অনুভবে তুমি পর্ব-৩৯

0
612

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৩৯
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

ইভান বাসায় এসে দেখে সব ঠিকঠাক আছে।সবার রুমের দরজা খোলা।কারো রুমের দরজাই বাহির থেকে লক দেওয়া নাই।এমনকি তার বাবাও কোনো মিটিং এ ব্যস্ত নাই।বাহিরে কোনো গাড়ি বা অন্য কোনো যানবাহনও ছিলো না।ইভান সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হলো গেস্ট রুমে গিয়ে।সেখানে কোনো মানুষের ছায়া থাকা তো দূরের কথা, ঘরে কোনো নোংরা বা ঘরে কোনো জিনিসপত্র একটুও এলোমেলো নেই।ইভান তখন তার নিজের রুমে চলে গেলো।রুমের দরজা খোলাই ছিলো।
এদিকে ইভান রুমে ঢুকতেই অতশী চিৎকার করে উঠলো।ইভান তা শুনে দৌঁড়ে গিয়ে অতশীর মুখ টিপে ধরলো আর বললো আমি আমি।আমাকেও চিনতে পারছো না?
মুখ টিপে ধরে থাকায় অতশী কথা বলতে পারলো না সে শুধু উঃ উঃ করতে লাগলো।ইভান তা দেখে অতশীর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।অতশী সাথে সাথে ইভান কে জড়িয়ে ধরলো আর বললো আপনি এসেছেন?আমি ভীষণ ভয়ের মধ্যে পড়েছিলাম।আর কিছুক্ষন এভাবে একা একা থাকলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতাম।
ইভান সেই কথা শুনে নিজেও অতশীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর বললো তা তো দেখতেই পারছি।ভাগ্যিস এসেছিলাম।তা না হলে কি যে হতো?আমি তখন আমার বউ কই পাইতাম?
–ও তাই?আপনি দেখেছেন নিজের চোখে?আমার কথা বিশ্বাস হয়েছে?
–হ্যাঁ সব দেখেছি আর বিশ্বাসও করেছি।
ইভানের কথা শুনে অতশী একদম চমকে উঠলো সে অনেক বেশি উৎসাহ নিয়ে বললো কি কি দেখলেন?আর ঐ লোকগুলোই বা কে?বাবা কাদের সাথে রোজ রোজ এই টাইমে মিটিং করে?
ইভান সেই কথা শুনে বললো, অতশী তুমি কবে থেকে এরকম বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলা শিখলে?
–মানে?কি বলতে চাইছেন আপনি?
ইভান সেই কথা শুনে অতশীকে আবার তার কাছে টেনে নিলো আর বললো, বললেই হতো দেখতে ইচ্ছে করছে আপনাকে।এখন এই মুহুর্তেই লাগবে আপনাকে।তাহলেই তো চলে আসতাম।কি দরকার ছিলো এসব বানোয়াট কথা বলার?
অতশী এই কথা শোনা মাত্র ইভান কে তার কাছ থেকে সরিয়ে দিলো আর বললো,আমি মিথ্যা কথা বলেছি?আমাকে আপনি মিথ্যাবাদী বললেন?
ইভান অতশীর এমন রাগ করা দেখে বললো, ছিঃ ছিঃ মিথ্যাবাদী কখন বললাম?তুমি যে এখন আমাকে ছাড়া কিছু বোঝো না সেটা বললাম।তাছাড়া আমি তো এটাই চাই।আমার বউ সবসময় আমাকে মিস করুক।আর আমাকে বাসায় আনার জন্য নানা অজুহাত দেখাক।ইভানের এমন কথাবার্তা শুনে অতশীর ভীষণ রাগ হলো। সে বুঝতে পারলো ইভান আসার আগেই তার বাবার মিটিং শেষ হয়ে গেছে।সেজন্য ইভান এরকম বলছে।অতশী আর কথা না বাড়িয়ে মন খারাপ করে থাকলো।কারণ ইভান তাকে নিয়ে আবার অন্য কিছু ভাবছে।
অতশীকে এরকম চুপচাপ থাকা দেখে ইভান বললো,খুব খারাপ লাগছে তাই না?ভাবছো কোন মানুষ কে বিয়ে করলাম,যে একটু সময় ও দিতে পারে না?বউকে আদর করা তো দূরের কথা তার সাথে বসে দুই মিনিট ভালোবাসার কথাও বলে না?
অতশী কোনো উত্তর দিলো না।সে ইভানের কথাগুলো শুনে ভীষণ লজ্জা পেলো।কারণ সে কখনোই এগুলো ভাবে নি।বরং সে ইভান কে নিয়ে গর্ববোধ করে।ইভান তার দায়িত্ব পালন করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে।সে বিন্দুমাত্র গাফেলতি করে না।যা অতশীর ভীষণ ভালো লাগে।

