#আসক্তি
পর্বঃ৩৭
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
“পাখি প্লিজ স্টপ।আগে আমার কথা শুনো”-ঘরে ঢোকার আগ মূহূর্তে বলে ওঠে শান।
পাখি পিছন ঘুরে শানের কাঁধের উপর দুই হাত রেখে হেসে হেসে বলে,”উুহুহহহম,আজ আগে আমার কথা শুনবেন”
বলেই আবারও ঘরের ভিতর টানতে থাকে।শান বুঝতে পারছে না কি বলে শুরু করা উচিত। অনুভুতি গুলো বড্ডো ভোতা হয়ে গেলো এই মূহূর্তে।স্তম্ভের ন্যায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।হাতে টান পরায় পাখি পিছন ঘুরে তাকিয়ে বলে, “আসেন না!”
“পাখি লালমনিরহাট যেতে হবে রাইট নাউ”-চোখ বন্ধ করে কথাটা বলে পূনরায় চোখ খুলে তাকায় শান।
খুশির এ মূহূর্তে কথাটা স্পষ্ট শোনালো না পাখির কাছে।ভ্রুকুচকে জানতে চায়,”বুঝি নি!”
শান ঐ মূহূর্তে আর কিছু না বলে পাখির হাত টেনে নিয়ে নিচে চলে যায়।সদর দরজা খুলে বাহিরে বের হতেই পাখি বলে ওঠে,”কোথায় যাচ্ছি আমরা এতো রাতে?আর আমি তো রেডিও নই!”
শানের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। সে পাখিকে বের করে এনে গাড়ির দরজা খুলে দেয়।হা হয়ে চেয়ে দেখে পাখি।
“ভিতরে বসো ”
পাখি মুখটা থমথমে করে জবাব দেয়,”কোথায় যাচ্ছি সেটা তো বলবেন!
শান পাখির দিকে চেয়ে থাকে অসহায়ভাবে।চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নেয় ;কোন জবাব দিতে পারে না।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে।কেউ কোন কথা বলছে না।পাখি বার বার ফিরে তাকাচ্ছে শানের দিকে কিন্তু কোন ইশারা কিংবা সাড়া কোনটাই পাচ্ছে না
“মনে মনে কতো প্ল্যান করে রাখলাম।সবটাই ভেস্তে গেলো।এই সার্জন যে কই নেয় আমায় সেটাই দেখার পালা!হুহহ,সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো তো!”-আনমনে ভেবে পাখি মৃদুস্বরে চিৎকার বলে, “ওহহহহ আপনার সারপ্রাইজ টা দেবেন তাই তো?”
পাখির কথায় তড়িৎগতিতে ব্রেক কষে শান।হঠাৎ মনে হয় সারপ্রাইজের কথা।
“সারপ্রাইজ তো হবাই পাখি, তবে যা দিতে চেয়েছিলাম তার সম্পূর্ণ বিপরীত। খুশির বদলে অনন্তকালের চোখের পানি উপহার দিতে চলেছি আজ।আমি পারলাম না শেষ রক্ষা করতে”।
শানের ভাবনার মাঝেই পাখি বলে ওঠে, “কি হলো গাড়ি থামালেন যে আর কি এতো ভাবছেন?”
শান চোখের ইশারায় “কিছু না” বলে আবার ড্রাইভ শুরু করে।
“সেই গত দুই মাস ধরে সারপ্রাইজের কথা বলছেন।কালকেও বলেছেন।নিশ্চই দুপুরে সময় সুযোগ হয় নি তাই রাতে দিতে চাচ্ছেন! অবশ্য আপনার জন্যেও একটা গ্রেট সারপ্রাইজ ওয়েট করছে মি.সার্জন”-বলেই ফিক করে হেসে দেয় পাখি।শানের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। আপন মনে গাড়ি চালিয়েই যাচ্ছে।
“আরে আপনি তো তিস্তা পার করলেন!”-ব্যারেজ পার হয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে পাখি।
রাতের শহর, ফাঁকা রাস্তা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যে এতো তাড়াতাড়ি তিস্তা পার হলো বুঝতেই পারে নি শান।
“আমরা আমাদের বাড়ি যাচ্ছি?”-পাখির কথায় এবারও কোন প্রকিক্রিয়া নেই শানের।
কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে দাঁড়ায় পাখিদের বাড়ির গেইটের সামনে।মানুষের সমাগমে সুই ফেলবার মতোও জায়গা নেই। ঘাবড়ে যায় পাখি।চারিদিকে চেয়ে ঠাওর করতে পারে এটা তাদেরই বাড়ি।শুকনো ঢোক গিলে আস্তে করে দরজা খুলে বাহিরে দাঁড়ায়।বুঝতে পারে না এতো রাতে বাড়িতে কি হয়েছে!বুকটা ধকধক করছে তার।অজানা ভয়ে পা অবশ হয়ে আসছে।
“ভাবি!ভাবির কিছু হলো না তো!”-ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে পাখির।
শান ততোক্ষনে গাড়ি থেকে নেমে পাখির পাশে এসে দাঁড়ায়।শানের উপস্থিতি টের পেয়ে পাখি অসহায় মলিন মুখে সেদিকে চায়।শান তড়িৎগতিতে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।পাখিকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে পাখিকে ধরে ভিতর গেইট পর্যন্ত নিয়ে যায়।আশেপাশের সবাই করূন চোখে দেখছে পাখিকে।চেনা অচেনা লোকের ভীড়ে কিছুই বুঝতে পারছে না পাখি।শান ভীড় ঠেলে ভিতরে নিয়ে যায় পাখিকে।
সন্ধ্যের পরপরই শেষ গোসল করানো হয় শফিক সাহেবকে।সাদা কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে রেখে দেয়া আঙ্গিনার মাঝে, একমাত্র মেয়ের অপেক্ষায়।পাখি এদিক সেদিক তাকিয়ে বাড়ির সবাইকে খোঁজে ;পায় না।ফয়েজকে দেখতে পায় কারো সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যপারে কথা বলতে।
“ভাইয়া এখানে….”-আনমনে ভাবতেই শানের নজর অনুসরন করে হাতের বাম দিকে তাকায় পাখি।
মূহূর্তেই শীতল পাথরে পরিণত হয় পাখির সারা শরীর।নিথর হয়ে আসছে ধীরেধীরে। নিজের শরীরের ভারটা বড্ডো বেশি ভারি লাগছে। কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে সেদিকে এগিয়ে যায় পাখি।ততোক্ষনে পাখির আসার কথা শুনে বাহিরে বেরিয়ে আসে বাড়ির সবাই।সবাই মুখে আঁচল চেপে কেঁদে চলেছে।এ দৃশ্য সত্যিই পৃথিবীর অন্যতম করূন দৃশ্যের মধ্যে একটি।ছোট বড় সবার চোখেই আজ ব্যথার জল সাথে কিছু প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা।
