#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#শেষ পর্ব
ইউসুফ মাথায় হাত চেপে বসে আছে। কুহুর খবর কোথাও পাচ্ছেই না। ইউসুফ চুল টেন ধরলো নিজের। ঠিক সেই মুহূর্তে ফোনের মেসেজ টিউন বেঁজে উঠলো। কুহু না চাইতে-ও ফোনটি হাতে নিলো। স্ত্রল করতেই মেসেজটি ভেসে উঠলো,,
—” আখিকে ছেড়ে দা-ও। কুহুকে পেয়ে যাবে।”
ইউসুফের ভ্রুকুটি কিঞ্চিৎ কুচকে ফেললো। মাথার উপর ফ্যানটির তেজ না থাকায় ঘামতে লাগলো। চট জলদি নাম্বারটিতে কল লাগলো। কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না। উল্টো মেসেজ চলে এলো,,
—” এক ঘন্টা সময় দিচ্ছি তোমাকে। হয় আখিকে ছাড়ো! নয়তো কুহুর জীবনের মায়া ছাড়ো!”
ইউসুফ যে স্তম্ভিত হলো। কিছুক্ষণ সেভাবেই বসে পুলিশ কমিশনারকে কল করলো। এবং নাম্বারটি সেন্ড করে পাঠিয়ে দিলো খোঁজ করার জন্য। কিন্তু কমিশনার জানালো সঠিক লোকেশন ধরতে পাড়চ্ছেনা তারা। ইউসুফের মাথায় আগুন ধরে গেলো। সামনেে চেয়ারে লাথি মেরে রুম থেকে বর হয়ে অন্য রুমে ঢুকলো। অন্ধকার রুমটিতে আলো জালাতেই ভেসে উঠলো আখির ক্লান্ত শ্রান্ত মুখ খানি। ইউসুফকে দেখে ম্লান হাসলো। বলল,,
—-” তোমাকে কেমন উদ্ভট লাগচ্ছে ইউসুফ! কাছের জিনিস হারিয়ে গেছে বুঝি?”
ইউসুফ আখি দিকে ঝুঁকে বলল,,
—-” যে জঘন্যতম খেলায় নেমেছো না তোমরা? তা কখনো সফল হবে না!”
আখির পেট ফুলেছে। সে পেটে স্পর্শ করে বলল,,
—-” বাবু দেখ তোর বাবা পরনারীতে কত মগ্ন তোকেও ভুলে গেছে আমার আমাকেও! ”
ইউসুফ এমনিতেই রেগে ছিল। আখির প্রলপ শুনে ঠাটিয়ে চড় বসালো। আখি হতভম্ব। ইউসুফ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,,
—-“নষ্ট মেয়েরা নষ্টই হয়। একটা নিষ্পাপ শিশু যে এখনো চোখ ফুঁটে পৃথিবীর আলোই দেখেনি তাকে নিয়েও ছলচাতুরী? কেমন মা তুমি ছিঃ?”
আখি ফুপিয়ে উঠলো। পেটে হাত বুলিয়ে বলল,,
—” এছাড়া আমার আর কোনো রাস্তা নেই!”
ইউসুফ আবার হলো। নরম কন্ঠে বলল,,
—-” আমাকে সব সত্যি বলে দাও আখি! আমি তোমায় ছেড়ে দিবো!”
আখি ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,,
—-” তুমি আমায় মুক্তি দিলেও তারা দিবে না। হয়তো এখন থেকে ছাড়া পেয়েই মৃতুর দোরগোড়ায় পৌছাবো!”
ইউসুফের মায়া হলো। বলল,,
—” আমাকে বিশ্বাস করো! আমি তোমাকে আর তোমার বাচ্চাকে আল্লাহ রহমতে কিছু হতে দিবো না!”
আখি মলিন মুখটি তুলে বলল,,
—-” আমার কাছে বেশি সময় নেই ইউসুফ। আমি বলবো আজ সব বলবো!”
ইউসুফ আখির মুখেমুখি বসলো। আখি বলতে শুরু করলো প্রথম থেকেই।
———-
—-” হে আখি আমরা মোহরা। এক মাত্র তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য এত খেল খেলেছি কুহু!”
আশিক পিছনে থেকে সামনে এসে দাঁড়ালো। কুহু কম্পিত কন্ঠে বলল,,
—-” তুমি একটা ধোঁকাবাজ ছিলা জানতাম এতটা নিজ আজ দেখলাম!”
আশিক হাসলো কুহুর কাছ ঘেষে বসলো। ডান হাত আলতো করে স্লাইড করলো কুহু। কুহু ঘৃণা মুখ ফিরিয়ে নিলো। আশিক এবার দু হাতে কুহুর মুখ ধরলো। কুহু ছটফট করতে লাগলো। হাত-পা বাঁধা বলে কিছু করতে পারছেনা। কুহু এ মুহূর্তে ছুটে পালাতে ইচ্ছে করছে! আশিক তা বিঝতে পেরে যেন মজা পাচ্ছে।কুহু এবার কান্না করে দিলো বলল,,
—-” আমার জীবনটা নিয়ে কেনো খেলছো?”