ইভান নিজেও অতশীর পাশে গিয়ে বসলো। আর অতশীর হাত ধরে বললো, তোমাকে আগেই বলেছিলাম আমার বউ হতে হলে অনেক বেশি ধৈর্য্য ধরতে হবে।আর অনেক ত্যাগও স্বীকার করতে হবে।সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে আর ভাবতে হবে কিছুই হয় নি,আমার হাজব্যান্ড সবসময় আমার পাশেই আছে।এমনও হতে পারে আমি আর বাসায় জীবিত নাও ফিরতে পারি!তুমি তো নিজেও দেখেছো কতবার বেঁচে ফিরেছি।মরতে মরতে বেঁচে গেছি।সব আসলে আল্লাহর রহমত।আল্লাহর রহমত ছাড়া আসলে কিছুই সম্ভব নয়
অতশী ইভানের কথা শুনে তাকে জড়িয়ে ধরলো।আর কাঁদতে কাঁদতে বললো আপনি প্লিজ এভাবে বলবেন না।কিছুই হবে না আপনার।
ইভান অতশীর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো নো,নো।কাঁদা চলবে না।অনেক বেশি শক্ত হতে হবে তোমাকে।

অতশী ইভানের কথা শুনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ইভান তখন অতশীর মুখ টি উপরে তুলে বললো ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?ভালোবাসা লাগবে?
অতশী তা শুনে বললো না।
–ও তাই?তাহলে চলেই যাই।ভাবলাম বউকে একটু ভালোবাসবো।আরো অনেক কাছ থেকে দেখবো।কিন্তু বউ তো সেটা চাচ্ছে না।
অতশী ইভানের কথা শুনে হেসে উঠলো।
ইভান অতশীকে এভাবে হাসা দেখে কিস করতে লাগলো আর বললো আমার বউ তাহলে রাজি আছে?
–না না রাজি নই।
ইভান অতশীর কথা না শুনে তাকে তার ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিলো।কারণ আজ তার মনে ভালোবাসার অনুভূতি জেগে উঠেছে।সে বুঝতে পারছে অতশী নিজেও তার ভালোবাসায় সঙ্গ দিতে চায়।ইভান অতশীর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে ভালোবাসার স্পর্শ বসিয়ে দিলো।মুহুর্তের মধ্যে অন্যরকম একটা ভালোবাসার পরিবেশ তৈরি হলো।দুইজন প্রেমিক প্রেমিকার বহুদিনের ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পেলো।অতশী ইভানের ভালোবাসায় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেললো।দুইজনই যেনো আজ ভালোবাসার অতল গহবরে তলিয়ে গেলো।

সকাল দশটায় সকল টিভি চ্যানেলে এমন একটা ব্রেকিং নিউজ দিলো যা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো।ব্রেকিং নিউজ টা হলো সি আই ডি অফিসার ইভান নিজেই একজন সন্ত্রাসী।সে আর তার তিনজন সহচরী দিশান নিলয় আর শুভ্র ওরাও একজন সন্ত্রাসী। তারা সবার চোখে একজন সি আই ডি অফিসার হলেও গোপনে তারা নিজেরাই বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করে থাকে।ইভান তার সুনাম অর্জন করার জন্য সন্ত্রাসী অয়ন কে মৃত ঘোষণা করে।তাকে নিজের হাতে ধরে সবার চোখে একজন সাহসী অফিসারের খেতাব অর্জন করে।আর তার আরেকজন সহচরী শুভ্রকেও মৃত ঘোষণা করে।কিন্তু দুইজনই বেঁচে আছে।আর তারা সবার চোখের আড়ালে নানা রকম অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।
যখন সবাই অয়ন আর শুভ্রর লাশ দেখতে চেয়েছিলো তখন ইভান জানায় শুভ্রর লাশ সন্ত্রাসীরা নদীতে ফেলে দেয় আর অয়ন কে মেরে সেও তার লাশ নদীতে ফেলে দেয়।ইভান কে সবাই সৎ আর ন্যায়বান অফিসার ভাবে দেখেই তার কথাকেই সবাই বিশ্বাস করে।কিন্তু গতকাল রাতে শুভ্র আর অয়ন কে পুলিশ অফিসার আকরাম ধরে ফেলে।এবং তাদের মুখ থেকে সব সত্য কথা বের করে।তারাও নির্ধিদ্বায় সব সত্য কথা বলে দেয়।যে ইভান ই একজন সন্ত্রাসী।আর তারা তাদের কথামতোই চলে।ইভান যা করতে বলেছে তারা সেটাই শুনেছে।

