#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৩|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
বাসায় এসে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ ধুয়ে নিচ্ছে মৌরিন। মারুফা রান্নাঘর থেকে খাবার এনে ছোট টেবিলের উপর রাখছেন। মৌরিন মুখে পানি দিয়ে সামনে থাকা আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো কিছুক্ষন। এরপর খানিকটা শব্দ করেই হাসলো সে, মারুফা ভ্রুযুগল কুঁচকে তাকালেন মেয়ের দিকে। মৌরিন এভাবে হাসেনা অনেকদিন, তাও একা একা? আয়নায় মারুফার অবাক মুখশ্রী দেখতে পেয়ে মৌরিন আরেকবার মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বলে,
_”দিনদিন বুঝি আমি সুন্দর হয়ে যাচ্ছি মা? চেহারার উজ্জ্বলতা কি বেশি বেড়ে যাচ্ছে নাকি?”
মারুফা সন্দিহান কণ্ঠে বলে,
_”এমন কথা বলছিস কেন?”
পাশের চেয়ার থেকে টাওয়াল টা নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মৌরিন বলে,
_”না এমনিই বললাম আরকি। আমার মুখে কি হুট করে একগাদা মায়া এসে ভর করলো নাকি? অনেক মানুষের যে আমায় দেখে মায়া লাগে, দয়া করতে ইচ্ছে করে।”
_”কি হয়েছে রে মৌ? কেউ কিছু বলেছে তোকে?”
_”আমাকে আবার কে কি বলবে? যাকগে,ছাড়ো ওসব। শোনো, নতুন আরেকটা টিউশন পেয়েছি। এবার কলেজের স্টুডেন্ট। সবাই তো তিনদিন পড়ায়,আমি বলেছি চারদিন পড়াবো। একটু পরিচিতি দরকার বুঝলে, আমি কেমন পড়াই সেটা মানুষকে তো জানাতে হবে। তবেই না আরো টিউশন পাবো।”
মারুফা সামান্য হেসে বললেন,
_”ভালো তো,ধীরেধীরে আরো টিউশন পাবি।”
_”পাবোই তো। আমি কেমন পড়াই তা আমি খুব ভালো করেই জানি। আর এক ফালি সুখের জন্য একটু তো ধৈর্য ধরতেই হবে তাইনা?”
স্মিত হাসে মৌরিন,মারুফা তার নজর কেটে বলে,
_”আমার মেয়ে আগে থেকেই খুব সুন্দর,নতুন করে তার আর সুন্দর হতে হবেনা।”
মৌরিন আবারো হেসে খাটে বসে বলে,
_”মাফ করেন আম্মাজান, আমি তো মজা করে বলেছিলাম। তবে হ্যা, আমি যেমন আমি তেমনই সুন্দর। লোকের কাছে না হোক নিজের কাছে আমি ঠিক ফুলের মতো সুন্দর বুঝলে?”
কথাটা বলে নিজের খোলা চুলগুলো খোঁপা করে বলে,
_”চুলের বেহাল অবস্থা হয়ে যাচ্ছে,একটু তেল দিয়ে দিয়োতো মা।”
মারুফা খাবার বেরে দিতে দিতে বললেন,
_”খেয়ে নে আগে, তারপর দিয়ে দিচ্ছি।”
_______
ডিনার শেষ করে বাড়ির ছাঁদে থাকা দোলনায় পা দুলিয়ে বসে আছে তূর্য। হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিনে ফেইসবুকের নিউজফিড এর চিত্র বিদ্যমান। লগ ইন করা আইডির নাম ‘Tirzo Absar’। এক কথায় এটাকে ফেইক আইডিই বলা চলে, তবে সম্পূর্ন ফেইক নয়। ইলহাম আবসার তূর্য নামে তার নিজের পেইজ,আইডি সবই রয়েছে। তবে সেগুলো সবসময়ের জন্য ইউজ করা তার কাছে খুব একটা কমফোর্টেবল না। তাই এই আইডির নাম দিয়েছে তীর্য আবসার, কেবলমাত্র তার ফ্যামিলি মেম্বার এবং কাছের বন্ধুরা ছাড়া কেউ এই আইডি সম্পর্কে জানেনা। এমনকি দিয়াকেও জানায়নি, নাহলে এখানেও জ্বালিয়ে মারতো।
