#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া
(১৫)
তাহমিদের বাড়ির লোকজন চলে যাওয়ার পর, আশোক সাহেব এলো মেয়ের রুমে। অর্ণা তখন, ঝিম মেরে বসে ছিল।আশোক সাহেব মেয়ের মাথায় হাত রাখলো,
,কি রে মা, কি ভাবছিস? তুই কি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত?
,না বাবা।কিছু চিন্তা করছি না। তুমি বলো না কি বলবে?
,আসলে বলছিলাম কি,ওদের কে তোর কেমন লেগেছে? মানে তাহমিদ কে?
অর্ণা একদৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। আশোক সাহেবের কাঁধে হাত রেখে বলল,
,তোমাদের কেমন লেগেছে বাবা?
,আমাদের তো, পছন্দ হয়েছে। এখন তোর মতামত কি?,
,তোমরা তো আর, আমার খারাপ চাও না। তোমাদের পছন্দ হলেই হলো। আমার কোনো আপত্তি নেই।
মেয়ের কথায় খুশি হলো আশোক সাহেব। তিনি যেন এই উত্তরটার অপেক্ষায় ছিলেন। মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল,
,আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে। ওরা তোকে অনেক ভালো রাখবে, দেখিস মা!
অর্ণা স্মিথ হাসলো।
অনেক রাতে তাহমিদ কল করলো।অর্ণা তখন ঘুমে। দুবার রিং হওয়ার পর, অর্ণা ঘুম ভাংলো।অচেনা নাম্বার দেখে, প্রথমবার রিসিভ করলো না। কিন্তু বার বার ফোন আসছে দেখে, বিরক্ত হয়ে রিসিভ করলো,
,আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?
,ওয়ালাইকুম আসসালাম। অর্ণা ঘুমিয়ে গেছো?
তাহমিদের কন্ঠ শুনে, অর্ণা চুপ করে গেল। বিকেলের কথা মনে হতেই গাল দুটো তার, লাল হয়ে গেল। ওপাশ থেকে তাহমিদ হ্যালো, হ্যালো করে যাচ্ছে,
,হ্যালো অর্ণা, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? যদি শুনতে পাও, তাহলে প্লিজ উত্তর দাও!
লজ্জায় মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না অর্ণা। তবুও বলল,
,বলুন আমি শুনতে পারছি।
,তাই নাকি!তাহলে এতক্ষণ কথা বলোনি কেন?হ্যালো,হ্যালো বলতে, বলতে আনার যেগলা ব্যাথা হয়ে গেল।তার কি হবে!
অর্ণা মনে,মনে হাসলো। লোকটা নির্ঘাত পা গ ল।
তাহমিদ আদুরে কন্ঠে বলল,
,ঘুমিয়ে গিয়েছিলে?
,হুম!
,কেন?
অর্ণা অবাক হলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো, রাত ২টা,২৪ বাজে । এখন ও কেউ সজাগ থাকে নাকি! অর্ণা বলল,
,রাত কয়টা বাজে দেখেছেন?
,হ্যা, রাত ২টা ২৫ বাজে। তো কি হয়েছে?
অর্ণা হতাশ হলো। এি লোকের সাথে তর্ক করে লাভ নেই। অর্ণা প্রসঙ্গে বদলে বলল,
,কি করছেন?
,এখন?এখন তো তোমার সাথে কথা বলছি।
অর্ণা বিরক্ত হলো।
,সেটা তো আমি বুঝতেই পারছি। এছাড়া আর কি করছেন?
,তেমন কিছু না। শর্ট পেন্ট আর খালি গায়ে খাটের উপর বসে পা দোলাচ্ছি।
অর্ণা বুঝলো, তাহমিদ লাগামছাড়া। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল, নিজ থেকে আর কিছু জিজ্ঞেস করবে না।
এরপর তাহমিদ কথা বলেছে, অর্ণা শুধু হু,হা করে জবাব দিয়েছে। একসময় অর্ণা ঘুমিয়ে যায়। তাহমিদ কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে। তারপর বুঝলো যে অর্ণা ঘুমিয়ে গেছে। তাই অর্ণার কপালে চুমু খেয়ে নিজেও ঘুমিয়ে যায়।
তাহমিদের বাবা চেয়েছিল,আজকেই আকদ করিয়ে ফেলতে। কিন্তু আশোক সাহেব না করলেন,তার দুইটায় মেয়ে। তাড়াহুড়োয় পর্ণার বিয়ে তেমন একটা ধুমধাম করে দেয়া হয়নি। তাই অর্ণার বিয়েতে কোনো ত্রুটি রাখতে চান না।
পরদিন মারিয়া বেগম সহ, সবাই চলে গেল অর্ণাদের নিজস্ব বাড়িতে। দশদিন পর বিয়ের তারিখ দেয়া হয়েছে। এই দশদিনে দুই পরিবার মিলে, বিয়ের প্রস্তুতি নিবে।
অর্ণারা বাড়িতে যাবার পরই, আস্তে, আস্তে সকল আত্মীয়স্বজন আশা শুরু করে দিয়ে। যেহেতু একান্নবর্তী পরিবার। তাই আত্মীয় স্বজনের সংখ্যা বেশি।
আজ পর্ণা আর আদনান আসবে। নতুন জামাই আসবে, তাই সকাল থেকেই সবার ব্যস্ততা। অর্ণা তাহমিদের সাথে কথা বলছে। এই কয়দিনে, তাদের দুজনের সম্পর্ক বেশ স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
অর্ণা ফোনে কথা বলছিল। এমন সময় পর্ণা এলো রুমে,
খাটে বসে পা নাচাতে,নাচাতে বলল,
,কি রে হবু বরের সাথে কথা বলছিস?