আশিক হেসে দিলো। ঘর কাঁপানো হাসি৷ বলল,,
—-” খেলাটা তো তোমার বর শুরু করেছিলো! আমার লাইফে যখন থেকে এসেছো!”
—” মানে?”
—-” মানে সিম্পল! আমার আর ইউসুফের কাছে শুধু তুমি একটি ট্রফি ছিলে। ”
কুহুর চমকে তাকালো। আশিক আবার বলল,,
—-” ইউসুফ আর আমি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম৷ তুমি যদিন ভার্সিটিতে পা রাখো। সেতিন তোমায় দেখেই আমি প্রেমে পড়ে যাই। ইউসুফকে জানালাম একদিন সে রেগে নাক বারাবর ঘুশি মেরে দিলো। পুরো হলের সামনে চেচিয়ে বলল, তোমার দিকে নজর না দেই! তুমি এক মাত্র তার!পুরো ভার্সিটিতে সেদিন আমার ইমেজ ধসে পড়লো। ইউসুফের সাথে এক হাত দু হাত হলো। লাষ্ট ডিসিশন নিলাম আমরা যে কুহুর মন জয় করবে আগে সে তার! ইউসুফ-ও সম্মতি দিলো। কিন্তু ইউসুফ ধোকা দিলো। তোমার সাথে রিলেশন থাকাকালীন তোমার বাসায় বিয়ে প্রস্তাব পাঠালো। তোমার বাবা-মা তাই চাইতেন। হলো-ও তাই। সেদিন যখন পালিয়ে এসেছিলে! আমি সেখানে যেতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু ইউসুফের লোকেরা আমায় যেতে দেয়নি। নয়তো আজ আমার ঘরের ধরনী হতে তুমি!”
এক টানে কথা গুলো বলে দম নিলো আশিক। কুহুর দিক তাকাতেই বুকে ধক করে উঠলো তার। যে কুহুর চোখ জোড়ায় কিছুক্ষণ আগে ভয় দেখে ছিলো? সে চোখে এখন ঘৃণা।কিন্তু ঠোঁটে হাসি!
—-” উনি যা করছেন ভালোই করছেন। উনি বুঝতে পেরেছেন যে আপনি একটি হায়েনা তাই আপনার হাত থেকে রক্ষা করতেই উনি এসব করেছেন!”
কুহুর কথায় রাগ উঠে গেলো আশিকের। কানের মাঝে বার বার হায়েনা নাম টি বাজতে লাগলো। রাগ সামলাতে না পেরে চেপে ধরলো কুহুর মুখ। হিসহিসিয়ে বলল,,
—-” আমি হায়েনা নই। যদি হতাম তাহলে তুমি আমার বিছানায় থাকতে!”
কুহু তাচ্ছিল্যের হাসি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,
—-” অন্যের বউকে আটকে রেখে বিয়ে করতে চাইছেন! আবার নিজেকে মহান মনে করছেন? ছিঃ।
আশিক বাঁকা হাসলো। কুহুর দিক ঝুকে বলল,,
—-” বিয়ে তো আমি করবোই এখনি করবো। একদিকে ডিভোর্স পেপারে তোমার টিপসই বাসাবো আর একদিকে কাবিননামায়!”
কুহুর এবার হাত-পা কাপ্তে লাগলো। বলল,,
—-” আমি মরতে পছন্দ করবো এর থেকে!”
আশিক হো হো করে হেসে দিলো৷ বললো,,
—-” সেই অপশন ডিলিট করে দিয়েছি!”
কুহু এবার চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আশিক হাসতে হাসতেই বের হয়ে গেলো।
—————
কুহু কাজির সামনে বসে আছে। যেন কোনো পুতুল। আশিক তার পাশে বসে কাজিকে বলল,,
—-“বিয়ে পড়ানো শুরু করুন। ”
কাজি শুরু করলো। আশিক কুহুর হাতের ভাজে হাত ভাজ করে রেখেছে। কবুল বলার সময় হতেই আশিক কুহুর কানে ফিসফিস করে বলল,,
—-“তোমার আব্বুর মাথায় এখন লাল বাতির সিগনাল দেয়া কুহু। বেচার কত খাটচ্ছে দোকানে বসে!”
কুহু কেঁপে উঠলো। ভয়ে ভয়ে আশিকের দিক তাকালো। টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো। ইউসুফ কথা মনে করলো। ইউসুফ কি তাকে মাফ করবে কখনো??
কুহু কবুল বলতে উদ্দিত হতেই আশিকের ফোনে রিংটোন বাজে। ফোন কানে তুলতেই এক চিৎকার দিয়ে বলল,,
—-” আমার বাবাকে কিছু করবে না ইউসুফ। আমি কুহুকে ছেড়ে দিচ্ছি!”