হঠাৎ ফ্রেন্ড সাজেশন এ এসে চোখ আটকে যায় তূর্যর। তাসনিম জাহান নামক একটি আইডি, ওয়ান মিউচুয়াল ফ্রেন্ড আর সেটা রাতুল। প্রোফাইল পিকচার এ কেবল মেয়েটাকে পিছন থেকে দেখা যাচ্ছে, কোনো এক পাহাড়ে হাটুতে মুখ গুজে বসে আছে সে,ছবিটা পিছন থেকে তোলা। বিনুনি টা কোমড়ের একটু উপর অবধি, আর তাতে অনেকগুলো মৌরিফুল গুঁজে রাখা। সেই ফুলের দিকে চোখ যেতেই কিছু একটা সন্দেহ হয় তূর্যর, প্রোফাইল এ ঢুকতেই দেখে নিকনেইম এ দেওয়া, ‘মৌরিন’।
সঙ্গে চোখ যায় প্রোফাইল এর বায়োর দিকে,
“মানব জীবন সবচেয়ে সুন্দর
শুধু প্রয়োজন প্রত্যাশা সরিয়ে আনা
সঙ্গে নিজের প্রতি আস্থা”
প্রোফাইল লক করা নেই দেখে নিচে যায় তূর্য। তবে পাচবছর আগের একটা কভার ফটো আর একমাস আগের চেঞ্জ করা প্রোফাইল পিক ছাড়া আর কিছুই খুজে পায়না। বোঝাই যাচ্ছে বাকি পোস্ট হয়তো অনলি ফ্রেন্ডস করা আছে। একমাস আগের চেঞ্জ করা প্রোফাইল পিকচার টাতে ক্যাপশন এ দেওয়া “The only place I will miss, because it never underestimated me”
সেই পোস্ট এ ১৭৮ টি রিয়েক্ট এর মধ্যে অধিকাংশই স্যাড রিয়েক্ট। কৌতূহল নিয়ে কমেন্ট বক্স এ প্রবেশ করলো তূর্য।
কমেন্টগুলো দেখে আরো অবাক হয় তূর্য।
“যাসনা মৌপাখি”, “ইউ আর মাই ইন্সপিরেশন মৌরি”, “না গেলে হয়না মৌ?”, “আর আমি তোমায় মিস করবো আপু”
এমনই আরো অনেক কমেন্টস। দুদিন আগেই একজন সেই প্রথম কমেন্টদাতা রিমি আরেকটা কমেন্ট করেছে, “ফিরে আয়না মৌপাখি,ভালো লাগেনা তোকে ছাড়া।”
আরেকজন লিখেছে, “ডোন্ট ইউ রিমেম্বার আস মৌরিন?”
মৌরিন তাতে রিপ্লাই দিয়েছে,”সময় নেই যে মনে করার।”
তাতে সেই ছেলেটি কেবল একটি স্যাড রিয়েক্ট দিয়েছে।
ভিতরে পুষে রাখা কৌতূহল যেন দ্বিগুণ হয়ে গেলো এগুলো দেখে। তূর্য এইটুকুই জানে, মৌরিন আগে সিলেট থাকতো। তবে সেখান থেকে কেন চলে এসেছে তা জানা নেই। জানার ইচ্ছেও ছিলো না, তবে এই কৌতূহল নামক বস্তু একবার মনে ঢুকে গেলে তা থেকে নিস্তার পাওয়া কঠিন।
ছবিটির দিকে আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো তূর্য। মনে হচ্ছে এটা সিলেটের কালাপাহাড়,তূর্য গিয়েছিল দুবছর আগে। সেখানে মৌরিন এর পরনে একটা হলুদ রঙের থ্রি পিস। ওড়নাটা এক সাইডে খুলে দেওয়া। হাটু ভাজ করে তাতে মুখ গুঁজে রাখা, মুখ না দেখেই কেমন যেন উদাসীন মনে হচ্ছে ছবিটাতে। যেমনটা তাকে কখনো লাগে না, অন্তত তূর্য তো দেখেনি। মৌরিন কে দেখে বোঝাই যায়না, সে এখন খুশিতে আছে নাকি দুঃখে। যেন সে একজন যন্ত্রমানব। মাঝেমধ্যে হাসে,তবে কখনো মন খারাপ মনে হয়না।
এই আইডি টা আরো ঘুরে দেখার ইচ্ছে হলো তূর্যের নিজের অজান্তেই এড ফ্রেন্ড এ ক্লিক করলো সে। একমিনিট না কাটতেই সে যেন নিজের মধ্যে ফিরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসেল করে দেয় ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। কি করছিল সে? একটা মেয়েকে নিজে থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিচ্ছে? যা তূর্য জীবনেও করেনি। একটা মেয়ে সম্পর্কে জানার জন্য তার এত কৌতূহল?
