#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_২৭
“বাট তোমার মনে হয় না,তোমাকে ওর পাশে খুব একটা মানান সই লাগে না?”
কথাটা শুনে মুখের হাসি মিলিয়ে ভ্রু কুঁচকে গেলো আয়ুশীর।
“বলতে কি চান আপনি?”
“আরে আরে,রেগে যাচ্ছো কেনো! আই মিন ও বিদেশে স্টাডি করেছে।বাংলাদেশী মেয়ে কি ওর চলে বলো? ইহরা তো তাও ঠিক ছিল!বাট….”
আয়ুশী বুকে হাত গুজে মুচকি হেসে বলল,”তো ওর কেমন মেয়ে চলবে?”
“ওর জন্য তো বিদেশী মেয়েই পারফেক্ট হবে!সুন্দর হবে, বাংলাও বলতে পারবে!ওর সাথে মানান সই আরকি!”
“একদম আপনার মত তাই না?”
“হ্যাঁ আমার মত হলেও হয়!”
“আরে আপু!আপনার মত হলে হয় বলছেন কেনো?একবারে আপনি ই হয়ে যান না!”
ডেইজি লাজুক হাসলো! তা দেখে আয়ুশীর রাগে ফেটে পড়লো!
“তো এবার বলুন,আপনার মধ্যে কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?”
“আমি বিদেশে পড়েছি!”
“তো এতে কি এমন হয়েছে?”
“দেখো হায়ুশী,আমি কিন্তু কথাটা এমনি ই বলেছি!”
“ওয়েট ওয়েট!আয়ুশী.. ইটস আয়ুশী!আর আপনার কি মনে হয় ,আমি একটা মেয়ে হয়ে আপনার হাব ভাব ধরতে পারবো?আপনি হয়তো জানেন না,বাট আমরা বাঙালি মেয়েরা সহজেই এসব ধরতে পারি!এভাবে ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে সোজাসুজি বলুন!”
ডেইজি মনে হয় এখন সাহস পেলো!
“ওয়েল!বলেই ফেলি! আয়ানকে আমি ভালোবাসি!তাই বলছি ওর থেকে সরে যাও!”
“আর কিছু?”
“দেখো হায়ুশী! ইহরার জন্য প্রথমবার আমি আয়ানকে ছেড়ে দিয়েছি!কিন্তু ভাগ্য আবার আমাকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছে!”
“ওকে আর কিছু?”
“এবার আমি আয়ানকে অত সহজে ছাড়বো না!”
“আর?”
“আর ইউ ক্রে’জি?”
“না না,আমি একদম ঠিক আছি!শুধু আপনার মাথায় যে সমস্যা আছে ওটা ঠিক কত খানি সেটা বুঝার চেষ্টা করছি!”
“হায়ুশি!”
আয়ুশী দুই হাত উপরে তুলে বললো,”হে আল্লাহ!আমার এত সহজ নামকে এই বিদেশিনী টা কি বানাচ্ছে! ডা’ইনি একখান!”
“কি বললে?”
“বললাম ট্রাই ইউর বেস্ট!স্যারকে পটানোর জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা!টাটা!”
বলেই হাঁটা লাগালো,এদিকে ডেইজি ঠিক বুঝছে না পাগল কে! ও নাকি আয়ুশী !
__________________________________
ইহরার পাশে বসে ছিল আয়ুশী।তখনই আয়ান এসে ইহরার অপরপাশে বসলো!
“এই ইহরা,তোমার বোনকে বলো!এই আয়ান মাহতাব কিন্তু এত হ্যাংলা হতে পারবে না!কবে থেকে মানানোর চেষ্টা করছি অথচ মহারানীর কোনো হেল দোল নেই!এমন হলে কিন্তু আমি পুরনো পাত্তা না দেয়া আয়ান হয়ে যাবো বলে দিলাম!”
“আপু!আমি কি একবারও বলেছি আমাকে মানাতে?আমি আর কিছু ভাবি বা ভাববো না!বলে দেও উনাকে!”
“ইহরা,আমি কিন্তু ওর জন্য এখানে আসা সুন্দরী মেয়েদের ইগনোর করছি!”
“আপু,আমি কিন্তু একবারও বলি নি আমার জন্য ডেইজি আপুকে ইগনোর করতে!”
“এই ওয়েট , ইহরা ওকে জিজ্ঞেস করো তো ,ডেইজি কথা থেকে আসলো? ও তো ফাহিনের ওখানে!”
“আপু উনাকে বলে দেও, ফাহিন ভাইয়ার ওখানেই যখন তার মন পড়ে আছে তাহলে এখানে বসে আছে কেনো?”
“আজব আমি এটা কখন বললাম!”
“কোনটা?”
“আমার মন ফাহিনের ওখানে পড়ে আছে ,এইটা!”
“এইযে ,এখন বললেন!”
“ইহরা,তুমি কিছু বলবে না?”
“আপু তুমি কিছু বলবে?”
ইহরা এবার ফুসে উঠে বললো,”মামনি!”
ওর আওয়াজ শুনে নাহার ওর কাছে আসলেন!
“কি হলো?”
“তোমার এই দুই ছেলে মেয়েকে সরাও এখান থেকে!কই আমার গায়ে হলুদ হচ্ছে,ওরা হলুদ ছোঁয়াবে।একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে, তা শুনে আমি লজ্জা পাবো । তা না,এটা রীতিমতো আমার কান ঝালাপালা করে ফেলতেছে!”
আয়ুশী আর আয়ান দুইজনেই চোখ ছোট ছোট করে তাকালো!
“দেখো দেখো কিভাবে দেখছে!”
“আপু…”
“ইহরা!”
নাহার দুইজনে কান টেনে ধরে বললেন,”কেনো আমার মেয়েটাকে জ্বালাচ্ছিস!নাম দুইটা!
“আরে নামছি ছোট আম্মু,ছাড়ো!এখানে কত ছেলেরা আছে!ওদের সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা করো না!”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”কি বললে তুমি?”
আয়ুশী মুখ বাকালো! যার মানে,”যা শুনেছেন!”
নাহার দুইজনকে ওখান থেকে সরিয়ে একজায়গায় বসালেন!
“হলুদ শেষ হওয়ার আগে তোমরা ইহরাকে জ্বালাবে না!”
“আমি জ্বালাইনি ছোট আম্মু!উনি এসে শুরু করেছে!”
“ও হ্যালো আমি কি করলাম?”
“আপনি ই তো এসে হাঁসের মত প্যাক প্যাক করছিলেন!”
“আর তুমি চুপ ছিলে?”
