো,পরে কথা বলছি।আমি এখন ব্যস্ত আছি।
অতশী সেজন্য আর ফোন দিলো না ইভান কে।
অতশী ইভানের রুমেই থাকলো।আর ঘুমিয়ে পড়লো।

তিন ঘন্টা পার হয়ে গেলো এদিকে অতশীর কোনো খবর নাই।সে মনের সুখে ঘুম পারছে।মৌরি খাওয়ার জন্য অতশীকে ডাকতে এলে দেখে অতশী এখনো ঘুমাচ্ছে।সেজন্য মৌরি আর তাকে বিরক্ত করলো না।

ইভান আজ একটু তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরলো। বাহিরে আজ কোনো কাজ নেই তার।ইভানের এখন প্রথম টার্গেট সর্বপ্রথম ঘরের শত্রুকে খুঁজে বের করা।কে সন্ত্রাসীদের সাহায্য করছে?আর বাসার সব তথ্য পাচার করছে?সেজন্য ইভান ভীষণ টেনশনে আছে।তাছাড়া পুলিশ অফিসার আকরাম আজ এমন একটা প্রশ্ন করেছে ইভান কে যা শুনে ইভানের সন্দেহ আরো বেড়ে গেছে।ইভান তাদের কাজের মেয়ে রিয়াকে টার্গেটে রেখেছে।যদিও সে ব্যাপারে কাউকে এখনো জানায় নি।

ইভান তার রুমে ঢুকতেই দেখে অতশী ঘুমিয়ে আছে তার বেডে।
ইভান বুঝতে পারলো না কিছু।আজ অতশী তার বেডে কেনো?সে তো আসতে বলে নি।তাহলে কি অতশী নিজের ইচ্ছাতেই এসেছে।
ইভান অতশীকে আর ডাক দিলো না।ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ইভান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অতশী এখনো ঘুমাচ্ছে।সেজন্য ইভান অতশীর পাশে গিয়ে বসলো আর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
ইভান মুহুর্তের মধ্যে ভাবনার জগতে চলে গেলো।মেয়েটার উপর সবসময় কত রাগ দেখাই,কত কি বলি! তারপরও মেয়েটা সবকিছু ভুলে তার বেডে শুয়ে আছে।না আজ আর তাকে কোনো আজেবাজে কথা বলবো না,এইভেবে ইভান অতশীর মুখমন্ডল ছুঁয়ে দেখলো।অতশী তার শরীরে কারো স্পর্শ পেয়ে নড়েচড়ে অন্য পাশ হলো।সে এতোটাই ঘুমে মগ্ন যে ভুলেই গেলো সে এখনো ইভানের রুমেই আছে।
ইভান এবার ইচ্ছা করেই অতশীকে তার পাশে ঘোরালো।আর হাত দিয়ে অতশীর ঠোঁট স্পর্শ করলো।অতশী এবার আর কোনো সাড়া দিলো না। ইভান হঠাৎ অতশীর ঠোঁটে আলতো করে একটা কিস করলো।
অতশী সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো।আর ইভান কে তার উপর এভাবে ঝুঁকে থাকা দেখে তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো।ইভান সাথে সাথে দূরে ছিটকে পড়ে গেলো।ইভান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সেজন্য সে এক ঝটকায় একদম নিচে পড়ে গেলো।
অতশী তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নামলো আর এক নিঃশ্বাসে বললো আপনি?কখন এসেছেন?আসলে মৌরি শুইয়ে দিয়েছে আপনার বেডে। কি খাবেন এখন?কি বানাবো আপনার জন্য?

ইভান কোন প্রশ্নের উত্তর দেবে?তাছাড়া সে এখনো মেঝেতেই বসে আছে,আর অতশীর দিকে দেখছে।অতশী এতোক্ষনে বুঝতে পারলো ইভান কে সে নিজেই ফেলেছে।সে তখন দৌঁড়ে ইভানের কাছে চলে গেলো।আর বললো আপনি মেঝেতে বসে আছেন কেনো?ওঠেন?এই বলে অতশী নিজেই হাত বাড়িয়ে দিলো।

অতশী নিজেও এরকম দৃশ্য দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।সেজন্য কি বলছে আর কি করছে নিজেও জানে না।

#চলবে,