প্রোফাইল থেকে বেরিয়ে এলো তূর্য,এমনকি সেই আইডি থেকেই বেরিয়ে এলো। যার তার সম্পর্কে এতো বেশি ভেবে ফেলাটা ঠিক হচ্ছেনা,মোটেই ঠিক হচ্ছেনা।
______
সকাল সকাল আবারো সকলে শুটিং সেট এ এসে পৌঁছেছে। রাতুল ও নাকি কাল রাতেই ফিরেছে ঢাকায়, তাই ও কিছুক্ষন এর মধ্যেই চলে আসবে। শুটিং শুরু হতে এখনো কিছুটা সময় বাকি। তাই তূর্য,তন্নি আর কো আর্টিস্ট রা স্ক্রিপ্ট নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। মৌরিন ও দাঁড়িয়ে আছে সামনেই,আপাতত তার কোনো কাজ নেই।
কিছুক্ষন বাদেই রিক্সা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো রাতুল। রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে আসতেই তন্নি কপাল কুঁচকে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়, রাতুল তো সবসময় বাইক নিয়েই আসে। আজ তাহলে রিক্সায় এলো কেন?
_”একটু লেইট হয়ে গেলো না? মৌরিন এদিকে..”
মৌরিনকে ডাকতে ডান হাতটা উঁচু করতেই রাতুলের মুখ থেকে “আহ” শব্দ আর্তনাদ বেরিয়ে আসে। চোখ মুখ কুঁচকে হাতটা সোজা করে সে। তন্নি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় তার কাছে,রাতুল সামনেই ছিলো। তন্নি শঙ্কিত কণ্ঠে তাকে বলে,
_”কি হলো ভাইয়া? আপনি বসুন, বসুন তো এখানে।”
_”আরে তেমন কিছু হয়নি..”
তন্নি কোনো কথা শুনলো না, রাতুলকে ধরে নিয়ে বসালো চেয়ারে। রাতুল একটা হাফহাতার নীল রঙের টিশার্ট পড়ে থাকায় হাত সম্পূর্ন দৃশ্যমান ছিলো। সেদিকে তাকাতেই চোখ বড়বড় হয়ে যায় তন্নির। হাতের কনুই বরাবর সামনের দিকে ব্যান্ডেজ দেওয়া, তার উপরে মাসলস এর দিকে অনেকটা জায়গা জুড়ে লাল হয়ে আছে, থেকেথেকে রক্ত জমাট বেধে আছে এমন।
চোখ চিকচিক করে ওঠে তন্নির। হাতের সেই জায়গায় নিজের হাত রেখে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলে,
_”হাতে কি হয়েছে এগুলো? এমন লাল হয়ে আছে কেন?”
তন্নিকে এমন ভয় পেতে দেখে রাতুল বা হাত উচিয়ে তাকে শান্ত করার জন্য সামান্য হেসে বলে,
_”কিছু হয়নি বলছি তো। তুমি ভয় পাচ্ছো কেন? আসলে কাল ব্লাড দিয়ে হয়েছিল তাই..”
_”ব্লাড দিলে কারো হাতের এমন বাজে অবস্থা হয়? মজা করছেন আমার সঙ্গে?”
_”রিল্যাক্স তন্নি,আহামরি কিছুতো হয়নি। আসলে একবারে হয়নি, কয়েকবার ট্রাই করতে হয়েছিল তাই এমন অবস্থা?”
তন্নি হঠাৎ রেগে গিয়ে বলে,
_”কোন ফালতু লোকে ব্লাড নিতে আসছিলো? কাজ না পারলে করতে আসে কেন? আমি সামনে পেলে তাকে..”
