#আমার_একটাই_যে_তুই
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
২০
ঘরের ভিতর পিনপতন নিরবতা মাঝে ঘড়ির শব্দ শুধু বলে যাচ্ছে টিক টিক টিক। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটে থাকা আসবাবপত্র। কাঁচের দামি সো পিস টাও ভেঙ্গে গড়াগড়ি খাচ্ছে উল্টে থাকা কাঠে টেবিলের পাশে। কাচেঁর জানালা ভেদ করে বাহির থেকে শেষ বিকেলের কমলার মতো আলো ফুটিয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ছে। কুহু ফোলা চোখ জোড়া নিয়ে তাকিয়ে আছে মেঝেতে। চোখের কোনে এক রত্তি জল এখনো উঁকি দিচ্ছে। বুক-পিঠে মাঝে মাঝে উঠানামা করে ছাড়ছে দীর্ঘ শ্বাস।কিছুক্ষণ আগেই হয়ে যাওয়া তান্ডবের লেশ যেন কেঁটে উঠতে পারেনি কুহু। ইউসুফ কুহুকে তার বাবা বাড়ি থেকে নিয়েতো এসেছে। কিন্তু কুহুর মন? তা কি আর ফিরে পেয়েছে ইউসুফ?
ইউসুফ কোলে করে কুহুকে তার রুমে এনে বসিয়ে দেয়। গাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচি আর বার বার নেমে যেতে চাওয়ায় বেঁধে দেয়ে হাত আর মুখ খুলতেই কুহুর চেঁচিয়ে উঠে বলল,,
—” হাউ ডের ইউ? আপনি আমাকে আমার মতে বিরুদ্ধে কোথায় নিয়ে যেতে পারেন না। সে অধিকার আপনি হারিয়ে ফেলেছেন! ডোন্ট টাচ মি!”
কুহুকে কোলে করে নিয়ে আসায় ইউসুফ ক্লান্ত। ঘামে সাদা পাঞ্জাবি লেগে উঠেছে শরীরের সাথে।ইউসুফ কুহুর সামনে বসে হাত দুটি ধরতেই কুহু সরিয়ে নেয়। ইউসুফ আহত হয়। কুহুর দিক তাকিয়ে অনুনয় করে বলে উঠে,
—“হাই এক্সপ্লেইন এভরিথিং টু ইউ? ”
কুহু মুখ ফিরিয়ে নিলো। ইউসুফ গাল ফুলিয়ে ছোট শ্বাস নিলো। কুহুর হাত জোড়া তার হাতে শক্ত করে টেনে নিয়ে ইউসুফ বুকে মাঝে ধরলো। বলল,,
—” অনেস্টলি, হোয়াট ডু ইউ থিংক? আমি এমন কিছু করেছি তোর মনে হয়?”
কুহু হাসলো। বিদ্রুপের হাসি। বলল,,
—“আমার মনে হচ্ছে, আই ডোন্ট নো ইউ!”
কুহুর অবিশ্বাস করা বুঝি মানতেই পাড়লো না ইউসুফ। গুলিকে বুঝি কেউ বুক ঝাঝরা করে দিয়েছ এমন অনুভূতি হচ্ছে ইউসুফের। তার বাবুইপাখির কি সত্যি বিন্দু মাত্র বিশ্বাস নেই তার ভালোবাসা মানুষটির উপর?? ইউসুফের চোখের কোনে জ্বল টলমল করে উঠলো। এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে ধরে আসা গলায় বলল,,
—” পৃথিবীর সব মানুষ আমাকে ভুল বুঝুক আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু তোর অবিশ্বাসী চোখ জোড়া আমায় পুড়িয়ে দিয়ার জন্য যথেষ্ট। ”
কুহু শক্ত চোখে তাকালো ইউসুফের দিক। কাটকাট করে বলল,,
—” অন্য নারী শরীরে বুঁদ হওয়ার সময় বুঝি মনে পড়ে নি এই আমিটার কথা?? সেই পর নারী শরীর বুঝি আপনার বাবুইপাখির ভালবাসা ভুলিয়ে দিয়ে ছিলো? এ কেমন ভালোবাসা ছিলো আপনার? হুহ! বলুন না চুপ করে কেন আছেন??”
