এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব-১২+১৩

0
400

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_১২+১৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সকালের মিষ্টি রোদের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে চৈতালি আর তানহা।গল্প করতে করতে কখন যে,কলেজে’র কাছে পৌঁছে গেছে।সেদিকে খেয়াল নেই চৈতালি’র।চৈতালি’র কলেজটা তানহার চাচার বাসা থেকে আরো পনেরো মিনিট দূরে।তানহা’র চাচার বাসার সামনের রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন কলেজে যেতে হয় চৈতালি’কে।

–ভাবি চলে এসেছি।ঐ দিকে কোথায় যাচ্ছো।আমার কিন্তু খুব ভয় লাগছে।

–তুমি কি’ কোনো অন্যায় করেছো।চোরের মতো ভয় পাচ্ছো।

–স্যারকে বিরক্ত করেছি।

–তোমাকে এসব শিখিয়েছি আমরা।কলেজে এসব করতে আসো।

–তোমাকে তো আগেই সবটা বলেছি।এখন বকছো কেনো’?

তানহা কোনো কথা বলল না।চুপচাপ সামনের দিকে এগোতে লাগলো।আবিরে’র খোঁজ করতেই জানা গেলো আবির ক্লাসে আছে।দশ মিনিট পরেই আবিরের ক্লাস শেষ হবে।এখন দশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।চৈতালি তার সব ফ্রেন্ডদের সাথে তানহা পরিচয় করিয়ে দিল।আবির’কে বের হতে দেখে চৈতালি সবার থেকে বিদায় নিল।চৈতালি প্রকার দৌড়ে আবিরের সামনে দাঁড়ালো।

–স্যার আমার গার্ডিয়ান নিয়ে এসেছি।

–আমার রুমে নিয়ে এসো।তারপরে কথা বলছি।তানহা একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল।পেছনে থেকে আবির’কে খেয়াল করেনি।চৈতালি আবিরের কাছে এসে,তানহা’কে বলল।

–ভাবি চলো স্যার তার রুমে যেতে বলেছে তোমাকে।দু’জন মিলে আবিরের রুমে গেলো।অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।আবির আর তানহা দু’জন দু’জনকে দেখে কিছু মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো।

–তানহা তুই।চৈতালি তোর কে’ হয়।

–স্যার আপনি ভাবিকে কিভাবে চিনেন।

–তানহা তোমার ভাবি।

–হ্যাঁ কিন্তু আপনি ভাবিকে কি করে চিনেন।

–তুমি একটু বাহিরে যাও।তোমার ভাবির সাথে কিছু কথা আছে।

–চৈতালি কোথাও যাবে না।এখানে আমরা চৈতালি’কে নিয়েই কথা বলতে আসছি।যা’ কথা বলার চৈতালি’র সামনে-ই বলতে হবে।

–আমি চৈতালি’কে নিয়েই কথা বলবো।কিন্তু কথাগুলো ওর সামনে বলাটা ঠিক হবে না।চৈতালি তুমি আমার কথা শুনতে পাওনি।এখনো কেনো দাঁড়িয়ে আছো।চৈতালি মাথা নিচু করে চলে গেলো।তানহার বেশ বিরক্ত লাগছে।চৈতালির কলেজের টিচার তার আবির ভাই।জানলে কখনোই আসতো না তানহা।আবির উঠে তানহার দিকে এগোতে লাগলো।

–সেই তুই নিজেই আমার কাছে আসলি।দেখ আমি কিন্তু তোর কাছে যাই নাই।তুই নিজে পায়ে হেঁটে আমার কাছে এসেছিস।

–আমি এখানে ব্যক্তিগত কথা বলতে আসি নাই।আপনি নিশ্চয়ই আমাকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করার জন্য ডাকেন নাই।

–ব্যক্তিগত প্রশ্নের জন্যই ডেকেছি।তোর আদরের ননদ এক বছর ধরে ছ্যাচরার মতো আমার পেছনে ঘুর ঘুর করছে।আজকাল ওর বিরক্ত করা বেশি হয়ে গিয়েছে।আমি নিতে পারছিলাম না।তাই ওর গার্ডিয়ান ডেকেছি।আগে যদি যানতাম চৈতালির ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে।তাহলে এতদিনে তোদের বাসার জামাই হয়ে যেতাম রে তানহা।

–আমার ননদ আজকের পর থেকে আপনাকে বিরক্ত করবে না।আশা করি আমি আপনাকে বোঝাতে পেরেছি।আর কিছু বলার থাকলে বলুন।আমাকে বাসায় যেতে হবে।

–আচ্ছা তোর কালো জামাইয়ে’র এত ধোলা বোন কেমনে হলো’ রে’।না মানে,তোর জামাই কালো।তোর শাশুড়ী কালো।চৈতালি এত ফর্সা হলো কি করে।আজকাল তো’ ফর্সা হবার জন্য অনেক ক্রিম বের হয়েছে।রাতে নাইট ক্রিম দিয়ে দিয়ে।নিজের চামরা সাদা করেছে।