রুবেল ভাই তখন পাশে এসে বলে,
_”তুই এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? ব্লাড দিলে অনেক সময় হয় এমন,অভিজ্ঞ না হলে এই সমস্যাটা হয়।”
রাতুল ও সম্মতি জানিয়ে বলে,
_”ঠিক বলেছেন ভাই। ইন্টার্নি স্টুডেন্ট ছিলো মেবি, তাই এই অবস্থা। চারবারের বেলায় গিয়ে ব্লাড পেয়েছে।”
কথাটা বলে তন্নির দিকে তাকায় রাতুল। তন্নি এমনভাবে সেই হাতের দিকে তাকিয়ে আছে যেন এখনি তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরবে।
_”তন্নি? আমি ঠিক আছি কিন্তু।”
রাতুল এর দিকে তাকিয়ে তন্নি করুন সুরে বলে,
_”খুব ব্যাথা হচ্ছে তাইনা?”
রাতুল কয়েক সেকেন্ড তন্নির দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নেড়ে না সূচক মত জানায়।
তন্নি এবার রাতুল এর কপালে গালে হাত দিয়ে বলে,
_”বললেই হলো ব্যাথা করছে না? গা টাও তাও বেশ গরম মনে হচ্ছে,নিশ্চই এই ব্যাথার জন্যই জ্বর এসেছে? আপনি আসতে গেলেন কেন বলুন তো এই অবস্থায়? আপনাকে থাকতে হবেনা এখানে, বাসায় গিয়ে রেস্ট করুন। এদিকটা মৌরিন সামলে নেবে।”
#চলবে?
#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৪|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
রাতুল এবং তন্নির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো মৌরিন। তন্নি আবারো রাতুলের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
_”ঐতো,মৌরি দেখে নিতে পারবে। আপনি বাসায় যান রাতুল ভাই।”
রাতুল কিছু বলার আগেই তূর্য নিজের চেয়াএ থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে বললো,
_”হ্যা ভাইয়া চলে যান। বলা তো যায়না,এখানে থেকে আপনার শরীর খারাও করলে পরে প্রোডাকশন হাউজের নামে কেউ আবার মামলাও করে ফেলতে পারে।”
তূর্যের কথায় কথা সে নিজে এবং রুবেল দুজনেই হাসতে শুরু করলো। হাসার মাঝেই তূর্য তাকালো মৌরিন এর দিকে,মৌরিন একটুও হাসছে না। সে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তন্নির দিকে তাকিয়ে আছে।
রাতুল দু আঙুল কপালে স্লাইড করে বললো,
_”তন্নি, তুমি কিন্তু খামোখাই টেনশন করছো।”
_”বেশ,খামোখাই করছি। তবুও আপনি বাসায় যান, গিয়ে রেস্ট করুন।”
রাতুল খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো তন্নির উদাস মুখপানে। তন্নি অতিরিক্ত রিয়্যক্ট করছে,তবে এটা খারাপ লাগছেনা রাতুলের কাছে। রাতুল গলা ঝেড়ে মৌরিন এর দিকে তাকিয়ে বললো,
_”স্ক্রিপ্টগুলো নিয়ে এসো এদিকে, আমি বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। আর কোনো দরকার হলে ফোন করো, বাসায়ই আছি।”
মৌরি স্ক্রিপ্টগুলো নিয়ে রাতুল এর সামনে গেলো। রাতুল কয়েক মিনিট এ ওকে কিছু বুঝিয়ে দিয়ে আবারো রিক্সায় উঠে নিজের ফ্লাট এ চলে যায়।
তূর্য আরো একটা জিনিস খেয়াল করেছে, মৌরিন এর পরনে সেই সেলোয়ার কামিজ যেটা প্রোফাইল পিকচার এর ছবিতে ছিলো। কিছুক্ষন এর মধ্যেই শুটিং শুরু করা হলো, খুন বেশি সময় লাগলোনা। অল্প কিছুক্ষন এর মধ্যেই আজকের শুট শেষ হয়ে গেলো। আর বাকি একদিন, তাহলেই সম্পূর্ন নাটক এর শুটিং কমপ্লিট হবে।
রুবেল তূর্যর কাছে এসে বলে,
_”তিনদিন পর থেকে নেক্সট নাটক এর শুটিং শুরু হবে মনে রাখিস কিন্তু। আর আল্লাহর ওয়াস্তে এবার আবরাজ এর সাথে কোনো ঝামেলা করিস না।”