ইউসুফ থমকে গেলো যেন। কুহু বুলিতে ধংস হয়ে গেল তার অনুভূতি। কুহুর হাত দুটি ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। কুহুর ভালোবাসা ঠুনকো মনে হতে লাগলো। কেন নেই ইউসুফের প্রতি এক ফুঁটো বিশ্বাস কেন নেই?ইউসুফের পাগলাটে ভালোবাসার মাঝে কি এক বিন্দু সত্য খুঁজে পায়নি কুহু?? অভিমানের ঘড়া যেন ভাড়ি হওয়ার পালা ইউসুফেরও। ইউসুফ স্বগাতোক্তি করে বলল,,
—” আমি তোকে সেদিনি সবটা বলবো যেদিন তোর চোখে আমার জন্য বিন্দু পরিমান বিশ্বাস, ভালোবাসা আর হারানোর ভয় দেখবো।”
ইউসুফ বেড়িয়ে গেলো। কুহু চেয়ে রইলো তার যাওয়ার দিক। ইউসুফের ছায়া নাই হতে ফুপিয়ে উঠে কাঁদতে লাগে কুহু। ভালোবাসার মানুষটা কি সত্যি সে হারিয়ে ফেললো!
ঘন্টা খানিকের মাঝে ইউসুফ আবার ফিরে এলো রেগে মেগে। হাতে একটা সাদা কাগজ। কুহুর তখন তন্দ্রা লেগে ছিলো মাত্র। ইউসুফ কুহুর চুলের মুঠি ধরে টেনে তুললো। রাগে গা যেন কিড়মিড় করছে তার। কুহু ব্যথায় “আহ ” শব্দটি বের হয়ে গেল আপনা আপনি। ইউসুফের দিক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো ইউসুফ লাল চোখ মুখের দিক। ভয়ে যেন কাঠ হয়ে এলো কুহুর। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,
—” ক-কি ক–করছেন ইউসুফ ভাই? ব্যথা লাগছে আমার ছাড়ুন! ”
ইউসুফ আরো জোড়ে টেনে ধরে কাছে আনলো,,
—-” আমার ধৈর্যের বাঁধ তুই ভেঙে চুরমার করে দিলি তুই কুহু! আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠাস?”
কুহু বিস্ময়ে হতবুদ্ধি। মাথায় ঘুরছে শুধু! ” আমি তো ডিভোর্স পেপার সই করি নাই!তাহলে উনি পেলো কিভাবে??”
কুহুর ভাবার মাঝেই ইউসুফের তান্ডব সব তছনছ করে দিলো। কুহুকে ছেড়ে ঘরের আসবাব ভাঙ্গতে লাগলো। ইউসুফ রাগে যেন ভস্ম করে দিবে সব।এদিকে কাজের ফুলদানিতে হাত লেগে কেঁটে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ে ভেসে যাচ্ছে ইউসুফের শুভ্র পাঞ্জাবি, আর ফ্লোর সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। ইউসুফ শুধু চিৎকার করে বলছে শুধু,,
—-” আমার ভালোবাসার এই দাম দিলি তুই?এর থেকে বরং আমাকে তোর হাতেই খুন করে ফেলতি। এ জীবন যতক্ষণ আছে। মুক্তি তুই কখনো পাবি না। কখনো না। এমন কি এ বাড়ির বাহিরেও আজ থেকে তুই যেতে পাড়বিনা।”
কুহু আত্মকে উঠলো। ইউসুফের কথায় নয়। তার নেতা সাহেবের ভেসে যাওয়া রক্ত দেখে। কুহু দৌড়ে গেলো ইউসুফ হাত ধরতেই ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো ইউসুফ৷ চোখে তার আজ পানি। কুহুর দিক আঙুল তুলে বললো,,
—” তোর জন্য আমি মারা গেছি কুহু৷ মারা গেছি। যেদিন এ শরীরটা পঁচে যাবে সেদিন তুই মুক্ত!”
ইউসুফ দরজায় ধামাড়াম করে বন্ধ করেই চলে গেলো। কুহু গেলো পিছন পিছন। কিন্তু লাভ হলো না। ইউসুফ বাহির থেকে লক করে গেছে। কুহু কড়া ঘাত করলো৷ চেচিয়ে ডাকলো ইউসুফকে। কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
—” আমি কিছু করি নি। আপনি হাতে রক্ত বেন্ডেজ। প্লীজ!”
এলোমেলো কথার বুলি আওরায় যাচ্ছে কুহু। বুক ফেঁটে যাচ্ছে কষ্টে। এ আবার নতুন কোন পরীক্ষার লক্ষণ। সে তো তার ইউসুফ ভাইকে ডিভোর্স দেই নি। না দিবে। তাই তো সেদিন নাকোচ করে চলে এলো।
চলবে,