–আপনি একজন শিক্ষক।ভাবতে-ও আমার রুচিতে বাঁধছে।ফর্সা হলেই যদি সুন্দর হতো।তাহলে আপেলের চেয়ে মূলোর দাম বেশি হতো’।আমার জামাই মোটে-ও কালো না।আমার জামাই আমার স্বপ্নের পুরুষ।আমার শ্যাম পুরুষ।পৃথিবীর সবথেকে সেরা মানুষটি হলো আমার জামাই।চৈতালির কথা বলছেন।আমার শশুর অনেক সুন্দর ছিলেন।আমার শশুরের গায়ের রং ফর্সা ছিল।আমার শাশুড়ীর গায়ের রং শ্যামলা।ইফাদ তার মায়ের গায়ের রং পেয়েছে।চৈতালি তার বাবার গায়ের রং পেয়েছে।আপনি একজন শিক্ষক এই ছোট কথা গুলো আপনার দক্ষ মাথাটা বুঝে নিয়েছে।আমি এসব কথা বলতে আসি নাই।আপনি আমাকে কার গায়ের রং কেমন এসব জানার জন্য ডেকে নিয়ে আসেন নাই।আপনার মতো নিকৃষ্ট মানুষের সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাধে।আশা করছি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না।ভালো থাকবেন আসছি।

–কালো জামাইয়ের জন্য আমাকে ছেড়ে দিলি।তোর ননদ আমার পেছনে ঘুরে।আমি এমন একটা ছেলে।খুব কম মানুষই আমাকে অপছন্দ করবে।

–আবির ভাইয়া বেশি বাড়াবাড়ি করবে না।তোমার সব রকম বাড়াবাড়ি একদম সহ্য করবো না।তোমার থেকে সুন্দর আমার জামাই।তোমাকে আর আমার জামাইকে দাঁড় করিয়ে দিলে।সবাই আমার জামাইকেই পছন্দ করবে।আমার জামাই কোন দিকে কম আছে।লম্বা,মাথা ভরা ঘন কালো কেশ,মায়াবী চেহারা।দেখলে হাজার বার প্রেম পড়তে ইচ্ছে করবে।ছেলে মানুষ যত সুন্দরই হোক না কেনো।ছেলে মানুষ লম্বা না হলে,সে ছেলের কোনো দাম নেই।হিসেব করে দেখতে গেলে তুমি আমার জামাইয়ের থেকে অনেকটাই খাটো।কোথায় আমার জামাই।কোথায় তুমি।কাক হয়ে ময়ূরের সাথে তুলনা করছো।আমার জামাই আমার কাছে সেরা ছিল,আছে,আর সারাজীবন থাকবে।তোমার মতো দশটা আবির আসলে-ও আমার মনে বিষ ভরতে পারবে না।আমার ভালোবাসাকে এতটা ঠুনকো ভেবো না।একটা কথা মনে রেখো ভাইয়া।

“ফুলের সৌরভ আর মানুষের গৌরব চিরদিন থাকে না ।

বলেই তানহা রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।আবির রেগে নিজের হাত দেওয়ালে বারি মারলো।

–আবিরকে অপমান করার সাহস খুব কম মেয়ের আছে তানহা।আজ তুই আমাকে এভাবে অপমান করে ঠিক করলি না।

তানহা আবিরের রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা হাঁটতে শুরু করেছে।আর একটু মুহূর্ত এই কলেজে থাকবে না তানহা।আবিরের সাথে কথা বলার সময় তানহার বার বার ইফাদের কথা মনে পড়ছিল।ইফাদ যদি জানতে পারে।সে,আবার আবিরের সাথে কথা বলছে।কি করবে আল্লাহ জানে।ভয়ে চুপসে যাচ্ছে তানহা।শীতের দিন তবু-ও মৃদু মৃদু ঘাম জামা হয়েছে তানহার কপালে।চৈতালি উতলা হয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল।ভেতরে কি হচ্ছে তা’ জানার জন্য।তানহাকে এভাবে বের হয়ে যেতে দেখে চৈতালির মনের ভয় আরো দিগুণ বেড়ে গেলো।চৈতালি দৌড়ে তানহার কাছে আসলো।

–ভাবি ভেতরে কি’ হয়েছে।তুমি এভাবে আমাকে না নিয়ে চলে যাচ্ছিলে কেনো?তুমি স্যারকে কিভাবে চিনো।

–বাসায় চলো তোমাকে সবকিছু খুলে বলবো।এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না।

