আমার গল্পে তুমি পর্ব-৩২+৩৩

0
652

#আমার_গল্পে_তুমি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#৩২_পর্ব
,
সুহাগ সেদিনই ইয়ানাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসলো ডাক্তার বলেছে কোনো সম্যসা নেই আসোলে পরে গিয়ে পেটে অনেক বেশি আঘাত লেগেছে তবে এতে কিছু হবে না শুধু রেস্টে থাকতে হবে আর পেটে হালকা গরম কিছু দিয়ে ছেক দিতে হবে, আবার ঠান্ডা কিছু পেটের উপর দিয়ে রাখতে হবে যাতে আরাম লাগে আর বেথ্যা না হয়,, ইয়ানাকে রাতে বাড়ি দিয়ে সুহাগ চলে গেছে বলেছে সকালে আসবে,, ইয়ানা সুহাগকে কিছু বলেনি সুহাগ ও আর কিছু শোনার জন্য জোর করেনি,, ইয়ানাকে এই অবস্থায় দেখে ওর মা অনেক প্রশ্ন করেছে কিন্তু ইয়ানা কাউকে কিছু বলেনি রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে,, ইয়ানার মা ভেবেছে ইয়ানার এই অবস্থার কথা আর্দ্র হয়ত জানেনা তাই তখনি আর্দ্রকে ফোন করে,, বিকেলের দিকে আর্দ্র ওদের রুমের ফ্লোরে ইয়ানার কথা মনে করতে করতে কখন যে ঘুমায় গেছে খেয়াল নেই হঠাৎ ফোন বাজার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তড়িঘড়ি করে ফোন ধরতে গেলে হাতে বেথ্যা পেলো সেই যে রাগে হাত কেটে ছিলো ওখানে আর কিছু দেয়নি রক্ত শুকিয়ে প্রায় কালো হয়ে গেছে, আর্দ্র বাম হাত দিয়ে কোনো মতে ফোনটা রিসিভ করলো,, তখনি ইয়ানার মা আর্দ্র কে সবটা বলল যে ইয়ানার কি অবস্থা আর্দ্র ফোনটা রেখে হাত পরিষ্কার করে কোনো রকমে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে, একটু ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বেরিয়ে গেলো।

ইয়ানাদের বাড়ি এসে ইয়ানার মায়ের সাথে কথা বলে আর্দ্র ইয়ানার রুমে চলে গেলো,, ইয়ানা বেডের উপর শুয়ে আছে মাথায় ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ পায়েও ব্যান্ডেজ করা আর পেটের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে ওখানে একটা ঠান্ডা কাপড়ের টুকরো ভিজিয়ে রাখা,, আর্দ্র আস্তে আস্তে ইয়ানার কাছে গেলো তারপর ওর মাথার কাছে ফ্লোরে বসে ইয়ানার মুখের দিকে তাকালো তখন রাগের বসে চড়টা জোরেই দিয়েছিলো গালে কেমন দাগ হয়ে আছে, আর্দ্র আলতো হাতে ইয়ানা গালে ওর হাত ছুঁইয়ে দিলো তারপর ওর ক্ষতস্থানে নিজের ঠোঁট বুলিয়ে দিয়ে ইয়ানার কাপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে মৃদু সরে বলল,, আম সরি বউ প্লিজ আমায় মাফ করে দেও আমি সত্যি বুঝিনি, তুমি তো জানো তোমার বরের রাগ কেমন, একদম পাগল রেগে গেলে হুশ থাকে না,, সেই জন্যই তো তুমি শাসন করো প্লিজ এভাবেই সারা জীবন শাসন করো কখনো ছেড় যেও না, অনেক ভালোবাসি তোমায় হয়ত তোমাকে কখনো বলা হয়নি তবে অনেক বেশি ভালোবাসি,,, কথাগুলো বলতেই আর্দ্রর চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি ইয়ানার মুখের উপর পড়ল, ইয়ানা কড়া ডোজের ঔষধ খাওয়াই কিছু ঠিক পেলো না, ও জানতেও পারলো না ওর অজানতেই একজন কেউ কতটা অনুতপ্ত কতটা আহাজারি করছে নিজের কাজের জন্য, ইয়ানা একটু নড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে গেলো।

