আমায় একটু ভালবেসো পর্ব-১৯

0
287

#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদোস_কেয়া

(১৯)

দুদিন পর।আজ অর্ণার গায়ে হলুদ। বিশাল বড় আয়োজন। কমিউনিটি সেন্টার বুক করা হয়েছে। বাড়ির সকলে সেখানে উপস্থিত। অর্ণাকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে, দুটো মেয়ে এসেছে। তারাই সাজাচ্ছে। কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি, নিচে সবুজ পাড়,ভারী মেকআপ বিভিন্ন ধরনের কাঁচা ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে অর্ণাকে।
পাপিয়া বেগম এলেন, মেয়ের সাজ হয়েছে কিনা দেখবার জন্য। দরজা কাছে এসেই থমকে দাঁড়ালো। চোখ দুটো বড়,বড় করে তাকালো,এটা কি অর্ণা?তিনি তো চিনতেই পারছে না।অর্ণা কোনোদিন তেমন একটা সাজগোজ করেনি।যদিও বা করতো,তবে কাজল আর হালকা লিপস্টিক, এতটুকুই।কিন্তু আজ যেন সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে অর্ণাকে।পাপিয়া বেগম যেন নিজের মেয়েকে চিনতেই পারছে না। তিনি এগিয়ে গেলেন। অর্ণার কনিষ্ঠা আঙ্গুলে দাঁত দিয়ে, কামড়ে দিলেন।যেন মেয়ের নজর না লাগে।
,দেখুন তো আন্টি, আপনার মেয়েকে কেমন লাগছে?
পাপিয়া বেগম ছলছল চোখে, মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার কত আদরের দুই মেয়ে। একজন তো কবেই পর হয়ে গেছে! আরেকজন হবে কালকে।তার বুক ভেঙে কান্নারা এসে হানা দিচ্ছে।মায়ের চোখে জল দেখে, অর্ণা ও কেঁদে দিল। পাপিয়া বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো।দুই মা-মেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
পার্লারের মেয়েগুলো একে-অপরের দিকে তাকাচ্ছে। কি করছে এরা?সাজ তো একদম ঘেঁটে ঘ হয়ে যাচ্ছে। তারা দুজনকেই জোর করে আলাদা করলো।
,কি শুরু করেছেন বলুন তো আন্টি?আপনি এরকম করলে অর্ণাকে কে বুঝাবে?ও এভাবে কাঁদলে তো,সাজ নষ্ট হয়ে যাবে! তখন কিন্তু ভূতের মতো লাগবে,আপনার মেয়ে কে।
পাপিয়া বেগমের টনক নড়ে। আসলেই তো,এভাবে কাঁদলে তো সব নষ্ট হয়ে যাবে। না,না এ কিছুতেই হতে পারে না।তিনি তারাতাড়ি অর্ণাকে শান্ত হতে বললো।মাকে বিচলিত হতে দেখে,ফিক করে হেসে দিল অর্ণা।

ফুল ভলিউমে মিউজিক বাজছে। কান দুটো ঝা,ঝা করছে অর্ণার। বাড়ির সকল ছেলে-মেয়েরা হৈ-হুল্লোড়ের করছে। কেউ,কেউ আবার গানের তালে,তালে নেচে ওঠেছে।মেয়েরা পড়েছে,বেগুনী রঙের শাড়ি, আর ছেলেরা সবুজ রঙের পাঞ্জাবি।
অর্ণা বেচারী আছে, মহা ঝামেলায়।মিষ্টি খেতে, খেতে তার জীবন তেঁতো হয়ে যাচ্ছে। একটু পর,পর একেকজন স্টেজে ওঠছে, আর এটা সেটা এনে তার মুখে দিচ্ছে। কাউকে না ও করতে পারছে না। তার উপর আবার ছবি। পোজ দিতে, দিতে,কোমর ভেঙে যাচ্ছে। ঠোঁটে হাসি ছাড়া কথা নেই।অর্ণা বিরক্ত হলো।বিয়ে যে কি মজা, তা হাড়ে,হাড়ে টের পাচ্ছে এখন।মনে,মনে নিজের কপাল চাপড়ালো।কেন যে বিয়ে বসতে গেল?

চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আকাশে কিছু তারা আছে, তবে চাঁদ নেই।পর্ণা উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মনটা তার খুবই বিষাদময়।
পর্ণা যায়নি অর্ণার হলুদ অনুষ্ঠানে। বাড়ির প্রত্যেকেই সেধেছে,যাওয়ার জন্য। কিন্তু তার শরীর টা খুব একটা ভালো নেই। তাই আর যায়নি।অবশ্য আরেকটা কারণ আছে তা হলো, অর্ণার এতো বড় ক্ষতি করেছে। তারপর আবার কোনো মুখে যাবে সেখানে।
কদিন ধরেই শরীরটা ভালো যাচ্ছে না পর্ণার। দুমাস ধরে পিরিয়ড অফ।মাথা ঘুরায়,বমি, বমি ভাব,কিছু খেতে ইচ্ছে করে না।পর্ণা জানে এসব কিসের লক্ষণ। টিভিতে এসব অনেক দেখেছে। মেয়েরা যখন কনসিভ করে। তখন এই সমস্যা গুলো হয়। তবে সে পরীক্ষা করেনি। করার কোনো ইচ্ছে ও নেই।
ঐ দিনের পর আদনান তার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। না দেখা করে, না কোনো ফোন দেয়।পর্ণা ও চাই আদনান তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ না রাখুক।সবাই যদি তাকে ক্ষমা করে দেয়, তবে প্রায়শ্চিত করবে কিভাবে। তার মতো মেয়ের এমনই হওয়া উচিৎ।
পর্ণা আনমনে তার পেটে হাত বুলালো।বিড়বিড় করে বলল,তুই ও কি আমার মতো হবি?শুনেছি সন্তান পেটে নিয়ে, মায়েরা যা করে সন্তানেরাও তেমন হয়।তুই ও কি আমার মতো পাপিষ্ঠা হবি?না, না তা করিস না।তবে যে সারাজীবন ভালবাসার মানুষের ঘৃণা নিয়ে বাঁচতে হবে। আর তা যে কতটা কষ্টদায়ক তা আমি ভাল করেই উপলব্ধি করছি।
ছাঁদের দরজাটা ক্যাচক্যাচ করে ওঠলো।পর্ণা আঁতকে ওঠলো।কে,কে বলে দুবার চেঁচালো।কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। বাড়িতে শুধু পর্ণা আর বড় জেঠি।বড় জেঠির বাতের ব্যাথা। তাই যেতে পারেনি।ওনি নিশ্চয়ই এতো রাতে ছাঁদে আসবে না।তাহলে কে এলো?
অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। পর্ণা কারো পায়ের শব্দ পেল।তার দিকেই এগিয়ে আসছে। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেল পর্ণা।চিৎকার দিতে যাবে, এমন সময় কে যেন মুখ চেপে ধরলো।ফিসফিস করে বলল,
,চুপ,চুপ।
প্রথমে ছোটাছুটি করলে ও, পরে গলার স্বর শুনে চুপ হয়ে যায়।
আদনান ছেড়ে দিল পর্ণাকে।ফোনের ফ্লাশ জ্বেলে পর্ণার মুখের উপর আলো ফেলল।হুট করেই আলো এসে চোখে পরায়, চোখ,মুখ কুঁচকে ফেলল পর্ণা।আদনান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। দুদিনে কেমন শুকিয়ে গেছে মেয়েটা।আদনানের বড্ড মায়া হলো।একটানে পর্ণাকে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলল। আহ্ এখন শান্তি লাগছে। এতদিন আগুন জ্বলছিল হৃদয়টায়।
পর্ণা চুপচাপ আদনানের বুকের সঙ্গে মিলে রইলো। ঠোঁটে কোণে এক চিলতে হাসি।সব দুঃখ বুঝি,ঘুচলো এবার।পর্ণা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। স্বপ্নের মতো লাগছে। ছেড়ে দিলে যদি পালিয়ে যায়। চারিদিকে ঝি,ঝি পোকার ডাক। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। নিরবতা ভেঙে আদনান বলে ওঠলো,
,প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমায় বিয়ে করেছো, তাই না পর্ণা?
পর্ণার হাতের বাঁধন ছুটে গেল। আদনানের চোখে-চোখ রাখলো।তবে বেশিক্ষণ নয়,খুবই অল্পসময়।ঐ চোখের দিকে তাকানোর যোগ্যতা যে পর্ণা হারিয়ে ফেলেছে। আদনান হাসতে, হাসতে বলল,
,আমি কি বোকা,তাই না পর্ণা?বোকার মতো ভেবে বসলাম,তুমিও হয়তো আমায় ভালবাসো!কিন্তু আমার ভাবনায় ভুল ছিল।প্রতিহিংসা করে বিয়ে করলে আমায়।অর্ণাকে হারাতে গিয়ে, আমার সঙ্গে নিজের জিবন কে জড়িয়ে ফেললে। অবশ্য তোমার কাছে হয়তো এই সম্পর্কের কোনো মূল নেই।আমি থাকি, বা না থাকি তাতে কিছু আসে যায় না তোমার।আচ্ছা পর্ণা, তোমাকে ভালবাসার মূল্য কি আমাকে এভাবে দিতে হবে?একটু ভালই তো বেসেছিলাম,তাই বলে এতো যন্ত্রণা দিবে?তুমি কি পারতে না, আমায় একটু ভালবাসতে? উফফ সরি,কাকে কি বলছি আমি।যে ভালবাসার মানেই বুঝে না,সে কিভাবে অন্যকে ভালবাসবে।শুধু জানে অন্যকে কষ্ট দিতে। ছোট থেকে এটাই তো শিখে এসেছো।
পর্ণার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে। আদনানের হাতটা ধরতে গেলেই, সে দূরে সরে যায়। অন্য দিকে তাকিয়ে বলে,
,তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল পর্ণা।তুমি কি শুনতে প্রস্তুত?
পর্ণা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।আদনান কাঠ,কাঠ গলায় বলে,
,আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি,আমরা আলাদা হয়ে যাব।যেহেতু তোমার ইচ্ছে পূরন হয়েছে, এখন নিশ্চয় আমাকে কোনো দরকার নেই আর তোমার?এরজন্যই তো তুমি এতকিছু করেছো।তাই না?

চলবে,,,