শানও পাখির পিছনে পিছনে ধীরপায়ে এগিয়ে যায়।সবাই নিস্তব্ধ এখন। পুরো বাড়ি নীরব। পিনপতন নীরবতায় ছেঁয়ে গেছে বাড়ির প্রত্যেকটা ইট বালির স্তর।
পাখি প্রশ্নবাণ চোখে চেয়ে থাকে খাটিয়ায় শুয়ে রাখা কাফনে মোড়ানো দেহটার দিকে।শুকনো ঢোক গিলে কাপা কাপা হাতে খাটিয়ার হাতল ধরে বসে পরে।
পাশ থেকে কেউ একজন বলে,”মুখের কাপড়টা সরিয়ে দাও কেউ। মুখটা দেখতে দাও”।বলেই কেঁদে ফেলে লোকটা।
পাখি সেদিকে একবার অসহায় ভঙ্গিতে চেয়ে পাশে দাঁড়ানো শানকে দেখে।
কেউ এসে মুখটা আলগা করে দিতেই বাবার কপালটা নজরে পড়ে পাখির।বুকের হার্ট বিট যেন হাতুরির ন্যায় শব্দ করছে।পুরো মুখটা খুলে দিতেই মাথার উপর থেকে ছাঁৎ করে দুটো কাক কা কা করে উড়ে যায়।মুখটা এক নজর দেখে সিটকে সড়ে আসে পাখি। শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায় হাই ভোল্টেজের।শান বসে এক হাতে জড়িয়ে নেয় পাখিকে।নজরের ভুল ভেবে পাখি আবারও মুখটার দিকে তাকায়। না এবার আর কোন ভুল হয় না।চোখ বড় বড় করে সেদিকে চেয়ে দেখে।
“বাবা,বা বা,বাবাআআ”-চিল্লিয়ে ডুকরে ওঠে পাখি।পুরো বাড়ি যেন আবার মৃত্যুপুরীর বাড়িতে পরিণত হয়। কান্নার রোল পরে যায় আবারনআকাশ-বাতাস চারদিকে। সমস্ত প্রকৃতিও যেন পাখির কষ্টের কাছে হার মেনে চোখের জল ফেলছে।
পাখির আর্তনাদে বাতাস ভারি হয়ে আসছে।দম বন্ধকর বিদঘুটে একটা সময় তৈরী হলো।
“ও বাবা বা বা, আমায় ছেড়ে কি করে চলে গেলে বাবা?তোমার একমাত্র আদরের মেয়েকে ছেড়ে গেলে বাবা?”
বোনের এমন অবস্থা দেখে সোহান দৌড়ে এসে বোনকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
“এভাবে কাঁদিস না রে। কাঁদিস না।আমি আছি তো!”-বলে শান্তনা দেয় সোহান।
ভাইয়ের বুকে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে ওঠে।আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অস্ফুট স্বরে বলে,”ভাইয়া রে বাবা….. বাবা আমাদের এতিম করে চলে গেলো রে ভাইয়া”
রাশিদা বেগম সিঁড়িতে পিঠ ঠেকিয়ে নিষ্পলক চেয়ে আছে এতোদিনের সঙ্গীর দিকে। দ্বীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের পথচলা তাদের।মৃত্যুই যেন দুজনকে আলাদা করতে সক্ষম হলো।মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরোচ্ছে না তার।
…..
পাখির এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য সহ্য করার মতো ক্ষমতা শানের নেই।উপরে পাখির রুমে চলে যায়।বিছানায় বসে দুহাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে ওঠে শান।উপর থেকেও পাখিরর গগনবিদারী আর্তনাদ শানের কানে পৌঁছাতে সক্ষম।বুকটা যেন ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে শানের।
“সরি পাখি, জান।আমি পারলাম না তোমায় আসল সারপ্রাইজ টা দিতে।মূহূর্তের মাঝে আমার গোছালো সবটা এলোমেলো হয়ে গেলো।আমি পারি নি তোমার বাবাকে বাঁচাতে।ফেইলর ডাক্তার আমি;নিষ্কর্মা”
বলেই কেঁদে চলেছে শান।
🌸🌸
পাখি কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে যায়।বার বার সেন্স ফিরছে আবার কান্না করতে করতে সেন্স হারিয়ে ফেলছে।শান ওর অবস্থা বুঝে ঘরে এনে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
রাত বাজে দুইটা।লাশ আর বেশিক্ষন রাখা যাবে না।তাই সবাই তড়িঘড়ি করে লাশের দাফনের ব্যবস্থার কাজে লেগে পড়ে।আর পাখিও ঘুমন্ত তাই যা করার এখনিই করতে হবে।কারণ পাখি কিছুতেই শোকটা সহ্য করতে পারছে না।সত্যিই কি একটা মেয়ের পিতৃ বিয়োগের শোক সহ্য করবার মতোন ক্ষমতা আছে?
শোকের মাত্রাটা এতো বেশি লাগছে পাখির কাছে ঘুমের ইনজেকশনটাও কাজে দিলো না।
“বাবা”-বলে চিল্লিয়ে উঠে বসে পাখি।নিচ থেকে পাখির চিৎকারে অবাক হয়ে যায় শান।দৌড়ে চলে আসে উপরে।দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাখিকে।
“বাবা, বাবা কই আমার?”-অনুভূতিহীন চোখে শুকনো মুখে বলে পাখি।
শান পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আছে, বাবা আছে তো”
কথা জড়িয়ে আসে শানের।
বুঝতে পারে এভাবে মেয়ের অগোচরে বাবাকে দাফন করা উচিত হবে না।তাই ধীরপায়ে পাখিকে সাবধানে উপর থেকে নিচে নামিয়ে আনে।
একটু পর লাশ কাঁধে নিয়ে সবাই রওনা হয় দাফনের উদ্দেশ্যে।পাখির ধৈর্যের বাঁধ আর মানছে না কোনকিছুতেই।শানকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে ছুটে যায় চারজনের কাঁধে রাখা খাটিয়ার হাতল ধরতে। কান্নায় ভেঙ্গে পরে চারপাশ।
“কই নিয়া যাস ভাইয়া। বাবাকে ছেড়ে কি করে থাকব আমি”-পাখির মুখ থেকে উচ্চারিত একেকটা কথা যেন উপস্থিত সকলের বুক ফালাফালা করার ক্ষমতা রাখছে।
চোখের পানি সংবরন করে সোহান পিছনে না তাকিয়েই বাকিদের সামনে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়।
শান কোনমতে পাখিকে সামলে নিয়ে ভিতরে চলে যায়।
চোখের পানি মুছে মা কে বলে,”মা ওকে দেখে রেখো।আমি আসছি”
বলেই দাফনের জন্যে চলে যায়।খাটিয়া দৃষ্টির অগোচরে চলে যায় ;পিছন পিছন শানও।
🌸🌸
এতোক্ষনে পাখি একটু শান্ত হয়।শান্ত হয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় সবার কাছে জানতে চায়, “বাবার কি হয়েছিলো?আমাকে একটি বারও ডাকার প্রয়োজন মনে করলে না কেউ?”
