#একটা_বসন্ত_বিকেলে
#অরনিশা_সাথী
|১৪|
আয়াত চুপচাপ উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে আছে। সেই ঘটনার পর থেকে একটা কথাও বলেনি শ্রাবণের সাথে৷ উল্টো শ্রাবণ কথা বলতে গেলে ওকে এড়িয়ে গেছে৷ এখন উল্টো দিকে ঘুরে ঘুমানোর ভাণ ধরছে। কিন্তু ঘুমাচ্ছে না। চোখে ঘুমও নেই। শ্রাবণ সোফায় বসে আয়াতকে সেই কখন দেখে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে নিঃশব্দে হাসছে আয়াতের এমন বাচ্চামোতে। শ্রাবণ বেশ কয়েকবার ডাকলো আয়াতকে। আয়াত কোনো সাড়া দিলো না। শ্রাবণ জানে আয়াত ঘুমায়নি, ইচ্ছে করে সাড়া দিচ্ছে না ও। শ্রাবণ ক্রুর হেসে ফোন কানে নিয়ে বললো,
–“হ্যাঁ তুশি?”
এইটুকু বলেই ব্যালকনিতে চলে গেলো শ্রাবণ। আয়াত দ্রুত উলটো ঘুরে শ্রাবণের চলে যাওয়া দেখলো। কান খাড়া করে রাখলো শ্রাবণের কথা শোনার জন্য। কিন্তু এখান থেকে কিছু শোনা যাচ্ছে না। আয়াত গুটিগুটি পায়ে উঠে ব্যালকোনির দরজার আড়ালে দাঁড়ালো। শ্রাবণ সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। ফোন কানে নিয়ে আয়াতকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,
–“আ’ম এক্সট্রেমলি স্যরি তুশি। আয়াত তোমায় উল্টাপাল্টা শুনিয়েছে তার জন্য সত্যিই আমি দুঃখিত। তুমি কিছু মনে করো না প্লিজ। আমরা কাল কোথাও বসে কথা বলি?”
আয়াত এদিকে রাগে চোখমুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সহ্য হচ্ছে না এসব৷ রেগেমেগে ওখান থেকে চলে আসতে নিলেই শ্রাবণ আয়াতের হাত ধরে টেনে ব্যালকোনির রেলিঙের সাথে ঠেকিয়ে দাঁড় করায়। আয়াতের কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ। একহাত শক্ত করে ধরে অন্যহাত দিয়ে রেলিং ধরে আছে। আয়াত শ্রাবণের হাত ধরে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। শ্রাবণ আয়াতের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
–“বিয়ে করা বরের উপর নজর রাখছো? লুকিয়ে তার কথা শুনছো? দিস ইজ নট অ্যা গুড হ্যাবিট, বিয়ে করা বউ।”
–“ছাড়ুন আমায়, আপনার উপর নজর রাখতে বয়েই গেছে আমার।”
–“হ্যাঁ তা তো দেখতেই পারছি। আমার বিয়ে করা বউ ভার্সিটি থেকে ফেরার পর থেকেই আমার উপর চটে আছে। তার এই রাগটাকে আরো বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তুশির ম্যাসেজ আর ফোনই যথেষ্ট ছিলো। বাই দ্যা ওয়ে, আমার বিয়ে করা বউ কি জেলাস?”
ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো শ্রাবণ। আয়াত ঝাঁজালো কন্ঠে বললো,
–“হ্যাঁ জেলাস, তাতে কি হয়েছে? আমার স্বামীর উপর অন্য মেয়ের নজর থাকবে কেন? আগে যা ছিলো, ছিলো। এখন তার বোঝা উচিত না আপনি বিবাহিত? আপনার ঘরে বউ আছে? এসব জানার পরও তুশি কেন ফোন ম্যাসেজ করবে?”
শ্রাবণ শীতল দৃষ্টিতে তাকালো আয়াতের দিকে। আয়াতের চোখে স্পষ্ট অধিকারবোধ দেখতে পারছে নিজের জন্য। শ্রাবণ শান্ত গলায় বললো,
–“স্বামী হিসেবে মানো আমায়?”
–“হ্যাঁ মানি, আমি সেই প্রথম থেকেই মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছি আর মেনেছি। কিন্তু আপনিই স্ত্রী হিসেবে মানেন নি আমায়, আর না এখনো মানছেন বা মানার চেষ্টা করছেন।”
তেজী স্বরে কথাগুলো বলে শ্রাবণের থেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। তারপর হনহনিয়ে রুমে চলে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। শ্রাবণ শীতল দৃষ্টিতে আয়াতের পানে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুটা সময়। ভাবলো, ও কি আয়াতকে এখনো কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে? নাহ, এভাবে আর চলতে দিবে না ও। দুজনের মাঝে যেটুকু ফারাক আছে, খুব শীঘ্রই সেটুকুও ঘুঁচিয়ে নিবে ও।
–
সেই ঘটনার পর আরো দুটো দিন কেটেছে। আয়াত অবশ্য এখন স্বাভাবিক আচরণই করছে শ্রাবণের সাথে। একমনে লাগেজ গোছাচ্ছে আয়াত। শ্রাবণ অফিস থেকে ফিরে আয়াতকে লাগেজ গোছাতে দেখে বললো,
–“কোথাও যাচ্ছো?”