–ভাবি আমার খুব চিন্তা হচ্ছে,সংক্ষেপে একটু বলো।

–তুমি আর আবির ভাইয়ের পেছনে ঘুরবে না।এমন বেয়াদব ছেলে তুমি ডিজার্ভ করো না।আবির ভাইয়ের থেকে ভালো ছেলে তুমি ডিজার্ভ করো।যে,ছেলে মেয়েদের সন্মান দিতে জানে না।এসব ছেলের আশা না করাই ভালো।আমি থাকতে তোমার জীবন নষ্ট হতে দিব না চৈতালি।রাজকুমার এনে দিব তোমাকে।তুমি আর আবির ভাইয়ের পেছনে ঘুরবে না।

–কিন্তু কেনো ভাবি।আমি আবির স্যারকে অনেক ভালোবাসি।আমার পক্ষে স্যার ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নেওয়া সম্ভব না।

–প্রথম ভালোলাগা তো’ তাই তোমার এমন মনে হচ্ছে।ভালোলাগা,ভালোবাসা,মায়া,কোনো টাই সারাজীবন থাকে না চৈতালি।একটা সময় সময়ে সাথে সব উবে যায়।শূন্য স্থান কখনো শূন্য থাকে না চৈতালি।ধুলাবালি দিয়ে হলে-ও তা’ পূর্ণ হয়ে যায়।তোমার শূন্য স্থান একদিন সঠিক মানুষ এসে পূর্ণ করে দিবে দেখো।তুমি অনেক ভালো মেয়ে চৈতালি।তুমি ভালো কিছু ডিজার্ভ করো।

–আমার ভালো কিছু চাই না ভাবি।আমার আবির স্যারকে লাগবে।স্যার তোমার পরিচিত প্লিজ স্যারকে তুমি বোঝাও।

–আমরা বাসায় গিয়ে কথা বলবো।বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলা আমি পছন্দ করি না।

চৈতালি আর তানহা দু’জন হাঁটতে শুরু করলো।দু’জনের মাঝে পিনপিনে নীরবতা কাজ করছে।কেউ কোনো কথা বলছে না।একজনের মন খারাপ।আরেকজনের মনে ভয়।তানহা হঠাৎ করেই পেছনে তাকালো।আবির তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।তানহা আবিরকে দেখে চৈতালি’র হাত শক্ত করে ধরে জোরে হাঁটা শুরু করলো।দু’জন মিলে কত প্ল্যান করে আসছিল।আজকে অনেক ঘুরবে।হাঁটবে সাজার জিনিস কিনবে।কিন্তু আবির নামক ব্যক্তিটি সবকিছু নিমিষেই সব আশা মাটি করে দিল।কিছু দূর যেতেই তানহা ইফাদকে দেখতে পেলো।ইফাদের সাথে একটা ছেলে আছে।দোকানে কি যেনো দেখিয়ে দিচ্ছে।ইফাদ এখনো তানহাদের দেখে নাই।তানহার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।

–চৈতালি তুমি জানো।আমাকে কে মেরেছিল।কে?আমাকে সংসার ছেড়ে চলে আসার কথা বলছিল।

–কে ভাবি’?

–আমি তোমাকে বলবো।আমার একটা শর্ত আছে।আমার কথা শোনার পরে একদম উত্তেজিত হবে না।আবির ভাই যদি পেছনে থেকে ডাকে।মনের ভুলেও পেছনে তাকাবে না।তানহার কথা শুনে চৈতালি পেছনে তাকালো।আবিরকে দেখে মুখে হাসির রেখা ফুঠে উঠলো।

–আমি তোমাকে পেছনে ঘুরতে নিষেধ করছি চৈতালি।

–কিন্তু কেনো তাকাবো না ভাবি।স্যার কিছু বলবে আসছে হয়তো।

–তুমি শুনবে না।কে’? আমাকে মেরেছিল।

–কিন্তু ভাবি স্যার।

–তোমার স্যারই আমাকে ভরা রাস্তার মধ্যে মেরেছিল।তোমার স্যারই আমাকে বলেছিল।আমি যেনো তোমার ভাইয়াকে ডিভোর্স দিয়ে তার কাছে চলে যাই।

তানহার কথা শুনে চৈতালি দাঁড়িয়ে পড়লো।অদ্ভুত ভাবে বুকের মাঝখানে চিনচিন ব্যথা অনুভব করলো চৈতালি।চোখে পানি এসে,ছলছল করে উঠলো।খারাপ মনটা নিমিষেই আরো খারাপ হয়ে গেলো।

–কি বলছো ভাবি এসব।তারমানে স্যারের মনের রাণী তুমি।

–রাস্তার বিপরীত পাশে তাকাও চৈতালি।দেখতে পাচ্ছো তোমার ভাইয়াকে।আবির ভাইয়ের জন্য আমাদের মধ্যে এখনো মনমালিন্য চলছে।তুমি কি চাও তোমার ভাইয়ের আর আমার সম্পর্কটা আরো খারাপ হয়ে যাক।

চৈতালি দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো সে,চায় না।

–তাহলে আমার হাত ধরে হাঁটা শুরু করো।তোমার ভাইয়াকে অতিক্রম করে আমরা একটা গাড়ি ডেকে নিব।