শেষের কথাটা পছন্দ হলোনা তূর্যের। কপাল্ব বিরক্তির ভাজ ফেলে বললো,
_”ঝামেলা হলে আমাকে নিয়েন না কাস্টিং এ। এতো ঠ্যাকা পরে নাই আমার ওর সাথে কাজ করার, আর ঝামেলা আমি শুরু করিনা ভাইয়া। প্রতিবার ঐ শা’লাই তো শুরু করে সবকিছু।”
_”আরে বাপ,আমি তো জাস্ট বলার কথা বললাম।”
_”তো এই কথা ওকে গিয়ে বলুন না। আমার অতো টাইম নেই শুধু শুধু ঝামেলা লাগানোর।”
_”আচ্ছা আচ্ছা আমি ওকেও বলে রাখবো। আশা করি এবার তোরা শুটিং সেট এ যুদ্ধ লাগিয়ে দিবিনা।”
থেমে যায় তূর্য। তন্নি এরই মধ্যে ঝটপট নিজের হাতব্যাগটা নিয়ে এসে বলে,
_”তূর্য,রুবেল ভাই আমি আসছি হ্যা।”
_”ঐ দাড়া,ট্রেন মিস হয়ে যাচ্ছে তোর?” (কপাল কুঁচকে বলে তূর্য)
তন্নি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
_”এত কথা বলতে পারবো না,কাজ আছে আমার। গেলাম আমি।”
গাড়িতে উঠে স্থান ত্যাগ করে তূর্য। আশেপাশে জড়ো হওয়া মানুষ তন্নিকে না পেলেও তূর্যকে ছাড়ছে না। এছাড়া নতুন নাটক সম্পর্কে কথা বলার জন্য মিডিয়ার লোকেরাও এসেছে,তাই আজ আর তাড়াহুড়ো করতে পারলোনা তূর্য। ধীরেসুস্থে এগিয়ে গেলো সেদিকে। রুবেল কেও যেতে হবে। এরই মধ্যে মৌরিনও তার কাছে এসে বললো,
_”সবকিছু গুছিয়েই রেখেছি ভাইয়া, কাল ঠিক টাইমে চলে আসবো। আজ আসি তাহলে?”
রুবেল কিছুটা চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে চেয়ারে বসে বললো,
_”সে নাহয় যাবে। তবে তিনদিন পর কিন্তু নতুন এক নাটক এর শুটিং শুরু হবে,তৈরি থেকো। তোমাকেও আসতে হবে।”
_”আপনাকে চিন্তিত লাগছে রুবেল ভাই।”
_”আর বলোনা,প্রচুর চিন্তায় আছি। শুটিং সেটে এবার কি যে হয় আল্লাহ মালুম। নতুন নাটকে দুজন মেইন ক্যারেক্টার বুঝলে, একটা তূর্য আরেকটা আবরাজ। আর এই দুজনের বাস্তব জীবনে সম্পর্কটা হলো সাপে নেউলে। একজন আরেকজন এর থেকে কি করে উপরে উঠবে সেই চিন্তায় মগ্ন। ঝামেলাও লাগে তাই,আগে একবার দুজন কাজ করেছিল একসাথে। সে কি ঝামেলা! মিডিয়া তেও তো জানাজানি হয়েছিল বিষয়টা, দেখোনি তুমি?”
_”নাহ,ওভাবে দেখা হয়নি।”
_”পারবে পারবে, দুদিন বাদেই দেখতে পারবে। আরো তূর্য আছে একটা কনফিউজিং ক্যারেক্টার এ। এই নিয়ে আবরাজ এসে কি যে করবে!”
মাথায় হাত চলে যায় রুবেলের। এখন কেবল দোয়া করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। ইন্ডাস্ট্রি তে কখনো কেউ সামনাসামনি নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেনা, তবে তূর্য আর আবরাজ দুজনেই ভিন্ন। তারা সামনাসামনিই ঝগড়া শুরু করে দেয়।
_____
হাতের ব্যাথাটা আসলেই বাড়ছে,সঙ্গে জ্বরটাও বাড়ছে। তা বুঝতে পেরেই রাতুল নাপা খেয়ে শুয়ে ছিলো বিছানায়। এই ফ্লাটে সে একাই থাকে,আগে একজন রুমমেট থাকতো,এখন থাকে না। রাতুল নিজেই রান্না করে খায়, তবে আজ উঠতে ইচ্ছে করছে না। রান্নাও করা হয়নি তাই, রাতুল ভেবে রেখেছে একটু পরে উঠে খাবার অর্ডার করে নেবে। তবে তা আর করতে হলোনা। কলিং বেল এর আওয়াজ পেয়ে বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে ওঠে রাতুল। তবে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই তন্নিকে দেখে বিরক্তি কেটে যায় তার।
_”তুমি এখা..”