নাহার তেঁতে উঠে বললেন,”চুপ!বাচ্চাদের মত করছো কেনো তোমরা?আর আয়ান তুমিও শেষ মেষ বাচ্চাদের মত বিহেভ করছো? বুদ্ধি জ্ঞান লোপ পেয়েছে নাকি?”
দুই জনই চুপ করে গেলো!
“এভাবেই চুপ থাকবে!”
বলেই চলে গেলো নাহার!
“এভাবে মাকে না রাগালেই পারতে!”
“আমি রাগিয়েছি?”
“আচ্ছা বেশ,আমি শুরু করেছি!এবার সরি!”
“হুহ!”
আবারও নাহার এলেন!
“আয়ান, ফাহিনের বাড়িতে সব উপহার গেছে তো!”
“হ্যাঁ মা,ডেইজি কে দিয়ে পাঠিয়েছি!আমিও এখন যাবো!ওদের হলুদ শুরু হয়নি!তুমি যাবে?”
“না না,আমি মেয়ের মা!আমার যাওয়া ঠিক হবে না এখন!তুমি আর আয়ু যাও!”
“আচ্ছা!”
অতঃপর দুইজন গেলো ফাহিনের বাড়ির উদ্দেশ্যে!বেশি দূর না! দশ মিনিটের রাস্তা! ফাহিনদের বাড়ির বাগানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে!
আয়ান আর আয়ুশী ফাহিনকে হলুদ দিলো!অনুষ্ঠান চলছে…আয়ান
কথা বলায় ব্যাস্ত,তখন এক মহিলা আসলো
“তোমার নাম কি মা?”
আয়ুশী হেসে বললো,”আয়ুশী আফরোজ!”
“ওহ,কোন ক্লাসে পড়?”
“জি এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার!”
“ওহ!”
মহিলাটি তার পাশের মহিলাকে ইশারা করছে কিছু বলতে!আয়ুশীর কেমন অস্বস্থি লাগলো!হয়তো ও বুঝতে পারছে মহিলাগুলোর ইন্টেনশন!প্রায় বিয়ে বাড়িতে এক দল থাকে,যারা হয় নিজের নয় নিজের ছেলে বা মেয়ের বিয়ের জন্য এসে থাকে!এরা তারই মধ্যে একজন!
হুট করেই মহিলাটি বললো,”তোমার বাড়ির কেউ আসেনি?বাবা বা মা!”
আয়ুশীর মনটা বিষিয়ে গেলো।বলতে গেলো নাহারদের সাথে থাকতে থাকতে মা বাবার কোনো অভাব বুঝতে পারেনি ও!কিন্তু এভাবে কেউ জিজ্ঞেস করলে অবশ্যই একটা বাবা মা হারা মেয়ের খারাপ লাগবে!আয়ুশী মলিন হেসে বললো,”আমার বাবা মা নেই!”
“ওহ!তো তুমি বিবাহিত কি?”
আয়ুশী চুপ করে রইলো।মূলত মা বাবার কথা মনে হওয়ায় ওর কান্না পাচ্ছে।তাই কথা বলতে পারছে না!
“বিবাহিত নয়,তবে ওর বিয়ে ঠিক!”
আয়ানের কথায় মহিলাগুলো ওর দিকে তাকালো!আয়ুশী কিছু না বলে ওখান থেকে ফাহিনদের বাড়ির ছাদে চলে গেলো!আগেও অনেকবার এই বাড়িতে এসেছে! ফাহিনের বাবা মাও ভীষন আদর করে ওকে!তাই ওর এত সংকোচ নেই!
“তুমি কে হও ওর?”
আয়ান হেসে বললো,”ওর উড বি!”
মহিলা গুলো মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলেন! আয়ান আয়ুশীকে খুঁজতে ভিতরে গেলো।এতক্ষণ ধরে ওদের কথা শুনছিল ও! ছাদের এক কোণায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আয়ুশী।
আয়ুশীর এটেনসন পেতে আয়ান হালকা কাশলো!কিন্তু আয়ুশীর কোনো হেল দোল দেখতে পেলো না।আবার কাশলো ও!তাও একই অবস্থা!আরেকবার কাশি দিয়েই আয়ুশী বলে উঠলো,”যক্ষ্মা হয়েছে নাকি আপনার?”
“নাতো!”
“তো এমন খ্যাক খ্যাক করছেন কেনো?”
আয়ান ভরকে গেল!
“একটু ঠাণ্ডা লেগেছে,তাই আরকি!”
আয়ুশী কিছু বললো না।
“মন খারাপ কেনো?আঙ্কেল আন্টিকে মিস করছো বুঝি?”
“কিছুটা!”
“আরে রিল্যাক্স!আঙ্কেল আন্টি যদি জানে তার মেয়ের জামাই থাকতেও তার মেয়ে তাদের জন্য মন খারাপ করছে ,আমাকে কিন্তু পানিশমেন্ট দিবে!”
“আজাইরা বকা ছাড়া আপনার কাজ নাই তাই না?”
“আমার এখনের কাজ আমার প্রেয়সীর মন ভালো করা!”
“এইসব উদ্ভট নামে আমাকে ডাকবেন না!খু’ন করে ফেলবো একদম!
“ভালোবেসে তো অর্ধেক খু’ন হয়েই গেছি!এবার বাকিটাও করে ফেলো!”
আয়ুশী আয়ানের দিকে কিছুক্ষন তাকালো!চোখ সরিয়ে চলে যেতে নিবেই তখনই আয়ান হাত ধরে আটকালো!ওকে নিজের সামনে দাড় করালো!
“আমি জানি আমার শুরু থেকে আজ অব্দি,অনেক ব্যাবহারই তোমায় কষ্ট দিয়েছে!এমনকি এও জানি আমার করা সেদিনের কাজগুলো তোমার মনে দাগ কেটেছে!বাট একবার আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখো!যদি তোমার কাছের কেও তোমার সাথে এমন একটা মজা করে তোমার রাগ হবে না? হ্যাঁ,আমি ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি!আসলে রাগ উঠলে আমি কন্ট্রোল করতে পারিনা!আমি জানি না কেনো,কিন্তু আমি নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি!আমার শুরু থেকে আজ অব্দি করা তোমার প্রতি কেয়ারিং,তোমাকে আগলিয়ে রাখা কোনো কিছুই দায়িত্ব বা মানবিকতা ছিল না।কিছু একটা তোমার দিকে আমায় শুধু টানতো!যেই অনুভূতি গুলো ইহরার প্রতি আনতে চাইতাম সেই অনুভূতি গুলো মনে অজান্তে তোমার প্রতি এসে পড়েছিল!প্রতি মুহূর্তে বুঝতাম আমি তোমার উপর দূর্বল,কিন্তু তাও পাত্তা দিতাম না!যতই দূরে সরানোর চেষ্টা করতাম ততই কাছে চলে আসতাম!সেদিন টিউশনির পর তুমি বাড়িতে আসোনি শুনে আমার নিজেকে পাগল প্রায় লেগেছিল।যখন সব জানলাম তখনই মনে হয়েছিলো ওদের কিছু একটা করে ফেলি!কিন্তু তখন গেলে পেতাম না। তাই পরের দিনই গেলাম! তোমার টিউশনি করতে বারণ করলাম ,কারণ চাইনি আবার এমন সিচুয়েশনে না পড়!এটা দায়িত্ব হলেও,ভালোবাসার দায়িত্ব আমার!এনগেজমেন্ট এর আগ মুহূর্ত অব্দি আমি শুধু ভেবেছিলাম কি করবো! ইহরা বা আমি কেউই কিছু করতে পারছিলাম না!একদিকে মা আরেক দিকে ইহরা!মাকে দেয়া কথা আর ইহরাকে এতদিন অপেক্ষা করানো সব ভাবাচ্ছিল আমায়!আমি তখনও জানতাম না ওদের কথা।জানলে হয়তো সেই মুহূর্তেই না করতাম!বাট….”
