অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-১৩

0
3098

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ১৩
#Arshi_Ayat

নিশাত ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল”হ্যালো কে বলছেন?”

“আজব তো আপনি আমাকে কল দিয়ে জিগ্যেস করছেন আমি কে?”

“আমি আপনাকে কল দেই নি।আপনার নাম্বার থেকে কল এসেছিলো তাই আমি আপনাকে কল ব্যাক করলাম।”

“কি যা তা বলছেন?আমি আপনাকে ফোন করতে যাবো কেনো?”

নিশাতের এমন কথা শুনে তিহান ড্রেডিং করতে করতেই হাত দিয়ে ইশারায় বলল “কে ফোন করেছে?”

নিশাত ফোনের স্পিকারে হাত রেখে গলাটা একটু খাদে নামিয়ে বলল”জানি না।রং নাম্বার।কিন্তু বলছপ আমি নাকি ওরে ফোন করছি।কিন্তু আমিতো এই নাম্বারই চিনি না ফোন তো দূরে থাক।”

তিহান বুঝতে পারলো ছেলেটা রং নাম্বারে ফোন দিয়ে লাইন মারার ট্রাই করছে।তিহান মনে মনে বলল”শালার!পুরান পাগলের ভাত নাই আবার নতুন পাগলের আমদানি।”কিন্তু মুখে বলল”ধূর এদের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।ফোন কেটে নাম্বার ব্লক কর।এরপরেও যদি ডিস্টার্ব করে তাহলে নাম্বারটা আমাকে দিয়ে দিস।”

নিশাত তিহানের কথামতো নাম্বারটা ব্লক লিস্টে ফেলে দিলো।তারপর তিহান ওর ড্রেসিং কমপ্লিট করে ঔষধ খাইয়ে চলে গেলো।তিহান আর তনয় রিয়াদের বৌ ভাত এটেন্ড করলো।নিশাত অসুস্থ থাকায় তিতির খান যেতে পারলো না।

এক জায়গায় বসে থাকতে থাকতে নিশাত বোর হয়ে গেছে।তাই গলা উচিয়ে তিতির খান কে ডাক দিলো”খালামনিইইই”

তিতির খান এসে বলল”কিছু লাগবে তোর?”

“না একটু তিহান ভাইয়ার রুমে দিয়ে আসবে?এখানে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।”

“আচ্ছা আয়।”

তিতির খান নিশাতকে ধরে ধরে তিহানের রুমে দিয়ে আসলো।নিশাত খাটের পাশের বুকসেল্ফ থেকে”রেজ অব এঞ্জেলস” বইটা টান দিতেই ওটার পাশে একটা এলবাম পেলো।নিশাত কৌতুহল বশত এলবামটা নিলো।দেখার জন্য যে এখানে কার কার ছবি আছে।এলবাম খুলতেই নিজের একটা ছবি দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো।তারপরের পাতায় কার ছবি আছে দেখার জন্য উল্টাতেই দেখলো এখানেও ওর ছবি।নিশাত অনেকগুলো পাতা একসাথে উল্টালো।নাহ!ওর ছবি ছাড়া আর কারো ছবি নেই।বিভিন্ন পোজ দেওয়া ছবি আছে।পুরো এলবামের ছবিগুলো দেখে একবারে শেষের ছবিতে এসেই বড়সড় শক খেলো।এই ছবিতে তিহান আর ও পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে।এই ছবিটা তার গত জন্মদিনের দিন তোলা।এটাও এখানে।আর সবচেয়ে অবাক হলো নিশাতের ছবির ওপর কালো মার্কার দিয়ে লেখা”মাই লাভ”

নিশাত ছবিটা হাতে নিয়ে উল্টো করতেই আরেকটা লেখা দেখলো”আই নিড ইউ ব্যাডলি ইয়ার।”

নিশাতের মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না।এটা কি সত্যি?নিশাত সব আগের মতো করে রেখে দিলো।কিছুতেই ওর মাথাতে থেকে বিষয়টা নামছে না।আর এটা নামার মতো বিষয়ও না।তাহলে মেহের যা বলেছিলো সেটাই ঠিক!তিহান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে!!তাহলে প্রান্ত কে?আমাকে প্রান্তর কথা বললো কেনো?আমি বুঝতে পারছি না।নিশাতের এই ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটিয়ে তিতির খান চা নিয়ে এসে বলল”এই নে চা।খেয়ে নেয়ে ভালো লাগবে।”

নিশাত চা টা নিয়ে খেতে লাগলো।তিতির খান ওর পাশে বসে বিভিন্ন কথা বলতে লাগলো।কিন্তু নিশাতের মাথায় এসব কিছু ঢুকছে না।চা খাওয়া শেষে নিশাত বলল”খালামনি আমাকে একটু দিয়ে আসবে রুমে?”

“হ্যা চল।”

তিতির খান নিশাতকে রুমে দিয়ে এলো।

এভাবেই দুদিন চলে গেলো।নিশাতের পায়ের ব্যাথাও নেই।তবে এখনো ঔষধ খেতে হচ্ছে।এই দুইদিন নিশাত শুধুই ভেবেছে বিষয়টা নিয়ে।আর তিহানের দিকে লক্ষ করছে।আসলেই এখন নিশাতের কাছেও বিষয়টা ক্লিয়ার যে তিহান অন্তত ওকে বোনের নজরে দেখে না।

নিশাত ভাবছে তিহানের রুমটা আবার সার্চ করবে।তাই তিহানের বাসা থেকে বের হওয়ার অপেক্ষা করছে।তিহান নাস্তা করে বের হতেই
নিশাত সুযোগ বুঝে তিহানের রুমে চলে এলো।তারপর ভালো মতো দেখছে বুকসেল্ফটা।যদি আর কিছু পাওয়া যায় সেই আসায়!হঠাৎ পিছন থেকে তিহানের কন্ঠ পেয়ে চমকে ফিরে তাকাতেই দেখলো তিহান ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর ওর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল”তুই এখানে কি করিস?”