আবির এক প্রকার দৌড়ে চৈতালি আর তানহার পথ আঁটকে দাঁড়ালো।

–তানহা এই চুড়িটা তোর।আমার রুমে পড়েছিল।

তানহা বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বলল।না এটা আমার চুড়ি না।

–চৈতালি রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলে মানুষের সাথে তোদের এত কিসের কথা রে।বলল ইফাদ।

পেছনে ইফাদকে দেখে তানহার আত্মা বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়ে গেছে।থরথর করে পুরো শরীর কাঁপতে শুরু করলো।তানহা এতটা ভয় পাচ্ছে কেনো?সে জানে না।কিন্তু এই মানুষটা’কে তানহা খুব বেশি ভয় পায়।

–ভাইয়া এটা আবির স্যার আমাদের কলেজের শিক্ষক।একটু দরকারি কথা বলছিলাম।

–উনি তোর কলেজের শিক্ষক ভালো কথা।কলেজের মধ্যে কথা বলবি।রাস্তায় এভাবে স্যারের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হবে কেনো।

–আরে ইফাদ ভাই রাগ করছো কেনো?তোমার বউয়ের চুড়ি আমার রুমে পড়ে গিয়েছিল।চুড়িটা-ই দিতে এসেছি।

তানহার বুকের ভেতরে ধক করে উঠলো।ইফাদ একবারো তানহার দিকে তাকালো না।তানহার অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।ইফাদ আবিরকে আড়চোখে একবার দেখে নিল।

–চৈতালি তোদের কাছে টাকা নেই।হেঁটে যাচ্ছিস কেনো?

–আসলে ভাইয়া আমি আর ভাবি ঠিক করে ছিলাম আজকে একটু ঘুরবো,হাঁটবো।

ইফাদ রক্ত চক্ষু নিয়ে চৈতালি’র দিকে তাকালো।চৈতালি ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।আবির ইফাদের হাতে চুড়িটা দিয়ে চলে গেলো।ইফাদ চৈতালিকে আলাদা ভাবে ডেকে নিয়ে দূরে সরে গেলো।তানহা অসহায় দৃষ্টিতে দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদ কেনো তার সাথে কথা বলছে না।আবার রাগ করলো ইফাদ।ভাবতে-ই বুক চিরে কান্না আসছে তানহার।

একটু পরে চৈতালি আসলো।চৈতালির চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।

–ভাইয়া তোমাকে চলে যেতে বলেছে।আমি তোমাকে গাড়িতে তুলে দিচ্ছি।গাড়ি আলা তোমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিবে।এই নাও টাকা ভাইয়া দিয়েছে।

–তুমি যাবে না চৈতালি।

–ভাইয়া তানভীর ভাইয়ে’র সাথে কাজে আসছে।ভাইয়ার সাথে যেতে বলেছে আমাকে।

–আমাকে চলে যেতে বলছে কেনো?আমি’ও থাকবো তোমাদের সাথে।

–কিন্তু ভাইয়া তোমাকে চলে যেতে বলেছে।তুমি কথা বাড়িও না ভাবি।বাসায় চলে যাও।চৈতালি একটা গাড়ি দাঁড়া করালো।বাসার ঠিকানা দিয়ে সুন্দর ভাবে তানহাকে নামিয়ে দিতে বলল।তানহা একবার ইফাদের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।তানহা চলে যেতেই চৈতালি দৌড়ে ভাইয়ের কাছে চলে গেলো।

–ভাইয়া ভাবি চলে গিয়েছে।

–তুই এখন আমার সাথে চল।তোর খবর আছে।আমি যা’ বলবো।তাই না শুনলে কঠিন শাস্তি পাবি তুই।

চৈতালি মাথা নিচু করে ফেললো।ইফাদ হাঁটছে ইফাদের পেছনে পেছনে চৈতালি হাঁটছে।ভেতরে ভয় কাজ করছে।একদিকে তানহার চিন্তা আরেক একদিকে তার ভাইয়ের চিন্তা।নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে চৈতালির।

তানহা বাসায় এসে চুপচাপ হয়ে বসে আছে।অশান্ত মনটাকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না তানহা।ইফাদ চাইলেই পারতো।তানহার মনটাকে শান্ত রাখতে।কিন্তু ইফাদ তানহার সাথে কথাই বলল না।আচ্ছা ইফাদ কি আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে।ওনাকে না দেখে আমি কিভাবে থাকবো।সব বাজে চিন্তা এসে তানহা’র মনে হানা দিয়েছে।তানহা’র কাছে কোনো জাদু থাকলে নিমিষেই সব দুশ্চিন্তা দূর করে দিত।অপেক্ষার প্রহর গুলো এতটা দীর্ঘ হয়।সহজে কাটতেই চায় না।চাকত পাখির মতো ইফাদ আর চৈতালির জন্য অপেক্ষা করছে তানহা।কিন্তু তাদের আসার নামে কোনো খোঁজ নেই।

চলবে…..