সবাই সবার দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। কিন্তু কিছু বলছে না।পাখি কিছুটা ধমকের স্বরে বলে,”কেউ বলবা কিছু, কি হয়েছিলো”
“আজকে ভোরবেলা বাবা ফজরের নামাজ পড়ে এসে বেশ ফুরফুরে মেজাজে কুরআন শরীফ পড়েছে।এরপরর মা নাস্তা রেডি করে বাবাকে ডেকে আনে।নাস্তা সেড়ে পেপার পড়তে পড়তে ঝিমিয়ে পড়ে ওখানেই।মা একটু পর গিয়ে ডাকতে গেলে দেখে বাবার শরীর ঘামে ভিজে একাকার।বুকের বাম পাশে ডান হাতটা চিপে আধশোয়া হয়ে বসে বসে চোখের পানি ফেলছে।মা দৌড়ে গিয়ে ধরে নেয় বাবাকে।বাবা কোন সাড়া দেয় নি;তবে শ্বাস চলছিলো।চোখ খুলে মাকে সহ আমাদের সবাইকে একনজর দেখে বলে আমার অবস্থা ভালো না।শানের সাথে কথা বলব একটু।তোমার ভাইয়া ফোন বের করে শানের নম্বর ডায়াল করে কিন্তু শান রিসিভ করে না।দশ বার কল করে তোমার ভাই কলটা রিসিভ হয় না।এদিকে বাবার অবস্থা আরো খারাপের দিকে চলে যায়।পরে আমরা বাধ্য হয়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে বের হলে তখন শানের কল পাই।আর তিনিই মেডিকেলে নিতে বলে”-পাখির ভাবি দম নিয়ে নিয়ে কথাগুলো বলে থেমে গেলেন।এরপর বাইপাস সহ সমস্ত কথা বলে পাখিকে।পাখির কান্নার বেগ বেড়ে গেছে আবারও।
🌸🌸
ঘোর অন্ধকার চারিদিকে।শেষ রাতের সময় শুরু হয়েছে।আত্মীয়-স্বজনে বাড়ি ঘর ভরে গেছে।সবাই পাখিকে কিছু না কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করছে কোন কাজ হচ্ছে না।রাশিদা বেগম অশ্রুশূন্য অবস্থায় বাকরূদ্ধ হয়ে বসে পথের দিকে চেয়ে আছে।বারান্দার অপর প্রান্তে বাবার একটি ফতুয়া জড়িয়ে নীরবে অশ্রু ফেলছে পাখি।
সবে মাত্র বাড়ির ছেলেরা দাফনকাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছে।ভীড়ের মাঝে কোথাও নিজের স্বামীকে দেখতে না পেয়ে এবার রাশিদা বেগমের আত্মা হুহু করে ডেকে ওঠে।দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে বলে,”কোথায় রেখে এলি তোর বাবাকে। কোথায় রাখলি?তোর বাবা আমাকে ছেড়ে একটা রাতও কাটায় নি রে সোহান।আজ কি করে থাকবে?”
বলতে বলতে কান্নায় লুটিয়ে পরে উঠানের মাঝে।শান এগিয়ে এসে ধরে নেয় শ্বাশুরিমাকে।সামলে নিয়ে নিজের ঘরে দিয়ে আসে তাকে।
পাখি নিষ্পলক চেয়ে আছে শানের দিকে।শান সেদিকে চেয়ে বুঝতে পারে পাখির আর কোনকিছুই বুঝে উঠার বাকি নেই।এলোমেলো পায়ে পাখির দিকে এগিয়ো যায়।শান কাছাকাছি আসতে পাখি উঠে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায় নিজের রুমে।শানও চলে যায় একটু পর
“আমি জানি পাখি, তোমার চোখের ভাষা বোঝার মতো মন আমার রয়েছে।আমি জানি এবারই হয়ত সেই মূহূর্তের মুখোমুখি হতে হবে যেটা থেকে পালিয়ে বেড়াতে চাচ্ছি”-ভাবতে ভাবতেই শান একদম দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়।দরজা হালকা ভেড়ানো। শান দরজাটা ঠেলে ভিতরে যেতেই পাখির কথায় থমকে যায়।
“এতো নামি, এতো দামি ডাক্তার হয়েও পারলেন না তো নিজের শ্বশুরকে বাঁচাতে?”
শানের পা যেন চলছে না আর।পুরো দুনিয়া ঘুরছে তার কাছে।জীবনের চরম বাস্তবতার মুখোমুখি আজ শান অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সে।
“আমার বাবাটা চলে গেলো সার্জন সাহেব, আপনারই চোখের সামনে।আপনি কিচ্ছু করতে পারলেন না।”-বলেই আবারও কেঁদে ওঠে পাখি। শান এলোমেলো পায়ে পাখির সামনে এসে দাঁড়ায়
পাখি শানের কোমড় আঁকড়ে জোড়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে,”সার্জন সাহেব আপনি আমার বাবাকে বাঁচাতেই পারলেন না।চলে গেলো তো আমায় এতিম করে! ”
শান পাখির পাশে বসে চোখের পানি মুছে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে।কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যায়।শান পাখির মাথাটা বুকের কাছে চেপে ধরে আস্তে আস্তে বলে,”সরি জান আমি পারলাম না বাবাকে বাঁচাতে।সে ক্ষমতা আমার হাতে ছিলো না।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি আপ্রান চেষ্টা করেছি। জানো আমি বার বার চেষ্টা করেছি কিন্তু..কিন্তু পারি নি। বিশ্বাস করো…. ”
শানের পাগলের মতো আচরন দেখে পাখি ঘাবড়ে গিয়ে মাথা তুলে বলে,”আমি বিশ্বাস করছি তো আপনাকে সার্জন সাহেব।আমি জানি আপনি কতোটা ভালোবাসেন আমার পরিবারকে।আমি এটাও জানি মৃত্যুর উপর আমাদের কারোরই হাত নেই।কিন্তু মনকে বোঝাতে পারছি না….. ”
শান শান্ত হয়ে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ভাবতে থাকে, “যাক ভুল বুঝোনি আমায়”
একটু পর ফজরের আজান দেয়।নির্ঘুম একটি রাত কেটে যায় অনায়াসে।সময় হলে সবাই সবার মতো নামাজে দাঁড়িয়ে পরে।ছেলেরা চলে যায় মসজিদে।
নামাজ শেষে মুনাজাতে বাবার কথা মনে পড়তেই ডুকরে কেঁদে ওঠে পাখি।এ কান্না শুধু স্রষ্টা আর সৃষ্টির মাঝে মেলবন্ধন তৈরী করে,এ কান্না পার্থিব জগতে বেঁচে থাকা সন্তানদের পবিত্র কান্না।এ কান্নার দোয়ার বেগ তীরের থেকেও দ্রুত ছুটে চলে
চলবে…..