–“হ্যাঁ, বাবার বাসায়।”
–“ওহ।”
–“আপনার জন্য কি কি নেবো?”
–“অফিসে কাজ আছে আমার।”
আয়াত এক গ্লাস পানি শ্রাবণের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
–“সেটা মা বুঝে নিবে। আপাতত বলুন কি কি নেবো আপনার জন্য?”
–“নিয়ে নাও তোমার ইচ্ছেমতো।”
আয়াত আর কোনো কথা না বাড়িয়ে শ্রাবণের কাপড়ও গুছিয়ে নিচ্ছে। শ্রাবণ এক দৃষ্টিতে আয়াতকে দেখছে। মেয়েটার চোখমুখে খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে। এতদিন পর বাবার বাসায় যাবে খুশি তো হবেই। তাই আর আয়াতের খুশিটাকে মাটি করতে চাইলো না শ্রাবণ, কথা না বাড়িয়ে যাওয়ার জন্য হ্যাঁ বলে দিলো। আয়াত লাগেজ গোছানো শেষে বললো,
–“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন, খাবার রেডি করছি আমি।”
এইটুকু বলে বেরিয়ে গেলো আয়াত। শ্রাবণ টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। আধ ঘন্টা বাদে ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে এলো শ্রাবণ। আয়াত কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুঁজে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। একদম পাক্কা গিন্নী গিন্নী লাগছে ওকে দেখতে। শ্রাবণ নিঃশব্দে হাসলো আয়াতের এমন লুক দেখে। অতঃপর সবাই একসাথে খেতে বসলো। সানিয়া মেহরাব বললো,
–“কাল তোমরা চট্টগ্রাম যাচ্ছো। অফিস আমি সামলে নিবো। বিয়ের পর আয়াত আর বাবার বাড়ি যায়নি, বেয়াই বেয়ানও ফোন করে অনেকবার অনুরোধ করেছে। তুমি তো কাজের জন্য সময়ই পাও না। তাই তোমাকে না জানিয়েই বলে দিয়েছি তোমরা কাল যাচ্ছো।”
শ্রাবণ খেতে খেতে কথাগুলো শুনলো। সম্মতিও জানালো। আয়াত বললো,
–“শানও যাক আমাদের সাথে? ওর তো ঘোরাফেরার প্রতি অনেক নেশা, এই সুযোগে___”
শান বললো,
–“অন্য সময় যাবো আয়ু ভাবী। আমিও চলে গেলে আম্মু বাসায় একা থাকবে তো।”
আয়াত সানিয়া মেহরাবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“মা আপনিও চলুন না।”
সানিয়া মেহরাব একগাল হেসে বললো,
–“আমি অন্যসময় যাবো, এখন তোরা গিয়ে ঘুরে আয়। আর শান চাইলে যেতে পারে। আমি বাচ্চা না যে একা থাকতে পারবো না।”
শান তবুও নাকোচ করে দিলো। ও সানিয়া মেহরাবকে একা বাসায় রেখে যাবে না। তাই ঠিক হলো শ্রাবণ আর আয়াতই যাবে।
–
এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় শ্রাবণের সাথে ফারাবীর ধাক্কা লাগে। ফারাবী তখন হাতের কাগজ দেখতে দেখতে হাঁটার কারণে শ্রাবণকে দেখতে পায়নি। ফারাবী দ্রুত বলে,
–“স্যরি, আসলে আমি___”
কথাটা বলতে বলতে শ্রাবণের দিকে তাকাতেই থমকে যায় ফারাবী। শ্রাবণকে আশা করেনি। এক পলক এদিক সেদিক তাকালো আয়াতের দেখা পাওয়ার আশায়। কিন্তু আয়াতের দেখা মিললো না। শ্রাবণ বললো,
–“ইট’স ওকে, ভুল আমারো আছে।”
শ্রাবণের কথায় হাসলো ফারাবী। শ্রাবণ পেছন ঘুরে আয়াতকে দেখতে না পেয়ে ফোন করলো। আয়াত ফোন রিসিভ না করে কেটে দিলো। দ্রুত শ্রাবণের সামনে এসে বললো,
–“চলুন।”
কথাটা বলে পাশে তাকিয়ে ফারাবীকে দেখে চমকে গেলো আয়াত। চোখ নামিয়ে নিলো দ্রুত। ফারাবীর দিকে তাকিয়ে থাকার সাধ্য ওর নেই। কেমন যেন দেখাচ্ছে ফারাবীকে। ও কি ভালো নেই? নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা কি ও করছে না? মনে মনে এরকম অনেক প্রশ্ন এসে হানা দিলো। শ্রাবণ আয়াতকে বললো,