কিছুক্ষণ থামলো আয়ান!আবার বলতে লাগলো,
“প্রতিটা মুহূর্তে আমি ফিল করেছি যে ,আমি তোমায় ভালোবাসি!কিন্তু এত বাধ্যবাধকতা আমায় ঘিরে রেখেছিল আমি কিছুই বুঝতে পারিনি!কিন্তু তাই বলে আমার ফিলিংস ঠুনকো নয়!প্লিজ একটাবার সব ভুলে নতুন করে সবটা সাজাতে চাই!জাস্ট সুযোগ দেও!প্লিজ…আমি তোমায় ভালোবাসি আয়ুশী!”
আয়ুশী নিরুত্তর! আয়ান মলিন হেসে বললো,”সব বললাম!তাও সব ঠিক করার সুযোগ দিবে না?”
আয়ুশী তাও চুপ!
“বেশ!আমি না হয় পুড়তে থাকি,এই ভালোবাসার দহনে!মিস ঝামেলা!চলো নিচে,বাড়ি ফিরতে হবে!অনেক রাত হয়ে গেছে!”
বলেই নিচে চলে গেলো।আয়ুশী তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো!এখন মনে হচ্ছে ভুল করছে ও,এই মান অভিমান এর খেলা খেলে!আয়ানের মলিন মুখে বলা প্রতিটা কথা ওর কানে বাজছে !কিছু ভাবতে না পেরে নিচে গেলো ও! আয়ান ফাহিনের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো।
রাস্তায় হাঁটছে ওরা দুইজন!হুট করেই আয়ুশী থেমে গেলো! আয়ান ফোনে কথা বলছিল বিধায় খেয়াল করলো না!কিছুক্ষণ বাদেই খেয়াল হতেই পিছে ঘুরে তাকালো ও।আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে বললো,”কি হলো?দাড়িয়ে পড়লে কেনো?”
আয়ুশী হাতটাকে মুখের সামনে এনে মাইকের মত বানিয়ে বললো,”মাইক টেস্টিং,মাইক টেস্টিং! হ্যালো হ্যালো!”
“কি করছো আয়ুশী?রাত হয়েছে চলো!”
আয়ুশী ওর কথা না শুনেই বললো,”এইযে মিস্টার খারুশ!ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি!!শুনতে পেয়েছেন ভালোবাসিই! আপনায় আমি ভালোবাসি!”
আয়ান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তাই দেখে আয়ুশী সুর টেনে বললো,
“ভালোবাসি বলে দাও আমায়?
বলে দেও, হ্যাঁ সব কবুল…
তুমি শুধু আমারই হবে
যদি করো মিষ্টি এ ভুল!”
#চলবে#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_২৭
“বাট তোমার মনে হয় না,তোমাকে ওর পাশে খুব একটা মানান সই লাগে না?”
কথাটা শুনে মুখের হাসি মিলিয়ে ভ্রু কুঁচকে গেলো আয়ুশীর।
“বলতে কি চান আপনি?”
“আরে আরে,রেগে যাচ্ছো কেনো! আই মিন ও বিদেশে স্টাডি করেছে।বাংলাদেশী মেয়ে কি ওর চলে বলো? ইহরা তো তাও ঠিক ছিল!বাট….”
আয়ুশী বুকে হাত গুজে মুচকি হেসে বলল,”তো ওর কেমন মেয়ে চলবে?”
“ওর জন্য তো বিদেশী মেয়েই পারফেক্ট হবে!সুন্দর হবে, বাংলাও বলতে পারবে!ওর সাথে মানান সই আরকি!”
“একদম আপনার মত তাই না?”
“হ্যাঁ আমার মত হলেও হয়!”
“আরে আপু!আপনার মত হলে হয় বলছেন কেনো?একবারে আপনি ই হয়ে যান না!”
ডেইজি লাজুক হাসলো! তা দেখে আয়ুশীর রাগে ফেটে পড়লো!
“তো এবার বলুন,আপনার মধ্যে কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?”
“আমি বিদেশে পড়েছি!”
“তো এতে কি এমন হয়েছে?”
“দেখো হায়ুশী,আমি কিন্তু কথাটা এমনি ই বলেছি!”
“ওয়েট ওয়েট!আয়ুশী.. ইটস আয়ুশী!আর আপনার কি মনে হয় ,আমি একটা মেয়ে হয়ে আপনার হাব ভাব ধরতে পারবো?আপনি হয়তো জানেন না,বাট আমরা বাঙালি মেয়েরা সহজেই এসব ধরতে পারি!এভাবে ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে সোজাসুজি বলুন!”
ডেইজি মনে হয় এখন সাহস পেলো!
“ওয়েল!বলেই ফেলি! আয়ানকে আমি ভালোবাসি!তাই বলছি ওর থেকে সরে যাও!”
“আর কিছু?”
“দেখো হায়ুশী! ইহরার জন্য প্রথমবার আমি আয়ানকে ছেড়ে দিয়েছি!কিন্তু ভাগ্য আবার আমাকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছে!”
“ওকে আর কিছু?”
“এবার আমি আয়ানকে অত সহজে ছাড়বো না!”
“আর?”
“আর ইউ ক্রে’জি?”
“না না,আমি একদম ঠিক আছি!শুধু আপনার মাথায় যে সমস্যা আছে ওটা ঠিক কত খানি সেটা বুঝার চেষ্টা করছি!”
“হায়ুশি!”
