আসক্তি পর্ব-২৭

0
1532

#আসক্তি
পর্বঃ২৭
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“ডক্টর নীরা কে?”-অনূভূতিহীন শান্ত কন্ঠের প্রশ্ন পাখির।
চমকে ওঠে শান।পাখিকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখা হাত দুটো আলগা হতে থাকে ধীরেধীরে। কাধেঁর উপর রাখা থুতনীটা আলগা হয়।পায়ের তলার মাটি গুলো যেন খসে খসে যাচ্ছিলো।চারদিকে কালবৈশাখীর তাণ্ডব শুরু হয়ে গেলো।
এই মূহূর্তে শানের মাথায় কোন কিছু কাজ করছে না।
“বলে দিবো সবটা?পাখি কী আমায় ভুল বুঝবে?ছেড়ে যাবে?নাকি বিশ্বাস করবে?এমন দিনটার জন্যেই তো সবটা চেপে গেছি ওর থেকে”-হাজারও জল্পনাকল্পনায় ব্যথিত হয় শানের মন।

“আপনাদের বাচ্চাটা কে এভাবে মেরে ফেলতে পারলেন সার্জন সাহেব!”-শানের কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে পাখি ফের বলে ওঠে।
পাখির বলা শেষের কথাটা শানের কর্ণকুহরে পৌঁছা মাত্রই ভ্রুকুচকে যায় ।নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না সে।পাখির দুই বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়
“হোয়াট ডু ইউ মিন বাই বাচ্চা নষ্ট করেছি?কে তোমায় এসব আবোল তাবোল বলেছে? ”
পাখি শানের চোখে চোখ রেখে নির্লিপ্ত চাহনীতে বলে,”আপনার বাচ্চার মা, নীরা”
মুচকি হাসির রেখা পাখির ঠোঁটে। যেটার অর্থ খুব ভয়ানক, খুব।শানের বোধগম্য হতে দেড়ি হয় না নীরা ঠিক কোন পর্যন্ত বলেছে।
“নীরা তোমার শেষ পরিণতির সময় হয়েছে”-নীরার কথা ভাবতেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে শানের।

পাখি হঠাৎ লম্বা লম্বা শ্বাস টেনে দুই হাতে শানের কলার চেপে ধরে শক্ত করে।
কয়েক মূহূর্ত চোখ বন্ধ রেখে চোখ খুলে তাকায় শানের চোখের দিকে।শান থমকে যায় পাখির চোখে।ও চোখে আজ আগ্নেয়গিরির দাবানল দাউদাউ করে জ্বলছে।স্ফুলিঙ্গ যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে চারিদিকে।রক্তবর্ণ চোখ দুটোয় আজ তার জন্যে স্পষ্ট ঘৃনা প্রকাশ পাচ্ছে।অসহায় ভঙ্গিতে চেয়ে থাকে শান, তার ভালোবাসার মানুষটির দিকে।

“আপনার আর নীরার অবৈধ সম্পর্ক ছিলো, ফুটফুটে একটা বাচ্চাও এসেছিলো।সবটা শেষ করেছেন আপনি! আমার থেকে এ সবকিছুই লুকিয়ে গিয়ে সাধু সেজে সংসার করছেন।আরে ব্লাডি নোংড়া লোক, কি করে আমায় ঠকাতে পারলেন?কি করে নীরাকে ধোকা দিলেন?বাচ্চাটার কথা একবারও ভাবলেন না?ছিহহহ, ধিক্কার জানাই আপনার মতো কাপুরুষকে।”
শানের পুরো শরীর ঠান্ডা বরফে পরিনত আজ।
“নীরা এতো নিচে নামতে পারলো”
স্তম্ভিত শান।কোথা থেকে শুরু করবে,, কি ভাবে পাখিকে সবটা বিশ্বাস করাবে শানের মগজে কিছুই আসছে না।শুধু স্পষ্ট সত্যবাদী একটা নীরব চাহনীতে চেয়ে আছে শান।