সকালে,,,,,,

সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই ইয়ানার ঘুম ভেঙ্গে গেলো, এখন একটু ভালো লাগছে, তখনি মনে হলো কেউ ওর মাথায় হাত দিয়ে আছে ইয়ানা ভাবলো ওর মা, মাথাটা হালকা কাঁত করে পাশে তাকালো তাতেই যেনো ওর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম কেননা আর্দ্র ওর মাথার কাছে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে, ইয়ানা ভীষণ অবাক হলো কেননা ও এখন আর যাই হোক আর্দ্র কে এখানে আশা করেনি , ইয়ানা আর্দ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে হয়ত কাল থেকে খাওয়া হয়নি,, ইস ফর্সা মুখটা কেমন নির্জীব হয়ে আছে, ইয়ানার তাকিয়ে থাকার মাঝেই আর্দ্রর ঘুম ভেঙ্গে গেলো দেখলো ইয়ানা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে, আর্দ্র মুচকি হেসে সোজা হয়ে বসে বলল,, গুড মর্নিং বউ, এখন শরীল কেমন লাগছে??

আর্দ্রর মুখে বউ ডাক শুনে সারা শরীলের মধ্যে কেমন একটা শিহরন বয়ে গেলো, কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে সেটা অনুভব করলাম তখনি ওর কালকের কথা মনে পড়ল আর্দ্রর করা কাজও, ততক্ষনই ইয়ানা নিজের ভ্রু কুঁচকে আর্দ্রর দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো,, ইয়ানার এমন ব্যবহার এ আর্দ্রর খারাপ লাগলেও কিছু করার নাই কেননা ও যা করেছে তাতে ওর এর থেকেও বড় শাস্তি পাওয়া উচিত, আর্দ্র মুচকি হেসে খাট থেকে নেমে বলল,, আচ্ছা তুমি শুয়ে থাকো আমি তোমার জন্য বরং চা নিয়ে আসছি।

কেনো এসেছেন এখানে??

ইয়ানার কথায় আর্দ্র থেমে গেলো পিছনে তাকিয়ে বলল,, এমা সেকি আমি কি আমার শশুর বাড়িতে আসতে পারি না?? আর ইয়ানা আমি সত্যি সরি আসলে কালকে মাথা ঠিক ছিলো না আার বড় বোনের মতো ভাবির ওই অবস্থা দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি,, সরি।

ব্যাস হয়ে গেলো? সরি বললেই সব শেষ? আচ্ছা আপনি যদি এখন কাউকে খুন করে তারপর তাকে সরি বলেন তাহলে কি সে বেঁচে উঠবে?? আর্দ্র কিছু বললো না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, কালকে তো আমাকে অনেক কথায় বললেন আমি নাকি আপনার ফ্যামিলির ক্ষতি করতে চাই, তাহলে আপনি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো যান পুলিশ নিয়ে আসেন? ধরিয়ে দিন আমায় কেননা আজকে আমার জন্যই তো আপনার ভাবির এই অবস্থা তাই না? অন্তত আপনি তো এটাই মনে করেন। তা এতো সকাল সকাল এখানে এসেছেন কেনো?? ও আচ্ছা রোজা নিশ্চয়ই আপনাকে সব বলেছে সেই জন্য আপনার প্রতি দরদ উতলে উঠেছে আর আপনি অনুতপ্ত তাই তো?? কিন্তু একটা বার ভেবে দেখেন তো আপনি যা করেছেন এর পরেও কি আমি আপনাকে ক্ষমা করবো? আরে আপনার তো একবার অন্তত আমায় জিগাস করা উচিত ছিলো যে এমনটা হলো কীভাবে কিন্তু না আপনি সেটা করেননি, আরে ফাঁসির আসামী কেউ তো তার শেষ ইচ্ছের কথা জিগাস করা হয় কিন্তু আপনি তো আমায় সেই সুযোগও দেননি, নিজের মতো কথা সাজিয়ে আমায় বলে দিয়েছেন, এতো গুলো মাস আপনার সাথে আছি এর মধ্যে কি আমার উপর একটু বিশ্বাস হয়নি আপনার? আপনি জানেন না আমি কেমন তারপর ও,,,, থাক অনেক কিছু বলে ফেলেছি, আর হ্যাঁ আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি তবে প্লিজ আমাকে আপনার সাথে যেতে বলবেন না, আর যাই হোক আমি আপনার সাথে সংসার করতে পারবো না,, আমার নিজের একটা সম্মান আছে আমি এমন মেয়ে নয় যে স্বামী বিনাকারণে মারবে কাটবে তবুও সেখানেই পরে থাকবো আমার আত্মসম্মান টা আমার কাছে অনেক দামী, আপনি আসতে পারেন।