এই নিউজ শোনার পর থেকে ইভানদের বাসার সামনে অনেক হইচই শুরু হয়েছে।সবাই বাসায় ঢোকার জন্য হামলা শুরু করে দিয়েছে।কেয়ারটেকার লতিফ গেট বন্ধ করে দিলে সবাই গেট ধাক্কাতে লাগলো।একদল পুলিশ তাদের কে থামানোর চেষ্টা করছে।তবুও পারছে না।এদিকে ইভান এখন পর্যন্ত ঘুম থেকে ওঠে নি।কাল ডিউটি থেকে এসে মোবাইল বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছে।সেজন্য কেউ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি।ইভানের সাথে সাথে অতশীও ঘুমিয়ে আছে।
বাহিরে এমন হইচই দেখে মৌরি দৌঁড়ে এলো আর ইভানের রুমের দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো।অতশী এক ডাকেই জেগে উঠলো।সে তাড়াতাড়ি করে উঠতে ধরলে ইভান তাকে টেনে এনে আবার শোয়ালো।
অতশী তখন বললো,মৌরি ডাকছে তো।দরজা টা খুলে দিয়ে আসি।
–ডাকুক।এই বলে ইভান অতশীকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো, মনে হচ্ছে অনেকদিন পর একটু শান্তিতে ঘুমালাম। এখন পর্যন্ত সে ঘুম শেষ হচ্ছে না।আরো ঘুমাতে চাই।আজ সারাদিন কোনো কাজকর্ম নাই।সবকিছু বন্ধ আজ।প্লিজ আজ আমাকে বিরক্ত করো না।এই বলে ইভান অতশীকে আবার আদর করতে লাগলো।
এদিকে মৌরি ডেকেই যাচ্ছে।ইভানের সেদিকে কোনো কান নেই।
অতশী তখন বললো, অনেকক্ষন থেকে মৌরি ডাকছে।মনে হয় কোনো জরুরি কথা বলবে।আমি গিয়ে শুনে আছি।আপনি শুয়ে থাকুন।
ইভান সেই কথা শুনে অতশীকে ছেড়ে দিলো আর বললো যাও শুনে এসো।তবে দেরী যেনো না হয়।এই বলে ইভান একা একাই শুয়ে থাকলো।