আয়ুশী দুই হাত উপরে তুলে বললো,”হে আল্লাহ!আমার এত সহজ নামকে এই বিদেশিনী টা কি বানাচ্ছে! ডা’ইনি একখান!”
“কি বললে?”
“বললাম ট্রাই ইউর বেস্ট!স্যারকে পটানোর জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা!টাটা!”
বলেই হাঁটা লাগালো,এদিকে ডেইজি ঠিক বুঝছে না পাগল কে! ও নাকি আয়ুশী !
__________________________________
ইহরার পাশে বসে ছিল আয়ুশী।তখনই আয়ান এসে ইহরার অপরপাশে বসলো!
“এই ইহরা,তোমার বোনকে বলো!এই আয়ান মাহতাব কিন্তু এত হ্যাংলা হতে পারবে না!কবে থেকে মানানোর চেষ্টা করছি অথচ মহারানীর কোনো হেল দোল নেই!এমন হলে কিন্তু আমি পুরনো পাত্তা না দেয়া আয়ান হয়ে যাবো বলে দিলাম!”
“আপু!আমি কি একবারও বলেছি আমাকে মানাতে?আমি আর কিছু ভাবি বা ভাববো না!বলে দেও উনাকে!”
“ইহরা,আমি কিন্তু ওর জন্য এখানে আসা সুন্দরী মেয়েদের ইগনোর করছি!”
“আপু,আমি কিন্তু একবারও বলি নি আমার জন্য ডেইজি আপুকে ইগনোর করতে!”
“এই ওয়েট , ইহরা ওকে জিজ্ঞেস করো তো ,ডেইজি কথা থেকে আসলো? ও তো ফাহিনের ওখানে!”
“আপু উনাকে বলে দেও, ফাহিন ভাইয়ার ওখানেই যখন তার মন পড়ে আছে তাহলে এখানে বসে আছে কেনো?”
“আজব আমি এটা কখন বললাম!”
“কোনটা?”
“আমার মন ফাহিনের ওখানে পড়ে আছে ,এইটা!”
“এইযে ,এখন বললেন!”
“ইহরা,তুমি কিছু বলবে না?”
“আপু তুমি কিছু বলবে?”
ইহরা এবার ফুসে উঠে বললো,”মামনি!”
ওর আওয়াজ শুনে নাহার ওর কাছে আসলেন!
“কি হলো?”
“তোমার এই দুই ছেলে মেয়েকে সরাও এখান থেকে!কই আমার গায়ে হলুদ হচ্ছে,ওরা হলুদ ছোঁয়াবে।একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে, তা শুনে আমি লজ্জা পাবো । তা না,এটা রীতিমতো আমার কান ঝালাপালা করে ফেলতেছে!”
আয়ুশী আর আয়ান দুইজনেই চোখ ছোট ছোট করে তাকালো!
“দেখো দেখো কিভাবে দেখছে!”
“আপু…”
“ইহরা!”
নাহার দুইজনে কান টেনে ধরে বললেন,”কেনো আমার মেয়েটাকে জ্বালাচ্ছিস!নাম দুইটা!
“আরে নামছি ছোট আম্মু,ছাড়ো!এখানে কত ছেলেরা আছে!ওদের সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা করো না!”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”কি বললে তুমি?”
আয়ুশী মুখ বাকালো! যার মানে,”যা শুনেছেন!”
নাহার দুইজনকে ওখান থেকে সরিয়ে একজায়গায় বসালেন!
“হলুদ শেষ হওয়ার আগে তোমরা ইহরাকে জ্বালাবে না!”
“আমি জ্বালাইনি ছোট আম্মু!উনি এসে শুরু করেছে!”
“ও হ্যালো আমি কি করলাম?”
“আপনি ই তো এসে হাঁসের মত প্যাক প্যাক করছিলেন!”
“আর তুমি চুপ ছিলে?”
নাহার তেঁতে উঠে বললেন,”চুপ!বাচ্চাদের মত করছো কেনো তোমরা?আর আয়ান তুমিও শেষ মেষ বাচ্চাদের মত বিহেভ করছো? বুদ্ধি জ্ঞান লোপ পেয়েছে নাকি?”
দুই জনই চুপ করে গেলো!
“এভাবেই চুপ থাকবে!”
বলেই চলে গেলো নাহার!
“এভাবে মাকে না রাগালেই পারতে!”
“আমি রাগিয়েছি?”
“আচ্ছা বেশ,আমি শুরু করেছি!এবার সরি!”
“হুহ!”
আবারও নাহার এলেন!
“আয়ান, ফাহিনের বাড়িতে সব উপহার গেছে তো!”
“হ্যাঁ মা,ডেইজি কে দিয়ে পাঠিয়েছি!আমিও এখন যাবো!ওদের হলুদ শুরু হয়নি!তুমি যাবে?”
“না না,আমি মেয়ের মা!আমার যাওয়া ঠিক হবে না এখন!তুমি আর আয়ু যাও!”
“আচ্ছা!”
অতঃপর দুইজন গেলো ফাহিনের বাড়ির উদ্দেশ্যে!বেশি দূর না! দশ মিনিটের রাস্তা! ফাহিনদের বাড়ির বাগানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে!
আয়ান আর আয়ুশী ফাহিনকে হলুদ দিলো!অনুষ্ঠান চলছে…আয়ান
কথা বলায় ব্যাস্ত,তখন এক মহিলা আসলো
“তোমার নাম কি মা?”
আয়ুশী হেসে বললো,”আয়ুশী আফরোজ!”
“ওহ,কোন ক্লাসে পড়?”
“জি এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার!”
“ওহ!”
মহিলাটি তার পাশের মহিলাকে ইশারা করছে কিছু বলতে!আয়ুশীর কেমন অস্বস্থি লাগলো!হয়তো ও বুঝতে পারছে মহিলাগুলোর ইন্টেনশন!প্রায় বিয়ে বাড়িতে এক দল থাকে,যারা হয় নিজের নয় নিজের ছেলে বা মেয়ের বিয়ের জন্য এসে থাকে!এরা তারই মধ্যে একজন!
হুট করেই মহিলাটি বললো,”তোমার বাড়ির কেউ আসেনি?বাবা বা মা!”
আয়ুশীর মনটা বিষিয়ে গেলো।বলতে গেলো নাহারদের সাথে থাকতে থাকতে মা বাবার কোনো অভাব বুঝতে পারেনি ও!কিন্তু এভাবে কেউ জিজ্ঞেস করলে অবশ্যই একটা বাবা মা হারা মেয়ের খারাপ লাগবে!আয়ুশী মলিন হেসে বললো,”আমার বাবা মা নেই!”
“ওহ!তো তুমি বিবাহিত কি?”