ইয়ানার কথা শুনে আর্দ্র অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ইয়ানা কি বলল ও আমার সাথে সংসার করবে না এটা অসম্ভব আমি এটা কিছুতেই হতে দেবো না আমি ঠিক ওকে এখান থেকে নিয়ে যাবো তবে এখন না, এখন ওর মনের অবস্থা ভালো নয় রাগটা কমলে আমি আবার আসবো,, আর্দ্র ইয়ানার কাছে গিয়ে ওর কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

আর্দ্র যাওয়ার পরপরই ইয়ানা কেঁদে ফেলল,,, একবারও কি জোর করে আমায় নিয়ে যেতে পারতেন না মিস্টার আর্দ্র? কিন্তু আপনি সেটা করলেন না আর করবেনই বা কেনো আপনি তো আমায় ভালোইবাসেন না হয়ত সবাই বলেছে তাই জন্য আপনি এসেছেন, ওকে আমিও আর কাঁদবো না যাবো না আর আপনার বাড়ি।
,,,,,
আর্দ্র ইয়ানার মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো তারপর গাড়িতে উঠতে যেতেই দেখল সুহাগ ইয়ানাদের বাড়ি যাচ্ছে হাতে অনেক ফলমূল কাল রাতে অবশ্য ইয়ানার মা আর্দ্র কে বলেছিলো যে ইয়ানাকে সুহাগই বাড়ি নিয়ে এসেছে৷ তবুও আর্দ্র যেনো সুহাগ কে পছন্দ হলো না,, বাড়ি নিয়ে এসেছে ভালো কথা তাই বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে, আর্দ্র গাড়িতে না উঠে আবার ও ইয়ানাদের বাড়ির ভিতর চলে গেলো।

একি তুই উঠে পড়েছিস? আচ্ছা তাহলে তো ভালোই তুই বস আমি এই ফলগুলো কেটে দিচ্ছি খেয়ে নে।

না সুহাগ ভাইয়া আমি খাবো না। আর খালি পেটে কেউ ফল খাই??

আরে না খেলে হবে নাকি ডাক্তার বলেছে তোকে পুষ্টিকর খাবার খেতে,, আর হ্যাঁ আর্দ্র কে দেখলাম চলে যেতে ও এখানে কেনো এসেছিল? তুই আমাকে কিছু না বললেও আমি জানি তোর এই অবস্থার পিছনে কোথাও না কোথাও আর্দ্রই দায়ী নয়ত তোর এই অবস্থায় কালকে তোকে বাসা থেকে বেরোতে দিতো না।

আহ সুহাগ ভাইয়া আপনি থামবেন, আপনাকে আমি এখানে আমার স্বামীর নামে খারাপ মন্তব্য করার জন্য ডাকিনি, আপনি যেইটা করতে এসেছে সেটা করে চলে যান।