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সারাদিন পেড়িয়ে বিকাল গড়িয়ে আসছে।ফুটপাতের রাস্তা ধরে হাঁটছে ইফাদ আর চৈতালি।চৈতালি’র মুখ বাংলার পাঁচের মতো হয়ে আছে।রাগী দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে বারবার।ইফাদের মুখ গম্ভীর্য ভাব বিদ্যমান।দু’জন বাসার কাছে চলে এসেছে।চৈতালি রেগে বলল।

–ভাইয়া’র বাচ্চা তুমি এতটা খারাপ আগে জানলে..

চৈতালির কথা শুনে ইফাদ পেছনে ঘুরে দেখতে লাগলো।চারিদিকে ঘুরে চৈতালির দিকে তাকালো।

–এভাবে কি খুঁজছো।

–আমার বাচ্চাকে।

–এ্যাঁ”!

–তুই তো’ আমার বাচ্চাকে ডাক দিলি।কোথায় আমার বাচ্চা।এখন আমাকে আমার বাচ্চা দে’।

–তুমি সেই খারাপ ভাইয়া আমি ভাবিকে সব বলে দিব।

ইফাদ রাগী দৃষ্টিতে চৈতালির দিকে তাকালো।চৈতালি দৌড়ে বাসার মধ্যে চলে গেলো।ইফাদ-ও চৈতালির পেছনে গেলো।চৈতালি বাসায় এসে নিজের রুমে প্রবেশ করলো।তারপরে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিল।ইফাদ আসলে,চৈতালি’কে তাজাই খেয়ে ফেলবে।

তানহা দুপুরের নামাজ পড়ে,ইফাদ আর চৈতালির জন্য অপেক্ষা করছিল।কখন যে,ঘুমিয়ে গিয়েছে।সে,নিজেও জানে না।ইফাদ রুমে প্রবেশ করে,কিছুক্ষণ ঘুমন্ত তানহার দিকে তাকিয়ে থাকলো।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো’।

ইফাদ খেতে বসেছে।রোকেয়া বেগম আর ইফাদে’র কথার আওয়াজে তানহা’র ঘুম ভেঙে গেলো।তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো।ঘুমের রেশ এখনো কাটে নাই।ইফাদের গলার আওয়াজ শুনে বুকের ভেতরে ধুকপুকানির আওয়াজ বাড়তে শুরু করেছে।আবার-ও সেই ভয় এসে মনে হানা দিয়েছে।একটু শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিল।ইফাদের গলার আওয়াজ সব শান্তি নিমিষেই উধাও করে দিল।

তানহা উঠতে যাবে।তখনই ইফাদ রুমে প্রবেশ করে।অসহায় দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদ ফোনটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।তানহা উঠে ইফাদের পিছু পিছু গেলো।তানহা’কে নিজের পেছনে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো ইফাদের।ইফাদ আবার নিজের রুমে আসলো।তানহা-ও ইফাদের পেছনে আসলো।তানহাকে উসখুস করতে দেখে ইফাদ বলল।

–সমস্যা কি’ এভাবে পিছু পিছু ঘুরছো কেনো?

–বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না আবির ভাই চৈতালির কলেজের শিক্ষক।জানলে কখনোই যেতাম না।আবির ভাই যে,চুড়িটা আপনাকে দিয়েছে।সেটা আমার চুড়ি না।

তানহার কথা শুনে ইফাদের গম্ভীর্য মুখটা আরো গম্ভীর হয়ে গেলো।ইফাদ একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।ইফাদের নীরবতা তানহাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে।মনের মধ্যে ঝড় বইয়ে যাচ্ছে।ইফাদ কি’ তানহার মনের অবস্থা দেখতে পাচ্ছে না।তাহলে কেনো নীরব রয়েছে।ইফাদের থেকে কোনো উওর না পেয়ে।তানহা দু-চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।দু’জনে-ই সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে।দু’জনেই নীরব।তানহা মাথা নিচু করে আছে।অনবরত চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছছে বারবার।

তানহার অবস্থা দেখে ইফাদ শব্দ করে হেসে ফেললো।ইফাদের হাসি দেখে তানহা চোখ তুলে ইফাদের দিকে তাকালো।কি’ সুন্দর সেই হাসি।ইফাদের ভুবন ভুলানো হাসি দেখে,নিমিষেই তানহার সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেলো।পলকহীনভাবে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।হাসলে মানুষটাকে কত সুন্দর দেখায়।তানহার মনে হচ্ছে,সময়টা যদি থেমে যেত।ইফাদের হাসি মুখটা দেখে হাজার বছর কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তানহার।ইফাদ নিজের হাসি কিছুতেই থামাতে পারছে না।ইফাদের হাসি দেখে তানহা-ও হেসে ফেললো।তানহার হাসি দেখে ইফাদ হাসি থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে তানহার দিকে তাকালো।

–তুমি হাসছো কেনো?