আয়ুশী চুপ করে রইলো।মূলত মা বাবার কথা মনে হওয়ায় ওর কান্না পাচ্ছে।তাই কথা বলতে পারছে না!
“বিবাহিত নয়,তবে ওর বিয়ে ঠিক!”
আয়ানের কথায় মহিলাগুলো ওর দিকে তাকালো!আয়ুশী কিছু না বলে ওখান থেকে ফাহিনদের বাড়ির ছাদে চলে গেলো!আগেও অনেকবার এই বাড়িতে এসেছে! ফাহিনের বাবা মাও ভীষন আদর করে ওকে!তাই ওর এত সংকোচ নেই!
“তুমি কে হও ওর?”
আয়ান হেসে বললো,”ওর উড বি!”
মহিলা গুলো মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলেন! আয়ান আয়ুশীকে খুঁজতে ভিতরে গেলো।এতক্ষণ ধরে ওদের কথা শুনছিল ও! ছাদের এক কোণায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আয়ুশী।
আয়ুশীর এটেনসন পেতে আয়ান হালকা কাশলো!কিন্তু আয়ুশীর কোনো হেল দোল দেখতে পেলো না।আবার কাশলো ও!তাও একই অবস্থা!আরেকবার কাশি দিয়েই আয়ুশী বলে উঠলো,”যক্ষ্মা হয়েছে নাকি আপনার?”
“নাতো!”
“তো এমন খ্যাক খ্যাক করছেন কেনো?”
আয়ান ভরকে গেল!
“একটু ঠাণ্ডা লেগেছে,তাই আরকি!”
আয়ুশী কিছু বললো না।
“মন খারাপ কেনো?আঙ্কেল আন্টিকে মিস করছো বুঝি?”
“কিছুটা!”
“আরে রিল্যাক্স!আঙ্কেল আন্টি যদি জানে তার মেয়ের জামাই থাকতেও তার মেয়ে তাদের জন্য মন খারাপ করছে ,আমাকে কিন্তু পানিশমেন্ট দিবে!”
“আজাইরা বকা ছাড়া আপনার কাজ নাই তাই না?”
“আমার এখনের কাজ আমার প্রেয়সীর মন ভালো করা!”
“এইসব উদ্ভট নামে আমাকে ডাকবেন না!খু’ন করে ফেলবো একদম!
“ভালোবেসে তো অর্ধেক খু’ন হয়েই গেছি!এবার বাকিটাও করে ফেলো!”
আয়ুশী আয়ানের দিকে কিছুক্ষন তাকালো!চোখ সরিয়ে চলে যেতে নিবেই তখনই আয়ান হাত ধরে আটকালো!ওকে নিজের সামনে দাড় করালো!
“আমি জানি আমার শুরু থেকে আজ অব্দি,অনেক ব্যাবহারই তোমায় কষ্ট দিয়েছে!এমনকি এও জানি আমার করা সেদিনের কাজগুলো তোমার মনে দাগ কেটেছে!বাট একবার আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখো!যদি তোমার কাছের কেও তোমার সাথে এমন একটা মজা করে তোমার রাগ হবে না? হ্যাঁ,আমি ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি!আসলে রাগ উঠলে আমি কন্ট্রোল করতে পারিনা!আমি জানি না কেনো,কিন্তু আমি নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি!আমার শুরু থেকে আজ অব্দি করা তোমার প্রতি কেয়ারিং,তোমাকে আগলিয়ে রাখা কোনো কিছুই দায়িত্ব বা মানবিকতা ছিল না।কিছু একটা তোমার দিকে আমায় শুধু টানতো!যেই অনুভূতি গুলো ইহরার প্রতি আনতে চাইতাম সেই অনুভূতি গুলো মনে অজান্তে তোমার প্রতি এসে পড়েছিল!প্রতি মুহূর্তে বুঝতাম আমি তোমার উপর দূর্বল,কিন্তু তাও পাত্তা দিতাম না!যতই দূরে সরানোর চেষ্টা করতাম ততই কাছে চলে আসতাম!সেদিন টিউশনির পর তুমি বাড়িতে আসোনি শুনে আমার নিজেকে পাগল প্রায় লেগেছিল।যখন সব জানলাম তখনই মনে হয়েছিলো ওদের কিছু একটা করে ফেলি!কিন্তু তখন গেলে পেতাম না। তাই পরের দিনই গেলাম! তোমার টিউশনি করতে বারণ করলাম ,কারণ চাইনি আবার এমন সিচুয়েশনে না পড়!এটা দায়িত্ব হলেও,ভালোবাসার দায়িত্ব আমার!এনগেজমেন্ট এর আগ মুহূর্ত অব্দি আমি শুধু ভেবেছিলাম কি করবো! ইহরা বা আমি কেউই কিছু করতে পারছিলাম না!একদিকে মা আরেক দিকে ইহরা!মাকে দেয়া কথা আর ইহরাকে এতদিন অপেক্ষা করানো সব ভাবাচ্ছিল আমায়!আমি তখনও জানতাম না ওদের কথা।জানলে হয়তো সেই মুহূর্তেই না করতাম!বাট….”
কিছুক্ষণ থামলো আয়ান!আবার বলতে লাগলো,
“প্রতিটা মুহূর্তে আমি ফিল করেছি যে ,আমি তোমায় ভালোবাসি!কিন্তু এত বাধ্যবাধকতা আমায় ঘিরে রেখেছিল আমি কিছুই বুঝতে পারিনি!কিন্তু তাই বলে আমার ফিলিংস ঠুনকো নয়!প্লিজ একটাবার সব ভুলে নতুন করে সবটা সাজাতে চাই!জাস্ট সুযোগ দেও!প্লিজ…আমি তোমায় ভালোবাসি আয়ুশী!”
আয়ুশী নিরুত্তর! আয়ান মলিন হেসে বললো,”সব বললাম!তাও সব ঠিক করার সুযোগ দিবে না?”
আয়ুশী তাও চুপ!
“বেশ!আমি না হয় পুড়তে থাকি,এই ভালোবাসার দহনে!মিস ঝামেলা!চলো নিচে,বাড়ি ফিরতে হবে!অনেক রাত হয়ে গেছে!”
বলেই নিচে চলে গেলো।আয়ুশী তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো!এখন মনে হচ্ছে ভুল করছে ও,এই মান অভিমান এর খেলা খেলে!আয়ানের মলিন মুখে বলা প্রতিটা কথা ওর কানে বাজছে !কিছু ভাবতে না পেরে নিচে গেলো ও! আয়ান ফাহিনের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো।
রাস্তায় হাঁটছে ওরা দুইজন!হুট করেই আয়ুশী থেমে গেলো! আয়ান ফোনে কথা বলছিল বিধায় খেয়াল করলো না!কিছুক্ষণ বাদেই খেয়াল হতেই পিছে ঘুরে তাকালো ও।আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে বললো,”কি হলো?দাড়িয়ে পড়লে কেনো?”