#আসক্তি
পর্বঃ৩৮
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
সামিহা ঘরের মেঝেতে পায়চারি করছে।কয়েকজন লয়ারের সাথে কথাও বলেছে কোন কাজ হয় নি।কেউই নীরার কেইস টা নিতে চাইছে না।রংপুর, দিনাজপুরের বড় বড় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথেও কথা বলেছে সামিহা কিন্তু কোন লাভ হয় নি।সবার এক কথা ও মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত আর সমস্ত প্রমাণাদি সমেত এ্যারেস্টড তাই কোন সহযোগীতা করা সম্ভব না।
এদিকে বোনের সেদিনের কান্নাজড়িত আর্তনাদ মগজে গিজগিজ করছে সামিহার।
(দুদিন আগের থানার ঘটনা)
“আপা আমি নীরা বলছি রে, “-বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পরে নীরা।
সামিহা হকচকিয়ে প্রশ্ন করে, “তুই কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে বলবি তো?”
নীরা অনবরত কেঁদেই চলছে,”আপা আমি এ্যারেস্টেড আপা।শান মামলা করেছে তিনমাস আগে।”
“বলিস কি এসব?”
“হ্যা আপা,কাল রেস্টুরেন্টে শানকে আমি ডাকি কিছু কথা বলার জন্যে।কিন্তু শান উল্টা চাল চেলে আমার মুখ থেকে সমস্ত কথা জেনে নেয়।আর তা আবার নিজের ফোনে রেকর্ড করে।সেখানে পিছনের টেবিলে পাখির বাবা আর ফুপা ছিলেন।তারা আমাদের সব কথা শুনে ফেলে।শান ওনাদের সামনেও আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলেছে।কিন্তু সে সবকিছুই যে ওর নাটক ছিলো বুঝতে পারি নি আমি”
এরপর দাঁতে দাঁত চিপে নীরা আবার বলে,”একটি বার যদি বুঝতে পারতাম সব ওর নাটক ছিলো এক রাতের ব্যবধানে ওকে ধ্বংস করে দিতাম আমি।কিন্তু আপা আমি আর কিচ্ছু করতে পারছি না।”
বলতেই কেঁদে ওঠে নীরা।
রাগে চোখের পানি ছেড়ে দেয় সামিহা।
“আপা, আমাদের গোপন ব্যবসার সমস্ত খুঁটিনাটি জেনে নেয় শান।এরপর থানায় প্রমাণ রাখে।কি করব আপা বুঝতে পারছি না। তুই একটা ব্যবস্থা কর, নইলে আমার ক্যারিয়ারের সাথে সাথে জীবনটাও জেলে পঁচবে”
🌸🌸
নীরার কথায় সামিহার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।কি করবে, কিভাবে বোনকে বের করবে কিছুই খেলছে না মাথায়।হঠাৎ সামিহার মাথায় কুবুদ্ধি খেলে যায়।সকাল সকাল রেডি হয়ে টিনাকে ডাকে পাখিদের বাড়ি যাবে বলে।টিনাও যাওয়ার জন্যে রেডি ছিলো।দুজন একসাথে লালমনিরহাট চলে আসে।
…………
ভোরবেলা থেকেই পাখিকে সবাই জিদ করছে কিছু না কিছু খাওয়ার জন্যে।কিন্তু কিছুতেই তাকে বশে আনা যাচ্ছে না।অনবরত কেঁদেই চলছে।একটু ক্ষান্ত হয় নি।
বাবার ছবির উপর হাত রেখে কেঁদেই চলেছে পাখি।মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ তুলে মাকে দেখতে পায়।কেমন শুকনো মুখটা আরো শুকিয়ে গেছে মায়ের।এক রাতেই চোখের নিচে কালি পরে গেছে।মায়ের কোমড় আঁকড়ে ভাঙ্গা গলায় আবারও কেঁদে ফেলে পাখি।কান্না করার শক্তি গায়ে নেই তবুও যেন কান্না থামছেই না তার।
“মা গো, একটু কিছু খেয়ে নে মা।এসেছিস থেকে কিছুই খাইস নি।তোর বাবা নিশ্চই ভালো আছে মা।এভাবে কেঁদে কেঁদে নিজের ক্ষতি করিস না “-কান্না জড়িত কন্ঠে মেয়েকে শান্তনা দিচ্ছেন রাশিদা বেগম।
পাখির হঠাৎ মনে পড়ে তার অনাগত সন্তানের কথা। চমকে যায় নিমিশেই।মনে পড়ে কাল থেকে কতো জোড়ে কাঁদল সে, বেবির কিছু হবে না তো।ভাবতেই অজানা ভয় গ্রাস করলো। মুখে ভয়ের ছাপ দেখে রাশিদা বেগম দ্রুত বসে পড়লেন পাশে।
“কি হলো মা? কি হলো তোর?”
পাখি আমতা আমতা করে বলে,”মা কাল থেকে এতো কাঁদলাম, চিল্লাইলাম।আমার বাচ্চাটার কিছু হবে না তো!”
পাখির মা আকাশ থেকে পড়ে।এই শোকের মাঝে এমন একটা সুসংবাদ যেন কেউই আশা করে নি।
“মা কি বলছিস তুই এসব? “-অতিরিক্ত শকে মানুষ আবল তাবল বকে পাখির তাই হলো কিনা, সেটা জানতেই পাখির মা তার গা ঝাকিয়ে বলে।
পাখি চোখের পানি মুছে বলে,”হ্যা মা আমিও মা হবো”
পেটে হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে ওঠে পাখি।
পরোক্ষনে মুখটা থমথমে করে চোখের পানি ছেড়ে বলে,”বাবা দেখতে পারলো না মা আমার বেবিকে ”
রাশিদা বেগম মেয়ের চোখের পানি মুছিয়ে বুকে জড়িয়ে বলে,”শান্ত হ মা, আগে কিছু খেয়ে নে।এ অবস্থায় না খেয়ে থাকা যাবে না তোর।”
“মা, একটা কথা রাখবে?”-বুকে মুখ গুঁজেই বলে পাখি
“হ্যা মা বল, কি কথা? ”
“আমার প্রেগন্যান্সির খবর টা এখনি কাউকে জানানোর দরকার নাই।তোমার জামাইয়ের মন ঠিক নেই।বাবার ফেইল্ড অপারেশনের জন্যে নিজেকে দায়ি করছে ও।আমি চাই শোক টা কাটিয়ে সুসংবাদ টা দেবো।”-ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে বলে পাখি।
রাশিদা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তাহলে তোকে আর কষ্ট পাওয়া যাবে না, নিজের যত্ন নিতে হবে মা।ঠিকমতো খেতে হবে তো!