শানের প্রতিউত্তর না পেয়ে পাখি আবার বলে,”আমি একজন অক্ষম মেয়ে;অ্যাসেক্সুয়াল! দয়া করেছেন আমায়?করূনা!”কি জন্যে করেছিলেন বলেন?আমার কাছে সবটা কেন লুকালেন সার্জন সাহেব?কেন লুকালেন?আমার জীবন টা নষ্ট কেন করলেন?আমি তো চাইনি এমন জীবন।আরে আমি তো এখনো মানতেই পারছি না আপনি এতো নীচ,এতো নোংড়া প্রকৃতির”-বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পাখি।পাখির কান্না গুলো চার দেয়াল ভেদ করে বাড়ির প্রত্যেকটা দেয়ালে বারি খাচ্ছিলো।পাখির কান্নার বেগ বেড়ে যাচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে।কলার ছেড়ে শানের গলাটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে,”আমায় মিথ্যে কেন বললেন সার্জন সাহেব?বার বার বলেছি আমায় সত্যটা বলার চেষ্টা করবেন।তা যতো কঠিনই হোক,তাও?তাও এমনটা করতে পারলেন?”।বলেই হেচকি তুলে কান্না করে পাখি।শান হহতবিহ্বল হয়ে যায়।পাখি যে এতো কষ্ট পাবে ভাবতেও পারে নি শান।দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় পাখিকে।পাখির কান্না থামছে না।কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ থাকার পর শান আলগোছে পাখিকে নিজের থেকে সরাতে চায়;সবটা বলার জন্যে।

পাখি অকষ্মাত শানের গলায় গভীর চুম্বনে ভরিয়ে তোলে।চুম্বনের গভীরত্ব এতোটাই বেশী, শানের সারা শরীরে শীতল শিহরন বয়ে যায়।অজানা ভালোলাগায় পাখিকে নিজের বুকে পিষে নেয় শান।পাখি এবার পাগলের মতো শানের গলা,ঘার,চোখে,মুখে,ঠোঁটে,কপালে অজস্র চুমু এঁকে দেয়।ফোস ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়ছে পাখি।
“আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ…এই মানুষটা আমায় খুব ভালোবাসে।কোনদিনও মিথ্যে বলতেই পারে না,তাই না?আমিই কিসব ভুল ভাল কথা ধরে বসে আছি।”-পাখি আবল তাবল বকছে আর চুমুর গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে।সে একদম মানতেই পারছে না শান তাকে ধোকা দিয়েছে,মিথ্যে বলেছে।এই মূহূর্তে কোন অংশে পাগলের থেকে কম মনে হচ্ছে না পাখিকে।শান ভরকে যায় পাখির অবস্থা দেখে।

হঠাৎ কি হলো,পাখি নিজের তলপেট চেপে ধরে একটু সরে আসলো শানের থেকে।চোখমুখ কুচকে যায় পাখির।শান শঙ্কিত মুখে এগিয়ে আসে পাখিকে ধরতে,”পাখি কি হলো তোমার?তোমার সেনসিটিভ সময় চলছে আর তুমি কি শুরু করলে বলতো!”
পাখি পেট চেপে কোণমতে বিছানার কোণায় গিয়ে বসে। এক হাত উচিয়ে বলে,”ডোন্ট টাচ মি,ডোন্ট ডেয়ার টু ডু দিস.
শান থমকে যায়, ভাবনাগুলো এলোমেলো ছোটাছুটি করছে।ভাবতেও পারছে না সময়টা ঠিক এতোটা ঝড় তুলবে।

(কিছুক্ষন আগে)

গত পাঁচ দিনের ন্যায় পাখি এখন আর ভোরবেলা উঠতে পারে না।শান উঠতে দেয় না।না দেয় বার বার উপর নিচে উঠানামা করতে।বিছানায় চেপে রাখে ওকে।আজ পাখির পিরিয়ডের পাঁচ দিন চলছে।পেট ব্যথার ছিটেফোঁটাও নেই আজ।অথচ গতকালকেও কতোটা ব্যথায় ছটফট করেছে সে।ঔষধেও কাজ হয় নি।
সকাল সকাল শান নামাজ পড়ে জিম করে নাস্তা সাড়ে।এরপর হাতের কিছু কাজ সেড়ে মেডিকেল বা চেম্বারের উদ্দেশ্যে রেডি হয়।আর এসবটাই বিছানায় কেবলাকান্তের মতো চেয়ে চেয়ে
দেখতে হয় পাখিকে।কিছু করার নেই।শানের রাগ খেতে হবে নইলে।
আজও তার ব্যতিক্রম হলো না ।শান রেডি হচ্ছে পাখি চেয়ে চেয়ে দেখছে মলিন বদনে।