আয়ুশী হাতটাকে মুখের সামনে এনে মাইকের মত বানিয়ে বললো,”মাইক টেস্টিং,মাইক টেস্টিং! হ্যালো হ্যালো!”
“কি করছো আয়ুশী?রাত হয়েছে চলো!”
আয়ুশী ওর কথা না শুনেই বললো,”এইযে মিস্টার খারুশ!ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি!!শুনতে পেয়েছেন ভালোবাসিই! আপনায় আমি ভালোবাসি!”
আয়ান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তাই দেখে আয়ুশী সুর টেনে বললো,
“ভালোবাসি বলে দাও আমায়?
বলে দেও, হ্যাঁ সব কবুল…
তুমি শুধু আমারই হবে
যদি করো মিষ্টি এ ভুল!”
#চলবে
#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_২৮
আয়ান মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে আয়ুশীকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে কয়েক পা পিছিয়ে যায় ও! আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”কি হলো?”
“এত সহজ নাকি?এত সুন্দর করে প্রপোজ করলাম,রিপ্লাই না দিয়ে জড়িয়ে ধরতে চাইছেন?এই আপনার ম্যানার্স,স্যার!ছি ছি…”
আয়ান কোমরে হাত রেখে বলল,”তখন ছাদে আমিও বলেছিলাম!”
“তাতে কি?এখন তো সব নতুন!”
“তো কি করতে হবে শুনি?”
“সুন্দর করে রিপ্লাই করবেন!পছন্দ না হলে সব ক্যান্সেল!”
“কোন কুক্ষণে যে তোমার প্রেমে পড়েছিলাম,আল্লাহ জানে!”
“বুঝাতে কি চান?”
“কিছু না!”
একটু ভেবে বললো,
“ভালোবাসি বললাম আমি…
করলাম সবই কবুল…
আমি শুধু তোমারই রবো!
করলাম মিষ্টি এই ভুল…!
হাতে হাত রাখতে পারো!
সন্ধি আঙ্গুলে আঙ্গুল!
ভালোবাসা বাড়াতে আরো..
হৃদয় ভীষণ ব্যাকুল!”
আয়ুশী মিষ্টি হেসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।ফোনের ওপাশ থেকে খট করে কল কেঁটে দিলো ডেইজি! আয়ান ওকে না বলে চলে গেলো কেনো জানতেই ফোন দিয়েছিল ও!শুরু থেকে হওয়া সবটা শুনে ওর রাগে গা জ্ব’লছে….
“না না আয়ান!আমি এবার তোমাকে হারাতে দিতে পারি না! ইহরার জন্য প্রথমে তোমাকে স্যাক্রিফাইস করেছি!এখন ভাগ্য যখন দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছে,তার মানে ভাগ্যও চায় তুমি আমার হও!তোমার জন্য বাঙালির মত চালচলন করি,আর তুমি অন্য কারোর হবে!এটা তো আমি মানবো না!তোমার লাইফে শুধু আমি থাকবো!আর কেউ না!”
__________________________________
জমজমাট বিয়ের আয়োজনে মেতে উঠেছে আয়ানদের বাড়ি!মাঝে রয়েছে ইহরা, আয়ান আর আয়ুশীর খুনসুটি মুহুর্ত!সব দেখে নাহারের চোখে পানি এলো। ইহরা হয়তো বেশি দূরে যাচ্ছে না,কিন্তু তাও..আগের মত তো এই বাড়িতে থাকবে না!
“ও মামনি!”
ইহরাকে দেখে তড়িঘড়ি চোখ মুছলেন উনি!
“কাঁদছো কেনো?”
“মেয়ের বিয়েতে সব মা ই একটু কাঁদে পাগলী!”
“আমি কি দূরে কোথাও যাচ্ছি নাকি? এখান থেকে এখানে!যখন ডাকবে,ছুটে চলে আসবো!”
“হয়েছে সংসার ফেলে ছোটাছুটি করা লাগবে না তোমার!কয়েকদিন পর তো আয়ুও চলে যাবে!”
“আয়ুকে রেখে দিলেই পারো!”
“তা হয় নাকি?সব মেয়েদেরই বিয়ে করে পরের বাড়ি যেতে হয়!”
“বিয়ে করবে তো ঠিকই,কিন্তু পরের বাড়ি যাবে না!”
“তো কি ঘর জামাই আনবো?”
“উফফ মামনি!ঘরে বিয়ে উপযুক্ত ছেলে থাকতে ঘর জামাই আনবে কেনো?”
নাহার একটু ভাবলেন,তারপর বললেন…
“না বাবা,আবার আয়ুশীও তোমার মত পরিস্থিতিতে পড়ুক আমি চাই না!এসব বাদ মানে বাদ!”
বলেই রান্নাঘরে চলে গেলেন! ইহরা আফসোসের সুরে বলল,
“যাক বাবা,এবার তো কেস জন্ডিস হয়ে গেলো!কি হবে এবার?”
“ইহরা আপু!”
আয়ুশীর ডাকে ওর দিকে তাকালো ইহরা!
“হুমম বলো!”
“আমার অভিযোগ আছে!”
ইহরা কোমরে দুই হাত রেখে বলল,”আবার?”
“আরে স্যারকে নিয়ে নয়!”
“তাহলে?”
“উনাকে নিয়ে!”,ডেইজিকে ইশারা করে বললো ও!
“ডেইজি?ডেইজি আপু কি করলো?”
“ওই ডা’ইনি আপু স্যারের পিছে পিছে ঘুর ঘুর করে শুধু!”
“তোমার ভুল হচ্ছে আয়ু, ও তো জাস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড ওর!আসলে অনেক বছরের ফ্রেন্ডশিপ তো,তাই একটু ক্লোজ!এতে জেলাস হওয়ার কিছু নেই বোনু!আচ্ছা আমি যাই,পার্লারের লোক এসে গেছে!”
“আরে আপু পুরোটা তো শুনো!”
ইহরা না শুনে চলে গেলো!আয়ুশী গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলো ডেইজির দিকে!এই ডেইজি যে ওকে কি কি বলেছে, তা তো কেউ জানে না আর!হুট করেই কেউ কানে ফুঁ দেয়ায় চমকে উঠলো আয়ুশী। আয়ানকে দেখে মুখের আরো বারোটা বাজলো!আর সবাই বাদ,একটা ছেলে হয়েকি ও বুঝতে পারে না?কোন মেয়ে ওকে কি চোখে দেখে?