পাখি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।
“যা করার আমাকেই করতে হবে।আমি যদি ভেঙ্গে পরি আমার ছেলে-মেয়ে দুটার কি হবে।তারা দুজনেই সদ্য বাবা মা হওয়ার পথে।”-নিজের ভাবনা গুলো মনে রেখে রাশিদা বেগম কাউকে নির্দেশ দেয় একটা প্লেটে ভাত তরকারী নিয়ে আসতে।এরপর সমস্ত শোক একপাশে রেখে মেয়েকে নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দেন তিনি।গলা দিয়ে ভাত নামছে না পাখির। তবুও বাচ্চাটার কথা ভেবে সামান্য কয়েকটা ভাত খায় সে।
এরই মধ্যে শান বাড়িতে ঢোকে দুহাতে বড় বড় দুটো বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে।বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনে গিজগিজ করছে । সকলের খাবারের ব্যবস্থাও তো করতে হবে!
ফজরের নামাজ পড়ে বেরিয়েছে সবে মাত্র ফিরলো সে।ফিরেই চোখ পড়ে বারান্দায় বসা মা-মেয়ের দিকে।
অবাক হয়ে যায় পাখিকে দেখে।নজর সরিয়ে বাজারের ব্যাগ গুলো রান্নাঘরে রেখে আসে।
“বাবা তুমি একটু ঘুমাও”-শ্বাশুরি মায়ের কথায় শান কোন কথা বলে না।পাশে থাকা শর্মিলা বেগমও বলে, “হ্যা তুই বরং একটু ঘুমিয়ে নে বাবা।”
শান পাখির দিকে একনজর তাকিয়ে উপরে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সমস্ত ক্লান্তি ঘুম হয়ে ধরা দেয়।
🌸🌸
পাখি বসে বসে বাবার সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মূহূর্তকে ভাবছে আর ওড়নার আঁচলে চোখ মুছছে।
“বড় বউ মা তোমরা আসবে, কই বললে না তো!”-শ্বাশুরি মায়ের কথায় পাখি সেদিকে চায়।চোখের সামনে সামিহা আর টিনাকে দেখতে পায়।সামিহা পাখির কাছে আসতে আসতে বলে,”মা কাল তো রাত হয়ে গেছিলো দুটা গাড়ি দুটাই এ বাড়িতে তাই আসা হয় নি।ভাবলাম সকাল সকাল আসব তাই আরকি”
পাখির পাশে এসে বসে সামিহা আর টিনা।শান্তনা দেয় পাখিকে।
“কিরে পাখি শরীরের কি হাল করেছো দেখেছো একবারও”
সামিহার কথায় পাখি কয়েকবার চোখের পলক ফেলে ;কিছু বলে না।
“চলো গোসল সেড়ে কিছু খেয়ে নেবে”
পাখি অস্ফুট স্বরে বলে,”খেয়েছি”
সামিহা আবারও জোড় করে বলে,”খেয়েছো তো কি হয়েছে। তাহলে চলো শাওয়ার নেবে।কি হাল করেছো নিজের”-বলতে বলতে পাখির হাত টেনে নিয়ে যায়।
শানের মাও বলে ফ্রেশ হয়ে নিতে পাখি আর না করতে পারে না।
পাখির ঘরে শান ঘুমিয়েছে বলেই গেস্ট রুমে যায় তারা।পাখি নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে আর সামিহা ঘুরে ঘুরে ঘর টা দেখছে।
কিছুক্ষন পর পাখি শাওয়ার নিয়ে বের হয়।সামিহা চট জলদি দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে তড়িঘড়ি করে পাখির হাত দুটো ধরে সোফায় বসে পরে।পাখি হকচকিয়ে যায় সামিহার কাজের আকষ্মিকতায়।
“তোমার সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপন কথা আছে পাখি”-
সামিহার কথায় পাখি ভ্রুকুচকে প্রশ্নবাচক চোখে তাকায়।
“যা বলব মন দিয়ে শুনবা।তারপর কথা বলবা”
সামিহার কথায় পাখির টনক নড়ে যায়।ইতোপূর্বে তিনি শানের সাথে যা করেছে সবটাই মনে পড়ে পাখির।তড়িৎগতিতে হাত ছাড়িয়ে বলে,”ভাবি প্লিজ, আপনার আর কোন গোপন কথা আমি জানতে চাই না।তা আবার এই অবস্থায় তো নয়’ই।”
বলেই পাখি ঘর থেকে বের হতে দরজা অবধি যায়।সামিহার কথায় থমকে যায় সেখানে।
“তোমার বাবাকে শান মেরেছে পাখি”
চোখ মুখ খিচে পাখি সামিহার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকায়।”লজ্জা করছে না আবারও এই নতুন প্ল্যান টা সাজাতে?বজ্জাত মহিলা।একবারও ভাবলেন না আমি বা আমার পরিবার কিসের মধ্যে দিয়ে সময় পার করছে?”
“ভেবেছি বলেই তো বলছি পাখি।আমার কথা বিশ্বাস না হলে তুমি শানকেই জিজ্ঞেসা কর।গত পরশু শান নীরার সাথে রেস্টুরেন্টে বসে তোমায় নিয়ে কথা বলছিলো। কিভাবে তোমায় শানের জীবন থেকে সরানো যায় সে নিয়ে দুজন ডিসকাস করছিলো।শানের পিছনে তোমার বাবা বসা ছিলো তা শান বুঝতে পারে নি। ওদের সম্পূর্ণ কথা তোমার বাবা শুনে ফেলে।রেস্টুরেন্টে সবার মাঝেই তোমার বাবা শানের গায়ে হাত তোলে আর সব কথা তোমায় জানাবে বলে চলে আসে।শান তোমার বাবাকে অনেক ভয়ভীতি দেখায়।কিন্তু তোমার বাবা সিদ্ধান্ত নেয় তিনি তোমায় সবটা জানবেন।শানের বলা কথায় তোমার বাবা দূঃচিন্তায় পরে, তারপর দিন আই মিন কাল সকালে তোমার বাবা হার্ট এ্যাটাক করে ফেলে।শানের কাছে নিলে সে তোমার বাবার ইচ্ছেকৃত ভুল অপারেশন করে তোমার বাবাকে মেরে ফেলে। যাতে কোনদিনও তুমি শান নীরার অবৈধ সম্পর্কটা না জানো”-কথাগুলো খুব দ্রুত বলে দম নেয় নীরা।
পাখির মাথা ঘুরছে, এতো জটিল জটিল কথা তার একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না।সবকিছু ঘোরপাক খাচ্ছে মাথার মগজে। পরোক্ষনে মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা, “শান সেদিন বিধ্বস্ত শরীরে বাড়িতে ঢোকে।নিষ্পলক চেয়ে দেখে আমার দিকে।বাবার কথা জানতে চাইলে তাকে তো অপ্রস্তুত দেখেছিলাম।কেন উনি বার বার বলেছিলেন যে, বাবা আমার সাথে আরো কথা বলেছে কিনা!আর গত কয়েকমাস ধরেই তো তিনি ফোনে কারোর সাথে সময়ে অসময়ে কথা বলত।তারমানে….”সবটা ঘটনা একের পর এক পাখির মাথায় তালঘোল পাকাচ্ছে।
দৌড়ে চলে যায় নিজের ঘরে।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে হাফাতে থাকে আর অনবরত কাঁদতে থাকে পাখি।কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে ধড়ফড়িয়ে ওঠে শান।
“কি হয়েছে পাখি?”?