–“তুমি এখানেই দাঁড়াও, আমি গাড়ি ঠিক করে আসছি।”
আয়াত হকচকিয়ে গেলো শ্রাবণের কথায়। সেটা প্রকাশ না করে দ্রুত বললো,
–“ভাইয়া গাড়ি পাঠাবে বলেছিলো।”
প্রত্যুত্তরে শ্রাবণ আর কিছু বললো না। আয়াত একপাশে দাঁড়িয়ে রইলো মাথা নিচু করে। ওর ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে এভাবে ফারাবীর সামনে পড়াতে৷ শ্রাবণের ফোন বেজে উঠলো। আয়াতের সামনে লাগেজটা দিয়ে ইশারায় বোঝালো ও কল ধরে আসছে। আয়াতও সম্মতি জানালো। শ্রাবণ যেতেই ফারাবী এসে দাঁড়ালো পাশে। মাঝে অবশ্য অনেকটা দূরত্ব। আয়াত ব্যস্ত ভঙ্গিতে আশেপাশে তাকালো। ফারাবী বললো,
–“তোমার বর তাই না?”
–“হুম, তোমার চোখমুখের এই অবস্থা কেন?”
–“এমনি, কাজের প্রেশার যাচ্ছে খুব তাই আরকি, তারপর ভালোই আছো?”
–“আলহামদুলিল্লাহ।”
–“আমিও সেটাই চাই।”
এরপর ক্ষানিকটা সময় নিরব থাকলো দুজনে। ফারাবী বললো,
–“শ্রাবণের হতে পেরেছো?”
ছলছলে চোখে তাকালো আয়াত। কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
–“পা্ পারবো না কেন? শ্রা্ শ্রাবণেরই তো আছি।”
–“তাহলে গলা কাঁপছে কেন এই কথাটা বলতে?”
আয়াত চুপ করে রইলো। ফারাবী আবারো বললো,
–“অতীত ভেবে তোমাদের দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়িও না। আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো অনেকটা৷ আমাকে ভুলতে পারবে না। কিন্তু আমাদের এক হওয়াটা যে ভাগ্যেও ছিলো না আয়ু। তাই বলছি পিছুটান ভুলে শ্রাবণকে নিজের করে নাও, দুজনের মাঝে সকল দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলো।”
আয়াত এবারেও কিছু বললো না। ফারাবীর আড়ালেই চোখের কোনে জমা পানি মুছে নিলো। অবশ্য ফারাবীর চোখের আড়াল হয়নি, ও ঠিকই দেখেছে। নিঃশব্দে হাসলো ফারাবী। কোথাও একটা চিনচিনে কষ্ট হচ্ছে ফারাবীর৷ কষ্টটা যথাসম্ভব লুকানোর চেষ্টা করে বললো,
–“শেষ বারের মতো তোমাকে দু চোখ ভরে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছিলো। ভাবিনি আল্লাহ আমার এই ইচ্ছেটাকে পূরণ করবে। আল্লাহ’র দরবারে হাজার শুকরিয়া তোমার দেখা মেলানোর জন্য। ভালো থেকো, আর সংসার জীবনে সুখি হও, এখন শুধু এইটুকুই চাওয়া।”
কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে গেলো ফারাবী৷ আয়াত বার কয়েক ডেকেও কোনো লাভ হয়নি। আয়াতের মনে খচখচ করছে। ফারাবী এভাবে কথা বললো কেন? শেষ বার বলতেই বা কি বোঝালো? এয়ারপোর্টে কি করছে ফারাবী? হাতে লাগেজও ছিলো, ও কি দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে? মনে মনে এরকম হাজারো কিছু ভাবলো আয়াত। সেসময় শ্রাবণ এসে উপস্থিত হলো। হাতে দুটো হাওয়াই মিঠাইয়ের প্যাকেট৷ শ্রাবণ হাওয়াই মিঠাই দুটো আয়াতের দিকে এগিয়ে দিলো। আয়াত ফারাবীর সকল চিন্তা সাইডে ফেলে হাসিমুখে হাওয়াই মিঠাই হাতে নিলো। হাওয়াই মিঠাই দেখে আয়াত সত্যিই ভীষণ রকমের খুশি হয়েছে। অনেক দিন হয় হাওয়াই মিঠাই খাওয়া হয় না। আয়াত উৎফুল্ল মনে একটা হাওয়াই মিঠাই খেতে শুরু করলো। দুই কামড় খেতেই মনে হলো শ্রাবণকে খেতে বলা হয়নি। তাই খাওয়া থামিয়ে হাওয়াই মিঠাই শ্রাবণের দিকে এগিয়ে দিতেই শ্রাবণ বললো,
–“এসব বাচ্চাদের জিনিস আমি খাই না।”