–আপনি হাসছেন তাই!

–আমি তো’ একটা কারনে হাসছি।তুমি কারন ছাড়াই হাসছো।

–আমার সামনে কেউ হাসলে,আমার খালি হাসি পায়।

–তুমি না কান্না করছিলে,এখন হাসলে কেনো?নাও আবার কান্না শুরু করো।তুমি আবার ছেলেদের সাথে কথা বলেছো।এটা তোমার শাস্তি।

তানহা অসহায় দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকালো।ইফাদের কথা শুনে তানহার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো।তানহাকে অবাক করে দিয়ে।ইফাদ তানহার দুই গাল স্পর্শ করে যত্ন সহকারে দু-চোখের পানি মুছে দিল।

–তুমি কান্না করছো কেনো?তুমি কি কোনো অন্যায় করেছো পাগলি।আমি তোমাকে কিছু বলেছি।তোমার দু-চোখ কান্না মানায় না।সব সময় হাসবে দেখো তো’ তোমাকে হাসলে কত সুন্দর দেখায়।

–আপনি আমাকে আবার ভুল বুঝেছেন তাই না আমি জানি।

–তানহা তুমি একটা পবিত্র ফুল।আমি এই পবিত্র ফুলটাকে কিভাবে ভুল বুঝবো বলতো।আমি জানি আমার বউজান কেমন।তুমি আমাকে এতটাই খারাপ মনে করো।আমি কি এতটাই খারাপ তানহা।যে,চোখের দেখা দেখে,সত্যি মিথ্যা যাচাই না করে।তোমাকে ভুল বুঝবো।তুমি আমার বাগানে ফোঁটা জ্যান্ত গোলাপ ফুল।আমি এই ফুলটাকে কিভাবে কষ্ট দিতে পারি।আমি তো’ তোমার সাথে এমনি এমন করছিলাম।তুমি রাগ করে ছিলে,আমার সাথে কথা বলছিলে না।আমার অনেক খারাপ লাগছিল।আমি ইচ্ছে করে এমন করছি।এমন না করলে তুমি আমার সাথে কথা বলতে।এমন করলাম দেখেই তুমি আমার সাথে কথা বললে।

তানহা হতভম্ব হয়ে ইফাদের দিকে তাকালো।

–আপনার মতো বাজে লোক দু’টো দেখি নাই।আমাকে বোকা বানানো।আজকে রাতে আপনার ভাত বন্ধ।

–লক্ষি সোনা বউ আমার এমন করে না।তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।

–আমার কোনো সারপ্রাইজ লাগবে না।ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল।আর উনি মজা নিয়ছে।আপনি একদম আমার সাথে বলেন না।বের হন আমার রুম থেকে।

–এতক্ষণ ভেজা বিড়ালের মতো হয়েছিলে।সত্যি কথা বলে দিলাম।এখন আমার রুম থেকে আমাকেই তাড়িয়ে দিচ্ছো।এই জন্যই বলে,সত্যি কথার ভাত নাই।

তানহা ঝাড়ু হাতে নিলো।তেড়ে ইফাদের দিকে আসতে লাগলো।ইফাদ দৌড়ে বাহিরে চলে গেলো।তানহা রেগে দরজা লাগিয়ে দিল।

ইফাদ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।

–কি’ মেয়ে রে’ বাবা নিমিষেই রুপ বদলে ফেললো।এই চৈতালি দরজা খোল।

–আগে আমাকে দশ হাজার টাকা দিবে।তারপরে তোমার জিনিস ফেরত পাবে।

–তুই ছোট মানুষ এত টাকা নিয়ে কি করবি বোঝা আমাকে।

–তুমি ভাই নিরামিষ মানুষ।এসব জিনিস পত্র কিভাবে তোমার বউকে দিবে।এসব বরং আমার কাছেই থাক।আমি ব্যবহার করবো।

–আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে চৈতালি।সন্ধ্যা হয়ে আসছে।

–আগে টাকা দিবে।

–তোর এত সাহস তুই আমার মুখের ওপরে কথা বলিস।

–মার খেলে খাব।তবু্ও টাকা নিব।

–আমার কাছে এত টাকা নাই।তুই পঞ্চাশ টাকা নে’ বোন।আমার জিনিস আমাকে দিয়ে দে’।

–সারাদিন আমাকে খাটিয়েছো।আমাকে মাত্র পঞ্চাশ টাকা দিবে।তোমার জিনিস তোমাকে দিতে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু এখন দিব না।

–লাগবে না তোর জিনিস।আমি বাসার বাহিরে চলে গেলাম।ইফাদ রেগে পারার মোরে চলে গেলো।চৈতালি দরজা খুলে দেখলো ইফাদ চলে গেছে।হতাশ হয়ে আবার নিজের রুমে চলে গেলো।