অতশী ছাড়া পাওয়া মাত্র দরজা খুলে দিলো।মৌরি অতশীকে দেখা মাত্র বকা আরম্ভ করলো।কখন থেকে ডাকছি তোমাদের?একবারও কি শোনো নি তোমরা?
অতশী চুপ করে রইলো।মৌরি তখন ইভানের কাছে দৌঁড়ে গেলো আর বললো ভাইয়া তাড়াতাড়ি ওঠো?খুব খারাপ একটা নিউজ আছে।।ইভান তা শুনে বললো,কি নিউজ?
মৌরি তখন বললো, বাহিরে প্রচুর ভাংচুর হচ্ছে।তোমাকে মারার জন্য জনগন ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
ইভান তা শুনে এক লাফে বিছানা থেকে উঠলো।আর দৌঁড়ে জানালার কাছে গেলো।ইভান এতো মানুষ দেখে নিজেও স্তব্ধ হয়ে গেলো ।সে তাড়াতাড়ি করে তার মোবাইল অন করলো।কারণ ইভান বুঝতে পেরেছে কেনো সবাই এতো রাগান্বিত তার উপর।ইভান তাড়াতাড়ি করে শুভ্র কে ফোন দিলো।কিন্তু শুভ্রর ফোন বন্ধ ছিলো।এরপর ইভান অয়ন কে ফোন দিলো।অয়নের ফোনও বন্ধ পেলো।ইভান সেজন্য দিশান কে ফোন দিলো।দিশান সাথে সাথে ফোন রিসিভ করলো আর বললো স্যার আপনি কোথায়?অনেকক্ষন থেকে ট্রাই করছি আপনাকে।কিন্তু বার বার ফোন বন্ধ পেয়েছি।
ইভান তখন কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,অয়ন আর শুভ্র কই?ওদের কে কি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে?
–হ্যাঁ স্যার।অফিসার আকরাম শুভ্র আর অয়ন কে আস্তানা থেকে ধরেছে।আর আমাদের নামে কম্পিলিন করেছে।যেকোন মুহুর্তে আমাদের কে ধরার ও পারমিশন দেবে উপর থেকে।
দিশানের কথা শুনে ইভান বললো,তোমরা পালিয়ে যাও।কোনো গোপন জায়গায় লুকিয়ে থাকো।সবাইকে যদি পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তাহলে সত্য টা প্রকাশ করবে কে?আর হ্যাঁ সন্ত্রাসী আহসানের গোপন আস্তানার যে ভিডিও আর ছবি আছে ওগুলো সাবধানে রাখবে।পুলিশ অফিসার আকরামের হাতে যেনো না যায় সেগুলো।সময় মতো ওগুলো নিয়ে হাজির হবে।
–ঠিক আছে স্যার।আমি আর নিলয় গোপন জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছি।আপনি নিজের খেয়াল রাখুন।
–ঠিক আছে।এই বলে ইভান ফোন রেখে দিলো।তার মাথায় কিছুতেই কিছু ঢুকছে না।এই পরিস্থিতিতে সে কি করবে এখন?তাছাড়া সে যদি পালিয়ে যায় এখন জনগন আরো বেশি ক্ষিপ্ত হবে।আর সন্ত্রাসীরাও টেনশনের মধ্যে থাকবে।এই শেষ মুহুর্তে এসে কিছুতেই প্রমান গুলো আর হাতছাড়া করা যাবে না।এজন্য ইভান আর পালালো না।সে সাহস নিয়ে বাসাতেই থাকলো।

এদিকে অতশী ভয়ে একটা কথাও বলতে পারলো না।তার পুরো শরীর অবশ হয়ে গেলো।কি হবে এখন ইভানের?কে বাঁচাবে তাকে?
মৌরি নিজেও ভয়ের মধ্যে পড়ে গেলো।সে তার ভাইকে বললো ভাইয়া কি হবে এখন?সবাই তো তোকেই দোষারোপ করছে।আর প্রতারণা করার জন্য তোকে যেকোন মুহুর্তে ধরে নিয়ে যাবে জেলে।
ইভান সেই কথা শুনে বললো অয়ন আর শুভ্র যে বেঁচে আছে সে কথা আর কাকে বলেছিস?কিভাবে আকরাম জানতে পারলো এটা?

মৌরি চুপ চুপ করে রইলো।ইভান তখন বললো তোকে না বার বার বললাম কাউকে বলবি না এই কথা।এটা একটা সিক্রেট কথা।ওরা ধরা পড়লে সবার আগে আমি ফেঁসে যাবো।
মৌরি তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,কাউকেই তো বলি নি।

এদিকে অয়নের মা আর নেহা ব্রেকিং নিউজ টা শোনামাত্র দৌঁড়ে ইভানদের বাসার দিকে আসলো।কিন্তু কেয়ারটেকার লতিফ কাউকেই ঢুকতে দিলো না বাসায়।

কিছুক্ষন পর পুলিশ অফিসার আকরাম আসলো বাসায়।ইভান কে দেখামাত্র বললো,আসসালামু আলাইকুম সি আই ডি অফিসার।আপনি ভালো আছেন তো?
ইভান কোনো উত্তর দিলো না।এদিকে ইভানের বাবা আকরাম কে দেখামাত্র বললো,অফিসার কি হবে এখন ইভানের?এই বিপদ থেকে কি করে বাঁচবে ইভান?
আকরাম তখন হাসতে হাসতে বললো আর বাঁচার কোনো উপাই নাই।এখন সারাবছর জেলে পঁচতে হবে তা না হলে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে।ইভান আকরামের হাসি দেখে রাগে হাত মুষ্টি করলো।আকরাম তা দেখে বললো কোনো লাভ নাই ইভান।তাড়াতাড়ি চলো জেলে।ওখানে গিয়ে দেখা যাবে কত রাগ দেখাতে পারোস তুই।অনেক হিসাব বাকি আছে তোর সাথে।