“আমার এর আগে অনেক অনেক বার পিরিয়ড হয়েছে।আর প্রত্যেকটা মেয়েরই হয়।তাদেরকে পাঁচদিন অবধি বেড রেস্টে থাকতে হয় না।আরে ভাই বোর ফিল করি, বুঝতে হবে তো নাকি!”-শানকে শুনিয়ে শুনিয়ে একাই বকবক করছে পাখি।শান সেদিকে কান না দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে কাউকে কল দিচ্ছে।কথা বলে ফোন টা দ্রুত সেন্টার টেবিলের উপর রাখে।বেশ তাড়াহুরোর মাঝে শান।
“ধুর বাবা ভাল্লাগে না, বলি ওরে হার্ট সার্জন।আমার জীবন টা পানি পানি বানানোর পায়তারা করছেন বুঝি!আমি উঠে গেলাম, এই যে গেলাম কিন্তু!”-বলতে বলতেই পা নিচে নামায় পাখি।শান খিপ্ত চোখে তাকিয়ে পাখির দিকে তেড়ে আসে।কোলে তুলে নেয় ফট করে।
“বেশী উড়াউড়ি করো না।ডানা কেটে দিবো।সব মেয়ের তোমার মতো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ব্যথা হয় না।একটু সুস্থ হও তোমায় ডাক্তারের কাছে নিবো”
“তাই বলে এভাবে”-আদুরে স্বরে বলে পাখি।
“হুমম এভাবে।আর এতো আদুরে স্বরে কথা বললে কিন্তু কিছুই মানব না, মনে রেখো।ছুটি নিতে বাধ্য হবো”
শানের কথায় পাখির কান গরম হয়ে যায়।লজ্জায় মাথা নিচু করে।
শান পাখিকে অবাক করে ওরে গালে হালকা করে কামড় দেয়।

পাখি আরেকবার আদুরে স্বরে বলে,”এইই উঠি না, নিচে যাই না।আমার তো ভালো লাগছে না আর এভাবে”
“বুঝেছি বউ আমার কি চায়”-বলতে বলতেই গলার টাই টা ঢিলে করে শান।ফোন হাতে নিয়ে মিছিমিছি বলে,”মিটিং টা ক্যান্সেল করে দাও”
পাখির চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে যায়।দুহাতে ঠেলে সরিয়ে দেয় শানকে।
,”বজ্জাত লোক,হারামি লোক,খাটাশ একটা।যান তো যান। নামব না আমি প্রমিজ”
শান মুচকি হেসে পাখির কপালে গাঢ় চুমু এঁকে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

শানের যাওয়া নিশ্চিত করে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকার পর পাখি বিছানা ছেড়ে ওঠে।গত দিন গুলো এটাই করেছে সে।এরপর উঠে ঘর দোর গোছানো শুরু করে।হঠাৎ খেয়াল পরে সেন্টার টেবিলে ফোনটা রেখে চলে যায় শান।মুচকি হেসে ফোন টা নিয়ে ভালো করে রেখে দেয়।সামিহা তখন নিজের ঘর থেকে বের হয়।চোখ পড়ে পাখির দিকে।নজর বুলিয়ে বুঝতে পারে ও ঘরে একা।নিশ্চিত হবার জন্যে ধীর পায়ে ঘরে ঢোকে।
“একা একা কি করো,শুনলাম তুমি নাকি অসুস্থ্য? ”
সামিহার কথায় পিছু ফিরে তাকায় পাখি।
“ভাবি, ভিতরে আসেন না।”
“না ভাই থাক, ভিতরে যাবো না।তোমার বর যা সেনসিটিভ পার্সন।তোমাকে তো কারোর সাথে মিশতে দেয় না”
“সেরকম টা তো আমার মনে হয় না ভাবি!”
“শান কোথায়?”
“মাত্রই চলে গেলো”
একথা ওকথায় সামিহা শানের অতীতের সামান্য একটু অংশ পাখির সামনে বলে।
“তা শান তোমায় কিছু বলে নি ওর কথা।”
“কি ব্যপারে?সবটাই তো শেয়ার করে আমার সাথে!”
“ওর জন্যে তো হাজার হাজার মেয়ে পাগল ছিলো।ও কাউকে পাত্তা দিতো না।পরে অবশ্য নীর…..
থাক ভাই শান যেহেতু কিছু বলে নি আমিও বলতে চাই না।মিছেমিছি কারো দোষ ঘাড়ে না নিই”