পর্ণার উপস্থিতি টের পেয়ে, অর্ণা তাহমিদ কে বলল,,
,আমি আপনাকে পরে কল করছি??
তাহমিদ ভ্রু কুঁচকে ফেলল,
,কেন?
,আসলে পর্ণা এসেছে!
,ওহ্ আচ্ছা, ঠিক আছে। যাও কথা বলো গিয়ে।
ফোন রেখে অর্ণা পর্ণার সামনে এলো। মুচকি হেসে বলল,
,কেমন আছিস?
পর্ণা অট্টহাসি দিল।
,আমি কেমন আছি, তা জিজ্ঞেস করছিস অর্ণা? হাহ্!তুই কি ভেবেছিলি, দুঃখে থাকবে। আরে আমার স্বামী আমায় চোখে হারায়।একমিনিট না দেখলে অস্থির হয়ে যায়। আর শশুর-শ্বাশুড়ী, ওনারা তো বউমা,বউমা বলে পা গ ল করে ফেলে। এবার তুই ই বুঝে নে!আমি কেমন আছি।
অর্ণা হাসলো। পর্ণার কাঁধে হাত রেখে বলল,
,আমি তো একবার ও বলেনি, যে তুই দুঃখে আছিস। সুখে থাকার জন্যই তো আদনান স্যার কে, পা গ ল,পা গ ল হয়ে বিয়ে করলি। আর নয়তো কি বড় বোনকে রেখে ছোট বোন কখনো বিয়ে করে?
অর্ণা ঠেশ দেয়া কথা, পর্ণার বুঝতে পারলো। তাই প্রসঙ্গ বদলে বলল,
,তা এই ছেলেকে কিভাবে বশ করলি? না মানে তোকে বিয়ে করার ইচ্ছে তো আর শুধু, শুধু হবে না।তা ছেলেটাকে কি তাবিজ করেছিস, নাকি আগের একটা বউ আছে?
অর্ণা গা রি,রি করে ওঠলো।পর্ণার কথা দিন,দিন লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
,তুই বুঝি আদনান স্যারকে তাবিজ করে বিয়ে করেছিস পর্ণা? না আগে বিয়ে হয়েছে।
পর্ণা আর কিছু বলতে পারলো না।অর্ণা আবার ও বলল,
,আর বলছিস না, যে আমাকে বিয়ে করার মতো ইচ্ছে। সে কেন করলো। তবে শোন,আমার রূপের যেই আ গু ন,সেই আগুনেই পা গ ল হয়েছে আমার প্রেমিক।এর বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। আর হ্যা, তোকে লাষ্ট বার ওয়ার্নিং দিচ্ছি। নেক্সট টাইম আমাকে এসব কথা শুনাতে আসবি না। তাহলে তার ফল কিন্তু ভালো হবে না।
,বাবা এতো তেজ!
,তেজের দেখলি কি,এতদিন চুপচাপ ছিলাম। তাই যা ইচ্ছে তাই বলে গিয়েছিস।এখন আর তা হবে না। এখন যা আমার রুম থেকে বের হ্।
রাগে+অপমানে পর্ণার মাথায় র ক্ত ওঠে গেল।সে তেড়ে গিয়ে অর্ণার গলা চেপে ধরলো।
,তোর সাহস কি করে হয়,আমাকে এসব বলার। আজ তোকে মে রেই ফেলবো।
পর্ণা পা গ লের মতো এসব বলতে লাগলো।এমন সময় মিতু এলো রুমে।পর্ণার এমন আচরণ দেখে, মিতু তারাতাড়ি আটকালো তাকে। কিন্তু পর্ণাকে কোনো কিছুতেই, আটকাতে পারছে না। তাই মিতু চিৎকার করে সবাই কে ডাকতে লাগলো। মিতুর চিৎকারে সবাই এসে উপস্থিত হলো।পর্ণার আচরণে সবাই হতবাক। সবাই মিলে পর্ণাকে ধরে অর্ণার থেকে ছাড়ালো। এতক্ষণ ধরে গলা চেপে ধরার কারণে। অর্ণা কাশতে লাগলো।অবস্থা বেগতিক। অর্না শ্বাস নিতে পারছে না। অর্ণার এমন অবস্থা দেখে, আশোক সাহেব গিয়ে পর্ণাকে থাপ্পড় মারলো,
চিৎকার করে বলল,
,তোর সাহস হলো কিভাবে?অর্ণার গায়ে হাত তোলার। ও না তোর বোন লাগে। কিভাবে করলি তুই এই কাজটা। তোর কি বিবেকে বাঁধলো না। তোর না আপন বোন হয়?
পর্ণা চিৎকার করে বলল,
, ব্যস মিষ্টার আশোক আহমেদ, ব্যস!অনেক বলেছেন। হা,হা কি বললেন, আপন বোন। সত্যি কি তাই!
চলবে,,,,,,,,,