“কি ব্যাপার,মিস ঝামেলা?আবার কোন ঝামেলা করার প্ল্যানিং করছো?”
“হ্যাঁ,আমি তো খালি ঝামেলাই করি!ঝামেলার দিন জন্ম নিয়েছিলাম কিনা!”
“আরে আরে,কি হয়েছে?এভাবে ক্ষেপে যাচ্ছো কেনো?”
“ডা’ইনি এসেছে, ডা’ইনি!তাই…”
বলে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।
“এই রূপকথার ডা’ইনি বাস্তবে এসে কি ভর করলো ওর উপর?ভাবার বিষয় তো!”
বলেই ভাবুক ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো!
রান্নার কাজ দেখতে রান্নাঘরে এসেছিলেন নাহার!এসেই চমকে গেলেন!আয়ানের বিদেশি বন্ধুটা বাঙালি মেয়ের মত শাড়ি পড়েছে।আঁচলটা কোমরে গুঁজে রান্নার সব কাজ দেখছে ও!নাহার সন্তুষ্ট হলেন! আজকালকার যুগে বিদেশে বড় হওয়া মেয়েটা এত নিখুত বাঙালি সংস্কার বজায় রেখেছে ভাবতেই ভালো লাগছে উনার!
“আরে আরে মা!তুমি এত কষ্ট করছো কেনো?মেহমানদের দিয়ে কাজ করালে আমাদের ভালো লাগবে নাকি?”
“আন্টি,মেহমান বলছেন কেনো?আমিও তো আপনার মেয়েরই মত!”
“ভারী মিষ্টি তুমি!তোমার নামটা যেনো কি?”
“ডেইজি!”
“ফুলের নাম,দেখতেও ফুলের মত!”
ডেইজি কিছুটা লজ্জা পেলো!
“তাও,এভাবে এত কাজ করলে হবে?তোমার বন্ধুর বিয়ে,মজা করবে না?”
“বোনেরও তো বিয়ে!কাজ তো করাই যায়..আর তাছাড়াও কে বলতে পারে!ভবিষ্যতে আমার উপরেই এসব কাজের দায় পড়ে?”
নাহার কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলেন!ডেইজির থুতনি ধরে জিজ্ঞেস করলেন!
“ভবিষ্যৎ বলতে কি বুঝালে?”
ডেইজি লজ্জায় মাথা নিচু করলো!
“হয়েছে হয়েছে,আর লজ্জা পেতে হবে না!এই বিয়েটা হোক,তারপর ঐ বাঁ’দরেরও ব্যাবস্থা হবে!এবার যাও যাও…এখানে তোমার কোনো কাজ নেই!রেডি হও..”
বলেই ঠেলে পাঠিয়ে দিলেন!ডেইজি হেসে সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলো আয়ুশী মুখ ভার করে দাড়িয়ে আছে!নাহার আর ওর সব কথাই শুনেছে ও!ডেইজি বাঁকা হেসে ওর কাছে গেলো!
“হেই..!”
একটু ভেবে বললো,”আতুশি?”
আয়ুশী চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,”আয়ুশী!”
“হোয়াটেভার!আসলে বাংলাটা খুব একটা রপ্ত হয়নি এখনও!বাট হয়ে যাবে,এখানেই তো থাকবো!তাই না?”
আয়ুশী রাগী দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে উপরে চলে গেলো।ডেইজি আফসোসের সুরে বলল,”সরি হায়ুশি!না আতুশি.. যাই হোক..সরি গো!আমি একবার মহান হয়েছি!এবার আর হচ্ছি না!”
__________________________________
সন্ধ্যা নেমে আসছে!এই সময় ছাদে আসাটা ঠিক না!মুরব্বিদের ভাষ্যমতে এই সময়টায় জ্বীনরা থাকে!অবশ্য আয়ুশী নিজেও মানে!কিন্তু মন খারাপ হলেই আকাশটাই ওর দুঃখ বিলানোর জায়গা হয়!আকাশের দিকে তাকিয়ে দুঃখগুলো বলতে ভালো লাগে ওর! মন ও হালকা হয়!ডেইজি আর নাহারের কথা শুনে এটা বুঝেছে,নাহার ডেইজিকে ভীষণ পছন্দ করেছে!আচ্ছা এবারও কি আয়ান নাহারের জন্য ডেইজিকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে?ছেড়ে দিবে ওর হাত?আগেরবারের মত এবারও কি মায়ের মুখের হাসিটা বজায় রাখতে রাজি হবে? হ্যাঁ, ও নিজেও চায় নাহার সবসময় হাসুক!যেই মানুষটা তার নিজের সন্তান না হওয়া সত্বেও এত ভালোবাসা দিয়েছেন,সেই মানুষটার হাসি কেনো কেড়ে নিবে ওরা?কিন্তু ওর কি হবে?আবারও কি সেই পুর্বের যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে?ভাবতেই চোখের কোণে জল চলে আসলো!কষ্টের জন্য না!ভালোবাসার মানুষকে হারাবার ভয়ে!
“তো মহারানী এখানে!আর আমি সারা বাড়ি খুঁজছি!”
আয়ানের গলা শুনে তাড়াতাড়ি ওর আড়ালে জমে থাকা জল মুছে ফেললো!কিন্তু আয়ানের থেকে আড়াল করতে পারলো না! আয়ান ওকে নিজের দিকে ঘুরালো!
“কি হয়েছে আমার মহারানীর?”
“কিছু না!”
“আমার দিকে তাকিয়ে বলো!”
আয়ুশী তাকালো না!
“আয়ুশী তাকাতে বলেছি!”
আয়ুশী আয়ানের দিকে তাকাতেই চোখ থেকে কয়েকফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো! আয়ুশীর দুই গালে হাত দিয়ে আয়ান বিচলিত হয়ে বললো,”কি হয়েছে আয়ুশী?কেউ কিছু বলেছে?কোনো সমস্যা হয়েছে?কাঁদছো কেনো?”
আয়ুশী চোখ নামিয়ে বললো,”আম্মু আব্বুকে মিস করছিলাম!”
“আয়ুশী,আমি তোমাকে অল্পদিনে হলেও এইটুকু চিনেছি তুমি কারো চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে কথা বলতে পারো না।সো প্লিজ!মিথ্যে বলা বন্ধ করো!আর সত্য বলে থাকলে আমার দিকে তাকিয়ে আবার উত্তর দেও!”
আয়ুশী আয়ানের চোখের দিকে তাকালো!হুট করেই বলে বসলো,
“ছোট আম্মু যদি এবারও কাউকে বিয়ে করতে বলে,আপনি কি রাজি হয়ে যাবেন?ছেড়ে চলে যাবেন আমায়?”