আরে তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো, এতো কিছুর পরও ওই লোকটার পক্ষে কথা বলছিস? আচ্ছা ঠিক আছে বাদদে ওসব নে হা কর আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।

কোনো দরকার নেই আমি নিজে হাতেই খেতে পারবো।

না তুই এখন নিজে হাতে খেতে পারবি না, বেশি কথা না বলে হা করতো,, সুহাগ জোর করে ইয়ানাকে খাইয়ে দিতে গেলেই আর্দ্র এসে সুহাগ এর হত ধরে ফেলে,, ওকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য ওর বর এখনো বেঁচে আছে আপনাকে এতো কষ্ট করে ওকে খাইয়ে দিতে হবে মিস্টার সুহাগ, আর আমি এতোটাও ভালো নই যে আমার বউকে অন্য একটা লোক খাইয়ে দেবে আর আমি বসে বসে তা দেখবো।,, আর্দ্র এতোক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো সুহাগ আর ইয়ানার সব কথা ও শুনেছে।

ওহ তাহলে আপনি যাননি তা ফিরে আসলেন কেনো?? কেমন স্বামী আপনি যে আপনার এতো বড় বাড়ি থাকতেও আপনার বউ এর এতো শরীল খারাপ নিয়ে রাস্তায় পরে থাকতে হয়।

আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে,, তবে আমি আমার বউকে মারবো কাটবো আবার ভালোও বাসব তাতে আপনার কি আপনি কেনো এতো নাক গলাচ্ছেন আমাদের মধ্যে,।

তাই নাকি আমি তো জানি আপনি নাকি ইয়ানাকে জোর করে বিয়ে করেছেন তাহলে আবার এখানে এসেছেন কোন অধিকারে কালকে ওকে বের করে দেওয়ার সময় মনে ছিলো না,, এখন এসেছেন কোন অধিকারে মিস্টার আর্দ্র চৌধুরী।

ভালোবাসার অধিকারে স্বামীর অধিকারে, আমি ইয়ানাকে ভালোবাসি তাই ওকে আমি আমার সাথে নিয়ে যাবো ও আমার বউ, আর আমি আপনাকে এতো কৈয়ফত দিচ্ছি কেনো, মনে রাখবেন এই আর্দ্র চৌধুরী কখনো কাউকে কৈয়ফত দেয় না, আপনি কালকে আমার ভালোবাসাকে সাহায্য করেছেন তাই জন্য আমি আপনাকে এতোক্ষণ ধরে সয্য করছি নয়ত,,,, থাক আর না বলায় ভালো।
এই যে ইয়ানা কি যেনো বলছিলে তুমি আমার সাথে সংসার করবে না তাইতো?? ভেবেছিলাম তোমার রাগ একটু কমলে সবাইকে নিয়ে এসে তোমায় নিয়ে যাবো কিন্তু এখন তো দেখছি তোমাকে এখানে রেখে যাওয়াই নিরাপদ নয়, শেষের কতাটা সুহাগ কে উদ্দেশ্য করে বলল আর্দ্র।

এই পুরোটা সময় ইয়ানা হ্যাঁ করে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে ছিলো,, ও কিছু বলতে যাওয়ার আগেই যখন শুনলো আর্দ্র ওকে ভালোবাসে এটা শুনার পর যেনো ওর কথা অফ হয়ে গেছে,,, আর্দ্র নিচু হয়ে সাবধানে ইয়ানাকে কোলে তুলে নিলো।

যা শাস্তি দেওয়ার বাড়ি থেকে আমার কাছে থেকে দিবা, যা রাগ করার আমার কাছে থেকে করবা ওকে, আর তুমি সংসার করবে তোমার ঘাড় সংসার করবে,, সাইড প্লিজ,, সুহাগ একটু সরে যেতেই আর্দ্র ইয়ানাকে নিয়ে চলে গেলো আর ইয়ানা মুখ ফুলিয়ে আর্দ্রর গলা জরিয়ে ধরে আছে।