ইভান তা শুনে বললো,কে কার হিসাব নেবে তা সময়ই বলে দেবে।তাছাড়া আমি যে সন্ত্রাসী তার কি প্রমাণ আছে?আর শুভ্র আর অয়ন তো মিথ্যা কথাও বলতে পারে বা তাদের উপর টর্চার করে জোর করে তাদের মুখ থেকে এই মিথ্যা কথা বের করানো যেতে পারে।
আকরাম তখন ইভানের একদম কাছে এসে বললো, জীবিত মানুষ কে যে মৃত বলে ঘোষণা করে তার কথা কেউ আর বিশ্বাস করবে না।শুধু অয়ন আর শুভ্র নয় আরো অনেক সাক্ষী আছে যারা সবাই জানে তুমি একজন সন্ত্রাসী।চলো এখন।এই বলে আকরাম জোরে করে একটা টান মারলো ইভান কে।ইভান সেই ধাক্কায় পড়ে যেতে ধরলো তবুও সে নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখলো।কারণ আজ আকরামেরই দিন।সে চাইলেও কিছু করতে পারবে না।

অতশী ইভানের এমন অবস্থা দেখে দৌঁড়ে এলো।অতশী পুলিশ অফিসার কে বললো প্লিজ আপনারা একটু ভালো করে যাচাই করে দেখুন।ইভান কখনোই একজন সন্ত্রাসী হতে পারে না।আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।
পুলিশ অফিসার আকরাম তখন বললো, কোনো ভুল হয় নাই।আর সবচেয়ে বড় প্রমাণ তো তুমিই।ইভান একজন সি আই ডি অফিসার হয়েও কি করে সন্ত্রাসী অয়নের বোন কে বিয়ে করলো?এ থেকে বোঝাই যাচ্ছে অয়নের সাথে তার আগে থেকেই পরিচয় আছে।তা না হলে তোমার দেখা সে পেলো কোথায়?
অতশী তা শুনে বললো ইভানের সাথে আমার পরিচয় তো ভার্সিটিতে। তাছাড়া ভাইয়ার সাথে তার তো কোনো পরিচয় ছিলো না।
আকরাম তখন হাসতে হাসতে বললো,এসব মুখের কথায় কাজ হবে না।আইন প্রমানে বিশ্বাস করে।ইভান আর অয়নের মধ্যে অনেক আগে থেকেই ভালো সম্পর্ক আছে সেজন্যই তো অয়ন ইভানের বোনকে আর ইভান অয়নের বোন কে বিয়ে করেছে।কি দারুন কেমিস্ট্রি! তারপর অয়ন কে বাঁচানোর জন্য তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেছে অথচ অয়ন এখনো বেঁচে আছে। এইভান মারাত্মক একটা অপরাধ করেছে।

ইভান অতশীর এমন আকুতিমিনতি দেখে বললো তুমি রুমে যাও অতশী।আর খবরদার এভাবে কারো সামনে মাথানত করবে না।আমি সত্য হলে অবশ্যই ফিরে আসবো।আর পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা জানোয়ার দের টেনে হিঁচড়ে বের করবো।এই বলে ইভান চলে গেলো।

অতশী জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলো। সে কখনোই ভাবে নি ইভানের এইরকম অবস্থা হবে।মৌরি আর ইভানের মা ও কাঁদতে লাগলো।মুহুর্তের মধ্যে ইভানদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এলো।ইভানের বাবা সবাইকে তখন শান্ত্বনা দিয়ে বললো আমি নিজে ইভান কে নির্দোষ প্রমান করবো।তোমরা কেউ চিন্তা করো না।এডভোকেট হয়েছি কিসের জন্য?নিজের ছেলেকেই যদি নির্দোষ প্রমান না করতে পারি তাহলে আমি এই পেশাই ছেড়ে দিবো।
ইভানের বাবার কথা শুনে অতশী ওনার দিকে তাকালো।কারণ অতশী সেই থেকে ইভানের বাবাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে।এই কয় দিন ধরে বাসার মধ্যে ইভানের বাবা মিটিং করছে।নিশ্চয় এর পিছনে ইভানের বাবার কোনো হাত আছে।

পুলিশ অফিসার আকরাম যখন ইভান কে গাড়িতে ওঠাতে ধরলো আশেপাশে থেকে সাধারণ জনগণ একের পর এক ঢিল ছুঁড়ে মারলো।তারা নিজের হাতে ইভান কে শেষ করতে চাইলো।এখানে যারা যারা উপস্থিত হয়েছে তাদের কারো ভাই,আবার কারো বাবা এই সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লিখে আজ নিঃশ্ব হয়েছে,কেউ কেউ মারা গিয়েছে আবার কেউ আহত হয়ে সারাজীবন এর জন্য অচল হয়ে পড়ে আছে।অতশী দৌঁড়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো।আর দূর থেকে ইভানের এমন করুণ অবস্থা দেখতে লাগলো।অতশী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেও সে নিজেই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলো এর আসল রহস্য সে অবশ্যই খুঁজে বের করবে।কিন্তু কিভাবে করবে?