সামিহার আধো কথায় অবাক হয় পাখি।
“এমনি একটা কথা দাদিজানও বলেছিলো বিয়ের কিছুদিন পর।কেউ কি ছিলো উনার লাইফে নাকি এখনো আছে?তার কথা তো সবাই জানে মনে হয় তাহলে আমার কাছে চেপে গেলো কেন?নীর নামে কে ছিলো?”
“কিরে কোথায় হারালে?”
সামিহার কথায় পাখির ভাবনা ভাঙ্গে।
“ভাবি থামলেন যে।বলুন না নীর কে?”
সামিহা সরু সরু চোখে তাকায়।কিছু না বলেই নিজের ঘরে চলে যায় সামিহা।

পাখি হা করে চেয়ে থাকে নীরার যাওয়ার দিকে। অজানা আতঙ্ক গ্রাস করে পাখিকে।
“আমারর স্বপ্ন টা সত্যি হবে না তো”-ভাবতেই চোখের কোণ ভরাট হয় পাখির।
“মরে যাব উনাকে ছাড়া।আমার নেশা উনি”
চট করে জলটা মুছে নিয়ে ফোনের দিকে এগিয়ে যায়।একটা নম্বর থেকে কল করা হচ্ছে।সচরাচর পাখির ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে না।দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে পাখি।কলটা কেটে যায়।আবার কল আসতেই রিসিভ করে পাখি।
“আসসালামু আলাইকুম,জ্বি কে বলছেন?”
“ডক্টর নীরা”-সালামের জবাব টা না দিয়ে থমথমে গলায় বলে সে।
শানের সাথে ঐ ঘটনার আজ সাত দিন হলো তবুও যেন এখনও দাবানলের মতো রাগটা দাউদাউ করছে নীরার।
“জ্বি ববলুন!উনি তো বাসায় নেই।মেডিকেলে আছেন”
“জানি। দরকার টা তোমার সাথে”
“আমার সাথে!”-পাখি অবাক হয়ে যায়।আনমনে ভাবতে থাকে,”আমার সাথে আবার কিসের দরকার”
“হ্যা বলুন!”
“শান তোমায় আমার ব্যপারে কিছুই জানায় নি তাই না?”
নীরার এই কথায় পাখি সামিহার কথা মেলায়।
“সামিহা ভাবি তো নীর বলেই থামলেন।আরে এনার নাম তো নীরা।তারামানে এনার কথাই বলতে চাইছিলো।তারমানে ইনিই সেই।আচ্ছা প্রথম যেদিন চেম্বারে গেলাম সেদিন তো উনাদের মাঝে অন্যরকম কিছু কথা হয়েছিলো।সত্যিই কি ইনিই আমার সার্জনের ভালোবাসা ছিলেন”-থমকে যায় পাখি।

“জানি কি ভাবছো তুমি।হ্যা আমিই সেই নীরা।যার পিছনে একসময়ের সকল মেয়েদের ক্রাশ শান ঘুর ঘুর করত কুত্তার মতো”
“মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ “-কপোট রাখে খিপ্ত হয় পাখি।
“এতো জ্বলে?তারপরের কথা গুলো শুনলে ঐ ফেরেসেতা নামক মানুষ রূপী শয়তান টার আসল রুপ দেখতে পাবা”
“আপনি আপনার সীমা পেরিয়ে যাচ্ছেন।একান্ত কিছু বলার থাকলে বলুন নয়ত কলটা কাটব আমি।এসব ফালতু কথা শোনার সময় নেই আমার”-রাগে যেন গা জ্বলে যাচ্ছে পাখির।তবে কিছু অজানা একটা কিছুই যে আজ জানতে হবে তার জন্যে শরীর কাপছে ওর।না জানি কতো কঠিন হয় সেই অজানা জিনিস।