মা আমরা আবার আসবো তখন একেবারে জামাই আদর খেয়ে যাবো ওকে আজকে আসি, ভাবিকে আবার হসপিটাল থেকে আনতে হবে,, আপনি সাবধানে থাকবেন,, আর্দ্র ইয়ানার মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো,, ইয়ানাকে সাবধানে গাড়িতে বসায়ে সিট বেল লাগিয়ে দিলো।

ও রকম লাল টমেটোর মতো মুখ ফুলিয়ে আছো কেনো, বেশি ফুলায়ো না দেখো আবার ফেঁটে না যায়। কথাটা বলে আর্দ্র গাড়ি স্টার্ট দিলো।

আর ইয়ানা রেগে আর্দ্র থেকে মুখ ফিরায়ে জালানার দিকে মুখ করে বসে থাকল।

(দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত,, আসলে লেখা অনেক আগেই হয়ে গিছিলো কিন্তু ওয়াইফাই ছিলো না তাই পোস্ট করতে পারিনি)

চলবে,,,,,,

#আমার_গল্পে_তুমি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#৩৩_পর্ব
,
আর্দ্র বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ইয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো এতটা পথ আসলো একসাথে এর মাঝে ইয়ানা একবারও আর্দ্রর সাথে কথা বলেনি, আর্দ্র অবশ্য ইয়ানাকে এটা ওটা জিগাস করছিলো কিন্তু ইয়ানা একদম চুপ করে বসে ছিলো,, আর্দ্র ইয়ানাকে নিয়ে সোজা ওদের রুমে গিয়ে ইয়ানাকে বিছানায় বসায়ে দিলো,, তুমি একটু বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি, খবরদার বিছানা থেকে একদম নামবে না কিন্তু।

ইয়ানা তাচ্ছিল্য করে হেসে বলল, জুতা মেরে গরু দান,, আজকে আমার এই অবস্থার জন্য আপনি দায়ী প্রথমে তো অবিশ্বাস করলেন মারলেন তারপর এখন আবার ভালোবাসার নাটক করছেন,,। যখন শুনলেন আমি আপনার ভাবির জন্য এতোটা করেছি ঠিক তখনি আপনার আমার প্রতি ভালোবাসা উতলে উঠেলো ব্যাপারটা হাস্যকর না??

ইয়ানার কথায় আর্দ্র ভীষণ কষ্ট পেলো তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,, আমার ভালোবাসা তোমার কাছে নাটক মনে হচ্ছে?? তুমি আমার ভাবিকে আর তার বেবিকে বাঁচিয়েছো বলে আমি তোমাকে ভালোবাসিনি আমি তোমাকে সেই প্রথম থেকেই ভালোবেসে আসছি হমম প্রথম প্রথম আমি নিজেও বুঝতাম না কিন্তু পরে সময়ের সাথে সাথে বুঝেছি,, এটা সত্যি যে তোমাকে কখনো বলা হয়নি তবে ভালো আমি তোমাকেই বাসি সেটা তুমি নাটক বলো আর যাই বলো,, তুমি না মানলে আমার ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যাবে না।

আপনি যে এতো কথা বলছেন আমায় আচ্ছা আমায় একটা কথা বলুন তো, সাপোজ আমি যদি সেদিন রাস্তায় এক্সিডেন্ট করতাম বা সুহাগ ভাইয়া যদি আমাকে হসপিটালে না নিয়ে যেতো, আমি যদি ওই দিন মরে যেতাম তাহলে আপনি কি করতেন??