আয়াত মুখ বাকিয়ে নিজেই খেতে শুরু করলো। শ্রাবণ বেশ কিছুটা সময় একদৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটাকে এখন বাচ্চাদের মতো লাগছে। সামান্য এই হাওয়াই মিঠাই পেয়ে কেউ এতটা খুশি হয়? আয়াতকে না দেখলে বোধহয় জানা হতো না শ্রাবণের। আয়াতদের বাসার ড্রাইভার এসে ডাকতেই শ্রাবণ দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো আয়াতের থেকে। ড্রাইভার লাগেজ নিয়ে গাড়িতে তুললো। শ্রাবণ কয়েক পা এগিয়ে আবার পেছন ফিরে তাকালো আয়াত সেখানেই খেতে ব্যস্ত। শ্রাবণ তপ্ত শ্বাস ফেলে এগিয়ে গেলো আয়াতের দিকে। অতঃপর আয়াতের হাত ধরেই গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
শ্রাবণ ওদের গাড়ি চলে যেতেই ফারাবী আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। আড়ালে থেকেই আয়াতকে দেখছিলো দু চোখ ভরে। সামনে দাঁড়িয়ে দেখার সাধ্য তো আর নেই। শ্রাবণ ভুল বুঝতে পারে, বা ওর জন্য ওদের সংসারে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই তো তখন ওভাবে চলে এলো আয়াতের সামনে থেকে। আয়াত কয়েকবার ডাকার পরও আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। কিন্তু শেষ বারের মতো আয়াতকে দুচোখ ভরে দেখার লোভটা সামলাতে পারেনি। তাই তো আড়াল থেকে এতক্ষণ যাবত ওর না হওয়া ভালোবাসাটাকে দেখলো। আবার কবে দেখা হয় বা আদেও দেখা হয় কিনা তা তো আর বলা যায় না। শ্রাবণকে আয়াতের পাশে দেখে ভীষণ রাগ হচ্ছিলো ফারাবীর। আয়াতের হাত ধরতে দেখেও রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিলো। পরমূহুর্তেই নিজেকে সামলে নেয় কারণ ওরা যে এখন স্বামী-স্ত্রী। শ্রাবণের সম্পূর্ণ অধিকার আছে আয়াতের উপর। সেভাবে দেখতে গেলে ফারাবীরই কোনো অধিকার নেই আর। চোখে জল তবুও হাসছে ফারাবী। কারণ ওর আয়াত যে সুখে আছে। এই মানুষটা ওকে আজীবন আগলে রাখতে পারবে, ভালো রাখতে পারবে। সেটা এই কয়েক মিনিটের দেখাতেই ফারাবী বেশ ভালো বুঝতে পেরেছে। আয়াত ভালো থাকলেই হলো, আর কি চাই ওর? কিচ্ছু না। চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে ফারাবী বললো,
–“আমার না পাওয়া ভালোবাসাকে আজীবন ভালোবাসার, ভালো রাখার মানুষটা যে এসে পড়েছে। আমি চাই তুমি যেখানেই থাকো, যার সাথেই থাকো অনেক ভালো থাকো। আমি চাই না আমাকে মনে করে কোনো কষ্ট তোমার হোক। আজই আমাদের শেষ দেখা। আমি চাইনা কখনো আর ভুলেও আমাদের দেখা হোক। আমি তোমার সামনে পড়লে যে নতুন জীবনে তোমার নিজেকে সামলে নিতে কষ্ট হবে ভীষণ, আমার স্মৃতিগুলো যে তোমায় কুড়ে কুড়ে খাবে। তোমার স্মৃতি গুলোও বাঁচতে দেবে না আমায় আয়াত। তাই তো দেশ ছাড়ছি। এই শহরে থাকবোও না তোমার বা আমার স্মৃতি গুলো আমাদের তাড়া করে আর বেড়াবেও না। এখানে থাকলেই যে এই শহরের অলিগলি আমাদের স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দিবে। যা আমি চাই না। কোনোভাবেই চাই না।”
কথাগুলো বলতে বলতেই ফারাবীর চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। ফারাবী মুচকি হেসে চোখের পানি মুছে নিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতর চলে গেলো। আর মাত্র আড়াই ঘন্টা, এরপরই ও এ দেশ ছাড়বে। চিরতরে কিনা বলতে পারছে না। হয়তো আবার ফিরে আসবে, হয়তো আর আসবে না কখনো।
চলবে~