ঘড়ির কাটায় রাত নয়টা ছুঁই ছুঁই।তানহা রান্না ঘরে তরকারি গরম করছে।চৈতালি মেঝেতে পাটি বিছিয়ে।খাবার প্লেট গুলো নিয়ে এসে বসলো।রোকেয়া বেগম নিজের ঘরে আছেন।দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো।চৈতালি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল।

–তোর ভাবি কই।

–রান্না ঘরে তরকারি গরম করছে।

ইফাদ কোনো কথা না বলে রান্না ঘরের দিকে গেলো।

–তুমি একা একা রান্না করছো।আমি তোমাকে সাহায্য করি।

তানহা রেগে ইফাদের শরীরে ঠান্ডা পানি ছুরে মারলো।

–আল্লার কসম তানহা শীত লাগে না।এভাবে কেউ ঠান্ডা পানি ছুরে মারে।

–আমি আলগা দরদ দেখাতে আসতে বলছিলাম।রেগে তরকারি নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে গেলো।ইফাদ হতাশ হয়ে রুমে নিয়ে শার্ট চেঞ্জ করে আসলো।সবাই খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে।ইফাদ চৈতালির রুমে আসলো।

–ভাইয়া তুমি সেই খারাপ।আমি মনে করে ছিলাম।ভাবির জন্মদিনে ভাবিকে উপহার দিব।তুমি আমার থেকে সবকিছু জেনে,নিজেই কিনে ফেললে।

–টাকা আমার বউ আমার কিনেছি বেশ করেছি।এই ধর তিন হাজার টাকা।

–আমি দশ হাজার টাকা চেয়ে ছিলাম।

–পারলে আম্মুর কাছে থেকে চেয়ে নে’।আমার কাছে আর টাকা নেই।এখন আমার জিনিস আমাকে ফেরত দে’।

–এখন দিয়ে দিচ্ছি।তুমি কিন্তু আম্মুকে বলে সাত হাজার টাকা নিয়ে দিবে।আমার আংটিটা সত্যি খুব পছন্দ হয়েছে ভাইয়া।

–আচ্ছা আমি আম্মুকে বলবো।

চৈতালি অনেক গুলো ব্যাগ এনে ইফাদের হাতে ধরিয়ে দিল।ইফাদ সেগুলো নিয়ে নিজের রুমে আসলো।তানহা কাত হয়ে শুইয়ে ছিল।ইফাদ গিয়ে তানহার পাশে বসে ডাকলো।

–তানহা উঠো না।

–আপনি সরে যান।আমার সাথে কথা বলবেন না।

–আচ্ছা বলবো না।একবার উঠে বসো।

–আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।

ইফাদ তার ঠান্ডা হাত তানহার গালে চেপে ধরলো।তানহা তড়িঘড়ি করে ইফাদের দিকে তাকালো।

–সমস্যা কি’ প্রতিশোধ নিচ্ছেন।

–তুমি আগে উঠো,তারপরে বলছি।

তানহা কোনো কথা বলছে না।চুপ করে শুইয়ে আছে।ইফাদ তানহার হাত ধরে তুলে বসালো।সব গুলো ব্যাগ হাতে দিয়ে বলল।

–তোমার জন্য “বউজান”।

তানহা অবাক হয়ে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।এতকিছু তার জন্য নিয়ে এসেছে।ইফাদের মাথা কি’ খারাপ হয়ে গিয়েছে।

–এভাবে তাকিয়ে দেখছো কি’।সবকিছু খুলে দেখো তোমার পছন্দ পছন্দ হয়েছে কি না’।

তানহা সবকিছু খুলে দেখতে লাগলো,কালো রংয়ের একটা বোরকা,কালো রংয়ের শাড়ি,কালো রংয়ের চুড়ি,কিন্তু চুড়িগুলো কাঁচের না।কালো রংয়ের থ্রি-পিস,কালো রংয়ের জুতা।কালো রংয়ের একটা চাদর।সাজার গহনা মোটামুটি সবগুলোই প্রায় কালো।একজোড়া নুপুর-ও আছে।

তানহা অবাক দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।আবার অনেক খুশিও লাগছে তানহার।ইফাদ তার জন্য এতকিছু নিয়ে এসেছে।ভাবতেই তানহার চোখ দু’টো চিকচিক করে উঠলো।খুশি হয়ে বলল।