ওপাশ থেকে ইউসুফ হেসে বলল,,
—-” যাষ্ট ওয়ান মিনিট।”
আশিক কুকুরের মতো দৌড়ে বেড়িয়ে এলো কুহু হাতটি ধরে। বাসার সামনে এসে আশিক তার বাবা হুইলচেয়ার বসে থাকতে দেখে দৌড়ে কাছে গেলো। ইউসুফ ততক্ষণে কুহুর কাছে চলে এসেছে। আশিকের বাবা আশিককে দেখে ঘৃণা চোখে তাকালো। শক্ত গলায় বলল,,
—-“রাজনীতি পর্যন্ত ঠিক ছিলো আশিক। কারো গৃহবধূকে নিয়ে টানা হেছড়া করা উচিত হয়নি তোমার। যেখানে তোমার নিজ সন্তান আর বউ ছিলো। ভাবতেও অবাক হচ্ছি এত নিচে কিভাবে নামলে তুমি? নিজে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে-ও ছাড়লে না!”
আশিক মাথা নত করে সব শুনছিলো। পাশে আখিকে দেখে তার কেমন জানি লাগলো ১ মাস পর দেখছে আখিকে। মেয়েটি গুলুমুলু হয়েছে। পেট ভালো ফুলেছে। আশিকের বাবা আবার বললেন,,
—-“নিজ সন্তানের কথাও ভাবলে না কেমন বাবা তুমি? হয়তো দোষটা আমার। আমি ব্যর্থ তোমায় মানুষ করতে পারলাম না!”
আশিকের বাবা আখিকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন। আশিক সেখানেই ধপ করে বসে পড়লো। কবে এতটা জঘন্য হয়ে গেছে! বুঝতেই পারেনি। ইউসুফের সাথে হিংসা করতে করতে নিজ সত্তা থেকেই ছিটকে গেছে আশিক।এ জন্যই হয়তো বলে,,”হিংসা মানুষকে পশু বানিয়ে দেয়। ধংস করে দেয়।”
ইউসুফ কুহুর কাছে আসতেই হাউ মাউ করে কেঁদে দিলো কুহু। ইউসুফ কুহুকে আকড়ে ধরে নিজেও জল ছেড়ে দিলো চোখের জল। কুহু মুখটি তো চুমু খেলো বার বার ইউসুফ। এ যে হারিয়ে যাওয়া ধন তার। কুহু বলল,,
—-” আর একটু দেড়ি করলে আমার লাশ বের হতো!”
ইউসুফ কুহুকে বুকের মাঝে ঝাপটে ধরে শক্ত করে বলল,,
—-” এসব বলো না বাবুইপাখি। বলো না। তুমি ছাড়া আমি শূন্য। এখানে আর আমরা থাকবো না কুহু চলে যাবো এ দেশ ছেড়ে!”
কুহু অবাক হয়ে বলল,,
—-” কি বলছেন? মা-বাবা?”
ইউসুফ হেসে বলল,,
—-” মা যাবে আমাদের সাথে। আর বাবা? সে থাকুক তার সমাজের সাথে! যার কাছে সন্তান থেকে সমাজ বড়? সে মানুষ কখনো বুঝবে না তার সন্তানকে!”
কুহুর কষ্ট হলো। মহসিনের এসবের মাঝে হাত আছে তা চেপে গেলো কুহু। থাক না কিছু কথা মনে ভিতর! বাবার জন্য ছেলের মনে আর ঘৃণা না তৈরি হোক।
যেভাবে চলছে চলুক। ইউসুফ তো শেষ পর্যন্ত তার কাছেই আছে? তার হাতটি ধরেই আছে! ইউসুফের বুকের সাথে মিশেই আছে। তাহলে??
ইউসুফ কুহুকে নিয়ে সোজা এয়ারপোর্টে গেলো। যেখানে ইউসুফের মা অপেক্ষা করছিলো তাদের। ইউসুফ কুহু যেতেই কুহুর মা বলল,,
—” সময় হয়ে গেছে এবার এগো-ও।”
কুহু অবাক হয়ে বলল,,
—-” খালামনি তুমি যাবে না? ”
ইউসুফের মা মলিন হাসলো। কুহুর হাত ইউসুফের হাত দিয়ে বলল,,
—–” তোরা নতুন জীবন শুরু কর। বুড়ো মানুটিকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি! সে হয়তো এ জনম আমায় ভালো না বাসলো। আমি তো বাসি! চোখের সামনে তো আছে? ”
ইউসুফ আবার হলো। মায়ের কষ্ট কখনো তাকে উপলব্ধি করতে দেয়নি। আর এ মানুষটি নিশ্চুপ অপেক্ষা করে গেছে তার বাবা কবে তার নীড়ে ফিরবে! সত্য ভালোবাসার তুলনা হয় না। কেও পেয়ে হাত ছাড়া করে দেয়। আর কেউ সারা জীবন তরপে যায় একটু ভালবাসার জন্য। এটি হয়তো জীবন।
ইউসুফ কুহু বিদায় নিয়ে চলে গেলো। ইউসুফের মা দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেললো। ইউসুফ কুহু হারিয়ে যেতেই সেও ফিরলেন ফাকা বাড়ি! যেখানে শুধু প্রাণহীন মানুষটির বাস। যাকে আকড়ে সে বাঁচতে চায় মরার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।
সমাপ্ত