স্টপ কি সব আজে বাজে কথা বলছো আর কখনো এসব কথা বলবে না, আরে আমি বলছি তো আমার ভুল হয়েছে আর মানুষ মাএই ভুল করে তো এর জন্য কি আমায় ফাঁসিতে চড়াবে?? বলো কি করতে হবে আমি ভুল যখন করেছি তখন তো শাস্তি পেতেই হবে বলো তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নেবো।

আমার ক্ষিদে পেয়েছে খেতে দিন আমায় সেই কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছে আমি যে এদিকে ক্ষিদেই মরে যাচ্ছি ওনার কোনো হুশই নেই,, মুখ ফুলিয়ে বলল ইয়ানা।

ইয়ানার কথায় আর্দ্র পুরাই বোকা বনে গেছে নিজেই প্রথমে কথা তুলে এখন নিজেই আমায় কথা শুনাচ্ছে, আর্দ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে চলে গেলো৷

মিস্টার আর্দ্র আপনি আমায় শুধু শুধু মেরেছেন যেখানে আমার মা কখনো আমার গায়ে হাত তুলেনি সেখানে আপনি বিনাকারণে আমায় চড় মেরেছেন এর মাশুল তো আপনাকে দিতেই হবে,, আপনাকে আমি প্রতিটা পদে পদে বুঝিয়ে দেবো যে ভালোবাসার মানুষকে অবিশ্বাস করলে তাকে আঘাত করলে কেমন লাগে ,, বাঁকা হেসে কথাগুলো বলল ইয়ানা।

ওদিকে বাড়িতে কেউ না থাকায় আর্দ্র কে নিজেরই রান্না করা লাগছে আজকে বিকেলে সবাই আসবে ভাবিকে নিয়ে,, আর্দ্র কোনো রকমে নুডলস বানিয়ে নিয়ে গেলো নুডলস বানাতে গিয়ে হাতে ফোসকাও বানিয়ে ফেলেছে একটা বাটিতে করে নুডলস নিয়ে ইয়ানার কাছে গেলো,,, আমি বেশি কিছু রান্না করতে পারি না যে টুকু পারি সেটুকুই করে এনেছি নাপ হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

ছিঃ আপনার কি মনে হয় আমি পিছট?? মুখ না ধুয়েই খাবো, আমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে চলুন মুখ ধুবো তারপর খাবো,

ও হ্যাঁ তুমি তো মুখ ধৌওনি চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি,, তারপর আর্দ্র ইয়ানাকে কোলে তুলে নিলো ইয়ানা আর্দ্রর গলা জড়িয়ে ধরে মনে মনে বলল,, দ্যা গ্রেট আর্দ্র চৌধুরী আপনাকে তো আমি নাকানি চুবানি খাইয়েই ছাড়বো আমাকে চড় মারা কত্তবড় সাহস, তারপর আর্দ্র ইয়ানাকে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে আবার বেডে বসিয়ে দিলো,, এই বার নাও হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

তার কোনো দরকার নেই মিস্টার আর্দ্র আল্লাহ আমার দুইটা হাত দিয়েছে আমি নিজের হাতেই খেতে পারবো, ইয়ানা আর্দ্রর হাত থেকে নুডলস এর বাটিটা নিয়ে নিজের হাতে খেতে লাগল,, আড় চোখে তাকিয়ে দ্যাখে আর্দ্র মন খারাপ করে বসে আছে দেখে মনে হচ্ছে যেনো কোনো বাচ্চা ছেলের হাত থেকে তার সবচেয়ে প্রিয় খেলনা কেউ কেরে নিয়েছে, ইয়ানা বাঁকা হেসে চোখ সরাতে গেলেই দেখলো আর্দ্রর হাতে ফোঁসকা পড়ে গেছে।

এটা হলো কি করে দেখে কাজ করতে পারেন না?? জ্বলছে খুব তাই না??