আয়ুশীর প্রশ্নে অবাক হলো আয়ান!
“এসব কি বলছো তুমি?”
“উত্তর দিন না!”
“হারানোর ভয় পাচ্ছো?”
আয়ুশী চোখ সরিয়ে নিলো!
“আবার চোখ ঘুরিয়ে নেয়!”
আয়ুশী আবারও আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,”আপনাকে পেয়ে আবার হারানোর ভয়টা আমার একটু বেশি ই মিষ্টার খারুশ!মানতে পারবো না আমি!একদম না….না পেয়ে যদি হারাতাম তাও মানতে পারতাম!কিন্তু পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা যে খুব বেশি!অনেকটাই বেশি!”
আয়ুশীর কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললো,”একবার যখন সুযোগ পেয়েছি,ভালোবাসাকে কাছে রাখার..সহজে ছাড়বো না!আর সেদিনের পর এটা বুঝেছি,মায়ের হাসি সেটাতেই,যেটাতে আমরা খুশি!তাই কখনো এমন হলেও,মাকে বললে সে ঠিক বুঝবে!”
আয়ুশী মৃদু হাসলো!
“এবার যাওয়া যাক?বিয়ে শুরু হবে,অথচ আপনার সাজার খবর নেই!জলদি তৈরি হন মিস ঝামেলা!”
আয়ুশী হেসে নিচে গেলো।তার পিছু পিছুই আয়ান নেমে এলো!
__________________________________
বধূ বেশে লাল বেনারসিতে অপূর্ব লাগছে ইহরাকে! ইহরাকে দেখে আয়ুশী নিজেই তব্দা খেয়ে বসে আছে। চোখই সরাতে পারছে না!
“ইহরাপু!আমি ক্রাশিত তোমার উপরে!”
“থ্যাংকস,বাট আমি বেলুন না যে তোমার পাম শুনে ফুলবো!”
“আরে পাম না,পাম না!সিরিয়াসলি..ডাক্তার একদম চোখ সরাতে পারবে না দেখো!”
ইহরা লাজুক হাসলো!তখনই এলো ডেইজি!ডেইজিকে দেখে আয়ুশীর মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো।জলপাই কালারের লেহেঙ্গা ,সাথে হালকা সাজে বেশ মনকাড়া লাগছে ডেইজিকে!অপরদিকে আয়ুশী মিষ্টি কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে! ওকেও ভালো লাগছে,কিন্তু ওর মনে হচ্ছে ডেইজিকে বেশি ভালো লাগছে!
“আরে ইহরা,তোমাকে অপরূপা লাগছে!”
“থ্যাংকস আপু!”
“আর তুমি,কি যেনো! হায়ু…না না,আতু!উফফ মনে করতে পারছি না! ওহ হ্যাঁ, হাতুশি..তোমাকেও দারুন লাগছে!”
আয়ুশীর চোখ ছানাবড়া! আতুশি, হায়ুশি তাও মানা গেছে!একটু একটু তো মিল ছিল!এখন পুরোই হাতুশি বানিয়ে দিলো।আয়ুশীর এমন নাম শুনে ইহরা ঠোঁট চেপে হাসতে লাগলো!আয়ুশী দম ফেলে বললো,”না জানি কোনদিন,হাতুড়ি বানিয়ে ফেলেন!ভেবেই মাথা ঘুরাচ্ছে আমার!”
এবার ইহরা জোড়ে হেসে দিলো!
“আসলে..”,আয়ুশী ডেইজিকে থামিয়ে বললো..
“হ্যাঁ, হ্যাঁ!জানি!বাংলা অত রপ্ত হয়নি! আস্তে আস্তে শিখে যাবে!…এখানেই তো থাকবেন!”
ইহরা অবাক হয়ে বললো,”এখানে থাকবে মানে?ডেইজি আপু,তুমি বাংলাদেশ সেটেল হবে?”
ডেইজির কিছু বলার আগে নিচে শুনা গেল ,বরযাত্রী এসে গেছে!আয়ুশী লেহেঙ্গা সামান্য উচু করে দৌড়ে চলে গেলো! শালীকা হিসেবে কিছু পাওনা আছে তো ওর!গেট ধরে টাকা পেয়ে খুশি মনে ফাহিনকে স্টেজে বসালো ও!!
“এই ডাক্তার, ইহরাপুকে না যা লাগছে দেখতে!আমি তো মেয়ে হয়েই ক্রাশ খেয়েছি!”
“তো মিস রোগী!ছবি টবি আছে কি?”
“আছে!কিন্তু আপনাকে কেনো দেখাবো?”
“আমার যে তর সইছে না!”
“অপেক্ষা করুন ডাক্তার!এভাবে দেখলে মজাটাই চলে যাবে!”
বলেই নিচে নেমে এলো।
“ফাহিনকে কি পরামর্শ দিচ্ছিলেন শুনি?”
আয়ানের কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,”বললাম,বিয়েটা ভেঙ্গে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে!”
“মজা নেও?”
“মজা কই নিলাম!আপনি যা জেলাস ফাহিন ভাইয়াকে নিয়ে!”
“আমি মোটেও জেলাস না!”
“আপনি জেলাস!শুধু ডাক্তার না,অন্য ছেলেদের নিয়েও!”
“বলছে তোমাকে?”
আয়ুশী গালে হাত দিয়ে বললো,”দেখুন,ওই ছেলেটা আমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে!”
আয়ান আয়ুশীর দৃষ্টি অনুসারে তাকাতেই দেখলো আসলেই একটা ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।রাগী দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আয়ুশীর হাত ধরে ছেলেটার আড়ালে দাড়ালো!আয়ুশী ঠোঁট চেপে হাসি আটকাতে চেষ্টা করলো!
“কি?এভাবে হাসো কেনো?”
“না,আপনি মোটেও জেলাস না!”
আয়ান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে হুট করেই বলে উঠলো,”ডেইজিকে বেশ সুন্দর লাগছে তাই না?”
“জানে মে’রে দিবো!”
“কাকে?আমাকে?”
“আপনাকে না,ডেইজিকে!আসছে পর থেকে আপনার দিকে নজর দিচ্ছে!আমার রাগ উঠলে কিন্তু সিড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো ওকে বলে দিলাম!”
বলেই হন হন করে চলে গেলো। আয়ান হেসে বললো,”পা’গলী একটা!”
আড়াল থেকে ডেইজি এইসব শুনে বললো,”সেই সুযোগ তুমি পাবে না!তার আগেই আয়ান আমার হবে!দেখে নিও,মিস যাই হোক!”
#চলবে