“ও.ওই তো এ একটা ব বই নিতে আসছিলাম।”

নিশাতের তোতলানো দেখে তিহান বুঝে গেলো কিছু একটা চলছে ওর মাথায়।তিহান চোখ ছোটছোট করে বলল”শুধু বই নিতে এসেছিস নাকি অন্যকিছু?”

“না না অন্য কি হবে?বই ই তো নিতে এসেছি।”

“আচ্ছা ঠিকাছে নে।”

এটা বলে তিহানের নিজের ওয়ালেট টা পকেটে ঢুকিয়ে চলে গেলো।নিশাত হাঁপ ছেড়ে বলল”যাক গেছে ধরা পড়ি নি।”

তারপর আবার খুজতে খুজতেই গান ধরলো

“তুই আমার জামাই,
আমি তোর বউ রে।
পাবি না আমার মতো
গুলিস্তানের মোড়ে।”

তুই আমার হিরো,
বাকি সব জিরো।”

পড়ে নে শেরওয়ানি,
বাসর সাজা রে।
পাবি না আমার মতো
গুলিস্তানের মোড়ে।,

এই গান গাইতে গাইতেই খুজছিলো।হঠাৎ তিহানের টেবিলের ড্রয়ারে উল্টো করে রাখা একটা ছবি দেখতে পেলো।নিশাত ছবিটা এপাশ করতেই দেখলো এটা ওর ছবি।আর এই ছবিটাই ওইদিন তিহান ওর বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছিলো।নিশাতের বিষয়টা মনে হতেই লজ্জা পেলো।তারপর আরো খোঁজাখুঁজি করা শুরু করলো।
হঠাৎ পিছন থেকে মেহের এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।মেহের এর এমন আচমকা জড়িয়ে ধরার ফলে নিশাত ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে বলল”সত্যি তিহান ভাইয়া বিশ্বাস করো মেহের বলছিলো তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসো সেইজন্যই আসছি।”

নিশাতের কথাশুনে মেহের হাসতে হাসতে বলল”নিশাত আমি মেহের।”

মেহের এর কথা শুনে নিশাত চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলল”ইশশ!আরেকটু হলে স্ট্রোক করতাম।”

“ওকে কুল কুল।” মেহের হাসতে হাসতে বলল।

মেহেরের হাসি থামার পর নিশাত বলল”তুমিই ঠিক ছিলে মেহের।আসলেই তিহান ভাইয়া আমায় ভালোবাসে।”

“কিভাবে বুঝলে?” মেহের ভ্রু কুচকে বলল।

নিশাত এলবাম আর ছবিটা দেখালো।তারপর সব বলল।সব শুনে মেহের মুচকি হেসে বলল”বাহ!আমরা ‘জা’ হয়ে গেলাম।তুমি আমার বড়ো ‘জা’।

“হইছে এখন তা না কেলিয়ে আরেকটু খোঁজো দেখো আর কিছু পাও কি না?”

মেহের নিশাতের কথায় সম্মতি জানিয়ে খুজতে লাগলো।অনেক খোজাখুজির পর একটা ডায়েরি পাওয়া গেলো।ডায়েরিটা মেহের পেলো।মেহের নিশাতকে ডায়েরিটা নিশাতের হাতে দিয়ে বলল”খুলে দেখো কি লিখেছে।”

“না না তোমার সামবে পড়বো না আমার লজ্জা করবে।” নিশাত একটু লজ্জা ভাব নিয়ে বলল।

“আচ্ছা ঠিকাছে একা একা পড়ে মুচকি মুচকি হাসি দিও।”

বলে মেহের হাসতে লাগলো সাথে নিশাতও।তারপর দুজনই বসে আড্ডা দিলো।

সারাদিনে একবারও নিশাত ডায়েরিটা খোলার সুযোগ পায় নি।তাই রাতের অপেক্ষা করতে লাগলো।

এখন রাত ১.০০ টা।নিশাত রুমের লাইট অন না করে ফোনের লাইট অন করে ডায়েরিটা খুলতেই দেখলো প্রথম পাতায় লেখা
“ভালোবাসতে বলবো না
শুধু বলবো ভালোবাসতে দিস।”

লাইন দুটো পড়ে অজান্তেই নিশাতের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।তারপরের পৃষ্ঠায় লেখা

“””তোমারি জন্য আমার হৃদয়,
এলাকা হয় বাহাত্তর বার প্রকম্পিত।
তোমার ওষ্ঠ নির্গত সেই মোহনীয় শব্দ শোনার জন্য আমার কর্ণযুগল আজীবন প্রতীক্ষিত♥️””

নিশাত এই লেখাটা পড়ে হেসে দিলো।তারপর বলল’সাহিত্যিক ভাবে প্রপোজ করতে গিয়ে সায়ন্স ঢুকায় দিছে।’

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)