পাখি ঘৃনার চোখে চেয়ে দ্রুতপদে এগিয়ে যায় শানের কাছে।চোখে চোখ রেখে অনবরত কেঁদে চলে।শান দুহাতে জল মুছাতে এলে শানের দুইহাত ধরে খাটের নিচে নামায় পাখি।দাঁড় করায় চোখের সামনে।রক্তচক্ষু নিয়ে পাখি বলে,”আমার চোখের দিকে তাকান।আর যা যা বলবো তার জবাব হ্যা আর না তে দেবেন।কোন এক্সকিউজ বা এক্সপ্লেইনেশান নয়।
শান ভড়কে যায়।চোখ ছোট ছোট করে বলে, “কি বলছো এসব। কি হয়েছে তোমার বলবে তো?ওকে রিল্যাক্স বসো, বসে কথা বলি আমরা”-বিছানায় পাখিকে জোড় করে বসায় শান।পাখি বিদ্যুৎবেগে পূনরায় উঠে দাঁড়ায়।
“যা বলছি তাই করুন।”-কাটকাট গলায় বলে পাখি
শান উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”বলো কি বলবে?”
“পরশুদিন বাবা আর ফুপা গেছিলো আপনার চেম্বারে?”
“চেম্বারে বলতে তাদের সাথে রেস্টু…..”
“আমি হ্যা বা না তে জবাব চেয়েছি মি.শান”
শান অবাক হয়ে যায় পাখির অস্বাভাবিক আচরন দেখে।
“না”
“তাহলে কোথায় দেখা হয়েছিলো?”
শান প্রতিউত্তরে বলে,”রেস্টুরেন্টে ”
“আপনি নীরার সাথে বসে কথা বলছিলেন ঐ একই রেস্টুরেন্টে?”
শানের টনক নড়ে যায়।ভাবতে থাকে, ” তাহলে পাখি সবটা জেনে গেছে।আবারও কি আগের মতো ভুল বুঝবে।ওওও শিট!”
শান পাখির দুবাহু ধরে বলে,”আমি তোমায় সম্পূর্ণ ব্যপার টা বুঝিয়ে বলছি পাখি।আমায় দুটা মিনিট সময় দাও”
পাখি জোড়ে চিল্লিয়ে তর্জনি আঙ্গুল উচিয়ে বলে,”খবরদার,খবরদার বলছি কথা ঘোরাবার চেষ্টাটিও করবেন না।যা বলছি তার জবাব দিন”
“নীরার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন?”
শান এবার বুঝতে পারে বাস্তবতা তার পিছু ছাড়ে নি।এবারই হয়ত মুখোমুখি হতে হবে সেটার।শান অস্ফুট স্বরে জবাব দেয়ে,”হ্যা,কিন্তু….”
পাখি হাত উচিয়ে থামিয়ে চোখের পানি সংবরন করে বলে,”আমায় ডিভোর্স দেয়ার প্ল্যান করছিলেন?”
মনে মনে পাখি হাজার বার চাইছে যেন শানের উত্তর এবার না হয়।শান যেন গত বারের ন্যায় এবারও তাকে ভুল প্রমান করে।
শান চমকে যায়,”এতোকিছু তো পাখির জানা কথা নয় আর কে বললো এসব।আর আমি তো নাটক করেছিলাম নীরাকে ফাঁসাতে”
“আন্সার মি!”
“পাখি শোন এখানে আরো অনেক অনেক ব্যপার লুকায়িত আছে।তুমি মাথা ঠান্ডা করো আমি সবটা বলছি তোমায় প্লিজ”
পাখি দুহাতে মুখ চেপে কেঁদে চলেছে হু হু করে।তার আর বোঝার বাকি নেই সামিহার কথাগুলোই সত্যি।
শানকে কিছুতেই কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না সে।
কান্না কিছুটা সংবরন করে বলে,”এরপরের ঘটনা আমিই বলি।আমাকে সড়ানোর প্ল্যান করতে পিছনে থেকে বাবা সবটা শুনে ফেলে।আপনাকে মারধোরও করে।আমায় সবটা জানাবে বলে উদ্যত হলে আপনি তাকে ব্ল্যাকমেইল করে থামিয়ে দেন;ভয়ভীতি দেখান।সেই দূঃচিন্তায় বাবা বাড়ি ফেরে।আর কাল সকালে হার্টে এ্যাটাক আসে।আর আপনি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমার বাবাকে অটিতেই মেরে ফেলেন।এটাই না মি.ফয়সাল আহমেদ শান?”
শান বলার মতো কোন ভাষা খুঁজে পায় না।স্তম্ভের ন্যায় পাখির সব কথা শুনে চলেছে।তার মন মগজেও আসছে না পাখি তাকে এই ব্লেইম দেবে।
শানের নিশ্চুপতা দেখে পাখির মনের সন্দেহ আরো প্রগাঢ় হয়ে যায়।নিজের সাথে ঘটা সমস্ত ঘটনা তার কাছে দূঃস্বপ্ন লাগছে।
ঠোঁট কামড়ে কেঁদে কেঁদে পাখি বলে,”কেন এমন করলেন?আমায় বলে দিতেই পারতেন যে আমার কাথে সংসার করতে পারবেন না। তাহলেই তো সবটা বুঝতাম আমি!কেন আমার অসহায় বাবাকে এরমাঝে আনলেন?কেন মেরে দিলেন শান?কেন কেন কেন?”
শানের শার্টের কলার ধরে বলতে বলতে পাখি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
শান ভাবতেও পারছে না ঘটনাটা এতো দূর গড়াবে।কোনমতে পাখিকে একহাতে জড়িয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,”কার না কার কথা শুনে আমায় এতো বড় ব্লেইম দিচ্ছো জান?সত্যিটা জানলে পারবে তো নিজেকে ক্ষমা করতে?”