ইভানদের বাসায় আজ শোকের ছায়া।সবার খাওয়া দাওয়া বন্ধ।আর কারো চোখে কোনো ঘুম নেই।ইভানের বাবা সবাইকে শুধু শান্ত্বনা দিচ্ছে।অতশী তখন নিজেও ইভানের বাবার কাছে গেলো আর বললো বাবা,আপনি আজ থেকেই চেষ্টা করুন।প্লিজ বাবা ইভান কে বের করে আনুন তাড়াতাড়ি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে নির্দোষ প্রমাণ করুন।
–হ্যাঁ আমি তো চেষ্টা করবোই।আমি ছাড়া এখন কে আছে ওর পক্ষে?এই বলে ইভানের বাবা বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
ইভানের বাবা চলে যাওয়ার সাথে সাথে অতশী মৌরিকে বললো,মৌরি তুমি আমাকে একটা সত্য কথা বলবে?
–কি সত্য কথা?
–তুমি কি ইভান কে সত্যি সত্যি ভালোবাসো?আর কি সত্যি সত্যি চাও সে ফিরে আসুক আবার।
–হ্যাঁ অবশ্যই।কেনো নয়?সে আমার ভাই হয়।আমি সবসময় এটাই চাইবো।

–তোমার বাবাকে কি অয়ন আর শুভ্রর কথা বলেছিলে?ওরা যে বেঁচে আছে সেটা কি জানতো বাবা?

–হ্যাঁ।তো কি হইছে?বাবাকে বললে কি হবে?

অতশী সেই কথা শুনে মৌরির হাত ধরে বললো,খুব মারাত্নক ভুল করেছো তুমি।কি করে করতে পারলে এটা?
মৌরি এই কথা শুনে বেশ আশ্চর্য হলো।সে তো বাহিরের কাউকে বলে নি।তার বাবাকেই তো বলেছে।

অতশী তখন বললো, ইভানের এই অবস্থার জন্য তোমার বাবাই দায়ী।
–কি বলছো এসব?পাগল হইছো?উনি আমাদের বাবা হয়।আর একজন বাবা কি করে তার ছেলের সাথে এরকম একটা কাজ করতে পারে?
অতশী তখন মৌরিকে বললো প্লিজ মৌরি বিশ্বাস করো।অন্তত তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো।আমি ইভানকে বলেছিলাম কিন্তু সেও বিশ্বাস করে নি।
মৌরি সেই কথা শুনে বললো তুমি কি দেখেছো?আর কি জন্য বাবাকে সন্দেহ করছো?

অতশী তখন সব কথা খুলে বললো মৌরিকে।মৌরি নিজেও বেশ আশ্চর্য হলো।কারণ সে কখনোই জানতো না রাত তিনটার দিকে তার বাবা গোপনে মিটিং করে আর সবার রুমের দরজা লক করে রাখে।

মৌরি এই কথাটা তার মাকে বলতে চাইলে অতশী বারণ করলো তাকে।সে মৌরিকে বার বার করে বললো খবরদার কাউকে বলবে না এই কথা।কারণ এই মুহুর্তে কাউকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না আমাদের।সবসময় মনে রাখবে তোমার ভাই আর স্বামী অনেক বড় বিপদে আছে।তাদের কে যে করেই হোক নির্দোষ প্রমান করতেই হবে।তা না হলে অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে।

মৌরি অতশীর কথা মেনে নিলো।সে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।তার বাবার উপর তারও সন্দেহ হলো।কারণ অয়ন আর শুভ্র যে বেঁচে আছে সেটা সে তার বাবাকে নিজের থেকে বলে নি।তার বাবা নিজেই শুনতে চাইছিলো।এমন ভাবে জিজ্ঞেস করেছিলো মৌরি ভাবতেই পারে নি এর পিছনে অন্য কোনো রহস্য আছে।সে তো আর জানতো না তার নিজের বাবাই এই রকম একটা জঘন্য কাজে লিপ্ত।

#চলবে,