“শান আর আমার মাঝে দীর্ঘ তিন বছরের সম্পর্ক ছিলো ।তিন বছরে অনেক বার আমরা রুম ডেট করি তাও শানের জেদে। ”
“স্টপ দিস ননসেন্স।চুপ করুন আপনি, নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে।লজ্জা করে না এসব বলতে তাও মিথ্যে মিথ্যে”-নীরার বেহায়াপনা কথায় পাখি আর রাগ টা কন্ট্রোল করতে পারছিলো না।গড়গড় করে কি বললো নিজেও বুঝতে পারল না

“কোনটা মিথ্যে মনে হচ্ছে তোমার কাছে?ওকে ফাইন ঐ বাড়িতে যতোগুলো সদস্য আছে ইভেন সুমিও,সবাই আমার ব্যপারে জানে।তাদের কাউকে আস্ক করিও।আন্সার পাবা।”
“তাই তো, টিনাও সেদিন আমতা আমতা করেছিলো।দাদিজানের কথা শেষ না হতেই টিনা সেদিন তাকে টেনে নিয়ে গেলো,আজ সামিহা ভাবি”-পলকহীন চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে আর নিজের মনেই ভাবছে সে।
“কিন্তু সার্জন সাহেব আমায় কখনো মিথ্যে বলবেন না আমার বিশ্বাস আছে”
“কি ভাবছো জানি না।তবে আমার কথাই সত্য। পারলে শানের থেকে জিজ্ঞেসা করিও।যাই হোক আমি কিছু বলতে চাই তোমাকে।”
“নট ইন্টারেস্টেড টু হেয়ার”
“হাহাহা….ইউ হ্যাভ টু পাখি”
নীরা আবার গড়গড় করে বলতে থাকে,”শান আমার জন্যে এতোই পাগল ছিলো যে মেডিকেল কলেজের গার্লস হোস্টেলের বাথরুমে দেখা করতে এসেছিলো লুকিয়ে,মাঝরাস্তায় প্রোপোজ করা, একে অপরকে সময় দেয়।এরমাঝে আমরা দুজন দুজনার প্রতি আকর্ষন অনুভব করি;যা হয় আরকি সচরাচর সব কাপলদের মাঝে।তো একদিন আমরা রুম….”

“থামুন প্লিজ, আমি এসব শুনতে চাই না”-কান্নাজড়িত গলায় বলে পাখি।
“তোমায় শুনতে হবে পাখি।নয়ত শানের আসল রূপ কখনোই সামনে থেকে বুঝতে পারবা না”
ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে পাখি।বিশ্বাসের সমস্ত দেয়াল যেন ধসে গেলো।
“পাখি আমাদের একটা বাবুও এসেছিলো। যেটা শান আমায় নষ্ট করতে বাধ্য করায়।আর কিছুদিন পর সম্পর্ক টা নষ্ট করে দেয়”-শান্ত ভাবে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে নীরা।
পাখির এবার আর সহ্য হচ্ছে না।জোড়ে জোড়ে কেঁদে দেয়।
“তুমি ওর জীবনে এসেছো, এক ছাদের নিচে আছো তাই হয়ত মায়া জন্মেছে।আর তার ফলে তোমার এক্সট্রা যত্ন নেয়া, আদোর করা এসব।আর চোখের সামনে কোন নারী থাকলে সব পুরুষই তাকে পাবার আকাঙ্ক্ষা রাখে যতো কুৎসিতই হোক।”