পাখি ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় শানকে।চোখের পানি মুছে বলে, “কোন সত্যির কথা শুনবো আমি?নীরার সাথে লুকিয়ে দেখা করা অবৈধ সম্পর্ক রাখা এই সত্যি নাকি আপনাদের মাঝখান থেকে আমার অসহায় নির্দোষ বাবাকে হত্যা করা এই সত্যি?”
“তুমি যা যা শুনেছো সবটাই ঠিক আছে পাখি কিন্তু এর মাঝেও কিছু ব্যপার আছে।আমায় প্লিজ বলতে দাও”
পাখি হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলে,”নতুন করে আমি আর কিচ্ছু জানতে চাই না। আরে আমি তো আপনাকে মন থেকে ভালোবেসেছি তার প্রতিদান এভাবে দিলেন?”
“পাখি কে তোমায় বলেছে এসব সেটা তো বলবা?”
“কেন, তাকেও বুঝি কায়দা করে মেরে ফেলবেন?”
পাখির কথা শেষ হতে না হতেই ঘরে সামিহা চলে আসে
“আমি বলেছি শান। অনেক তো খেললে দুটো মেয়েকে নিয়ে আর কতো বলোতো,আর কতো খেলবে?এবার না হয় একজনে সন্তুষ্ট থাকো”
সামিহাকে পারে তো চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দেয় শান।
“তারমানে তুমি এসব বানিয়ে বলেছো ভাবি?এতোটাও নিচে নামলে ভাবি?ওহহহহ আচ্ছা আচ্ছা তারমানে সেদিন থানায় লাস্ট কলটা নীরা তোমাকেই করেছিলো তাই না?
শানের কথায় মাথা তুলে তাকায় পাখি।প্রশ্নবাচক চোখে দুজনার দিকে তাকায়। সামিহা ফট করে বলে,”জানো পাখি শান যখন বুঝলো সবটা হাতের বাহিরে চলে গেলো তখন মিথ্যে মামলায় নীরাকে ফাঁসিয়ে জেলে ভরলো আর প্রমান মুছে দিতে তোমার বাবাকে শেষ করে দিলো”
শান হা হয়ে যায় সামিহার আচরনে।পাখি চেয়ে আছে শানের প্রতিক্রিয়ার আশায়।পরোক্ষনে শান তেঁড়ে যায় সামিহার দিকে, “আর একটা বাজে কথা বললে জিহ্ব টেনে ছিড়ে ফেলব ভাবি”
পাখি বলে ওঠে,”বাহ, নিজের ফর্মে এলেন তবে।এবার সবটাই যেহেতু পরিষ্কার সেহেতু আমাকেই শেষ করে দিন না সার্জন সাহেব”-শেষের কথাটা বেশ করূন করে বলে পাখি।শানের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে সে কথায়।কোণ বেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পরে।পাখিকে ধরে বলে,”এতোটুকু বিশ্বাস নেই আমার উপর?আমার ভালোবাসার উপর?”
পাখি হাত ছাড়িয়ে বলে, “চলে যান”
শান অবাক হয়ে যায়।
“আমি বাড়ির কাউকে আপনার ব্যপারে কিচ্ছু জানাবো না।চলে যান।আমি চাই না আমার মা ভাই কোন মুখোশধারী লোকের জন্যে কষ্ট পাক।”
কথাটা শেষ হতে না হতেই শান পাখির হাত টেনে নিচে নিয়ে আসে।ড্রয়িং রুমের মাঝে দাঁড় করিয়ে বলে,”এবার বলো সবটা?আমিও জানতে চাই তোমার মতো ঠুনকো বিশ্বাসে তোমার পরিবার চলে কিনা?”
পাখি শানের ব্যবহারে বেশ অবাক হয়ে যায়।অবাক চোখে চেয়ে চারিদিকে দেখে।
“কি হয়েছে বাবা?”-পাখির মা এগিয়ে আসতে আসতে বলে।
ইতোমধ্যে শানের বাবা,মা,চাচি, পাখির মা, ভাই, ভাবি অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনে ঘর ভরে গেছে।
“মা, আপনার মেয়ে মনে করে বাবাকে আমিই মেরে ফেলেছি”-শানের কথায় উপস্থিত সবাই ভড়কে যায়।
সোহান কপোট রাগ দেখিয়ে বলে,”পাখি আজকের দিনে এসব কি আবল তাবল বলছিস তুই?”
“তোমরা জানো না, তোমরা কেউ জানো না এই মানুষটা ঠিক কতোটা বহুরূপী? ”
পাখির বলা প্রত্যেকটা কথা শানের কলিজা পুড়িয়ে দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে সবটা শুনছে সে।
এরপর পাখি সমস্ত কথা বাড়ির সবাইকে বলে দেয়।কথাগুলো শুনে পিছনে মেঝেতে ধপ করে বসে পড়েন রাশিদা বেগম।তড়িঘড়ি করে তাকে ধরে সোফায় বসানো হয়। শানসহ সবাই দ্রুত এগিয়ে যায়।
“মা আপনার মেয়ের মতো কোন ভুল আমায় বুঝবেন না প্লিজ।আমি আপনাদের সবটাই বলবো। নিজেকে শান্ত করুন মা।”
ছেলের এমন আকুতি দেখে অসহায় চোখে তাকায় শর্মিলা বেগম।পাখিকে জড়িয়ে নিয়ে বলে, “বউ মা ও আমার ছেলে।এমন ঘৃন্য কাজ সে কখনোই করবে না।”
পাখি পাথরে পরিনত হয়ে যায় ততোক্ষনে।শক্ত গলায় বলে,”আপনার ছেলেই করেছে এসব।তা না হলে জীবনের প্রথম ব্যর্থ অপারেশনের বলি কেন হতে হলো আমার বাবাকে?বলতে পারবেন?
শর্মিলা বেগম অসহায় চোখে তাকায় পাখির দিকে।
“আর এতোটুকু তো জানি আমি, যে একবারের এ্যাটাকে বাইপাস করার প্রয়োজন হয় না!”