–সবকিছু আমার’।

–না আমার আরো একটা বউ আছে তার জন্য।

–আপনি কি করে জানলেন আমার কালো রং পছন্দ।

–জামাই হই আমি তোমার।আমি জানবো না।তাহলে কে জানবে শুনি।

–আল্লাহ এগুলো সব আমার খুব খুশি লাগছে।তানহা খুশি সবকিছু নেড়েচেড়ে দেখছে।তানহার হাসিমাখা মুখটা দেখে,ইফাদে’র মনে প্রশান্তি বাতাস বইয়ে গেলো।মুগ্ধ দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।তানহাকে দেখে মনে হচ্ছে,পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষটা তানহা।দুইটা বছর তানহার কোনো খোঁজ খবর রাখে নাই ইফাদ।অল্প কয়টা জিনিস পেয়েই মেয়েটা কতটা খুশি।তানহা হাতে চুড়ি গুলো পড়তে পড়তে বলল।

–আমার কিন্তু কাঁচের চুড়ি চাই।আপনি আমাকে#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি কিনে দিবেন।

–কাঁচের চুড়ি পড়া লাগবে না।

–না আমি পড়বো।

–জীবনে প্রথম কিছু চাইলাম।কিনে,দিবেন না।

–না’।তোমাকে সোনার চুড়ি বানিয়ে দিব।

–আমার আর কিছু লাগবে না।আপনি পুরো দোকান আমার জন্য নিয়ে আসছেন মনে হচ্ছে।

–এগুলো কিছু না তানহা।তুমি এখনো আমার থেকে অনেক কিছু পাবে।ইনশাআল্লাহ আমি তোমার সবকিছু পূর্ণ করার চেষ্টা করবো।

–আমার তো’ আপনাকে লাগবে।আপনি আপনাকে দিয়ে দিন।আমার আর কিছু লাগবে না।

–এভাবে বলো না।আমার শরম করে।

–আমি এগুলো একটু পড়ে দেখি।

–তোমার জিনিস তুমি পড়বে,আমাকে বলার কি আছে।

–আপনি একটু বাহিরে যাবেন।

–আমি থাকলে সমস্যা কোথায়।

–এখন শরম করবে না।

–রাগ দেখাচ্ছো কেনো?আমি বলেছি যাব না।একটা কথা বলতেই পারি না।সাপের মতো ফোস করে ওঠে।বলতে বলতে ইফাদ চলে গেলো।

তানহা কালো রংয়ের শাড়িটা পড়ে নিল।কালো রংয়ের শাড়িটা তানহার ফর্সা শরীরে একটু বেশি চকচক করছে।তানহার সুন্দর্য দিগুন বাড়িয়ে তুলেছে।তানহা ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক দিয়ে নিল।সে,তো’ আর বাহিরে যাচ্ছে না।তার স্বামীর জন্যই সাজছে।তানহা দরজা খুলে দিয়ে ইফাদ’কে বলল।

–আমাকে কেমন লাগছে।

–সর্বনাশ করে ফেলছো।

ইফাদের এমন কথায় তানহা ভরকে গেল।

–কি করেছি আমি’।

–বউ তুমি এভাবে বাহিরে যাবে না।আল্লাহ আমার বউ এত সুন্দর।কাক যদি ঠোঁটে করে নিয়ে চলে যায়।তাহলে আমার কি’ হবে।তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তানহা।

–সত্যি সুন্দর লাগছে।

–হ্যাঁ সত্যি অনেক সুন্দর লাগছে।একদম পরীর মতো।

–একটু বেশি বলে ফেলছেন।

আমার সাথে আসো।ইফাদ তানহাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে।তানহার পায়ে নুপুর পড়িয়ে দিলো’।

–মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। আমার বউজান’কে!

তানহা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।

–তানহা তুমি অনুমতি দিলে,আমরা কয়টা ছবি তুলতে পারি।

–আপনি আমাকে ফেসবুক আইডি খুলে দিবেন।

–তুমি ফেসবুকের কথা কিভাবে জানলে।তোমার ফেসবুক ব্যবহার করা লাগবে না।

–কেনো আমি ফেসবুক খুললে,আপনার সব কার্যক্রম ধরে ফেলবো।ভয় পাচ্ছেন।

–তুমি আমার ফোন নিয়ে সবকিছু দেখতে পারো।কিছু নেই আমার ফোনে।আমি মেয়েদের সব সময় ঘৃণা করি।

–আমাকে’ও।

ইফাদ মাথা নিচু করে ফেললো।

–আচ্ছা আমি তোমাকে আইডি খুলে দিচ্ছি।তোমার ফোন নিয়ে এসো।

তানহা ফোন নিয়ে আসতে গেলো।ইফাদ ফ্লোরে বসে পড়লো।নিজের বিছানা তৈরি করে ফেললো।তানহা ফোন নিয়ে এসে ইফাদের পাশে বসলো।ইফাদ তানহার হাত থেকে ফোন নিয়ে ফেসবুক আইডি খুলে দিল।

–রিলেশনশিপের জায়গায় সিঙ্গেল দিবেন।

ইফাদ ভ্রু কুঁচকে তানহার দিকে তাকালো।

–তুমি সিঙ্গেল?

–পিওর সিঙ্গেল।আমাকে দেখে কি মনে হয় আপনার।

ইফাদ রাগী দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে…..