পাখির কান্নার গতি বেড়ে গলো।
নীরা আবার বলতে শুরু করে, “আরে শান, শানের পরিবার তো তোমায় করূনা করেছে।নয়ত তোমার মতো অ্যাসেক্সুয়ালিটি রোগের একজন অ্যাসেক্সুয়াল পারসনের সাথে কেউ ঘর করে?”
পাখি নীরার কথা বুঝতে পারে না।কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে জানতে চায়ে,”মানে?”
নীরা এরপর আর কোন কিছুই বাদ রাখে না।প্রথম থেকে শেষ অবধি সবটাই পাখিকে বলে দেয়।
সবকিছু এতো পরিষ্কারভাবে জানার পর পাখির পৃথিবী যেন থমকে যায়।চোখের সামনে ঘোর অন্ধকার সবকিছু।মাথা ভনভন করে ওঠে।মূহূর্তেই যেন মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়।অন্ধকার টা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়।জ্ঞানের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে সে।ফোনটা পরে যায় মেঝেতে, লুটিয়ে পরে নিজও।

🌸🌸
পাখির কান্নার শব্দে টিনা ততোক্ষনে কান থেকে হেডফোনটা খুলে শানের ঘরের দিকে এগোয়।দরজায় দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখে পাখিকে।নিচে ডাকতে যায় সবাইকে।বিছানায় শুইয়ে দেয়া হয় পাখিকে।চিন্তিত চোখেমুখে শর্মিলা বেগম ছেলেকে ফোন দেয়।কিন্তু কল যায় না।শানের চাচিমা পাখির মুখে দুই তিনবার পানির ঝাপটা দিতেই পিটপিট করে চোখ খোলে পাখি।লাল চোখ দুটো যেন নিষ্প্রান আজ।পাখিকে জিজ্ঞেসা করা হলে কোন জবাব দেয় না সে।সামিহা বেশ বুঝতে পেরেছে কিসের জন্যে ওর এ অবস্থা।
“মা আমি একটু ঘুমাবো।শরীরটা ভালো লাগছে না”-মিথ্যা বলে পরোক্ষভাবে সবাইকে ঘর ছাড়তে বলে পাখি।শর্মিলা বেগম বুঝতে পেরে পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

পাখি ওয়াশরুম থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হয়।আয়নার সামনে বসে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। একটু আগের ঘটনা টা কে নিছকই হ্যালুসিনেশন ভাবতে চায় সে। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে ব্যস্ত হয়ে পরে পাখি।শানের আছড়িয়ে দেয়া চুলগুলো পূনরায় আছড়ে নেয়।চোখে মোটা করে কাজল এঁকে দেয়।ওড়নাটা বার বার এপাশ ওপাশ করে ঠিক করে।এরপর লম্বা আয়নাটার সামনে নিজের পা থেকে মাথা পর্যন্ত বার বার দেখে নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে আয়নার সামনে।

আচমকা কেউ পেটের উপর কারো পুরুষালি হাতের শক্ত বাঁধন আর কাঁধে খোঁচা খোঁচা দাড়ি সমেত থুতনিটা রাখে। আয়না ভেদ করে সেদিকে চায় পাখি।বুঝতে অসুবিধা হয় না মানুষটা তার নেশা ;তারই সার্জন সাহেব।

অনুভূতিহীন চোখে আয়নার পুরুষ প্রতিবিম্বটার দিকে তাকিয়ে পাখি জানতে চায়,”ফিরে এলেন যে!ফোন নিতে?”
“নাহহহ”-ঘোরলাগা কন্ঠের জবাব শানের।
“তাহলে?”
“মিটিং ক্যান্সেল, ভাবলাম আমার বউটার সাথে একটু টাইম স্পেন্ট করব করব আজ।তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম।খুশি হও নি? ”
“হ্যাএএএএ,অননননেক”
“কে বলতে পারবে এই এতো সুন্দর মুখটার আড়ালে কতো জঘন্য কেউ লুকিয়ে”-আনমনে ভাবতে থাকে পাখি।

শান ওভাবেই ধরে রাখে পাখিকে।
“ও আমার সার্জন সাহেব!”
“বলো না জান।এতো করূন স্বরে কেন ডাকছো হুমম, নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলব যে”-বলেই পাখিকে আরো মিশিয়ে নেয় নিজের কাছে।
“ডক্টর নীরা কে?”……

চলবে……