পাখির কথায় সোহান বলে ওঠে, “তোর মাথা ঠিক নেই।বাবার ২০ সালে একবার এ্যাটাক এসেছিলো।আমি আর বাবা ছাড়া কেউ সেটা জানত না।”
ছেলের কথায় অবাক হয়ে যায় রাশিদা।
সোহান আবার বলতে শুরু করে,”গত তিন মাস আগে আবারও এ্যাটাক আসে বাবার।শানের কাছে নেয়া হয়।শান নিজেই হার্টে রিং সেট করে দেয়।”
পাখি অবাক হয়ে যায়।অথচ এসবের কিছুই জানে না সে।তার অগোচরেই রয়ে যায় সবটা।বাবার সাথে একটু সময় কাটানোর সুযোগটাও পায় না সে।ভাবতেই চোখে ফেটে কান্না আসে পাখির।নিজেকে সংবরন করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সোহান চোখ মুছে বলে,”তুই কেন এসব জানিস না জানিস?এই যে, এই শান তোকে জানতে দেয় নি।যাতে তোর উপর কোন দূঃচিন্তার চাপ চলে না আসে। তাই সবাইকে বাড়োন করেছিল যাতে তোকে না বলি কিছু।আর তাকেই তুই ব্লেইম করছিস?সেবার বাবার হার্টে রিং পরানোর সমস্ত খরচাপাতিও শান দিয়েছে আর তাকেই তুই…..”
শান গম্ভীর মুখে সোহানকে থামিয়ে বলে,”ভাইয়া থামুন।আর কিছু বলার দরকার নাই ও ব্যপারে।ও যেদিন নিজে রিয়েলাইজ করবে সেদিন হয়ত অনেক কিছুই পাল্টে যাবে।আমি ওর কাছে নিজেকে প্রমান করব না আর। তবে হ্যা যেহেতু আপনারা আমায় বিশ্বাস করছেন সেহেতু পুরো ঘটনা টা আমি আপনাদের জানাবো”
“ওনাকে তোমরা বিশ্বাস করতে পারো, আমি করব না।উনি যদি কলিজা কেটেও বলে তবু আমি ওনার কোন কথা আর বিশ্বাস করছি না”- বলেই পাখি অনূভূতিহীন হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।
এরপর শান নীরার সাথে হওয়া সমস্ত ঘটনা সবাইকে খুলে বলে।ফয়েজ দ্রুত এগিয়ে সামিহার গালে কষে থাপ্পোর বসিয়ে দেয়।এরপর বলে,”বাবা আমি বাড়ি যাচ্ছে তোমরা চলে এসো পরে।”
টানতে টানতে সামিহাকে গাড়িতে নিয়ে তোলে।লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ফয়েজের।সে ভাবতেও পারে নি সামিহা এরকম একটা কাজ করবে।
“তুমি আমাদের কিছু না বললেও আমাদের পরিবারের সবাই তোমায় বিশ্বাস করে শান।পাখির মনে সামিহা ভাবি যে ভুল ধারনা ঢুকিয়ে দিয়েছে তা একদিন ঠিক সরে যাবে।”-বলতে বলতে শানের ঘাড়ে হাত রাখে সোহান।
শানের ভিতর কি ঝড় চলছে তা সে কাউকেই বুঝতে দিতে চায় না।
“তোর ভাবির রুমে গাড়ির চাবি আর আমার ফোন আছে নিয়ে আয় , “-টিনাকে বলে শান বাহিরে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ায়।
পাখির মা পথ আগলে দাঁড়ায়ে।কান্নাজড়িত গলায় বলে,”বাবা আমার মেয়েটা ওর বাবাকে খুব ভালোবাসে।ওর বাবার এমন চলে যাওয়া সে কোনভাবেই মানতে পারছে না।তাই সামিহার কথা শুনেছে।আমি তো জানি বাবা তোমার কাছ থেকে ফিরে এসে সোহানের বাবা কতোটা হাসিখুসি ছিলো।কোন দূঃচিন্তার ছাপ দেখতে পাই নি তার মাঝে।আর বার বার শুধু বলেছিলো ভাগ্য গুনে একটা জামাই পেয়েছি রাশিদা।আমি কিছু বলতে গেলেই বলতো সময় হলে সবটা জানতে পারবা।জানি না বাবা তোমার আর তোমার শ্বশুরের মাঝে কি হয়েছিলো! তবে তিনি বার বার তোমার গুনগান করছিলো”
বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে রাশিদা।
“মা,আপনারা আমায় বিশ্বাস করেছেন এটাই আমার জন্যে অনেক।আমি আপনাদের খোঁজ খবর নিবো নিয়মিতই।তবে আপনার মেয়ে যদি আমার কাছে আসতে চায় তবেই এ বাড়িতে পা রাখব তার আগে নয়।এটা প্রথম না মা। এর আগে আরো একবার সে আমায় ভুল বুঝেছিলো।তবে এবার আমি চাই ও নিজে থেকেই সবটা জানুক।আমার প্রতি বিশ্বাস আনুক।আপনারা কেউ ওকে কোন প্রকার জোড় করবেন না।আমি আসছি মা”
“কিন্তু বাবা ততোদিনে ও যদি ভুল কিছু করে”
শান রাশিদার দুবাহুতে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বলে,”আমি আছি তো মা।ওকে আমি ছাড়ছি না এ জীবনে সেটা জেনে রাখুন।ও যতো ভুল সিদ্ধান্তই নিক না কেন!”
ততোক্ষনে টিনা চাবি আর ফোন নিয়ে চলে এসেছে নিচে।শানের হাতে দিতেই শান সেগুলো নিয়ে চলে যায়।
“আমার প্রতি এতো বড় অপবাদ দিতে পারলে জান?আমার ভালোবাসার মূল্য এভাবে দিলে?”-আনমনে ভাবতে ভাবতেই পাখির বেলকোনিতে নজর রাখে শান।
পাখি পাথুরে মূর্তির ন্যায় চেয় থাকে সেদিকে।।
“আপনি এতোটাও নিচ লোক আমি ভাবতে পারি নি সার্জন সাহেব।নিজের স্বার্থে আমার বাবাকে মেরে ফেললেন!এ জীবনে আর কখনোই ক্ষমা করব না আপনাকে। আই হেইট ইউ, জাস্ট হেইট ইউ”-শানের দিকে রক্তচক্ষু দিয়ে তাকিয়ে বলে পাখি।শান কিছুক্ষন অসহায় হয়ে চেয়ে দরজা খুলে গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি স্টার্ট করে চলে যায়। পাখি সেদিকে চেয়ে পেটে হাত রেখে বলে,”আমায় যেভাবে বাবাহারা করলেন ঠিক সেভাবে আপনার সন্তানকেও বাবাহারা করলাম আজ এই মূহূর্ত থেকে।না আপনি কোনদিন জানবেন আপনার সন্তানের কথা না জানবে আমার সন্তান আপনার কথা।”
🌸🌸
কেউ না বুঝুক শর্মিলা বেগম বুঝেছে ছেলের ভিতর কতো ঝড় বইছে।পুরো ব্যপারটার কি পরিমান প্রতিক্রিয়া যে তার ছেলের উপর পরেছে তা তিনি বেশ বুঝতে পারলেন।এরপর শানের বাড়ির সকলেই ও বাড়িতে সবাইকে শান্তনা দিয়ে বাড়ি আসার জন্যে প্রস্তুত হোন।
চলবে….