তুমি ফুঁ দিয়ে মলম লাগিয়ে দাও তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।

ইয়ানা আর্দ্রর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হাতে ফুঁ দিতে লাগল তারপর মলম লাগিয়ে দিয়ে বলল,, ভাববেন না যে আমি আপনাকে ভালোবেসে এসব করছি,, আপনার হাতে যদি এমন ফোঁসকা থাকে তাহলে আমায় কোলে নিবে কে তাই মলম লাগিয়ে দিলাম এর আবার অন্য মানে বার করবেন না।

আর্দ্র ইয়ানার দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি হাসলো।
,,,,,,,,,,
রান্না হলো?? সেই সকালে নুডলস খাইছি আর কিছুই তো খেতে দিলেন না,,, না খাইয়ে মারবেন নাকি?? সেই তখন থেকে রান্না ঘরে কি করছে,, কে জানে বলি আমি কি আজকে খাবার পাবো?? বেডরুম থেকে চেঁচিয়ে বলল ইয়ানা।

এই তো হয়ে গেছে আর পাঁচ মিনিট,, রান্না ঘর থেকে বলল আর্দ্র,, কি দিন আসলো তোর আর্দ্র শেষে কিনা তুই রান্না করছিস?? আর কি কি যে কপালে তা আল্লাহ জানে, কি খেয়ে যে বউকে চড় মাড়তে গিছিলাম তা কে জানে,, বিরবির করে বলল আর্দ্র।

পাঁচ মিনিট বলে বলে তো ১ ঘন্টা লাগিয়ে দিলেন তাও তো কিছুই হলো না,, ইয়ানা আস্তে করে বেড থেকে নেমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সিঁড়ির কাছে গেলো তারপর আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে হা হয়ে গেলো,, কেননা আর্দ্রর সারা গায়ে ময়দা আর ফ্লোরে সবকিছুর খোসা পড়ে আছে আর তার মধ্যে আর্দ্র বসে বসে সবজি কাটছে।

এসব কি??

আরে তুমি এখানে আসতে গেলে কেনো আমি তো বলছি যে এখনি হয়ে যাবে তুমি আবার কষ্ট করে আসতে গেলে কেনো।

হুমম সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি কেমন রান্না হচ্ছে ,, আর এভাবে ফ্লোরে বসে সবজি কাটছেন কেনো??

তো আমি কি এসব পারি নাকি? না কখনো করেছি, আমি শুধু পারি কীভাবে মিটিং হ্যান্ডেল করতে হয় কীভাবে ডিল করতে হয় কীভাবে অফিসে সামলাতে হয়।

শুধু এসব কাজ পারলেই হয়না সাথে ঘরের কাজও শিখে রাখতে হয়,, দেখি সরুন আমি রান্না করছি।

একদম না তুমি বরং এখানে বসে আমায় বলে দাও আমি সেই সেই মতো সবকিছু করছি তাহলেই তো হয়ে গেলো।

ওকে,, তারপর ইয়ানা আর্দ্র কে সবকিছু বুঝিয়ে দিলো কীভাবে কি করতে হবে আর্দ্র ও ইয়ানার কথা মতো রান্নার করতে পারলো ,, অবশেষে রান্না শেষ হলো,, চলো তোমাকে রুমে নিয়ে যাই।

আর্দ্র ইয়ানাকে কোলে নিয়ে রুমে গেলো তারপর বেডে বসিয়ে দিয়ে বলল, তুমি এখানে বসো আমি গোসল করে আসছি।

আরে আজব নিজে তো গোসল করতে যাচ্ছেন আমি যে গোসল করেনি সেদিকে খেয়াল আছে কারো??

ইয়ানার কথায় আর্দ্র বাঁকা হেসে বলল, তাহলে তো ভালোই হলো চলো দুজনে একসাথে গোসল করি তাহলে এককাজে দুই কাজ হয়ে যাবে।

কখনোই না আমি আপনার সাথে জীবনেও গোসল করবো না,,কিন্তু কে শোনে কার কথা আর্দ্র ইয়ানকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আর ওদিকে ইয়ানা চেঁচিয়েই যাচ্ছে,,, গোসল শেষে আর্দ্র ইয়ানাকে চেঞ্জ করিয়ে মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে বেডে এনে বসিয়ে দিলো আর ইয়ানা তো রেগে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে, তখনি কলিং বেল বেজে উঠল, তুমি এখানে বসো মনে হয় সবাই চলে এসেছে আমি দরজা খুলে দিয়ে আসছি।

চলবো,,,,,,???