কথা শেষ করতে পারলোনা রাতুল। তার আগেই বাসায় প্রবেশ করে তন্নি, তার হাতে একটা বড় শপিং ব্যাগ। তন্নি সেটা টেবিল এর উপর রেখে নিজে এসেই দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর টেবিলের কাছে গিয়ে শপিং ব্যাগ থেকে টিফিন বক্সটা বের করে নেয়। রাতুল বিস্মিত হয়ে তার কাছে এসে বলে,
_”তুমি এই সময় এখানে কি করে এলে? শুটিং শেষ হয়ে গেছে? এতো তাড়াতাড়ি?”
তন্নি এবার রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলে,
_”শুটিং শেষ হয়েছে দের ঘন্টা আগে। তখন ই তড়িঘড়ি করে বাড়িতে গিয়ে রান্না করে আনলাম আপনার জন্য। এই অসুস্থ অবস্থায় আপনাকে রান্না করতে হবেনা।”
_”আরে তুমি আবার এত ঝামেলা করতে গেলে কেন? আমি তো বাহিরে থেকেই অর্ডার করিয়ে নিতে পারতাম।”
_”করাননি তো? তাহলে আর করাতেও হবেনা।”
তন্নি এগিয়ে এসে রাতুলের কপালে হাত দিয়ে চেক করে বলে,
_”এখন তো জ্বর নেই,আপনি জলদি জলদি খেয়ে নিন তো। তারপর..”
নিজের ব্যাগ থেকে একটা ঔষধ এর পাতা বের করে বলে,
_”তারপর এই ঔষধ টা খেয়ে নেবেন,তাহলে হাতের ব্যাথাও সেরে যাবে তাড়াতাড়ি।”
_”এসবের কিন্তু কোনো দরকার ছিলো না।”
চেয়ারে বসে কথাটা বললো রাতুল। তন্নি তাতে পাত্তা না দিয়ে প্লেটে খাবার নিতে লাগলো,তারপর সেটা এগিয়ে দিলো রাতুল এর দিকে। রাতুল ও আর কথা না বারিয়ে হাত ধোয়ার জন্য চেয়ার থেকে উঠতে যাবে তখন ই তন্নি তাকে বাধা দিয়ে বলে,
_”না না আপনি বসুন।”
কথাটা বলে একটা বাটিতে পানি নিয়ে আসে তন্নি। রাতুল কেবল অবাক হয়ে তার কাজগুলো দেখছে। তন্নির ডাকে ধ্যান থেকে বেরিয়ে এসে হাতটা তুলতে নেবে তখন ই আবারো ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে নেয় সে। তবে রাতুল এর চেয়ে বেশি ব্যাথা যেন তন্নি ই পেলো। করুন সুরে বললো,
_”ইশ,আমিতো ভুলেই গেছিলাম আপনার ডান হাতে ব্যাথা। না না আপনাকে কষ্ট করে খেতে হবেনা। উম, আমি খাইয়ে দেই আপনাকে?”
_”না না তন্নি,তুমি এমনিতেই অনেক করেছো। আমি নিজেই খেতে পারবো সমস্যা নেই।”
_”চুপ করে থাকুন,একটাও কথা বলতে হবেনা।”
কিছুটা শাসিয়ে কথাটা বলে তন্নি। এরপর বেসিন থেকে নিজেই হাত ধুয়ে এসে রাতুলের সামনে আরেকটা চেয়ার নিয়ে বসে পরে। রাতুলের সামনে থেকে প্লেটটা নিজের কাছে নিয়ে আসে। রাতুল তাকে বাঁধা দেওয়ার সুযোগটুকুও পেলো না। তন্নি তার আগেই প্লেটে খাবার মাখিয়ে রাতুলের মুখের সামনে তুলে ধরলো।
#চলবে?